নিশুতি রাত। হয়তো গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন আপনি। এমন সময়–
ক্রিং ক্রিং … ক্রিং ক্রিং… ক্রিং ক্রিং…
হঠাৎ ঘুমের ঘোরে আপনার মোবাইলের ডিসপ্লেতে চোখ পড়তেই একটু অবাক হয়েই হয়তো ভাবলেন, কেউ মনে হয় ইন্টারনেটের মাধ্যমে ফোন করছে বা বিদেশ থেকে এলো কলটি।
এরপর তড়িঘড়ি করে সেই কল রিসিভ করতেই মৃত্যুশীতল কণ্ঠে কেউ একজন ‘হ্যালো’ বলে সম্ভাষণ জানালেন। তারপর যা ঘটল, তা আপনার রাতের ঘুম নষ্ট করার জন্য যথেষ্ট। খাঁটি ভৌতিক কণ্ঠে ভেসে এলো হাহাকারময় সব ধ্বনি, যেন সুদূর কোনো অলৌকিক স্থান থেকে আপনার সাহায্য চেয়ে ভেসে আসছে করুণ আর্তি। তাতে ক্ষণে ক্ষণে বদলে যায় বিপরীত প্রান্ত থেকে আসা কণ্ঠের মালিকানা। কখনো পুরুষ, কখনোবা নারীকণ্ঠ ভেসে আসে যেন পরলোকের সীমানা ছাড়িয়ে। এভাবে বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন মানুষের কাছে পরলোক থেকে মৃত আত্মা বা শয়তান আত্মার ফোন আসে, যা সেসব মানুষের জীবনে ডেকে আনে করুণ পরিণতি।
বিগত বেশ কয়েক বছরে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের স্বনামধন্য কিছু সংবাদ মাধ্যমে আলোচিত হয়েছে এমন কিছু ফোন নম্বর, যা ডায়াল করলেই নাকি জবাব আসে পরলোক থেকে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের আলোচিত এমন কিছু ফোন নম্বরের অদ্ভুত সব কাহিনী আজ আপনাদের শোনানো হবে।
৬৬৬-৬৬৬-৬৬৬৬ বা ১-৬৬৬-৬৬৬-৬৬৬৬
পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তের মানুষের কাছে নাকি এই ফোন নম্বর থেকে ভেসে আসে নানা ভৌতিক মেসেজ। অনেকেই বিশ্বাস করেন, কোনো শয়তান আত্মাই এর পেছনে কাজ করে। কিন্তু মাসের শেষে যে বিল স্লিপ গ্রাহকের কাছে আসে, তাতে সেই নম্বর থেকে ফোন আসার কোনো অস্তিত্বই থাকে না। এই নম্বর থেকে আসা কোনো ফোন যদি কেউ না ধরেন, তাহলেও তার নিস্তার নেই। কিছুক্ষণের মধ্যেই নাকি তার কাছে চলে আসে ভয়েস কল মেসেজ। তাতে থাকে অদ্ভুত সব ভৌতিক আওয়াজ এবং ভৌতিক কণ্ঠে সাহায্য প্রার্থনা, যাতে করে যে কারো মনে ভয়ের উদ্রেক ঘটতেই পারে। তবে কিছুক্ষণের মধ্যেই এই মেসেজ অটো ডিলিট হয়ে যায়।
০৯০-৪৪-৪৪৪-৪৪৪
জাপানীরা একে সাদাকো নম্বরও বলে থাকে। তারা এই ‘০৯০-৪৪-৪৪৪-৪৪৪’ সংখ্যাটিকে একটি অশুভ ফোন নম্বর হিসেবে মনে করে। অনেক জাপানীর বিশ্বাস, সংখ্যাটি এমনই ভীতিকর, এই নম্বরে আসা ফোন কলটি যার কাছে আসে, তার জীবন হয়ে উঠে দুর্বিসহ। তারা যেকোনো অবস্থায় এই ফোন নম্বর এড়িয়ে চলে। জাপানীরা এই নম্বরে আসা ফোন কলটিকে শয়তানের মৃত্যুর পরোয়ানা হিসেবেই মনে করে থাকে। অনেক জাপানীর ধারণা, যার কাছে এই নম্বর থেকে কল আসে, এক সপ্তাহের মধ্যে যেকোনো দুর্ঘটনায় তার মৃত্যু অনিবার্য।
