Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

আইপিলের সবচেয়ে দামি ক্রিকেটাররা

২০০৮ সালে আইপিএলের যাত্রা যখন শুরু হয় তখন আসরে সবচেয়ে ভালো নৈপুণ্য প্রদর্শন করা ক্রিকেটারকে যে অ্যাওয়ার্ড দেওয়া হতো তার নাম ছিল ‘ম্যান অব দ্য টুর্নামেন্ট’। ২০১৩ সালের আসর থেকে ম্যান অব দ্য টুর্নামেন্টের নাম বদলে ‘মোস্ট ভ্যালুয়েবল প্লেয়ার’ নাম দেওয়া হয়। মোস্ট ভ্যালুয়েবল প্লেয়ার নির্বাচন করা হয় পয়েন্ট অনুযায়ী। টুর্নামেন্ট শেষে যে ক্রিকেটারের পয়েন্ট বেশি, তার হাতেই ওঠে মোস্ট ভ্যালুয়েবল প্লেয়ারের অ্যাওয়ার্ড।

আইপিএলের দ্বাদশ আসর শেষে এখন পর্যন্ত মাত্র দুবার ভারতীয় ক্রিকেটাররা এই অ্যাওয়ার্ড জিতেছেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজের ক্রিকেটাররা পাঁচবার এবং অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেটাররা চারবার টুর্নামেন্ট সেরার অ্যাওয়ার্ড জিতেছিলেন। ভারতীয় ক্রিকেটারদের মধ্যে ২০১০ সালে শচীন টেন্ডুলকার এবং ২০১৬ সালে বিরাট কোহলি টুর্নামেন্ট সেরার অ্যাওয়ার্ড জিতেছিলেন। ২০১০ সালে যদি পয়েন্টের ভিত্তিতে অ্যাওয়ার্ড দেওয়া হতো, তাহলে টেন্ডুলকার ঐ আসরে টুর্নামেন্ট সেরার অ্যাওয়ার্ড জিততেন না। আইপিএলে এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ দুবার করে সবচেয়ে দামি ক্রিকেটার নির্বাচিত হয়েছেন শেন ওয়াটসন, সুনীল নারিন এবং আন্দ্রে রাসেল।

চলুন জেনে আসা যাক, আইপিএলের কোন আসরে কোন ক্রিকেটার মোস্ট ভ্যালুয়েবল ক্রিকেটারের অ্যাওয়ার্ড জিতেছেন। 

শেন ওয়াটসন (রাজস্থান রয়্যালস) – ২০০৮ সাল

আইপিএলের প্রথম আসরে শিরোপা জিতেছিল শেন ওয়ার্নের রাজস্থান রয়্যালস। রাজস্থানের শিরোপা জয়ে বড় ভূমিকা পালন করেছিলেন অস্ট্রেলিয়ান অলরাউন্ডার শেন ওয়াটসন। তিনি পুরো আসরে ব্যাটে-বলে দুর্দান্ত ছন্দে ছিলেন। আসরে মোট ১৫ ম্যাচ খেলে চারটি অর্ধশতক হাঁকিয়ে ৪৭.২০ ব্যাটিং গড়ে এবং ১৫১.৭৭ স্ট্রাইক রেটে ৪৭২ রান সংগ্রহ করেছিলেন তিনি। আসরে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকদের তালিকায় তার অবস্থান ছিল চতুর্থ স্থানে। অর্ধশতক হাঁকানো চার ম্যাচেই সেরার পুরস্কার জিতেছিলেন তিনি।

Image Source: BCCI

শেন ওয়াটসন ব্যাটসম্যান হিসেবে দলের সেরা পারফর্মার ছিলেন। বল হাতেও আসরে দলের আস্থার প্রতীক ছিলেন তিনি। ব্যাটিংয়ে চতুর্থ সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক হিসেবে আসর শেষ করার পর বল হাতেও আসরের চতুর্থ সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি ছিলেন শেন ওয়াটসন। তিনি ২২.৫২ বোলিং গড়ে তিনি ১৭ উইকেট শিকার করেছিলেন। এতে করে তিনি ম্যান অব দ্য টুর্নামেন্টের অ্যাওয়ার্ড জেতেন। বর্তমানে যে হিসেবে মোস্ট ভ্যালুয়েবল প্লেয়ারের অ্যাওয়ার্ড দেওয়া হয়। ঐ হিসেবেও তার মোট পয়েন্ট দাঁড়ায় ৪০৬.৫, যা তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী সনাৎ জয়াসুরিয়া থেকে ১০০.৫ পয়েন্ট বেশি।

