বিশ্বের নামিদামী যত ব্র‍্যান্ড

বছর দশেক আগের কথা। বাংলাদেশের এক জেলা শহরের একটি স্কুলের ক্লাস এইটের শ্রেণিকক্ষ। গণিতের শিক্ষক আসেননি বলে সেদিন ক্লাস নিচ্ছিলেন বাংলা প্রথম পত্রের শিক্ষক। তাকে ক্লাসে ঢুকতে দেখে আমরা সকলে তো বেশ খুশি, আজ অঙ্ক ক্লাসেও মজার আড্ডা হবে। কিন্তু ঘুণাক্ষরেও কেউ টের পেল না কী আলাপ হতে যাচ্ছে। রোল ডাকা শেষ হওয়ার পর, আমাদের অবাক করে দিয়ে স্যার করে বসলেন অদ্ভুত এক প্রশ্ন!

“আচ্ছা, হিসেব করে বলো তো, স্কুলের সামনের ফ্যামিলি শপটির মূল্য কত হতে পারে? কাছাকাছি একটা মূল্য বললেই হবে।”

স্যারের প্রশ্ন শুনে হতবিহবল হয়ে আমরা তখন একে অন্যের মুখ চাওয়াচাওয়ি শুরু করলাম, এত বড় ফ্যামিলি শপের মূল্য কীভাবে বের করব? আর অনেক হিসাবনিকাশের পর যে উত্তরই দেই, স্যার বলেন, ভুল। সবাই পড়ে গেল মহা চিন্তায়, আর আমাদের দুরবস্থা দেখে স্যার তখন মিটিমিটি হাসছিলেন। এভাবে অনেকক্ষণ কেটে গেলে ক্লাস শেষ হওয়ার কিছুক্ষণ আগে স্যার মুখ খুললেন।

তিনি সেদিন যা বলেছিলেন, সেটি জানার আগে চলুন ফ্যামিলি শপ সম্পর্কে একটু জেনে নেই। সে শহরে তখনও স্বপ্ন, আগোরা বা মিনা বাজারের মতো সুপারশপ ছিল না। ‘ফ্যামিলি শপ’ নামের সেই বিশাল ডিপার্টমেন্টাল স্টোরই ছিল সেখানকার সুপারশপ। দৈনন্দিন জীবনের ব্যবহৃত যাবতীয় জিনিসপাতি একই জায়গায় পাওয়া যেত বলে, পুরো শহরে জুড়েই ফ্যামিলি শপের বেশ সুনাম ছিল। সেদিন স্যার মুখ খোলার পরপরই শিক্ষার্থীরা বুঝতে পারলো তাদের প্রথম এবং মারাত্মক ভুলটি। স্যারের প্রশ্ন শুনেই তারা ফ্যামিলি শপের যা দ্রব্যাদি আছে, তার একটি আনুমানিক হিসেব করা শুরু করেছিল। আর চালাকিটা সেখানেই। তিনি যা বলেছিলেন, সেই কথাগুলোর সারমর্ম হলো, যখন কোনো দোকান বা কোম্পানির সুনাম চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে, তখন সেই দোকান বা কোম্পানির নামই পরিণত হয় একটি নির্দিষ্ট ব্র্যান্ডে এবং এর সাথে তৈরি হয়ে যায় ভিন্ন এক নির্দিষ্ট বাজারমূল্য।

ব্র্যান্ডিং হলো এমন একটি ব্যাপার, কোনো কোম্পানি যে নামেই চলুক, এর সর্বোচ্চ বা সর্বনিম্ন একটি মান থাকবে এবং এর পণ্যের মূল্য নির্ভর করবে সেই মানের উপর। এখন কেউ যদি সুপরিচিত কোনো কোম্পানি কিনতে আসে তখন তাকে শুধু ‘ব্র্যান্ড’ এর মানের জন্যই গুণতে হয় বিশাল অংকের টাকা। কেননা, রাতারাতি কোনো কোম্পানির মালিক বদলে গেলেও, বদলায় না এর দ্রব্যের ব্যবহারকারীদের সংখ্যা। তবে হ্যাঁ, যদি দ্রব্যের গুণগতমান পরিবর্তন হয়, তাহলে হয়তো ক্রেতার সংখ্যা কমে যেতেও পারে। তবে যতক্ষণ সেই মান অটুট থাকবে, অপরিবর্তিত থাকবে ক্রেতার সংখ্যাও। তাই কেউ যদি সেই কোম্পানি কিনে নেয়, সঙ্গে বিনামূল্যে পায় সেই ক্রেতাদেরও।

