আইপিএল ২০২২: যেমন হলো দলগুলো | পর্ব ১

আইপিএল মানেই জমজমাট উন্মাদনা, আইপিএল মানেই জাঁকজমকপূর্ণ আয়োজনে ক্রিকেট এবং বলিউডের মিলনমেলা। আবার অনেকে বলেন, ক্রিকেটের একেবারে ‘নষ্টের গোড়া’। সে যা-ই হোক না কেন, আইপিএলের আবেদন যে তাতে বিন্দুমাত্র কমে না, বরং বেড়ে যায় বহুগুণে, সে বিষয়ে সন্দেহ নেই। সে কারণেই ক্রিকেটার-কোচ থেকে শুরু করে চায়ের কাপে ঝড় তোলা দর্শকের সবাই এই সময়টার জন্য অপেক্ষা করে থাকে।  

গত বছর কিয়ৎক্ষণের জন্য দেশান্তরী হয়েছিল আইপিএল। সেটা বোধহয় ক্রিকেটদেবী পছন্দ করেননি, তাই মাঝপথেই কোভিড হানা দেওয়ার কারণে বন্ধ করতে হয় সে দফায়। দ্বিতীয়ার্ধ আবার ফেরে ভারতবর্ষেই, আরো একবার আইপিএল জিতে নেয় চেন্নাই সুপার কিংস। দুই পর্বের আয়োজনে আজ প্রথম পর্বে থাকছে চেন্নাই সুপার কিংস, কলকাতা নাইট রাইডার্স, পাঞ্জাব কিংস, সানরাইজার্স হায়দরাবাদ, আর গুজরাট টাইটানসের শক্তিমত্তা ও দুর্বলতার ফিরিস্তি। 

চেন্নাই সুপার কিংস

চেন্নাই সুপার কিংস; Image Credit: pixlok.com

চেন্নাই সুপার কিংস বর্তমানে আইপিএলের ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন। মেগা অকশনের আগেই তারা নিজেদের দলে ভিড়িয়েছিল রবীন্দ্র জাদেজা, মহেন্দ্র সিং ধোনি, মঈন আলী আর ঋতুরাজ গায়কোয়াড়ের মতো সেনানীদের। সাথে দলে আছেন পাঁচবার আইপিএল ফাইনাল খেলা আম্বাতি রায়ুডু কিংবা ‘আনক্যাপড’ এন জগদীশন এবং তুষার দেশপাণ্ডের মতো তরুণ তুর্কিরাও। পোড় খাওয়া বেশ কিছু অভিজ্ঞ খেলোয়াড়দের আবার দলে ভিড়ালেও ফাফ ডু প্লেসির মতো পরীক্ষিত খেলোয়াড়কে ছেড়েও দিয়েছে চেন্নাই। তবে এসব বাদ দিয়েও আইপিএলের মেগা অকশনটা খারাপ যায়নি চেন্নাইয়ের। 

স্কোয়াড

দেশী

রবীন্দ্র জাদেজা, মহেন্দ্র সিং ধোনি, রুতুরাজ গায়কোয়াড়, রবিন উথাপ্পা, আম্বাতি রায়ুডু, দীপক চাহার, কেএম আসিফ, তুষার দেশপান্ডে, শিভম দুবে, রাজবর্ধন হাঙ্গারগেকার, সমরজিৎ সিং, সি হরি নিশান্থ, এন জগদীশন, শুভ্রাংশু সেনাপতি, মুকেশ চৌধুরী, প্রশান্ত সোলাঙ্কি, কে ভগত ভার্মা।

বিদেশী

ডোয়াইন প্রিটোরিয়াস, ডেভন কনওয়ে, মিচেল স্যান্টনার, অ্যাডাম মিলনে, মঈন আলী, ক্রিস জর্ডান, মহেশ থিকশানা, ডোয়াইন ব্রাভো। 

অভিজ্ঞতা ও ব্যাটিং অর্ডারের গভীরতা

চেন্নাই সুপার কিংস সবসময়ই অভিজ্ঞতাকে তারুণ্যের চেয়ে প্রাধান্য দিয়ে থাকে। মহেন্দ্র সিং ধোনির নেতৃত্বে এভাবেই গত কয়েক আসরে সাফল্য দেখিয়েছে চেন্নাই। আর এবারও পুরানো সেই তরিকার পথ ছেড়ে অন্য পথ ধরেনি দলটি, দলে ভিড়িয়েছে অভিজ্ঞ সব খেলোয়াড়দেরই। অভিজ্ঞতাকে তাই যদি মাপকাঠি ধরি, চেন্নাইকে তাহলে দল গঠনে সফল দলই বলতে হবে। অন্তত ধোনি-জাদেজার সাথে ডোয়াইন ব্রাভো, রবীন্দ্র জাদেজা, রবিন উথাপ্পা, আম্বাতি রায়ুডু আর মিচেল স্যান্টনারের মতো খেলোয়াড়দের আইপিএল খেলার যে অভিজ্ঞতা, সেটাকে চেন্নাইয়ের শক্তির জায়গা ধরতেই হবে।

চেন্নাইয়ের আরেকটি শক্তির জায়গা এর ব্যাটিং অর্ডারের গভীরতা। খুব সম্ভবত ডেভন কনওয়ের সাথে চেন্নাইয়ের হয়ে ওপেন করবেন রুতুরাজ গায়কোয়াড়। ওপেনিংয়ের পর মিডল অর্ডারে দলের ব্যাটিং সামলাবেন আম্বাতি রায়ুডু, রবিন উথাপ্পা আর মঈন আলী। আর শেষদিকে লোয়ার মিডল অর্ডারে মহেন্দ্র সিং ধোনি, ডোয়াইন ব্রাভো আর রবীন্দ্র জাদেজা তো থাকছেনই। সব মিলিয়ে চেন্নাইয়ের ব্যাটিং শক্তি তাই যথেষ্টই গভীর।

