গত কয়েকবছর ধরে হুয়াওয়ে বেশ কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, এবং সময় যত গড়াচ্ছে তাদের উপর চাপ ততই বাড়ছে। কিন্তু চীনা এই টেক জায়ান্টও হাল ছেড়ে দেবার পাত্র নয়, অন্তত একটা হাড্ডাহাড্ডি লড়াই না করে তো নয়ই! গত বছর ‘হুয়াওয়ে ডেভেলপার কনফারেন্স (HDC-2019)’ এ তারা নিজেদের তৈরি অপারেটিং সিস্টেম ‘হারমনি ওস (HarmonyOS)’ উন্মোচন করে, যেখানে ভবিষ্যতের জন্য এই অপারেটিং সিস্টেমের বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিক নিয়ে আলোকপাত করা হয়।
সেই বছর এই অপারেটিং সিস্টেম সম্বলিত Honor Vison স্মার্ট টিভি এবং কিছু স্মার্ট ওয়াচ বাজারে আনা হয়। এ বছর হুয়াওয়ে তাদের অপারেটিং সিস্টেমের দ্বিতীয় ভার্সন (HarmonyOS 2.0) উন্মোচন করেছে এবং ঘোষণা করেছে আগামী বছর থেকে হুয়াওয়ে স্মার্টফোনেও এই অপারেটিং ব্যবহার করবে। আজকের লেখায় হুয়াওয়ের এই অপারেটিং সিস্টেম সম্পর্কে আলোচনার পাশাপাশি এর নানা দিক তুলে ধরা হবে।
হারমনি ওএস কি লিনাক্স ভিত্তিক?
না। হারমনি ওএস হুয়াওয়ের নিজস্ব কার্নেলভিত্তিক। এর আর্কিটেকচারাল ডিজাইন লিনাক্সের থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। যেখানে লিনাক্স হলো একটি মনোলিথিক কার্নেল, সেখানে হারমনি ওএস-এর কার্নেল হলো মাইক্রো-কার্নেল।
প্রশ্ন হলো, মনোলিথিক বা মাইক্রো-কার্নেল বলতে আসলে কী বোঝায়?
সহজভাবে বলতে গেলে, প্রতিটি অপারেটিং সিস্টেমের ভেতরে, একদম কোর লেভেলে একটি কার্নেল থাকে- যার উপর ভিত্তি করে অপারেটিং সিস্টেমের অন্যান্য কাঠামো গড়ে তোলা হয়। কার্নেলকে বলা হয় অপারেটিং সিস্টেমের প্রাণ, যেটি বিভিন্ন ধরনের হার্ডওয়্যার কিংবা রিসোর্সের সাথে অপারেটিং সিস্টেমের সংযোগ করিয়ে দেয় এবং কোনো একটি প্রোগ্রাম কীভাবে এক্সিকিউট/চালু হবে সেটি নির্ধারণ করে। প্রতিটি কার্নেলকেই এরকম বেশ কিছু অপরিহার্য কাজ সম্পন্ন করতে হয় এবং এই কাজগুলো একেকটি কার্নেল একেকভাবে সম্পন্ন করে।
এখনকার আধুনিক অপারেটিং সিস্টেমগুলো ‘ইউজার এপ্লিকেশন সফটওয়্যার’-কে অপারেটিং সিস্টেমের সংবেদনশীল অংশ থেকে আলাদা করে রাখার চেষ্টা করে। একে আপনি মেমরির মাঝে এমন এক দুর্ভেদ্য দেয়াল হিসেবে কল্পনা করতে পারেন, যেটা সিস্টেম লেভেল সার্ভিস এবং এপ্লিকেশন সফটওয়্যার আলাদা আলাদাভাবে ব্যবহার করে। মূলত ‘সিকিউরিটি এবং স্ট্যাবিলিটি’ এই দুটি গুরুত্বপূর্ণ কারণে এরকম করা হয়ে থাকে।
উদাহরণস্বরূপ- লিনাক্স কার্নেল অনেকগুলো সিস্টেম-লেভেল ইউটিলিটি এবং প্রসেসকে শুধুমাত্র মেমরির কিছু সুনির্দিষ্ট জায়গার মধ্যে দিয়ে চলতে দেয়। কিন্তু হারমোনি ওএস এই কাজটি আলাদাভাবে করে। এটি কার্নেল মোডে কী চলবে সে সম্পর্কে খুবই বিচক্ষণ ভূমিকা পালন করে এবং একইসাথে চলমান সার্ভিসগুলোকে কার্যকরভাবে একদম গোড়ার মধ্যেই সীমিত করে ফেলে।
লিনাক্সের মতো মনোলিথিক কার্নেলগুলো এতটা বিচক্ষণ হতে পারে না। মনোলিথিকের তুলনায় মাইক্রো-কার্নেল তৈরি করা অনেক বেশি কঠিন। এছাড়াও নাম শুনেই বোঝা যাচ্ছে, মাইক্রো-কার্নেল খুব ছোট আকারের কার্নেল। ফলে একে যেকোনো ডিভাইসের মধ্যেই ব্যবহার করা যায়। এর ফলে হারমনি ওএস যেমন স্মার্টওয়াচের মতো ছোট ডিভাইসে স্থাপন করা সম্ভব, ঠিক তেমনই স্মার্টফোন, ল্যাপটপ, এমনকি সুপার কম্পিউটারেও স্থাপন করা সম্ভব!
