ইয়েমেন শান্তি চুক্তি নিয়ে আশাবাদী জাতিসংঘ

ইয়েমেনের হুথিদের সাথে যুদ্ধরত সৌদি নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট শুক্রবার জানিয়েছে, তারা এই সংঘর্ষের অবসান ঘটাতে একটি সম্ভাব্য রাজনৈতিক চুক্তিকে স্বাগত জানাবে। তবে তারা ২০১৪ সাল থেকে দখলকৃত অঞ্চল থেকে হুথিদেরকে  সম্পূর্ণভাবে প্রত্যাহারের ওপর জোর দিয়ে যাবে বলে ইঙ্গিত দিয়েছে

ইয়েমেনে জাতিসংঘের দূত মার্টিন গ্রিফিথস বলেন, কয়েক সপ্তাহের মধ্যে যুদ্ধে লিপ্ত দলগুলোকে লড়াইয়ের অবসান করার জন্য হুদাইদাহ শহরে একসাথে এক টেবিলে বসে আপস করতে দেখতে চান বলে জানান ইয়েমেনে জাতিসংঘের দূত মার্টিন গ্রিফিথস। তার এই বক্তব্যের পরেই সৌদি নেতৃত্বাধীন জোট এ বিবৃতি দিয়েছে।

হুদায়দাহতে ভুক্তভোগী নাগরিক; Image Source: REUTERS/Khaled Abdullah

জাতিসংঘ আশা করছে, হুদায়দাহতে এধরনের একটি পদক্ষেপ নেওয়া হলে তিন বছরের পুরনো সংঘাতের একটি বৃহত্তর সমাধান হতে পারে, যার ফলে প্রায় ১০ হাজারেও বেশি লোক নিহত হয়েছে। এটি এমন একটি মানবিক সংকট সৃষ্টি করেছে, যার অবসান করা অত্যন্ত জরুরি। এর ফলে ক্ষুধা ও রোগের মুখোমুখি হয়েছে লক্ষ লক্ষ মানুষ।

গ্রিফিথস বৃহস্পতিবার জাতিসংঘের রেডিওকে বলেন, “আমি আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে যত দ্রুত সম্ভব সবগুলো দলকে একসাথে দেখতে চাই। আমি আশা করছি যে, পরের সপ্তাহে (জাতিসংঘের) নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠক হবে এবং কীভাবে আমরা আলোচনাটি পুনরায় নিয়ে আসব তা নিয়ে তাদের আগেই একটি পরিকল্পনা করব।

সম্প্রতি গ্রিফিথস ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট আবদ-রব্বু মনসুর হাদি এবং রাজধানী সানা ও সর্বাধিক জনবসতিপূর্ণ অঞ্চল নিয়ন্ত্রণকারী হুথি গোষ্ঠীর প্রধান আলোচক মোহাম্মদ আব্দুল-সালামের সাথে সাক্ষাৎ করেন। সাক্ষাতের পর তিনি বলেন, “উভয় দলই পুনরায় আলোচনার সূচনা করার জন্য সম্মত হয়েছে বলে আমাকে জানিয়েছে। আমি মনে করি, এটি এত বিলম্বিত যে এখনই শুরু করা উচিত।

মার্টিন গ্রিফিথস; Image Source: Reuters

সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং সৌদি আরবের নেতৃত্বে আরব রাজ্যের জোট হাদির সরকারকে ২০১৫ সাল থেকে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। হুথিদেরকে তারা ইরানের গুটি হিসাবে অভিযোগ করে। তবে তেহরান ও হুথি, উভয়েই এটি অস্বীকার করে।

হুথিরা একটি সামগ্রিক যুদ্ধবিরতির অংশ হিসেবে জাতিসংঘের কাছে হুদাইদাহ বন্দর পরিচালনার দায়িত্ব অর্পণ করার প্রস্তাব দিয়েছে। এ সম্পর্কে গ্রিফিথস জানিয়েছেন, তিনি এর সময়সীমা এবং অন্যান্য বিষয় সম্পর্কে একমত হওয়ার জন্য আগামীতে হুথিদের সঙ্গে আরও আলোচনার প্রত্যাশা করছেন। হাদির পক্ষ থেকে এই প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে, তবে বন্দরের ওপর সর্বাত্মক হামলা প্রতিরোধের প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।

হুথিরা এ পর্যন্ত সেচ্ছ্বায় দখলকৃত কোনো অঞ্চল সমর্পণ করেনি। হুথিরা সানা ও হুদাইদাহসহ ইয়েমেনের তিনটি প্রধান শহর ছাড়তে রাজি না হওয়ায় হাদি সরকার তা বর্জন করে চলে গেলে ২০১৬ সালেই ইয়েমেনের রাজনৈতিক সঙ্কট নিরসনে জাতিসংঘের আলোচনা বন্ধ হয়ে যায়।

