ব্যাটল অব সান্তিয়াগো: ফুটবল মাঠ যখন যুদ্ধের ময়দান

“আমি কোনো ফুটবল ম্যাচ পরিচালনা করছিলাম না, আমি যেন মিলিটারি অপারেশনে আম্পায়ার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলাম”, বলেছিলেন ফুটবল বিশ্বকাপে হলুদ ও লাল কার্ডের প্রবর্তক ও ম্যাচটির রেফারি কেন অ্যাস্টন।

দ্য মিররে ফ্র্যাংক ম্যাকঘি লিখেছিলেন, “সার্বজনীনভাবে ম্যাচটিকে দেখা হয় ফুটবল ইতিহাসের সবচেয়ে বিশ্রী, নোংরা এবং মর্যাদাহানিকর ম্যাচ হিসেবে। যদি মনে করেন, অতিরঞ্জিত করা হচ্ছে, তাহলে টিভিতে ম্যাচটি দেখুন। কিন্তু বাচ্চাদের ঘুমাতে পাঠিয়ে দিন- হরর সার্টিফিকেট প্রাপ্য এর।”

বিবিসিতে প্রচারের পূর্বে ডেভিড কোলম্যান ম্যাচটির ভূমিকায় বলেছিলেন, “শুভ সন্ধ্যা। আপনারা যে ম্যাচটি এখন দেখতে যাচ্ছেন তা ফুটবল ইতিহাসের সবচেয়ে অর্থহীন, আতংকময়, ন্যক্কারজনক এবং মর্যাদাহানিকর প্রদর্শনী। এই প্রথমবারের মতো দেশ দুটি মুখোমুখি হয়েছিলো, আমরা আশা করব এটিই হবে শেষ।”

সবগুলো উক্তি করা হয়েছিলো ১৯৬২ সালের চিলি বিশ্বকাপে স্বাগতিক দলের বিপক্ষে ইতালির ম্যাচটির পর, যা ইতিহাসে কুখ্যাত হয়ে আছে ‘ব্যাটল অব সান্তিয়াগো’ নামে। ‘ব্যাটল অব সান্তিয়াগো’ ছিলো ফুটবলের জঘন্যতম প্রদর্শনী, যেখানে ফুটবলের তুলনায় মুখ্য হয়ে উঠেছিলো হিংস্রতা ও বর্বরতা।

ব্যাটল অব সান্তিয়াগোতে রেফারি অ্যাস্টন; Source: gettyimages.ie

প্রাক কথন

১৯৫৪ ও ১৯৫৮ বিশ্বকাপ; টানা দুটি বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হয়েছিলো ইউরোপে। উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকার দেশগুলো হুমকি দিয়েছিলো যে পরবর্তী বিশ্বকাপও যদি ইউরোপের কোনো দেশ আয়োজন করে তাহলে তারা বিশ্বকাপ বর্জন করবে। আয়োজনের দৌড়ে এগিয়ে ছিলো আর্জেন্টিনা, কিন্তু শেষপর্যন্ত আয়োজক দেশের খেতাবটি নিজেদের করে নেয় চিলির ফুটবল ফেডারেশন। আয়োজনের প্রস্তুতি সবকিছু বেশ ভালো মতো চলছিলো।

স্বাগতিক দেশ চিলির জন্য সবকিছু ওলটপালট করে দেয় ২২ মে, ১৯৬০ সালের ভূমিকম্প। ইতিহাসের সবচেয়ে শক্তিশালী ভূমিকম্পগুলোর মধ্যে একটি ছিলো এটি এবং এই ভয়ংকর শক্তিশালী ভূমিকম্পে বিশাল ক্ষতির সম্মুখীন হয় চিলির বিশ্বকাপের প্রস্তুতি। বিশ্বকাপের জন্য নির্ধারিত ৮টি স্টেডিয়ামের মধ্যে ৪টিই ব্যবহারের অনুপযুক্ত হয়ে পড়েছিলো। দুটি শহর অবশ্য শেষপর্যন্ত তাদের ভেন্যু নির্ধারিত সময়ের মধ্যে মেরামত করতে সক্ষম হয়।