বিদেশী খেলোয়াড়দের বহরটাও বেশ আশাজাগানিয়া তাদের। আইপিএলের নিয়ম অনুযায়ী চারজন বিদেশী খেলোয়াড়ের বেশি খেলানো যাবে না। খুব সম্ভবত এই চারজনের স্লটের মধ্যে মঈন আলী আর ডোয়াইন ব্রাভো দুটো স্লট নিয়ে নেবেন।আবার ওপেনিংয়ে যদি ডেভন কনওয়ের জায়গাটা নির্ধারিত ধরে নিই, তাহলে অ্যাডাম মিলনে আর ক্রিস জর্ডানের মধ্যে লড়াইটা হয় একটামাত্র জায়গা নিয়ে। গত বছর থাকা জশ হ্যাজলউডের জায়গাটা চেন্নাই হয়তো পূরণ করতে চাইবে এই দু’জনের কাউকে দিয়েই। আর এসবের বাইরেও মিচেল স্যান্টনার আর প্রিটোরিয়াসের মতো খেলোয়াড় তো রিজার্ভ বেঞ্চে আছেনই, তারা যেকোনো সময়ই জায়গা নিয়ে নিতে পারেন যে কারো পরিবর্তে। চেন্নাইয়ের জন্যে তাই বিদেশী খেলোয়াড় বাছাই করাটা ‘মধুর’ এক সমস্যাই হবে।  

ডেথ বোলিং দুর্বলতা

টি-টোয়েন্টিতে ডেথ ওভারের বোলিং সবচেয়ে গুরুত্বের জায়গা। বোলিং ইউনিটে দলে আইপিএল ইতিহাসেরই দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উইকেটসংগ্রাহক ডোয়াইন ব্রাভোর সাথে যোগ দেবেন ক্রিস জর্ডান আর তুষার দেশপান্ডে। এর মধ্যে তুষার দেশপান্ডে গত বছর দিল্লী ক্যাপিটালসের হয়ে ডেথ ওভারের বোলিং সামলেছেন বটে, তবে এখনও তার ঝুলিতে পর্যাপ্ত অভিজ্ঞতার অভাব রয়েছে। সেক্ষেত্রে দীপক চাহারের ওপর বোলিং ইউনিটের বেশিরভাগ চাপটা পড়ে যাবে। কিন্তু তিনি যদি বোলিং ওপেন করেন, তাহলে চাহারকে ডেথ ওভারে বোলিং করালে মাঝের দিকে আর চাহারকে পাবে না চেন্নাই। সেক্ষেত্রে কপাল খুলে যেতে পারে সদ্যই অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ জিতে আসা রাজবর্ধন হাঙ্গারগেকারের। 

অন্যদিকে পেসের জায়গাতে চেন্নাইকে নির্ভর করতে হতে পারে স্পিনারদের ওপর। এখানে জাদেজা আর মঈনের সাথে আছেন মিচেল স্যান্টনার। যদিও চারজন বিদেশীর বেশি খেলানো যাবেনা বলে মিচেল স্যান্টনারের কয় ম্যাচে সুযোগ হয় সেটাও একটা দেখার ব্যাপার। সব মিলিয়ে ডেথ ওভারের বোলিং ভোগাতে পারে চেন্নাইকে।

তবে মূল চ্যালেঞ্জটা হবে দেশী খেলোয়াড়দের নিয়ে। দলে আছেন ধোনি-রায়ুডুর মতো খেলোয়াড়রা, যারা একাদশে টপ চয়েস হিসেবে থাকলেও বেশ কিছুদিন ধরেই খেলার বাইরে আছেন। হুট করে দলে ফিরেই যদি তারা পারফর্ম করতে না পারেন, বিপদে পড়ে যেতে পারে চেন্নাই। এছাড়াও দলে আছেন একঝাঁক তরুণ তুর্কি, যারা যথেষ্ট সম্ভাবনাময় হলেও অভিজ্ঞতার অভাবটা স্পষ্ট। সুযোগ পেলে তারা কেমন পারফর্ম করবেন, সেটা নিয়েও আছে শঙ্কার মেঘ।  

ভারতীয় ব্যাটারদের জন্যে ‘সোনালী সুযোগ’

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের পরের আসর বসছে এ বছরই। সেক্ষেত্রে রুতুরাজ গায়কোয়াড় কিংবা শিভম দুবের মতো খেলোয়াড়েরা নিঃসন্দেহেই চাইবেন পারফর্ম করে নির্বাচকদের নজর কাড়তে। এমনকি ‘আনক্যাপড’ জগদীশন আর তুষারের মতো খেলোয়াড়েরাও চাইবেন টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় আসরে পারফর্ম করে নিজেদের মেলে ধরতে। কেননা আইপিএল শেষেই ভারতীয় দল যাবে দক্ষিণ আফ্রিকাতে, পাঁচ ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলতে। সেখানেও নিশ্চয়ই সুযোগ পাওয়ার জন্যে মুখিয়ে আছে তরুণ খেলোয়াড়েরা। যদিও বিশ্বকাপের বেশি বাকি নেই, নির্বাচকদের ডেমো দল নিশ্চয়ই তৈরি। তবুও এসব তরুণ খেলোয়াড়েরা নির্বাচকদের আরেকবার ভাবতে বাধ্য করতে পারেন।

কারা হতে পারেন সেরা খেলোয়াড়? 

এবার দলটির অধিনায়কের দায়িত্ব পাওয়া রবীন্দ্র জাদেজা হয়ে উঠতে পারেন দলের ‘এমভিপি’ তথা ‘মোস্ট ভ্যালুয়েবল প্লেয়ার’। দুর্দান্ত ছন্দে আছেন, সাথে পাচ্ছেন দারুণ ব্যালান্সড একটা দল। টুর্নামেন্টটা নিজের করে নেওয়ার মতো পুরোদস্তুর সুযোগ হিসেবে দেখতেই পারেন ‘স্যার’ রবীন্দ্র জাদেজা! আরেকজন গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড় হতে পারেন নিউ জিল্যান্ডের ওপেনার ডেভন কনওয়ে। গতবারের ‘অরেঞ্জ ক্যাপ’ পাওয়া রুতুরাজ গায়কোয়াড়ও হয়ে উঠতে পারেন অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সৈনিক।  

