টটেনহ্যামের বিপক্ষে হোয়াইট হার্ট লেনে বায়ার্নের ঐতিহাসিক ৭-২ জয়ের ঘটনা খুব বেশিদিন আগের নয়। ২০১৯ এর অক্টোবরে বাভারিয়ানদের এই তাণ্ডবলীলায় নেতৃত্ব দিয়েছিলেন দুই বছর আগেও আনকোরা থাকা এক তরুন, সার্জ ন্যাব্রি। চার গোল করা জেনাব্রির ম্যাচ শেষে টুইট ছিল ‘নর্থ লন্ডন ইজ রেড’।
North London is RED!!! pic.twitter.com/1Te5YjqpWo
— Serge Gnabry (@SergeGnabry) October 1, 2019
ফুটবল নিয়ে যারা এক-আধটুও জানেন, তাদের মধ্যে বেশিরভাগ ফুটবলপ্রেমীই অবগত ‘নর্থ লন্ডন ডার্বি’ সম্পর্কে। টটেনহ্যাম বনাম আর্সেনালের নর্থ লন্ডন দখলের লড়াইটা সংক্ষেপে জার্সির রঙের আদলে সাদা বনাম লাল। হোয়াইট হার্ট লেনে সেই ম্যাচে টটেনহ্যামকে দুমড়ে-মুচড়ে দিয়ে নর্থ লন্ডনে লাল পতাকা উড়িয়ে এসেছিলেন ন্যাব্রি। টুইট করে সেই পতাকার রঙ লাল বলে কি বায়ার্নকেই ইঙ্গিত করেছিলেন, নাকি তাতে মিশে ছিল আর্সেনালের আক্ষেপ থেকে বেরিয়ে আসার স্বস্তিও? এই আর্সেনাল থেকেই যে ব্যর্থ হয়ে ফিরেছিলেন ন্যাব্রি!
তবে ন্যাব্রির ব্যর্থ হওয়ার দায় যতটা না আর্সেনালের, তার চেয়ে বেশি টনি পুলিসের। কে এই অখ্যাত টনি পুলিস? সেটা জানতে হলে আমাদের ফিরে যেতে হবে সার্জ ন্যাব্রির ফুটবলার হয়ে উঠার শুরুর দিককার সময়ে।
সার্জ ন্যাব্রির জন্ম জার্মানিতে হলেও তার বাবা জন হারমান ছিলেন আইভরিয়ান বংশোদ্ভূত। নিজের ছেলের ফুটবল ক্যারিয়ার গড়ার পিছনে তার অবদান বেশ গভীর। বাবার হাত ধরে স্থানীয় ক্লাব ঘুরে ঘুরে বিভিন্ন ধাপ পেরিয়ে শেষে জার্মান ক্লাব স্টুটগার্টে জায়গা হয়েছিল ন্যাব্রির। বুন্দেসলীগা চ্যাম্পিয়ন হিসেবে বিখ্যাত রূপার শিল্ডটি মোটে ৩ বার উত্তোলন করতে পারলেও নিজেদের যুব একাডেমি দিয়ে সবসময় আলোচনায় ছিলো স্টুটগার্ট। ন্যাব্রিও তাই সেইসময় সতীর্থ হিসেবে পেয়ে যান হালের দুই জার্মান সেনসেশন জশুয়া কিমিখ ও টিমো ভার্নারকে। প্রবাদ আছে সঙ্গ দোষে লোহাও নাকি ভাসে। জেনাব্রির মেলে ধরা তাই প্রতিভাবান সব সতীর্থদের পেয়েই।
তবে আদতে লোহা ছিলেন না এই জার্মান, খাঁটি হীরা হিসেবেই তাকে চিনে নেন পিটার ক্লার্ক। বেশি সময় লাগেনি, মাত্র দশ মিনিট! এই দশ মিনিটের কারিকুরিতেই এই আর্সেনাল স্কাউট সদস্যকে মুগ্ধ করেন ন্যাব্রি। তাই মাত্র ১৬ বছর বয়সেই পিটার ক্লার্কের হাত ধরে ইংল্যান্ডে আগমন এই জার্মানের।
