ইউক্রেন-রাশিয়া সঙ্কট (পর্ব | ৫)

(পর্ব ৪-এর পর থেকে)

একসময় ইউক্রেনীয়, রুশ ও অন্যান্য যেসব জাতিগোষ্ঠী রুশ সাম্রাজ্যের শাসনের হাত থেকে মুক্তি পেতে চাইত, তাদের জন্য দোনবাস ছিল আশ্রয়স্থল। ‘ইউক্রেন’ শব্দটা এসেছে সীমান্ত থেকে। দেশটির উত্তর অংশটা ছিল জার ও অটোমান সাম্রাজ্যের সীমান্ত। এখানে আছে প্রচুর কয়লার খনির সমাহার। উনবিংশ শতকে ইউরোপীয় প্রকৌশলীরা কয়লা উত্তোলনের মাধ্যমে এই অঞ্চলকে শিল্পোন্নত করে।

রুশ বিপ্লব ও গৃহযুদ্ধের সময় দোনবাসের কয়লার খনি আর ধাতব জিনিসপত্র লাল-সাদা দুই পক্ষের কাছেই সমানভাবে কাঙ্ক্ষিত বস্তু ছিল। ১৯১৮ সালে দোনবাসে বলশেভিকরা পুতুল সোভিয়েত রিপাবলিক সরকার গঠন করে। (এই সরকার মাত্র কয়েক মাস টিকেছিল। কিন্তু ডিপিআর এক শতক পর আবার ফিরে আসে)।    

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় এই অঞ্চল জার্মান ও সোভিয়েত আর্মির দ্বারা বিধ্বস্ত হয়ে যায়। এতে ইউক্রেনে প্রায় ৭০ লক্ষ মানুষ মারা যায়। যুদ্ধের পর মস্কো দোনবাসকে নতুন করে সাজায়। এখানকার খনির শ্রমিকরা সোভিয়েতদের পুরুষত্বের প্রতীক হয়ে ওঠে। শ্রমিকদের জন্যও এই অঞ্চল স্বর্গে পরিণত হয়। কারণ অর্থনীতিতে দোনবাসের গুরুত্বের ফলে এখানকার জীবনযাত্রার মান সোভিয়েত রাশিয়ার অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় অনেক ভালো ছিল। একইসাথে ওই সময় পূর্ববর্তী জার শাসকদের মতো স্ট্যালিনও ইউক্রেনীয় জাতীয়তাবাদীদের দমন করেন এবং ইউক্রেনীয় সংস্কৃতিকেও বিভিন্নভাবে আঘাত করেন। খনির খাদগুলোতে যে কী পরিমাণ স্ট্যালিনের ভুক্তভোগীর কঙ্কাল পড়ে আছে, তা কেউ জানে না।

দোনবাসের একসময়ের খনিগুলো পরিত্যাক্ত হয়ে এখন আবর্জনার স্তুপে পরিণত হয়েছে; Image Source: Oksana Parafeniuk / for NBC News

ইয়ারোস্লাভ সিমিনইয়াকার মৃত্যুর কয়েকদিন আগে আমি গিয়েছিলাম এলপিআরের ঠিক বাইরেই জলোত শহরে। এটা রেড জোনে অবস্থিত। এর চারপাশে বিভিন্ন ধরনের খনি। একসময় জলোত অনেক সমৃদ্ধ শহর ছিল। এখন মাত্র কয়েকটা খনি সক্রিয় রয়েছে। বাকিগুলো হয় যুদ্ধের আগে থেকেই পরিত্যাক্ত কিংবা যুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

ইউক্রেনীয় আর্মির একটা কোম্পানির পোস্ট ছিল জলোতে। তারা পুরো গ্রীষ্ম জুড়েই লভিউ শহর থেকে সেখানে অগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে যাচ্ছিল। তাদের কর্মক্ষেত্র একসময় ছিল খনির প্রশাসনিক ভবন। ভবনটি এখনো খনিজ সম্পদ খাতে সোভিয়েত আমলের আভিজাত্য প্রদর্শন করছে। সিঁড়িগুলোতে মোজাইকের কাজ করা। দেওয়ালে ঝোলানো আছে ইউক্রেনীয় স্কুল শিক্ষার্থীদের পাঠানো পুতিনবিরোধী বিভিন্ন শিল্পকর্ম। এক হাস্যোজ্জ্বল শিশু দাঁড়িয়ে আছে তিন সৈনিকের সাথে। ছবিতে এক গ্রিন ক্রেয়ন ট্যাঙ্ক গোলা ছুঁড়ে দিচ্ছে কাঠের এক বাড়ির দিকে। ক্যাপশনে লেখা আছে, “জীবিত ফিরে আসো, আমাদের রক্ষাকর্তারা।

