যদি বলি স্বর্গের পথে পা বাড়িয়েছি, মানুষজন স্বভাবতই আমার দিকে বাঁকা চোখে তাকাবে। জীবিত অবস্থায় কি স্বর্গে যাওয়া যায়? স্বর্গ মানে যদি হয় অপরূপ সুন্দর, তবে আমি সৃষ্টিকর্তার তৈরি সেই স্বর্গের কথাই বলছি। যে জায়গায় গেলে ফিরে আসতে ইচ্ছা করে না, অথবা মানুষ সবচেয়ে প্রিয়জনকে নিয়ে তাদের বিশেষ মুহূর্তগুলো একসাথে কাটাতে চায়, স্মরণীয় করে রাখতে চায়। যেমন- বর্তমান ক্রিকেটের ব্যাটিং দানব বিরাট কোহলি তার প্রিয়জন আনুশকাকে বিয়ে করতে বেছে নিয়েছে এই স্বর্গীয় জায়গাকে। অনেকেই হয়তো ধরে ফেলেছেন আমি কোন জায়গার কথা বলছি। বলছি ইতালির একটি অঞ্চলের কথা। ইতালি মোট ২০টি অঞ্চলে বিভক্ত। তাসকানি তার মধ্যে একটি।
ইতালি যদি হয় সৌন্দর্যের রাজ্য, তাহলে তাসকানিকে বলা চলে সেই রাজ্যের রাজকুমারী। ইউরোপের রেনেসাঁর সুতিকাগার হচ্ছে তাসকানি। ইতিহাস, ঐতিহ্য, সভ্যতা, সংস্কৃতি ও অপরূপ সৌন্দর্যের টানে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ ছুটে আসে তাসকানিতে। আমিও ছুটে গিয়েছিলাম অপরূপ এই সৌন্দর্য দেখব বলে। তিনদিনের এই ভ্রমণ অভিজ্ঞতা নিয়েই আজকের এই লেখা।
এয়ারপোর্ট থেকে নেমে ট্যাক্সি নিয়ে চলে যাই আগে থেকে ঠিক করে রাখা এয়ারবিএনবির বাসাতে। আমি উঠেছিলাম পিসা শহরে। এটি তাসকানির অন্যতম একটি শহর। হয়তো পাঠকের মনে প্রশ্ন আসতে পারে, আমি ফ্লোরেন্সে না উঠে কেন পিসাতে উঠলাম। আমার ইচ্ছা ছিল তিনটি দর্শনীয় স্থান ঘুরব। আর পিসা হলো এই তিন জায়গার মধ্যবর্তী স্থান। আমার তিনদিনের ভ্রমণের প্রথম দিন পিসা, দ্বিতীয় দিন ফ্লোরেন্স আর তৃতীয় দিন চিনকুয়ে তের্রে ঘুরে দেখি। অনেক তো কথা হলো, আসুন এবার জেনে নেই আমার তাসকানি ভ্রমণের অভিজ্ঞতা।
প্রথম দিন
এয়ারবিএনবিতে যে বাসাটিতে উঠেছিলাম, তার বারান্দা থেকে দেখা যাচ্ছিল আইকনিক টাওয়ার পিসা (হেলানো মিনার)। মনকে মানিয়ে রাখা ছিল সবচেয়ে কঠিন কাজ, এত কাছে এসে এখনও ছুঁয়ে দেখা হয়নি এই মিনারকে, তাই ছুটে গেলাম পিয়াৎসা ডেল মিরাকোলি (অলৌকিক চত্বর) চত্বরে। ঢুকতেই লা লুপা কাপিতোলিনা ভাস্কর্যটি চোখে পড়ল। ভাস্কর্যটিতে দুটি শিশু একটি নেকড়ের দুধ খাচ্ছে। শিশু দুটি হচ্ছে রোমুলেস ও রেমুস। রোমুলেসের নাম অনুসারে ইতালির রাজধানী রোমের নামকরণ করা হয়েছে। এই ইতিহাস আরেক দিন বলা যাবে। আস্তে আস্তে এগিয়ে গেলাম পিসা টাওয়ারের দিকে। এই টাওয়ারটি ঘণ্টা বাজানোর উদ্দেশ্যে বানানো হয়েছিল। নির্মাণের শুরু থেকে আস্তে আস্তে এই মিনারটি ক্রমশ একপাশে হেলতে থাকে। বলে রাখা ভালো, এই পিসা শহরে অনেক অবকাঠামো আছে, যেগুলো একপাশে হেলে পড়েছে। এই পিসা মিনারটি ৩.৯৯ ডিগ্রী কোণে হেলে আছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জার্মানরা এটি ওয়াচ-টাওয়ার হিসেবে ব্যবহার করত।