অ্যাডাম গিলক্রিস্ট (ডেকান চারজার্স) – ২০০৯ সাল

আইপিএলের দ্বিতীয় আসরের শিরোপাও অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটারের হাতে ওঠে এবং টুর্নামেন্ট সেরাও নির্বাচিত হন অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটার। ২০০৯ সালে অ্যাডাম গিলক্রিস্টের নেতৃত্বে শিরোপা জিতেছিল ডেকান চারজার্স। দলের শিরোপা জয়ে তিনি সামনে থেকে নেতৃত্ব দেন। ব্যাট হাতে দলকে শুভসূচনা এনে দেওয়ার পর অধিনায়ক হিসেবে সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত নিয়ে দলকে জয় পেতে সাহায্য করেছিলেন উইকেটরক্ষক-ব্যাটসম্যান গিলক্রিস্ট।

Image Source: BCCI

তিনি ২০০৯ সালের আসরে ১৬ ম্যাচে তিনটি অর্ধশতকের সাহায্যে ৩০.৯৪ ব্যাটিং গড়ে এবং ১৫২.৩১ স্ট্রাইক রেটে ৪৯৫ রান সংগ্রহ করেছিলেন। ম্যাথু হেইডেনের পর তিনিই আসরে সবচেয়ে বেশি রান সংগ্রহ করেছেন। উইকেটের পেছনেও বরাবরের মতো দুর্দান্ত ছিলেন গিলক্রিস্ট। দশটি ক্যাচ তালুবন্দী করার পাশাপাশি আটজন ব্যাটসম্যানকে স্ট্যাম্পিংয়ের ফাঁদে ফেলেছিলেন তিনি। শিরোপাজয়ী অধিনায়ক, টুর্নামেন্টের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক, টুর্নামেন্টে সবচেয়ে বেশি ছয় হাঁকানো ব্যাটসম্যান এবং সেরা উইকেটরক্ষক। সবদিক বিবেচনায় আইপিএলের দ্বিতীয় আসরে সবচেয়ে দামি ক্রিকেটারের অ্যাওয়ার্ড জিতেছিলেন অ্যাডাম গিলক্রিস্ট। পয়েন্টের হিসেবেও তিনি ২৮১.৫ পয়েন্ট নিয়ে সবার উপরে ছিলেন। দ্বিতীয় স্থানে থাকা সুরেশ রায়নার পয়েন্ট ছিল ২৬৫।

শচীন টেন্ডুলকার (মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স) – ২০১০ সাল

ভারতের কিংবদন্তি ব্যাটসম্যান শচীন টেন্ডুলকার আইপিএলের তৃতীয় আসরে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক ছিলেন। ধারাবাহিকভাবে রান করে মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সকে ফাইনালে উঠতে বড় ভূমিকা পালন করেন লিটল মাস্টার। চেন্নাইয়ের বিপক্ষে তার দল মুম্বাই ফাইনালে পরাজিত হলেও টুর্নামেন্ট সেরার অ্যাওয়ার্ড জিতেছিলেন তিনি। আসরে মোট ১৬ ম্যাচ খেলে পাঁচটি অর্ধশতক হাঁকিয়ে ৪৭.৫৩ ব্যাটিং গড়ে ৬১৮ রান সংগ্রহ করেছিলেন তিনি। টুর্নামেন্ট সেরার অ্যাওয়ার্ড জয়ের আগে ২০১০ সালে চারবার ম্যাচসেরার পুরস্কার জিতেছিলেন শচীন টেন্ডুলকার।