হারমনি ওএস এর বিশেষত্ব: কেন একে বৈপ্লবিক বলা হচ্ছে?
একটু আগেই বলা হলো হারমনি ওএস এমন একটি অপারেটিং সিস্টেম যাকে যেকোনো রকম ডিভাইসে ব্যবহার করা সম্ভব। একে হুয়াওয়ের ভবিষ্যতের প্রতি চূড়ান্ত রকমের দূরদর্শিতার একটি নমুনা হিসেবে বিবেচনা করা যায়।
হারমনি ওএস এমন এক কনসেপ্টকে সত্যি করে দেখালো যেটি অন্য কেউ এখনও পুরোপুরিভাবে সম্ভব করতে পারেনি। আর সেটি হলো ‘One Operating System For Every Device‘ অর্থাৎ সকল প্রকার ডিভাইসের জন্য একটিমাত্র অপারেটিং সিস্টেম! সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী গুগলও একই ধারণাকে সামনে রেখে ‘ফিউশিয়া’ নামক একটি নতুন অপারেটিং সিস্টেমের উপর কাজ করছে, যেটা কবে নাগাদ বাজারে আসবে তা এখনও অনিশ্চিত।
সুতরাং হুয়াওয়েই হলো প্রথম কোম্পানি যারা এই নতুন ধারা বাস্তবায়ন করলো এবং সামনে যত প্রকার অপারেটিং সিস্টেম আসবে, সবগুলোই এই ধারা অনুসরণ করবে। এর অন্যতম কারণ হলো যত দিন যাচ্ছে আমরা ততই মাল্টিপল ডিভাইস ব্যবহার করছি এবং শুধু মাল্টিপল ডিভাইস থাকলেই হয় না, এই ডিভাইসগুলোকে একে অপরের সাথে সংযুক্ত থেকে পরস্পরের সাথে সমন্বয় করে কাজ করতে হয়।
চিন্তা করুন, আপনি হয়তো আপনার সাথে একটি স্মার্টওয়াচ কিংবা হেলথ ট্র্যাকার পরে আছেন, যেটি কি না আপনার ফোনের সাথে সংযুক্ত এবং সর্বক্ষণ এরা একে অন্যের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করছে। আবার আপনার বাসার যে স্মার্ট টিভি আছে, সেটাও আবার আপনার ফোন কিংবা ল্যাপটপের সাথে সংযুক্ত। এগুলো একসাথে সংযুক্ত থাকে বলেই আপনি চাইলে আপনার হাতের স্মার্টওয়াচ দিয়ে ফোনের অনেক ফাংশন ব্যবহার করতে পারেন; আবার আপনার বাসার স্মার্ট টিভিকে আপনি আপনার ফোন থেকে নিয়ন্ত্রণ করা ছাড়াও আরো বহু রকমের কাজ করতে পারেন। যদি এই ডিভাইসগুলো একে অপরের সাথে সংযুক্ত না হতে পারতো কিংবা একে অন্যের সাথে কথা বলতে না পারতো তাহলে কি আপনি এই সুবিধা গুলো পেতে পারতেন? কখনোই না!
