সালতামামি ২০২০: বিশ্ব ফুটবল

একটি বছর শেষে মানুষের মনে চাওয়া-পাওয়া কেমন থাকে? অধিকাংশ মানুষই চায়, নতুন বছর যেন বিদায়ী বছর থেকে কয়েকগুণ ভালো কাটে। ২০১৯ সালের শেষপ্রান্তে এসে প্রত্যেকের মনের ইচ্ছা এমনই ছিল। কিন্তু স্বপ্নেও কেউ ভাবেনি, ২০২০ সাল হতে যাচ্ছে পুরো পৃথিবীর মানুষজাতির জন্য ভয়াল এক সময়।

২০১৯ সালের ডিসেম্বরে চীনের উহানে প্রথম শনাক্ত হবার পর কয়েক মাসের ব্যবধানেই পুরো পৃথিবীতে ছড়িয়ে যায় মরণঘাতী কোভিড-১৯ ভাইরাস। এই মহামারিকে সাথে নিয়েই ২০২০ সাল পার করতে হয়েছে মানবজাতিকে। মাঝে একদম থমকে গেলেও ধীরে ধীরে আবার সবকিছু স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। অফিস-আদালত খুলেছে, রাস্তাঘাটে চাঞ্চল্য বেড়েছে, মানুষ ফিরেছে তার কর্মক্ষেত্রে।

লকডাউনের ঘরবন্দী জীবনের সময় ইউরোপসহ বাকি সকল মহাদেশের ফুটবলও বন্ধ ছিল। তাই ফুটবলপ্রেমীরা দীর্ঘদিন ফুটবলের রোমাঞ্চ উপভোগ করা থেকে বঞ্চিত ছিল। তবে পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হবার পর বন্ধ দরজার পেছনে ফুটবল ফিরেছে। এভাবেই গত মৌসুম শেষ করার পর নতুন মৌসুমও শুরু হয়ে গেছে। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকা বা দ্রুততার সাথে লিগগুলোকে শেষ টানা হলেও ফুটবলকে কেন্দ্র করে গল্প তৈরি হওয়া কিন্তু থামেনি। তাই আমাদের আজকের বিষয়বস্তু গত বছরের ইউরোপিয়ান ফুটবলের সেরা ঘটনা ও মুহূর্তগুলোকে নিয়ে।

জনমানবশূন্য মাঠে চলছে প্রাণপণ ফুটবল; Image Credit: Tottenham Hotspur FC/Getty Images

গত বছরের সেরা ঘটনা বা মুহূর্তগুলোর কথা উঠলে প্রথমেই আসে ফুটবলে করোনাভাইরাসের প্রভাব। চীনের উহান থেকে বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়ার পর ফুটবলে এই ভাইরাস প্রথমে আঘাত হানে ইতালিতে। সময়টা তখন ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি। ইতালিয়ান লিগ যখন সব থেকে জমজমাট অবস্থায়, তখনই করোনা ভাইরাস প্রবল দাপটে হানা দেয়। জানুয়ারিতে রোমে প্রথম ভাইরাস শনাক্ত হবার পরই দর্শকবিহীন ম্যাচ আয়োজন করা হচ্ছিল। কিন্তু করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ক্রমাগত বাড়তে থাকার জন্য ফুটবলই অর্নিদিষ্টকালের জন্য স্থগিত ঘোষণা করা হয়।

তবে ততদিনও স্পেন, ইংল্যান্ড, জার্মানি বা ফ্রান্সে এই ভাইরাস সেভাবে দাপট ছড়ায়নি, যদিও মাঠে দর্শকের উপস্থিতি ছিল না। এর মাঝেই জুভেন্টাসের খেলোয়াড় রুগানি, আর্সেনালের কোচ আরতেতা এই ভাইরাসে আক্রান্ত হন। তবে এরপর আস্তে আস্তে প্রায় সব লিগই ম্যাচ বাতিল করতে থাকে, একসময় স্থগিতই করে দেয়া হয় লিগ-টুর্নামেন্ট। এরপর ফুটবল আবার মাঠে ফিরে আসে প্রায় ৬-৭ মাসের দীর্ঘ এক বিরতির পর।