কেউ কেউ সুযোগ পেয়ে কাজে লাগাতে পারেন না, আবার কারো ভাগ্যে সুযোগই জোটে না। ন্যাব্রির অবস্থান ছিল দ্বিতীয় দলে। ফিফা রেগুলেশনের জন্য এক বছর অপেক্ষা করে তবেই লন্ডনে আগমন ন্যাব্রির। অনুমিতভাবেই আর্সেন ওয়েঙ্গার ন্যাব্রিকে আরো পরিপক্ব করার জন্য বয়সভিত্তিক দলে পাঠিয়ে দেন। ২০১০ থেকে ২০১২ – পাক্কা দুই বছর থেকে বয়সভিত্তিক দলে ন্যাব্রি ম্যাচ খেলেছিলেন মোটে ৭টি, বল জালে জড়িয়েছিলেন ৬ বার। অবশ্য মাত্র ৭ ম্যাচ খেলার পিছনের প্রধান শত্রু ছিল ইনজুরি।
২০১২-১৩ মৌসুমে আর্সেনাল মূল দলে উন্নীত হলেও নিজেকে মেলে ধরার সুযোগই পেলেন হাতে গোনা কয়েকবার। ওয়ালকট, ওজিল, উইলশেয়ারদের ভিড়ে ন্যাব্রির সুযোগ পাওয়াই যেন ছিল আকাশের চাঁদ হাতে পাওয়া। তিন বছরে মাত্র ১৮ বার গানারদের জার্সি গায়ে জড়িয়ে করলেন ১ গোল। অথচ শুরুটা ছিলো দারুন আশা জাগানিয়া। মাত্র ১৭ বছর ২৯৮ দিন বয়সে গানারদের জার্সি গায়ে জড়িয়ে করে ফেলেছিলেন ছোটোখাটো একটা ইতিহাস। নন ইংলিশ হিসেবে সবচেয়ে কনিষ্ঠ খেলোয়াড় হিসেবে ন্যাব্রির নাম তখন আর্সেনালের ইতিহাসের পাতায়। আর সব মিলিয়েও মোটে দ্বিতীয় কনিষ্ঠ খেলোয়াড়। নিজের তৃতীয় ম্যাচেই সোয়ানসির বিপক্ষে জয়সূচক গোল। ন্যাব্রি তখন উড়ছেন আকাশে।
অন্যদিকে, ফুটবল বিশ্ব যখন ধরেই নিয়েছিল পাকা জহুরী ওয়েঙ্গার ফুটবল বিশ্বকে উপহার দিতে চলেছেন আরেকটি নক্ষত্র, তখনই বিধি বাম। ইনজুরির ছোবল আর ফর্মহীনতা ন্যাব্রির পায়ে লেগেছিল জোঁকের মতো। উপরি পাওনা হিসেবে জুটেছিল হতাশা আর আত্মবিশ্বাসের অভাব। আকাশ থেকে পাতালে নামতে ন্যাব্রি সময় নিলেন মাত্র সাড়ে পাঁচ মাস। হতাশার জাল থেকে বের হবার জন্য নিজের ইচ্ছাতেই আর্সেনাল ছাড়তে চাইলেন তিনি। ওয়েঙ্গারের সায়ও ছিল তাতে, যার ফলে ২০১৫তে ধারে যোগ দিলেন ওয়েস্টব্রমে। কিন্তু হতাশার জাল থেকে বের হবেন কী, উলটো নিজের ক্যারিয়ার সবচেয়ে বড় কালো অধ্যায় নিজেই ডেকে আনলেন তিনি।
ওয়েস্টব্রমে যোগ দেওয়ার পর পুরো মৌসুমে মাত্র ৩ ম্যাচে ১৮ মিনিট মাঠে কাটার কষ্টের চেয়েও ন্যাব্রিকে বড় আঘাত দিয়েছিলেন তৎকালীন ওয়েস্টব্রম কোচ টনি পুলিস। প্রিমিয়ার লিগে খেলার জন্য কখনোই উপযুক্ত ছিলেন না দাবি করে তাকে বাতিলের খাতায় ছুড়ে ফেলেছিলেন তিনি। একজন পেশাদার ফুটবলারের ক্ষেত্রে এর চেয়ে ভয়ঙ্কর বিষয় আর কী-ই বা হতে পারে!