কোম্পানি কমান্ডার আমাকে বলেছিলেন, এর আগের দিন পুরো গ্রাম জুড়ে ৭০-১২০ মিলিমিটার রাউন্ড গোলাবারুদ পড়েছে। এটা ছিল তার দেখা সবচেয়ে বড় হামলা। তিনি বলছিলেন,

যখন আপনার মাথার ওপর দিয়ে ৭০ শেলের বোমা আসতে থাকে, তখন আপনি মাথা উঠাতে পারবেন না। আপনাকে ট্রেঞ্চের মাটির দিকে শুধু মাথা নুইয়ে থাকতে হবে। অনেকটা স্বর্ণকারদের মতো কাজ করতে হয়।

তখনকার তীব্র আক্রমণের অনেক কারণই থাকতে পারে। তবে কমান্ডারের ধারণা, এগুলো শুধুই লোক দেখানোর জন্য করা হয়েছে। অতিরিক্ত বোমা বর্ষণের পেছনে শুধু ইউক্রেনের স্বাধীনতা দিবসই একমাত্র নিয়ামক ছিল না। এর আগের দিন রাশিয়ান এয়ার ফোর্স দিবসও ছিল।     

জলোতে ইউক্রেনীয় সেনাবাহিনীর একটা থাকার স্থান ©Paolo Pellegrin

কমান্ডার জানালেন তার নাম ভ্লাদিয়া। যদিও আমি ততদিনে জেনে যাই সৈনিকরা সাংবাদিকদের ছদ্মনাম বলে থাকেন। ২৩ বছর বয়সী লেফটেন্যান্টের মাঝে মধ্যবয়সী কর্নেলদের রাশভারী মনোভাবের অনুকরণ প্রবণতা দেখা যাচ্ছিল। আমি তাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, তিনি পাল্টা আক্রমণ করার অনুমতি পেয়েছিলেন কিনা। কোম্পানি কমান্ডাররা মাঝে মাঝে পাল্টা হামলা করতে পারলেও এর জন্য তাদেরকে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতির প্রয়োজন হয়।

তিনি উত্তর দেন, “আমি এ প্রশ্নের উত্তর দেব না। এটা খুবই যন্ত্রণাদায়ক প্রশ্ন। আমার সৈনিকরা খুবই দেশপ্রেমিক, যুদ্ধংদেহী মনোভাবের। তারা লড়াই করতে চায়, নিজের দেশকে রক্ষা করতে চায়। তারা আতঙ্কিত হয় না। আসলে তারা সামনের দিকে এগিয়ে আমাদের মাটি ফিরিয়ে আনতে চায়। তারা শুধু উপর মহলের নির্দেশের অপেক্ষায় আছে।”

“কিন্তু আপনাদের সেই নির্দেশ আর আসছে না?”

“সেটা আমি কীভাবে বলব? তারা হতাশ নয়। তবে তারা হয়তো আরেকটু বেশি কিছু করতে চায়।”

আলোচনার এমন পর্যায়ে আমরা রকেট আর অটোমেটিক রাইফেলের আওয়াজ শুনতে পেলাম। আমি তখন জঙ্গলের ভেতর থাকা ট্রেঞ্চে ঢুকে পড়লাম। পুরো জলোত জুড়েই এমন ট্রেঞ্চ খুঁড়ে রাখা। আমি ফায়ার পজিশন আর পর্যবেক্ষণের পোস্টে থাকা সৈনিকদের সাথে কথা বললাম একজন রাইফেলধারী সৈনিক আমাকে জানালেরন যুদ্ধের শুরুতে তারা এক জায়গায় দুই দিনের বেশি থাকতেন না। তার শুরুটা হয় ট্যাঙ্ক কমান্ডার হিসেবে। তিনি তখন জানতেন না কী হচ্ছে, কে কোথায় আছে। সবকিছু খুব দ্রুত হচ্ছিল। তবে তখন অন্তত তারা লড়াই করছিলেন। এখন তিনি জানেন যুদ্ধের ঠিক কোথায় কী হচ্ছে। কিন্তু কোথাও আসলে কিছুই হচ্ছে না। তার কাছে নিজেকে অপদার্থ মনে হচ্ছিল। তিনি বলেন, “আপনি খুব কম সময়ই কাউকে দেখতে পাবেন। আমরা এমন কিছুর জন্য অপেক্ষা করছি, যা নিয়ে আমাদের কোনো ধারণা নেই।”