Image Source: BCCI

টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক হওয়ার দরুন টুর্নামেন্ট সেরার অ্যাওয়ার্ড জিতেছিলেন তিনি। বর্তমানের নিয়মানুযায়ী যদি টুর্নামেন্ট সেরার অ্যাওয়ার্ড দেওয়া হতো তাহলে ২০১০ সালে টুর্নামেন্ট সেরার অ্যাওয়ার্ড জিততেন জ্যাক ক্যালিস। তিনি ঐ আসরে ব্যাট হাতে ৫৭২ রান করার পাশাপাশি ১৩ উইকেট শিকার করেছিলেন। ব্যাটে-বলে অসাধারণ নৈপুণ্য প্রদর্শন করে ৩৮০ পয়েন্ট সংগ্রহ করলেও তার দল কলকাতা নাইট রাইডার্স নেট রান রেটে পিছিয়ে থেকে গ্রুপ পর্ব বাদ পড়লে তার টুর্নামেন্ট সেরার অ্যাওয়ার্ড জেতা হয়নি। অন্যদিকে শচীন টেন্ডুলকার ২৩৩ পয়েন্ট নিয়ে পয়েন্ট তালিকায় ৭ম স্থানে থেকে টুর্নামেন্ট সেরার অ্যাওয়ার্ড জিতে নেন।

ক্রিস গেইল (রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু) – ২০১১ সাল

কলকাতা নাইট রাইডার্স ছেড়ে ২০১১ সালের আসরে বেঙ্গালুরুতে যোগদান করেছিলেন ক্রিস গেইল। বেঙ্গালুরুর হয়ে নিজের প্রথম ম্যাচ খেলেছিলেন সাবেক দল কলকাতার বিপক্ষে। প্রথম ম্যাচেই দানবীয় ব্যাটিং করে ১০২ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেছিলেন তিনি। আসরের প্রায় প্রতি ম্যাচেই তিনি দলকে উড়ন্ত সূচনা এনে দিয়েছিলেন। যার সুবাদে বেঙ্গালুরু গ্রুপ পর্বে পয়েন্ট তালিকার শীর্ষে থেকে শেষপর্যন্ত ফাইনাল খেলেছিল।

Image Source: BCCI

ক্রিস গেইল ২০১১ সালে মোট ১২ ম্যাচ খেলে ছয়বার ম্যাচ সেরার পুরস্কার জিতেছিলেন। ১২ ম্যাচে দুটি শতক এবং তিনটি অর্ধশতকের সাহায্যে ৬৭.৫৬ ব্যাটিং গড়ে এবং ১৮৩.১৩ স্ট্রাইক রেটে ৬০৮ রান সংগ্রহ করেছিলেন। বল হাতেও ঐ আসরে সফল ছিলেন তিনি। আট উইকেট শিকার করেছিলেন ৬.৭৮ ইকোনমি রেটে। ফাইনালে চেন্নাই সুপার কিংসের কাছে তার দল বেঙ্গালুরু পরাজিত হলেও ব্যাটে-বলে দুর্দান্ত নৈপুণ্য প্রদর্শন করে টুর্নামেন্ট সেরার পুরস্কার জিতেছিলেন ক্রিস গেইল। আসরে ৬০৮ রান এবং আট উইকেট শিকার করার পাশাপাশি ৫৬টি চার এবং ৪৪টি ছয় হাঁকিয়েছিলেন। 

সুনীল নারিন (কলকাতা নাইট রাইডার্স) – ২০১২

কলকাতা নাইট রাইডার্স আইপিএলের প্রথম শিরোপা জেতে ২০১২ সালের আসরে। ফাইনালে তারা চেন্নাই সুপার কিংসকে হারিয়ে শিরোপা ঘরে তোলে। তাদের শিরোপা জয়ে সবচেয়ে বড় ভূমিকা পালন করেছিলেন সুনীল নারিন, জ্যাক ক্যালিস, গৌতম গম্ভীর এবং সাকিব আল হাসানরা। ওয়েস্ট ইন্ডিজের রহস্যময়ী স্পিনার সুনীল নারিন নিজের প্রথম আইপিএল মৌসুমেই সবার নজর কাড়েন। তিনি টুর্নামেন্টে ১৫ ম্যাচে ১৩.৫০ বোলিং গড়ে এবং ওভারপ্রতি মাত্র ৫.৪৭ রান খরচ করে ২৪ উইকেট উইকেট শিকার করেছিলেন। 

