ইসরায়েল বাহিনী আবারও গাজায় বড়সড় হামলা চালিয়েছে। গত শুক্রবার থেকে শুরু হওয়া এ হামলার ফলে দুজন তরুণ নিহতের ঘটনা ঘটেছে। ২০১৪ সালের যুদ্ধের পর এবারই গাজাতে হামাসের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের সবচেয়ে বড় হামলা চালানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু।
এদিকে ফিলিস্তিনি একজন কর্মকর্তা বলেছেন ইসরায়েল ও গাজা শনিবার একটি যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে। তবে এই ঘোষণার কয়েক ঘণ্টা পরেই ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী বলেছে, ইসরায়েলের দিকে ফিলিস্তিনিরা দুটি মর্টার বোমা নিক্ষেপ করেছে এবং এর প্রতিক্রিয়ায় তারা গাজার দক্ষিণ অঞ্চলে হামলা চালিয়েছে।
এর আগে ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা বলছেন, ২০১৪ সালের ইসরায়েল-গাজা যুদ্ধের পর থেকে সবচেয়ে ভয়াবহ হামলাগুলোর মধ্যে একটি এই বিমান হামলায় দুই কিশোরকে হত্যা করা হয়েছে। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর একজন মুখপাত্র এই বিষয়ে মন্তব্যের জন্য অনুরোধের প্রতি কোনো সাড়া দেননি। হামাসের মুখপাত্র ফাওজি বারাহৌম রয়টার্সকে বলেন, গাজায় ইসরায়েলি বোমা হামলা শুরু হওয়ার পর থেকে অনেক দলই হস্তক্ষেপ করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তবে ফিলিস্তিনি এই দলটি একটি আলাদা বিবৃতিতে বলেছে, তারা সাময়িক যুদ্ধবিরতিতে পৌঁছাতে সক্ষম হয়েছে।
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী গত শুক্রবার থেকে গাজায় ৪০টি বিমান হামলা চালায়। এর ফলে গত শনিবার দুই ফিলিস্তিনি কিশোর নিহত হয়। ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানায়, গাজা থেকে ইসরায়েলের দক্ষিণে প্রায় ১০০টি রকেট উৎক্ষেপণ করা হয়। তাদের মতে, সেখানে অনেক বাসিন্দা তাদের বাসায় পুনরায় অবস্থান করতে শুরু করেছিল। উৎক্ষেপিত রকেটগুলোর মধ্যে অনেকগুলোই ইসরায়েল তাদের আয়রন ডোম সিস্টেমের সাহায্যে রোধ করলেও, পুলিশের দেওয়া তথ্যমতে ইসরায়েলের দক্ষিণের একটি শহরে তিন জন আহত হয়েছে।
নেতানিয়াহু একটি ভিডিও বিবৃতিতে বলেন, “প্রতিরক্ষা মন্ত্রী, চিফ অব স্টাফ এবং ইসরায়েলের শীর্ষ প্রতিরক্ষা কর্মকর্তাদের সাথে আলোচনার পর আমরা হামাস সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে শক্তিশালী পদক্ষেপ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।” কিন্তু গোয়েন্দা মন্ত্রী ইসরায়েল কাতজ বলেছেন, “আমরা কোনো সামরিক অভিযান চালাচ্ছি না। আমরা এখন যে কার্যকলাপটি নিযুক্ত করেছি তা বার্তা পাঠায় যে ইসরাইল কোনো রকেট, বিস্ফোরক ডিভাইস, মর্টার বোমা বা (অগ্নিসংযোগকারী) ঘুড়ি সহ্য করবে না। আমরা যে পদক্ষেপ গ্রহণ করছি তা স্পষ্ট একটি সতর্কতা জারি করছে: এখন থেকে আমরা এরকম কোনো কিছুই সহ্য করব না।” ইসরায়েলের বিমান হামলায ও বিস্ফোরণের ফলে গাজার বাসগৃহগুলো বারংবার কেঁপে কেঁপে উঠেছে ও জানালা ভেঙে চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়েছে। বিস্ফোরণের স্থানগুলো থেকে ধোঁয়ার কুণ্ডলি উঠতে দেখা গেছে।