১৯৬২ চিলি বিশ্বকাপের লোগো; Source: trendymen.ru

সত্যি বলতে, ১৯৬২ সালের বিশ্বকাপ আসরের অনেকগুলো হিংস্র ও জঘন্য ম্যাচের মধ্যে সবচেয়ে কুখ্যাতি অর্জন করেছিলো চিলি ও ইতালির ম্যাচটি। তখনো বিশ্বকাপে হলুদ ও লাল কার্ডের প্রচলন শুরু হয়নি। ‘ব্যাটল অব সান্তিয়াগো’র পূর্বে বিশ্বকাপের প্রথম দুদিনের আটটি ম্যাচে রেফারি মাঠ থেকে বের করে দিয়েছে চারজন খেলোয়াড়কে, পা ভেঙ্গেছে তিনটি, একটি ভাঙ্গা গোড়ালি ও চিড় ধরা বুকের পাজর নিয়ে মাঠ ছেড়েছে কিছু খেলোয়াড়। আর্জেন্টিনা ও বুলগেরিয়ার ম্যাচে রেফারি ফাউলের বাঁশি বাজিয়েছিলো ৬৯ বার, প্রতি ৭৮ সেকেন্ডে ১টি করে ফাউল সংগঠিত হয়েছিলো ম্যাচটিতে। বুলগেরিয়ার টডোর ডিয়েভ কাটা নাক ও পা নিয়ে মাঠ ছেড়েছিলেন। তার মতে, আর্জেন্টাইনরা ছিলো ‘বক্সারদের মতো’।

ব্যাটল অব সান্তিয়াগোর প্রতিকী চিত্র; Source: mirror.co.uk

রাশিয়ার প্রথম ম্যাচে যুগোস্লাভিয়ার মোহাম্মদ মুজিচের চ্যালেঞ্জে পা ভেঙ্গে যায় এডওয়ার্ড দুবিনিস্করির। ভয়ানক আক্রমণাত্মক আচরণের পরেও রেফারি মুজিচকে মাঠ থেকে বের করে দেননি। বিশ্বকাপের শুরুতেই চারদিক থেকে শুধু হিংস্রতা, মারামারি, ভয়াবহ ইনজুরি ও দুর্ঘটনার খবর আসতে লাগলো। আসরে যেন ফুটবলের সৌন্দর্যের প্রদর্শনী তো দূরে থাক, সবাই ফুটবল ভুলে যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছিলো।

পশ্চিম জার্মানির বিপক্ষে ইতালি গোলশূন্য ড্র করলেও স্বাগতিক চিলি ৩-০ গোলের বড় জয় পেয়েছিলো সুইজারল্যান্ডের বিপক্ষে। জুনের ২ তারিখে ইতালির মুখোমুখি স্বাগতিক দল, যে ম্যাচটির ফলাফলের প্রভাব থাকবে পরবর্তী পর্বে কোন দল উত্তীর্ণ হতে যাচ্ছে। দুই দলের জন্যই ম্যাচটি ছিলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যদিও সবকিছু ছাপিয়ে আলোচনায় উঠে আসে ইতালিয়ান পত্রিকার কিছু রিপোর্ট ও চিলিয়ানদের প্রতিক্রিয়া।

সান্তিয়াগোর এই মাঠে অনুষ্ঠিত হয়েছিলো কুখ্যাত ব্যাটল অব সান্তিয়াগো; Source: pinterest.com

ব্যাটল অব সান্তিয়াগোর পেছনের গল্প

১৯৬০ সালের ভূমিকম্পের ক্ষতির প্রভাব তখনো চিলি পুরোপুরি কাটিয়ে উঠতে পারেনি। বিশ্বকাপের বছরেও সবকিছু একেবারে স্বাভাবিক ও গতিশীল হয়ে ওঠেনি। বিভিন্ন সমস্যার পরেও বিশ্বকাপে চিলি ফুটবল দলের প্রতি সমর্থকদের ভালোবাসা ও সমর্থনের কমতি ছিলো না। ইতালিয়ান পত্রিকা লা নাৎসিওনে এবং কোরিয়ের দেলা সেরাতে চিলি ও সান্তিয়াগো নিয়ে নেতিবাচক প্রবন্ধ ও খবর ছাপানো হয়েছিলো বিশ্বকাপ চলাকালীন সময়ে। চিলি অধিবাসীদের দেশপ্রেম ও তাদের ফুটবল দলের প্রতি অকুণ্ঠ সমর্থনে তীব্র উত্তাপ ছড়িয়ে পড়ে যখন সান্তিয়াগোতে রটে যায় যে, চিলি নিয়ে ইতালিয়ান পত্রিকায় ধারাবাহিক নেতিবাচক প্রবন্ধ ছাপানো হয়েছে। পত্রিকাগুলোর মতে, চিলিকে বিশ্বকাপ আয়োজন করতে দেওয়া একেবারেই পাগলামি। পত্রিকা দুটির রিপোর্টার এন্তোনিও ও করাডো চিলি থেকে তাদের দেশে যে রিপোর্টগুলো পাঠিয়েছিলো তা ছিলো ভীষণ অসম্মানজনক।