Image Source: BCCI

সুনীল নারিন আসরে একবার ইনিংসে পাঁচ উইকেট এবং একবার চার উইকেট শিকার করেছেন। উইকেট শিকারের পাশাপাশি রান আটকে দেওয়ার সক্ষমতার কারণে তিনি টুর্নামেন্ট সেরা অ্যাওয়ার্ড জিতেছিলেন। আসরে ২৪ উইকেট শিকারের পাশাপাশি ১৬৪টি বলে ব্যাটসম্যানকে কোনো রান তুলতে দেননি। এতে করে তার রেটিং পয়েন্ট দাঁড়িয়েছিল ২৫৫.৫। ঐ আসরেই শেষবারের মতো রেটিং পয়েন্ট বিবেচনায় না এনে টুর্নামেন্ট সেরার অ্যাওয়ার্ড দেওয়া হয়েছিল। তা-না হলে টানা দ্বিতীয়বারের মতো টুর্নামেন্ট সেরার অ্যাওয়ার্ড জিততেন ক্রিস গেইল। তিনি আসরে সর্বোচ্চ ৭৩৩ রান সংগ্রহ করে ৩৩১.৫ রেটিং পয়েন্ট অর্জন করেছিলেন।

শেন ওয়াটসন (রাজস্থান রয়্যালস) – ২০১৩ সাল

আইপিএলের প্রথম আসরে ম্যান অব দ্য টুর্নামেন্টের পুরস্কার জিতেছিলেন শেন ওয়াটসন। পয়েন্টের ভিত্তিতে টুর্নামেন্ট সেরার অ্যাওয়ার্ড দেওয়া শুরু হয় ২০১৩ সাল থেকে, সেবারও টুর্নামেন্ট সেরার অ্যাওয়ার্ড জেতেন অস্ট্রেলিয়ান অলরাউন্ডার শেন ওয়াটসন। তার দল রাজস্থান তৃতীয় স্থানে থেকে টুর্নামেন্ট শেষ করলেও তিনি ৩৮৬ পয়েন্ট নিয়ে মোস্ট ভ্যালুয়েবল ক্রিকেটার অব দ্য টুর্নামেন্টের অ্যাওয়ার্ড জেতেন।

Image Source: BCCI

শেন ওয়াটসন ব্যাট হাতে ১৬ ম্যাচে একটি শতক এবং দুটি অর্ধশতকের সাহায্যে ৩৮.৭৮ ব্যাটিং গড়ে ৫৪৩ রান সংগ্রহ করেছেন। বল হাতে তার উইকেট সংখ্যা ১৩টি। তিনি ১০১টি ডট বল করে ১৩ উইকেট এবং ৫৯টি চার এবং ২২টি ছয় হাঁকিয়ে ৫৪৩ রান করার পাশাপাশি ফিল্ডার হিসাবে ছয়টি ক্যাচ লুফে নিয়ে ৩৮৬ পয়েন্ট অর্জন করেছিলেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ক্রিস গেইলের মোট পয়েন্ট ছিল ৩৪৯। তিনি ৫৭টি চার এবং ৫১টি ছয় হাঁকিয়ে এই পয়েন্ট অর্জন করেছিলেন।

গ্লেন ম্যাক্সওয়েল (কিংস ইলেভেন পাঞ্জাব) – ২০১৪ সাল

কিংস ইলেভেন পাঞ্জাব আইপিএলে প্রথমবারের মতো ফাইনালে ওঠে ২০১৪ সালের আসরে। গ্রুপ পর্বে ১৪ ম্যাচের মধ্যে ১১টি তে জেতা পাঞ্জাব প্রথমবারের মতো ফাইনালে উঠে শেষপর্যন্ত রানার্স আপ হয়েই সন্তুষ্ট থাকে। তাদের ধারাবাহিক সাফল্যের পেছনে বড় ভূমিকা পালন করেছিলেন অস্ট্রেলিয়ার আক্রমণাত্মক ব্যাটসম্যান গ্লেন ম্যাক্সওয়েল। আসরে তিনি চারটি অর্ধশতকের সাহায্যে ৩৪.৫০ ব্যাটিং গড়ে এবং ১৮৭.৭৫ স্ট্রাইক রেটে ৫৫২ রান সংগ্রহ করেছিলেন। চারটি অর্ধশতকের সবকটি ইনিংসেই শতক হাঁকানোর সম্ভাবনা জাগিয়ে তুলেছিলেন তিনি। তার অর্ধশত রানের চারটি ইনিংস যথাক্রমে ৯৫, ৮৯, ৯৫ এবং ৯০ রানের। এই চারটি ম্যাচে ম্যাক্সওয়েল ম্যাচসেরার পুরস্কার জিতেছিলেন।