মার্কিন এক সেনা কর্মকর্তা এই মিনারের শৈল্পিক দক্ষতা এবং এই চত্বরে অবস্থিত ক্যাথেড্রালের সৌন্দর্য দেখে এতই অভিহিত হন যে, তিনি সেনাবাহিনীকে আক্রমণ করতে নিষেধ করেন। এভাবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় নিশ্চিত ধ্বংসের মুখোমুখি হতে রক্ষা পায় ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট হিসেবে স্থান পাওয়া জায়গাটি। পিয়াসা দিল মেরাকলি জায়গাটিতে পিসা টাওয়ার তো আছেই, আরও আছে পিসা ক্যাথেড্রাল, পিসা ব্যাপিসট্রি এবং কেম্পোসান্তো মোনুমেনটালে ডি পিসা। পিসা ক্যাথেড্রাল রোমান স্থাপত্যের এক অসাধারণ উদাহরণ।
পিসা ব্যাপিসট্রি দ্বিতীয় উপাসনালয় হিসেবে তৈরি করা হয়। ইতালির বৃহত্তম ব্যাপিসট্রি এটি। ব্যাপিসট্রি রোমানিক স্টাইল থেকে গথিক স্টাইলে রূপান্তরের একটি চমৎকার উদাহরণ। কেম্পোসান্তো মনুমেন্টালে ডি পিসা এই চত্বরের শেষ ভবন। এটি একটি কবরস্থান হিসেবে নির্মাণ কাজ শুরু করলেও নির্মাণ চলাকালীন এর পরিকল্পনা পরিবর্তন করা হয়। এখন এটি জাদুঘর হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এখানে অনেক ধরনের পেইন্টিং দেখা যাবে। একদিনে সব দেখে শেষ করা অনেক কঠিন কাজ, কিন্তু একদিনের মধ্যে পিসা ঘুরে শেষ করতে হবে। পিসা শহর ঘুরে দেখার জন্য বরাদ্দ আজকের দিনটি শুধু। নদীর পাশে সান্তা মারিয়া ডেল্লা স্পিনা নামের আরও একটি সুন্দর দেখার মতো গির্জা।
সময়ের সাথে পেরে ওঠা কঠিন, যত দেখি ততই ভালো লাগে। যেন কোনো শিল্পী তার হাতের ছোঁয়ায় এঁকেছেন এই শহর। সন্ধ্যা হয়ে আসে, ফিরে যাই মনে তৃপ্তি আর ক্লান্ত শরীর নিয়ে ঘরে। পরের দিন যেতে হবে মিকেলেঞ্জেলোর ফ্লোরেন্সে।
দ্বিতীয় দিন
সকাল ৮ টায় পিসা থেকে ট্রেনে করে ১ ঘণ্টায় চলে আসি ফ্লোরেন্সে সেন্ট্রাল ট্রেন স্টেশনে। ট্রেন স্টেশন থেকে হেঁটেই সব দর্শনীয় স্থানগুলোতে যাওয়া যায়। সভ্যতা, শিল্প, সাহিত্য, স্থাপত্য এবং ইতিহাস সমৃদ্ধ শহর হচ্ছে ফ্লোরেন্স, যে শহর থেকে ইউরোপের রেনেসাঁ যাত্রা শুরু। সেই পঞ্চদশ শতাব্দীতে ফ্লোরেন্সের ধনী ব্যবসায়ীরা কে কত দান করতে পারে, সেই প্রতিযোগিতা করতেন। তাদের দানে ফ্লোরেন্স হয়ে ওঠে শিল্প, স্থাপত্য, দর্শন, সাহিত্য, সঙ্গীত, বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তি, রাজনীতি, ধর্মের এক গুরুত্বপূর্ণ স্থান। ইতালির জাতীয় কবি দান্তের জন্মস্থান ফ্লোরেন্স।