হুদায়দাহ বন্দর; Image Source: Reuters/ Abduljabbar Zeyad

গ্রিফিথসের মন্তব্যের পর হাদি সরকারের সরকার পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য লড়াই করা রিয়াদ-নেতৃত্বাধীন জোট একটি বিবৃতিতে জানায়, ইয়েমেনকে এই সঙ্কটের মধ্যে থেকে বের করার জন্য সর্বোত্তম ও সবচেয়ে উপযুক্ত সমাধান হচ্ছে একটি রাজনৈতিক চুক্তি।

তবে তারা বলেছে, যেকোনো শান্তি চুক্তিতেই ইয়েমেনের জন্য আনা জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাবসহ পূর্বে গৃহীত সকল উদ্যোগের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হবে। যা ২০১৪ সাল নাগাদ জব্দকৃত এলাকা থেকে হুথিদেরকে প্রত্যাহারের দাবি জানায়। সবগুলো উদ্যোগেই ২০১৪ সালে হুথি কর্তৃক ইয়েমেনের দখলকৃত অঞ্চল ছেড়ে দেওয়ার দাবি জানিয়েছিল। হুদাইদাহর হামলা নিরীক্ষণকারী সংযুক্ত আরব আমিরাত বারবার বলেছে, যেকোনো চুক্তিতে এই শর্ত অন্তর্ভুক্ত থাকতে হবে যে, হুথিরা বন্দর শহর এবং ইয়েমেনের উপকূলে তার অন্যান্য এলাকা ছেড়ে চলে যাবে। এ সম্পর্কে বক্তব্য দেওয়ার জন্য হুথিদের থেকে কাউকে পাওয়া যাননি। তবে এর আগে হুথিরা বলেছিল তারা হুদাইদাহ ছেড়ে যাবে না।

ইয়েমেনের সানা বিমানবন্দরে দেহরক্ষীদের দ্বারা পরিবেষ্টিত গ্রিফিথস; Image Source: Reutes

শুক্রবার যুদ্ধের সীমানা প্রায় নীরব ছিল। সামরিক সূত্র এবং হুদাইদাহ প্রদেশের বাসিন্দারা রয়টার্সকে জানিয়েছে, সম্ভবত গ্রিফিথসের প্রচেষ্টার ফলাফল কাজে দিতে শুরু করেছে। ইয়েমেনের সামরিক বাহিনীর একজন সদস্য বলছেন, গত দুই দিনে জোট বাহিনী উপকূলীয় সড়ক নিরাপদ করার এবং পূর্বে দখলকৃত অঞ্চলগুলোকে সুসংহত করার ব্যাপারেই বেশি মনোযোগী ছিল। তিনি আরও জানান, কিছু সংঘর্ষ ব্যতীত হুদায়দাহ বিমানবন্দরের চারপাশে খুব শান্ত ছিল।

আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় আশঙ্কা করছে, যুদ্ধের পরবর্তী পর্যায়ে হয়তো দেখা যাবে সৌদি নেতৃত্বাধীন জোট বাহিনী শহরের কেন্দ্র আক্রমণ করে বন্দর অভিমুখে যাত্রা করেছে। এর ফলে যদি ইয়েমেনের বাকি অংশের মাঝে সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায় তবে হুদায়দাহতেই বড় ধরনের হতাহত ও একটি সম্ভাব্য মানবিক বিপর্যয় ঘটার সম্ভাবনা রয়েছে।

হুদায়দাহ বন্দরের ক্রেন; Image Source: Reuters/ Abduljabbar Zeyad

হুথিরা হুদায়দাহর ভেতরে খাল খনন, প্রতিরক্ষা বর্ম তৈরি ও হুদায়দাহ ও আশেপাশের অঞ্চলের বাহিনীর সাথে পদমর্যাদা পুনর্বহাল করে যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছে। জোট বাহিনী যদি হুদায়দাহ দখলের জন্য হুথিদের সাথে লড়াই শুরু করে, তবে সেখানে ব্যাপক প্রাণহানি ঘটবে। এর পাশাপাশি বন্দর নগরীর সাথে সারা ইয়েমেনের বিচ্ছিন্ন হওয়ারও আশঙ্কা রয়েছে। ফলে হুদায়দাহ একটি বড় রকমের ঝুঁকির ্মাঝে রয়েছে।

তবে জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় যুদ্ধাবসানের চুক্তিতে সম্মত হলে এ অবস্থাটি এড়ানো সম্ভব। হুথি বাহিনী হুদায়দাহ ছেড়ে যাওয়ার শর্তে রাজি হলেই এর সম্ভাবনা রয়েছে। তবে তারা এতে রাজি হয় কিনা তা ভাবনার বিষয়। হুদায়দাহর ভাগ্যে কী ঘটবে সময়ই বলে দেবে। পুরো প্রক্রিয়াটি অনেকাংশেই নির্ভর করবে জাতিসংঘ এখন কতটা বিচক্ষণতার সাথে ব্যাপারটিতে মধ্যস্থতা করে তার উপর। লক্ষ লক্ষ মানুষের প্রাণহানি যেন না ঘটে এটিই প্রত্যাশা।   

Featured Image Source: REUTERS/Khaled Abdullah

Related Articles

Exit mobile version