Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

কেওক্রাডং: এক রূপকথার পাহাড়

অনেকদিন থেকেই আমার একটা পাহাড় কেনার শখ। কিন্তু পাহাড় কে বিক্রি করে তা আমি জানি না। যদি তার দেখা পেতাম, দামের জন্য আটকাতো না। আমার নিজস্ব একটা নদী আছে, সেটা দিয়ে দিতাম পাহাড়টার বদলে।

– সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

বিখ্যাত বাঙালি সাহিত্যিক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় তার ‘পাহাড় চূড়ায়’ কবিতায় এভাবেই পাহাড় কেনার আকুতি প্রকাশ করেছেন। কেন কবি একটা পাহাড়ের মালিক হবার জন্য এত তীব্র ইচ্ছা পোষণ করেছেন সেই উত্তর পাওয়ার জন্য পাহাড়ের বিশালতার সামনে গিয়ে দাঁড়াতে হবে। তাহলে এমন হাজারো পাহাড়প্রেমীদের পাহাড়ের প্রতি তীব্র ভালোবাসার কারণটি অনুধাবন করা যাবে।

রূপকথার গল্পে যেভাবে পাহাড়ের সৌন্দর্য বর্ণনা করা হয় ঠিক তেমনই একটি রূপকথার পাহাড় হলো কেওক্রাডং। বাংলাদেশের সবচেয়ে সুন্দর পাহাড়গুলোর একটি এই কেওক্রাডং এবং সবচেয়ে সুন্দর রুটের একটি এই রুটটি। এর উচ্চতা নিয়ে অনেক মতবিরোধ থাকলেও বর্তমানে এটি উচ্চতার হিসেবে বাংলাদেশের পঞ্চম সর্বোচ্চ চূড়া। সাম্প্রতিক তথ্য অনুযায়ী যার উচ্চতা ৩২৩৫ ফুট। বর্তমানে সাকা হাফং বা মদক তং হলো বাংলাদেশের সর্বোচ্চ চূড়া। যার উচ্চতা প্রায় ৩৪৬৫ ফুট। তবে সৌন্দর্যের দিক থেকে অন্য সব পাহাড় থেকে কেওক্রাডং কোনো অংশে পিছিয়ে নেই। এই যেন এক সবুজের স্বর্গরাজ্য।

Image Credit: Author
মেঘ, পাহাড় আর সবুজের বান্দরবান; Image: Author

খুব ভোরবেলা আমরা যখন বান্দরবানে পৌঁছাই তখন সূর্য একটু আধটু করে উঁকি দিতে শুরু করেছে। আমাদের গন্তব্য ছিল প্রথমত বগালেক পৌঁছানো তারপর সেখান থেকে কেওক্রাডং। বিশাল এক টিম নিয়ে ৩টি চান্দের গাড়িতে করে আমরা যখন বান্দরবান শহর থেকে বের হচ্ছিলাম তখনি একটু একটু করে পাহাড়ের সৌন্দর্য টের পাচ্ছিলাম। রাতের বেলা বাসে করে আসার সময় আশে পাশে কিছু না দেখা গেলেও দিনের আলোয় যখন মেঘগুলো সরতে থাকে তখন দেখতে পাওয়া যায় বান্দরবানের মন জুড়ানো সৌন্দর্য। এমন প্যাঁচানো পাহাড়ি রাস্তা আর চান্দের গাড়ির দ্রুত গতি সবকিছু মিলিয়ে বান্দরবানের সবটুকুই সৌন্দর্যে ভরপুর। 

বান্দরবান শহর থেকে চান্দের গাড়ি অথবা বাসে করে রুমা বাজার যেতে হয়। চাইলে বাইক ভাড়া করে যাওয়া যায় তবে চান্দের গাড়িতে করে যাওয়াটা নিরাপদ এবং অনেক দ্রুত যাওয়া যায়। যাবার পথে আইডি কার্ড এবং পরিচয়পত্র সাথে রাখতে হবে। প্রতিটি চেক পোস্ট এন্ট্রি করে তারপর যেতে হয়। যাবার পথেই মিলনছড়ি এবং ওয়াই (Y) জাংশন আর্মি চেক পোস্টে এন্ট্রি করে নিতে হয়। ওয়াই জাংশনের এক মাথা ধরে যাওয়া যায় রুমা বাজারে এবং আরেক মাথা দিয়ে থানচি। থানচি দিয়েও কেওক্রাডং যাওয়া যায় তবে ঐ রুট অনেক দুর্গম এবং খুব ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় বগালেক হয়েই মূলত যেতে হয়। 