কিন্তু মাঠে না নামতে পারলেও নিজের চেষ্টার কোনো ত্রুটি রাখেননি ন্যাব্রি। অনেকটা হতাশ হয়েই আর্সেনাল থেকে চলে যাওয়ার মনস্থির করেন তিনি। তবে এত বড় সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে নিশ্চই দু’বার ভাবতে হয়েছে তাকে। এক্ষেত্রে শরনাপন্ন হয়েছিলেন নিজের আদর্শ মানা মেসুত ওজিলের নিকট। ওজিল ছাড়াও সেই সময় আর্সেনাল দলে ছিলেন আরেক জার্মান ফুটবলার মার্টেসেকার। দুইজনই সম্মতি জানিয়েছিলেন ন্যাব্রির সিদ্ধান্তে। ফলাফল, ৫ মিলিয়ন ইউরোর বিনিময়ে নিজভূমের ক্লাব ওয়ার্ডার ব্রেমেনে ফিরেন ন্যাব্রি। কিন্তু সেই সময় ন্যাব্রির ক্যারিয়ার এমন এক সন্ধিক্ষণে, যেখানে ভাগ্যের সহায়তা দরকার ছিল অনেকখানি।
কথায় আছে, ভাগ্য নাকি সাহসীদের পক্ষেই থাকে। ন্যাব্রির বেলায়ও এর হেরফের হয়নি।
২০১৬-১৭ মৌসুমে ওয়ের্ডার ব্রেমেনে যোগ দেওয়ার পর মৌসুম শুরুর আগেই নিজেকে চেনানোর মঞ্চ পেয়ে যান ন্যাব্রি। ২০১৬ রিও অলিম্পিকে জার্মান দলে প্রথমে জায়গা না হলেও এক খেলোয়াড়ের ইনজুরির দরুন কোচ হর্স্ট রুবেশ শেষ মুহূর্তে অলিম্পিকের দরজা খুলে দেন তার জন্য। টনি পুলিসের মুখের উপর বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে ৬ গোল করে টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ গোলদাতার পুরস্কার জিতে নেন তিনি। সুযোগকে এর চেয়ে বড় করে কাজে লাগাতেই বা পারেন কয়জন! সেই ছয় গোলের তিনটি গোলই ছিলো ন্যাব্রির সিগনেচার স্টাইলে, দুর্দান্ত দৌঁড়ে কাট ব্যাক ইন করে জালের কোণা খুঁজে নেওয়া। বিশ্বকে নিজের প্রতিভার জানান দেওয়ার জন্য ওই কয় ম্যাচই যথেষ্ট ছিল তার জন্য। তবে নিজেকে প্রমাণের জন্য দরকার ছিল আরো সময়।
মাত্র ২১ বছর বয়সী ন্যাব্রির ছিল সামনে অফুরন্ত সময়। তাই পিছনের কালো অধ্যায় সহজেই ঝেড়ে ফেললেন এই উইঙ্গার। তার উপর স্বদেশি ক্লাবও ছিল বড় অনুপ্রেরণা। ইয়াগো আসপাস কিংবা ফ্লোরিয়ান থাউভিনের মতো খেলোয়াড়েরাও নিজ দেশের গণ্ডিতে এসে ফিরে পেয়েছিলেন নিজেদেরকে। ন্যাব্রির লক্ষ্য ছিল তাদের দেখানো পথেই চলা।