ফ্লোরেন্স নাইটিংগেলের জন্ম এখানে। লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চির জীবনের অন্যতম অধ্যায় অতিবাহিত হয়েছে ফ্লোরেন্সে। বিশ্ব বিখ্যাত ভাস্কর, চিত্রশিল্পী, স্থপতি, রেনেসাঁ যুগের অন্যতম মিকেলেঞ্জেলোর জন্মস্থান ফ্লোরেন্স। ঘুরতে ঘুরতে প্রথমে চলে আসি বিশ্ব বিখ্যাত ক্যাথেড্রাল সান্তা মারিয়া দেল ফিয়োরে।
পৃথিবীর কিছু আইকনিক স্থাপনার মধ্যে এটি একটি। চোখধাঁধানো স্থাপত্যশৈলী প্রথম দেখায় যে কারো ভাল লাগতে বাধ্য। দেড় শত বছরের অসাধ্য সাধন করা সেই সময়ের প্রকৌশলবিদ্যার অনন্য উদাহরণ এই ঐতিহাসিক ক্যাথেড্রাল। ক্যাথেড্রালের ভেতরে দেয়ালে ওল্ড টেস্টামেন্টের খোদাই করা আছে। হাজারো দর্শনার্থীদের আনাগোনায় মুখরিত এই স্থান।
মিকেলেঞ্জেলো এই শিল্পকর্ম দেখে মুগ্ধ হয়ে বলেছিলেন, এটি হচ্ছে স্বর্গের দুয়ার। এই চত্বরে আছে আরো দুটি বিখ্যাত স্থাপনা। একটি ব্যাপিসট্রি, অন্যটি হচ্ছে বেল টাওয়ার। ব্যাপিসট্রির ভেতরে যাওয়া হয়নি। হাজারো মানুষ ব্যাপিসট্রির ভেতরে যাওয়ার অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে ছিল, তাই আমি আর ভেতরে যাওয়ার সাহস করিনি। কিন্তু এই ঐতিহাসিক ব্যাপিসট্রির বিশাল আকারের গম্বুজ সেই সময় কীভাবে নির্মাণ করেছে, সেই প্রশ্নের ধাঁধা আমার মাথায় এখনও জট পাকিয়ে আছে। সুবিশাল বেল টাওয়ারটি মার্বেল পাথরের এক অনন্য সৃষ্টি।
আমার পরবর্তী গন্তব্য ছিল ফ্লোরেন্সের গ্যালারিয়া ডেল অ্যাকাদেমিয়া। ফ্লোরেন্স আসব আর জগদ্বিখ্যাত ডেভিড ভাস্কর্য দেখবো না, তা তো হয় না। মিকেলেঞ্জেলোর সেই অনবদ্য সৃষ্টি ডেভিডের ভাস্কর্য এই গ্যালারিয়া ডেল অ্যাকাদেমিয়া দেখতে পাওয়া যাবে।
হাজারো দর্শনার্থীদের মতো আমিও অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকি সর্বকালের একটি শ্রেষ্ঠ শিল্পকর্মের দিকে। এখানে আরো অনেক বিস্ময়জাগানিয়া শিল্পকর্ম রয়েছে। চোখ ও মনের ক্ষুধা নিবারণ হলেও পেটের ক্ষুধায় চলে আসি পিয়াৎসা ডেল সিনোরিয়া। এটি একটি বিশাল চত্বর। এর একপাশে খাবারের রেস্তোরাঁ, অন্য পাশে প্রাসাদ পালাৎসো ভাক্কিও। এখানে খোলা আকাশের নিচে গানবাজনা হয়। রেস্তোরাঁর বাইরে