ম্যাচ স্থগিত বা লিগ স্থগিত করার পর আর্থিকভাবে ক্ষয়ক্ষতির স্বীকার হয় ইউরোপের বিভিন্ন ক্লাব। প্রথম দিকে তাদের আয়োজন করা ম্যাচ বাতিল করতে হয়, সেক্ষেত্রে ক্ষতির পরিমাণ হতো আরও বেশি। এরপর লিগ সম্পূর্ণ বন্ধ। টিকেট বা জার্সি বিক্রি করে অথবা টিভিস্বত্ত্ব থেকে ক্লাবগুলোর আয়ের পথ একদম বন্ধ হয়ে যায়। এজন্য বিভিন্ন ক্লাব বাধ্য হয়ে তাদের খেলোয়াড়ের বেতন থেকে বেশ বড় পরিমাণ অঙ্ক কমিয়ে দিতে বাধ্য হয়। যদিও এক্ষেত্রে খেলোয়াড়রাও সর্বোচ্চ সহযোগিতা করেছে ক্লাবগুলোকে, এরপরও আর্থিক ক্ষতি এড়ানো যায়নি। গত গ্রীষ্মকালীন দলবদলের সময় রিয়াল মাদ্রিদ কোনো খেলোয়াড়ই কেনেনি। একজন স্ট্রাইকারের বিশেষ প্রয়োজন থাকার পরও বার্সা খেলোয়াড় কিনতে পারেনি একমাত্র অর্থের অভাবে। এছাড়াও বিশাল পরিমাণ দেনা তাদের ঘাড়ে তো ঝুলছেই।

কোভিড পজিটিভ হয়েছিলেন আরতেতা; Image Credit: AP

বার্সেলোনার কথাই যখন উঠলই, তবে কাতালান ক্লাবটি নিয়েই বলা যাক।

২০২০ সাল তাদের ক্লাব ইতিহাসের সব থেকে বাজে সময় পার করেছে। অ্যাথলেটিক বিলবাওয়ের সাথে ড্র করে মৌসুম শুরু করার পর বার্সা ঠিক বার্সাসুলভ ফুটবল খেলতে পারেনি। এর জের ধরে বরখাস্ত হন আর্নেস্তো ভালভার্দে। তার উত্তরসূরী হিসেবে আসেন কিকে সেতিয়েন।

ভালভার্দে যদি বার্সাকে খাদের কিনারায় নিয়ে ফেলেন, তবে কিকে সেতিয়েন বার্সাকে খাদেই ফেলে দিয়েছিলেন। ছয় মাসে বার্সাকে কোনোদিকেই সোজা করতে পারেননি তিনি। তার উপর চ্যাম্পিয়নস লিগে বায়ার্ন মিউনিখের বিপরীতে বার্সা ৮-২ গোলের লজ্জাজনক এক হার নিয়ে ফেরে।

প্রেসিডেন্ট হোর্সে মারিয়া বার্তোমেউকে হটানোর জন্য শোরগোল আগে থেকেই ছিল। বায়ার্নের বিপক্ষে এমন হারের পর শোরগোল রীতিমতো দাবিতে পরিণত হয়। প্রথমে এর জের ধরে কোচের চাকরি হারান সেতিয়েন। এরপর বার্সাকে বুরোফ্যাক্স পাঠিয়ে দল থেকে চলে যেতে চান মেসি। দীর্ঘদিন ধরে মেসি ছাড়াও ক্লাবের অন্যান্য খেলোয়াড়ের সাথে বার্তোমেউ বোর্ডের সাথে সম্পর্ক তেমন ভালো ছিল না। আর মেসিও আর চাননি এই বোর্ডের অধীনে বার্সেলোনার হয়ে খেলা চালিয়ে যেতে।

