১৬ ডিসেম্বর, ২০১২। রাত সাড়ে ৯টার দিকে ২৩ বছর বয়সী সাইকোথেরাপির ছাত্রী জ্যোতি সিং পাণ্ডে তার এক ছেলে বন্ধু অয়িন্দ্র প্রতাপ পাণ্ডের সাথে ‘লাইফ অফ পাই’ ছবিটি দেখে বাড়ি ফিরছিলেন। সেই ছবি, যেখানে দেখানো হয়েছিল পাই প্যাটেল নামক এক ব্যক্তির বেঁচে থাকার অদম্য লড়াইয়ের কাহিনী। সাইকোথেরাপির ছাত্রী হওয়ার সুবাদে এই ছবিটি নিশ্চয়ই জ্যোতির মনে দারুণ ছাপ ফেলেছিল। নিশ্চয়ই তিনি ছবিটি দেখে বেশ অনুপ্রাণিতও হয়েছিলেন। এবং অতি অবশ্যই, তিনি নিশ্চয়ই ঘুণাক্ষরেও জানতেন না যে, আর কিছুক্ষণ পর তাকেও নামতে হবে জীবনযুদ্ধের ভয়াবহ রণক্ষেত্রে, চেষ্টা করতে হবে খড়কুটো আঁকড়ে হলেও বেঁচে থাকার।
কিন্তু না, নিয়তি জ্যোতির জন্য সেরকমই কিছু লিখে রেখেছিল। বন্ধু অয়িন্দ্রকে সাথে নিয়ে তিনি দক্ষিণ দিল্লির মুনির্কায় দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছিলেন দ্বারকাগামী কোনো অটোরিকশার জন্য। এমন সময় একটি বাস এসে থামে তাদের সামনে। দ্বারকা যাওয়ার জন্য জ্যোতি ও অয়িন্দ্র উঠে পড়েন সেই বাসে। বাসে ওঠার পর তারা দেখেন, বাসে চালকসহ মাত্র ছয়জন আছে। তবে শুরুতে তারা কিছু সন্দেহ করেননি। কিন্তু কিছুক্ষণ বাদেই তারা খেয়াল করেন, বাসের সব বাতি নিভিয়ে দেয়া হয়েছে। আর বাসের গেটও খুব শক্ত করে আটকে দেয়া হয়েছে, যার অর্থ হলো, অন্য কোনো যাত্রীকে আর তোলা হবে না বাসে, এবং ভয়ংকর কিছু অপেক্ষা করে আছে তাদের সামনে!
এরপর জ্যোতি ও অয়িন্দ্রের সাথে বিবাদে জড়িয়ে পড়ে বাসের ছ’জন লোক। তারা আগে থেকেই মাতাল ছিল। পুলিশের ভাষ্যমতে, ওইদিন সন্ধ্যায়ই তারা এক ছুতারের কাছ থেকেও তার সব জিনিসপত্র ছিনিয়ে নিয়েছিল। জ্যোতি ও অয়িন্দ্রের সাথেও সম্ভবত তাদের কেবল ছিনতাইয়েরই উদ্দেশ্য ছিল। কিন্তু এক পর্যায়ে প্রচণ্ড হাতাহাতি শুরু হলে অয়িন্দ্রকে লোহার রড দিয়ে মারতে থাকে তারা। এরপর তারা জ্যোতিকে নিয়ে বাসের পেছনে চলে যায়, এবং সবাই মিলে তাকে দফায় দফায় ধর্ষণ করতে থাকে। কিন্তু জ্যোতি এত সহজে হাল ছাড়ার পাত্রী নন। তাই তিনি যথাসাধ্য চেষ্টা করতে থাকেন এই মানুষরূপী জন্তুদের বিরুদ্ধে লড়াই করার। তার এই পালটা লড়াইয়ে ক্ষিপ্ত হয়ে যায় ধর্ষকরা। ছয়জনের মধ্যে কিশোর বয়সী যে ছেলেটা, সে একটি এল-আকৃতির রোহার রড এনে জ্যোতির যোনিতে ঢুকিয়ে দিয়ে ভেতরের সবকিছু ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন করে দেয়।