অর্থাৎ স্যার আমাদেরকে ফ্যামিলি শপের উদাহরণ দেখিয়ে সেদিন ব্র্যান্ডের দামের হিসাবটি এবং কোনো কোম্পানির মার্কেটিংয়ে সেটি কতটুকু গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, সেই ব্যাপারগুলো শিখিয়ে দিয়েছিলেন কথার মারপ্যাঁচে ফেলে। যেকোনো একটি ব্র্যান্ড যখন প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায়, তখন সেই অনুযায়ী সেটির দামটিও বেড়ে যায়। বাস্তবিক অর্থে আপনি টাকা দিয়ে শুধু কোনো কোম্পানিকেই ক্রয় করছেন না, সাথে ক্রয় করে নিচ্ছেন সেটির সুনামও। আর কোম্পানির বিভিন্ন সামগ্রীর গুণগত মান বৃদ্ধি পেলে ক্রেতার পরিমাণও বৃদ্ধি পাবে, আর সেই সাথে বাড়বে কোম্পানির বাজারমূল্যও।

ব্র্যান্ড নিয়ে এতো কিছু বলার কারণ হলো, অনেকেরই মনে হয়তো প্রশ্ন আসে, একটি ব্র্যান্ডের দাম এতো বেশি কী করে হয়? কিংবা কোম্পানির আয় বা বাজারমূল্যে এর ভূমিকা কতখানি। আর আমাদের লেখার শিরোনাম শুনে নিশ্চয়ই এতক্ষণ বুঝে ফেলছেন, আজ আমরা জানবো বিশ্বের নামীদামী কিছু ব্র্যান্ডের বর্তমান মূল্য এবং অবস্থান সম্পর্কে।

১০. আইবিএম

ব্র্যান্ড ভ্যালু: ৪৬.৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার

আইবিএম শীর্ষ দশ ব্র্যান্ডের তালিকায় জায়গা করে নিলেও গত কয়েক বছরে আসলে এর বাজারমূল্য প্রায় শতকরা ১১ ভাগ হ্রাস পেয়েছে। এমনকি ২০১৩ সালেও আইবিএমের মূল্য ছিল প্রায় ৭৮.৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। সেই তুলনায় বলা যায়, তাদের বেশ অবনতিই হয়েছে। ধারণা করা হয়, কোম্পানি গতানুগতিক হার্ডওয়্যার উৎপাদন থেকে হঠাৎ করে সফটওয়্যার, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ও ক্লাউড কম্পিউটিংয়ের প্রতি নজর বাড়ানোর কারণে, গত পাঁচ বছরে তাদের স্টকের পরিমাণ ২০ শতাংশ কমেছে।

© IBM

এদিকে বার্কশায়ার হাথাওয়ের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ওয়ারেন বাফের গত বছরও আইবিএমের প্রায় ৮৭ মিলিয়ন শেয়ার কিনেছিলেন। কিন্তু এ বছরের প্রথম দিকেই তিনি সেটা কমিয়ে নিয়েছেন ৫৪ মিলিয়ন শেয়ারে। সিএনবিসি এর সাথে এক সাক্ষাৎকারে এ ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেছেন,

“এখন আর আমি আইবিএমকে সেভাবে মূল্যায়ন করি না, যেমনটা ছয় বছর আগে প্রথম শেয়ার কেনার সময় করেছিলাম।

. মার্সিডিজ-বেঞ্জ

ব্র্যান্ড ভ্যালু: ৪৭.৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার

বিশ্বের নামীদামী ব্র্যান্ড নিয়ে কথা হবে, আর সে তালিকায় মার্সিডিজ-বেঞ্জ থাকবে না, তা কী করে হয়?

