অঘটন বলতে আমরা ঠিক কী বুঝি?
সহজ ভাষায় বলতে, যে ফলাফল আমাদের প্রচলিত সমীকরণ দিয়ে ঠিক মেলানো যায় না, সেগুলোই অঘটন। ক্রিকেট বিশ্বকাপের ইতিহাসে এমন অনেক ম্যাচ আছে, যেসব ম্যাচের ফলাফল ক্রিকেট বিশ্লেষকদের সব অনুমানকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে সারা বিশ্বকে দিয়েছে বিশাল চমক। বিশ্বকাপে এমন অঘটনের সংখ্যা এতটাই বেশি যে. সেখান থেকে মাত্র পাঁচটি ম্যাচ বেছে নেওয়া সত্যিই বেশ দুরূহ কাজ। তবুও আমরা সেই দুরূহ কাজটি করার চেষ্টাই করেছি।
দেখে নেওয়া যাক, রোর বাংলার দৃষ্টিতে বিশ্বকাপের কোন পাঁচটি ম্যাচ সেরা অঘটনের তালিকায় জায়গা পেলো।
কেনিয়ার কাছে ধরাশায়ী ক্যারিবিয়ানরা (১৯৯৬ বিশ্বকাপ)
আগের আসরগুলোতে বেশ কিছু ম্যাচ থেকে অপ্রত্যাশিত ফলাফল এলেও সত্যিকার অর্থে প্রথম অঘটনের দেখা মেলে ১৯৯৬ বিশ্বকাপেই। সেই আসরে গ্রুপ এ’র ম্যাচে পুনেতে দুইবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন উইন্ডিজের মুখোমুখি হয় সেই আসরের নবাগত দল কেনিয়া। দল হিসেবে ক্যারিবীয়দের আশেপাশেও কেনিয়ার থাকার কথা নয়। বিশ্বকাপ খেলতে আসাটাই ছিল আফ্রিকার দেশটির জন্য বিশাল এক সাফল্য। তাই স্বাভাবিকভাবেই একপেশে একটা ম্যাচই সবাই প্রত্যাশা করছিলো।
ম্যাচের শুরুটাও ঠিক সেরকম কিছুরই আভাস দিচ্ছিলো। কোর্টনি ওয়ালশের বোলিং তোপে মাত্র ৪৫ রানেই ৩ উইকেট খুইয়ে বসে কেনিয়া। সেখান থেকে তারা আর সেভাবে ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি, শেষ পর্যন্ত স্টিভ টিকোলোর ২৯ রান ও হিতেশ মোদির ২৬ রানে ভর করে মাত্র ১৬৬ রানে অলআউট হয় তারা। কেনিয়ার মতো আন্ডারডগ দল এই স্বল্প পুঁজি নিয়ে ক্যারিবীয়দের হারানো তো দূরের কথা, হালকা লড়াই যে করতে পারবে, এ কথাও হয়তো ইনিংস বিরতিতে কেউ ভাবেনি।
কিন্তু এই ছোট টার্গেট তাড়া করতে নেমেও শুরু থেকেই উইকেট হারাতে শুরু করে উইন্ডিজ। কেনিয়ার বোলারদের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ের বিপক্ষে কিছুতেই রানের চাকা সচল করতে পারছিলো না ক্যারিবীয়রা। শিবনারায়ণ চন্দরপল ও রজার হার্পার বাদে আর কোনো ব্যাটসম্যান দুই অঙ্কের ঘর স্পর্শ করতে ব্যর্থ হলে মাত্র ৯৩ রানে অলআউট হয়ে যায় উইন্ডিজ! কেনিয়া ম্যাচটি জিতে নেয় ৭৩ রানে।
বিশ্বকাপে এর আগেও তিনবার সহযোগী দেশের কাছে টেস্ট স্ট্যাটাসপ্রাপ্ত দেশের হার ক্রিকেটবিশ্ব দেখেছে বটে, তবে সে সময়ের শ্রীলঙ্কা কিংবা জিম্বাবুয়ে টেস্ট স্ট্যাটাস না পেলেও দল হিসেবে তারা সমীহ করার মতোই ছিল। কিন্তু কেনিয়ার মতো আনকোরা একটা দলের কাছে প্রতিষ্ঠিত ‘জায়ান্ট’ ক্যারিবীয়দের হার সত্যিই অভাবনীয় ছিল। এটি ছিল কেনিয়ার ক্রিকেট ইতিহাসের প্রথম আন্তর্জাতিক ওয়ানডে ম্যাচ জয়, আর এ ম্যাচে হারার মাধ্যমেই প্রথমবারের মতো সহযোগী কোনো দেশের কাছে হারার স্বাদ পায় উইন্ডিজ। ঐতিহাসিক এই ম্যাচে ১০ ওভারে মাত্র ১৫ রান দিয়ে ৩ উইকেট তুলে নিয়ে ম্যাচসেরা নির্বাচিত হন কেনিয়ার অধিনায়ক মরিস ওদুম্বে।
