Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

ভ্রমণ হোক কম খরচে

ভ্রমণ করতে টাকা-পয়সা না লাগলে আমি কখনোই এক জায়গায় বেশিদিন থাকতাম না।

ভ্রমণপিপাসুদের প্রায়ই এই কথাটি বলতে শোনা যায়। বিনে পয়সায় ভ্রমণ সবার জন্য সম্ভব না হলেও স্বল্প খরচে ভ্রমণ তো করাই যায়। আপনার সত্যিকারের ভ্রমণপিপাসু মন আর খানিকটা সচেতনতাই আপনার ভ্রমণের খরচ কমিয়ে দিতে পারে শতকরা ৩০ থেকে ৪০ ভাগ। ভ্রমণের খরচের কমানোর কিছু উপায় নিয়েই সাজানো হয়েছে আজকের এই লেখাটি। স্বল্প খরচে যারা ভ্রমণ করতে চান, তাদের জন্য লেখাটি বেশ কাজে দেবে।

১. যেখানে যেতে চাচ্ছেন, সেই স্থান সম্পর্কে জানুন ভালোমতো

কোনো জায়গা সম্পর্কে ঠিকঠাক না জেনেই হুট করে চলে গেলে খরচ যেমন বেড়ে যায় বহুগুণ, তেমনি পদে পদে বিপদেও পড়তে হয়। অনেক সময় পূর্বধারণা না থাকার কারণে ভ্রমণের আনন্দটাই মাটি হয়ে যায়। তাই যেখানে যাবেন বলে ঠিক করেছেন, সেই জায়গা সম্পর্কে রীতিমতো পড়াশোনা করে নিন। সেখানকার মানুষজন, আবহাওয়া, প্রকৃতি, ভ্রমণের উপযুক্ত সময়, থাকার জায়গা, জিনিসপত্রের দরদাম, খাবারদাবার, ঐতিহাসিক স্থান হলে এর ইতিহাস, যানবাহন ইত্যাদি সম্পর্কে খুঁটিনাটি তথ্যগুলো জানার চেষ্টা করুন। গুগল, ইউটিউব, বিভিন্ন ট্রাভেল ব্লগের সাহায্যে খুব সহজেই কাজটি করা যেতে পারে। এতে করে আপনার ভ্রমণ পরিকল্পনা সাজাতে সুবিধা হবে।

২. আগে সেই জায়গায় গিয়েছেন এমন কারো সাথে কথা বলুন

এই পদ্ধতিটি বেশ কাজে দেয়। যিনি আগে একবার ঐ স্থান ঘুরে এসেছেন, তিনি আপনাকে বেশ ভালো ধারণা দিতে পারবেন। থাকা খাওয়ার খরচ, গাইড, সেখানকার মানুষজন, নিয়মকানুন সম্পর্কে তার রয়েছে বাস্তব ধারণা। তার পরামর্শ নিন।

৩. ভ্রমণ পরিকল্পনা সাজান

ছিমছাম একটি ভ্রমণ পরিকল্পনা সাজান; Source: The Unworldly Travelers

ভ্রমণ পরিকল্পনা সাজানো খুব জরুরি বিষয়। আপনার বাজেট, সদস্য সংখ্যা, সময় মাথায় রেখে ভ্রমণ পরিকল্পনা সাজান। কিছু অতিরিক্ত বাজেট রাখুন, হোক না সামান্য, বিপদে-আপদে কাজে লাগতে পারে।

৪. চেষ্টা করুন দলীয় ভ্রমণের

একা নয়, বরং চেষ্টা করুন দলীয়ভাবে ভ্রমণ করতে। এতে খরচ যেমন কমবে, তেমনি বিপদে-আপদে বেশ ভালো সাপোর্টও পাবেন। দলীয়ভাবে ভ্রমণ করলে খরচগুলো ভাগাভাগি করে নেয়া যায়। ধরা যাক, ট্যাক্সি ভাড়া ১,০০০ টাকা। একা গেলে পুরো খরচ আপনাকে একাই বহন করতে হতো। কিন্তু যদি চারজনের গ্রুপ হয়, তাহলে সেই খরচ নেমে আসবে ২৫০ টাকায়। এছাড়াও হোটেল, গাইড, খাবারের খরচও ভাগাভাগি করে নিতে পারেন। দলীয় ভ্রমণ আপনার ভ্রমণ খরচের অনেকটাই সাশ্রয় করবে।