মার্সিডিজ কনসেপ্ট কার © Mercedes-Benz

সেই ২০০৯ সাল থেকেই মার্সিডিজ বেঞ্জের ব্র্যান্ড মূল্য ক্রমাগতভাবে বেড়েই চলেছে। আজ থেকে সাত বছর আগে এর ব্র্যান্ড মূল্য ছিল ২৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার আর বর্তমানে সেটা গিয়ে ঠেকেছে ৪৭.৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে। এছাড়াও গত পাঁচ বছরের তাদের স্টকের মূল্য বেড়েছে প্রায় ৬০ শতাংশেরও বেশি।

. ফেসবুক

ব্র্যান্ড ভ্যালু: ৪৮.২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার

এদিকে এ বছর প্রথমবারের মতো শীর্ষ দশের তালিকায় জায়গা করে নিয়েছে মার্ক জাকারবার্গের ফেসবুক। এমনকি তালিকার অন্য সব ব্র্যান্ড থেকে ফেসবুকের মূল্যবৃদ্ধির হার সবথেকে বেশি। এর মূল কারণ হলো, গত এক বছরের তুলনায় ফেসবুকের মূল্য প্রায় ৪৮ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।

ফেসবুকের মূল্যবৃদ্ধির হার সবচেয়ে বেশি © Facebook Newsroom

ফেসবুকের প্রসার গত কয়েক বছরে আসলেই অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে এর মাসিক সক্রিয় ব্যবহারকারীর সংখ্যা দুই বিলিয়ন ছাড়িয়ে গেছে। এছাড়া ফেসবুকের মালিকানাধীন ইন্সটাগ্রামের ব্যবহারকারীর সংখ্যা প্রায় ৮০০ মিলিয়ন। প্ল্যাটফর্ম দুটোর সম্মিলিত জনপ্রিয়তার কারণে গত তিন বছরে ফেসবুকের আয় ৩৯% থেকে ৬১% পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে। গত বছরের শেষভাগে ফেসবুকের রাজস্ব ছিল ৯.৩২ বিলিয়ন ডলার, এখন সেটা দাঁড়িয়েছে ৪৮.২ বিলিয়নে।

. টয়োটা

ব্র্যান্ড ভ্যালু: ৫০.৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার

২০১০ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত টয়োটার বাজারমূল্য প্রায় ৫৩.৬ বিলিয়ন পর্যন্ত ক্রমাগতভাবে বৃদ্ধি পেয়েই যাচ্ছিল। কিন্তু গত বছর হঠাৎ করে জোয়ারের প্রায় ৬ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। বিক্রির দিক থেকে টয়োটা বেশ ভালো বাজার পেলেও, সম্প্রতি জাপানের মুদ্রাস্ফীতির কারণে সব মিলিয়ে এর থেকে  যুতসই অবস্থানে আসা সম্ভব হয়নি তাদের পক্ষে।

টয়োটা এক্স-ক্লেইম লিমিটেড এডিশন © Toyota

তবুও বাজার গবেষণা প্রতিষ্ঠান মিলওয়ার্ড ব্রাউনের করা তালিকায় এ বছরের জুন মাসে টয়োটা অন্যতম শীর্ষ গ্লোবাল ব্র্যান্ডের তকমা পেয়ে গেছে ঠিকই। এছাড়াও গত বারো বছর ধরেই শীর্ষ দশ কোম্পানির তালিকা থেকে একবারও বাদ পড়েনি টয়োটা।

. স্যামসাং

ব্র্যান্ড ভ্যালু: ৫৬.২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার

বছরের শুরুতেই গ্যালাক্সি নোট ৭ এর বিস্ফোরণের গুজবের ধাক্কা লেগেছে সম্পূর্ণ কোম্পানির গায়েও। ব্যাটারিগত সমস্যার কারণে ডিভাইস গরম হয়ে বিস্ফোরণের ব্যাপারটি ভালই সাড়া ফেলেছিল সেই সময়। তবে গ্যালাক্সি সিরিজের S8 স্মার্টফোনটি বাজারজাত করার পর সেই বাধা কাটিয়ে স্যামসাং তাদের হারানো জৌলুস পুনরুদ্ধার করে এপ্রিলের মধ্যেই।

Samsung Note 8 © Samsung

গত জুলাই মাসে এক মিডিয়া ইভেন্টে স্যামসাংয়ের বিভাগীয় প্রধান বলেছেন, বাজারজাত করার প্রথম তিন মাসে যে পরিমাণ Galaxy S7 বিক্রি হয়েছিল, এর তুলনায় ১৫ শতাংশ বেশি বিক্রি হয়েছে Glaxay S8 স্মার্টফোনটি। স্যামসাংয়ের গ্লোবাল মার্কেটিং এর নির্বাহী ভাইস প্রেসিডেন্ট ইয়ং-হি লি এক বিবৃতিতে বলেছেন,