কলকাতা নাইট রাইডার্স

কোলকাতা নাইট রাইডার্স; Image Credit: The Daily Guardian

আইপিএল অকশনে কলকাতা নাইট রাইডার্সও বেশ ভাল কিছু পিক করেছে। ইয়োন মর্গান আর দীনেশ কার্তিককে ছেড়ে দিলেও শ্রেয়াস আইয়ারের মতো খেলোয়াড়কে দলে টেনেছে তারা। এছাড়াও পুরনো খেলোয়াড়দের মধ্যে প্যাট কামিন্স আর নীতিশ রানার অন্তর্ভুক্তি দলকে আরো শক্তই করেছে। অন্যদিকে, দলে তেমন ঔজ্জল্য ছড়ানো দেশী খেলোয়াড় নেই, এটাও ভোগাতে পারে কলকাতাকে। 

স্কোয়াড

দেশী

ভেঙ্কটেশ আইয়ার, বরুণ চক্রবর্তী, শ্রেয়াস আইয়ার, নীতিশ রানা, উমেশ যাদব, শিভম মাভি, শেলডন জ্যাকসন, আজিঙ্কা রাহানে, রিঙ্কু সিং, অনুকূল রায়, রাশিখ ধর, বাবা ইন্দ্রজিৎ, অভিজিৎ তোমার, আমান খান, রমেশ কুমার, প্রথম সিং, অশোক শর্মা। 

বিদেশী

আন্দ্রে রাসেল, সুনীল নারাইন, প্যাট কামিন্স, মোহাম্মদ নবী, স্যাম বিলিংস, অ্যারন ফিঞ্চ, টিম সাউদি, চামিকা করুণারত্নে। 

শ্রেয়াসের অধিনায়কত্ব

আইপিএলের মেগা অকশনের পরই কলকাতা নাইট রাইডার্স নিজেদের অধিনায়কের নাম ঘোষণা করে। তারা জানায়, মেরুন জার্সিতে এবার টস করতে দেখা যাবে শ্রেয়াস আইয়ারকে। আইয়ারের জন্য অবশ্য আইপিএলে অধিনায়কত্ব করাটা নতুন কিছু নয়। আইপিএলের গত আসরগুলিতেই নিজের অধিনায়কত্ব দিয়ে মুন্সিয়ানা দেখিয়েছেন তিনি। ২০১৯ সালেই দিল্লী ক্যাপিটালসকে তিনি নিয়ে গেছিলেন প্লে-অফে, যেটা ছিল ২০১২ সালের পর দিল্লীর প্রথম প্লে-অফ। আবার ২০২০ সালের আসরে তিনি দলটিকে ফাইনাল অব্দি নিয়ে গেছিলেন। তবে ২০২২ সালে দিল্লী দলের অধিনায়কত্বের প্রথম পছন্দ ঋষভ পান্ত হওয়ায় আইয়ারকে তারা ছেড়ে দেয়। অন্যদিকে, কলকাতা নাইট রাইডার্সও দলের জন্যে যোগ্য ও স্থায়ী এক অধিনায়কের সন্ধানে ছিল। আর সেক্ষেত্রে কলকাতার জন্যে আইয়ারের চাইতে ভাল বিকল্প আর কে-ই বা হতে পারত! আইয়ারের অধিনায়কত্বের যে অভিজ্ঞতা আর যোগ্যতা, তাতে করে কলকাতার এই সমস্যার দীর্ঘস্থায়ী সমাধানই হতে পারেন তিনি।

দুর্বলতার নাম উইকেটকিপিং

দীনেশ কার্তিককে ছেঁটে ফেলার পর কলকাতা নাইট রাইডার্স শিবিরে দক্ষ উইকেটরক্ষকের পরিষ্কার একটা অভাব রয়েছে, সেটা বলাই বাহুল্য। আইপিএল মেগা অকশনের পর অবশ্য এখন খাতাকলমে কলকাতা দলে আছেন তিনজন উইকেটকিপার – শেলডন জ্যাকসন, বাবা ইন্দ্রজিৎ, আর স্যাম বিলিংস। তবে মজার ব্যাপার হলো, এদের কেউই একাদশে প্রথম পছন্দের উইকেটকিপার হওয়ার মতো দক্ষ কিংবা অভ্যস্ত নন। শেলডন জ্যাকসন ঘরোয়া ক্রিকেটে খেলেন সৌরাষ্ট্রের হয়ে, এখন অব্দি আইপিএলে তার অভিষেক হয়নি। একই অবস্থা বাবা ইন্দ্রজিতেরও। আর ইংল্যান্ড দলে জস বাটলার আর জনি বেয়ারস্টো থাকায় বিলিংসকে আসলে উইকেটকিপিং করতেই হয় না। আর এসব ছাড়াও এই তিনজনের যে অভিজ্ঞতা, গ্লাভস হাতে এই অভিজ্ঞতার অভাব ভোগাতে পারে কলকাতাকে।

কলকাতা নাইট রাইডার্সের অন্যতম ঝুঁকির জায়গা হতে পারে ইনজুরি, তাও আবার দলের মূল খেলোয়াড়দের। আন্দ্রে রাসেল, সুনীল নারাইন আর বরুণ চক্রবর্তী ইনজুরিগ্রস্ত আছেন। নির্ধারিত সময়ের আগে যদি তারা সেরে না ওঠেন কিংবা টুর্নামেন্ট চলাকালে নতুন করে ইনজুরিতে পড়েন, তাহলে কলকাতার জন্যে তা চাপের কারণ হতেই পারে। বিশেষত রাসেলকে হারিয়ে ফেললে কলকাতার মিডল অর্ডার অনেকটাই ম্রিয়মান হয়ে যাবে। আর বরুণ আর নারাইন মিলেই তো কলকাতার স্পিন অ্যাটাক, সেটাও কার্যত বিকল হয়ে যাবে ইনজুরিতে। এই ‘বিকল্পের অভাব’ জিনিসটা বেশ ভোগাতে পারে এবার তাদের।  

