সম্প্রতি হার্ভে ওয়াইনস্টিনের মতো নাম করা চলচ্চিত্র প্রযোজকের বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়ন ও হয়রানির অভিযোগ উঠে এসেছে। এ নিয়ে বিশ্বজুড়ে উঠেছে তীব্র নিন্দার ঝড়। তার নির্যাতনের শিকার হয়েছেন অ্যাঞ্জেলিনা জোলি, রোজ ম্যাকগুয়েন, কারা ড্যালেভিন ও কেট বেকিনসেলের মতো অভিনেত্রীরাও। তাদের কয়েকজনের মুখ থেকে শোনা সেসব যৌন নিপীড়নের কথা থাকছে আজকের লেখায়।
হার্ভে ওয়াইনস্টিন
আসুন আগে পরিচিত হয়ে নেই নিন্দিত ‘মানুষটির’ সাথে। ৬৫ বছর বয়সী এই মার্কিন প্রযোজকের জন্ম ১৯৫২ সালে নিউইয়র্ক শহরে। হার্ভে আর তার ভাই বব ১৯৭৯ সালে যাত্রা শুরু করেন তাদের মিরাম্যাক্স ফিল্ম কর্পোরেশনের। তিনি প্রযোজনা করেছেন তিন শতাধিক সিনেমা ও টিভি সিরিজের। কাজ করেছেন মার্টিন স্করসেসি, কুয়েন্টিন টারান্টিনো, ডেভিড ও’রাসেল ও পিটার জ্যাকসনের মতো পরিচালকদের সাথে। এক কথায় তিনি হলিউডের কয়েকটি বড় চলচ্চিত্রের পিছনে মস্তিষ্ক হচ্ছে এই লোকটির। অস্কারও জিতেছেন ১৯৯৮ সালে ‘শেক্সপিয়র ইন লাভ’ সিনেমার জন্য।
এছাড়াও তিনি প্রযোজনা করেছেন বেশ কিছু নামীদামী সিনেমার; যেমন- দ্য গ্যাংস অব নিউইয়র্ক, দ্য ইংলিশ পেশেন্ট, পাল্প ফিকশন, স্পাই কিডস, সিন সিটি, দ্য সিলভার লাইনিং প্লেবুক, জ্যাঙ্গো আনচেইন্ড, দ্য লর্ড অফ দ্য রিংস ট্রিলজি ও মেলেনার মতো সিনেমা।
ইভা গ্রিন
ইভা গ্রিনের হয়ে তার মা অভিনেত্রী মারলিন জোবার্ট এই ব্যাপারে প্রথম মুখ খোলেন। ইউরোপ ওয়ান রেডিওতে এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, তার মেয়ে ইভাও হয়েছিলেন ওয়াইনস্টিনের হাতে যৌন হয়রানির শিকার। পরে এ ব্যাপারে ইভাও তার বক্তব্য জানান। তিনি তার টুইটার একাউন্টে বলেছেন,
“এক সাক্ষাতে আমাকে তার সাথে প্যারিসে দেখা করতে হয়েছিল। সেদিন তিনি আমার সাথে অযাচিত আচরণ শুরু করলে, এক পর্যায় আমি বাধ্য হই তাকে ধাক্কা দিয়ে সরাতে।”
তিনি আরও বলেন,
“এরপর আমি আর কথা না বাড়িয়ে সেখান থেকে বের হয়ে আসি। সেই ঘটনাটি আমার মনে গভীর দাগ কাটে। নিজের গোপনীয়তা রক্ষার্থে আমি এ নিয়ে আর কারো সাথে কোনো কথা বলিনি। কিন্তু সম্প্রতি অন্য নারীদের তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা শুনে আর চুপ থাকতে পারলাম না।”
অ্যাঞ্জেলিনা জোলি
অস্কারজয়ী অভিনেত্রী অ্যাঞ্জেলিনা জোলি সম্প্রতি নিউইয়র্ক টাইমস পত্রিকার এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন,