রুমা বাজার পৌঁছে এমইএস গেট আর্মি চেক পোস্ট থেকে তাদের নিয়োগকৃত স্থানীয় একজন ট্যুরিস্ট গাইড নিতে হয় এবং পর্যটক সহায়তা কেন্দ্র থেকে অঙ্গীকার নামা স্বাক্ষর করে নিতে হয়। সব কাজ শেষ করে আমরা রওনা দিলাম বগালেকের দিকে। বগালেকে পৌঁছাতে প্রায় ২ ঘন্টার মতো সময় লাগল। অসাধারণ পাহাড়ি রাস্তা, মেঘ আর সবুজ  মিলে তৈরি করে রেখেছে এক স্বর্গীয় জগৎ। বগালেক পৌঁছানোর সাথে সাথেই শুরু হল প্রচণ্ড বৃষ্টি। সেখানকার কটেজ ভাড়া করে সেখানে সাথে থাকা ব্যাগ রেখে শুধু প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে কেওক্রাডং ট্রেকিং শুরু করতে হয়। চাইলে বগালেক এক রাত থেকে পরদিন সকাল থেকেও ট্রেকিং শুরু করা যায়। কিন্ত আমাদের পরিকল্পনা ছিল কেওক্রাডং থেকে ফেরার পর বগালেক থাকার। 

Image Credit: Author
দার্জিলিং পাড়া থেকে দেখা সামনের পাহাড়টি কেওক্রাডং; Image: Author

বগালেক পাড়ার খাবারের স্বাদ অসাধারণ। ভাত, খিচুড়ি, ডাল, পাহাড়ি মুরগি, আলুর ভর্তা, সালাদ, ডিম ভাজি মোটামুটি এগুলাই এখানকার মেন্যু। বারবিকিউ করারও সুযোগ সুবিধা রয়েছে। খাবার শেষ করেই দেরি না করে সবাই রওনা দিলাম কেওক্রাডংয়ের পথে। মূলত এখানে ৪/৫ ঘণ্টার ট্রেকিং। গতির উপর ভিত্তি করে সময় বেশি কমও লাগতে পারে। একটা সময় কেওক্রাডংয়ে যেতে হতো সম্পূর্ণ ট্রেকিং করে। বর্তমানে পিচ ঢালা রাস্তা তৈরি হচ্ছে বগালেক থেকে একদম কেওক্রাডং হয়ে আরো দূর পর্যন্ত। শুকনো মৌসুমে চান্দের গাড়ি একদম কেওক্রাডং পর্যন্ত উঠে থাকে। তাই ট্রেকিং না করতে চাইলে গাড়ি দিয়েও যাওয়া যায়। তবে ট্রেকিং করেই এর আসল সৌন্দর্য অনুভব করা যায়। 

পথ চলতে চলতে কখনো পার হতে হয় উঁচু নিচু রাস্তা, ঝোপঝাড়, ঝিরি আবার কখনো একদম খাড়া পাহাড়। তবে বৃষ্টি হবার কারণে প্রচুর জোঁকের উপদ্রব ছিল। জোঁক থেকে বাঁচার জন্য খুব সাবধান থাকতে হয়। অনেকক্ষণ হাঁটার পর সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসতে লাগল। সন্ধ্যায় হালকা আলো আর পাহাড়ি ঝোপঝাড় এক ভূতুড়ে পরিবেশ তৈরি করে দিয়েছিল। আমাদের গন্তব্য তখনও অনেকটা দূরে। আমাদের তখনও দার্জিলিং পাড়ায় পৌঁছানো হয়নি। দার্জিলিং পাড়ার পরেই কেওক্রাডংয়ে উঠার খাড়া রাস্তা শুরু হয়। 

Image Credit: Author
কেওক্রাডং থেকে নিচে দার্জিলিং পাড়া দেখা যাচ্ছে; Image: Author