একই সাথে সাবেক ভারতীয় ওপেনার এবং খ্যাতিমান ক্রিকেট বিশ্লেষক আকাশ চোপড়ার মতে, কলকাতার বোলিং লাইনআপে ডেথ বোলার নেই। শিভম মাভির উপরে অনেকটাই ভরসা করবে কলকাতা, তবে তিনি সেই অর্থে উচ্চমানের কোনো ডেথ বোলার নন। প্যাট কামিন্স-উমেশ যাদব-আন্দ্রে রাসেলরাও ডেথ বোলিং করে দিতে পারেন বটে, তবে কেউই সেই অর্থে শেষদিকের ওভারে আস্থার জানান দিতে পারেন না।   

কলকাতার সুযোগ

দলে পরীক্ষিত পারফরমারের অভাব নেই, জাজ্বল্যমান তারকার সাথে উঠতি প্রতিভার মিশ্রণটাও মন্দ নয়। তবু যেন দলে কী যেন একটা নেই। টুর্নামেন্ট শুরুর আগে কলকাতা দলটা এমন একটা অনুভূতিই দিচ্ছে। পাওয়ারপ্লে আর ডেথ ওভারে জ্বলে ওঠার মতো বোলারের অভাব আর বিকল্প না থাকার সমস্যাটা যদি শুরুর দিকে না ভোগায়, প্লে-অফ অবধি চলে যেতে পারে কলকাতা। তবে এর থেকে দূরে যাওয়ার সম্ভাবনা যে কিছুটা কম, আপাতদৃষ্টিতে এমনটাই মনে হচ্ছে।

কারা হতে পারেন সেরা খেলোয়াড়? 

অ্যারন ফিঞ্চের যে ব্যাটিং-দর্শন, সেটি টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের জন্যে যথাযোগ্য। ধারণা করা হচ্ছিল, আইপিএল নিলামে হয়তো অ্যারন ফিঞ্চকে নিয়ে কাড়াকাড়ি পড়ে যাবে। সেটি অবশ্য হয়নি, বরং অ্যারন ফিঞ্চকে একরকম মুফতেই পেয়েছে কলকাতা। আর এখানেই কলকাতার জন্যে সবচেয়ে বড় সুযোগটি তৈরি হয়েছে। অ্যারন ফিঞ্চের সঙ্গে সম্ভবত ওপেন করতে নামবেন গত আসরের অন্যতম সেরা ‘ফাইন্ড’ ভেঙ্কটেশ আইয়ার। আইয়ার আর ফিঞ্চ মিলে পাওয়ারপ্লে’র সর্বোচ্চ ব্যবহারটাই করতে পারেন। এমনকি টার্গেটে ব্যাটিং করতে নামলেও ফিঞ্চ আর আইয়ার মিলে যেকোন লক্ষ্যেই সর্বোচ্চ সুবিধাজনক শুরুর নিশ্চয়তা দিতে পারেন। ভেঙ্কটেশ আইয়ারের পাশে অ্যারন ফিঞ্চের অন্তর্ভুক্তি এমনকি বিগত কয়েক আসর ধরে চলা কলকাতার ওপেনিং সমস্যারও একটা সুষ্ঠু সমাধান দেবে। 

অন্যদিকে দলে আছেন সুনীল নারাইনের মতো একজন খেলোয়াড়, যিনি ব্যাটে-বলে অনায়াসেই গড়ে দিতে পারেন বিস্তর ব্যবধান। তাকে যথাযোগ্য ব্যবহার করা গেলে তিনি যে এখনও প্রতিপক্ষকে একাই ধ্বসিয়ে দিতে পারেন, সেটার প্রমাণ রেখেছেন সাম্প্রতিক বিপিএলেই। 

পাঞ্জাব কিংস

পাঞ্জাব কিংস; Image Credits; passionateinmarketing.com

আইপিএল নিলামে পাঞ্জাবের অংশগ্রহণটা ছিল বেশ মজার। পুরনো খেলোয়াড়দের মধ্যে পাঞ্জাব রেখে দিয়েছে মাত্র দু’জন খেলোয়াড়কে – মায়াঙ্ক আগারওয়াল আর আর্শদ্বীপ সিং। আইপিএল নিলামে ২৩ জন খেলোয়াড়কেই নতুন করে কেনা তাই পাঞ্জাবের পুনর্গঠনকেই ইঙ্গিত করে। তবে গত সাত আসরে একবারও প্লে-অফ না খেলা পাঞ্জাব এবার অসাধ্য সাধন করতে পারবে কি না, সেটা সময়ই বলে দেবে।

স্কোয়াড

দেশী

 

মায়াঙ্ক আগারওয়াল, আর্শদ্বীপ সিং, শিখর ধাওয়ান, রাহুল চাহার, হরপ্রীত ব্রার, শাহরুখ খান, জিতেশ শর্মা, প্রভসিমরান সিং, ঈশান পোড়েল, সন্দ্বীপ শর্মা, রাজ অঙ্গদ বাওয়া, ঋষি ধাওয়ান, প্রিরাক মানকড়, অথর্ব তাঈদি, বৈভব অরোরা, ঋত্বিক চ্যাটার্জি, বলতেজ ধান্দা, অংশ প্যাটেল।

বিদেশী

কাগিসো রাবাদা, জনি বেয়ারস্টো, লিয়াম লিভিংস্টোন, ওডিন স্মিথ, নাথান এলিস, ভানুকা রাজাপাকশে, বেনি হাওয়েল।

 

পাওয়ার হিটারের ছড়াছড়ি  

তর্কসাপেক্ষে পাঞ্জাব কিংসের ঝুলিতে আছে এই টুর্নামেন্টের সবচেয়ে দুর্দান্ত ব্যাটিং অর্ডার। শিখর ধাওয়ান, জনি বেয়ারস্টো কিংবা লিয়াম লিভিংস্টোনের মতো বিগ হিটারদের যেকোনো একজন জ্বলে উঠলেই সেদিন প্রতিপক্ষ বোলারের জন্যে নরক মাটিতে নেমে আসার কথা। আর তাদের সাথে শাহরুখ আর ওডিন স্মিথের মতো নবাগতরা যোগ্য সঙ্গত দিলে পাঞ্জাবের ব্যাটিং অর্ডার দুর্দান্ত হতে বাধ্য।