“প্রথমাবস্থায় তার সাথে কাজ করতে গিয়ে আমাকে খুবই অপ্রীতিকর অবস্থার মুখোমুখি হতে হয়েছিল। তাই পরে আমি তার কোনো সিনেমায় কাজ করিনি এবং যারা কাজ করেছে তাদেরকেও সতর্ক করেছি।”
তিনি আরও বলেন,
“পৃথিবীর যেকোনো দেশে, যেকোনো ক্ষেত্রে নারীদের প্রতি এ ধরনের আচরণ মোটেও গ্রহণযোগ্য নয়।”
গিনেথ প্যালট্রো
অভিনেত্রী প্যালট্রোর বয়স যখন ২২ বছর, তাকে এমা মুভিতে কাস্টিং করা হয়। ছবির শুটিং শুরুর আগে প্রযোজক ওয়াইনস্টিন তাকে পেনিনসুলা বেভারলি হিলসের এক হোটেল স্যুটে দেখা করতে বলেন। প্যালট্রো বলেন, তিনি সেখানে যাওয়ার পর ওয়াইনস্টিন তার গায়ে হাত দেন এবং তার সাথে বেডরুমে যেতে বলেন। প্যালট্রো নিউইয়র্ক টাইমসকে বলেন, “আমার বয়স তখন কম ছিল। স্বভাবতই আমার খুব ভয় করছিল।”
প্যালট্রো ঘটনাটির কথা তার সেই সময়কার বয়ফ্রেন্ড ব্র্যাড পিটকে জানান। পিট এ ব্যাপারে ওয়াইনস্টিনের সাথে কথা বলেন। ঠিক তার পরেই প্রযোজক তাকে বলেন, এ ব্যাপারে আর কারো সাথে যাতে তিনি টুঁ শব্দও না করেন।
কেট বেকিনসেল
কেট অভিযোগ করেছেন, তার বয়স যখন সতের, তখন তাকে ওয়াইনস্টিনের সাথে এক হোটেলে দেখা করার আমন্ত্রণ জানানো হয়। অভিনেত্রী ভেবেছিলেন তাদের মিটিং হোটেলের কনফারেন্সে রুমে অনুষ্ঠিত হবে, কিন্তু তাকে প্রযোজকের কক্ষে পাঠানো হয়। তিনি তার ইনস্টাগ্রামে লিখেছেন,
“হার্ভে মাতাল ও বাথরোব পরা অবস্থায় এসে দরজা খুলে দিলেন। আমি এতোটাই সরল মনে নিয়ে সেখানে গিয়েছিলাম যে, ঘুণাক্ষরেও চিন্তা করিনি, বিশ্রী চেহারার এই বয়স্ক লোকটি আশা করে বসে আছে যে, তার প্রতি আমার যৌন আকর্ষণ থাকবে।”
“তার সাথে বসে মদ্যপান করতে বললে, স্কুলের অজুহাত দেখিয়ে আমি অপ্রস্তুত কিন্তু অক্ষত অবস্থায় সেখান থেকে বের হয়ে আসি। এর কয়েক বছর পর তিনি আমাকে জিগ্যেস করেন, তিনি সেদিন আমার সাথে কোনো অসদাচরণ করেছেন নাকি। আমি বুঝতে পারলাম তার মনে নেই তিনি আমার সাথে কিছু করেছেন কিনা। তারপর বছরের পর বছর ওয়াইনস্টিন খুবই খারাপ ভাষায় আমাকে গালিগালাজ করেছেন এবং হুমকিধামকি দিয়েছেন।”
কারা ডেলেভিন
২৫ বছর বয়সী ব্রিটিশ অভিনেত্রী কারা ডেলেভিন তার অভিনয়জীবনে মোট দু’বার ওয়াইনস্টিনের দ্বারা হয়রানির শিকার হন। প্রথমবার প্রযোজক তাকে ফোনে ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে উদ্ভট ও বিব্রতকর প্রশ্ন করেন। পরের একটি চরিত্রের জন্যে কারাকে পরিচালক ও ওয়াইনস্টিনের সাথে হোটেলের লবিতে দেখা করতে হয়। কথাবার্তা শেষ করে পরিচালক চলে গেলে প্রযোজক তাকে আরও কিছুক্ষণ থাকতে বলেন। অভিনেত্রী টুইটারে তার বিবৃতিতে বলেছেন,