দার্জিলিং পাড়াকে বলা হয় বাংলাদেশের সবচেয়ে পরিষ্কার পাড়া। গাইড থেকে জানতে পারলাম এখানে প্রায় ৩০টির মতো পরিবার থাকে। অধিকাংশই বম জাতি। খুব গোছানো ছিমছাম এই পাড়ায় রয়েছে অসংখ্য ফুলের বাগান। এখানেই কিছুক্ষণ বিরতি নিয়ে আবারো রওনা দিলাম কেওক্রাডংয়ের পথে। এখান থেকে কেওক্রাডং খুব বেশি দূরে না। দার্জিলিং পাড়াতেও থাকার ব্যবস্থা আছে। অনেক পর্যটক এখানে রাত্রিযাপন করে পরদিন যাত্রা শুরু করে। আমাদের তখনো সবমিলিয়ে আর ১ ঘন্টার পথ তবে তখন সন্ধ্যা পেরিয়ে একদম ঘুটঘুটে অন্ধকার। এক হাত সামনে কী আছে তাও দেখা যাচ্ছে না। তাই সবার ভরসা সাথে থাকা টর্চ লাইট নয়তো মোবাইলের আলো। এভাবেই যখন কেওক্রাডং এর পাদদেশে আমরা পৌঁছাই তখন একটানা একদম খাড়া পাহাড়। 

Image Credit: Author
সুন্দর পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন দার্জিলিং পাড়া; Image: Author

দুই পাশে ঝোপঝাড় আর বিশাল উঁচু গাছ দাঁড়িয়ে আছে। চারপাশে পোকাদের ডাক আর আকাশে তখন হাজারো তারার মেলা। আকাশ পরিষ্কার। আস্তে আস্তে প্রচুর ঠাণ্ডা বাতাস অনুভব করতে লাগলাম। বোঝাই যাচ্ছে উপরে অপেক্ষা করছে হাড় কাঁপানো ঠাণ্ডা। ১ ঘন্টার রাস্তা প্রায় ২ ঘন্টা ধরে হাঁটার পর অবশেষে পৌঁছে গেলাম আমাদের কাঙ্ক্ষিত কেওক্রাডং এর চূড়ায়। বাংলাদেশের পঞ্চম বৃহত্তম পাহাড় চূড়া। আমাদের টিমের সবাই আস্তে ধীরে পৌঁছে গেল চূড়ায়। আর্মি চেক পোস্টে এন্ট্রি করে আমাদের কটেজে যাবার জন্য আরো প্রায় ১০ মিনিটের পথ। কেওক্রাডংয়ের সবচেয়ে সুন্দর কটেজটি পাহাড়ের একটি অংশে দাঁড়িয়ে আছে আর বাকি সবগুলো কটেজ প্রায় কাছাকাছি। দার্জিলিং পাড়া থেকেই মূলত এই কটেজটি দেখা যায়। যার নাম কেওক্রাডং ট্যুরিস্ট মোটেল। 

Image Credit: Author
কেওক্রাডং এর উপর থেকে আশেপাশের দৃশ্য; Image: Author

কটেজে পৌঁছেই যা ভাবছিলাম তা বুঝতে পারলাম। প্রচণ্ড হাড় কাপানো ঠাণ্ডা আর প্রচুর বাতাস। এত বিশুদ্ধ নির্মল বাতাস আর কেওক্রাডংয়ের আকাশ সবকিছু মিলিয়ে আমাদের ট্রেকিংয়ের সব কষ্ট ভুলিয়ে দিল। হঠাৎ করে দূরে দেখা দিল রক্তিম চাঁদ। পাহাড়ের গা ঘেঁষে আস্তে ধীরে উঁকি দিচ্ছে সেই রক্তবর্ণের চাঁদ। কিছুক্ষণের মধ্যেই সেই চাঁদ রূপ নিল পরিপূর্ণ পূর্ণিমার চাঁদের আলোয়। যদিও পূর্ণিমা শেষ হয়ে গিয়েছিল তার কিছুদিন আগে তবে সেই চাঁদের আলোয় কোনো অংশেই তা কম ছিল না।