লিয়াম লিভিংস্টোন আর শাহরুখ খানের অন্তর্ভুক্তিতে পাঞ্জাবের মিডল অর্ডার বেশ শক্ত একটা ভিত্তিই পেয়েছে বলা যায়। যদি এই দু’জনকে নিয়মিত সুযোগ দেওয়া হয়, তাহলে আসরজুড়েই দুর্দান্ত রানরেটে ব্যাট করতে পারেন এই দু’জন। আর সেক্ষেত্রে আখেরে লাভ তো হবে পাঞ্জাবেরই। এমনকি রান তাড়ার ক্ষেত্রেও এই দু’জন বেশ ভালো একটা ভূমিকা পালন করতে পারেন। আর এই দু’জনের সাথে যদি দলে থাকেন জনি বেয়ারস্টো, তাহলে তো কথাই নেই। এখন শুধু ওপেনাররা যদি দুর্দান্ত শুরু করতে পারেন, তাহলেই সেই রানটাকে এগিয়ে নেওয়ার মতো মিডল অর্ডার পাঞ্জাবের আছে। তবে এখানেও যদি-কিন্তুর প্রশ্ন থেকে যায়। বেয়ারস্টো তার আগের দল হায়দরাবাদের হয়ে ওপেন করেছেন, এখানেও সেরকম কিছু হলে মিডল অর্ডারের পুরো দায়িত্বটা আসলে নিতে হবে লিভিংস্টোন আর শাহরুখকেই।

দুর্বলতা যখন স্পিনে অনভিজ্ঞতা

পাঞ্জাবের স্পিন ডিপার্টমেন্টের সবচেয়ে বড় নাম রাহুল চাহার। আইপিএলে ৫.২৫ ইকোনমির এই বোলারকে কেনা পাঞ্জাবের জন্যে সবচেয়ে বড় আশীর্বাদ বলতেই হবে। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, মাঝের দিকে রাহুলকে যোগ্য সঙ্গ দেওয়ার মতো কোনো স্পিনারকে দলে ভেড়াতে পারেনি পাঞ্জাব। আইপিএলে সবচেয়ে বেশি বাজেট নিয়ে অকশন শুরু করা পাঞ্জাব রশীদ খান কিংবা আদিল রশীদের মতো যে কাউকেই দলে টানতে পারত। কিন্তু পাঞ্জাব তা করেনি; স্পিন ডিপার্টমেন্টে তাই অভিজ্ঞতার অভাবটা স্পষ্ট হয়েই দেখা দিচ্ছে। আর ভারতের পিচগুলিতে যেখানে অনেক সময় স্পিনাররাই ম্যাচের মোমেন্টাম ঘুরিয়ে দেয়, সেখানে স্পিন ডিপার্টমেন্টে অভিজ্ঞতা কিংবা বড় নামের অভাব বড়সড় সমস্যাতেই ফেলতে পারে পাঞ্জাবকে।

পাঞ্জাবের তিন ফ্রন্টলাইন পেসার হলেন কাগিসো রাবাদা-আর্শদ্বীপ সিং-ঋষি ধাওয়ান। তবে দলের মূল ভরসা যে থাকবে ‘প্রোটিয়া ফায়ার’ রাবাদার ওপরই, সেটাও ভালোভাবেই অনুমেয়। কিন্তু সমস্যা হলো, পাঞ্জাবের দলে রাবাদা ছাড়া কোনো ফ্রন্টলাইন পেসার নেই। আর্শদ্বীপ আর ঋষি ধাওয়ান দু’জনই সাম্প্রতিক সময়ে বেশ ভালো বোলিং করছেন বটে, কিন্তু দলের যে ‘স্টার’ পেস বোলার হওয়ার কথা, সে পর্যায়ে এখনও দু’জন যাননি। তবে নতুন বলে রাবাদা-আর্শদ্বীপ জুটির পর বল পুরনো হলে সন্দ্বীপ শর্মার অভিজ্ঞতা কাজে লাগতে পারে পাঞ্জাবের। অন্যদিকে হিমাচল প্রদেশের দুর্দান্ত ঘরোয়া আসর কাটানো ঋষিকেও এখানে জ্বলে উঠতে হবে। আর সেটা না হলে পাঞ্জাবকে বড় কোনো তারকা পেসারের অভাবে ভুগতে হবে পুরো আসর জুড়েই।

কতদূর যাবে পাঞ্জাব? 

দুর্দান্ত ব্যাটিং লাইনআপের পাশে কিছুটা ভঙ্গুর বোলিং লাইনআপ। না আছে যথেষ্ট ‘কোয়ালিটি’ স্পিনিং অপশন, না আছে মিডল ওভারে রান বেঁধে ফেলার মতো বোলার। সব মিলিয়ে দলটা দেখতে জবরদস্ত মনে হলেও দলের ব্যালান্সে কিছুটা ঘাটতি থেকেই গেছে। তবু দলটির প্লে-অফ অবধি নিশ্চিন্তে চলে যাওয়ার মতো রসদ আছে, সেটা বলাতে খুব একটা ঝুঁকি নেই। শর্ত কেবল একটাই, বোলিংয়ের ঘাটতিটা ব্যাট হাতে কিছুটা হলেও পুষিয়ে নিতে টপ অর্ডারকে নিতে হবে যথেষ্ট দায়িত্ব। তবে রাস্তাটা যে সহজ হবে না, সেটা তো বলাই বাহুল্য।   

কারা হতে পারেন মূল শক্তি? 

পাঞ্জাবের সবচেয়ে বড় শক্তির জায়গা হওয়ার কথা শিখর ধাওয়ান। আইপিএলের নিয়মিত পারফর্মার তিনি। অভিজ্ঞতার সাথে তার আছে দারুণ পরিসংখ্যান; ১২৬.৬৪ স্ট্রাইকরেট আর ৩৪.৮৪ গড় নিয়ে রান করেছেন ৫,৭৮৪, যা আইপিএলের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত রান। সে হিসেবে ধাওয়ানের প্রতি বিশ্বাস রাখাটা কাজে লাগতে পারে পাঞ্জাবের।

স্টার পারফরমার হয়ে উঠতে পারেন রাহুল চাহার কিংবা লিভিংস্টোনরাও। আর সাথে শাহরুখ খানের মতো মিডল অর্ডার ব্যাটারের উপরে যদি ‘ডার্ক হর্স’ হিসেবে বাজি ধরতে চান, সেটাও হতে পারে দারুণ এক সম্ভাবনা!   

