Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

কোয়ার্টার ফাইনাল: বেলজিয়ামের সোনালী প্রজন্ম বনাম তিতের ব্রাজিল

ব্রাজিলের বিপক্ষে বিশ্বকাপে মাত্র একবারই মুখোমুখি হয়েছিল বেলজিয়াম। সেই ২০০২ সালে রাউন্ড ষোলতে ২-০ গোলে পরাজিত হয়ে সেদিন বাড়ির প্লেন ধরতে হয়েছিল তাদের। এক ধাপ এগিয়ে কাজানে রাশিয়া বিশ্বকাপের দ্বিতীয় কোয়ার্টার ফাইনালে আবারও ব্রাজিলের মুখোমুখি হতে যাচ্ছে, আসরের অন্যতম ফেভারিট ও শক্তিশালী দল বেলজিয়াম। দুই দলই গ্রুপ পর্ব শেষ করেছে চ্যাম্পিয়ন হিসেবে। অপেক্ষাকৃত সহজ প্রতিপক্ষ পাওয়ায় গ্রুপ পর্বে বেলজিয়াম তেমন একটা কঠিন প্রতিপক্ষের মুখোমুখি হয়নি। এছাড়া শেষ ম্যাচে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে উভয় দলই বলতে গেলে তাদের দ্বিতীয় দল মাঠে নামিয়েছিল। সেই হিসেবে রাউন্ড ষোলতে জাপানের বিপক্ষে ২-০ গোলে পিছিয়ে গেলে অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির সম্মুখীন হওয়া বেলজিয়াম ম্যাচের প্রায় শেষ সেকেন্ডে জয়সূচক গোল করে পা রাখে কোয়ার্টার ফাইনালে।

আসরে সর্বোচ্চ ১২ গোল করা বেলজিয়াম গোল হজম করেছে মাত্র ৪টি এবং তাদের প্রতিপক্ষ ব্রাজিল মাত্র ৭ গোল করলেও তাদের জালে বল জড়িয়েছে মাত্র ১ বার। পরিসংখ্যানের বিচারে বেলজিয়ামের আক্রমণভাগ এই আসরে সেরা এবং তাদের রক্ষণ যথেষ্ট সুরক্ষিত। যদিও জাপানের বিপক্ষের ম্যাচে তাদের রক্ষণের দুর্বলতা প্রকাশ পায়, কিন্তু যে শাণিত আক্রমণের মাধ্যমে তারা ম্যাচে ফিরেছে তা তাদের ব্রাজিলের বিপক্ষে ম্যাচটিতে আলাদা আত্মবিশ্বাস যোগাবে। 

জাপানের বিপক্ষে বেলজিয়ামের জয় দলটিকে দারুণ আত্মবিশ্বাস যুগিয়েছে; Image Source: sportsclub.co.za

ব্রাজিল ফুটবল বিশ্বে সুপরিচিত তাদের সুন্দর ও আক্রমণাত্মক ফুটবলের জন্য, অনেকেই তাই সেভাবে মনে রাখেন না ব্রাজিলের রক্ষণ কতটা সুরক্ষিত বা সুদৃঢ় ছিল। এবারের আসরে ব্রাজিলের দারুণ আক্রমণভাগের সাথে যোগ হয়েছে দারুণ গোছানো এবং দুর্গের মত একটি রক্ষণভাগ, যেখানে মূল দায়িত্বে রয়েছে সিলভা ও মিরান্ডা। এখন পর্যন্ত দুই দলই অপরাজিত রয়েছে এই টুর্নামেন্টে এবং বেলজিয়াম এই বিশ্বকাপে তাদের সবগুলো ম্যাচই জিতেছে। বেলজিয়ামের এই সোনালি প্রজন্মের বিশ্বকাপ জয়ের পথে সবচেয়ে বড় বাঁধা ব্রাজিলকে পাড় করতে পারলেই তারা স্বপ্ন জয়ের আরও নিকটে পৌঁছে যাবে। বেলজিয়ামের ইতিহাসের সবচেয়ে শক্তিশালী দল কি পারবে পাঁচ বারের চ্যাম্পিয়ন ব্রাজিলকে হারাতে, নাকি আবারও ২০০২ ম্যাচটির পুনরাবৃত্তি করবে ব্রাজিল? 