বাংলাদেশের সেই ঐতিহাসিক জয় (১৯৯৯ বিশ্বকাপ)
১৯৯৭ সালের আইসিসি ট্রফি জয়ের মাধ্যমে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপে খেলার যোগ্যতা অর্জন করে বাংলাদেশ। নিজেদের অভিষেক বিশ্বকাপে খুব বেশি প্রত্যাশা টাইগারদের কাছ থেকে ছিল না; গ্রুপের আরেক সহযোগী সদস্য স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে জয়টাই ছিল মূল লক্ষ্য। মিনহাজুল আবেদীন নান্নু’র নৈপুণ্যে সেই জয়ের লক্ষ্য পূরণ হওয়ায় বাংলাদেশের প্রত্যাশার সমীকরণ এমনিতেই মিলে গেছিলো। তাই জয়-পরাজয়ের কথা না ভেবে পাকিস্তানের বিপক্ষে নিজেদের শেষ ম্যাচটা একদম চাপহীন হয়ে খেলতে নেমেছিলো টাইগাররা।
অবশ্য সেই আসরে পাকিস্তানের যা ফর্ম ছিল, তাতে ম্যাচ শুরুর আগে বাংলাদেশের জয়ের কথা শুনলে যে কেউ হেসে উড়িয়ে দিতো। নর্দাম্পটনে টস জিতে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেয় টাইগাররা। শুরুটা বেশ ভালোভাবেই করে বাংলাদেশ, উদ্বোধনী জুটিতে বিদ্যুৎ-অপি মিলে ৬৯ রান যোগ করেন। কিন্তু মাত্র এক রানের ব্যবধানে দুই ওপেনারই বিদায় নিলে চাপে পড়ে যায় বাংলাদেশ। সেখান থেকে খেলার হাল ধরেন বাংলাদেশের পুরনো যোদ্ধা আকরাম খান। তার ৪২ রান ও শেষ দিকে খালেদ মাহমুদ সুজনের ২৭ রানে ভর করে নির্ধারিত ৫০ ওভার শেষে ৯ উইকেটে ২২৩ রান সংগ্রহ করে টাইগাররা। অবশ্য এই সম্মানজনক সংগ্রহের পিছনে পাকিস্তানি বোলারদের অতিরিক্ত ৪০ রানের অবদানটাও কম ছিল না।
জবাব দিতে নেমে খালেদ মাহমুদের বোলিং তোপে মাত্র ৪২ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে বিপদে পড়ে যায় পাকিস্তান। আজহার মাহমুদ ও ওয়াসিম আকরাম মিলে সেই বিপদ সামাল দেওয়ার চেষ্টা করলেও দলীয় ৯৭ রানের সময়ে আজহার রান আউট হয়ে ফিরে গেলে সেই প্রতিরোধের দেয়ালও ভেঙে যায়। এরপর একটা করে পাকিস্তানের উইকেটের পতন হতে থাকে, আর বাংলাদেশও ইতিহাস গড়ার দিকে এক ধাপ এগিয়ে যেতে থাকে। দলীয় ১৬১ রানে সাকলাইন মুশতাকের রান আউটের মাধ্যমে জয় নিশ্চিত হওয়ার সাথে সাথে সুদূর নর্দাম্পটন থেকে আনন্দের হাওয়া যেন বাংলাদেশে এসে ভীষণ এক নাড়া নিয়ে যায়।
এটি ছিল টেস্ট স্ট্যাটাসপ্রাপ্ত কোনো দেশের বিপক্ষে বাংলাদেশের প্রথম ওয়ানডে জয়। এই জয়টা বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে অনেক বড় ভূমিকা রেখেছে, কারণ এই জয়ের কারণে টাইগারদের টেস্ট স্ট্যাটাস পাওয়ার পালে দারুণ এক হাওয়া লাগে। যার ফলশ্রুতিতে ২০০১ সালে টেস্ট স্ট্যাটাস পায় বাংলাদেশ। ৬১ রানের ওই ঐতিহাসিক জয়ে অলরাউন্ড ভূমিকা রাখায় ম্যাচসেরার পুরস্কার জেতেন খালেদ মাহমুদ সুজন।
