পৃথিবীব্যাপী ঘটে যাওয়া নানা অপরাধের শাস্তির বিধান যে আছে এ আমরা সকলেই জানি। কাউকে মৃত্যুদন্ড দেয়া হলে মৃত্যুদণ্ডের নির্দিষ্ট সময় আসার পূর্ব পর্যন্ত তাকে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত প্রাপ্তদের জন্য নির্দিষ্ট সেলে থাকতে হয়। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত স্বাধীনতাবিহীন ভাবে বন্দীদশায় মৃত্যুর প্রতীক্ষায় থাকতে হয় তাদের। তবে মৃত্যুদন্ডের অপেক্ষায় থাকা ব্যক্তিকে তার ব্যাপারে একটি শেষ সিদ্ধান্ত নিতে দেয়ার সুযোগ আছে। আর সেটি হলো মৃত্যুপূর্ববর্তী সময়ে তার শেষ খাবারটি বাছাই করার সুযোগ। জীবনের শেষবারের মতো বেছে নেয়া খাবারে কেউ আবদার করেছেন যৎসামান্য, কেউবা মানেননি কোনো বাধা। আবার কোনো কোনো অপরাধীর শেষ ইচ্ছে এতটাই বিদঘুটে ছিলো যে তা নিঃসন্দেহে অবাক করার মতো। এমনি কিছু উদাহরণ নিয়েই আজকের লেখাটি, যেখানে মৃত্যুর অপেক্ষায় থাকা কিছু অপরাধীদের শেষের আগের শেষ খাবারের কথাই বলা হয়েছে।
ভিক্টর ফেগুইর
১৯৬৩ সালে মাত্র ২৮ বছর বয়সে আইওয়ায় প্রাণঘাতী ইনজেকশন দিয়ে (মতান্তরে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে) তার মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হয়। অপহরণ ও খুনের দায়ে এ সাজা হয়েছিল তার। এই অপরাধী তার শেষ খাবার হিসেবে চেয়েছিল শুধুই বীজসহ একটি জলপাই! একদিন তার শরীরের ভেতর থেকে জলপাই বীজটি গাছে পরিণত হবে এবং তা হবে শান্তির প্রতীক- এমনটিই ভেবেছিল সে। তাই শুধু বীজযুক্ত একটি জলপাইয়ের স্বাদই তার মুখ শেষবারের মতো নিতে পেরেছিল।
জন ওয়েইন গেসি
এই মহাশয় আগের জনের ঠিক উল্টো। ধর্ষণ ও হত্যা মিলিয়ে মোট ৩৩টি মামলা এই ক্রমিক খুনির উপর চলেছিল। ১৯৯৪ সালে ৫২ বছর বয়সে ইলিনয়ে মারণ ইনজেকশন দিয়ে তার মৃত্যু কার্যকর করা হয়। মরার আগে খাবারের যে ফরমায়েশ দিয়েছিল এ লোক তা নেহাত কম কিছু নয়। বারোটি ভাজা চিংড়ি, কেএফসি এর ফ্রাইড চিকেন বাকেট, ফ্রেঞ্চফ্রাই এবং এক পাউন্ড স্ট্রবেরি গলাধঃকরণ করে তবেই পৃথিবী ছেড়েছিল এই ব্যক্তি। তাকে ধরার আগ পর্যন্ত মোট ৩টি কেএফসি রেস্তোরাঁর ব্যবস্থাপক হিসেবে সে কাজ করেছে বলে জানা যায়।
টিমোথি ম্যাকভেই
ওকলাহোমা সিটিতে বোমা হামলা করা এই সন্ত্রাসীকে ২০০১ সালে ইন্ডিয়ানায় ৩৩ বছর বয়সে বিষাক্ত ইনজেকশন দিয়ে মেরে ফেলা হয়। ১৬৮টি খুনের অপরাধে তার এই সাজা হয়। মৃত্যুর আগে সে দু পাইন্ট মিন্ট চকোলেট চিপ আইসক্রিম খাবার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিল শেষ খাবার হিসেবে।
রিকি রে রেক্টর