১৯৬০ সালের ভূমিকম্পের পর চিলি; Source: medium.com

তাদের রিপোর্টে চিলিকে তুলে ধরা হয়েছিলো অনেকটা এভাবে যে, এখানে ফোন ঠিকমতো কাজ করে না, বিশ্বাসযোগ্য স্বামীর মতো ট্যাক্সিও খুবই বিরল, একটি বার্তা ইউরোপে পাঠাতে পা ও হাতের সমমূল্যের খরচ করতে হয়, চিঠি পৌঁছাতে পাঁচ দিন সময় লেগে যায় ইত্যাদি। চিলির জনগণকে ইতালিয়ান পত্রিকায় অশিক্ষিত, পুষ্টিহীন, অ্যালকোহলে আসক্ত ও দরিদ্র হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছিলো। করাডো রিপোর্টে সান্তিয়াগোকে খুবই বাজে শহর আখ্যায়িত করেছিলেন। তিনি চিলিয়ান নারীদের চরিত্র ও নৈতিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে লিখেছিলেন যে গোটা এলাকা জুড়ে যেন পতিতাপল্লী খুলে বসা হয়েছে।

স্বভাবতই এই ধরনের রিপোর্টের পর গোটা চিলি ফুসে উঠেছিলো এবং ইতালিয়ানদের প্রতি তাদের মনোভাব যে আক্রমণাত্মক হবে তা বলাই বাহুল্য। একটি বারে ইতালিয়ান ভেবে একজন আর্জেন্টাইন সাংবাদিককে চিলিয়ানরা পিটিয়ে হাসপাতালে পাঠিয়েছিলো। ইতালিয়ান রিপোর্টার দুজন দাবি করেছিলো যে, তাদের পাঠানো রিপোর্ট বিকৃত করা হয়েছে, শেষপর্যন্ত তাদের দুজনই চিলি ও ইতালির ম্যাচের পূর্বেই চিলি থেকে পালাতে বাধ্য হয়। মাঠের বাইরের উত্তাপে ম্যাচ শুরুর পূর্বেই উত্তপ্ত হয়ে উঠে সান্তিয়াগোর স্তাদিও নাসিওনাল, যার প্রভাব ছিল ম্যাচের শুরু থেকে একেবারে শেষপর্যন্ত। ম্যাচের পূর্বে চিলিয়ান একটি পত্রিকা ঘোষণা করেছিলো যে, এটি যতটা না বিশ্বকাপ ম্যাচ, তার চেয়েও বেশি একটি বিশ্বযুদ্ধ।

ব্যাটল অব সান্তিয়াগো

স্টেডিয়ামে উপস্থিত ছিল ৬৬,০৫৭ জন দর্শক। গোটা স্টেডিয়াম জুড়ে টানটান উত্তেজনা। নীল জার্সিতে ইতালি ও লাল জার্সি গায়ে মাঠে প্রস্তুত চিলি। পুরো মাঠের চারপাশ জুড়ে রয়েছে অসংখ্য পুলিশ। ম্যাচ রেফারি কেন অ্যাস্টন খেলা শুরুর বাঁশি বাজানোর পূর্বেই দুইদলের মাঝে এক দফা থুতু ছোড়াছুড়ির পর্ব শেষ হয়েছে। এতটুকুতেই যদি সীমাবদ্ধ থাকতো পুরো ঘটনা, তাহলেও আজকে আর ম্যাচটি নিয়ে আলোচনার কিছু ছিলো না। রেফারি বাঁশি বাজিয়ে খেলা শুরুর করার ঠিক পরপরই ফুটবল মাঠটি যেন পরিণত হয়ে উঠলো এক ভয়ংকর যুদ্ধক্ষেত্রে। ফুটবল এখানে ছিলো একটি সাধারণ উপলক্ষের মতো, সবাই সত্যিকার অর্থে ব্যস্ত ছিল কীভাবে প্রতিপক্ষকে কিল, ঘুষি কিংবা লাথি দিয়ে আহত করা যায় তা নিয়ে।