৯৯৯-৯৯৯৯
এই সংখ্যাটি থাইল্যান্ডবাসীর জন্য এক অভিশপ্ত সংখ্যা। থাইল্যান্ডের বহুল প্রচলিত উপকথা অনুসারে, এই নম্বর থেকে যদি কারো ল্যান্ডলাইন বা মোবাইলে ফোন আসে এবং সে যদি ফোন কলটি রিসিভ করে, তাহলে তার কাছে জানতে চাওয়া হয় তার কোনো শেষ ইচ্ছে আছে কিনা! সে ব্যক্তি যদি তার শেষ ইচ্ছেটি প্রকাশ করে তবে তা পূরণ করা হবে। কিন্তু দুঃখের বিষয়টি হলো, সেই ব্যক্তি তার শেষ ইচ্ছেটি পূরণ হতে দেখে যেতে পারবে না। শীঘ্রই ভয়াবহ কোনো দুর্ঘটনায় তার মৃত্যু পরোয়ানা লিখিত হয়ে গেছে, এমনটাই ধরে নেওয়া হয়।
০০০-০০০-০০০০
যুক্তরাষ্ট্রের মানুষদের কাছে ০০০-০০০-০০০০ নম্বরটি খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এই নম্বর নিয়ে তুমুল আলোচনার ঝড় বয়ে যায়। বলা হয় যে, সেই কল রিসিভ করলেই হাড় হিম করা কণ্ঠে ওপার থেকে কে যেন ‘হ্যালো’ বলে সম্ভাষণ জানায়। তারপরে যে কী ঘটে, তা অবশ্য কেউই জানাননি। তবে ফোন পাওয়া অনেকেই হঠাৎ করেই যেন শুনতে পান ভূতুড়ে সব আওয়াজ! শোনা যায় না টেলিফোনের ওপারে থাকা কোনো মানুষের সাড়া-শব্দ। হাজারবার ‘হ্যালো হ্যালো’ বলে চিৎকার করলেও তার কোনো প্রত্যুত্তর পাওয়া যায় না। গভীর রাতে এই ফোন পেলে শুধু আপনি কেন, বিশ্বের যেকোনো সাহসী মানুষও ভয় পেয়ে যাবে বৈকি!
০৮৮৮ ৮৮৮ ৮৮৮
বুলগেরিয়াতে, ফোন নম্বর ০৮৮৮ ৮৮৮ ৮৮৮ কে অভিশপ্ত বলে মনে করা হয়। বুলগেরিয়ানরা বিশ্বাস করেন যে, এই নম্বর থেকে যে ব্যক্তির কাছে ফোন কল আসে, তার ভয়ানক মৃত্যু ঘটবে। শোনা যায়, এই নম্বর থেকে প্রথম যে ব্যক্তির কাছে ফোন কল আসে, সে ব্যক্তির কিছুদিনের মধ্যেই ক্যান্সারে মৃত্যু ঘটে। তারপরই ঘটে আরো অদ্ভুত ঘটনা। সেই নম্বর থেকে ফোন কল রিসিভ করা দ্বিতীয় এবং তৃতীয় ব্যক্তিও রাস্তায় গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। কেউই এই ফোন নম্বরের কোনো কলই রিসিভ করতে ইচ্ছুক নন। অনেক বুলগেরিয়ান ব্যক্তিই মোবাইল কোম্পানিকে অনুরোধ করেছিলেন, এই ফোন নম্বর থেকে যাতে কোনো টেলিফোন কল গ্রাহকের কাছে না আসে তার ব্যবস্থা নিতে। তবে মোবাইল কোম্পানি অনেক চেষ্টা করেও এই ফোন নম্বরের কোনো ট্রেস করতে পারেনি। তাদের অনুমান, এটি একটি প্রি-রেকর্ডেড ম্যাসেজ, নেটওয়ার্ক কভারেজের বাইরে থেকে আসে ফোন কলটি।
ডায়ালটোনে প্রদর্শিত লাল নম্বর
