Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

রহস্যে ঘেরা ভারতের কয়েকটি অঞ্চল

বিশ্বের এক রহস্যময় দেশ ভারত। দেশটির আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে রয়েছে নানা বৈচিত্র্য। এসব অঞ্চলের রহস্যময়তা এবং নয়নাভিরাম সৌন্দর্যকে অবলোকনের জন্য ভ্রমণপিপাসুদের তাই পছন্দের এক স্থান ভারত। রহস্যের আবরণে ঢাকা স্থানগুলোতে গেলে মনে হবে ভারত সত্যিই এক বিচিত্র দেশ। একদিকে যেমন প্রকৃতির অপার সৌন্দর্যের হাতছানি, অপরদিকে এসব অঞ্চলে আছে নানা রকম রহস্য ও গল্পকথা। সেসব রহস্য ও গল্পের খোঁজে আজকের এই আয়োজন।

লোকটাক লেক, মণিপুর

উত্তর-পূর্ব ভারতের মণিপুর রাজ্যটি প্রাকৃতিক নানা নিদর্শনে ভরপুর। লোকটাক লেক এ অঞ্চলের এক রহস্যময় হ্রদ। সেখানকার সর্ববৃহৎ ফ্রেশওয়াটার লেক হিসেবে পরিচিত এটি। বিশ্বের একমাত্র ভাসমান লেক হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়া হ্রদটি ইস্ফল থেকে ৩৯ কিলোমিটার দূরে মোইরাংয়ে অবস্থিত।

মূলত এই লেক একই জায়গায় থাকে। এতে ভেসে বেড়ায় ফামদি নামক এক সবুজ রঙের গোলাকার পদার্থ। স্বচ্ছ জলের মধ্যে সবুজের এমন আভা দেখলে সত্যিই চোখ জুড়িয়ে যায়। এটিই ৪০ বর্গ কিলোমিটার দীর্ঘ লোকটাক লেকের অনন্য বৈশিষ্ট্য। এসব ফামদি মূলত গাছপালা, মাটি ও অন্যান্য জৈব পদার্থের মিশ্রণ। স্থানীয় ভাষায় একে বলা হয় ফামশং।

ভেসে বেড়ানো ফামদি; Image Source: The Incredible India

লেকের অনেকাংশেই এমন ফামদি ভেসে বেড়াতে দেখা যায়। স্থানীয়রা এগুলোকে মাছের চাষে ব্যবহার করে থাকেন। অনেকে আবার এদের সাহায্যে ছোট ছোট ঘরও তৈরি করেন। ফামদির উপরিভাগে মাত্র ২০ শতাংশই দেখতে পাওয়া যায়। বাকিটা জলের তলায়। লোকটাক লেকের এই বৈচিত্র্যময় ঘটনার জন্য তার খ্যাতি বিশ্বজোড়া। তাই এই প্রাকৃতিক বিস্ময়কে ১৯৯০ সালে ‘রামসর কনভেনসন’-এর আওতায় আনা হয়।

রূপ বৈচিত্রে ভরা লোকটাক লেক; Image Source: The Incredible India

নর্থ সেন্টিনেল আইল্যান্ড, আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ

বঙ্গোপসাগরের আন্দামান এবং নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের ছোট একটি দ্বীপ উত্তর সেন্টিনেল আইল্যান্ড। দ্বীপটির প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে অসাধারণ। চারদিকে মন ভোলানো বালুময় তটভূমি। তবে এই দ্বীপের অধিবাসীরা সভ্যতা থেকে বিচ্ছিন্ন।

দ্বীপের বাইরের কোনো মানুষের উপস্থিতি এরা পছন্দ করে না। বাইরের কোনো অতিথির এই দ্বীপে প্রবেশ নিষেধ। দ্বীপে কেউ পা রাখলে অভ্রান্ত লক্ষ্যে তীর ছুটে আসবে একের পর এক, বেঁচে আর ফিরতে পারে না কেউই। জাহাজে চেপে দ্বীপের কাছাকাছি পৌঁছলেই, জাহাজ লক্ষ্য করে ঝাঁকে-ঝাঁকে তীর ছুড়তে থাকে তারা। বেশ কয়েকবার এই দ্বীপে যাওয়ার চেষ্টা করেছে মানুষ, কিন্তু তীরবৃষ্টির জন্য ফিরে আসতে হয়েছে বারবার।