“নিজেদের কোম্পানির মূল্য বৃদ্ধির সাথে মানুষের জীবনের অর্থপূর্ণ সাধনের লক্ষ্যেই আমরা প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। মানুষের জীবনযাত্রার মানোন্নয়নের লক্ষ্যে আমাদের নিরন্তর প্রচেষ্টা আমাদের ব্র‍্যান্ড ভ্যালু বৃদ্ধিতে বিশেষ অবদান রেখেছে”।

. আমাজন

ব্র্যান্ড ভ্যালু: ৬৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার

আমাজন প্রাইমের ট্রেইলার © Amazon

খুব পরিচিত একটি নাম হওয়া সত্ত্বেও, এই নিয়ে মাত্র দ্বিতীয়বারের মতো শীর্ষ দশের তালিকায় নাম লিখিয়েছে আমাজন। তবে অনলাইন বাজারের এই খুচরা বিক্রেতা কোম্পানি ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পড়ছে বিভিন্ন অঞ্চলে। ক্রেতাদের অনলাইনে কেনাকাটার অভিজ্ঞতাকে নতুন মাত্রা দিতে গত জুন মাস থেকে হোলফুডসের সাথে হাত মিলিয়ে মুদির দোকানের সদাইপাতিও বাড়িতে পৌঁছে দেয়ার পরিকল্পনা শুরু করেছে আমাজন। এছাড়াও সম্প্রতি আমাজন তাদের ভিডিও সার্ভিসের উপর বেশ জোর দিচ্ছে। আমাজন যেভাবে প্রায় সব ধরনের সামগ্রীতে তাদের প্রভাব বিস্তার করছে, এতে সহজেই বোঝা কেন তারা তালিকার পাঁচ নম্বর স্থানে থাকার যোগ্যতা রাখে।

৪. কোকাকোলা

ব্র্যান্ড ভ্যালু: ৬৯.৭ বিলিয়ন

আপনি হয়তো এই তালিকার চার নম্বরে কোকাকোলার নাম দেখে খানিকটা হলেও অবাক হচ্ছেন। তবে এর থেকে আরও অবাক করা বিষয় হচ্ছে, ২০১৪ সালেও কোকাকোলার ব্র্যান্ড ভ্যালু ছিল প্রায় ৮১.৬ বিলিয়ন ডলার। এই কোম্পানির বাজারমূল্য গত ২ বছরে প্রায় শতকরা পাঁচ ভাগ হ্রাস পেয়েছে।

© Coca-Cola

মূলত কোলা জাতীয় পানীয় ছেড়ে ভোক্তাদের মাঝে স্বাস্থ্যকর পানীয় যেমন, বিভিন্ন ফলের জুস, ভেষজ চা ও কফির চাহিদা বেড়ে যাওয়ার কারণে, কোকাকোলা বেশ বড় একটা ধাক্কা খেয়েছে। অবশ্য সেই ধাক্কা কাটিয়ে উঠতে কার্বোনেটেড না করে পানীয় উৎপাদন শুরু করেছে। যার ফলশ্রুতিতে এই বছর উত্তর আমেরিকায় তাদের চাহিদা ৩% বেড়েছে।

৩. মাইক্রোসফট

ব্র্যান্ড ভ্যালু: ৯০.২ বিলিয়ন

সেই ২০১৪ সাল থেকেই অ্যাপেলের সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মাইক্রোসফটের বাজার মূল্যও, এমনকি গত বছর সেটা হুট করে প্রায় ১০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। কৃতিত্বটা আসলে বলা যায় তাদের বর্তমান প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সত্য নারায়ণা নাদেলার। তিনি দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে কোম্পানি, তাদের ক্লাউড কম্পিউটিং সেবা Azure এর উপর বিশেষভাবে আলোকপাত করেছে।

মাইক্রোসফট সারফেস প্রো ২০১৭ © Microsoft

আর সেই ক্লাউড ভিত্তিক বাণিজ্যিক ব্যবসার মাধ্যমে কোম্পানি তাদের আয় প্রায় ৫৬% বৃদ্ধি করেছে।