Image Credit: Marca

তবে শেষ পর্যন্ত মেসি মত বদলালেও নতুন চুক্তি করেননি। বর্তমানে তিনি একরকম ফ্রি এজেন্ট খেলোয়াড়। চাইলেই স্পেনের বাইরের ক্লাবে তিনি বিনামূল্যে যেতে পারবেন। তবে সম্ভবত তিনি অপেক্ষা করছেন বার্সেলোনার সভাপতি নির্বাচনের জন্য। কারণ, হাজারো সমালোচনার পর বার্তোমেউ বার্সেলোনার সভাপতি পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর পর আর নির্বাচন হয়নি। বর্তমানে কার্লোস তুসকেটস ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব পালন করলেও নির্বাচন হবে চলতি জানুয়ারি মাসে। রোনাল্ড ক্যোমানের অধীনে বর্তমান বার্সা অধারাবাহিক হলেও মেসি ও বার্সেলোনার ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে আসন্ন এই নির্বাচনের উপর।

বার্সেলোনার ৮-২ গোলের লজ্জাজনক হারের কথা যখন উঠলই, মহামারীর জন্য নতুন ফরম্যাটে হওয়া চ্যাম্পিয়নস লিগের কথা এখন বলা যেতে পারে।

সাধারণত চ্যাম্পিয়নস লিগের ম্যাচগুলো হোম ও অ্যাওয়ে হিসেবে করা হয়। একমাত্র ফাইনাল হয় এক ম্যাচের। তবে গত মৌসুমে এমনটা করা হয়নি। এক লেগেই কোয়ার্টার ফাইনাল ও সেমিফাইনাল পর্ব টানা হয়েছে। এছাড়াও ফাইনালের জন্য পূর্বনির্ধারিত ভেন্যুতেও সে ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়নি। গত মৌসুমের চ্যাম্পিয়নস লিগ সংক্ষেপিত আকারে শেষ হয়েছিল পর্তুগালের মাঠেই।

নতুন এক ফরম্যাটে গতবার চ্যাম্পিয়নস লিগ অনুষ্ঠিত হবার পাশাপাশি পাঁচজন খেলোয়াড়ের সাবস্টিটিউট সিস্টেম চালু করা হয়। ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে খেলোয়াড়-স্বল্পতা ও খেলোয়াড়দের উপর টানা ম্যাচ খেলার চাপ যাতে না হয়, তার জন্য এই নিয়মের ব্যবহার করার অনুমতি দেয় ফিফা। চ্যাম্পিয়নস লিগ ও ইউরোপা লিগ ছাড়াও ইউরোপের বাকি লিগের ম্যাচেও পাঁচজন খেলোয়াড় বদলে নেবার নিয়ম চালু হয়। চলতি মৌসুমেও এ নিয়ম অনুসরণ করছে ইউরোপের লিগগুলো। এই নিয়ম একদিক দিয়ে খেলোয়াড়দের জন্য ভালো হলেও ভবিষ্যতের জন্য সমস্যা তৈরি করতে পারে। কারণ, মহামারী নিয়ন্ত্রণে আনার পর পরিস্থিতি যখন স্বাভাবিক হবে, তখন আবার তিনজন বদল করার পুরনো নিয়মে ফিরে যাবে ফিফা। তখন হুট করে আবার মানিয়ে নেওয়া কোচ ও খেলোয়াড়দের জন্য অসুবিধার কারণ হলেও হতে পারে।

গত বছর বিশেষ বিবেচনায় শুরু হয়েছিল পাঁচ সাবস্টিটিউট নিয়মের; Image Credit: Fifa

বছরজুড়ে মহামারীর প্রভাব ও ক্লাবগুলোর হতাশার কাব্য ছেড়ে এবার সফল কিছু মুহূর্তে আসি।

ট্রেবলজেতা দল বেশ কয়েকটিই আছে। তবে একের অধিক ট্রেবল জেতার রেকর্ড ধরে রেখেছিল একমাত্র বার্সেলোনা। এবার তাতেই ভাগ বসাল জার্মান জায়ান্ট বায়ার্ন মিউনিখ। অথচ গত মৌসুমে শুরুর দিকের পারফরম্যান্স দেখে অনেকেই ভেবেছিল, বায়ার্ন মিউনিখের সাফল্যহীন একটি বছর আসছে। কিন্তু পাশার দান পাল্টে দিলেন হ্যান্সি ফ্লিক।