“হার্ভে আমাকে আরও কিছুক্ষণ তার সাথে গল্প করতে বলেন। হালকা আলাপচারিতার পর তিনি বেশ বড়াই করে আমাকে শোনাতে লাগলেন, এ পর্যন্ত তিনি কতজন অভিনেত্রীর সাথে রাত কাটিয়েছেন, কীভাবে তিনি তাদের ক্যারিয়ার গড়ে দিয়েছেন এবং আরও নানা ধরনের নোংরা কথা তারপর তিনি আমাকে তার হোটেল রুমে যাওয়ার জন্য আমন্ত্রণ করেন। আমি সাথে সাথেই মানা করে দিয়ে তার অ্যাসিস্টেন্টকে জিগ্যেস করি আমার গাড়ি এসেছে কিনা। সে আমাকে বলে, না, গাড়ি আসেনি এবং খুব শীঘ্রই আসবেও না; আমার উচিৎ হার্ভের কক্ষে যাওয়া। সেই মুহূর্তে ভেতরে ভেতরে আমার নিজেকে খুব অসহায় মনে হচ্ছিল। কিন্তু আমি সেটা বাইরে প্রকাশ করতে দিইনি। মনে মনে আশা করছিলাম, ঈশ্বর, আমার ধারণা যেন ভুল হয়!”
“আমি বাধ্য হয়ে তার রুমে গেলাম। রুমে ঢুকেই দেখি সেখানে আরেক মহিলা বসে আছেন। আমি মনে মনে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলি। কিন্তু এরপরই আমার ভুল ভাঙে। হার্ভে আমাদেরকে ইঙ্গিত করে নিজেদের চুমু খেতে বলেন। আমি দ্রুত উঠে দাঁড়িয়ে বললাম, দেখুন, আমার পক্ষে আর থাকা সম্ভব নয়, আমাকে যেতে হবে। তারপর তিনি আমাকে দরজা পর্যন্ত এগিয়ে দিলেন ঠিকই, কিন্তু পথ আগলে দাঁড়ালেন এবং আমাকে স্পর্শ করতে চাইলেন। আমি কোনোরকমে তাকে থামিয়ে প্রায় পালিয়ে আসি সেখান থেকে।”
লিয়া সিঁদো
ফরাসি অভিনেত্রী লিয়া গার্ডিয়ান পত্রিকায় লিখেছেন,
“তিনি আমাকে তার সাথে হোটেল রুমে যেতে বলেন। আমরা একসাথেই রুমে যাই। ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে তার প্রভাব প্রতিপত্তি এতোটাই বেশি যে, আমার সাহস হয়নি তাকে না বলার। সব মেয়েই তাকে খুব ভয় পেতো। কক্ষে পোঁছানোর পর তার অ্যাসিস্টেন্ট বের হয়ে যায়, তখন সেখানে আমি আর তিনি ছাড়া কেউ ছিল না। ঠিক তখনই উল্টাপাল্টা আচরণ শুরু করেন তিনি।”
লিয়া আরও অভিযোগ করেন,
“আমরা সোফায় বসে কথা বলছিলাম। হঠাৎ করেই তিনি আমার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে আমাকে চুমু খাওয়ার চেষ্টা করলেন। তার মতো মোটাসোটা মানুষের হাত থেকে রক্ষা পেতে আমাকে বেশ বেগ পেতে হয়েছিল। আমি বহু কষ্টে তাকে সরিয়ে রুম থেকে বের হয়ে আসি। আমি তার ভয়ে আতঙ্কিত ছিলাম। আমি জানতাম তার কিছু কুকর্মের কথা।”
হিথার গ্রাহাম
অভিনেত্রী হিথার ভ্যারাইটির কাছে লিখেছেন,