এভাবে সময় যত সামনে গড়াচ্ছে ততই মানুষ মাল্টিপল ডিভাইসকে একটা নেটওয়ার্কে এনে একসাথে সমন্বয় করে ব্যবহার করছে, যেটাকে অনেক সময় ইকো-সিস্টেম বলে অবিহিত করা হয়। আর ৫/৭ বছর পর যখন ইন্টারনেট অফ থিংস (আইওটি), আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্ট (এআই) কিংবা এআইওটি-এর মতো চতুর্থ শিল্প-বিপ্লবভিত্তিক প্রযুক্তিগুলো পুরোপুরি বাস্তবায়ন হবে তখন শত-শত, হাজার-হাজার রকমের ডিভাইসকে একে অপরের সাথে সংযুক্ত থেকে একযোগে কাজ করতে হবে! তাহলে ভবিষ্যত চাহিদা কি আপনি একটু হলেও কল্পনা করতে পারছেন?
ভবিষ্যত থেকে আবার বর্তমানে আসা যাক।
বর্তমানে আমরা যে মাল্টিপল ডিভাইসকে একটা ইকো-সিস্টেমে এনে ব্যবহার করি, সেদিকে একটু নজর দেয়া যাক। আজকের দিনের একেক ধরনের ডিভাইস একেক ধরনের অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহার করে! এই আলাদা আলাদা অপারেটিং সিস্টেমগুলো আবার আলাদা আলাদা ফ্রেমওয়ার্ক অনুসরণ করে তৈরি করা, এবং এরা যেকোনো কাজও সম্পন্ন করে আলাদাভাবে!
হারমোনি ওএস এর সবচেয়ে বড় দিক এটাই। এটি যেকোনো প্রকার ডিভাইসে ব্যবহার করা যায় বিধায় অনেকগুলো ডিভাইসকে একসাথে সংযুক্ত করার ক্ষেত্রে কোনোরকম ঝামেলা পোহাতে হবে না। সবগুলো ডিভাইসে একই অপারেটিং সিস্টেম থাকার ফলে এদেরকে নতুন করে একটা জেনারেল ফ্রেমওয়ার্কে নিয়ে আসতে হয় না, যেটা বর্তমানে করতে প্রচুর সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়। এছাড়াও এই অপারেটিং সিস্টেমের আলাদা আলাদা ডিভাইসের জন্য আলাদা আলাদাভাবে অ্যাপ্লিকেশন ডেভেলপ করতে হবে না। যেকোনো একটি ডিভাইসের জন্য একবার অ্যাপ্লিকেশন তৈরি করলেই সেটা সবগুলো ডিভাইসে ব্যবহার করা যাবে।
অ্যাপ ডেভেলপারদের জন্য এটা অনেক বড় একটা সুবিধা। কারণ তাদেরকে আলাদা আলাদা ডিভাইসের জন্য নতুনভাবে অ্যাপ ডেভেলপ করতে হবে না এবং ডেভেলপ করার প্রক্রিয়াও অনেক সহজ হয়ে যাবে। যেমন ধরুন, আপনি আপনার একটি অ্যাপ যদি অ্যান্ড্রয়েডের জন্য বানাতে চান তাহলে আপনাকে অ্যান্ড্রয়েডের ফ্রেমওয়ার্ক সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে-বুঝে সেটা অনুসরণ করে অ্যাপটি বানাতে হবে। সেই একই অ্যাপ যদি আপনি উইন্ডোজে ব্যবহার করতে চান তাহলে সম্পূর্ন আলাদা ফ্রেমওয়ার্ক অনুসরণ করতে হবে, ম্যাক-ওস কিংবা লিনাক্সে চালাতে চাইলে সেখানেও সম্পূর্ন আলাদা ফ্রেমওয়ার্ক অনুসরণ করতে হবে! অর্থাৎ চারটি প্লার্টফর্মের জন্য আপনাকে চারটি আলাদা ফ্রেমওয়ার্ক অনুসরণ করে সম্পূর্ণ নতুনভাবে একই অ্যাপ চারবার তৈরি করতে হবে!
ডেভেলপারদের জন্য এই বিষয়টি স্রেফ দুঃস্বপ্ন! হারমনি ওএস এর ক্ষেত্রে এই বিষয়টি একদম দুধ-ভাতের মতো! আপনি একটি ফ্রেমওয়ার্কের জন্য একবারই অ্যাপ তৈরি করবেন আর সেটা বাকি সকল ডিভাইসে কোনোরকম ঝামেলা ছাড়াই ব্যবহার করা যাবে।
এ তো গেলো সফটওয়্যারের বিষয়। এখন আসা যাক হার্ডওয়্যারের দিকে। আপনার মনে নিশ্চয়ই প্রশ্ন জাগছে, আলাদা আলাদা রকমের ডিভাইসে কীভাবে একটিমাত্র অপারেটিং সিস্টেম স্থাপন করা সম্ভব হবে?