তবে হ্যাঁ, দলের সদস্য নির্বাচনের ব্যাপারে খেয়াল রাখবেন। ধরুন, যাচ্ছেন ট্রেকিং করবেন বলে। কিন্তু স্পটে গিয়ে কেউ বললো সে ট্রেকিং করবে না, তখন একটা সমস্যা সৃষ্টি হবে। আবার অনেকেরই থাকা-খাওয়ার ব্যাপারে অতিরিক্ত বাছবিচার থাকে। অনেকে আবার রুম শেয়ার করতে পারেন না। দলীয় ভ্রমণের আগে থেকেই তাই সমগ্র ভ্রমণ পরিকল্পনা গ্রুপের সবার সাথে শেয়ার করে নেয়া ভালো। এতে করে অনাকাঙ্ক্ষিত সমস্যার সম্ভাবনা কমে যায়।

৫. চেষ্টা করুন অফ সিজনে যেতে

অফ সিজনে থাকা-খাওয়ার খরচ অনেকটাই কম লাগবে। সেজন্য অফ সিজনে যেতে পারেন। আবার অফ সিজনের আগে বা পরে কাছাকাছি কোনো সময়েও যেতে পারেন। তখনও খরচ কিছুটা কম লাগবে।

৬. কমিউনিটি ট্যুরিজমের সাহায্য নিন

অনেক জায়গার নির্দিষ্ট কমিউনিটি ট্যুরিজম থাকে। তাদের সাহায্য নিতে পারেন। যেমন- আপনি যদি রাঙ্গামাটি বা বান্দরবান এলাকা ভ্রমণে যান, তবে সেখানকার কমিউনিটি ট্যুরিজমের সাহায্যে হোটেলের বদলে আদিবাসীদের সাথে থাকা-খাওয়ার সুযোগ পেতে পারেন। এতে খরচ যেমন কমবে, তেমনি স্থানীয় মানুষদের কাছাকাছি থাকার মাধ্যমে তাদের আচার-আচরণ-রীতিনীতি সম্পর্কে জানার সুযোগও পাবেন।

৭. দরদাম করতে শিখুন

এই গুণটা থাকা খুব জরুরি। বাইরে কোথাও গেলে হোটেল কিংবা ট্যাক্সি ভাড়া করার সময় দরদাম করে নিন। একটু যাচাই-বাছাই করে নিলে ক্ষতি তো নেই। শপিংয়ের বেলাতেও একই কথা প্রযোজ্য।

৮. টিকিট কাটুন আগে থেকেই

আগে থেকেই টিকেট কেটে ফেলুন; Source: Google Play

সম্ভব হলে আগে থেকেই টিকিট কেটে রাখুন। এতে করে অনেক সাশ্রয়ে টিকিট কিনতে পারবেন। অনেক সময় এয়ারলাইন্সগুলোতে বিভিন্ন অফার থাকে। সেগুলো কাজে লাগাতে পারেন। একটু চোখ-কান খোলা রাখলে এই সুযোগটি পেয়ে যেতে পারেন।

৯. সরকারি পরিবহন ব্যবহার করার চেষ্টা করুন

সরকারি পরিবহনের খরচ তুলনামূলক কম; ছবিসূত্র: City of Surrey

অনেক জায়গায় সরকারি পরিবহনের ভাড়া তুলনামূলক কম থাকে। যেমন- কলকাতায় আমাদের বিআরটিসি বাসের মতন অনেক বাস আছে। সেগুলোর ভাড়া বেশ কম। এ ধরণের পরিবহন ব্যবহারে ট্যাক্সি বা অটোর চেয়ে ভাড়াটা কম পড়বে নিঃসন্দেহে।

১০. অদলবদল করতে পারেন

যদিও এটা এখনো আমাদের দেশে অতটা প্রচলিত নয়। ধরুন, আপনি চট্টগ্রাম যাবেন, সেখানকার কোনো বন্ধু আপনাকে হোস্ট করলো। আবার সে আপনার এলাকায় এলে আপনি তার হোস্ট হলেন। এতে দুজনেরই থাকা-খাওয়ার খরচটা বাঁচবে।

১১. স্থানীয় খাবার খান

কম খরচে খেতে পারেন স্থানীয় খাবার; Source: peachakucha.org

কোথাও গেলে সেখানকার স্থানীয় মানুষজন যা খায় তা-ই খেতে চেষ্টা করুন। এতে করে খরচ লাগবে কম আর খাবারে পাবেন নতুন আমেজ।