“হার্ভে ওয়াইনস্টিন আমাকে একদিন তার অফিসে দেখা করতে বললেন। তার টেবিলে সেদিন একগাদা স্ক্রিপ্ট রাখা ছিল। তিনি আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, আমি চাই এর মধ্যে থেকে একটি সিনেমায় তুমি অভিনয় কর। তোমার ইচ্ছামত যেকোনো একটি বেছে নাও। আমাদের মধ্যে সাধারণ কথাবার্তাই চলছিল। কিন্তু একপর্যায়ে তিনি বলে ওঠেন, শহরের বাইরে গেলে তিনি যার সাথে ইচ্ছা রাত কাটাতে পারেন, এই নিয়ে স্ত্রীর সাথে তার আপোষ হয়েছে। আমি অপ্রস্তুত অবস্থায় সেখান থেকে বের হয়ে আসি। যদিও তিনি সেভাবে স্পষ্ট করে কিছু বলেননি। কিন্তু আমি তো আর কচি খুকি নই। আমি তার কথার সারমর্ম পরিস্কার বুঝতে পারছিলাম। শুধুমাত্র আমি যদি তার সাথে ঘনিষ্ঠ হই, তবেই তিনি আমাকে তার সিনেমায় কাজ করতে দেবেন।”
“এর কয়েক সপ্তাহ পর তিনি আমাকে ফোন করে তার সাথে তার হোটেলে দেখা করতে বলেন। ফোন পাওয়ার পর আমি আমার এক সহকর্মীকে ব্যাপারটা জানাই। সে আমার সাথে হোটেলে যেতে রাজি হয়। কিন্তু পথিমধ্যে সে আমাকে ফোন করে জানায়, তার জরুরী কাজ পড়ে গেছে, তাই সে আসতে পারবে না। আমি নিজেও একা যেতে চাইছিলাম না, তাই আমি হার্ভেকে ফোন দিয়ে বললাম, দেখুন আমার পক্ষে আসা সম্ভব নয়, আমার কাল সকালে কাজ পড়ে গেছে। হার্ভে আমাকে বললেন, কী বলছ এসব, হতাশ করলে তুমি আমাকে। তোমার বান্ধবী আর আমি তোমার জন্যে অপেক্ষা করে বসেছিলাম। আমি জানতাম তিনি মিথ্যা কথা বলছেন, তাই আমি দুঃখ প্রকাশ করে বললাম, আমি আসতে পারবো না।”
অ্যাঞ্জি ইভহার্ট
অভিনেত্রী ও সুইমস্যুট মডেল অ্যাঞ্জি ইভহার্ট টিএমজেডকে বলেন, ওয়াইনস্টিনের সাথে এক প্রমোদতরীতে থাকাকালীন, প্রযোজক নাকি জোরপূর্বক তার কক্ষে ঢুকে দরজা আগলে রাখেন এবং তার সামনেই স্বমেহন করতে শুরু করেন। অ্যাঞ্জির জবানীতে,
“আমি আমার এক বন্ধুর নৌকোয় ছিলাম। হার্ভে এলেন, হেঁটে এসে আমার সামনে দাঁড়ালেন, প্যান্ট খুলে কারসাজি করে তা মেঝে পর্যন্ত গড়ালেন, আশা করি বুঝতে পারছেন কী বলতে চাইছি। তারপর প্যান্ট ঠিকঠাক করে বললেন- তুমি সত্যিই দারুণ একটি মেয়ে। খবরদার এই ব্যাপারে কাউকে কিছু বোলো না। তারপর রুম থেকে বের হয়ে গেলেন।”
ইভহার্ট আরও যোগ করেন, তিনি তার চারপাশের মানুষকে এই ব্যাপারে অভিযোগ করলে জবাবে তারা তেমন কোনো প্রতিক্রিয়া দেখায়নি। তিনি বলেন, “নৌকায় উপস্থিত কয়েকজনকে আমি ঘটনার কথা বললাম। সবাই ঠোট উল্টিয়ে বলল, হার্ভে এমনই।”
এরিকা রোজেনবাম
ওয়াইনস্টিনের অত্যাচার থেকে মুক্তি পাননি কানাডিয়ান অভিনেত্রী এরিকা রোজেনবামও। সিবিসির সাথে এক সাক্ষাৎকারে অভিনেত্রী মোট তিনটি ঘটনার কথা উল্লেখ করে বলেন, ওয়াইনস্টেন তিনবারই তার সাথে অসদাচরণ করেছেন। প্রথমবার ওয়াইনস্টিন তাকে এক হোটেলরুমে ডেকে নিয়ে শরীর ম্যাসাজ করে দিতে বলেন। পরেরবার অফিসে ডেকে নিয়ে তার সাথে ঘনিষ্ঠ হওয়ার চেষ্টা করেন এবং তৃতীয়বার, টরন্টোর চলচিত্র উৎসবের সময় সেটা আরও ভয়াবহ রূপ নেয়।