সানরাইজার্স হায়দরাবাদ

সানরাইজার্স হায়দরাবাদ; Image Credit: iplt20.com

আইপিএলের অন্যতম ধারাবাহিক দল সানরাইজার্স হায়দরাবাদ। দেরিতে আইপিএল অভিষেক হলেও ইতোমধ্যেই একটি শিরোপা তারা নিজেদের ঝুলিতে পুরে ফেলেছে। প্রায় প্রত্যেক বছরই দলটি সেরা চারে থেকেই আইপিএল শেষ করে। তবে এসবের বাইরেও দলটি ‘পাখির চোখ’ করে শিরোপা। সেই যে একটি শিরোপা জিতেছে দলটি, প্রত্যেক বছর প্লে-অফ খেলেও তারা আর শিরোপার নাগাল পাচ্ছে না। এবার সে লক্ষ্য পুরণে অবশ্য পুরনো পরীক্ষিত খেলোয়াড়দের উপরেই ভরসা রেখেছে দলটি। আইপিএল মেগা অকশনে তাই হায়দরাবাদের পদচারণা ছিল সামান্যই।

স্কোয়াড

দেশী

উমরান মালিক, আব্দুল সামাদ, ওয়াশিংটন সুন্দর, ভুবনেশ্বর কুমার, টি নটরাজন, প্রিয়ম গার্গ, রাহুল ত্রিপাঠী, অভিষেক শর্মা, বিষ্ণু বিনোদ, কার্তিক তিয়াগী, শ্রেয়াস গোপাল, জগদীশা সুচিথ, আর সমর্থ, শশাঙ্ক সিং, সৌরভ দুবে। 

বিদেশী

কেন উইলিয়ামসন, নিকোলাস পুরান, এইডেন মার্করাম, মার্কো ইয়ানসেন, রোমারিও শেফার্ড, গ্লেন ফিলিপস, ফজলহক ফারুকি, শন অ্যাবট। 

শক্তিমত্তা নিঃসন্দেহে পেস অ্যাটাক

পেস বোলিংয়ে নতুন-পুরনো মিলিয়ে হায়দরাবাদের পেস বোলিং ডিপার্টমেন্ট টুর্নামেন্টের অন্যতম সেরা। নতুন বলে ভুবনেশ্বর কুমার তো আছেনই, সাথে নটরাজনের মতো ডেথ ওভার বিশেষজ্ঞও থাকছেন। বিদেশীদের মধ্যে শন অ্যাবট আর মার্কো ইয়ানসেনের অন্তর্ভুক্তি দলের পেস বোলিং ডিপার্টমেন্টকে বৈচিত্র্যময় করেছে। আর এই চার বিশেষজ্ঞ পেসারের বাইরে রোমারিও শেফার্ডের মতো অলরাউন্ডার তো আছেনই। বিদেশী ছাড়িয়ে যদি দেশীদের খোঁজও করে টিম ম্যানেজমেন্ট, সেখানেও আশাহত হতে হবে না। উমরান মালিকের মতো স্পিডস্টার কিংবা কার্তিক তিয়াগীর মতো কুশলী ফাস্ট বোলাররা নিয়মিতই সেখানে ঘন্টায় ১৪০ কিলোমিটারের উপরে গতি তুলতে পারবেন। ভুবনেশ্বরের ফর্ম ঠিক সুবিধার যাচ্ছে না বটে, কিন্তু তিনি যেমন চ্যাম্পিয়ন বোলার, আশা করা যায় টুর্নামেন্টেই ফর্মে ফিরবেন তিনি। এছাড়া সব মিলিয়ে সানরাইজার্স হায়দরাবাদের পেস বোলিং ডিপার্টমেন্ট যথেষ্টই বৈচিত্র্যপূর্ণ, আর এটাই হতে পারে তাদের শক্তির সবচেয়ে বড় জায়গা।

দুর্বলতা স্পিন অ্যাটাক

রশিদ খানের মতো স্পিনারকে হারিয়ে ফেলা হায়দরাবাদের জন্যে ছিল যথেষ্ট দুঃখের খবর। হায়দ্রাবাদকে যেটা করতে হতো, রশিদের মতো বা তার কাছাকাছি সার্ভিস দিতে পারবে এমন কাউকে জোগাড় করা। কিন্তু হায়দরাবাদ এখানেই সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে। তারা রশিদের বিকল্প কোনো স্পিনার দলে ভেড়াতে পারেনি। আর এ কারণেই হায়দরাবাদের চিন্তার কারণ হতে পারে স্পিন ডিপার্টমেন্ট। ওয়াশিংটন সুন্দর দারুণ একজন অফ স্পিনার, পাওয়ারপ্লেতেও বল করতে পারেন; কিন্তু উইকেট-টেকার হিসেবে তার ওপর ভরসা খুব একটা রাখতে পারে বলে মনে হয় না। অন্যদিকে হায়দরাবাদের মূল লেগ স্পিনার শ্রেয়াস গোপাল, যার আইপিএলে এখন অব্দি আহামরি কোনো পরিসংখ্যান নেই। সব মিলিয়ে ম্যাচের মাঝের ওভারগুলি যথেষ্টই কঠিন যাবে হায়দরাবাদের জন্যে।

