![](https://assets.roar.media/assets/WO0rZc7KuMRvAlgN_276095[1].jpg?w=1200)
আধুনিক যুগে মানুষজন অনেক ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। সারাদিন বসে কিংবা টানা পাঁচদিন মাঠে বসে খেলার দেখার চেয়ে তিন ঘন্টার টি-টোয়েন্টি ম্যাচ দেখতেই বেশি পছন্দ করে। ক্রিকেট বাণিজ্যের বড় একটি লভ্যাংশ আসে টি-টোয়েন্টি ম্যাচ থেকে। এর দৈর্ঘ্য কম এবং জমজমাট ম্যাচ উপভোগ করা যায় বলে অধিকাংশ দর্শকের প্রথম পছন্দ এখন টি-টোয়েন্টি ম্যাচ। দর্শকদের চাহিদানুযায়ী ক্রিকেট খেলুড়ে প্রায় প্রত্যেক দেশই এখন ফ্রাঞ্চাইজিভিত্তিক টি-টোয়েন্টি প্রিমিয়ার লিগ আয়োজন করছে। ঐসব টুর্নামেন্টে বিশ্বের নামকরা অনেক টি-টোয়েন্টি স্পেশালিষ্ট ক্রিকেটার খেলে থাকেন। তাদের মধ্য থেকে সেরা এগারো নির্বাচন করা বেশ কঠিন কাজ। কারণ প্রায় প্রতিটি পজিশনেই একের অধিক ক্রিকেটার সুযোগ পাওয়ার দাবীদার। এদের মধ্য থেকে সবদিক বিবেচনায় রোর বাংলার দৃষ্টিতে বর্ষসেরা টি-টোয়েন্টি একাদশ নিয়েই এই লেখা।
১. কলিন মুনরো
![](https://assets.roar.media/assets/cclXTFiWdyOTZzIk_275710%5B1%5D.jpg)
২০১৮ সালে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে সবচেয়ে বেশি রান সংগ্রহ করেছেন নিউ জিল্যান্ডের উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান কলিন মুনরো। এই আক্রমণাত্মক ব্যাটসম্যান এ বছর নিউ জিল্যান্ড ছাড়াও আরও পাঁচটি ক্লাবের হয়ে ৪৭টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেছেন। তিনি ৪৭ ম্যাচে ৩৪.৭৫ ব্যাটিং গড়ে এবং ১৫১.৩৮ স্ট্রাইক রেটে ১,৫২৯ রান করেছেন। ১টি শতক এবং ১২টি অর্ধশতকের সাহায্যে তিনি এই রান সংগ্রহ করেছেন।
২. অ্যারন ফিঞ্চ
![](https://assets.roar.media/assets/pTyCnPXrDeoN8nqN_277652%5B2%5D.jpg)
২০১৮ সালের ৩ জুলাই জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে হারারেতে মাত্র ৭৬ বলে ১৬টি চার এবং ১০টি ছয়ের মারে ১৭২ রানের ইনিংস খেলেছিলেন অস্ট্রেলিয়ার বিধ্বংসী ওপেনার অ্যারন ফিঞ্চ। ঐদিন হিট উইকেট না হলে ক্রিস গেইলের ১৭৫ রানের ইনিংসটিকে টপকে যেতে পারতেন তিনি। এ বছর তিনি এই শতকটি ছাড়া আরও দুটি শতক হাঁকিয়েছেন।
তিনি ৩৯ ম্যাচে তিনটি শতক এবং ছয়টি অর্ধশতকের সাহায্যে ৪৮.২১ ব্যাটিং গড়ে এবং ১৭১.৫৩ স্ট্রাইক রেটে ১,৩৫০ রান সংগ্রহ করেছেন, যা এ বছর টি-টোয়েন্টিতে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ।
৩. কেন উইলিয়ামসন (অধিনায়ক)
![](https://assets.roar.media/assets/ukBbtZox82aKi4NT_276095%5B1%5D.jpg)
নিউ জিল্যান্ডের অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন আইপিএলে সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদের হয়ে খেলেন। ২০১৭ সালের আইপিএলে তাকে বেশিরভাগ সময় একাদশের বাইরে থাকতে হয়েছিলো। অনেকেই ধরে নিয়েছিলো ২০১৮ সালেও তার সাথে একই ঘটনা ঘটবে। কিন্তু ডেভিড ওয়ার্নার বল টেম্পারিং কেলেঙ্কারিতে ফেঁসে গেলে হায়দ্রাবাদের অধিনায়কের দায়িত্ব পান তিনি। দলকে দারুণভাবে নেতৃত্ব দেওয়ার পাশাপাশি ব্যাট হাতেও সফল ছিলেন উইলিয়ামসন। টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক হিসাবে ১৭ ম্যাচে ৮টি অর্ধশতকের সাহায্যে ৫২.৫০ ব্যাটিং গড়ে ৭৩৫ রান সংগ্রহ করেছিলেন তিনি।