১৯৯২ সালে আরকানসাসে বিষাক্ত ইনজেকশন দিয়ে মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হয় এই ৪২ বছর বয়সীর। দুটি খুনের অপরাধে তার এ সাজা হয় যার একটির শিকার ছিলেন পুলিশ অফিসার রবার্ট মার্টিন (১৯৮১)। তার শেষ খাবার ছিল স্টেক, ফ্রাইড চিকেন, চেরি কুল-এইড নামক পানীয় এবং পেকান পাই। মৃত্যুদন্ডের অপেক্ষমান তালিকাভুক্ত হয়ে জেলে থাকা অবস্থায় সে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছিল। তার হয়ে তার ডিফেন্স টিম খাবার বাছাই করেছিল। সে পেকান পাইটুকু খায়নি। এক রক্ষীকে সে বলেছিল যে- এটা পরে খাবার জন্য বাঁচিয়ে রাখছে সে।
স্টিফেন অ্যান্ডারসন
চুরি, লাঞ্ছনা, ৭টি খুন ও জেল পালানোর অপরাধে মৃত্যুদন্ড দেয়া হয় এই অপরাধীকে। ৮১ বছর বয়সী এক পিয়ানো শিক্ষিকাকে সরাসরি মুখে গুলি করে মারে স্টিফেন। ৪৯ বছর বয়সে ক্যালিফোর্নিয়ায় বিষাক্ত ইনজেকশন দিয়ে তার মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হয়। দুটো গ্রিলড চিকেন স্যান্ডউইচ, এক পাইন্ট কটেজ চিজ, হোমিনি (ভুট্টার মিশ্রণ), পিচ পাই, চকোলেট চিপ আইসক্রিম এবং মূলা ছিল মৃত্যুর আগে তার চাওয়া খাবার।
আইলিন উওরনস
২০০২ সালে মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হয় ক্রমিক খুনি এই মহিলার। মৃত্যুর আগে বিশেষ কোনো খাবার খেতে চায়নি সে, জেলের ক্যান্টিনের সাধারণ হ্যামবার্গার ও অন্যান্য কিছু খাবার এবং এক কাপ কফিই ছিল তার জীবনের শেষ খাদ্য। তার কফি খাওয়ার আগে যেন কোনোভাবেই তার মৃত্যু কার্যকর না করা হয় হুশিয়ারি দিয়ে বলেছিল আইলিন।
অ্যাঞ্জেল নিভস ডায়াজ
এই ৫৫ বছর বয়সীর মৃত্যুও বিষাক্ত ইনজেকশনের মাধ্যমে হয় ফ্লোরিডাতে। খুন, অপহরণ ও অস্ত্রসহ ডাকাতির অভিযোগে তাকে এই শাস্তি দেয়া হয়। মৃত্যুর পূর্বে বিশেষ খাবার খেতে সে অস্বীকৃতি জানালে তাকে কয়েদিদের জন্য নির্ধারিত নিয়মিত খাবার পরিবেশন করা হয়। কিন্তু সেটিও গ্রহণ করেনি এ ব্যক্তি।
টেড বান্ডি
নৃশংস এই অপরাধী ধর্ষণ, মৃতদেহের সাথে সঙ্গম, জেল থেকে পালানো ও ৩৫টিরও বেশি খুনের অভিযোগে মৃত্যুদন্ড পায়। ফ্লোরিডায় বৈদ্যুতিক চেয়ারে মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হয় ৪৩ বছর বয়সী এই ব্যক্তির। এও বিশেষ কোনো খাবারের ব্যাপারটি নাকচ করে দেয়। তাই তাকে ঐতিহ্য অনুযায়ী প্রচলিত শেষ খাবার দেয়া হয় যার মধ্যে ছিল- একটি স্টেক, ডিম, হ্যাশ ব্রাউন, মাখন ও জেলিসহ ব্রাউন টোস্ট, জুস এবং দুধ। তবে সে সেগুলোও খায়নি।
অস্কার রে বোলিন জুনিয়র
