Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

যুবাদের বিশ্বজয়, জাতীয় দল নিয়ে হাস্যরস ও অন্যান্য

বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দল বিশ্বকাপ জিতেছে, সে খবর বাসি হয়ে গিয়েছে। তাদের জন্য অগোছালো এক সংবর্ধনা আয়োজন করা হয়েছে, অনলাইনের যুগে সে কথাও বেশ পুরনো। নিজেদের বাড়িতে পৌঁছেও আকবর আলীরা পেয়েছেন দারুণ সংবর্ধনা, সে কথাও জেনে গেছেন সবাই। বলা হয়ে থাকে, বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বন। ক্রিকেটকে ধর্মের মত মানা একটি দেশে এরকম অর্জনের পর উৎসবের কমতি থাকবে না, সেটিই স্বাভাবিক। 

সোশ্যাল মিডিয়ায় উদযাপন আরও এক ধাপ ওপরে। সেখানে তামিম-শরিফুলদের প্রশংসায় ভাসানোর পাশাপাশি চলছে তামিম ইকবাল-মাহমুদউল্লাহ রিয়াদদের নিয়ে হাসি-তামাশা। কারণ? যুবারা বিশ্বকাপ জিতেছে, অথচ জাতীয় দলের হিসেবের খেরোখাতায় ফাইনাল হারের অভাব নেই। আর কাছাকাছি এসে হারা? সে তো অগণিত। এসবের সাথে যোগ হয়েছে রাওয়ালপিন্ডিতে জাতীয় দলের ইনিংস ব্যবধানে হার, ব্যস! মিম, ব্যঙ্গ কিংবা অপমান – কোনো কিছুরই আর অভাব নেই। 

আকবরদের এই শিরোপা জয়ে জাতীয় দলের কি বিন্দুমাত্র ভূমিকা নেই? Image: Matthew Lewis/ICC via Getty Images

ঠিক এখানেই একটা প্রশ্ন আসে, প্রশ্ন আসতে বাধ্য হয় – জাতীয় দল কি বাস্তবিকই এহেন হাসির পাত্র? তাদের অর্জন কি কিছুই নেই? 

দু’টো প্রশ্নই রেখে দেওয়া যাক। তবে একটা কথা বলে রাখা যায়, অনূর্ধ্ব-১৯ এর বিশ্বকাপ জয়ের পেছনে সবচেয়ে বড় অবদান জাতীয় দলের। আরও সহজ করে বললে, ২০১৫-পরবর্তী বাংলাদেশ দলের। 

বিসিবির পরিকল্পনা, কোচদের নিবেদন কিংবা খেলোয়াড়দের একাগ্রতা, কোনো কিছুকে ছোট না করেই এক বাক্যে বলে ফেলে যায়, ২০১৫-পরবর্তী সময়ে যে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের বড় দলগুলোর সাথে চোখে চোখ রেখে লড়াই করা, এটাই অনূর্ধ্ব-১৯ দলের বিশ্বকাপ জয়ের সবচেয়ে বড় চালিকাশক্তি। 

কেন? 

একটু পেছনে ফিরে যাওয়া যায়। মাশরাফি বাদ দিন, সাকিব-তামিম-মুশফিক কিংবা এনামুল হক বিজয়-মুস্তাফিজুররা বাংলাদেশ দলের কী অবস্থা দেখে বড় হয়েছেন? ১৯৯৯ বিশ্বকাপ-পরবর্তী সময় দেখলে, সহজ কথায়, হারতে দেখে। একটু কঠিন সুরে বললে, গো-হারা হারতে দেখে। সে সময় বাংলাদেশ দলের সমর্থকরা একটি জয়ের জন্য চাতক পাখির মত অপেক্ষা করতেন। 

বদলে যাওয়ার শুরু নিঃসন্দেহে ২০০৭ বিশ্বকাপ থেকে, কিন্তু বড় পরিবর্তনটা আসে ২০১৫ বিশ্বকাপ এবং তার পরে। যেই বাংলাদেশ দলের ততদিন পর্যন্ত লক্ষ্য থাকতো ভালো ক্রিকেট খেলা, ২০১৫ এর পর থেকে সেটি বদলে গিয়ে হয়ে গেলো – না জিতলে হবে না!