ডেভিড ওয়ার্নার, জনি বেয়ারস্টো, আর মনীশ পান্ডেকে হারিয়ে ফেলার পর ব্যাটিং লাইনআপটাও অনেকটাই দুর্বল হয়ে গেছে। এখন হায়দরাবাদের ব্যাটিংয়ের মূল দায়িত্বটা আসলে নিতে হবে কেন উইলিয়ামসনকেই। আরেকটু ভাল করে বলা যায়, হায়দরাবাদের ব্যাটিং গড়ে উঠবে উইলিয়ামসনকে কেন্দ্র করেই। কিন্তু উইলিয়ামসন ব্যর্থ হলেই বিপদে পড়ে যাবে হায়দরাবাদ। টপ অর্ডারে ব্যাট করবেন সম্ভবত রাহুল ত্রিপাঠি, আর থাকবেন নিকোলাস পুরান। কিন্তু ১০.৭৫ কোটি রুপি খরচ করে দলে নেওয়া পুরানের সাম্প্রতিক ফর্ম চিন্তার ভাঁজ ফেলতে পারে দলটির কপালে। আর এছাড়া দলে বাকি যারা আছেন, প্রত্যেকেরই আছে অভিজ্ঞতার অভাব। অভিষেক শর্মা কিংবা প্রিয়ম গার্গেরা হয়তো ভাল ব্যাটার, কিন্তু কারোরই আসলে পর্যাপ্ত অভিজ্ঞতা নেই। আর সে কারণেই ব্যাটিংয়ের পুরো চাপ পড়ে যাবে উইলিয়ামসনের উপরে। এতে আবার ‘গোঁদের উপর বিষফোঁড়া’ হয়ে এসেছে উইলিয়ামসনের কনুইয়ের ইনজুরি। আবার গ্লেন ফিলিপস কিংবা এইডেন মার্করামরা দলে থাকলেও বিদেশী কোটায় কেমন সুযোগ পাবেন, সেটাই দেখার অপেক্ষা। সব মিলিয়ে ব্যাটিং লাইনআপ দলটির জন্যে ঝুঁকির কারণ হতে পারে।

দারুণ তারুণ্য

হায়দরাবাদের স্কোয়াডে তরুণ খেলোয়াড়ের আধিক্য রয়েছে যথেষ্টই। ওয়াশিংটন সুন্দর, অভিষেক শর্মা, আব্দুল সামাদ, উমরান মালিক আর প্রিয়ম গার্গরা নিশ্চয়ই চাইবেন নিজেদের নিংড়ে দিতে। এমনকি তরুণ দক্ষিণ আফ্রিকান পেসার মার্কো ইয়ানসেনও নিশ্চয়ই চাইবেন এই আইপিএলই যেন তার ক্যারিয়ারের শেষ আইপিএল না হয়ে যায়। হায়দরাবাদের বড় সুযোগ হতে পারে এই তারুণ্যই। তরুণ তুর্কির এই ব্রিগেড যদি জ্বলে উঠতে পারে, তাহলেই হায়দরাবাদের জন্যে পোয়াবারো।

কতদূর যাবে দলটা? 

কেন উইলিয়ামসনের ফিটনেসের উপর অনেকটাই নির্ভর করছে এই টুর্নামেন্টে হায়দরাবাদের দৌড়। সাথে নিকোলাস পুরান কিংবা রাহুল ত্রিপাঠীর মতো খেলোয়াড়রাও আছেন টপ অর্ডারে, জ্বলে উঠতে হবে তাদেরও। দারুণ সব তরুণ খেলোয়াড় আছে দলে, প্রাণশক্তির প্রাচুর্য দলে চোখে পড়ার মতো। সবকিছু ব্যাটে-বলে হলে প্লে-অফের স্বপ্ন দেখতেই পারে হায়দরাবাদ।  

কে হতে পারেন সেরা খেলোয়াড়? 

পরিস্থিতি বুঝিয়ে দিচ্ছে, দলের ‘স্টার পারফরমার’ হতে পারেন ওয়াশিংটন সুন্দর। পাওয়ারপ্লে’তে দারুণ বোলিং করতে পারেন, মিডল ওভারে করতে পারেন কিপটে বোলিং, আবার ব্যাটিংয়েও ‘ফ্লোটার’ হিসেবে সার্ভিস দিতে পারেন যেকোনো পজিশনেই। এমন একজন খেলোয়াড় যেকোনো দলের জন্যই বিশাল এক সম্পদ। এছাড়াও জ্বলে উঠতে পারেন কেন উইলিয়ামসন কিংবা সুযোগ পেলে ফজলহক ফারুকীর মতো খেলোয়াড়রাও। 

গুজরাট টাইটান্স

গুজরাট টাইটান্স; Image Credit: cryptotimes.io

আইপিএলের আসর বেড়েছে, সাথে বেড়ে যাচ্ছে দলের সংখ্যাও। আট দলের আইপিএল এ বছর থেকে হতে যাচ্ছে দশ দল নিয়ে। আইপিএলের নতুন দুই দলের একটি হল গুজরাট টাইটান্স। প্রথম আসরেই বড় স্বপ্ন নিয়েই এগুচ্ছে দলটি।

স্কোয়াড

দেশী

শুভমন গিল, সাঈ সুদর্শন, অভিনব মনোয়ার, গুরকীরাত সিং মান, হার্দিক পান্ডিয়া, বিজয় শঙ্কর, রাহুল তেওয়াটিয়া, ঋদ্ধিমান সাহা, জয়ন্ত যাদব, বরুণ অ্যারন, দর্শন নালকান্দে, যশ দয়াল, প্রদীপ সাঙোয়ান, রবিশ্রীনিবাসন সাঈ কিশোর, মোহাম্মদ শামি। 

বিদেশী

ডেভিড মিলার, ম্যাথু ওয়েড, রহমানুল্লাহ গুরবাজ, ডমিনিক ড্রেকস, রশিদ খান, আলজারি জোসেফ, নূর আহমাদ, লকি ফার্গুসন।

দুর্দান্ত বোলিং ডিপার্টমেন্ট

গুজরাটের সবচেয়ে বড় শক্তির জায়গা তাদের বোলিং ডিপার্টমেন্ট। দেশী আর বিদেশী মিলিয়ে সব ধরনের বোলার দিয়েই তারা স্কোয়াড সাজিয়েছে। বোলিং ডিপার্টমেন্টে পেস বোলিংয়ে গুজরাটের সবচেয়ে বড় বাজি মোহাম্মদ শামি। শামির গেল কয়েক বছরের দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের পুনরাবৃত্তি এ বছরও হলে গুজরাট লাভবান হতেই পারে।