তিনটি খুনের দায়ে ৫৩ বছর বয়সে ফ্লোরিডায় বিষাক্ত ইনজেকশন দিয়ে তাকে মেরে ফেলা হয়। শেষ খাবার হিসেবে সে খেয়েছিল- স্টেক, মাখন ও সাওয়ার ক্রিম সহযোগে বেক করা আলু, আইসবার্গ লেটুস, শসা ও টমেটো দিয়ে তৈরি একপ্রকার সালাদ, বেক করা গার্লিক ব্রেড, লেমন মেরিং পাই এবং কোকা-কোলা।
রনি লি গার্ডনার
চুরি, ডাকাতি ও ২টি খুনের অভিযোগে মৃত্যুদন্ড পাওয়া রনি লি গার্ডনারের সাজা নিয়ে বেশ বিতর্ক হয়েছিল। উতাহ এ ফায়ারিং স্কোয়াডের মাধ্যমে মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হয় এ ৪৯ বছর বয়সীর। মৃত্যুর আগে তার খাওয়া শেষ খাবার ছিল রিব-আই-স্টেক, লবস্টারের লেজ, অ্যাপল পাই, সেভেন-আপ সোডা এবং ভ্যানিলা আইসক্রিম। তার সাথে সে ‘লর্ড অব দ্য রিংস’ ট্রিলজি দেখতে চেয়েছিল। খাবার পরে সে ৪৮ ঘন্টা উপবাস করেছিল বলে শোনা যায়।
এরিক ন্যান্স
খুনের দায়ে বিষাক্ত ইনজেকশন দিয়ে মৃত্যু দেয়া হয় এই আমেরিকান খুনিকে। খুনের আগে সে দুটো বেকন চিজবার্গার, ফ্রেঞ্চ ফ্রাই, দুই পাইন্ট চকোলেট চিপ কুকি ডো আইসক্রিম ও দুটি কোকা-কোলা খেয়েছিল।
অ্যালেন লি ‘টাইনি’ ডেভিস
৫৪ বছর বয়সে ফ্লোরিডায় বৈদ্যুতিক চেয়ারে তার মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হয়। তিনটি খুন ও ডাকাতির দায়ে তার এ সাজা হয়। তার শেষ খাবার হিসেবে সে চেয়েছিল লবস্টারের লেজ, আলু ভাজা, আধা পাউন্ড চিংড়ি ভাজা, ছয় আউন্স ফ্রাইড ক্ল্যাম, গার্লিক ব্রেড এবং ৩২ আউন্স এ অ্যান্ড ডব্লিউ রুট বিয়ার।
তেরেসা লুইস
হত্যা, ষড়যন্ত্র ও ডাকাতির দায়ে ভার্জিনিয়াতে বিষাক্ত ইনজেকশন দিয়ে মৃত্যুদন্ড দেয়া হয় এই নারীকে। সে ফ্রাইড চিকেন, মাখন সহ মটরশুঁটি, অ্যাপল পাই এবং ডক্টর পেপার নামক পানীয় মৃত্যুর আগে খেয়েছিল।
সাক্কো এবং ভানজেট্টি
ফার্ডিনান্দো নিকোলা সাক্কো ও বার্থোলোমিও ভানজেট্টিকে যথাক্রমে ৩৬ ও ৩৯ বছর বয়সে ম্যাসাচুয়েটসে বৈদ্যুতিক চেয়ারের মাধ্যমে মৃত্যুদন্ড দেয়া হয়। ১৯২৭ সালে এ শাস্তি কার্যকর করার পূর্বে শেষবারের মতো তারা যা খেয়েছিল তা হলো- স্যুপ, মাংস, টোস্ট ও চা। ১৯৭৭ সালে ম্যাসাচুয়েটস এর গভর্নর বলেন, দুই খুনের দায়ে সাজাপ্রাপ্ত এই দুই ব্যক্তিকে অন্যায্যভাবে ধরা হয়েছিল। সেই থেকে এটির বিচার অব্যাহত আছে।
রনি থ্রেডগ্রিল
২০১৩ সালে খুনের দায়ে টেক্সাসে বিষাক্ত ইনজেকশন দিয়ে মেরা ফেলা হয় এই ৪০ বছর বয়সীকে। শেষ খাবার হিসেবে সে চেয়েছিল বেকড চিকেন, কান্ট্রি গেভিসহ ম্যাশড পটেটো, সবজি, মিষ্টি মটর, ব্রেড, চা, পানি এবং পাঞ্চ। কিন্তু শেষ খাবার হিসেবে কয়েদীর ইচ্ছেমতো বিশেষ কিছুর অনুরোধ করার নিয়মটিকে ২০১১ সালে বাতিল করে দেয় টেক্সাস সরকার। কাজেই নিজের পছন্দ করা খাবারের পরিবর্তে তার ইউনিটে থাকা অন্যান্য অপেক্ষমান মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত আসামিদের মতো সেও জেল থেকে নির্ধারিত একই খাবার পায়।