সেই মৌসুমে আগের কয়েক বছরের অধারাবাহিকতা কাটিয়ে ব্রেমেন ফিরেছিল নিজেদের কক্ষপথে। ম্যাক্স ক্রুজ, ফ্লোরিয়ান কাইঞ্জ, ইজেট হাজরোভিচসহ বেশ ক’জন পরীক্ষিত সৈনিক তখন মূল দলে। ভাগ্য যে সাহসীদের পক্ষে থাকে, তা দ্বিতীয়বারের মতো প্রমাণিত হলো ন্যাব্রির ক্যারিয়ারে। লেফট উইঙ্গার হিসেবে কাইঞ্জ ছিলেন এক প্রকার অনুমিতই। কিন্তু কাইঞ্জের ইনজুরিতে হুট করে নিজেকে প্রমান করার দরজাও খুলে যায় তার সামনে। নিজের দ্বিতীয় ম্যাচেই বরুশিয়া মনচেনগ্লাডবাখের বিপক্ষে করে বসেন ম্যাচ জেতানো গোল। পরের দুই ম্যাচে শালকে, লিপজিগের অতো বড় দলগুলোও হাসফাঁস করতে থাকে ন্যাব্রির পায়ের ভেলকিতে। শেষ পর্যন্ত মৌসুমের মাঝপথ থেকে খেলেও ২৭ ম্যাচে ১১ গোল ও দুই গোলে সহায়তা করে ব্রেমেনকে সেরা দশে ফিরিয়েছিলেন ন্যাব্রি। গোলের পরিসংখ্যান আরো চমকপ্রদ হতো, যদি না মাঝে পেশির ইনজুরির জন্য দিনকয়েক বাইরে না থাকতেন।
জার্মান ক্লাবের হয়ে এইরকম ঈর্ষণীয় পারফরম্যান্স, কিন্তু বায়ার্নের চোখে পড়বে না, তা আবার হয় নাকি! মৌসুম শেষ হওয়া মাত্রই ৮ মিলিয়ন দিয়ে পানির দামে হীরে কিনে আনলো বায়ার্ন ম্যানেজমেন্ট। কিন্তু তখন বায়ার্নে রোবেন-রিবেরির দখলে দুই উইং। তাই বুদ্ধি করে বায়ার্ন ২০১৭তে ন্যাব্রিকে ধারে পাঠায় হফেনহাইমে। হফেনহাইম তখন ইউরোপের অন্যতম রোমাঞ্চকর দল।
জুলিয়েন নাগেলসম্যানের অধীনে ন্যাব্রি এইবার ছাড়িয়ে যান গত মৌসুমের পারফরম্যান্সকেও। ফলে, নিজেদের ইতিহাস সেরা সাফল্য হিসেবে বুন্দেসলিগার পয়েন্ট টেবিলের তৃতীয় স্থান অর্জন করে নেয় হফেনহাইম। পুরো মৌসুমে ৬৬ গোল করে বায়ার্নের পরই গোল করার দিক থেকে অবস্থান দাঁড়ায় ক্লাবটির। ১০ গোল ও আট এসিস্টে তার মধ্যে ১৮ গোলেই অবদান ছিল সার্জ ন্যাব্রির।
জুলিয়েন নাগেলসম্যান আর ন্যাব্রি যেন হয়ে উঠেছিলেন অনবদ্য এক জুটি। মূলত নাগেলসম্যানই ন্যাব্রির সেরাটা বের করে আনেন, আর তার মধ্যে বাড়িয়ে দেন আত্মবিশ্বাসের পারদ। তাই মৌসুমশেষে একজন চ্যাম্পিয়ন বেশেই পরের বছরে অ্যালিয়াঞ্জ অ্যারেনাতে প্রত্যাবর্তন হয় ন্যাব্রির।
নতুন কোচ নিকো কোভাক মাত্রই বায়ার্নের ডাগআউটে এলেন। রোবেন, রিবেরি, হামেস, মুলার, থিয়াগোদের মতো প্রতিভাবান ও পরীক্ষিত খেলোয়াড়ের ছড়াছড়ি বাভারিয়ানদের দলে। নিজেকে ততদিনে প্রমান করা ন্যাব্রির পাশে তখনও একটি ছোট প্রশ্ন জুড়ে দিয়েছেন ফুটবলবোদ্ধারা, বড় ক্লাবের চাপ সামলাতে পারবেন তো এই তরুণ? সেটির জন্য তো ন্যাব্রির আগে দরকার প্রথম একাদশে খেলার সুযোগ। তৃতীয়বারের মতো ভাগ্য যেন ‘পুলসিরাত’ হয়ে উঠল তার জন্য।