আইনট্র্যাখ্ট্ ফ্রাঙ্কফুটের কাছে ৫ গোলের পরাজয় দিয়েই বায়ার্নে নিকো কোভাচ অধ্যায় শেষ হয়। মৌসুমের মাঝপথে হেইঙ্কেসের পরামর্শে বায়ার্নের নতুন কোচ হন হ্যান্সি ফ্লিক। তার আগমনের সাথে সাথে যেন বায়ার্নের আকাশ থেকে কালো মেঘ কেটে গেল। ফ্লিকের অধীনে মৌসুম শেষে বায়ার্ন ৩৫ ম্যাচে ৩২ ম্যাচ জিতেছে, হেরেছে মাত্র দুটো ম্যাচে। তার ট্যাকটিক্সের কথা উহ্য রাখলেও বাভারিয়ানদের প্রত্যেক খেলোয়াড়দের গোলের প্রতি ক্ষুধার্ত করে তোলাই সব থেকে বড় প্রাপ্তি। এবং দ্বিতীয় কথা হিসেবে বলতে হয় খেলোয়াড়দের পরিবর্তন। লেভানডস্কি, ম্যুলার বা ম্যানুয়েল নয়্যার – প্রত্যেকেই ফ্লিকের ট্যাকটিক্সের ছোঁয়ায় হয়ে উঠেছিলেন রীতিমতো অপ্রতিরোধ্য। এই দুই প্রাপ্তির মিশেলের সব থেকে বড় প্রমাণ বার্সেলোনার বিপক্ষে চ্যাম্পিয়নস লিগের ম্যাচটি। ৫ গোল দেবার পর নিশ্চিত জয় জেনেও বায়ার্ন মিউনিখের একটি খেলোয়াড়ও লাগাম ছেড়ে দেয়নি, শেষ মিনিট পর্যন্ত তারা খেলে গেছেন নিজের সর্বোচ্চকে কাজে লাগিয়ে।

Image Credit: Getty Images
Image Credit: Getty Images

বায়ার্ন মিউনিখের দ্বিতীয় ট্রেবল জেতা বছরে ত্রিশ বসন্ত পর লিগ শিরোপা ঘরে এনেছে লিভারপুল। বহু হতাশা ও আক্ষেপের গল্প রয়েছে তাদের ঝুলিতে।

‘০১-‘০২ মৌসুমে একবার এসেছিল শিরোপা ঘরের আনার একটি সুযোগ। কিন্তু সেবার লড়াইয়ের দৌড়ের অন্তিম সময়ে গিয়ে পিছিয়ে গিয়েছিল জেরার্ডের দল। প্রায় এক দশক পর আরও একটি সুযোগ। ৩৫ ম্যাচের পর লিভারপুল তিন পয়েন্টের ব্যবধানে তালিকার সবচেয়ে উপরে, শিরোপা যেন হাতছানি দিয়ে ডাকছে। কিন্তু অ্যানফিল্ডে ঘটল মস্ত বড় এক অঘটন। জেরার্ড পিছলে পড়ে গেলেন। দেম্বে বা এগিয়ে নিলেন চেলসিকে। এরপর ক্রিস্টাল প্যালেসের সাথে তিন গোল খেয়ে ড্র। ট্রফিটা সোজা চলে গেল ইতিহাদ স্টেডিয়ামে।

এরপর ক্লপ এলেন। কিন্তু হতাশা ও আক্ষেপের গল্প পিছু ছাড়ে না। শেষ মুহূর্তে সব হারিয়েও ক্লপ আশাহত হন না, বলেন অপেক্ষা করতে।

সেই অপেক্ষার অবসান হলো। চ্যাম্পিয়নস লিগ জেতার পরের বছরই প্রিমিয়ার লিগ ঘরে তুললো ক্লপবাহিনী। আজ থেকে বিশ বছর পর প্রায় প্রত্যেকেই ২০২০ সালকে স্মৃতি থেকে মুছে ফেলতে চাইবেন। কিন্তু প্রকৃতির আশ্চর্য খামখেয়ালিপনায় এই ভুলে যাওয়া বছরকে স্বর্ণাক্ষরে লিগে রাখবে বায়ার্ন মিউনিখ ও লিভারপুল।

Image Credit: Liverpool FC

এবার দুটি ভূতুড়ে ম্যাচ সম্পর্কে জানা যাক। একটি অ্যাস্টন ভিলার বিপক্ষে লিভারপুলের ম্যাচ, অন্যটি টটেনহাম হটস্পারের বনাম ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড।