ব্রেন্ডন জোনস
খুনের অভিযোগে এই ৭২ বছর বয়সীকে বিষাক্ত ইনজেকশন দিয়ে মৃত্যু দেয়া হয়। ২০১৬ সালে জর্জিয়াতে সাজা দেবার আগে শেষ খাবার বাছাই করতে সে অস্বীকৃতি জানায়। তাই শেষবারের মতন তার পাতে জোটে ভাত, মুরগী, রুটাবাগা, সিজনড টার্নিপ গ্রীন, শুকনো হোয়াইট বিন, কর্নব্রেড, ব্রেড পুডিং ও পাঞ্চ।
ক্রিস্টোফার ব্রুকস
হত্যা ও ধর্ষণের অভিযোগে বিষাক্ত ইনজেকশন দিয়ে ২০১৬ সালে আলাবামায় মৃত্যু দেয়া হয় এই ৪৩ বছর বয়স্ক অপরাধীকে। তার শিকার ডিন ক্যাম্পবেলকে সে বারবেল দিয়ে মেরে হত্যা করে। তাকে মৃত্যুর পূর্বে বিস্কুট, সসেজ, জেলি ও পনির পরিবেশন করা হয়েছিল যা সে না খাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। সে মিষ্টি কিছুই খেতে চেয়েছিল। তাই সে পছন্দসই খাবার হিসেবে দুটো পিনাট বাটার কাপকেক ও ডক্টর পেপার নামক পানীয় দেবার অনুরোধ জানায়। এগুলোই ছিল তার চেখে দেখা শেষ খাবার।
স্টিভেন ফ্রেডরিখ স্পিয়ার্স
৫৪ বছর বয়সী এই অপরাধীকে তার বান্ধবীকে খুনের দায়ে ২০১৬ সালের নভেম্বর মাসে জর্জিয়ায় বিষাক্ত ইনজেকশন দিয়ে মেরে ফেলা হয়। ১৫ বছর মৃত্যুদন্ড কার্যকরের জন্য অপেক্ষমান ছিল সে। একটি বড় মিট পিজ্জাই ছিল তার খাওয়া অন্তিম খাবার।
আর্ল ফরেস্ট
তিনটি খুনের দায়ে ২০১৬ সালে মিসৌরিতে বিষাক্ত ইনজেকশনযোগে মেরে ফেলা হয় তাকে। স্টেক, পাস্তা, ফলের মিশ্রণ, চকোলেট কেক ও দুধই তার পছন্দ করা অন্তিম খাদ্য ছিল।
উইলিয়াম ক্যারি স্যালি
প্রাক্তন স্ত্রীর বাবাকে খুন করে ওই নারী ও তার বোনকে অপহরণ করে সে। অসংখ্যবার ধর্ষণ করে তাদের। এই অপরাধে ২০১৬ সালে বিষাক্ত ইনজেকশন দিয়ে মেরে ফেলা হয় জর্জিয়ার এই ষাট বছর বয়সীকে। ২৬ বছর মৃত্যুর জন্যে অপেক্ষমানদের তালিকায় ছিল সে। তার খাওয়া শেষ খাবার ছিল পেপেরনি ও সসেজ সহ একটি মাঝারি আকৃতির পিজ্জা, বাফেলো সসযুক্ত চিকেন উইংস, বড় সাইজের একটি সোডা।
রোনাল্ড বার্ট স্মিথ জুনিয়র
২০১৬ সালের ডিসেম্বর মাসে আলাবামাতে খুনের দায়ে বিষাক্ত ইনজেকশনযোগে মৃত্যু দেয়া হয় এই ব্যক্তিকে। ২২ বছর মৃত্যুর জন্য অপেক্ষমান থেকে অবশেষে মৃত্যুদন্ড কার্যকর হয় এই ৪৫ বছর বয়সীর। তার শেষ খাবারের অনুরোধে ছিল ফ্রাইড চিকেন এবং চিপস।
গ্রেগরি পল ল’লার