কেওক্রাডংয়ে দেখা সেই চাঁদ ছিল আমার জীবনের দেখা সবচেয়ে সুন্দর চাঁদ। চাঁদের আলোয় দূরে পাহাড়ে গা ঘেঁষে থাকা সব মেঘ দেখা যাচ্ছিল। তুলোর মত মেঘ উড়ে বেড়াচ্ছে পাহাড়ের কোল ঘেঁষে। আকাশে হাজারো তারার মেলা আর দূর পাহাড়ে মিট মিট করে জ্বলা বাতির আলো। সবকিছু যেন এক রূপকথার মতো ছিল। 

Image Credit: Author
কেওক্রাডংয়ের চূড়া থেকে দেখা চাঁদ; Image: Author

কটেজ থেকে কিছুক্ষণ পর আমরা গেলাম সেখানকার একমাত্র খাবার হোটেলে। সেখানে আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে এক অবাক করা ঘটনা। সেখানে গিয়ে জানতে পারলাম কেওক্রাডংয়ের একজন মালিক রয়েছে। এই পাহাড় একজন ব্যাক্তি মালিকানাধীন এবং অনেক বছর ধরে বংশানুক্রমে তিনি এই পাহাড়ের মালিক। তার নাম লালা বম বা লালা মুন থন। বান্দরবানের অধিকাংশ পাহাড় মূলত লিজ নেওয়া হয়ে থাকে এবং কিছু ছোট-বড় পাহাড় সেখানকার মানুষরা নিজেদের নামে করে রাখে কিন্ত এত বড় পাহাড় একজন মানুষের সেটা ভেবেই অবাক হচ্ছিলাম। কেওক্রাডংয়ের আশে পাশে প্রায় ২০ বিঘা জমি তার এবং এই পাহাড় শত বছরের জন্য লিজ নেওয়া। এই পাহাড় লালা বমের এক বিশাল রাজ্য। 

খাবার খেয়ে কিছুক্ষণ বসে থেকে রওনা দিলাম কটেজের দিকে। যেতে যেতে পথিমধ্যে দেখা মিলল এক সুন্দর সবুজ রঙের মাঝারি আকারের সাপ। জানা গেল এর নাম বোরা সাপ অথবা সবুজ বোরা সাপ। কেওক্রাডংয়ে অহরহ এই সাপ দেখা যায় এবং রাতের বেলা খুব বেশি ঝোপঝাড়ের কাছে যেতেও নিষেধ করা হয়। অনেকক্ষণ ধরে পথ আটকে রেখে সাপটি আস্তে ধীরে পথ থেকে সরে গেল। তাই দেরি না করে দ্রুত কটেজে পা বাড়ালাম। আমাদের গাইড জানাল, বেশ কিছুদিন ধরে পাহাড়ে মেছো বাঘের উৎপাত। হাঁস মুরগি গায়েব হয়ে যাচ্ছে এমনকি মানুষকেও নাকি আক্রমণ করছে। তাই খুব দরকার না হলে একা কোথাও যেতে নিষেধ করল।

Image Credit: Author
কেওক্রাডং এর সবচেয়ে সুন্দর কটেজ; Image: Author

কটেজে গিয়ে দেখলাম সেখানে উৎসবের মতো অবস্থা। প্রচুর গান-বাজনা হচ্ছে পাশাপাশি সব পর্যটক এক সাথে মিশে একটি সুন্দর বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশ তৈরি করে রেখেছে। রাত যত গভীর হচ্ছিল ততই চাঁদের আলো আরো তীব্র হচ্ছিল। তবুও ক্লান্ত শরীর নিয়ে ঘুমাতে ইচ্ছে করছিল না। এত সুন্দর রাতের সবটুকুই নিজের ভেতর টেনে নিতে ইচ্ছে করছিল। ঠাণ্ডা বাতাস আরো জোরে বইছিল এবং একটু পরপর চারপাশ মেঘে ঢেকে যাচ্ছিল। এত সুন্দর একটা রাতের জন্য নিজেকে অনেক ভাগ্যবান মনে হচ্ছিল।

