Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

এশিয়ার শীর্ষ ধনী পরিবারগুলো: চলছে বিলিয়ন ডলার ক্ল্যানের রাজত্ব

এশিয়ার বিত্তশালী ব্যবসায়ী পরিবারগুলো প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে দোর্দণ্ড প্রতাপে, সাফল্যের সাথে কায়েম করে চলেছে নিজেদের প্রভাব আর বিলিয়ন ডলারের রাজত্ব। কখনো কখনো নতুন প্রজন্মের অনভিজ্ঞতার কারণে কোনো পরিবারের ব্যবসায় নেমেছে ধ্বস, কখনো বা সুবংশধরের হাতে পড়ে তালিকার শেষদিক থেকে উপরে উঠে এসেছে কোনো বংশ। আবার কেউ কেউ তারুণ্যের ঝলক দেখিয়ে পরিবারের ছত্রছায়া থেকে বেরিয়ে এসে উদ্যোক্তা হিসেবে স্বনামধন্য হয়ে তাক লাগিয়ে দিয়েছে সবাইকে। এশিয়ার এমন কিছু ধনকুবের পরিবারের গল্প নিয়েই সাজানো হয়েছে আমাদের আজকের আয়োজন।

শুরুতেই উল্লেখ করা যায় ফিলিপাইনের সবচেয়ে ধনিক পরিবারের প্রতিষ্ঠাতা পুরুষ হেনরি সির ২৯ বছর বয়সী নাতি হাওয়ার্ড সির কথা। ম্যাককোয়ারির সাবেক বিনিয়োগ বিশ্লেষক সি ২৪ ঘণ্টা সেলফ-সার্ভিস প্রদানকারী এক সংরক্ষণাগার কোম্পানি খুলে বসে, নাম তার স্টোরেজ মার্ট। ধারণা করা হচ্ছে, দেশটির রাষ্ট্রীয় কাজে যৌথ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার কারণে সেখানে আড়তের চাহিদা দিন দিন বাড়তে থাকবে। মাত্র আধ মিলিয়ন ডলার পুঁজি করে ব্যবসায় নামেন হাওয়ার্ড। বর্তমানে এটি মেট্রো ম্যানিলাতে দুটো বিশাল ফ্যাক্টরি আর হাজারখানিক গ্রাহকের গর্বিত দাবীদার। ফোর্বস এশিয়াকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি জানান, “আমার সারাজীবনের সমস্ত সঞ্চয় একত্রিত করেছি… বিনিয়োগ বিশ্লেষকের চাকরির সাড়ে তিন বছরের বেতন এখানে বিনিয়োগ করেছি”।

সি পরিবার; Image Source: forbesimg.com

এশিয়ার শীর্ষস্থানীয় ধনিক পরিবারের তালিকায় সি পরিবার নবম স্থান দখল করে আছে। মাত্র ১২ মাসের মধ্যে তারা নিজেদের সামগ্রিক অর্থের পরিমাণ ৫৭ শতাংশ বাড়িয়ে ২০.১ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করেছে। ২০১৬ সালের শীর্ষ ৫০ ধনীর তালিকায় থাকা ৪৩টি পরিবার ২০১৭ সালের নভেম্বরে তৈরিকৃত এই তালিকায় জায়গা করে নিয়েছে। তালিকাভুক্ত মোট ৫০টি পরিবারের কুক্ষিগত সম্পদের পরিমাণ প্রায় ৬৯৯ বিলিয়ন ডলার, যা নিঃসন্দেহে পূর্বের সব রেকর্ড ভাঙতে সমর্থ হয়েছে! বিগত বছরের তুলনায় এক বছরেই তাদের সম্পত্তির পরিমাণ বেড়েছে ২০০ বিলিয়ন ডলারের মতো।    

তৃতীয়বারের মতো র‍্যাংকিংয়ে সদম্ভে নিজের অস্তিত্ব জানান দিচ্ছে ভারত। এশিয়ার অর্ধেকের বেশি সম্পদ চীনের হাতে থাকলেও মুক্তবাজার অর্থনীতির জন্য তালিকায় স্থান দেয়ার মতো বিত্তশালী কাউকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। ৫০ ধনিক পরিবারের মধ্যে হংকংয়ের সদস্য সংখ্যা ৯, থাইল্যান্ড, দক্ষিণ কোরিয়া, তাইওয়ান, ফিলিপাইনসহ বেশ কিছু দেশের নাম উঠে এসেছে। ন্যূনতম ৫ বিলিয়ন ডলারের মালিক পরিবারগুলো ঠাঁই পেয়েছে এখানে।