২০১৫ বিশ্বকাপের পর থেকেই বদলে গিয়েছে অনেক কিছু; Image: Daniel Kalisz/ ICC via Getty Images

এখন দেখুন, আকবররা ঠিক কী দেখে বড় হয়েছে। এই দলটা তাদের দলকে জিততে দেখে বড় হয়েছে, তাদের লক্ষ্যই জয়, আর কিছু না। যে ভারত ছিল স্পর্শের বাইরে, সেই ভারত দলের সাথে ৩ বলে ২ রান নিতে না পারার ট্র্যাজেডি যেমন আছে জাতীয় দলের, তেমনি আছে এক আনকোরা মুস্তাফিজের হাতে ধ্বংস হবার স্মৃতি। তাদের ঘরের মাঠে তাদের গলা চেপে ধরবার ইতিহাস আছে, শরিফুল-সাকিবরা তো তাই দেখেছেন, তাই না? 

এজন্যই ফাইনালে ওই তেড়েফুঁড়ে বোলিং, মাঠে আগ্রাসন, সেলেব্রেশনে উন্মত্ততা। মুশফিকুর রহিমের অগ্রীম উদযাপন দেখে শেখা রকিবুল জয়ের সমীকরণটা ছয় থেকে দুই রানে নামিয়ে এনেও নিজেকে বলেন, শান্ত হতে। বহুবার কাছে গিয়ে হারবার বেদনা সহ্য করা আকবর তাই মাটি কামড়ে পড়ে থেকে ম্যাচ জিতিয়ে ফেরেন। 

মিমের বন্যা বইছে ফেসবুকে জাতীয় দলকে নিয়ে, কিন্তু জাতীয় দলকে বিন্দুমাত্র কৃতিত্ব দিচ্ছেন ক’জনে? সাকিবের ওয়াহাব রিয়াজকে আঙুল তুলে শাসানো কিংবা মাশরাফির উঁচু কলারের জের ধরেই যে এই দলের অমন শাসানো, সে কথাও বা ক’জন বলছেন? 

সাকিব আল হাসানের এই আগ্রাসন যে অনূর্ধ্ব-১৯ এর সাকিব-শরীফুলদের অনুপ্রেরণা, সে কথা বুঝতে মহাকাশবিজ্ঞানী হবার প্রয়োজন নেই; Photo: Firoz Ahmed/ The Daily Star

এসব কথা বাদ দিয়ে স্রেফ টাকার হিসেবও যদি করা হয়, জাতীয় দল সফল না হলে বিসিবি কীসের আশায় অনূর্ধ্ব-১৯ এর পেছনে এত বিনিয়োগ করতো? করার কারণ, বর্তমান দল যেখানে আছে সেখান থেকে এগিয়ে যাওয়া। এবং এগুনোর জন্য কুঁড়ি থেকেই পরিচর্যা দরকার, সেটা বিসিবি বুঝেছে। 

জাতীয় দলের সাম্প্রতিক বাজে পারফরমেন্সের সমালোচনা (কিংবা আক্রমণ) করতে কোনো বাধা নেই। খেলোয়াড়দের পাশাপাশি সে দায় দেওয়া যেতে পারে বোর্ডকেও, বিশ্বকাপ সামনে রেখে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের মত পরিকল্পনা কি ছিল বিসিবির? কিংবা ওয়ার্ল্ড টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ নিয়ে? অনূর্ধ্ব-১৯ দলকে নিয়ে অনূর্ধ্ব-২১ দল তৈরির পরিকল্পনা করেছে বিসিবি, কিন্তু ২০২০ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের জন্য সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা কোথায়? 

টেস্টের মিডল-অর্ডার মিউজিক্যাল চেয়ারের মত, প্রতি ম্যাচেই বদলে যাচ্ছে। টেস্ট খেলার প্রায় ২০ বছর হবার পরও একজন নিয়মিত লেগ-স্পিনার নেই, এসব প্রশ্নের উত্তরই বা কোথায়? 

প্রশ্ন অনেকেই অনেক কিছু নিয়ে উঠাচ্ছেন। কিন্তু উত্তর? নেই। জিম্বাবুয়ের সঙ্গে সব ম্যাচ জিতলেই অবশ্য অনেক প্রশ্ন লুকোবে, গোল্ডফিশের চেয়েও ক্ষণস্থায়ী স্মৃতিশক্তি কি না, সে প্রশ্নও ওঠে।

পাকিস্তান সিরিজের আগে কোচ রাসেল ডমিঙ্গো জানালেন, দল নির্বাচনে ধারাবাহিকতা রাখতে চান, কাউকে এক টেস্ট খেলিয়ে বাদ দিতে চান না, সুযোগ দিতে চান। অথচ পাকিস্তানের বিপক্ষে প্রথম টেস্টের পরই দলের বাইরে রুবেল হোসেন। কারণ হিসেবে দর্শানো হলো, লাল বলের চিন্তাভাবনায় নেই তিনি। নেই যখন, পাকিস্তানের সঙ্গেই বা খেলানোর কারণ কী? 