২০০২ বিশ্বকাপ, ব্রাজিল ২-০ বেলজিয়াম; Image Source: sportsnet.ca

সম্ভাব্য একাদশ এবং দলীয় খবর

ব্রাজিল: অ্যালিসন – ফ্যাগনার, সিলভা, মিরান্ডা, মার্সেলো – ফার্নান্দিনহো, পাওলিনহো – নেইমার, কৌতিনহো, উইলিয়ান – জেসুস

হলুদ কার্ডের খড়গে কাসেমিরো থাকছে না দলে, অন্যদিকে ইনজুরিতে আক্রান্ত হয়ে বিশ্বকাপ শেষ রাইট ব্যাক দানিলোর। যদিও ব্রাজিলের জন্য সুখবর যে, ইনজুরি কাটিয়ে দলে ফিরেছেন লেফট ব্যাক মার্সেলো এবং উইঙ্গার ডগলাস কস্তা। শুরুর একাদশে মার্সেলোর অনুপস্থিতিতে ভালো খেলা ফেলিপে লুইজকে হয়ত নাও দেখা যেতে পারে এবং মার্সেলো তার নিজের দায়িত্ব বুঝে নিতে পারে ম্যাচের প্রথম মিনিট থেকেই। বেলজিয়ামের বিপক্ষে মাঠে সাবধানে থাকতে হবে নেইমার ও কৌতিনহোকে, কারণ এদের যে কেউ আরেকটি হলুদ কার্ড দেখলেই খেলতে পারবেন না সেমিফাইনাল।

কাসেমিরোর অভাব ভুগাবে ব্রাজিলকে; Image Source: dnaindia.com

বেলজিয়াম: কর্তোয়া, ভার্টোগেন, কোম্পানি, অল্ডারওয়েরেল্ড; উইটসেল, ডি ব্রুইন, চাদলি, মুনিয়ের; ফেলাইনি, হ্যাজার্ড; লুকাকু 

মার্টিনেজ খুব সম্ভবত জাপানের বিপক্ষের একাদশ অপরিবর্তিত রাখবেন এই ম্যাচেও। অবশ্য, ফেলাইনিকে একাদশে জায়গা করে নিলে খুব একটা অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। ভার্টোগেন ও ডি ব্রুইনও রয়েছে হলুদ কার্ডের নিষেধাজ্ঞার খুবই নিকটে, এই ম্যাচে একটি হলুদ কার্ড দেখলেও তারাও বাদ পড়বেন সেমিফাইনাল থেকে, যদি কোয়ার্টার ফাইনালে তাদের দল জয় লাভ করে। 