যেখানে একটা সাধারণ স্মার্টওয়াচের মেমরি-প্রসেসিং-পাওয়ার-কাজ নগণ্য, সেখানে একটি কম্পিউটারের মেমরি-প্রসেসিং-পাওয়ার এবং কাজ কত বেশি জটিল এবং বৈচিত্রময়। তাহলে কীভাবে এই সম্পূর্ণ দুই ধরনের ডিভাইসে একই অপারেটিং সিস্টেম কাজ করতে পারবে? এখানে এসে সত্যিই হারমনি ওএসকে বাহবা দিতেই হবে।
হারমনি ওএস কীভাবে কাজ করবে সেটা ব্যাখ্যা করার আগে একবার উইন্ডোজের দিকে তাকান। আপনি চাইলে আপনার উইন্ডোজের সাথে আলাদা একটি প্রিন্টারের সংযোগ করে দিয়ে কাজ করতে পারেন, আবার সেই একই কম্পিউটারে একটা ক্যামেরা, স্পিকার কিংবা মনিটরও কানেক্ট করে কাজ করতে পারেন। তাহলে ভাবুন তো কীভাবে এই আলাদা আলাদা ডিভাইস বা মডিউলগুলো উইন্ডোজে কাজ করছে? নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন, এই মডিউলগুলো যাতে উইন্ডোজের সাথে কাজ করতে পারে সেজন্য উইন্ডোজের ফ্রেমওয়ার্ক সামনে রেখে এদের জন্য আলাদা আলাদা ড্রাইভার এবং অন্যান্য সফটওয়্যার তৈরি করা হয়েছে, তারপরই তো এগুলো উইন্ডোজের সাথে কাজ করতে পারছে, তাই তো?
এবার হারমনি ওএস এর দিকে তাকান। হারমনি ওএস-এর ক্ষেত্রেও বিষয়টিকে একইভাবে কল্পনা করুন- শুধুমাত্র আলাদা আলাদা মডিউলের বদলে আলাদা আলাদা ডিভাইস কল্পনা করে ভাবুন! অর্থাৎ উইন্ডোজের জন্য যেটা মনিটর, হারমনির জন্য সেটি একটি স্মার্ট-টিভি হিসেবে, উইন্ডোজের ক্যামেরাকে হারমনির জন্য একটি স্মার্টফোন হিসেবে কিংবা উইন্ডোজের প্রিন্টারকে হারমনির জন্য একটি ল্যাপটপ হিসেবে কল্পনা করুন! এবার বুঝতে পারলেন? হারমনি ওএস-এ আলাদা আলাদা ডিভাইসকে আলাদা আলাদা মডিউল হিসেবে মেইন ফ্রেমওয়ার্কের সাথে সংযুক্ত করা হবে। ঠিক এ কারণেই একটি অপারেটিং সিস্টেম সবগুলো ডিভাইসে ব্যবহার করা সম্ভব হবে। এই প্রক্রিয়াটি যত সহজে ব্যাখ্যা করা হলো, কাজ করা কিন্তু আসলে ঠিক ততটাই কঠিন! যা-ই হোক, আপনি উপরের ব্যাখ্যা থেকে নিশ্চয়ই একটা বেসিক ধারণা পেয়েছেন যে হারমনি ওস কীভাবে কাজ করবে।
এবার নিশ্চয়ই আপনার মনে কোনো সন্দেহ নেই যে ঠিক কেন হারমনি ওএস একটি বৈপ্লবিক ধারার সূচনা করে দিল!
হারমনি ওএস কি সফল হবে?