‘মিরাকল অফ কেনিয়া’ (২০০৩ বিশ্বকাপ)
ক্রিকেট বিশ্বকাপের সপ্তম আশ্চর্য ঘটনার সংকলন করা হলে তাতে ২০০৩ বিশ্বকাপে কেনিয়ার সেমিফাইনাল খেলার ঘটনাটা একদম প্রথমদিকেই থাকবে। আর সেই সেমিফাইনাল খেলার পিছনে যে ম্যাচটা সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছিলো, সেটা শ্রীলঙ্কা বনাম কেনিয়া ম্যাচ। ওই আসরে দক্ষিণ আফ্রিকার সাথে সহ-আয়োজক ছিল জিম্বাবুয়ে ও কেনিয়া। কিন্তু নিরাপত্তার অজুহাত দিয়ে নিউ জিল্যান্ড দল নাইরোবি যেতে অস্বীকার করায় মাঠে না নেমেই চার পয়েন্ট পেয়ে যায় কেনিয়া। সমীকরণ এমনদিকে দাঁড়ায়, যাতে কোনো একটা বড় দলের বিপক্ষে জয় পেলেই কেনিয়া চলে যাবে সুপার সিক্সে। আর সেই বড় দল হিসেবে লঙ্কানদেরই বেছে নেয় তারা।
নাইরোবিতে টসে হেরে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে কেনেডি ওটিয়েনোর ৮৮ বলে ৬০ রান এবং বাকি ব্যাটসম্যানদের ছোট ছোট অবদানে নির্ধারিত ৫০ ওভার শেষে ৯ উইকেটে ২১০ রান সংগ্রহ করে কেনিয়া। মাপকাঠির বিচারে ২১১ রান লক্ষ্যমাত্রা হিসেবে খুব একটা বড় ছিল না বটে, কিন্তু নাইরোবির স্লো পিচ, সাথে স্বাগতিক হওয়ার সুবিধা – সব মিলিয়ে এই স্বল্প পুঁজিই কেনিয়াকে লড়াই করার স্বপ্ন দেখাচ্ছিলো।
জবাব দিতে নেমে ৩৯ রানের মধ্যে দুই ওপেনারকে হারিয়ে শুরুতেই চাপে পড়ে যায় শ্রীলঙ্কা। সেখান থেকে তাদের তুলে উঠানোর চেষ্টা করেন দুই অভিজ্ঞ সেনা হাসান তিলকারত্নে এবং অরবিন্দ ডি সিলভা। কিন্তু তাদের সব প্রতিরোধ ভেঙে দেন কেনিয়ার লেগ স্পিনার কলিন্স ওবুইয়া। ম্যাচসেরা এই বোলার মাত্র ২৪ রানে ৫ উইকেট তুলে নিলে ১৫৭ রানেই অলআউট হয়ে যায় লঙ্কানরা। মহাগুরুত্বপূর্ণ এই ম্যাচ কেনিয়া জিতে নেয় ৫৩ রানে। এই ম্যাচ জয় কেনিয়াকে শুধু সুপার সিক্স নয়, হিসাবের মারপ্যাঁচে সেমিফাইনালে তুলতেও বড় ভূমিকা রেখেছিলো।
এক দিনে দুই ‘অঘটন’ (২০০৭ বিশ্বকাপ)
ক্রিকেট ইতিহাসে ১৭ মার্চ দিনটিকে ‘আন্তর্জাতিক অঘটন দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করা যেতেই পারে। কারণ একই দিনে দুইটি অঘটন ঘটার নজির যে মাত্র একটাই আছে। সেদিন পোর্ট অফ স্পেনে ভারতের মুখোমুখি হয় বাংলাদেশ। সেই ভারতীয় দলের ব্যাটিং লাইনআপ ছিল সর্বকালের অন্যতম সেরা লাইনআপ। শচীন টেন্ডুলকার, সৌরভ গাঙ্গুলি, রাহুল দ্রাবিড়, বীরেন্দর শেবাগ – চারজনই তখন বিশ্ব ক্রিকেটের প্রতিষ্ঠিত তারকা। এমন হাইপ্রোফাইল ব্যাটিং লাইনআপের কারণে সেই আসরের হট ফেভারিট দলের তকমাটাও ভারতের সাথেই ছিল। বাংলাদেশের বিপক্ষে ওই ম্যাচে তাই ভারতের সহজ জয়ের পক্ষে ক্রিকেট বিশ্লেষকদের বাজি ধরাটাই ছিল স্বাভাবিক। কিন্তু একটি ঘটনা পুরো বাংলাদেশি ক্যাম্পের মনোবলে পরিবর্তন এনে দিয়েছিলো।