আম্বানি পরিবার

মুকেশ আম্বানির রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রির সাথে টেলিকম শাখা রিলায়েন্স জিও আম্বানি পরিবারের অফুরন্ত ধনভাণ্ডারের ধারা অব্যাহত রাখতে বেশ ভালোই ভূমিকা রেখেছে। তেল এবং গ্যাসের জগতে টাইকুন খ্যাত আম্বানিরা ভারতীয় টেলিকমের তীব্র প্রতিযোগিতার বাজারে ২০১৬ সালে জিওর মাধ্যমে ৪জি সেবা চালু করে। তার পরিপ্রেক্ষিতে বছর ঘুরতে না ঘুরতে জিওর গ্রাহক সংখ্যা দাঁড়ায় ১৪০ মিলিয়নে! রিলায়েন্সের মালিকানাধীন নেটওয়ার্ক১৮, ফোর্বস মিডিয়া শুধু ভারত নয়, গোটা এশিয়ায় বেশ নামকরা।

মুকেশ ও অনিল আম্বানি; Image Source: allindiaroundup.com

মুকেশের ছোট ভাই অনিল রিলায়েন্স কমিউনিকেশনের সাথে এয়ারসেলের একীভূত হওয়ার প্রস্তাব নাকচ করে দিয়েছেন। মালয়েশিয়ার বিলিয়নিয়ার আনান্দ কৃষ্ণানের সাথে এই চুক্তিতে স্বাক্ষর করলে ভারতে তাদের যাবতীয় ২জি সেবা বন্ধ করে দিতে হতো। তাদের বাবা ধিরুভাই আম্বানি ইয়েমেনের এক গ্যাস স্টেশনে চাকরি করতেন। সেখান থেকে ধীরে ধীরে মশলার ব্যবসায় জড়িয়ে অর্থ সঞ্চয় করে গড়ে তোলেন রিলায়েন্স টেক্সটাইল ইন্ডাস্ট্রি, ভারতে এটি এখন খুব নির্ভরযোগ্য একটি ব্র্যান্ড। ২০০২ সালে বাবার মৃত্যুর পর দুই ভাই, মুকেশ আর অনিল আলাদা হয়ে গিয়ে সম্পত্তি দেখাশোনার দায়িত্ব নেন। আম্বানি পরিবারের তৃতীয় প্রজন্মও বর্তমানে পারিবারিক ব্যবসার সাথে সম্পৃক্ত হচ্ছে। শীর্ষ ধনীর খেতাব পাওয়া এই পরিবারের মোট সম্পত্তির পরিমাণ ৪৪.৮ বিলিয়ন ডলার অর্থাৎ প্রায় ৩,৭৮,৬০,০০,০০,০০,০০,০০০ টাকা!

লি বায়াং-চুল পরিবার

এক স্যামসাং ইলেক্ট্রনিকস থেকেই দক্ষিণ কোরিয়ার এই পরিবারের মোট আয়ের শতকরা ৪৫ ভাগ উপার্জিত হয়। চেয়ারম্যান লি কুন-হি, ব্যবসাটির প্রতিষ্ঠাতা ও উদ্যোক্তার পুত্র, ২০১৪ সাল থেকে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে কোমায় আছেন। তার একমাত্র পুত্র, এই পরিবারের আইনত উত্তরাধিকারী জেয় ওয়াই লি, ২০১৭ সালের আগস্ট মাস থেকে ৫ বছরের জন্য জেল খাটছেন। দক্ষিণ কোরিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট পার্ক গিউন-হাইকে ক্ষমতাচ্যুত করার প্রধান ষড়যন্ত্রকারী হিসেবে এবং ঘুষ গ্রহণ ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে কারাবাস ভোগ করতে হচ্ছে তাকে।

Image Source: businessinsider.com

আজ থেকে প্রায় ৮০ বছর আগে ডেয়াগোতে এক গতানুগতিক ট্রেডিং কোম্পানি খুলে বসেন প্রয়াত লি। সেই ছোট কোম্পানিটি বর্তমানে বিশ্বের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় স্মার্টফোন আর টেলিভিশন নির্মাতা হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে। স্যামসাং, সিজে, শিনসেগে আর হ্যানসোল নামে চারটি পৃথক কোম্পানি পরিচালনা করে সারা পৃথিবীতে দাপটের সাথে রাজত্ব করে যাচ্ছে লি পরিবার। তাদের সামগ্রিক সম্পদের পরিমাণ প্রায় ৪০.৮ বিলিয়ন ডলার।