পুলিশ অফিসারকে হত্যার অভিযোগে মৃত্যুদন্ড দেয়া হয় এই ব্যক্তিকে। ১৬ বছর অপেক্ষমান থাকার পর ২০১৬ সালে বিষাক্ত ইনজেকশন দিয়ে মেরে ফেলা হয় এই ৬৩ বছর বয়সীকে। তার অন্তিম খাবার তালিকা বেশ দীর্ঘ। এতে ছিল রিব-আই-স্টেক, সাওয়ার ক্রিম ও বেক করা আলু, অ্যাসপারাগাস, ডিনাররোল, মাখন, ফ্রেঞ্চ অনিয়ন স্যুপ, স্ট্রবেরি, পিস্তাচিও আইসক্রিম, দুধ এবং আপেলের জুস।
জেমস এডওয়ার্ড স্মিথ
শেষ খাবারের ইচ্ছেতে এক দলা ময়লা চেয়েছিল এই খুনি! তবে সেটা খাবার জন্য নয়। ডাকাতি করার সময় ক্যাশিয়ারের অফিসে একজন মানুষকে হত্যা করে স্মিথ। বিচারে তাকে মৃত্যুদন্ড দেয়া হয়। শেষ খাবারের ইচ্ছেতে সে এক দলা ধুলো-ময়লা চেয়ে বসে! কারো মতে এটা সে ভুডু চর্চার জন্য (একধরনের আফ্রো-ক্যারিবিয়ান ধর্মবিশ্বাস) চেয়েছিল। আবার অনেকের মতে, নিছক জেল কর্তৃপক্ষের ‘শেষ খাবার’ দেবার নিয়মকে অবমাননা করাই তার উদ্দেশ্য ছিল। এ জন্যই সে এমন কিছু চেয়ে বসে যা শেষ খাবার হিসেবে নিয়মমতে যেসব দেয়া যাবে তার অন্তর্ভুক্ত না। অর্থাৎ তার চাওয়া জিনিসটি না দিতে পারার মাধ্যমে কর্তৃপক্ষের নিজস্ব বানানো নিয়মই যেন পালনে ব্যর্থ হয় তারা। স্মিথের চিন্তাধারা অনেকটা এমনই পেঁচানো ছিল বলে জানা যায়। শেষ পর্যন্ত তাকে ইয়োগার্ট পরিবেশন করা হয়েছিল। যতদূর জানা যায় সেটির সাধারণ প্লেইন ইয়োগার্ট হবার সম্ভাবনাই বেশি।
মৃত্যুদন্ডে দন্ডিত আসামী যারা মৃত্যুর জন্য অপেক্ষমান থাকে, তাদের জীবনের একটি শেষ সিদ্ধান্ত হিসেবে অন্তিম খাবার বাছাইয়ের সুযোগটা কিন্তু শুরু হয় কুসংস্কার থেকে! তাদের এটা করতে দেয়া হতো যাতে তারা সন্তোষ নিয়ে মরতে পারে এবং মৃত্যুর পরে অতৃপ্ত আত্মা কিংবা ভূত হয়ে ফিরে না আসে। কালের পরিক্রমায় এই প্রথা তার গায়ে লেগে থাকা কুসংস্কার ঝেড়ে ফেলে পরিণত হয়েছে অনেক স্থানের স্বাভাবিক নিয়মে। কিছু স্থানে তাই মৃত্যুর আগে শেষ খাবার চূড়ান্ত করার অধিকার সরকারীভাবেই কয়েদির জন্য বরাদ্দ। এমনই আরো কিছু অপরাধীর জীবনের শেষবারের মতো খাওয়া খাবারের গল্প নিয়ে দেখা হবে লেখাটির আগামী পর্বে।
(লেখাটির অধিকাংশ ছবি ও কিছু তথ্য হেনরি হারগ্রিয়েভস এর “নো সেকেন্ডস” সিরিজ থেকে নেয়া। “নো সেকেন্ডস” সিরিজটি অপরাধীদের মৃত্যু এবং তার আগে তাদের পছন্দসই খাবার দেয়ার অনুরোধকে ঘিরে তৈরি। তার মতে একজন মানুষের চরিত্র ও ব্যক্তিত্ব তার পছন্দ করা খাবারের মাধ্যমে ফুটে ওঠে। মৃত্যুর দ্বারপ্রান্তে থাকা আসামীদের খাবার বাছাইয়ের সিদ্ধান্তগুলো এই তত্ত্বটিকেই আরো জোরদার করে তুলে ধরে।
তার তোলা সকল ছবিই আসলের একপ্রকার পুনর্মঞ্চায়ন করা। অর্থাৎ যেহেতু আসল শেষ খাবারের ছবি কখনোই পাওয়া যায় না বাইরে, তাই খাবারগুলো সম্বন্ধে জেনে তা নিজেরমতো সাজিয়ে বাস্তবতার আভাস চিত্রায়নের প্রচেষ্টা করেছেন তিনি।