মৌসুমের শুরুতেই রোবেন ইনজুরির দরুন মাঠের বাইরে, কিংসলে কোম্যান খেলার বাইরে তারো অনেক আগে থেকেই। প্রথম একাদশে তাই হুট করেই জায়গা পেয়ে যান। অন্যদিকে রাশিয়া বিশ্বকাপ শেষে পর্যুদস্ত মুলার। সাথে কোভাকের খেলার ধরনের সাথে তাল না মিলাতে পেরে খাবি খাচ্ছেন হামেস রদ্রিগেজও। খুব দ্রুতই দৃশ্যপট পালটে গিয়ে এইবার বায়ার্নের নিউক্লিয়াসই হয়ে উঠলেন এই তরুণ উইঙ্গার। মৌসুমের শুরুতে যে প্রশ্ন জুড়ে দিয়েছিলেন অনেকে, সেটির জবাবও দিলেন সুযোগ পেয়েই। পিছিয়ে পড়েও বায়ার্নের লিগ জেতার মূল কারিগর হয়ে উঠলেন এই জার্মান খেলোয়াড়। ছাড়িয়ে গেলেন আগের দুই মৌসুমের ন্যাব্রিকেও। ১৩ গোল আর ৯ গোলে সহায়তা করে রোবেন-রিবেরি-লেভানডস্কিদের পিছনে ফেলে বায়ার্নের প্লেয়ার অফ দ্য সিজনের পুরস্কার ওঠে ন্যাব্রির হাতে। আর হ্যাঁ, সাথে গলায় ওঠে ডিএফবি পোকালের মেডেলও!
ক্লাব ক্যারিয়ারের উত্থানের সাথে ন্যাব্রির আরেকটি গল্পও আছে। সেটি হলো ‘ডাই মানশাফট’দের জার্সি গায়ে অপ্রতিরোধ্য হয়ে ওঠা। ব্রেমেনে যখন ন্যাব্রির উত্থান, সেই সময় থেকেই তিনি ছিলেন জোয়াকিম লো’র নজরে। কিন্তু বাজিয়ে দেখার মতো ম্যাচও মিলছিল না তার হাতে। একদিকে সব পরীক্ষিত সৈনিক, অন্যদিকে একের পর এক ইউরো বিশ্বকাপ বাছাইয়ের গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ। অবশেষে বিশ্বকাপ বাছাইয়ের শেষ দিকের ম্যাচগুলোর জন্য ২০১৬ এর শেষ দিকে ন্যাব্রিকে ফোন করে বসলেন জার্মান কোচ।
প্রথমে কোনো এক রেডিও থেকে আসা প্র্যাঙ্ক কল ভেবে বসেছিলেন ন্যাব্রি। কিন্তু পরক্ষণে যখন বুঝতে পারলেন ফোনের অপর পাশের ব্যাক্তিটি স্বয়ং জোয়াকিম লো, তখন বিস্ময়াভিভূত হওয়ার পাশাপাশি আনন্দের আতিশয্য ও শিহরণ বয়ে গিয়েছিল তার মেরুদণ্ড বেয়ে। ২০১৬ সালের নভেম্বরে সান মারিনোর বিপক্ষে স্বপ্নের মতো এক অভিষেক কাটান ন্যাব্রি। ১৯৭৬ সালে ইউরোতে যুগোস্লাভিয়ার বিপক্ষে জার্ড মুলারের হ্যাটট্রিকের পর এই প্রথম কোনো অভিষিক্ত জার্মান খেলোয়াড় করে বসলেন ৩ গোল!