রাখা টেবিলে খাবার পরিবেশন করে। আমিও বাইরে রাখা টেবিলে বসি এবং খাবার অর্ডার করি। ইতালিয়ান পাস্তা দুপুরের খাবার, আর পাশেই ফ্লোরেন্সের টিপিক্যাল মিউজিক। দুয়ে মিলে এক অন্যরকম অনুভূতি। মনে হচ্ছিল, আমি যেন সেই রেনেসাঁর যুগে আছি। আর বসে অপেক্ষার প্রহর গুনছি কখন আসবে মিকেলেঞ্জেলো বা লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি এই চত্বরে।
সময় যেহেতু কম তাই উঠতে হলো, দেখতে হবে যতটা পারা যায়।প্যালাৎসো ভেক্কিও দেখে চলে যাই পন্টি ভেক্কিও-তে। পন্টি ভেক্কিও হচ্ছে আরনো নদীর ওপর অবস্থিত ইতালির সবচেয়ে পুরোনো সেতু।
এই সেতু দেখতে হাজারো দর্শনার্থীদের ভিড় এখানে। এখানে আছে অনেক স্মারক ও স্বর্ণের দোকান। এই জায়গার একটি বিশেষত্ব হচ্ছে, প্রেমিক-প্রেমিকারা এখানে এসে চাবি দিয়ে তালা বন্ধ করে চাবিটি নদীতে ফেলে দেয়। তাদের বিশ্বাস, এভাবে তাদের প্রেম চিরস্থায়ী হবে। এই ফ্লোরেন্সে দেখার আছে অনেক কিছু, কিন্তু ফিরতে হবে পিসায়। পরের দিন যেতে হবে চিনকুয়ে টের্রে।
তৃতীয় দিন
চিনকুয়ে মানে পাঁচ আর টের্রে মানে জমি। পাঁচটি গ্রামকে একত্রে চিনকুয়ে টের্রে বলে। ট্রেনে পিসা থেকে চিনকুয়ে টের্রে যেতে ১ ঘণ্টা ৪৫ মিনিট লাগে। পিসা থেকে লা স্পেজিয়া গিয়ে সেখান থেকে চিনকুয়ে টের্রের আলাদা টিকেট কাটতে হবে। এই টিকেটে একদিনে যতবার খুশি ততবার এক গ্রাম থেকে অন্য গ্রামে যাতায়াত করা যায়। গ্রামগুলোর একপাশে সমুদ্র, অন্য পাশে পাহাড়। একেকটি গ্রাম থেকে অন্যটি আরো সুন্দর। এই পাঁচটি গ্রামকে একত্রে ন্যাশনাল পার্ক বলা হয় এবং এই চিনকুয়ে টের্রে ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইটও। মনতেরেসো আল মারে, ভারনাৎসা, করনিগলিয়া, মানারোলা ও রিওমাজ্জিওরে এই পাঁচটি ছোট গ্রাম নিয়ে চিনকুয়ে টের্রে। প্রথমে ট্রেনে করে চলে যাই সর্ব উত্তরের গ্রাম মনতেরেসো আল মারে। মারে মানে সমুদ্র। পাঁচটি গ্রামের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দর্শনার্থী এখানে আসে সমুদ্রে গোসল করার জন্য, পাঁচটি গ্রামের মধ্যে এখানেই আছে বালুর সমুদ্র সৈকত।
অন্যগুলো পাথরের সমুদ্র সৈকত। পরিষ্কার নীল পানি দেখে আমি নেমে পড়ি সমুদ্রে গোসল করতে। এক অন্যরকম ভাল লাগা। এখান থেকে অনেকে পাহাড় বেয়ে চলে যায় পরবর্তী গ্রাম ভারনাৎসায়। হাতে সময় কম থাকার কারণে আমি ট্রেন নিয়ে ৫ মিনিটে চলে যাই ভারনাৎসায়। ছবি তোলার জন্য উপযুক্ত এই জায়গাটি। এখানকার বাড়িগুলো বিভিন্ন রঙে রাঙানো। একটু হেঁটে পাহাড়ের উপরে উঠে গ্রামটা দেখলে মনে হবে কোনো শিল্পী এই মাত্র তার তুলির আঁচড়ে শেষ করেছে তার আঁকা ছবি। এখানকার স্থানীয় জেলাতো (আইসক্রিম) খুবই বিখ্যাত। তাই আমিও স্বাদ নিলাম এই জেলাতোর।