ট্রেঞ্চের যত ভেতরে যেতে থাকলাম, আমি যেন তত ইতিহাসের পুরনো দিনগুলোতে ফিরে যাচ্ছিলাম। মাটির দেওয়ালগুলোতে কাঠের তক্তা দিয়ে আটকে রাখা আছে। সৈনিকরা অ্যান্টিক পেরিস্কোপ ব্যবহার করছিল। তারা হাতে হ্যান্ড-ক্র্যাঙ্ক ফিল্ড টেলিফোন নিয়ে অপেক্ষায় ছিলেন উপরমহলের নির্দেশ আসার। কিন্তু কোনো রিং বাজেনি। এক লোকের হাতে দেখলাম বিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকের এক জাপানি রিভলভার। জানা গেল- এটা একটা রেপ্লিকা। কিন্তু তারপরও এই সময়ের সাথে বড্ড বেমানান লাগছিল। কেউ যদি আর্মিকে ১৯১৫ সালের ওয়েস্টার্ন ফ্রন্টের সেট ডিজাইন করার জন্য ভাড়া করত, তবে এর চেয়ে ভালো কিছু করা সম্ভব ছিল না।

ফ্রন্টলাইনে থাকা ইউক্রেনীয় সেনারা © Paolo Pellegrin

আমার ভাবনাকে যেন সমর্থন করেই এক লম্বা লোক বলে উঠলেন, “এটা অনেকটা প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময়ের মতো।” তিনি যুদ্ধের কেতাবি পোশাক পরা ছেড়ে দিয়েছেন। তার পরনে ছিল একটা কালো হুডি। তার বাম কানের লতিতে ট্যাটু দিয়ে ‘১৪’ সংখ্যাটি লেখা। তিনি জানালেন এই তার বয়স যখন ১৪, তখন তার দাদা মারা যান। তার দাদাই তাকে বড় করছিলেন। এই ট্যাটু থাকার কারণে তাকে একবার চাকরিচ্যুতও হতে হয়েছিল। কিন্তু এখনকার সময় প্রসঙ্গে তিনি বলেন,

এখন খুবই বিরক্তিকর একটা সময় চলছে। আমি শুধু সময়ের সাথে তাল মিলিয়েই চলছি। কখনো কখনো আমি হতাশ হয়ে যাই। তখন হাত ভাঁজ করে ভাবি যুদ্ধ ছেড়ে চলে যাই।

মিশাকে এ অবস্থায় আসতে আরো অনেক কিছুই ছেড়ে দিতে হয়েছে। তিনি ছিলেন রুশ নাগরিক। তিনি সীমানা পার হয়ে এসেছেন ইউক্রেনীয়দের পক্ষে লড়তে। যুদ্ধ নিয়ে ছোটবেলা থেকেই তার অনেক কৌতূহল কাজ করত। তার প্রিয় বই ছিল প্রথম বিশ্বযুদ্ধের জার্মান যোদ্ধা আর্নেস্ট জুঙ্গারের ‘স্টর্ম অব স্টিল’। ২০১৪ সালে তার বয়স যখন মাত্র ১৯, মিশা ঠিক করেন ফ্রন্টে এসে ইউক্রেনের পক্ষে লড়বেন। তার বাবা ছিলেন সোভিয়েত আর্মির সেনাসদস্য। তিনি ছেলের সিদ্ধান্তের ব্যাপারে আপত্তি জানান। তার বাবা বলেন, ইউক্রেনীয়রা যা বলছে তা ভুল। দোনবাস ছিল রাশিয়ার অধীনে। আসলে পুরো ইউক্রেনই রাশিয়ার।

মিশা এখানে একমত হতে পারেন না। তিনি তার আত্মসংকল্পের ব্যাপারে বিশ্বাসী ছিলেন। পুতিন যে ইউক্রেন দখল করার জন্য বিচ্ছিন্নতাবাদীদের মদদ দিচ্ছেন, এটা তার কাছে স্পষ্ট ছিল। তিনি বলেন,

রাশিয়া এখন আমেরিকার মতোই সাম্রাজ্য গড়ে তুলছে। তারা সবসময় অন্য দেশগুলোতে উপনিবেশ গড়ে তোলে। তাদের নীতিনির্ধারণী সবসময়ই পরিষ্কার। আক্রমণ করো, জেতো, ধ্বংস করে দাও।

