সুনীল আকাশের সাথে চোখে প্রশান্তি ও মুগ্ধতা এনে দেওয়া দিগন্ত-বিস্তৃত নীল জলরাশি, সৈকতজুড়ে সারি সারি কেয়াবাগান, ঝাউগাছ, নারিকেল গাছ, শৈবাল, নুড়ি, পাথর, ঝিনুক আর প্রবালের ছড়াছড়িময় একটি মনোরম দ্বীপের নাম সেন্টমার্টিন। স্থানীয়রা যাকে নারিকেল জিঞ্জিরা বলেও সম্বোধন করে থাকে। কক্সবাজার জেলার টেকনাফ উপজেলায় এর অবস্থান। প্রতি বছর নভেম্বর থেকে এপ্রিল পর্যন্ত যেখানে ছুটে যান দেশ-বিদেশের হাজার হাজার পর্যটক, সেখানে যেতে কার না মন চায়?
তাই হঠাৎ একদিন খুব কম সময়ের পরিকল্পনায় সেন্টমার্টিন পরিবহণের এসি বাসে করে দুই বন্ধু পাড়ি দিলাম নীল জলোরাশির উদ্দেশে।
সারারাত জার্নি করে সকালের দিকে বাস উখিয়ায় ঢুকল। তখনই রাস্তার খারাপ অংশটা শুরু হলো। পেছনের সিট ছিল, এতে বসার মজা হাড়ে হাড়ে টের পেলাম। শরীরের জয়েন্টগুলো আলাদা হয়ে যাচ্ছিল প্রায়! অনেক কষ্টে শেষে পৌঁছালাম টেকনাফ জাহাজঘাটে।
কেয়ারি সিন্দাবাদ নামক জাহাজটির নাম শুনেছি অনেক। সেটার অফিসেই গেলাম প্রথম। সেখানে গিয়ে দেখি সব সিটের টিকেট আগেই বুকড হয়ে গেছে। এখন শুধু স্ট্যান্ডিং মানে দাঁড়িয়ে যাওয়ার কিছু টিকেট আছে। ব্যাগট্যাগ নিয়ে দাঁড়িয়ে যাব কীভাবে, সেটা ভাবতেই একজন এসে বলল- “ভাই টিকেট লাগবে?” বললাম “জ্বি, লাগবে।” প্রথমে ভাবলাম ব্ল্যাকার।
পরে যখন বললেন, “আমরা ২৯ জনের গ্রুপ যাওয়ার কথা, কিন্তু তিনজন না আসায় তিনটে টিকেট রয়ে গেছে। আপনারা চাইলে নিতে পারেন।” এবং মূল দামেই টিকেট বিক্রি করতে চাইলেন, তখন বুঝলাম ওরাও আমাদের মতো পর্যটক। আমাদের প্রথমে দুটো টিকেট দিতে রাজি না হলেও পরে দিয়ে দিলেন, একটা অন্যজনের কাছে বিক্রি করলেন। আমরাও হাঁফ ছেড়ে বাঁচলাম।
টিকেটের ব্যবস্থা করে দেখলাম এখনও দু ঘণ্টা সময় হাতে আছে। জাহাজঘাট থেকে সিএনজিতে করে সোজা চলে গেলাম আট কিলোমিটার দূরের টেকনাফ শহরে। সেখানে গিয়ে আগে এটিএম বুথ খুঁজে বের করলাম। টাকা তুলে নাস্তা করার জন্য একটা হোটেলে চলে গেলাম। নাস্তা করে, চা খেয়ে আবার চলে গেলাম জাহাজঘাটে। সেখানে ইতোমধ্যেই গেট খুলে দেয়া হয়েছে। অন্য যাত্রীদের সাথে চলে গেলাম জাহাজে।
জাহাজ নাফ নদী ধরে ভেসে চলছিল। একপাশে মিয়ানমার, একপাশে বাংলাদেশ। অপূর্ব সে দৃশ্য। কেয়ারি সিন্দাবাদ জাহাজে মেইন ও ওপেন ডেক নামে বসার জন্য দুটো ডেক আছে, চেয়ার ও নির্দিষ্ট সিট রাখা সেখানে। এর বাইরে আছে স্ট্যান্ডিং। আমরা মেইন ডেকের টিকেট অনুযায়ী দুটো সিটে বসলাম। কিছুক্ষণ বসে ব্যাগপত্র সেখানে রেখে চলে গেলাম বাইরে। মূলত সব যাত্রীই বাইরে দাঁড়িয়ে প্রকৃতি দেখতে দেখতে যায়। আমরাও যাচ্ছিলাম। নাফ নদী পেরিয়ে একসময় জাহাজ সাগরে গিয়ে মিশল। নীল জলের সাগর ধরে এগিয়ে যাচ্ছে সেন্টমার্টিনের দিকে। পথে দেখা মিলল ঝাঁকে ঝাঁকে গাংচিলের।