কোয়াক পরিবার

রিয়েল এস্টেট টাইকুন থমাস কোয়াক, হংকং লিস্টেড ডেভেলপার প্রতিষ্ঠান সান হুং কাই প্রোপার্টিজের সহকারী চেয়ারম্যান, ২০১৭ সালের জুন মাস থেকে আবারও কারাগারে অবস্থান করছেন। ২০১৪ সালে দুর্নীতির দায়ে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড হয় তার, ২০১৬ সালের জুলাই মাসে তিনি জামিনে মুক্তি পান। ২০১৪ সাল থেকে তার দুই ভাইয়ের মধ্যে রেমন্ড সান হুং কাইয়ের সার্বিক দায়িত্ব বুঝে নেয়। থমাসের পক্ষ নিয়ে কোম্পানির পক্ষ থেকে মামলা করা হলেও ২০১৭ সালের জুন মাস পর্যন্ত ৬.৭ মিলিয়ন ডলার উপার্জনের রেকর্ড করেছেন রেমন্ড। এই স্বল্প সময়ে বিগত ১২ মাসের তুলনায় ২৮ শতাংশ বেশি মুনাফা অর্জনের কারণে উঁচু গলায় এই অবৈধ মালিকানা প্রসঙ্গে কেউ কোনো প্রতিবাদও করতে পারছে না।

Image Source: links.qut

দেশের সীমা ছাড়িয়ে চীনের দিকেও হাত বাড়াচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। ১২০ মিলিয়ন বর্গ ফুট জায়গার উপরে নির্মিত হচ্ছে সান হুং কাইয়ের চীনা শাখা। ২০০৮ সালে ছোট দুই ভাই মিলে বড় ভাই ওয়াল্টারকে পারিবারিক ব্যবসা থেকে উৎখাত করেন। তিনি বর্তমানে নিজস্ব রিয়েল এস্টেট প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করেন। ১৯৬৯ সালে তাদের বাবা কোয়াক তাক-সেং বন্ধু ফাং কিং হে এবং লি শ কীর সাথে সান হুং কাই অ্যান্ড কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন। তিন বছর পর তিনি একাই পুরো রিয়েল এস্টেট সাম্রাজ্যের মালিকানা অর্জন করেন। বর্তমানে কোয়াক পরিবারের সর্বমোট সম্পদের পরিমাণ ৪০.৪ বিলিয়ন ডলার।

চিয়ারাভানন্ট পরিবার

পশুখাদ্য এবং পশুসম্পদের দিক থেকে বিশ্বের অন্যতম প্রধান উৎপাদক প্রতিষ্ঠান চেরয়েন পোকফান্ড গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা পরিবার থাইল্যান্ডের চিয়ারাভান্ট রয়েছে এশিয়ার শীর্ষ ৫০ ধনী পরিবারের তালিকার চতুর্থ স্থানে। ২০১৭ সালে চীনা বীমা প্রতিষ্ঠান পিং অ্যানের কল্যাণে ৯ বিলিয়ন ডলারের বিশাল এক মুনাফা অর্জন করে তারা। বীমা প্রতিষ্ঠানটি তাদের শেয়ার মূল্য এবং বন্ডের দাম বৃদ্ধিতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছে।

Image Source: staticflickr.com

১৯২১ সালে যাত্রা শুরু করা এ কোম্পানিটির উদ্যোক্তা ছিলেন চিয়া এক চর এবং চোনচেরয়েন চিয়ারাভানন্ট। চীন থেকে থাইল্যান্ডের কৃষকদের কাছে বীজ রপ্তানি করার উদ্দেশ্যে একটি দোকান খোলেন তারা। বর্তমানে গ্রুপটির দেখভালের দায়িত্বে আছেন চিয়ার যোগ্য উত্তরসূরি ধানিন। পরিবারটি বর্তমানে ৩৬.৬ বিলিয়ন ডলারের অধিকারী।

হার্টেনো পরিবার

হার্টেনো ভ্রাতৃদ্বয় তাদের সৌভাগ্যের মূল চাবিকাঠির দুই-তৃতীয়াংশ অর্জন করেছে এশিয়ার সেন্ট্রাল ব্যাংকের বিনিয়োগ থেকে। ১৯৯৭-৯৮ সালে এশিয়ায় অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দিলে অপর এক বিত্তশালী পরিবার, দ্য সালিমস, ব্যাংকটিতে লগ্নিকৃত অর্থ তুলে নিতে বাধ্য হয়। তাদের শেয়ার কিনে নিয়ে বর্তমানে এশিয়ার শীর্ষ ধনীর তালিকায় পঞ্চম স্থান অধিকার করেছে ইন্দোনেশিয়ার হার্টেনো পরিবার।

Image Source: amazonaws.com

সিগারেট নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ডিজারম স্থাপনের মাধ্যমে তাদের পিতা ব্যবসায়ী জগতের সাথে পুরো পরিবারের পরিচয় ঘটান। বর্তমানে এই প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বে আছে বড় ভাই বুদির সুপুত্র ভিক্টর। জনপ্রিয় ইলেক্ট্রনিকস ব্র্যান্ড পলিট্রনের স্বত্বাধিকারী পরিবারটি জাকার্তায় বিভিন্ন খাতে ঋণও দিয়ে থাকে। তাদের সার্বিক সম্পদের পরিমাণ ৩২ বিলিয়ন ডলার।

ফিচার ইমেজ- washingtonpost.com

Related Articles