২. গুগল

ব্র্যান্ড ভ্যালু: ১৪১.৭ বিলিয়ন

তালিকার ২ নম্বর নামটি দেখে কারও অবাক হওয়ার কথা না। কেননা গত পাঁচ বছর ধরেই এই জায়গাটি গুগল দখল করে রেখেছে শক্ত হাতে। সেই শুরুর সময় থেকে ধীরে সুস্থে নিজেদের ভ্যালু বাড়িয়ে চলেছে এই সার্চ ইঞ্জিন। গত বছর তো সেটি একধাপে প্রায় ৬ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।

গুগল ক্যারিয়ার শট ২০১৬ © Google

এখন পর্যন্ত কোনো সার্চ ইঞ্জিন গুগলের সাথে টেক্কা দিতে পারেনি। ২০১৬ সালে সার্চ ও অনলাইন বিজ্ঞাপন বাজারের ৭৮ শতাংশ ছিল গুগলেরই, যার দরুন তাদের রাজস্ব প্রায় ২৪.৬ বিলিয়ন ডলার বৃদ্ধি পেয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, ২০১৯ সাল নাগাদ সার্চ আর অনলাইন বিজ্ঞাপন বাজারের ৮০.২ শতাংশ থাকবে গুগলের অধীনে।

১. অ্যাপল

ব্র্যান্ড ভ্যালু: ১৮৪.২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার

একদিক থেকে ব্র্যান্ডিং কথাটার মানে হলো, ক্রেতাদের মনের প্রাসাদে বেশ পাকাপোক্তভাবে একটি জায়গা দখল করে নেওয়া। আর বলা যায়, এই ব্যাপারটিকেই পুঁজি করেই যেন অ্যাপল কোম্পানির ভ্যালু দিন দিন আকাশচুম্বী হচ্ছে। ২০০৮ সালে যখন প্রথমবারের মতো আইফোন বাজারে আসলো, সেই সময় কোম্পানির ভ্যালু ১৩.৭ বিলিয়ন থেকে আজ বৃদ্ধি পেয়েছে ১৮৪.২ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে।

অ্যাপল ক্যামপাস © Appple

অ্যাপলের নতুন পণ্য বাজারে আসে প্রাইস স্কিমিং কৌশল অবলম্বন করে। প্রাইস স্ক্রিমিং হলো পণ্য বাজারে প্রবেশের প্রাক্কালেই স্বাভাবিকের থেকে তুলনামূলক অধিক মূল্য নির্ধারণ করে দেওয়া। এতে করে ক্রেতাদের মাঝে এক ধরনের প্রতিযোগিতা তৈরি হয়ে যায়। আর এই একটি কৌশলই আইফোনকে রাতারাতি সাফল্যের দোরগোড়ায় নিয়ে পৌঁছে দিয়েছে। অধিক মূল্যের কারণে স্বল্প আয়ের ব্যবহারকারীদের কাছে যেমন আইফোন হয়ে ওঠে স্বপ্নের মুঠোফোন, অন্যদিকে সমাজের বিত্তশালীদের জন্য হয়ে ওঠে তাদের সামাজিক অবস্থান নির্ধারণের একটি মাধ্যম। এভাবেই আমাদের সবার মাঝে অ্যাপল কোম্পানি একটা প্রতিবেশ তৈরি করে নিয়েছে।

শেষকথা

মার্কেটিং মূলত নির্ভর করে তার ব্র্যান্ডিংয়ের উপর। কোনো একটি পণ্যের বিশেষত্ব পুরোপুরি বিকশিত হয় ব্র্যান্ডিংয়ের মাধ্যমে। ভালো মানের অনেক পণ্যও যথাযথ ব্র্যান্ডিং তথা মার্কেটিংয়ের অভাবে মুখ থুবড়ে পড়তে পারে। কেননা এর সবচেয়ে শক্তিশালী দিক হলো, এর মাধ্যমেই কোম্পানি ক্রেতাদের কাছে ভরসা জোগায় যেকোনো পণ্যের মান, গুণ এবং সার্ভিসিংয়ের। এই ভরসার কারণে একজন ক্রেতা প্রতিষ্ঠিত কোনো ব্র‍্যান্ড বাছাইয়ের ক্ষেত্রে নিশ্চিত থাকেন।

ফিচার ইমেজ- লেখক

তথ্যসূত্র: বিজনেস ইনসাইডার, সিবিএস, ফোর্বস, নাটালি ওয়াল্টারস (নভেম্বর ৩,২০১৭)

Related Articles

Exit mobile version