১৯৬২ বিশ্বকাপ: ব্যাটল অব সান্তিয়গোর একটি দৃশ্য; Source: footballchik.ru

ম্যাচ শুরুর মাত্র ১২ সেকেন্ডের মাথায় প্রথম ফাউল! লাথি-পাল্টা লাথির পর্ব চলতেই থাকে, খেলার ৫ মিনিট অতিবাহিত হতে না হতেই দুই দলের মধ্যে একদফা সংঘর্ষ হয়ে যায়। রেফারি প্রতিবার সংঘর্ষ থামানোর সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছেন। এই সময়েও বল ছাড়াই অশোভনভাবে লাথি ও ঘুষি দিতে দেখা যায় উভয় পক্ষকেই। খেলা আবারো শুরু হলেও এই ঘটনার রেশ থেকে যায়। ১২ মিনিটের মধ্যে রেফারি মাঠ থেকে বের করে দেয় ইতালির জর্জিও ফেরারিকে। ফেরারি চিলির হনোরিনো লান্ডাকে লাথি হাঁকালে তা পরিষ্কার দেখতে পান রেফারি এবং তাকে মাঠ ছাড়ার নির্দেশ দিলে প্রচন্ড ক্ষেপে যান তিনি। মাঠ ছাড়তে নারাজ ফেরারিকে মাঠের বাইরে পাঠাতে মাঠে পুলিশ প্রবেশ করে এবং ইতালিয়ান এই খেলোয়াড়কে মাঠের বাইরে বের করতে ১০ মিনিট সময় লাগে।

একদিকে ফেরারিকে যখন মাঠ থেকে বের করে দেওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন রেফারি, অন্যদিকে হুট করে ইতালির অধিনায়ক মাশ্চিওর নাকে ঘুষি বসিয়ে দেন লিওনেল সানচেজ। বলে রাখা ভালো, সানচেজের বাবা ছিলেন একজন পেশাদার বক্সার। প্রতিশোধপরায়ণ ইতালিয়ানরা যখন প্রতি-আক্রমণ শুরু করে, তখন তা নিজেদের ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এই প্রতি-আক্রমণ অবশ্যই ফুটবলের ‘কাউন্টার অ্যাটাক’ ছিলো না, যা ছিলো এককথায় যুদ্ধ। ফলশ্রুতিতে পুরো ম্যাচ জুড়ে মাঠে ভয়ংকর আক্রমণাত্মক ও অপেশাদার ফাউল এবং আচরণ অব্যাহত ছিলো।

ম্যাচের প্রথমার্ধের ৪২ মিনিটে ইতালির মারিও ডেভিড ফাউল করেন চিলির লিওনেল সানচেজকে, বল পায়ে না থাকা সত্ত্বেও মাটিতে পড়ে যাওয়া সানচেজকে ক্রমাগত লাথি হাঁকাতে থাকেন ডেভিড। উঠে দাঁড়িয়েই ডেভিডের মুখে ঘুষি মেরে বসেন সানচেজ। পুরো ঘটনার সময় লাইন্সম্যান একেবারেই কাছে ছিলেন, যদিও দুজনের কাউকেই মাঠ ছাড়তে হয়নি তখনো। রেফারি শুধুমাত্র ফাউলের সিদ্ধান্ত দিলে ক্ষোভে ফেটে পড়ে ইতালির খেলোয়াড়েরা, পরিস্থিতি সামাল দিতে মাঠে আবারো পুলিশ প্রবেশ করে।

সানচেজের কাছে ‘লেফট হুক’ খাওয়া কথা ডেভিড ভুলে যাননি, প্রতিশোধের নেশায় মত্ত ছিলেন তিনি। উপযুক্ত মুহূর্তের অপেক্ষায় ছিলেন ডেভিড। কয়েক মিনিট পরই বাতাসে বল ভেসে আসলে সেই ছুতোতে ডেভিড ফ্লাইং কিক বসিয়ে দেন সানচেজের মাথায়। ডেভিডকে সরাসরি মাঠের বাইরে পাঠিয়ে দেন রেফারি। ডেভিডকেও মাঠ থেকে বের করতে পুলিশের সাহায্য নিতে হয় রেফারির।

ডেভিডকে মাঠ থেকে বের করে দিচ্ছেন রেফারি, মাঠে পড়ে রয়েছে সানচেজ; Source: psmag.com

সুযোগ পেলেই ধাক্কাধাক্কি ও সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ছিলো উভয় দলের খেলোয়াড়েরাই। এই ম্যাচের প্রায় ট্যাকলগুলিই ছিলো বিপদজনক, যা আজকের দিনের ফুটবলে শুধুমাত্র চেষ্টা করলেও সরাসরি লাল কার্ড এবং পরবর্তীতে কয়েক ম্যাচে নিষিদ্ধ হওয়ার সম্ভাবনা থাকতে পারে। দ্বিতীয়ার্ধেও ম্যাচের সার্বিক পরিস্থিত তেমন উন্নতি না হলেও আর কাউকেই মাঠ ছাড়তে হয়নি। ১১ জনের চিলির বিপক্ষে মাঠে অবশিষ্ট ছিলো তখন ৯ জনের ইতালি। ৯ জন খেলোয়াড় নিয়েও ইতালি ম্যাচের ৭৩ মিনিট পর্যন্ত রক্ষণ দারুণভাবে সামাল দিয়েছে।