পর্যটকেরা খাবার, চিপস ছুড়ে মারছিল আর গাংচিলগুলো সেগুলো ধরার চেষ্টা করছিলো। যদিও এগুলো নিষিদ্ধ কাজ। সেইসাথে অনেকে চিপসের প্যাকেট, পানির বোতল নদী ও সাগরে ফেলে দিচ্ছিল। অথচ বারবার জাহাজে এসব করতে মানা করে দেয়া হয়। প্রতিটি ডেকে বড় বড় ডাস্টবিন থাকলেও অনেকে বাইরে ফেলছিল খাবারের প্যাকেট ও পানির বোতলগুলো। ওসব দেখে ভাবছিলাম, আমরা আসলে আর কবে সচেতন ও পরিচ্ছন্ন জাতি হব?
জাহাজ ছাড়ার ঠিক দু ঘণ্টা পনের মিনিটে গিয়ে থামল সেন্টমার্টিন। অনেক মানুষের ভিড়ে নামতে গিয়ে আরও পনের মিনিট চলে গেল। মোট আড়াই ঘণ্টা লাগল পৌঁছাতে।
সেন্টমার্টিন দ্বীপটিতে প্রায় ২৫০ বছর আগে আরব বণিকরা এসেছিল বলে ধারণা করা হয়। তারা মূলত বিশ্রামের জন্য দ্বীপটিকে ব্যবহার করত। জাজিরা (জিঞ্জিরা) হিসেবে এর নামকরণও তারা করেছিল বলে জানা যায়। ১৮৯০ সালের দিকে এই দ্বীপে কিছু বাঙালি ও রাখাইন সম্প্রদায়ের মানুষ সেখানে বসবাস শুরু করে। মূলত মৎস্যজীবী ছিল তারা। আগে থেকেই দ্বীপটিতে কেয়া ও ঝাউগাছ থাকলেও একসময় নারকেল গাছ দ্বীপটির প্রধান উদ্ভিদে পরিণত হয়, ফলে স্থানীয়রা একে নারকেল জিঞ্জিরা নামেও ডাকতে শুরু করে।
১৯০০ সালের দিকে দ্বীপটিকে ব্রিটিশ ভারতের অন্তর্ভুক্ত করে ব্রিটিশ সরকার। ধারণা করা হয়, খ্রিষ্টান যাজক সেন্ট মার্টিনের নামানুসারে দ্বীপটির নামকরণ করা হয়েছিলো। কিন্তু যেহেতু সেখানে কোনো গির্জা ও ধর্মযাজকের অস্তিত্ব পাওয়া যায় না, সেহেতু গবেষকেরা মনে করেন চট্টগ্রামের তৎকালীন ব্রিটিশ জেলা প্রশাসক মার্টিনের নামানুসারেই দ্বীপটির নাম সেন্টমার্টিন দেয়া হয়।
সেন্টমার্টিন টেকনাফ উপজেলার ছোট একটি ইউনিয়ন, মোটামুটি আট কিলোমিটার এর বিস্তৃতি। এখানে প্রাইমারি স্কুল, হাইস্কুল ও কলেজ, মসজিদও আছে। এখানকার বাসিন্দাদের বেশিরভাগই জেলে ও মৎস্যজীবী। তবে প্রচুর পর্যটক যাওয়ায় অনেকেই আবার ব্যবসা ও ছোট ছোট কটেজ বানিয়েও ভাড়া দিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন। সহজ-সরল ও সাধারণ জীবনযাপনে এর বাসিন্দারা অভ্যস্ত। সামরিক ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতি ও দ্বীপের বাসিন্দাদের ভালো ব্যবহারের কারণে দ্বীপটিতে নিরাপদে চলাফেরা করা যায় একদম নির্বিঘ্নে।