চলতি মৌসুমের অক্টোবর মাসে অ্যাস্টন ভিলার মাঠ ভিলা পার্কে খেলতে গিয়েছিল ক্লপের দল। লিভারপুলের একাদশ বেশ শক্তপোক্তই ছিল সেদিন। ভ্যান ডাইক তখনও ইনজুরিতে আক্রান্ত হননি। মাঝমাঠে ফাবিনহো ও নাবি কেইতা আছেন। তবে ছিলেন না সাদিও মানে ও গোলরক্ষক অ্যালিসন। এই অ্যালিসনের শূন্যতাতেই লজ্জায় পড়তে হলো তাদের। আদ্রিয়ানের ব্যর্থতায় অ্যাস্টন ভিলা লিভারপুলেরর জালে দিল গুনে গুনে সাত গোল। ওলে ওয়াটকিন্স তো হ্যাটট্রিক করলেনই, গোল ও অ্যাসিস্টে দুর্দান্ত খেললেন অ্যাস্টন ভিলার প্লেমেকার জ্যাক গ্রিলিশ। অ্যাস্টন ভিলা এবার বেশ ভালো পারফরম্যান্স দেখাচ্ছে, দলের স্কোয়াডের গভীরতাও মন্দ না। তবে অবশ্যই বর্তমান লিভারপুল দলের সমকক্ষও না। কিন্তু সেদিন কোন আশ্চর্য জাদুবলে অ্যাস্টন ভিলা এমন গোলবন্য বইয়ে দিল তার ব্যাখ্যা কোনো ফুটবলবোদ্ধাদের কাছে নেই।

লিভারপুল না হয় প্রতিপক্ষের মাঠে গিয়ে ৭ গোল হজম করে এসেছিল। কিন্তু ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড যে নিজেদের মাঠেই খেলো ৬ গোল!

লিভারপুল বনাম অ্যাস্টন ভিলা ম্যাচের আগেরদিন মাঠে নেমেছিল স্পার্স বনাম ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড। ওলে গানার শ্যুলসার তার স্বভাববশত ৪-৩-২-১ ফর্মেশনেই তার দলকে মাঠে নামিয়েছিলেন। একাদশের সবাই ছিলেন নিয়মিত মুখ। এমনকি মাত্র ২ মিনিটে ব্রুনো ফার্নান্দেজের গোলের পর ৫ মিনিটের ভেতর স্পার্সের ২ গোল হবার পর দারুণ একটি উত্তেজক ম্যাচ হবার সম্ভাবনা শুরু হয়েছিল। কিন্তু সে সম্ভাবনার গুড়ে বালি করে দেন অ্যান্থনি মার্সিয়েল। ২৮ মিনিটে তার লালকার্ডের পর ছন্নছাড়া দলকে পেয়ে বসে মরিনহো-বাহিনী। ম্যাচের বাকি সময়ে একচেটিয়া খেলে স্পার্স দেয় ৬ গোল। এনদম্বেলে ও অঁরিয়ের পাশাপাশি জোড়া গোল করেন হ্যারি কেইন ও হিউং মিন সন।

Image Credit: Matthew Ashton – AMA/Getty Images

গত বছর ফুটবলবিশ্ব হারিয়ে ফুটবলের দুই কিংবদন্তিকে। গত ২৫ নভেম্বর পরপারে পাড়ি জমান আর্জেন্টিনার ‘৮৬ বিশ্বকাপ জয়ের নায়ক ডিয়েগো ম্যারাডোনা। আর্জেন্টিনার হয়ে ৯১ ম্যাচে ৩৪ গোল করা ম্যারাডোনা নাপোলিকে দুইবার লিগ শিরোপা ও উয়েফা কাপ জিতিয়ে পেয়েছিলেন ঈশ্বর-সমতুল্য মর্যাদা। জীবনের নানা সময়ে বিভিন্ন কারণে সমালোচিত ও নিন্দিত হলেও নেপলসবাসীর কাছে তিনি শুধুই ফুটবল ঈশ্বর।