দুই দলের ফর্মেশন ও কৌশল

কৌশলগত দিক দিয়ে এই ম্যাচটিতে দুই দলই চাইবে নিজেদের সেরা শক্তি ও সামর্থ্যের পূর্ণ ব্যবহার করতে। তাই দীর্ঘদিন ধরে অভ্যস্ত ফর্মেশন ও কৌশল অপরিবর্তিত রেখেই দুই দল মাঠে নামবে বলে আশা করা যায়। ব্রাজিলের কোচ তিতে সাধারণত ব্যবহার করেন ৪-৩-৩, ৪-২-৩-১ বা ৪-১-৪-১ ফর্মেশন। তিতে মূলত ৪-৩-৩ ফর্মেশনের বিভিন্ন রূপান্তরিত ফর্মেশন ব্যবহার করে থাকেন। অপেক্ষাকৃত শক্তিশালী দলের বিপক্ষে তিতে ব্রাজিলের ৪-৩-৩ ফর্মেশনে দুইজন রক্ষণাত্মক মাঝমাঠের খেলোয়াড় ব্যবহার করেন, যাদের সামনে একজন সেন্ট্রাল মিডফিল্ডার প্লে-মেকারের দায়িত্ব পালন করেন, সেই সাথে দুই পাশে দুই উইঙ্গার ও ফরোয়ার্ডে একজন স্ট্রাইকার। দুর্বল দলের বিপক্ষে তিতের এই ফর্মেশনের বাকি সবকিছু ঠিক থাকে শুধু দুইজন রক্ষণাত্মক মাঝমাঠের খেলোয়াড়ের পরিবর্তে সেখানে একজন ব্যবহার করা হয় এবং অপর একজন যোগ দেয় মাঝমাঠের প্লে-মেকারের সাথে। বেলজিয়ামের মত শক্তিশালী দলের বিপক্ষে তিতে খুব সম্ভবত ৪-২-৩-১ ফর্মেশন ব্যবহার করবেন এবং এই ফর্মেশন ব্যবহারের আরেকটি কারণ হতে পারে বেলজিয়ামের ৩-৪-৩ বা ৩-৫-১ ফর্মেশন, যা তারা এখন পর্যন্ত তাদের নিয়মিত ফর্মেশন। কিন্তু জাপানের বিপক্ষে এই ফর্মেশনের দুর্বলতা উন্মোচিত হয়ে যাওয়ায় দারুণ ভুগতে হয়েছিল বেলজিয়ামকে এবং পরবর্তীতে তারা চারজনের রক্ষণে ফিরে গিয়ে অপেক্ষাকৃত খাট জাপানিজদের বিপক্ষে ক্রসে খেলে ম্যাচে ফিরেছিল। যাই হোক, নিয়মিত ও অভ্যস্ত ফর্মেশন বেলজিয়াম যদি অপরিবর্তিত রাখে তাহলে ব্রাজিলের জন্য সেরা ফর্মেশন হবে ৪-২-৩-১। 

ফর্মে থাকা নেইমারের উপর নির্ভর করছে অনেক সমীকরণ; Image Source: newyorker.com

বেলজিয়ামের ৩-৪-৩ ফর্মেশনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে তাদের দুই উইং ব্যাক, উইঙে যাদের জন্য ফাঁকা জায়গা তৈরির কাজটা করে দেয় আক্রমণের ভাগের তিনজন। যেহেতু বেলজিয়ামের স্ট্রাইকার লুকাকু হেডে ও শারীরিক দিক দিয়ে দারুণ শক্তিশালী সেহেতু এই কৌশল তাদের জন্য যথেষ্ট সুবিধাজনক। মূল কথায় ফিরে আসি, বেলজিয়ামের আক্রমণভাগের খেলোয়াড়ত্রয়ী আক্রমণে গেলে চারজনের রক্ষণ অনেকটা কেন্দ্রের দিকে অনেকটা সংকীর্ণ হয়ে আসতে বাধ্য হয়, আর তখনই দুই প্রতিপক্ষের অর্ধের দুই পাশে ফাঁকা জায়গা তৈরি হয় এবং বেলজিয়ামের দুই উইং ব্যাক আক্রমণে উঠে আসে। এক্ষেত্রে তাদের সেট পিস থেকে গোল আদায় করা একটা কৌশল। আরেকটা যেটা হতে পারে তা হল, দুই উইং-ব্যাককে সামাল দিতে যদি রক্ষণাত্মক দুই মাঝমাঠের খেলোয়াড় উইঙের দিকে চেপে যেতে বাধ্য হয় তখন আবার ডি-বক্সের সামনে মাঝমাঠে বেশ বড় জায়গা তৈরি হয় যেখানে দেখা যাবে গোলের সুযোগ তৈরি করতে সিদ্ধহস্ত ও বেলজিয়ামের মাঝমাঠের প্রাণ ডি ব্রুইনকে। 