ওই ম্যাচের আগের দিন জাতীয় দলের খেলোয়াড় মানজারুল ইসলাম রানার মৃত্যুর সংবাদে পুরো দলজুড়ে নেমে আসে শোকের ছায়া। এই শোক যেন সবাইকে অন্যরকম এক শক্তিতে জাগ্রত করে তোলে। চোখের পানি মুছে সকলে প্রতিজ্ঞা করে, যেভাবেই হোক, রানার জন্য হলেও এই ম্যাচ জিততেই হবে। আর সেই প্রতিজ্ঞা পূরণে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেন রানারই কাছের বন্ধু মাশরাফি বিন মর্তুজা। তার জোড়া আঘাতেই মাত্র ২১ রানে দুই উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে যায় ভারত।
সেই চাপকে কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশের দুই বাঁহাতি স্পিনার রফিক ও রাজ্জাক ভারতকে দারুণভাবে কোণঠাসা করে দেন। মাঝে গাঙ্গুলি ও যুবরাজের জুটি কিছুটা প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টা করলেও এই জুটি ভাঙার পর ভারতের সেই বিখ্যাত ব্যাটিং লাইনআপ তাসের ঘরের মতো ভেঙে যায়, তিন বল বাকি থাকতেই তারা অলআউট ১৯১ রানে। মাশরাফি চারটি এবং রাজ্জাক ও রফিক নেন তিনটি করে উইকেট।
১৯২ রান লক্ষ্যমাত্রা হিসেবে আহামরি কিছু না হলেও পোর্ট অফ স্পেনের ওই স্লো পিচে এই রান তাড়া করা খুব একটা সহজ কাজও ছিল না। তবে সেদিনের তিন টিনএজার তামিম ইকবাল, সাকিব আল হাসান ও মুশফিকুর রহিমের ফিফটিতে সেই কাজটা খুব সহজ হয়ে যায়। নয় বল হাতে রেখেই টাইগাররা ম্যাচ জিতে নেয় পাঁচ উইকেটে। নিজেদের সতীর্থ মানজারুল ইসলাম রানার বিদেহী আত্মাকে এর চেয়ে বড় উপহার আর কী’ই বা দিতে পারতো টাইগাররা?
এই জয়ের কারণেই পরবর্তীতে সুপার এইটের টিকেট পায় বাংলাদেশ। শুধু তাই নয়, এই ম্যাচে যে তিন টিনেজার স্বপ্নের আলো দেখিয়েছিলো, পরবর্তীতে তাদের হাত ধরেই বাংলাদেশের ক্রিকেট এগিয়ে গেছে বহুদূর। দুর্দান্ত বোলিংয়ের কারণে ম্যাচসেরা নির্বাচিত হন মাশরাফি বিন মর্তুজা।
সেদিনের আরেক ম্যাচে জ্যামাইকার স্যাবাইনা পার্কে সেই আসরের নবাগত দল আয়ারল্যান্ডের মুখোমুখি হয় পাকিস্তান। এটি ছিল সেই আসরে দুই দলের দ্বিতীয় ম্যাচ। নিজেদের প্রথম ম্যাচে জিম্বাবুয়ের সাথে টাই করেছিলো আইরিশরা, অন্যদিকে স্বাগতিক উইন্ডিজের কাছ হার দিয়ে শুরু করায় টুর্নামেন্টে টিকে থাকতে এ ম্যাচে পাকিস্তানের কাছে জয় ভিন্ন অন্য কোনো পথ খোলা ছিল না।
এমন গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে টসে হেরে ব্যাট করতে নেমে শুরু থেকেই নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারাতে থাকে পাকিস্তান। এক পর্যায়ে মাত্র ৭২ রানে টপ অর্ডারের প্রথম ছয় ব্যাটসম্যান সাজঘরে ফিরে গেলে বেশ চাপে পড়ে যায় তারা।