কেন উইলিয়ামসন ২০১৮ সালে মোট ৩৯টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলে ১২টি অর্ধশতকের সাহায্যে ৩৯.৫৬ ব্যাটিং গড়ে ১৩৭.৩১ স্ট্রাইক রেটে ১,২৬৬ রান সংগ্রহ করেছেন।
৪. ঋষভ পান্ত (উইকেটরক্ষক)
![](https://assets.roar.media/assets/sokVW3h53iOncAZA_276100%5B1%5D.jpg)
ভারতীয় ক্রিকেটের নতুন মুখ পান্ত ২০১৮ সালে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে দুর্দান্ত সময় কাটিয়েছেন। বিশেষ করে ঘরোয়া ক্রিকেটে তিনি রানের ফোয়ারা ছুটিয়েছেন। এ বছর ৩২টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলে ৪১.৬৮ ব্যাটিং গড়ে এবং ১৭২.৭১ স্ট্রাইক রেটে ১,২০৯ রান করেছেন। শতক হাঁকিয়েছেন দুটি এবং অর্ধশতক দশটি।
আইপিএলে তিনি ১৪ ম্যাচে ৫২.৬১ ব্যাটিং গড়ে ও ১৭৩.৬০ স্ট্রাইক রেটে ৬৮৪ রান সংগ্রহ করেছেন। তার দল সেরা চারে উঠতে না পারলেও তিনি সেরা ব্যাটসম্যানদের তালিকায় দুইয়ে ছিলেন।
৫. কলিন ইনগ্রাম
![](https://assets.roar.media/assets/7cw9gQJ7l09q4PCO_274075%5B1%5D.jpg)
দক্ষিণ আফ্রিকার এই বাঁহাতি হার্ডহিটার ব্যাটসম্যান এ বছর কোনো আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ম্যাচ না খেললেও বিশ্বেরা নানা জায়গায় ছয়টি দলের হয়ে ফ্রাঞ্চাইজিভিত্তিক টুর্নামেন্টে খেলেছেন। বর্তমানে তিনি বিগ ব্যাশে অ্যাডিলেড স্ট্রাইকার্সের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করছেন।
ইনগ্রাম এ বছর ৫০টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলে ৩৬.১৯ ব্যাটিং গড়ে এবং ১৪৯.৫৯ স্ট্রাইক রেটে নয়টি অর্ধশতকের সাহায্যে ১,৩০৩ রান করেছেন। সীমিত ওভারের ক্রিকেটে দুর্দান্ত ফর্মে থাকার সুবাদে আইপিএলেও বেশ চড়া দামে দল পেয়েছেন তিনি।
৬. ড্যানিয়েল ক্রিস্টিয়ান
![](https://assets.roar.media/assets/w0dkQt74x0mxLgv8_278398%5B1%5D.jpg)
অস্ট্রেলিয়ার হয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে খেলার সুযোগ না পেলেও ব্যাটে-বলে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে দুর্দান্ত এক মৌসুম কাটিয়েছেন ক্রিস্টিয়ান।
একসময়কার টি-টোয়েন্টি স্পেশালিষ্ট হিসাবে খ্যাতি অর্জন করা এই অলরাউন্ডার বেশ কয়েক বছর প্রদীপের আড়ালে ছিলেন। এই মৌসুম দিয়ে আবারও আলোচনায় উঠে এসেছেন তিনি। এ বছর ৪৩টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলে ৩৮ ইনিংস ব্যাট করে ৩৫.২৮ ব্যাটিং গড়ে এবং ১৬৭.৩৬ স্ট্রাইক রেটে ৮৮২ রান সংগ্রহ করেছেন। একটি শতক এবং তিনটি অর্ধশতক হাঁকিয়েছেন তিনি। বল হাতেও সফল ক্রিস্টিয়ান। ২৬.৬৩ বোলিং গড়ে শিকার করেছেন ৩৬ উইকেট।
৭. ডোয়াইন ব্রাভো
![](https://assets.roar.media/assets/nbD8r4JvAueFST5R_276226%5B1%5D.jpg)
টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের বড় বিজ্ঞাপন ওয়েস্ট ইন্ডিজের অলরাউন্ডার ডোয়াইন ব্রাভো। প্রতিটি ফ্রাঞ্চাইজিভিত্তিক টুর্নামেন্টেই তার চাহিদা তুঙ্গে। এ বছর ছয়টি ভিন্ন দলের হয়ে ৫১টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেছেন ব্রাভো। এর মধ্যে ৪১ ইনিংসে ব্যাট করে ২৫.১৫ ব্যাটিং গড়ে এবং ১৫৪.২৪ স্ট্রাইক রেটে ৬৫৪ রান সংগ্রহ করেছেন। বল হাতে পূর্বের ন্যায় সফল ছিলেন তিনি। ডেথ ওভার স্পেশালিষ্ট এই পেসার ৫১ ম্যাচে শিকার করেছেন ৫৫ উইকেট।
৮. জোফরা আর্চার
![](https://assets.roar.media/assets/zshw0SHggRtOGZPB_275395%5B1%5D.jpg)
মাত্র দুই মৌসুম আগে প্রতিযোগিতামূলক ক্রিকেটে অভিষেক ঘটেছিলো ওয়েস্ট ইন্ডিজ বংশোদ্ভূত ইংলিশ ক্রিকেটার জোফরা আর্চারের। অভিষেকের পর থেকে চোখধাঁধানো নৈপুণ্য প্রদর্শন করছেন তিনি। গত বছর বিপিএলে ব্যাটে-বলে সফলতা পাওয়ার পর ২০১৮ সালের আইপিএলে চড়া দামে দল পেয়েছিলেন এই দ্রুতিসম্পন্ন পেসার। বর্তমানে প্রতিটি ফ্রাঞ্চাইজিভিত্তিক টুর্নামেন্টে তিনি যেকোনো ক্লাবের পছন্দের তালিকায় প্রথম সারিতে আছেন। ২০১৮ সালে তিনি মাত্র ৩৯ ম্যাচে ১৪.৪ স্ট্রাইক রেটে ৬০ উইকেট শিকার করেছেন। সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি বোলারদের তালিকায় তিনি তৃতীয় স্থানে রয়েছেন।
৯. রশিদ খান
![](https://assets.roar.media/assets/I1xs6a9XXKAGI4nG_279360%5B1%5D.jpg)
আফগানিস্তানের লেগ স্পিনার রশিদ খান সীমিত ওভারের ক্রিকেটে আরও একটি দুর্দান্ত মৌসুম কাটিয়েছেন। এই বছর টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে সবচেয়ে বেশি ৬০টি ম্যাচ খেলেছেন তিনি। টি-টোয়েন্টিতে এক পঞ্জিকাবর্ষে সবচেয়ে বেশি ৯৪ উইকেট শিকারের রেকর্ড গড়েছেন এ বছরেই। মাত্র ১৪.৬ স্ট্রাইক রেট এবং ১৫.৪৩ বোলিং গড়ে এই উইকেট শিকার করেছেন তিনি। দলের প্রয়োজনে ব্যাট হাতেও অবদান রেখেছেন রশিদ খান। এ বছর ব্যাট হাতে তিনি ৩১৪ রান তুলেছেন।
১০. অ্যান্ড্রু টাই
![](https://assets.roar.media/assets/kClVxcJ486ftS51k_277507%5B1%5D.jpg)
২০১৮ সালে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে সবচেয়ে বেশি ৩১ উইকেট শিকার করেছেন অস্ট্রেলিয়ার অ্যান্ড্রু টাই। অস্ট্রেলিয়ার এই পেসার ২০১৮ সালের আইপিএলেও সবচেয়ে বেশি ২৪ উইকেট শিকার করেছিলেন।
টাই এ বছর ৫০টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলে বছরের দ্বিতীয় সর্বাধিক ৭৫ উইকেট শিকার করেছেন। ১৪.৮ স্ট্রাইক রেট এবং ২০.২৯ বোলিং গড়ে তিনি এই উইকেট শিকার করেছেন।
১১. ইমরান তাহির
![](https://assets.roar.media/assets/TbO23bZzbX1dl6N4_281909%5B1%5D.jpg)
বর্তমানে সীমিত ওভারের ক্রিকেটে রিস্ট স্পিনাররা রাজত্ব করছেন। ম্যাচের মাঝপথে আক্রমণে এসে চোখের পলকেই ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দেন তারা। রোর বাংলার বর্ষসেরা টি-টোয়েন্টি দলে রশিদ খানের সাথে দ্বিতীয় স্পিনার হিসেবে একাদশে জায়গা করে নিয়েছেন আরেক লেগ স্পিনার ইমরান তাহির। তিনি ২০১৮ সালে ৪৪ ম্যাচে ৫৯ উইকেট শিকার করেছেন। ওভারপ্রতি মাত্র ৬.৭৯ রান খরচ করে এবং ১৬.০ স্ট্রাইক রেটে ও ১৮.১৬ বোলিং গড়ে তিনি এই উইকেট শিকার করেন।
(সকল পরিসংখ্যান ২৬শে ডিসেম্বর, ২০১৮ পর্যন্ত)