অভিনেত্রী তার বিবৃতিতে জানিয়েছেন,
“তিনি আমাকে তার সাথে গোসলখানায় যেতে বললেন, আমি তাতে আপত্তি জানালে তিনি রাগান্বিত হয়ে পড়েন। আমি বাধ্য হয়ে তার সাথে খোলা বাথরুম পর্যন্ত এগোই। বাইরে থেকেই দেখা যাচ্ছিল তার টয়লেটের সিট এমনভাবে ভাঙা যেন কোনো দৈত্য সেটা থেঁতলে দিয়েছে। তিনি হঠাৎ পেছন থেকে আমার ঘাড় ধরে আমার মুখ আয়নায় চেপে ধরলেন এবং খুব আস্তে আস্তে আমাকে বললেন আমি শুধু তোমাকে একটু দেখতে চাই। বলেই তিনি আমার পেছনে দাঁড়িয়ে হস্তমৈথুন করতে শুরু করেন। আমি ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে দাঁড়িয়ে থাকি। আমার এক পা নড়ারও শক্তি ছিলো না। চিৎকার করতে যেয়েও আমার মুখ থেকে কোনো আওয়াজ বের হয়নি। আমার মাঝে এক অদ্ভুত অসহায়ত্ব কাজ করতে থাকে। সেদিন সেই জানোয়ারটা আমার পুরো ফায়দা নিতে সক্ষম হয়।”
মিনকা কেলি
“হার্ভের সাথে এক পার্টিতে আমার দেখা হয়েছিল। পরদিন আমার এজেন্ট জানায় হার্ভে আমার সাথে তার হোটেলরুমে দেখা করতে চান। গন্তব্যস্থল তার হোটেলরুম শুনে আমি বেঁকে বসি। আমি ওদিকে যেতে মোটেও স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছিলাম না। তাই আমি মানা করে দিলে সেদিনই এক সহকারী সহ তিনি আমার সাথে সেই হোটেলেরই রেঁস্তোরায় দেখা করেন। কিছুক্ষণ সিনেমা নিয়ে অপ্রয়োজনীয় কথাবার্তা বলার পর তিনি তার সহকারীকে একটু ঘুরে আসতে বলে আমাকে নানা ধরনের লোভনীয় অফার দিতে শুরু করেন, ব্যক্তিগত প্লেনে করে আমাকে নিয়ে নানা জায়গায় ঘুরে বেড়ানোর কথা বলেন। তবে শর্ত একটাই, আমাকে তার সাথে প্রেম করতে হবে।”
প্রযোজক ওয়াইনস্টিনের সাথে তার সাক্ষাতের ঘটনা স্মরণ করে ঠিক এই কথাগুলো অভিনেত্রী কেলি তার ইনস্টাগ্রামে লিখেছেন। তিনি এটাও বলেছেন যে, তিনি সেই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছিলেন।
টারা সাবকফ
৪৪ বছর বয়সী অভিনেত্রী টারা ভ্যারাইটির সাথে এক সাক্ষাৎকারে ওয়াইনস্টিনের সাথে তার অপ্রীতিকর ঘটনার কথা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, নব্বইয়ের দশকে এক প্রিমিয়ার পার্টিতে ওয়াইনস্টেন তাকে উত্যক্ত করেন। টারার ভাষ্যমতে,