সেখান থেকে দলকে টেনে তোলার চেষ্টা করেন কামরান আকমল, কিন্তু বাকি ব্যাটসম্যানরাও যাওয়া-আসার মিছিলে শামিল হলে আয়ারল্যান্ডের মতো নবীন দলের বিপক্ষে মাত্র ১৩২ রানেই গুটিয়ে যায় পাকিস্তান। খেলা বৃষ্টির কারণে বিঘ্নিত হলে ডি/এল মেথডে আয়ারল্যান্ডের লক্ষ্যমাত্রা দাঁড়ায় ৪৭ ওভারে ১২৮ রান। প্রতিপক্ষ যে দলই হোক, এত ছোট পুঁজি নিয়ে ম্যাচ জেতা সবসময়ই বেশ কঠিন। তবুও নিজেদের বিখ্যাত বোলিং লাইনআপ দিয়ে এই পুঁজি দিয়েই লড়াই চালানোর চেষ্টা চালায় পাকিস্তান।
কিন্তু তাদের সব চেষ্টায় জল ঢেলে দেন আইরিশ ব্যাটসম্যান নিল ও’ব্রায়েন। তার ৭২ রানে ভর করে তিন উইকেট হাতে রেখেই এক অবিশ্বাস্য জয় পেয়ে যায় আইরিশরা। এই জয়ের ফলে পাকিস্তানের গ্রুপপর্বের বিদায়ের সাথে নিজেদের অভিষেক বিশ্বকাপেই সুপার এইটে খেলার অসামান্য গৌরব অর্জন করে আয়ারল্যান্ড।
একই দিনে এই দুইটি অঘটনের কারণে বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্ব থেকেই দুই পরাশক্তি ভারত ও পাকিস্তানের বিদায়ের ঘণ্টা বেজে যায়। এই দুই দলের দ্রুত বিদায়ের ফলে সেই আসরের রঙ কিছুটা হলেও বিবর্ণ হয়ে যায়, বিশ্বকাপ থেকে আইসিসির লভ্যাংশের পরিমাণও কমে যায়। তবে লাভ-ক্ষতির হিসাব ছাড়িয়ে অন্য আরেকটি দুর্ঘটনা সবার মনে দাগ কেটে যায়। আয়ারল্যান্ডের কাছে পাকিস্তানের ওই হারের পরের দিনই হোটেল থেকে পাকিস্তানের কোচ বব উলমারের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়!
ঠিক কীভাবে এই বর্ষীয়ান কোচ মারা গেলেন, এই নিয়ে পুরো ক্রিকেট বিশ্বে তোলপাড় শুরু হয়ে যায়। প্রথমদিকে এই ঘটনাকে খুন বলে অভিহিত করলেও শেষে বব উলমারের এই প্রস্থানকে স্বাভাবিক মৃত্যু হিসেবে আখ্যায়িত করেই কেস শেষ করে জ্যামাইকার পুলিশ। তবে জ্যামাইকার পুলিশ যা-ই বলুক না কেন, পাকিস্তানের ওই আকস্মিক হারের জের ধরে বাজিকরদের হাতে খুন হয়েছিলেন উলমার, এই সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়ার উপায় নেই।
পাদটীকা
সেরার তালিকায় মাত্র পাঁচটি ম্যাচ রাখতে হবে বিধায় বেশ কিছু নাটকীয় ম্যাচকে বাদ দিতে হয়েছে, বিশেষ করে ২০১১ বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৩২৭ রান টপকে আয়ারল্যান্ডের সেই ঐতিহাসিক জয়টা তো ক্রিকেট ইতিহাসে চিরস্মরণীয় হয়েই থাকবে। আসলে এই ছোট দলগুলোর এসব অঘটনের কারণেই প্রতিটি বিশ্বকাপ হয়েছে অনেক বেশি বর্ণিল। কিন্তু আইসিসির বাণিজ্যিক চিন্তার কারণে এই সমস্ত রঙ থেকে বঞ্চিত হতে হবে এবারের বিশ্বকাপকে।
যে আয়ারল্যান্ড গত তিন বিশ্বকাপেই অঘটন উপহার দিয়েছে, তারাই এবার বিশ্বকাপ দেখবে দর্শকসারিতে বসে। জিম্বাবুয়ের মতো ক্রিকেট দলও সুযোগ পায়নি এবারের দশ দলের বিশ্বকাপে। বিশ্বায়নের কথা বলে এভাবে বিশ্বকাপের দলের সংখ্যা কমানোয় বিশ্বজুড়ে ক্রিকেট ছড়িয়ে দেওয়ার স্বপ্ন হয়তো আর বাস্তবে রূপ নিতে পারবে না। তবুও আমরা আশা করি, আইসিসির শুভ বুদ্ধির উদয় হবে, আবারও এই ছোট ছোট দলগুলোর পদচারণায় আলোকিত হবে বিশ্বকাপ। সেই অবধি অপেক্ষা ছাড়া আপাতত উপায় নেই।