বেলজিয়ামের মাঝমাঠের প্রাণ ডি ব্রুইন; Image Source: goal.com

হলুদ কার্ডের কারণে কাসেমিরোর বদলে আজকে রক্ষণাত্মক মিডফিল্ডার হিসেবে মাঠে দেখা যাবে ফার্নান্দিনহোকে এবং কাসেমিরোর অভাব সিটির এই খেলোয়াড় কতটা পূরণ করতে পারেন তা সময় বলে দিবে। ব্রাজিলের বড় লক্ষ্য থাকবে ডি ব্রুইনকে তার স্বভাবসুলভ খেলতে না দেওয়া এবং এই কাজের গুরু দায়িত্বটা পালন করতে হতে পারে ফার্নান্দিনহোকে। ৪-২-৩-১ ফর্মেশনে খেললে ফার্নান্দিনহো তার পাশে পাবেন পাওলিনহোকে। আক্রমণভাগের মাঝে কৌতিনহো, দুই পাশে থাকবে নেইমার ও উইলিয়ান এবং স্ট্রাইকার হিসেবে হেসুস। যদিও বেলজিয়ামের বিপক্ষে জেসুসের চেয়ে অধিক পরিশ্রমী ফিরমিনো খেললে বেশি সুবিধা পেতে পারত ব্রাজিল, কিন্তু তিতে হয়ত স্ট্রাইকার হিসেবে জেসুসকেই রেখে দিবেন। উল্লেখ্য, ব্রাজিলের জন্য বেলজিয়ামের হ্যাজার্ড-ডি ব্রুইন যেমন হুমকি তেমনি বেলজিয়ামের জন্য বড় হুমকি হবে নেইমার-কৌতিনহো জুটি। 

ফিরমিনো স্ট্রাইকার হিসেবে খেললে ব্রাজিলের যে সুবিধাটা হত তা হল, ফিরমিনো নিচে নেমে রক্ষণে সাহায্য করার পাশাপাশি আক্রমণ বা প্রতি-আক্রমণে সমান তালে অংশগ্রহণ করতে সক্ষম। এক্ষেত্রে জেসুস ঠিক ফিরমিনোর মত কার্যকরী ভূমিকা পালন করতে পারেন না। তাছাড়া, ব্রাজিলের আরেকটি বড় সমস্যা তাদের রাইট ব্যাক পজিশন। বেলজিয়ামের দুর্দান্ত আক্রমণভাগের বিপরীতে রাইট ব্যাকে ফ্যাগনার কতটা নিজেকে মেলে ধরতে পারবে তা নিয়ে চিন্তায় থাকবে ব্রাজিল ভক্তরাও। অবশ্য, বরাবরের মত ফ্যাগনারের সাথে উইলিয়ান নিচে নেমে এসে রক্ষণে যথেষ্ট সাহায্য করলে তেমন একটা সমস্যা থাকবে না ব্রাজিলের। 

ব্রাজিলের মাস্টার মাইন্ড; Image Source:  thestar.com

এই বিশ্বকাপে ব্রাজিলের বিশ্বকাপ জয়ের অন্যতম ভরসা নেইমার-কৌতিনহোদের মত তারকাদের পাশাপাশি দলের মাস্টার-মাইন্ড তিতে। তিতের সুনিপুণ কৌশল ও কার্যকরী সিদ্ধান্তের জন্যই অনেক ক্ষেত্রে সীমিত সামর্থ্য স্বত্বেও পুরো ব্রাজিল দলে ফিরে এসেছে সাম্যাবস্থা। তিতের কৌশলের বিপরীতে মার্টিনেজের অধীনে বেলজিয়ামের সোনালী এই প্রজন্ম নিজেদের অর্জনকে কতটা সামনে এগিয়ে নিতে পারবেন সেই উত্তরের অপেক্ষা খুব বেশি সময়ের নয়। 

ফিচার ইমেজ- sports-betting-winners.com

Related Articles