আমি মিশার গল্প শুনে একটু বিভ্রান্ত হয়ে যাই। আপনি সবসময় এমন কোনো রুশ লোক দেখতে পাবেন না, যে কিনা ফ্যাসিস্টদের প্রিয়পাত্র আর্নেস্ট জুঙ্গারের ভক্ত। তবে তার সাহসের মুগ্ধতা প্রকাশ না করে পারছিলাম না। অন্তত তার কানের ১৪ নাম্বারের আসল রহস্য জানা পর্যন্ত। সেই ১৪ আসলে নির্দেশ করে সি১৪ গ্রুপের সদস্য। সি১৪ একটা ইউক্রেনীয় শ্বেতাঙ্গ শ্রেষ্ঠত্ববাদী গ্রুপ।

যুদ্ধের শুরুতে স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে যারা এসেছিলেন, তাদের মধ্যে রাশিয়া, ইউরোপ ও আমেরিকার শ্বেতাঙ্গ শ্রেষ্ঠত্ববাদীরাও ছিলেন। কেউ জানে না তাদের সংখ্যাটা আসলে কত। তারা পুতিনকে সাম্রাজ্যবাদী হওয়ার জন্য খুব একটা ঘৃণা করে না। বরং, তারা মনে করে পুতিনের কিছু নীতিনির্ধারণীমূলক কার্যক্রম শ্বেতাঙ্গবিরোধী ছিল।

ইউক্রেনে বর্ণবাদ খুব একটা প্রতিষ্ঠিত ছিল না। এমনকি প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি ইহুদি হওয়ায় বর্তমানে সেখানে ইহুদিবিদ্বেষও অনেক কম। কিন্তু ২০১৪ সালে দেশের কঠিন সময়ে তারা যেখান থেকেই সাহায্য পেয়েছে, গ্রহণ করেছে। তাদের অনেকেই এখনো আছে সেখানে। তাদেরই একজন মিশা।

মিশা আমার রুশ দোভাষীর কাছে বলছিলেন, “আমি শ্বেতাঙ্গ বর্ণের জন্য লড়ে যাচ্ছি।” দোভাষী ভদ্রমহিলা হয়তো আমরা ট্রেঞ্চ থেকে বের হওয়ার পর এটা অনুবাদ করে শোনানোই যথার্থ মনে করেছিলেন।

দোনবাসের ফ্রন্টলাইনের কাছে থাকা এক কয়লাখনির ছবি ©Paolo Pellegrin

কমান্ড পোস্টে থাকা লেফটেন্যান্ট কয়েক গজ দূরে থাকা এক বাড়ি থেকে এক মহিলাকে বের হতে থেকে রূক্ষ গলায় তাকে ফিরে যেতে বলেন। আমি তার কাছে জানতে চাইলাম গ্রামবাসীর সাথে তার সম্পর্ক কেমন।

তিনি উত্তর দেন, এসব লোকের সাথে যোগাযোগ করা খুবই যন্ত্রণাদায়ক অভিজ্ঞতার। তারা খনিতে কাজ করা আর মদ খাওয়া ছাড়া কিছু বোঝে না। তিনি যেখান থেকে এসেছেন, সেই লভিউকে তারা মনে করে ইউরোপ। অনেকের মধ্যেই দেশাত্মবোধ নেই। তিনি বলেন,

“কিছু মানুষ আছে যারা সব সময়ই ইউক্রেনের পক্ষে ছিল। আবার কিছু আছে গণভোটে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের পক্ষে ছিল। এরা অন্ধ সমর্থক ছাড়া কিছুই না।”

ওই মহিলা যখন ফিরে আসলো, আমি তার সাথে কথা বলতে গেলাম। তার নাম মারিয়ানা। তিনি আমাকে বাড়ির ভেতর আমন্ত্রণ জানালেন। তার বাগান দিয়ে হাঁটার সময় মনে হচ্ছিল কোনো মরুদ্যানে চলে এসেছি। দেখে বিশ্বাস করা কষ্টকর হয়ে যাচ্ছিল যে আমরা ফ্রন্টে আছি। তার বাগানে ছিল তরমুজ, এপিক্রট ফল, পাকা টমেটো। একটা পিকনিক টেবিলের ওপর মারিয়ানা চা আর মিষ্টি রেখে আমাদের আপ্যায়ন করলেন।