নয়নাভিরাম সৌন্দর্যের হাতছানি দেয়া সেন্টিনেল আইল্যান্ড; Image Source: generationvoyage.fr

অবশ্য প্রাকৃতিক কারণেও এই দ্বীপে প্রবেশ করা খুব কঠিন। তবে একেবারেই কেউ পা রাখতে পারেনি ওখানে, তা অবশ্য নয়। সেন্টিনেলবাসীদের চোখে ধুলো দিয়ে গবেষকরা দু-একবার গিয়েছেন, কিন্তু বেশিক্ষণ থাকতে পারেননি।

১৮৯৬ সালে এই দ্বীপের কাছে একটি জাহাজ ডুবে যাওয়ার পর বেঁচে থাকা জাহাজের যাত্রীদের আক্রমণ করে সেন্টিনেলবাসীরা। পরে কাছাকাছি টহল দেয়া নেভির একটি জাহাজ এগিয়ে এসে যাত্রীদের উদ্ধার করে। ১৯৭৫ এবং ১৯৭৭ সালেও একইরকম জাহাজডুবির ঘটনা ঘটে সেখানে। দ্বীপের অধিবাসীরা সেসব জাহাজ লুটপাট করে, মেরে ফেলে জাহাজের যাত্রীদের। ১৯৮১ সালেও ডুবে যেতে থাকা জাহাজের যাত্রীদের মিলিটারি হেলিকপ্টার এসে উদ্ধার করে। ২০০৬ সালে ভারতীয় জেলেদের একটি নৌকা এই দ্বীপে এসে মাছ ধরতে গেলে তাদের ওপর আক্রমণ চালায় সেন্টিনেলবাসীরা। সেই জেলেদের মেরে ফেলে তারা।

অনেকবার এই দ্বীপে প্রবেশের চেষ্টা করা হলেও সেন্টিনেলবাসীদের আক্রমণে তা আর সম্ভব হয়নি। এমনকি একবার এই অধিবাসীদের জন্য হেলিকপ্টার থেকে খাবারের প্যাকেট ফেলার চেষ্টা করা হলেও হেলিকপ্টার লক্ষ্য করে তীর ছুড়তে থাকে তারা। তাই বাধ্য হয়ে ১৯৭৭ সালে ভারত সরকার সেই দ্বীপে যাওয়াই নিষিদ্ধ করে দেয়।

রূপকুন্ড, উত্তরাখন্ড

১৯৪২ সাল। উত্তরাখন্ডের রূপকুন্ড নামক এক উপত্যকার নিকট উপস্থিত হন এক ব্রিটিশ অরণ্যরক্ষক। হঠাৎ তিনি এমন কিছু দেখেন যা দেখে যে কারো হৃদকম্পন থমকে যেতে বাধ্য। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১৬ হাজার ফুট উপরে ছোট্ট এই  উপত্যকায় থাকা এক বরফ জমা জলাশয় শুধুই কঙ্কালে ভরা। একটু গরম পড়তেই বোঝা গেলো, কঙ্কালের সংখ্যা আরো বেশি।

রূপকুন্ড জলাশয়; Image Source: worldatlas.com

প্রথমে ধারণা করেছিলেন এই কঙ্কাল হয়তো জাপানীদের। সেসময় জাপানীরা ভারতের মাটিতে নিজেদের ঘাঁটি স্থাপনের চেষ্টা চালাচ্ছিল। এ অঞ্চলটিই ছিল ভারতে প্রবেশের একমাত্র রাস্তা। কিন্তু দুর্গম ও ভূ-প্রাকৃতিক কারণে শেষরক্ষা হয়নি। অতিরিক্তি ঠান্ডার কারণে জাপানী সৈন্যদের মৃত্যু ঘটে। সেখান থেকেই হয়তো এত কঙ্কাল।