ভোরে ঘুম থেকে উঠেই হেলিপ্যাডের সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম সূর্যোদয় দেখার জন্য। বলা হয়ে থাকে কেওক্রাডংয়ের সবচেয়ে সুন্দর দৃশ্য সূর্যোদয়ের দৃশ্য। পাহাড়ের মাঝ থেকে যখন সূর্য উঁকি দিচ্ছিল ঠিক তখনই চারপাশের রূপ বদলে যেতে শুরু করল। চারপাশের সবকিছু যেন সবুজে ভরে যাচ্ছিল। সবকিছু প্রাণ ফিরে পেল। মনে হচ্ছিল এটা আমার জীবনের দেখা সবচেয়ে সুন্দর সকাল আর সূর্যোদয়।

Image Credit: Author
কেওক্রাডংয়ের সূর্যোদয়; Image: Author

সূর্যোদয় দেখেই চলে গেলাম কেওক্রাডংয়ের সবচেয়ে উঁচু চূড়ার অংশটিতে। সেখানে পাথরে খোদাই করে এর উচ্চতা লেখা আছে। সেই জায়গা থেকে প্রায় ১০ মিনিট হেঁটে গেলেই পাওয়া যায় বাংলাদেশের সবচেয়ে উঁচু গ্রাম পাসিং পাড়া। তবে পর্যটকদের জন্য সেখানে যাওয়া নিষেধ। পাসিং পাড়া হয়েই যাওয়া যায় জাদিপাই ঝর্ণা আর নাফাখুম, আমিয়াখুমের উৎপত্তিস্থল ৎলাবং (Tlabong) বা ডাবল ফলসে। চারপাশে আরো উঁচু অনেক পাহাড় দেখা যাচ্ছিল। দূর দূরান্তে ছোট ছোট পাড়া দেখা যাচ্ছিল এবং পাহাড়ের সাথে মেঘ মিশে যাচ্ছিল।

সকালটা কেওক্রাডংয়ে কাটিয়ে এখন আমাদের পরের গন্তব্য চিংড়ি ঝর্ণার দিকে। কেওক্রাডংয়ের কাছেই এর অবস্থান। পর্যাপ্ত পানি থাকলে এই ঝর্ণা হয়ে উঠে অপরূপ। চাইলে কেওক্রাডং যাওয়ার সময়েও চিংড়ি ঝর্ণা দেখে যাওয়া যায়। কেওক্রাডং থেকে বিদায় নেওয়ার সময় বারবার এর সৌন্দর্য টানছিল। ইচ্ছে করছিল এমন একটা পাহাড় যদি আমার থাকতো। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের সেই তীব্র আকাঙ্ক্ষার কথা মনে পড়ে গেল। তিনিও একটা পাহাড়ের মালিক হতে চেয়েছিলেন। তবে এই পাহাড়ের মালিক একজন আছে। লালা বমের রাজ্য থেকে বিদায় নিয়ে চলে গেলাম দার্জিলিং পাড়ায়। সেখান থেকে চিংড়ি ঝর্ণা হয়ে বিকেলের আগেই পৌঁছে গেলাম বগা লেক পাড়ায়। এভাবেই রূপকথার পাহাড় কেওক্রাডং জয় করে সেখানে পদচিহ্ন রেখে আসলাম।

Image Credit: Author
চিংড়ি ঝর্ণা; Image: Author

কেওক্রাডং যাওয়ার আদর্শ সময় বর্ষা নয়তো শরৎকালে। তখন খুব সুন্দর মেঘ দেখতে পাওয়া যায়। বগালেক, চিংড়ি ঝর্ণা এবং কেওক্রাডং একই সাথে খুব সহজে ঘুরে আসা যায়।

পাহাড়ে ঘুরতে গেলে যেখানে সেখানে প্লাস্টিক ফেলা উচিত না। প্রচুর পরিমাণে প্লাস্টিক আর পলিথিন পাহাড়ের সৌন্দর্য নষ্ট করে। এই পাহাড় আমাদের সম্পদ তাই এর সৌন্দর্য রক্ষা করাও আমাদের দায়িত্ব। সবার ভ্রমণ আনন্দদায়ক ও নিরাপদ হোক।

আগের পর্ব: বগালেক: প্রকৃতির রহস্যময় দান

Featured Image: Author

Related Articles