ভারনাৎসা থেকে আমার পরবর্তী গন্তব্য ছিল করনিৎলিয়া। শত শত আঙ্গুর বাগান আর অলিভ গাছের সমাহার এই গ্রামে। সমুদ্রের পাশে পাহাড়ের উপর এক ছোট্ট সুন্দর গ্রাম এটি। এই গ্রামের পিৎজার অনেক খ্যাতি। তাই এখানে এসে সেই সুস্বাদু পিৎজার স্বাদ নিলাম।
করনিৎলিয়া ঘুরে এবার যাবার পালা রিওমাজ্জিও। প্রায় ৩০ মিনিট অপেক্ষা করে পেলাম ট্রেন। দর্শনার্থীদের ভিড়ে ট্রেনে দাঁড়ানোর জায়গা পাওয়াই কষ্টসাধ্য। কোনোরকম দাঁড়িয়ে চলে আসলাম রিওমাজ্জিও। যদি ম্যাপ দেখেন তাহলে দেখবেন আমি মানারোলা গ্রাম পার হয়ে চলে এসেছি রিওমাজ্জিওতে, কারণ হচ্ছে আমি আগেই স্থানীয় মানুষের কাছে শুনেছিলাম মানারোলা থেকে সূর্যাস্ত দেখতে নাকি খুবই চমৎকার। চিনকুয়ে টের্রের পাঁচটি গ্রামের মধ্যে সবচেয়ে বড় এই রিওমাজ্জিও গ্রামটি।
বাসে করে এই গ্রামের সবচেয়ে উপরে স্থানে যাওয়া যায়। এর অন্যতম বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, সমুদ্র থেকে শুরু হয়ে পাহাড়ের চূড়ায় গিয়ে শেষ হয়েছে। ছবির মতো সুন্দর একটি গ্রাম এই রিওমাজ্জিও। আমার পরবর্তী গন্তব্য মানোরোলা। আমার মতে, চিনকুয়ে টের্রের সবচেয়ে সুন্দর গ্রাম মানোরোলা। বিধাতা মনে হয় নিজের হাতে সৃষ্টি করেছেন এই সুন্দর গ্রামটি। যেদিকে তাকাই চোখ জুড়িয়ে যায়। আমি হাঁটতে হাঁটতে চলে যাই ভিউ পয়েন্টে, যেখান থেকে সূর্যাস্ত দেখা যাবে।
গ্রিসের যেমন আইকনিক ছবি সানটোরিনি, তেমন চিনকুয়ে টের্রের আইকনিক ছবি মানোরোলা। সানটোরিনিতে যেমন পাবেন সাদা আর নীলের মিশ্রণ, এখানে পাবেন লাল, নীল, হলুদ, সাদা সব রঙের মিশ্রণ। এখান থেকে সূর্যাস্তের দৃশ্য দেখা সত্যিই এক অন্যরকম অভিজ্ঞতা। মানোরোলার টাটকা সমুদ্রের মাছ দিয়ে রাতের খাবারের পর্ব সেরে ফেরার পালা। মন বলছিল থেকে যাই, কিন্তু নির্মম বাস্তবতা আমাকে নিয়ে আসে পিসাতে। পরের দিন খুব ভোরে পিসা এয়ারপোর্ট থেকে চলে আসি লন্ডনে। আর এভাবেই শেষ হয় আমার তাসকানি সফর।
অপরূপ এই প্রকৃতির কাছে মানুষ আজন্ম ঋণী। তাই আমরা যেন প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কারণ হয়ে না দাঁড়াই, সেদিকে খেয়াল রাখা আমাদের অবশ্য কর্তব্য।