১২. গুগল ম্যাপ ও ট্রাভেল অ্যাপগুলোর সাহায্য নিন

গুগল ম্যাপ এবং ট্রাভেল অ্যাপ গুলো বিশেষভাবে কাজে দেয়; ছবিসূত্র: Engadget

গুগল ম্যাপ থেকে জেনে নিন আশেপাশের দর্শনীয় স্থানগুলোর অবস্থান। অনেক সময় কাছাকাছি জায়গাগুলোতে হেঁটেই যাওয়া যায়। ট্রিপ অ্যাডভাইজার, কালচার ট্রিপের মতো ট্রাভেল অ্যাপগুলোর সাহায্য নিতে পারেন। এগুলো আপনাকে ভ্রমণের স্থান সম্পর্কে ভালো ধারণা দেবে। এই অ্যাপগুলোর সাহায্যে কাছাকাছি জায়গায় অবস্থিত স্থানগুলো সম্পর্কে জানতে পারবেন। আপনি যে স্থানে আছেন তার আশেপাশের দর্শনীয় স্থানগুলো সম্পর্কে আপনাকে জানাবে ট্রিপ অ্যাডভাইজার।

১৩. ঘুরতে বের হওয়ার সময় পানি এবং শুকনো খাবার সাথে রাখুন

কোথাও ঘুরতে গেলে সাথে করে পানি ও শুকনো খাবার ব্যাকপ্যাকে রাখতে পারেন। কারণ সাইটগুলোর আশেপাশে খাবার ও পানীয়ের দাম তুলনামূলক বেশি হয়।

১৪. খাবারদাবারের বেলায় কৌশলী হোন

ভ্রমণে গেলে আমরা হুটহাট অনেক কিছু খেয়ে নিই যা আমাদের ক্লান্ত করে ফেলে। এই ব্যাপারটা মাথায় রাখুন। সকালে পেট ভরে খেতে পারেন। এটা শরীরকে সারাদিন শক্তি যোগাবে। দুপুরের খাবারটা হোক হালকা। আবার রাতে একটু ভারি খাবার খেতে পারেন। খেয়াল রাখবেন যা-ই খাচ্ছেন তা যেন কার্বোহাইড্রেট সমৃদ্ধ হয়। কেননা ভ্রমণে শরীর থেকে প্রচুর ক্যালরি খরচ হয়।

১৫. ছুটির দিন বাদে ভ্রমণ

সম্ভব হলে ছুটির দিনগুলো বাদ দিয়ে ভ্রমণ করুন। কারণ এ সময় মানুষজন বেশি থাকায় ভিড়ের পাশাপাশি জিনিসপত্রের দামও থাকে বেশি।

১৬. স্বেচ্ছাসেবামূলক কাজ

বিনেপয়সায় ভ্রমণের সুযোগ পেতে পারেন স্বেচ্ছাসেবামূলক কাজের মাধ্যমে; ছবিসূত্র: Misadventures with Andi

অনেক সময় অনেক অর্গানাইজেশন স্বেচ্ছাসেবামূলক কাজের বিনিময়ে বিনে পয়সায় ভ্রমণের সুযোগ দিয়ে থাকে, যদিও এজন্য একটা যাচাই বাছাই প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হয়। এই সুযোগগুলো কাজে লাগাতে পারেন। এ ধরণের সুযোগ জানতে পারেন ইয়ুথ অপরচুনিটিস নামের এই ওয়েবসাইট থেকে।

মোটামুটিভাবে এই বিষয়গুলো মাথায় রাখলে ভ্রমণ খরচ কমে যেতে পারে অনেকখানিই। তবে মনে রাখবেন, যেখানেই ভ্রমণ করতে যান না কেন, সেখানকার মানুষের সাথে ভালো ব্যবহার করুন, সহযোগিতা পাবেন। খাবারের প্যাকেট, পানির বোতল ইত্যাদি যেখানে সেখানে ফেলবেন না। আর হ্যাঁ, চাইলে কিন্তু একেবারে বিনেপয়সাতেই ভ্রমণ করা যায়! সেজন্য কিন্তু ভবঘুরে হতে হবে। বিনে পয়সায় পৃথিবী ভ্রমণের উপায় জানতে এই ভিডিওটি দেখতে পারেন।

ফিচার ছবিসূত্র: horizontravel.biz

Related Articles