ম্যারাডোনার মৃত্যুর কয়েকদিন পরেই ১০ ডিসেম্বর না ফেরার জগতে পাড়ি জমান ইতালির ১৯৮২ বিশ্বকাপ ও ব্যালন ডি’অর জেতা কিংবদন্তি পাওলো রসি। ‘৮২ বিশ্বকাপে তার দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের বদৌলতে বিশ্বকাপ ঘরে তুলেছিল ইতালি। তবে রসিকে সব থেকে বেশি স্মরণ করা হয় ঐ বিশ্বকাপের দ্বিতীয় গ্রুপপর্বে ব্রাজিলের বিপক্ষে অনবদ্য এক হ্যাটট্রিকের জন্য। এছাড়াও ক্লাব ফুটবলে জুভেন্টাস ও এসি মিলানের হয়ে খেলে রসি সর্বকালের সেরা ফরওয়ার্ডদের তালিকায় নিজের নাম তুলেছেন। ফুটবল থেকে অবসরের পর মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ফুটবল-পণ্ডিত হিসেবে কাজ করে গেছেন তিনি।

Image Credit: EPA

বেদনা, হতাশা ও সাফল্যমিশ্রিত এমন ঘটনার পর বছরের শেষদিকে বর্ণবাদ নিয়ে পুরো ইউরোপে উত্তাপ ছড়িয়ে পড়ে। তবে ঘটনার সুত্রপাত্র পার্ক দে প্রিন্সেসে পিএসজি বনাম ইস্তাম্বুল বাসাকসেহিরের ম্যাচের মধ্য দিয়ে।

ম্যাচের ১৪ মিনিটে মাঠের বাইরে দাঁড়িয়ে তর্ক করার জন্য বাসাকসেহিরের সহকারী কোচ পিয়েরে ওয়েবোকে লাল কার্ড দেখান রেফারি। এই লাল কার্ড দেখানোর পরের আলাপকালে ম্যাচের চতুর্থ রেফারি সেবাস্তিয়ান কোলতেস্কু ওয়েবোর দিকে বর্ণবাদী মন্তব্য ছুড়ে দেন তিনি। এই মন্তব্যকে তীব্র প্রতিবাদ জানায় বাসাকসেহিরের খেলোয়াড় ও ক্লাব কর্মকর্তারা। এক পর্যায়ে মাঠ ছেড়ে চলেও যান তারা। পরবর্তীতে পিএসজিও তাদেরকে অনুসরণ করে।

এই ঘটনা থেকে পুরো ইউরোপজুড়ে উত্তাপের সৃষ্টি হয়। যদিও পরবর্তীতে ঐ ম্যাচের চতুর্থ রেফারিকে বদলে নতুন একজনকে দিয়ে ঐ ১৪ মিনিট থেকেই ম্যাচ শুরু হয়।

২০২০ সালে ফুটবলে ঘটা বিভিন্ন ঘটনা থেকে এগুলোই ছিল মনে করার মতো। বছরের ১২ মাসে প্রায় ৫-৬ ফুটবল মাঠে না গড়ালেও অল্প সময়েও কম ঘটনা তৈরি হয়নি। যদিও নতুন বছরে সবাই ফেলে আসা বছরকে ভুলে যেতেই চাইবে। কারণ, গত বছরের অধিকাংশ সময়ই মানবজাতির প্রত্যেক পদক্ষেপকে পিছিয়ে দিয়েছে এই বৈশ্বিক মহামারী। তবে বর্তমানে পৃথিবীও এই ভাইরাসকে হারানোর যুদ্ধে বেশ এগিয়ে গেছে। কার্যকারী ভ্যাক্সিন প্রস্তুত, এবং বিভিন্ন লিগে সমর্থকরা ইতঃমধ্যেই মাঠে ফিরতে শুরু করেছে। তাই আশা করা যায়, এ বছরের মাঝামাঝি সময়েই গ্যালারিভরা দর্শকের মাঝে উত্তাপ ছড়ানোর দিনগুলো ফুটবলপ্রেমীদের জীবনে ফিরে আসবে।

This article is in Bangla language. it is about the best moments and incidents of the football year 2020.

Feature Image Source: Getty Images

Background Image Source: ESPN

 

 

Related Articles

Exit mobile version