Image Source: BCCI

ফাইনালে ম্যাক্সওয়েলের পাঞ্জাব প্রথমে ব্যাট করে চার উইকেটে ১৯৯ রান করে শেষপর্যন্ত পরাজিত হয়েছিল। তার দল শিরোপা না জিতলেও ২৮৬ পয়েন্ট নিয়ে সবচেয়ে দামি ক্রিকেটারের অ্যাওয়ার্ড জেতেন। তিনি ১৪টি ডট বলে, এক উইকেট, নয়টি ক্যাচ এবং ৪৮টি চার এবং ৩৬টি ছয় হাঁকিয়ে ২৮৬ পয়েন্ট অর্জন করে মোস্ট ভ্যালুয়েবল প্লেয়ারের অ্যাওয়ার্ড জিতেছিলেন। দ্বিতীয় স্থানে থাকা ডোয়াইন স্মিথের সাথে তার পয়েন্টের ব্যবধান ছিল মাত্র ০.৫। আসরে স্মিথ মোট ২৮৫.৫ পয়েন্ট অর্জন করেছিলেন।

আন্দ্রে রাসেল (কলকাতা নাইট রাইডার্স) – ২০১৫ সাল

ওয়েস্ট ইন্ডিজের অলরাউন্ডার আন্দ্রে রাসেল আইপিএলে প্রথমবারের মতো মোস্ট ভ্যালুয়েবল ক্রিকেটারের অ্যাওয়ার্ড জিতেছিলেন ২০১৫ সালে। আসরে তার দল গ্রুপ পর্ব থেকে বাদ পড়লেও তিনি ছিলেন অনবদ্য। ব্যাট হাতে ঝড়ো ইনিংস খেলার পাশাপাশি বল হাতেও নিয়মিত উইকেট শিকার করেছিলেন তিনি। আসরে ১৩ ম্যাচ খেলে তিনটি অর্ধশতক হাঁকিয়ে ৩৬.২২ ব্যাটিং গড়ে এবং ১৯২.৮৯ স্ট্রাইক রেটে ৩২৬ রান সংগ্রহ করেছিলেন। অর্ধশতক হাঁকানো তিন ম্যাচেই তিনি ম্যাচসেরার পুরস্কার জিতেছিলেন।

Image Source: BCCI

শেষদিকে ঝড়ো ব্যাটিং করে ৩২৬ রান তোলার পাশাপাশি ২৩.১৪ বোলিং গড়ে ১৪ উইকেট শিকার করেছেন তিনি। আসরে ৯৪টি ডট বল দিয়ে ১৪ উইকেট শিকার করে এবং ৩৫টি চার ও ১৯টি ছয় হাঁকিয়ে ৩২৬ রান করা রাসেলের আসরে মোট পয়েন্ট ছিল ৩১২। দ্বিতীয় স্থানে থাকা তার স্বদেশী ডোয়াইন ব্রাভোর মোট পয়েন্ট ছিল ২৮৪। ব্রাভোর চেয়ে ২৮ পয়েন্টে এগিয়ে থেকে মোস্ট ভ্যালুয়েবল ক্রিকেটারের অ্যাওয়ার্ড জিতেছিলেন আন্দ্রে রাসেল।

বিরাট কোহলি (রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু) – ২০১৬ সাল

বিরাট কোহলি ২০১৬ সালের আইপিএলে দুর্দান্ত ফর্মে ছিলেন। বর্তমানে বিশ্ব ক্রিকেটের অন্যতম সেরা এই ব্যাটসম্যান ২০১৬ সালের আসরে শতক হাঁকিয়েছিলেন চারটি। বিরাট এবং ডি ভিলিয়ার্সের ব্যাটে চড়ে বেঙ্গালুরু ঐ আসরে ফাইনালে ওঠে। এর আগে দুবার ফাইনালে উঠেও শেষ হাসি হাসতে না পারা বেঙ্গালুরু এই আসরেও রানার্স-আপ হয়ে সন্তুষ্ট থাকে। চ্যাম্পিয়ন হয় ডেভিড ওয়ার্নার এবং মুস্তাফিজের সানরাইজার্স হায়দরাবাদ।