যাওয়ার জন্য সাত/আটটা জাহাজ আছে। তার মধ্যে এমভি গ্রিনলাইন, কেয়ারি সিন্দাবাদ, কেয়ারি সিন্দাবাদ ক্রুজ, আটলান্টিক, এমভি ফারহান ইত্যাদি জাহাজ ছাড়াও স্পিডবোট ও ট্রলারেও যাওয়া যায়। যদিও সেসব মাধ্যমে যাওয়া কিছুটা ঝুঁকিপূর্ণ। থাকার জন্য অনেকগুলো রিসোর্ট, হোটেল, কটেজ ও স্থানীয়দের বাড়ি, খাওয়ার জন্য পর্যাপ্ত রেস্টুরেন্ট, চলাচলের জন্য ভ্যান, সাইকেল, মোটরবাইক ও সাগরে ট্রলার, স্পিডবোট থাকায় এর বাসিন্দাগণ ও পর্যটকেরা পুরো দ্বীপে বিচরণ করতে পারেন খুব সহজেই। দ্বীপে বিদ্যুৎ না থাকলেও জেনারেটর সুবিধা আছে প্রায় সব হোটেলেই। তবে আশার কথা হলো, সম্প্রতি পল্লী বিদ্যুৎ সেখানে সংযোগ দিতে শুরু করেছে।
সেন্টমার্টিন গিয়ে প্রথমেই হোটেলের খোঁজ করতে লাগলাম। অনেকগুলো হোটেল ঘুরে একটা পছন্দ হলো, সস্তাও। নাম দ্বীপনিবাস রিসোর্ট। নতুন রিসোর্ট, ডাবল বেডের রুম, অ্যাটাচ বাথসহ মাত্র এক হাজার টাকায় পেয়ে গেলাম। দ্বীপের মূল আকর্ষণ পশ্চিমদিকের বিচেরও অনেক কাছে। দুই মিনিটেই হেঁটে যাওয়া যায়। ব্যাগপত্র নিয়ে হেঁটে রুম খুঁজতে গিয়ে ক্লান্ত ছিলাম। তবু সময় নষ্ট না করে গোসল করেই চলে গেলাম বিচে। কিছুক্ষণ ঘোরাঘুরি করে চলেও এলাম। অনেক ক্ষিদেও লেগেছে ততক্ষণে। একটা হোটেলে গিয়ে সামুদ্রিক মাছ, আলুভর্তা, সবজি ও ডাল দিয়ে দুপুরের খাবার সারলাম। তারপর সিদ্ধান্ত নিলাম, ছেঁড়াদ্বীপে চলে যাব।
ছেঁড়াদ্বীপে যাওয়ার কয়েকটি উপায় আছে। জাহাজঘাট থেকে ট্রলার, স্পিডবোটে যাওয়া যায়। বেশিরভাগ পর্যটক সেভাবেই যান। কিন্তু আমরা একটু অ্যাডভেঞ্চারপ্রিয় হওয়ায় ভাবলাম, একটু অন্যভাবে যাই। সাইকেল ভাড়া নিলাম ঘণ্টা ৪০ টাকা হারে। সাইকেল নিয়ে বিচের পাড় ধরে অসাধারণ সব সৌন্দর্য উপভোগ করতে করতে চলে গেলাম ছেঁড়াদ্বীপে। বিকেলে ভাঁটার সময় পানি না থাকায় সাইকেল নিয়ে ছেঁড়াদ্বীপের মূল ভূখণ্ডে যেতে সময় লাগল প্রায় এক ঘণ্টা। সাইকেল চালানোতে বহু বছরের অনভ্যস্ততা ও সৈকতের বালুতে প্যাডেল চালাতে অতিরিক্ত শক্তি ব্যয় হওয়ার কারণে খুব কষ্ট হচ্ছিল। কিন্তু অ্যাডভেঞ্চারের নেশা সকল কষ্ট ভুলিয়ে দিল।
ছেঁড়াদ্বীপ সেন্টমার্টিনের বিচ্ছিন্ন এক দ্বীপ। সেখানে মাত্র একটি পরিবার বাস করে। জেলেরা শুটকিও শুকোয় সেখানে। পাশাপাশি অবস্থান করা ছোট ছোট তিনটি বিচ্ছিন্ন দ্বীপকে মূলত ছেড়াদিয়া বা ছেঁড়াদ্বীপ বলা হয়। সেন্টমার্টিন থেকে ট্রলার বা স্পিডবোটে যেতে বেশি সময় লাগে না। সাইকেলে যেতে একটু সময় লাগে। আমাদের যেতে আসতে ও ঘুরতে তিন ঘণ্টার মতো লেগেছিলো। তবে মোটরবাইকে খুব দ্রুত যাওয়া যায়, যদিও তা পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর, তবু অনেকেই গিয়ে থাকেন। ছেঁড়াদ্বীপের সূর্যাস্ত দেখার জন্যই মূলত অনেকের মতো আমরাও গিয়েছিলাম। এটিই মূল আকর্ষণ এ জায়গার। দারুণ মনোমুগ্ধকর সে দৃশ্য!