মুশফিকের এই অগ্রীম উদযাপন দেখে আকবর আলীরা শিখেছেন, শেষ হবার আগে কিছুই শেষ নয়! Image: Manjunath Kiran/ AFP via Getty Images

কিংবা মুস্তাফিজুর রহমানকেও পাকিস্তানের বিপক্ষে দলে নেওয়া হলো না লাল বলে পারফর্ম না করবার জন্য। এই অল্প সময়ের মধ্যে মুস্তাফিজ কী এমন ভেলকি দেখালেন যে তিনি টেস্ট দলেই ফিরলেন? 

কিংবা জিম্বাবুয়ের সাথে টেস্ট স্কোয়াডে পাঁচজন সিমার রাখার ব্যাপারটুকুই দেখুন। এশিয়ার বাইরের দলের সঙ্গে মিরপুরে সাধারণত খেলা হয়ে থাকে স্পিন মাইনফিল্ডে, অথচ এই দলে আবু জায়েদ রাহী, এবাদত হোসেন, মুস্তাফিজরা তো আছেনই বটে, সঙ্গে আছেন তাসকিন আহমেদ এবং বাংলাদেশের সর্বশেষ ফাস্ট বোলিং সেনসেশন হাসান মাহমুদ। প্রশ্ন আসে, এদের মধ্যে খেলবেন ক’জন? তিন স্পিনার মেহেদি হাসান মিরাজ, তাইজুল ইসলাম ও নাইম হাসানের মধ্যে কাউকেই কি স্পিনিং ট্র্যাকে বাদ দেয়া হবে? সম্ভাব্য উত্তর, না। 

এবং যদি উইকেটে ঘাস থাকে, তবে সে সিদ্ধান্ত যে ২০১৮ সালের মতো আত্মঘাতী হবে না, সে কথাই বা কে বলতে পারে? সেবার সিলেটের উইকেট বোলারদের সামান্য সাহায্য করছিল, তাতেই বাংলাদেশি ব্যাটসম্যানদের ঘোল খাইয়ে ছেড়েছিলেন কাইল জারভিস। উইকেটে ঘাস থাকলে মিরপুরে সিলেট ফিরে আসবে না, সে কথা কয়জন বলতে পারে? 

এসব অভিযোগের আদ্যোপান্ত সাজাতে গেলে পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা পেড়িয়ে যাবে, শেষ হবার সম্ভাবনা সামান্যই। অনূর্ধ্ব-১৯ দল বিশ্বকাপ জিতেছে, তাদের এই কৃতিত্বকে খাটো করবার সামান্য উপায় নেই। কিন্তু, এই অনূর্ধ্ব-১৯ দলের সাফল্যের এই ভিত্তি কিন্তু ঘুরেফিরে সেই জাতীয় দলই। জাতীয় দল খারাপ করছে, তার মানে এই নয় যে তারা কখনো ভালো করেনি। তাদের করা ভালোর ফলশ্রুতিতেই এই ফলাফল এসেছে, এবং তাদের সাফল্যের জন্যই বিসিবি অনূর্ধ্ব-১৯ দল নিয়ে দীর্ঘ পরিশ্রম করেছে।

সাকিব-মুশফিককে দেখে বড় হওয়া ক্রিকেটাররা স্রেফ জিততেই চাবেন, তাই নয় কি? Image: Adrian Dennis/ AFP via Getty Images

অনূর্ধ্ব-১৯ দলকে কৃতিত্ব দিতে গিয়ে জাতীয় দলের সব অর্জন ফিকে করে ফেলতে চাওয়াটা বাতুলতা। কারণ, দিনশেষে জাতীয় দলের হিসেবটাই মুখ্য। জাতীয় দলের পারফরমেন্স নিম্নগামী হতে থাকলে অনূর্ধ্ব-১৯ পর্যায়েও ভালো কিছু হওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ হয়ে পড়ে। কারণ, দিনশেষে ক্রিকেটের মানদণ্ডে হিসেব হয় জাতীয় দলই, অনূর্ধ্ব-১৯ দল নয়। 

সুতরাং, জাতীয় দলের বাজে সময়ে স্রেফ আনন্দের আতিশয্যে তাদের আক্রমণ করাটা কি আদৌ যুক্তিযুক্ত? প্রশ্নটা থাকুক। 

An in-detail article on how the Bangladesh national cricket team has influenced their Under-19 to go on and win the World Cup. 

Featured Photo: Jan Kruger/ICC via Getty Images

Related Articles