Image Source: BCCI

তার দল চ্যাম্পিয়ন না হলেও ব্যাট হাতে ১৬ ম্যাচে চারটি শতক এবং সাতটি অর্ধশতক হাঁকিয়ে ৮১.০৮ ব্যাটিং গড়ে ৯৭৩ রান সংগ্রহ করে টুর্নামেন্টের সবচেয়ে দামি ক্রিকেটারের অ্যাওয়ার্ড জেতেন। আসরের সেরা ক্রিকেটার নির্বাচিত হওয়ার পাশাপাশি পাঁচবার ম্যাচ সেরার পুরস্কার জিতেছিলেন তিনি। আসরে ৮৩টি চার এবং ৩৮টি ছয় হাঁকিয়ে মোট ৩৫৬.৫ পয়েন্ট নিয়ে সবার উপরে ছিলেন কোহলি। দ্বিতীয় স্থানে থাকা চ্যাম্পিয়ন দলের অধিনায়ক ডেভিড ওয়ার্নারের পয়েন্ট ছিল ৩৩৮.৫। তিনি নয়টি অর্ধশতকের সাহায্যে ৮৪৮ রান করেছিলেন। 

বেন স্টোকস (রাইজিং পুনে সুপারজায়ান্ট) – ২০১৭ সাল 

আইপিএলের ২০১৭ সালের আসরে টাকার অংকে সবচেয়ে দামি ক্রিকেটার ছিলেন ইংল্যান্ডের অলরাউন্ডার বেন স্টোকস। তাকে দলে ভিড়িয়েছিলেন নবাগত দল রাইজিং পুনে সুপারজায়ান্ট। পুরো আসরে জুড়ে স্টোকস তার মূল্যের প্রতিদান দিয়েছিলেন। যখনই সুযোগ পেয়েছিলেন দলের হয়ে অবদান রেখেছিলেন। এজন্যই তো নিয়ম ভেঙে তাকে সবচেয়ে দামি ক্রিকেটারের অ্যাওয়ার্ড দেওয়া হয়। আসর শেষে সবচেয়ে বেশি পয়েন্ট ছিল সুনীল নারিনের। তার অর্জিত পয়েন্ট ছিল ২৯৮। নারিন টুর্নামেন্টে ১৬ ম্যাচে ৪১.২০ বোলিং গড়ে ১০ উইকেট শিকার করার পাশাপাশি ১৭২.৩০ স্ট্রাইক রেটে ২২৪ রান সংগ্রহ করেছিলেন। ব্যাট হাতে চার-ছয় হাঁকানোর পাশাপাশি বল হাতে ১৩৩টি ডট বল করার কারণে তার পয়েন্ট স্টোকসের চেয়ে বেশি ছিল।

Image Source: BCCI

বেন স্টোকস নিজের প্রথম আইপিএলের আসরে ১২ ম্যাচ খেলেছিলেন। ১২ ম্যাচে একটি শতক এবং একটি অর্ধশতকের সাহায্যে ৩১.৬০ ব্যাটিং গড়ে ৩১৬ রান সংগ্রহ করেছিলেন তিনি। এছাড়া বল হাতে ১২ উইকেট এবং পাঁচটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন তিনি। সবমিলিয়ে ১২ ম্যাচ থেকে মোট ২৭০ পয়েন্ট নিয়ে মোস্ট ভ্যালুয়েবল প্লেয়ারের অ্যাওয়ার্ড জিতেছিলেন বেন স্টোকস। তার অলরাউন্ড নৈপুণ্যে ফাইনালে উঠেছিল রাইজিং পুনে সুপারজায়ান্ট।