মারিয়ানা থাকেন তার জা ভালিয়ার সাথে। তার সাথেও দেখা হলো। এই পরিবার জলোতে তিন প্রজন্ম ধরে আছে। কথা প্রসঙ্গে স্বাধীনতা দিবসের বিষয়টা চলে আসলো। তারা বললেন, তাদের এখনো ৩০ বছর আগের সেই প্রচণ্ড শীতের সময়টার কথা মনে করতে পারেন, যখন ইউক্রেনীয়রা ভোট দেয় সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বের হয়ে যাওয়ার জন্য। এ দুই ভদ্রমহিলাও এর পক্ষে ছিলেন। এমনকি মারিয়ানা জানান, তিনি তখন ব্যালটের কাজেও সাহায্য করেছিলেন।

ভালিয়া জানান,

জনগণের তখন একটা আশা ছিল। আমরা উজ্জ্বল ভবিষ্যতের প্রত্যাশা করেছিলাম। ইউক্রেন একটা সমৃদ্ধশালী দেশ। ইউক্রেনে অনেক কিছু আছে। কিন্তু তারপর এখানে শুরু হলো বিপর্যয়। এখন আমাদের কাছে এই দুর্দশাই অবশিষ্ট আছে।

যুদ্ধ এসে বাজে পরিস্থিতিকে আরো খারাপ করে তুলেছে। মাসের পর মাস তাদের থাকতে হয়েছে সবজি রাখার ভাণ্ডারে। মারিয়ানার বাবা চলাফেরা করতে অক্ষম ছিলেন। তাকে প্রতিদিন বহন করে আন্ডারগ্রাউন্ডে নিয়ে যেতে হতো।

মারিয়ানা বলেন,

আমরা জানতাম না কারা বিচ্ছিন্নতাবাদী। আমরা সবাইই এক ছিলাম। তারপর একদিন সকালে ঘুম থেকে ওঠে দেখি মানুষজন রাস্তায় নেমে এসেছে। এদেরকে বলা হলো বিচ্ছিন্নতাবাদী। আর আমাদের যে কোন দলে ফেলা হলো ঈশ্বরই জানেন ভালো। এখন তারা (বিচ্ছিন্নতাবাদীরা) হয়ে গেল আমাদের শত্রু। আর্মি এসে বলে, ‘তোমরা এখানের সবাই-ই বিচ্ছিন্নতাবাদী’।

মারিয়ানাদের সেখান থেকে চলে যাওয়ার উপায় ছিল না। যদি থাকতও, তারা কোথায় যেত? মারিয়ানা বললেন, “আমাদেরকে কেউই প্রয়োজন মনে করে না।” দোনবাসের মানুষজনের কাছে এই কথাটা আমি বারবারই শুনে এসেছি।

বাড়ির বাইরে এসে দেখলাম লেফটেন্যান্ট তখনো ফোল্ডিং চেয়ারে বসে ধূমপান করছেন। তার পাশে অধ্বস্তন কর্মকর্তারা। তিনি প্রশ্ন করেন,

“ওই মহিলা কি আপনাকে বলেছে, সে বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতাদের একজন? সে কীভাবে গণভোট আয়োজনে সাহায্য করেছে, এটা বলেছে আপনাকে? মহান নারী একজন।”

সৈনিকরা হেসে ওঠলো। তিনি তখন আরো বললেন,

“এদের সাথে কী করা উচিত শুনেন। আপনি প্রথমে একটা গর্ত খুঁড়বেন। এরপর এটা চুন দিয়ে পূর্ণ করে এসব লোকদের সেখানে ফেলবেন। তারপর একটা ট্রাক্টর এনে মাটি দিয়ে গর্তটা ভরে ফেলবেন।”

আমার দোভাষীর দিকে তাকিয়ে বললেন, “এটা অনুবাদ করবেন না।”

পরের সপ্তাহে আমি যখন আবার জলোতে গেলাম, শুনলাম মারিয়ানা আহত হয়েছেন। তিনি এক প্রতিবেশি বৃদ্ধ ব্যক্তিকে দেখাশোনা করতেন। তার বাড়ি থেকে যখন ফিরে আসছিলেন, তখন এক বেড়ার পাশ দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় দেখেন একটা রকেট আসছে। তিনি নিচু হয়ে যান। তখন রকেটের শ্রাপনেল তার কাঁধ ও পিঠে আঘাত করে।

আমি বেড়ার কাছে গিয়ে দেখলাম নতুন তৈরি হওয়া গর্তটা চোখের সমান উচ্চতায়। তিনি যদি নিচু না হতেন, নির্ঘাত মারা যেতেন।

(পরবর্তী অংশ পর্ব ৬-এ)

This is a Bengali article written about Ukraine-Russia crisis and its impact. It is adapted from an article of New York Times Magazine.

Reference: 

1. In the Trenches of Ukraine's Forever War 

Featured Image: Reuters

Related Articles

Exit mobile version