অনেক পাকিস্তানী একে অপরকে এ কথা বলে সাবধান করে দেন যে, তাদের কাছে কখনো যদি লাল চিহ্ন প্রদর্শিত কোনো নম্বর ডায়ালটোনে দেখতে পাওয়া যায়, তবে তারা যেন তা রিসিভ না করেন। তাদের কাছে এই লাল রঙের ফোন নম্বর অভিশপ্ত নম্বর হিসেবেই বিবেচিত। অনেক পাকিস্তানী মনে করেন, এই নম্বর থেকে ফোন আসা মানে ঐ ব্যক্তির ওপর মৃত্যুর পরোয়ানা জারি হওয়া। কেউ যদি সেই ফোন রিসিভ করেন, তাহলে তিনি উচ্চ ফ্রিকোয়েন্সির শব্দ শুনবেন, যার ফলে সেই ব্যক্তির ব্রেন হ্যামারেজ পর্যন্ত হতে পারে, যা তাকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিতে পারে। এক রিপোর্টে জানা যায়, এ ধরনের ফোন কল রিসিভ করে ১২ জনের অধিক মানুষ মৃত্যুমুখে পতিত হয়েছেন।
২০৭- ৪০৪-২৬০৪
এই ফোন নম্বরটি তৈরি করা হয়েছিল জনপ্রিয় হরর সিনেমা ‘Call Carrie‘র বিজ্ঞাপনে ব্যবহার করার জন্য। ছবির ট্রেইলারের একটি হট লাইন ম্যাসেজ ছিল, “ক্যারিকে উৎসাহিত করার জন্য ডায়াল করুন ২০৭-৪০৪-২৬০৪ নম্বরে”। ফলে অনেক ব্যক্তিই উৎসাহিত হয়ে এই নম্বরে ডায়াল করেন। কিন্তু এর ফলাফল খুব একটা সুখকর হয়নি কারো কাছেই। কোনো ব্যক্তি যখন এই ফোন নম্বরে ফোন করতো, তখন কোনো উত্তর পাওয়া যেতো না। কিন্তু এর কিছুক্ষণ পরেই ঐ ব্যক্তির কাছে পরপর তিনবার ফোন আসতো অন্য নম্বর থেকে। ফোনে একজন অদ্ভুতুড়ে কণ্ঠে ওপার থেকে ভয়ার্ত ফিসফিসে গলায় ঐ ব্যক্তির কাছে সাহায্যের আবেদন করতো। কেউ কেউ দাবি করেন যে, এই ঘটনাটি এখনো চলছে।
০৯৪১৫৮১৭৬৮৩
২০০৬ সালে ভারতে এই ফোন নম্বরের গল্প প্রথম প্রকাশিত হয় ভারতীয় পত্র-পত্রিকায়। মোহিনী নামের এক নারীকে ঘিরে আবর্তিত হয় এই ভৌতিক ফোনকলের গল্প। বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়াতেও ব্যাপক আলোচিত হতে থাকে এই ফোনকল কাহিনী। এই নম্বরে কেউ ফোন করলেই কোথা থেকে কখনো পুরুষ, কখনোবা নারীকণ্ঠে ভেসে আসে বিলাপ আর দীর্ঘশ্বাস, যেন সরাসরি সেই শ্বাস এসে ঘাড়ে পড়ছে এমন অনুভূতি হতে থাকে ফোন রিসিভ করা ব্যক্তির। আবার অনেকে এই নম্বরে ফোন করলেই নম্বরটি হয় ‘সুইচড অফ’ পান, আর না হয় সাময়িকভাবে বাতিল বলে ভেয়েস মেসেজ আসে বলে দাবি করেন। আবার অনেক ব্যক্তিই দাবি করেন, এই নম্বরের ও’প্রান্ত থেকে চাপা গলায় কেউ ডায়ালকারীর নাম ধরে ডাকছে। কিন্তু কীভাবে এটি সম্ভব, তা কারো যুক্তিতেই ব্যাখ্যা মেলে না।
৬৬৬
মার্কিনীদের মধ্যে এই সংখ্যা নিয়ে বহুল প্রচলিত কিংবদন্তী রয়েছে। মাকির্নীদের অনেকেরই বিশ্বাস, এই নম্বরের সাথে শয়তানের গভীর যোগাযোগ রয়েছে। যেসব মার্কিনী এই নম্বর থেকে ফোনকল পেয়েছেন, তাদের মধ্যে কেউ ভূতুড়ে সব শব্দ শুনেছেন বলে ভাবেন, কেউ ভাবেন তারা কান্না জড়ানো গান শুনেছেন, আবার কেউবা নাকি শুনেছেন শয়তানের শ্লেষ মাখানো বীভৎস আওয়াজ। আবার কেউ কেউ কিছুই শুনেননি বলে জানান।