একটি অপারেটিং সিস্টেম সফল হবে কি না তা অনেকগুলো বিষয়ের উপর নির্ভর করে। হারমনির ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। বর্তমানে আমেরিকান সরকারের রোষানলে আছে হুয়াওয়ে। নিরাপত্তাজনিত হুমকি হিসেবে হুয়াওয়ের দিকে অভিযোগ টেনে প্রথমে আমেরিকান কোম্পানির সাথে ব্যবসা এবং গুগলের অ্যান্ড্রয়েড ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছিল কোম্পানিটির উপরে। এরপরেও হুয়াওয়ে যখন অ্যান্ড্রয়েডের ওপেন সোর্স ভার্সনে হুয়াওয়ে মোবাইল সার্ভিসেস (HMS) সংযুক্ত করে স্মার্টফোন বাজারে আনছিল, তখন প্রথমে হুয়াওয়ের নিজস্ব প্রসেসর উৎপাদন বন্ধ এবং তারপর অন্যান্য কোম্পানি থেকেও প্রসেসর/চিপসেট আনার সমস্ত পথ বন্ধ করে দিয়েছে ট্রাম্প প্রসাশন।
সর্বশেষ অবস্থা অনুযায়ী, স্যামসাং-এলজিসহ আমেরিকান প্রযুক্তি ব্যবহার করে এমন যেকোনো প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে হুয়াওয়ে কোনো যন্ত্রাংশ কিনতে পারবে না! এমন পরিস্থিতিতেই হুয়াওয়ে তাদের হারমনি ওএস ২.০ এর ঘোষণা দিল। এত বাধা পেরিয়ে হুয়াওয়ে যদি হারমনি ওএস যুক্ত স্মার্টফোন বাজারে আনেও, তবুও একে প্রতিযোগিতা করতে হবে গুগলের অ্যান্ড্রয়েড কিংবা অ্যাপলের আইওএস-এর মতো প্রতিষ্ঠিত অপারেটিং সিস্টেমের সাথে! কম্পিউটারের ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতা হবে উইন্ডোজ কিংবা ম্যাক-ওএস এর মতো জায়ান্টের সঙ্গে।
বিভিন্ন উৎস থেকে বলা হচ্ছে, হারমনি ওএস-এ অ্যান্ড্রয়েড/আইওএস অ্যাপ কম্প্যাটিবিলিটি থাকবে। হুয়াওয়ে নিশ্চিত করেছে, খুব সহজেই অন্যান্য অপারেটিং সিস্টেমের অ্যাপ এতে পোর্ট করা যাবে। হারমনি ওএস খুবই লাইটওয়েট এবং ইফিশিয়েন্ট হবে। এছাড়াও হারমনি ওএস-এর মাল্টিপল ডিভাইস সাপোর্ট করা এবং অ্যাপ ডেভেলপ করা অনেক সহজ বিধায় হুয়াওয়ের সামনে বড় সুযোগও আছে। ডেভেলপারদের সুবিধার জন্য হুয়াওয়ে হারমনির সোর্স ওপেন করে দিয়েছে, অর্থাৎ লিনাক্সের মতো এটিও ওপেন-সোর্স অপারেটিং সিস্টেম। ফলে যে কেউ চাইলে এই অপারেটিং সিস্টেম নিয়ে কাজ করতে পারবে।
সামগ্রিক আলোচনায় বোঝা যাচ্ছে, হারমনির সফল হবার মতো যেমন অনেকগুলো শক্তিশালী কারণ রয়েছে, ঠিক তেমনই এর সামনে রয়েছে অত্যন্ত কঠিন কিছু চ্যালেঞ্জও! তাই এর সফলতা কিংবা ব্যর্থতা নির্ভর করবে হুয়াওয়ে কতটা দক্ষতার সাথে তাদের অপারেটিং সিস্টেমের জন্য ডেভেলপারদের আকর্ষণ করতে পারবে এবং অন্যান্য কোম্পানির সাথে পারস্পরিক সহযোগিতা করতে পারবে তার উপর। এর সাথে বৈশ্বিক প্রতিযোগিতা, বিশ্ব রাজনীতিসহ আরও অনেক বিষয় তো সবসময়ই থাকবে। বিশেষ করে বর্তমানে চীনের সাথে আমেরিকান সরকারের যে ক্রমবর্ধমান বাণিজ্যিক যুদ্ধ চলছে- সেটার অনেক বেশি প্রভাব থাকবে হুয়াওয়ে এবং হারমনি ওএস এর উপর।
হারমনি ওএস চীনের স্বাবলম্বী হবার ভিশন-২০২৫ এর সাথে পুরোপুরিভাবে খাপ খায় বলে চীনের দেশীয় মার্কেটে এটি সফল হবে সেটা অনেকটা নিশ্চিতভাবেই বলা যায়। তবে বিশ্ববাজারে এটি আদৌ সফল হবে কি না তা নির্ভর করবে হুয়াওয়ের দক্ষতার উপরে।