“হার্ভে আমাকে ডাক দিয়ে কাছে ডাকলেন, আমি কাছে যেতেই তিনি আমাকে ধরে জোর করে তার নিজের কোলে বসিয়ে নিলেন। ব্যাপারটা এতই অদ্ভুত ছিল যে, আমি ভীষণ বিব্রত হয়ে হাসতে শুরু করি। একটু পর খেয়াল করলাম তিনি উত্তেজিত হয়ে পড়ছেন, আমি তখন হাসি থামিয়ে উঠে আসার চেষ্টা করি। একটু পর তিনি আমাকে বলেন তার সাথে বাইরে দেখা করতে এবং আরও কিছু কথা বলেন, যেগুলো আমার পক্ষে বলা সম্ভব না। তার কথায় পরোক্ষ আভাস ছিল যে, যদি আমি কথা না শুনি তাহলে আমাকে চরিত্রটি দেওয়া হবে না। আমি এতটাই বিব্রতবোধ করছিলাম যে, আমি তার কথা হেসে উড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করি। এরপরই আমি পার্টি থেকে চলে আসি।”
এই ঘটনাটি টারার অভিনয়জীবনে বিরূপ প্রভাব ফেলে বলে তিনি মনে করেন। তার মতে, “এক মিথ্যা গুজব আমার সব সুনাম নষ্ট করে দেয়। আমাকে নিয়ে নাকি সিনেমা বানানো খুবই কঠিন।”
রোজ ম্যাকগোয়ান
অভিনেত্রী রোজ ম্যাকগোয়ান তার টুইটারে এক স্টুডিও এক্সিকিউটিভকে ধর্ষণের অভিযোগ তুলেছেন। মিডিয়ার সবাই-ই নাকি সেই লম্পটের কথা জানে, কিন্তু ভয়ে মুখ খোলে না। যদিও রোজ পরিস্কার করে কারও নাম বলেননি। কিন্তু ১৯৯৭ সনের দিকে ওয়াইনস্টিনের সাথে তার ঝামেলা বেঁধেছিল, অবশ্য পরে সেটা মিটমাট হয়ে যায়। কিন্তু সম্প্রতি সবাই তার নাম অভিযোগ করার পর অভিনেত্রী রোজ টুইট করেছেন, “এখন কি মানুষ তাকে ধর্ষক ডাকবে?”
সম্প্রতি দ্য নিউইয়র্কারের সাথে সাক্ষাৎকারে ওয়াইনস্টিন মডেল অ্যামব্রা ব্যাটিলানা গুটিয়েরেজকে যৌন হয়রানির স্বীকারোক্তি দিয়েছিলেন। রোজ সেই ভিডিওটি আপলোড করেন এবং শিরোনামে লিখেন, “এখন চিন্তা করে দেখুন, এই অতিকায় দানবীয় মানুষটি যখন আপনার খুব কাছাকাছি অবস্থান করবে, তখন মুহূর্তের মধ্যে আপনার জীবনের পথ বদলে যাবে।”
হার্ভে ওয়াইনস্টিনের একাডেমি সদস্যপদ বাতিল
উপরে তুলে ধরা অভিনেত্রী সহ প্রায় ৩৮ জন নারী হার্ভে ওয়াইনস্টিনের বিরুদ্ধে একের পর এক ধর্ষণ, যৌন নিপীড়ন ও হয়রানির অভিযোগ তুলেছেন। তার হাত থেকে রেহাই পায়নি অল্পবয়সী অভিনেত্রী থেকে শুরু করে তার অফিসের নারী কর্মচারীরাও। কয়েক দশক ধরেই তিনি এসব জঘন্য কর্মকাণ্ড চালিয়ে আসছেন বলে অভিযোগ করা হয়েছে।
গত কয়েক সপ্তাহ ধরে তার বিরুদ্ধে একের পর এক অভিযোগ আলোচনায় আসার ফলে ‘দ্য বোর্ড অব ডিরেক্টরস অব দ্য একাডেমি অব মোশন পিকচার আর্টস এন্ড সায়েন্স’ তার সদস্যপদ বাতিল করেছে। তাদের বিবৃতিতে জানানো হয়েছে,
“তাকে এভাবে ভোটাভুটি করে বহিষ্কার করার কারণ কিন্তু এই না যে, সে তার সহকর্মীদের প্রাপ্য সম্মান দেখাতে পারেনি। বরং একটি বার্তা পাঠানোর জন্য যে, আমাদের ইন্ডাস্ট্রিতে যৌন নিপীড়ন, কর্মক্ষেত্রে হয়রানি ও অন্যান্য কুকর্মের যুগ শেষ হয়ে গিয়েছে।”