পরে নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর জানা যায়, কঙ্কালগুলো জাপানীদের নয়। বিষয়টি আরো জটিল আকার ধারণ করে। ভূমিকম্প, আত্মহত্যা ইত্যাদি নানা তত্ত্ব বাতাসে ভেসে বেড়াতে থাকে। ২০০৪ সালে রহস্যের একটা সমাধান পাওয়া যায়। জানা যায়, কঙ্কালগুলো প্রায় ১,২০০ বছরের পুরনো। অনুমান করা হয়, একদল তীর্থযাত্রী স্থানীয় গাইড বা পোর্টারের সাথে যাত্রা করছিলেন। কিন্তু যাত্রা সম্পূর্ণ হওয়ার আগেই মারা যান তারা।

খুলি ও কাঁধে আঘাতের চিহ্ন দেখে অনুমান করা হয়, সামনে থেকে এমন কিছু তাদের উপর পড়েছিল যা তারা সামলাতে পারেননি। আবার স্থানীয় বাসিন্দারা মনে করেন, এই পাহাড় আসলে এক দেবীর বাসস্থান। বাইরের কেউ যদি এখানে প্রবেশ করার চেষ্টা করে, তবে তিনি নিজের শক্তি প্রয়োগ করে লোহার মতো কঠিন শিলা বর্ষণ করান, যাতে কেউ বেঁচে ফিরতে না পারে। আর আশ্চর্যের ব্যাপার হলো, গবেষণায় মৃত্যুর কারণ হিসেবে শিলাবৃষ্টিকে দায়ী করা হয়েছে।

জলাশয়ে কঙ্কালের উপস্থিতি; Image Source: worldatlas.com

চুম্বকের পাহাড়, লাদাখ

লাদাখ প্রকৃতির এক অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি। এর রূপ বৈচিত্র্য দেখার জন্য প্রতি বছর দেশ-বিদেশের বিপুল সংখ্যক ভ্রমণার্থীর আগমণ ঘটে। এর সৌন্দর্যের বাইরেও এই অঞ্চলের আরো এক রহস্য পর্যটকদের নিয়ত আকর্ষণ করে। আর সেই রহস্যময় স্থানটির নাম চুম্বক পাহাড়

লদাখের চুম্বকের পাহাড়; Image Source: traveltriangle.com

লাদাখের লেহ থেকে কারগিলের দিকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার গেলেই দেখা মিলবে এই রহস্যময় পাহাড়ের। কারগিলে যাওয়ার সড়কেই এই চুম্বক পাহাড়। এই পাহাড়ের আশ্চর্য এক গুণ হচ্ছে, কেউ যদি এই পথ দিয়ে যাওয়ার সময় গাড়ির ইঞ্জিন বন্ধ করে রাখেন, তারপরও সেই বন্ধ গাড়ি না থেমে ক্রমশ সামনের দিকে এগিয়ে যেতে থাকে। কোনো এক অদৃশ্য শক্তি যেন ২০ কিলোমিটার গতিতে গাড়িকে টেনে নিয়ে যায়।

চুম্বক পাহাড়; Image Source: trekearth.com

এই চুম্বক পাহাড় নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে নানা গল্পকথা চালু রয়েছে। কেউ কেউ এসব ঘটনার মধ্যে ঐশ্বরিক বা অতিপ্রাকৃত শক্তির প্রভাব আছে বলে মনে করে থাকেন। লেহ থেকে কারগিলের সড়ক পথে অনাকাঙ্খিত দুর্ঘটনা এড়াতে লাদাখ প্রশাসন ওই সড়কটির দুই প্রান্তে বর্তমানে সতর্কতামূলক সাইনবোর্ড বসিয়েছে।

ফিচার ইমেজ- adventurenation.com

Related Articles