শামি ছাড়াও গুজরাটের তুরুপের তাস হয়ে থাকবেন ‘হটশট’ রশিদ খান। বিশ্বজুড়ে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে তিনি এখন বিশাল এক নাম, সেটা বলাই বাহুল্য। শামির মতো পেস বোলারের পাশে রশিদ খানের মতো লেগ স্পিনারের অন্তর্ভুক্তি গুজরাটের বোলিং ডিপার্টমেন্টকে টুর্নামেন্টে সবচেয়ে আকর্ষণীয় করে তুলেছে। আর এই সবকিছুর বাইরে আলজারি জোসেফ কিংবা লকি ফার্গুসন তো আছেনই, ঘন্টায় যারা বল করতে পারেন ১৫০ কিলোমিটার গতিতে। এর বাইরেও আছেন সাঈ কিশোরের মতো তরুণ তুর্কি, সুযোগ পেলে লুফে নিতে পারেন তিনিও। 

দুঃশ্চিন্তার নাম মিডল অর্ডার

গুজরাটের বোলিং আক্রমণের মাহাত্ম্য নিয়ে কারো কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু গুজরাটের চিন্তার কারণ হতে পারে ব্যাটিং, আরো নির্দিষ্ট করে বললে, মিডল অর্ডারের ব্যাটিং। এমনিতে জেসন রয়ের মতো দুর্দান্ত ব্যাটার থাকায় ওপেনিং নিয়ে গুজরাট কিছুটা নির্ভার থাকতে পারে, সেই সাথে তাকে স্থিতধী সঙ্গত দেওয়ার জন্যে শুভমান গিলকেও দলে ভিড়িয়েছে তারা। তবে সমস্যা হচ্ছে মিডল অর্ডারের স্থিতিতে। হার্দিক পান্ডিয়ার নাম ঘুরেফিরে আসতে পারে, কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে তার ফর্ম আর ইনজুরিপ্রবণতা গুজরাটের জন্যে অনেকটাই জুয়ার মতো হয়ে গেছে। আর তাই মিডল অর্ডার নিয়ে কিছুটা সতর্ক তাদের থাকতেই হবে। দলে ডেভিড মিলার, ম্যাথু ওয়েড কিংবা বিজয় শঙ্করের মতো ব্যাটাররা আছেন বটে, কিন্তু আইপিএলের সাম্প্রতিক কোনো আসরেই তাদের কারো ব্যাটই দলের হয়ে কথা বলেনি। আর তাই ওপেনাররা ব্যর্থ হলে সেই ম্যাচে পুরো গুজরাটের ব্যর্থ হবার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না।

কতদূর যাবে দলটি? 

গুজরাটের জন্যে সবচেয়ে ভরসা আর ঝুঁকির জায়গা মিশে গেছে একটি নামে — হার্দিক পান্ডিয়া। একটু আগেই উল্লেখ করা হয়েছে, সাম্প্রতিক সময়ে হার্দিক পান্ডিয়া প্রচণ্ড ইনজুরিপ্রবণ হয়ে পড়েছেন। পান্ডিয়াকে দলে টানা তাই গুজরাটের জন্যে অনেকটা ‘গ্যাম্বল’-এর মতোই হয়ে গেছে। তবে মজার ব্যাপার হলো, গুজরাট শুধু এই তারকাকে দলে টেনেই ক্ষান্ত হয়নি, তাকে দিয়ে দিয়েছে অধিনায়কত্বের আর্মব্যান্ডও। এমনিতে হার্দিক পান্ডিয়ার আইপিএলের কোনো আসরেই অধিনায়কত্বের অভিজ্ঞতা নেই, আর ম্যাচের ক্রান্তিকালে একটি ভুল কলই যথেষ্ট ম্যাচটি হারার জন্যে। তাই হার্দিক পান্ডিয়া যদি চাপের মুহূর্তে মাথা গরম করে ফেলেন, কিংবা তার অধিনায়কত্বের অভিজ্ঞতার ঘাটতি যদি ম্যাচে প্রভাব ফেলে, সে ম্যাচটি আর হাতে না-ও থাকতে পারে গুজরাটের।

তবে গুজরাটের সবচেয়ে বড় সুযোগের জায়গাটা হলো: তারা নতুন একটি দল। সুতরাং দল হিসেবে তাদের স্ট্র্যাটেজি কেমন, সে সম্বন্ধে প্রতিপক্ষের ধারণা অনেকটাই কম। এটা সত্যি যে নতুন দলেও গুজরাটের প্রায় সব খেলোয়াড়ই কোনো না কোনো সময়ে আইপিএল খেলেছেন, নানাভাবেই বেশ কয়েক আসর মাতিয়েছেনও অনেকে। কিন্তু দল হিসেবে তাদের পারফরম্যান্স কেমন হয়, সেদিকে নজর থাকবে সবারই। তবে ভ্রুকুঞ্চনের আরেকটা কারণ হতে পারেন দলের ব্যাটিং কোচ এবং মেন্টর গ্যারি কারস্টেনের আইপিএল রেকর্ড, যেটা দিল্লী ডেয়ারডেভিলস কিংবা রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোরের হয়ে একদমই তার পক্ষে কথা বলে না। তবে এটাও ভুলে গেলে চলবে না, ভারতকে বিশ্বকাপ জেতানো এই কোচের ক্রিকেট-প্রজ্ঞা নিয়ে বিন্দুমাত্র সংশয় নেই।   

সব মিলিয়ে দারুণ ব্যালান্সড দলটির সবকিছু ব্যাটে-বলে হলে প্লে-অফ খুব উচ্চাশা বলে মনে হবে না গুজরাটের জন্য। 

কে হবেন সেরা খেলোয়াড়? 

দলটিতে সব থেকে বড় নাম নিঃসন্দেহে জেসন রয়। ইনিংসের শুরুতে ‘উড়ন্ত সূচনা’ পাওয়ার জন্য সীমিত ওভারের ক্রিকেটে দুর্দান্ত রেকর্ডধারী এই খেলোয়াড়ের দিকেই যে তাকিয়ে থাকবে গুজরাট, সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না। সাথে লকি ফার্গুসন কিংবা রশীদ খানের মতো বড় নামগুলোও গড়ে দিতে পারেন বড় পার্থক্য। 

Related Articles

Exit mobile version