সুনীল নারিন (কলকাতা নাইট রাইডার্স) – ২০১৮ সাল

ওয়েস্ট ইন্ডিজের অলরাউন্ডার সুনীল নারিন আইপিএলের একাদশ আসরে মোস্ট ভ্যালুয়েবল প্লেয়ারের অ্যাওয়ার্ড জিতেছিলেন। তার দল কলকাতা নাইট রাইডার্স ফাইনাল খেলতে না পারলেও তিনি দ্বিতীয়বারের মতো মোস্ট ভ্যালুয়েবল প্লেয়ার অব দ্য টুর্নামেন্ট নির্বাচিত হয়েছিলেন। হঠাৎ ব্যাটসম্যান বনে যাওয়া নারিন ২০১৮ সালের আসরে কলকাতার হয়ে ইনিংস গোড়াপত্তন করেন। দল থেকে তার যে চাহিদা ছিল, তার সবটাই দিতে সক্ষম হয়েছিলেন তিনি। ১৬ ম্যাচে দুটি অর্ধশতক হাঁকিয়ে ১৮৯.৮৯ স্ট্রাইক রেটে তিনি ৩৫৭ রান সংগ্রহ করেছিলেন।

Image Source: BCCI

বরাবরের মতো বল হাতেও বেশ সফল ছিলেন সুনীল নারিন। ১৬ ম্যাচে তার উইকেট সংখ্যা ছিল ১৭টি। এছাড়া ১৩৭টি ডট বল করে এবং ৪০টি চার ও ২৩টি ছয় হাঁকিয়ে মোট ৩৭৯.৫ রেটিং পয়েন্ট নিয়ে সবচেয়ে দামি ক্রিকেটার নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি। ২০১৮ সালে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল চেন্নাই সুপার কিংস। ফাইনালে শতক হাঁকিয়ে দলের জয়ে বড় অবদান রাখা শেন ওয়াটসন মোস্ট ভ্যালুয়েবল ক্রিকেটারের তালিকায় ৩১৮ পয়েন্ট নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে ছিলেন। 

আন্দ্রে রাসেল (কলকাতা নাইট রাইডার্স) – ২০১৯ সাল

আইপিএলের ২০১৯ সালের আসরে কলকাতা নাইট রাইডার্সের সফলতা নির্ভর করেছিল আন্দ্রে রাসেলের উপর। তার ব্যাট হাসলে হাসে কলকাতা। এইবছর কলকাতা নাইট রাইডার্স ছয় ম্যাচ জিতেছিল। যার মধ্যে রাসেল একা হাতেই জিতিয়েছেন চারটি ম্যাচে। বেঙ্গালুরু এবং হায়দরাবাদের বিপক্ষে তো অবিশ্বাস্য জয় এনে দিয়েছিলেন তিনি। ব্যাট হাতে দুর্দান্ত নৈপুণ্য প্রদর্শন করার পর বল হাতেও সফল ছিলেন তিনি। যার ফলে দ্বিতীয়বারের মতো আইপিএলের মোস্ট ভ্যালুয়েবল প্লেয়ার নির্বাচিত হয়েছিলেন। 

Image Source: BCCI

আন্দ্রে রাসেল ১৩ ইনিংস ব্যাট করে চারটি অর্ধশতক হাঁকিয়ে ৫৬.৬৭ ব্যাটিং গড়ে এবং ২০৪.৮২ স্ট্রাইক রেটে ৫১০ রান সংগ্রহ করেছিলেন। আসরে তিনি ৩১টি চারের বিপরীতে ৫২টি ছয় হাঁকিয়েছিলেন। ২০৪.৮২ স্ট্রাইক রেটে রান করে তিনি সুপার স্ট্রাইকার অব দ্য টুর্নামেন্টের অ্যাওয়ার্ডও পেয়েছিলেন। এছাড়া ৫২টি ছয় হাঁকিয়ে ম্যাক্সিমাম সিক্সেস অ্যাওয়ার্ডও জেতেন তিনি। বোলার রাসেল ১২ ইনিংসে বল করে ২৬.০৯ বোলিং গড়ে ১১ উইকেট শিকার করেছিলেন। তিনি মোট ৩৬৯ পয়েন্ট নিয়ে মোস্ট ভ্যালুয়েবল প্লেয়ারের অ্যাওয়ার্ড জিতেছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন চ্যাম্পিয়ন দলের হার্দিক পান্ডিয়া। মুম্বাইয়ের এই অলরাউন্ডার আসর জুড়ে দুর্দান্ত নৈপুণ্য প্রদর্শন করে ৩৪২ পয়েন্ট অর্জন করেছিলেন।

This article is in Bangla language. It is about the Most Valuable Player in IPL. Please click on the hyperlinks to check the references.

Featured Image: BCCI

Related Articles