ছেঁড়াদ্বীপ থেকে ফিরে সাইকেল দুটো ফেরত দিয়ে রুমে চলে গেলাম। সেখানে ফ্রেশ হয়ে চলে গেলাম রাতের সমুদ্র উপভোগ করতে। কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের বাড়ি সমুদ্রবিলাসের সামনে কিছু দোকান আছে, সেখানে শুটকি, বার্মিজ আচার ও নানা ধরনের শৌখিন জিনিষপত্র পাওয়া যায়। সেইসাথে সমুদ্রের তাজা মাছ, কাকড়া ভাজা ও মাছের বারবিকিউ হয়। বিচে বসে মাছ, কাকড়া ও বারবিকিউ খাওয়ার মজাই আলাদা। সবগুলো মাছই চেখে দেখলাম। সেদিন রাতে ভাত খাইনি, শুধু মাছই খেলাম। সুন্দরী, টোনা, কোরাল, রূপচাঁদা, ইলিশ, স্যালমনসহ হরেক প্রজাতির মাছ ছিলো।
এরপর নীরব, নিস্তব্ধ রাতে সেন্টমার্টিনের সৈকতে অনেকক্ষণ কাটিয়ে দিলাম। সৈকতে শব্দ করা নিষিদ্ধ হলেও অনেককে জোরে জোরে গান গাইতে শুনলাম। সচেতনতার খুুব অভাব সেখানেও প্রত্যক্ষ করেছি মানুষের মধ্যে। রাত দশটার পরে কটেজে ফিরে এলাম। ক্লান্ত দেহ বিছানায় ছড়িয়ে দিলাম। চলে গেলাম ঘুমের দেশে, স্বপ্নের দেশে।
আগের দিনের রাতজাগা, পরের দিনের সাইকেল চালানো আর জার্নি- সবমিলিয়ে ক্লান্ত ছিলাম খুব। ফলে দারুণ ঘুম হলো। ঘুম ভাঙার পর একদম ঝরঝরে লাগল শরীরটা। ফ্রেশ হয়ে নাশতা করে নিলাম সৈকত-লাগোয়া হোটেল অবকাশে। পরোটা, ডাল, ডিমভাজা আর চা খেয়ে চলে গেলাম বিচের পশ্চিমদিকে। কিছু পর্যটক চলে এসেছেন ইতোমধ্যেই। জোয়ারের দেরি ছিলো, সে সুযোগে সেন্টমার্টিনের নীল ও বরফশীতল জলে শরীরটা ভিজিয়ে নিলাম। বেশ কিছুটা সময় কাটালাম জলমগ্ন হয়ে।
হঠাৎ ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলাম, এগারোটা বেজে গেছে। হোটেলে চেকআউটের সময় ঘনিয়ে আসায় সোজা রুমে চলে গেলাম। গোসল করে, ব্যাগপত্র গুছিয়ে একদম যাওয়ার জন্য তৈরি হয়ে চেকআউট করে নিলাম। পেমেন্ট মিটিয়ে ব্যাগগুলো কটেজের তত্ত্বাবধানে রেখে দেখলাম, দুপুর সাড়ে বারোটা বাজে। আবারও বিচে চলে গেলাম। যেহেতু আমাদের জাহাজ ছেড়ে যাবে তিনটায়, আমাদের হাতে আড়াই ঘন্টার মতো সময় ছিলো।