ম্যাচের ৭৩ মিনিটে একটি ফ্রি কিক থেকে আসা বল ঘুষি দিয়ে সরিয়ে দিলেও তা গিয়ে পৌঁছায় চিলির রামিরেজের মাথায়। ডি বক্সের ভিতর থেকে গোলের সুবর্ণ সুযোগ হাতছাড়া করেননি তিনি। হেড দিয়ে বল জালে জড়িয়ে স্বাগতিক চিলিকে লিড এনে দেন রামিরেজ। ম্যাচের ৮৭ মিনিটে বক্সের বাইরে থেকে দুর্দান্ত দূরপাল্লার শটে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন তোরে। ম্যাচের ৯০ মিনিট হওয়ামাত্রই খেলা সমাপ্ত করে দেন ইংলিশ রেফারি অ্যাস্টন। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে ম্যাচটিতে আর কোনো অতিরিক্ত সময় যোগ করেননি রেফারি।

ফেরারিকে মাঠ থেকে বের করতে সময় লেগেছিলো প্রায় ১০ মিনিট; Source: popularsocialscience.com

পরিশিষ্ট

ব্যাটল অব সান্তিয়াগোর পর পরিস্থিতি আরো ঘোলাটে হয়ে যায়। ইতালিয়ানরা চিলিতে বার, মার্কেট, রেস্টুরেন্ট প্রায় সব জায়গায় একপ্রকার নিষিদ্ধ ঘোষিত হয়। এমনকি ইতালি দলের প্রশিক্ষণ মাঠেও সশস্ত্র পাহাড়ার ব্যবস্থা করতে হয়েছিলো। ইতালির মিডিয়া ইংলিশ রেফারি অ্যাস্টনকে পক্ষপাতদুষ্ট আচরণের জন্য দোষারোপ করতে থাকে এবং চিলিয়ানদের ‘ক্যানিবাল’ আখ্যায়িত করে। রোমে চিলির কনস্যুলেটের নিরাপত্তার জন্য আর্মি পাঠাতে হয়েছিলো ইতালিকে।

ম্যাচটির প্রতি মিনিটে ছিলো চাপা উত্তেজনা, যা সামলাতে বেগ পেতে হয়েছে রেফারিকে; Source: sportskeeda.com

গ্রুপের শেষ ম্যাচে চিলি ২-০ গোলে পশ্চিম জার্মানির বিপক্ষে পরাজিত হলে পরবর্তী পর্বে যেতে ব্যর্থ হয় ইতালি। কোয়ার্টার ফাইনালে সোভিয়েত ইউনিয়নকে ২-১ গোলে পরাজিত করে সেমিফাইনালে ব্রাজিলের মুখোমুখি হয় স্বাগতিক দল। ব্রাজিলের বিপক্ষে ৪-২ গোলে পরাজিত চিলি তৃতীয় স্থান নির্ধারণী ম্যাচটি খেলে যুগোস্লাভিয়ার বিপক্ষে। এই ম্যাচের ৯০ মিনিটে চিলির হয়ে একমাত্র গোলটি করেন এলাদিও রোহাস, যুগোস্লাভিয়াকে ১-০ গোলে পরাজিত করে আসরে তৃতীয় স্থান অর্জন করে স্বাগতিক চিলি। বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত এটিই চিলির সর্বোচ্চ অর্জন।

ব্যাটল অব সান্তিয়াগোর ম্যাচটির ব্যাপারে রেফারি অ্যাস্টন বলেছিলেন, “আমি একটি কঠিন ম্যাচ আশা করেছিলাম, কিন্তু অসম্ভব একটি ম্যাচ নয়। সবচেয়ে ভালো যা করতে পারতাম আমি তা-ই করেছি। ম্যাচটি বাতিল করে দেওয়ার চিন্তাও আমার মাথায় এসেছিলো, কিন্তু আমি যদি তা করতাম তাহলে আমি ইতালির খেলোয়াড়দের নিরাপত্তার দায় নিতে পারতাম না।”

ফিচার ইমেজ- thesefootballtimes

Related Articles

Exit mobile version