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী বলেছে, তাদের বিমান হামলা গাজা উপত্যকায় আল-শাতি শরণার্থী ক্যাম্পের একটি দালানে আঘাত হানে। এটিকে তারা মাটির নিচে সুড়ঙ্গসহ হামাসের শহরের যুদ্ধবিষয়ক প্রশিক্ষণের স্থান হিসেবে উল্লেখ করে। গাজার স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা বলেন, ভবনটি খালি ছিল। তবে সেখানে একটি পাবলিক পার্কের ভিড়ের মধ্যে ১৫ থেকে ১৬ বছর বয়সী দুই ফিলিস্তিনি তরুণ নিহত হয়। কর্মকর্তারা জানান, এতে আরও প্রায় ১০ জন পথযাত্রী আহত হয়েছে। এছাড়া কাছাকাছি অবস্থিত কিছু ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
ইসরায়েলি সামরিক মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট-কর্নেল জোনাথন কনরিকাস বলেন, আক্রমণের আগে সেনারা মানুষকে এলাকা ছাড়ার জন্য সতর্ক করে দিয়েছিল। তিনি বলেন, “সন্ত্রাসী নয় এমন কোনো ব্যক্তিকে ক্ষতিগ্রস্ত করার কোনো ইচ্ছা আমাদের নেই।“
সম্প্রতি হওয়া হামলার স্থান থেকে আরও ১২ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত ইসরায়েলের উপকূলীয় শহর আসকালান পর্যন্ত সতর্ক করার লক্ষ্যে দেওয়া সাইরেন পৌঁছানো হয়। পুলিশের একজন মুখপাত্র বলেন, শহরটিতে এখনও কোনো হামলার খবর পাওয়া যায়নি।
গত শুক্রবার ইসরায়েল-গাজা সীমান্ত এলাকায় হাজার হাজার ফিলিস্তিনী সাপ্তাহিক বিক্ষোভের জন্য জমায়েত হয়, যা এখন চতুর্থ মাসের মতো চলছে। ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর মতে, শুক্রবার বিক্ষোভকারীরা তাদের সৈন্যদের উপর টায়ার, পাথর, বিস্ফোরক দ্রব্য এবং অগ্নি বোমা নিক্ষেপ করছে এবং তাদের ছোঁড়া গ্রেনেড দ্বারা তাদের কর্মকর্তাদের একজন আহত হয়। এর কয়েক ঘণ্টা পরেই ইসরায়েল গাজায় বিমান হামলা চালায় বলে উল্লেখ করেছে তারা।
ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের বর্তমান ইসরায়েল অর্থাৎ তাদের পূর্বপুরুষদের ভূমিতে ফিরে যাবার অধিকার আদায়ের জন্য হাজার হাজার ফিলিস্তিনি নিজেদের সমর্থন প্রকাশের পাশাপাশি সীমান্তে মিলিত হয়ে বিক্ষোভ করছে। এর সাথে সাথে তারা ইসরায়েলের গাজা অবরোধ প্রত্যাহারেরও দাবি জানাচ্ছে।
গাজার স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা বলছেন, বিক্ষোভের সময় ইসরায়েলি বাহিনী কর্তৃক ১৩০ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। এর সাথে ১৫ হাজার সাধারণ মানুষও আহত হয়েছে। মানবাধিকার সংস্থাগুলো ইসরায়েলি বাহিনীকে ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে অত্যধিক বাহিনী ব্যবহার করার জন্য অভিযুক্ত করেছে। তবে ইসরায়েল বলছে, তারা কেবল আত্মরক্ষার জন্যই গুলিবর্ষণ করছে। তাদের মতে, বিক্ষোভের নামে ফিলিস্তিনিরা তাদের ভূখণ্ডে অনুপ্রবেশের চেষ্টা করছে।তবে ‘গ্রেট মার্চ অব রিটার্ন’ নামে এ বিক্ষোভের সময় কোনো ইসরায়েলির মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়নি এ পর্যন্ত।
বারংবার আত্মরক্ষার কথা বলে গাজায় বিক্ষোভকারীদের উপর হামলা চালালেও ইসরায়েলে তেমন কোনো হতাহতের ঘটনা পাওয়া যায়নি। এদিকে ফিলিস্তিনিরা একের পর এক হামলার শিকার হয়ে নিহত হয়েই চলেছে। এমনকি ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্যকর্মীকেও গুলি করে হত্যা করার মতো কাজ করেছে ইসরায়েলি বাহিনী। তথাকথিত যুদ্ধবিরতি কার্যকর হলে আপাতত গাজায় আহত-নিহতের আশঙ্কা কমতে পারে।
Featured Image Source: Reuters