সিদ্ধান্ত নিলাম একঘণ্টা বিচে ফটোসেশন করবো, বাকি দেড়ঘণ্টা দুপুরের খাবার ও অন্যান্য কাজে ব্যয় করবো। বিচে গিয়ে তাই প্রথমেই একজন পেশাদার ফটোগ্রাফার ভাড়া করলাম। সিলেক্ট করে নেয়া প্রতিটি ছবির মূল্য তিন টাকা। সেন্টমার্টিনে ফটোগ্রাফার অনেক কম, আবার ব্যবসাটা চার-পাঁচমাস হয়, ফলে রেট কিছুটা বেশি তাদের। কক্সবাজারে অনেক কমে পাওয়া যায় সে তুলনায়। যাই হোক, ছবি তোলা ও বিচে ঘোরা হলো বেশ। সৈকতের একটা টং দোকানে বসে চা খেতে খেতে ছবিগুলো দেখে দেখে সিলেক্ট করে ট্রান্সফার করে নিলাম মোবাইলে। এক ঘণ্টা সময় কেটে গেলো।
চলে গেলাম আবারও কটেজে। সেখান থেকে ব্যাগপত্র নিয়ে ভ্যানে করে সোজা সেন্টমার্টিনের বাজারে, জাহাজঘাটের কাছের একটা হোটেলে লাঞ্চ করার জন্য ঢুকলাম। রূপচাঁদা, ইলিশের মাথা, ভাত, সবজি, আলুভর্তা, ডাল দিয়ে উদরপূর্তিটা দারুণ হলো। খাওয়া শেষে বিল মিটিয়ে হালকা কেনাকাটা ও ঘাটের দিকের সৈকতে ঘোরাঘুরি হলো খানিকটা। আড়াইটা বাজার পরপরই জাহাজে লোকজন উঠতে শুরু করল, সাথে আমরাও।
বিদায়ের মুহূর্তটা অনেক কষ্টকর হলেও ব্যস্ত জীবনে না ফিরেও উপায় নেই। আসার সময় সকালের সমুদ্র ও নাফ নদী দেখতে দেখতে এসেছিলাম, যাওয়ার সময় বিকেলের সৌন্দর্য ও সূর্যাস্ত দেখতে দেখতে একসময় টেকনাফের দমদমিয়া ঘাটে পৌঁছে গেলাম।
শুরুতেই গিয়ে ঢাকায় ফেরার জন্য বাসের টিকেটের খোঁজ করলাম। উপস্থিত সময়ে আর কোনো বাস না পেয়ে রিলাক্স পরিবহনের নন-এসি বাসের দুটো টিকেট নিয়ে নিলাম। ৯০০ টাকা করে প্রতিটি। বাস ছাড়তে আধঘণ্টা বাকি থাকায় রাস্তার পাশের একটা হোটেলে হালকা নাস্তা করে নিলাম। এরপর বাসে ওঠলাম, বাস কিছুটা দেরিতে ছাড়লও। কিন্তু রোহিঙ্গা-কবলিত এলাকা হওয়ায় বিজিবির চেকপোস্টে একের পর এক বাস চেক করে ছাড়তে গিয়ে প্রায় ঘণ্টাদুয়েক সময় লেগে গেল সেখানেই।
দেশের নিরাপত্তার খাতিরে এটুকু কষ্ট করতে অবশ্য আমাদের আপত্তি ছিলো না কারোরই। চেকপোস্ট পেরিয়ে বাস চলতে শুরু করলো। প্রায় বারো ঘণ্টার জার্নি শেষে সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার বাস ঢাকার সায়দাবাদে গিয়ে থামল সকাল সাড়ে সাতটায়। এক অদ্ভুত ঘোরলাগা একটা ভ্রমণকে পেছনে ফেলে আবারও ফিরে এলাম যান্ত্রিক যন্ত্রণাময় জীবনের কাছে, বেঁচে থাকার তাগিদে।