অভিষেক ম্যাচে হ্যাটট্রিকের ইতিহাস গড়েই থেমে থাকেননি তিনি, জাতীয় দলের হয়ে ইতঃমধ্যেই ১৩ ম্যাচে গোল করে ফেলেছেন ১৩টি! এত দ্রুত জার্মানির জার্সি গায়ে ১৩ গোল করতে পারেননি আর কেউ। তাই হয়তো রাশিয়া বিশ্বকাপে তাকে দলে না নেওয়ার জন্য বারবার আফসোসে পুড়েছেন জোয়াকিম লো। দ্রুততম ১০ গোল করার ক্ষেত্রে পিছনে ফেলেছেন মিরোস্লাভ ক্লোসাকে। ক্লোসার যেখানে লেগেছিল ১৩ ম্যাচ, ন্যাব্রি তা করেছেন মোটে ১১ ম্যাচেই। এমনকি মেসি, রোনালদো, পুসকাস কিংবা ম্যারাডোনার মতো খেলোয়াড়েরাও আন্তর্জাতিক ম্যাচে নিজেদের প্রথম ১০ গোল করেছিলেন যথাক্রমে ৩১, ৩৩, ১১ ও ২২ ম্যাচে। এদিক থেকে ৯ ম্যাচে প্রথম ১০ গোল করে ন্যাব্রি থেকে এগিয়ে আছেন একমাত্র পেলে।
বলা বাহুল্য, ন্যাব্রি আদতে একজন উইঙ্গার। তবে নিজের পারফরম্যান্সে দ্রুতই জার্মান দলের নিউক্লিয়াস হয়ে ওঠা ন্যাব্রির মূল চ্যালেঞ্জ বড় মঞ্চে নিজের জাত চেনানো। জার্মানির হয়ে বড় মঞ্চ ন্যাব্রির জন্য প্রস্তুত হয়েই আছে। ২০২১ সালেই যে শুরু হতে হচ্ছে ইউরোপের শ্রেষ্ঠত্য লড়াইয়ের টুর্নামেন্ট ইউরো! একবিংশ শতাব্দীতে বিশ্বকাপ, কনফেডারেশনস কাপ জিতলেও একমাত্র ইউরোই ছুঁয়ে দেখা হয়নি জার্মানির। আর সুযোগ লুফে নিতে যে ন্যাব্রি ভোলেন না, সেটা তো ইতঃমধ্যেই প্রমাণিত। ন্যাব্রিকে পারবেন ইউরোর আলো নিজের দিকে কেড়ে নিতে সেই প্রশ্ন সময়ের হাতেই তোলা থাক।
কারো কথাকে নিজ যোগ্যতার বলে ভুল প্রমাণ করার আনন্দ কতটুকু, তা ন্যাব্রিই ভালো বলতে পারবেন। তবে এখনো অনেক কিছু দেওয়ার বাকি এই ২৪ বছর বয়সী উইঙ্গারের। নিজেকে প্রতি মৌসুমে ছাড়িয়ে যাবার প্রবণতা এই মৌসুমেও পরিলক্ষিত হয়েছে। এখন পর্যন্ত ৩৪ ম্যাচে ১৮ গোলের পাশাপাশি ১১ অ্যাসিস্ট তার নামের পাশের। ফিনিক্স পাখির মতো জেগে ওঠা ন্যাব্রির ডানা মেলে উড়তে হবে আরো অনেক দূর। সে সামর্থ্য যে তার আছে, তা নিশ্চয়ই এখন স্বীকার করবেন খোদ টনি পুলিসও!