প্রায় ঘণ্টাখানেক ধরে চলে জ্যোতির উপর তাদের এই পাশবিক অত্যাচার। শেষমেষ তারা ক্লান্ত হয়ে পড়লে, জ্যোতি ও অয়িন্দ্রের শরীর থেকে জামা-কাপড় ও অন্যান্য দামি জিনিসপত্র সবকিছু খুলে নিয়ে, নগ্ন অবস্থায় তাদেরকে চলন্ত বাস থেকে ছুঁড়ে ফেলে দেয় রাস্তায়। কিন্তু শুধু এটুকুতেই ক্ষান্ত দেয়নি তারা। বাস ঘুরিয়ে তারা আবার আহত জ্যোতি ও অয়িন্দ্রকে পিষে দিতেও চেয়েছিল। জ্যোতি অচেতন হয়ে পড়লেও, হুঁশ ছিল অয়িন্দ্রের। তিনি জ্যোতিকে সরিয়ে দিয়ে নিজেও রাস্তার বাইরে গড়িয়ে চলে যান।
খানিকক্ষণ পরে, স্থানীয় সময় রাত ১১টার দিকে এক পথচারী দুই তরুণ-তরুণীকে রাস্তার পাশে নগ্ন ও রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে দিল্লি পুলিশকে খবর দেন। খবর পেয়ে ছুটে আসে পুলিশ, তাদেরকে নিয়ে যায় নিকটস্থ সাফদারজাং হাসপাতালে। চিকিৎসকরা জানান, জ্যোতির শরীরের ভেতরে মাত্র পাঁচ শতাংশ অন্ত্র অবশিষ্ট রয়েছে, এবং যেকোনো সময়েই মৃত্যু হতে পারে তার। অপরদিকে অয়িন্দ্র মোটামুটি অক্ষতই ছিলেন। তার কেবল পাঁজর ভেঙে গিয়েছিল।
জ্যোতির যা হয়
দিল্লি পুলিশ প্রাথমিকভাবে চেষ্টা করেছিল ভয়াবহ এই গণধর্ষণের খবর যেন মিডিয়ার কানে না পৌঁছায়। কিন্তু গন্ধ শুঁকে শুঁকে ঠিকই হাজির হয়ে যায় মিডিয়া। তবে ভারতে যৌন নিপীড়নের শিকার নারীদের গোপনীয়তা আইনের কারণে, মিডিয়া জ্যোতির প্রকৃত নাম প্রকাশ করতে পারেনি। ফলে দেশব্যাপী তিনি পরিচিত হয়ে ওঠেন ‘নির্ভয়া’ (ভয়হীন) নামে। টানা ১৩দিন মৃত্যুর সাথে লড়াই করেন তিনি। শেষ পর্যন্ত আর পেরে ওঠেননি। ২৯ ডিসেম্বর সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে চিকিৎসারত অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। তবে মৃত্যুর আগে ১৬, ২১ ও ২৫ ডিসেম্বর, মোট তিনদিন ইশারা, অঙ্গভঙ্গি ও বহুনির্বাচনী প্রশ্নের উত্তরের মাধ্যমে জবানবন্দি দিয়ে গিয়েছিলেন, যা পরবর্তীতে মামলায় বিচারকার্যে সন্দেহভাজন আসামীদের বিরুদ্ধে কাজে লাগানো হয়।
জ্যোতির মৃত্যুর পর তার মা আশা দেবী দাবি করেন, তার মেয়ের নাম যেন প্রকাশ করা হয়। কারণ তিনি তার মেয়ের নাম প্রকাশে একেবারেই লজ্জিত বা বিব্রত নন, এবং তিনি মনে করেন ধর্ষণে শিকার নারী ও তাদের পরিবার কোনোভাবেই এসব অপরাধের জন্য দায়ী নয় যে লজ্জায় তাদের মাথা কাটা যাবে। আশা দেবীর বক্তব্যকে সম্মান জানিয়েই, এই লেখায়ও শুরু থেকেই জ্যোতিকে নির্ভয়া (যে নামে তিনি সর্বাধিক পরিচিত) নামে উল্লেখ না করে, তার প্রকৃত নাম ব্যবহার করা হচ্ছে।
যেভাবে দিল্লি পুলিশ শুরু করেছিল তদন্ত
জ্যোতি ও অয়িন্দ্রকে ১৬ ডিসেম্বর মধ্যরাতের আগেই হাসপাতালে নিয়ে যায় পুলিশ। এবং সেদিন মধ্যরাত থেকেই সন্দেহভাজনদের খোঁজে কাজ শুরু করে দেয় আইপিএস ছায়া শর্মার নেতৃত্বে কাজ শুরু করে দেয় বিশেষ একটি তদন্তকারী দল। পরদিন, ১৭ ডিসেম্বর অয়িন্দ্র একটি এফআইআর (ফার্স্ট ইনফরমেশন রিপোর্ট) দায়ের করেন বসন্ত বিহার পুলিশ স্টেশনে, যার মাধ্যমে আনুষ্ঠানিক তদন্ত শুরু হয়।
দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য অধিকাংশ দেশের মতো ভারতেও ধর্ষণের মামলার ক্ষেত্রে পুলিশ অযাচিত কালক্ষেপণ করলেও, জ্যোতির মামলাটির বেলায় তারা ছিল একেবারেই ব্যতিক্রম। বিশেষ করে আইপিএস ছায়া শর্মা মামলাটিকে খুবই ব্যক্তিগতভাবে নিয়ে নেন। তাই শুরু থেকেই তিনি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত কাজ চালাতে থাকেন। অপরাধ সংগঠিত হওয়ার ২৪ ঘণ্টারও কম সময়ের মধ্যে তার নেতৃত্বাধীন তদন্তকারী দলটি সিসিটিভি হাইওয়ে ক্যামেরা ব্যবহার করে মামলার প্রধান সন্দেহভাজন (তখন পর্যন্ত দোষী প্রমাণিত না হওয়ায় এই শব্দটি ব্যবহৃত হচ্ছে), চালক রাম সিংকে শনাক্ত করে ফেলে। যেই বাসটিতে অপরাধ সংগঠিত হয়েছিল, সেই বাসেই তাকে খুঁজে পাওয়া যায়, এবং তৎক্ষণাৎ তাকে গ্রেফতার করা হয়।
অয়িন্দ্রের দেয়া বর্ণনা অনুযায়ী, বাকি পাঁচজন সন্দেহভাজন আসামীর স্কেচ তৈরি করা হয়। পাশাপাশি জ্যোতি ও অয়িন্দ্রের চুরি যাওয়া ফোন থেকে পাঠানো মেসেজের মাধ্যমেও তাদের অবস্থান চিহ্নিত করতে সক্ষম হয় পুলিশ। সে অনুযায়ী মাত্র কয়েকদিনের মধ্যেই বাকি পাঁচ সন্দেহভাজন- মুকেশ সিং, পবন গুপ্ত, অক্ষয় ঠাকুর, বিনয় শর্মা এবং ১৭ বছরের এক কিশোরকে গ্রেফতার করা হয়। পাঁচ সন্দেহভাজন ছাড়াও পুলিশ আক্রান্ত দুই ব্যক্তির রক্তাক্ত কাপড় এবং লোহার রডটিও উদ্ধার করে।
সাধারণ মানুষের প্রতিক্রিয়া
ভারতে প্রতিদিন তো অসংখ্য ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। কিন্তু জ্যোতির ধর্ষণের ঘটনাটি ছিল একদমই অন্যরকম। রাজধানী শহরে মধ্যরাতেরও অনেক আগে, রাস্তায় চলন্ত বাসের ভেতর একজন তরুণীকে এমন নারকীয়ভাবে ধর্ষণ করে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেয়া হতে পারে, এ ছিল সাধারণ মানুষের কল্পনারও বাইরে। তাই তো জাতিসংঘ ও অন্যান্য বহুজাতিক সংস্থাগুলোর নারী বিষয়ক সংগঠন, ভারতের সুশীল সমাজ, সাধারণ মানুষ এবং বিশেষ করে তরুণ সমাজ ক্ষোভে ফেটে পড়ে। সবচেয়ে বড় বিক্ষোভটি হয়েছিল ২১ ডিসেম্বর, যেদিন হাজার হাজার নারী-পুরুষ সমবেত হয় ইন্ডিয়া গেট ও রাইসিনা হিলে, জ্যোতির সাথে হওয়া নির্মমতার ন্যায়বিচারের দাবিতে।
ছয় ধর্ষকের পরিণতি
ছয় ধর্ষকের মধ্যে একজন ছিল অপ্রাপ্তবয়স্ক (১৭ বছর)। তার বিরুদ্ধে হত্যা ও ধর্ষণের অভিযোগ আনা হয়, কিন্তু ‘মাইনর’ হওয়ার কারণে তার মাত্রা তিন বছরের কারাদণ্ড হয়। ২০১৫ সালে সে জেল থেকে ছাড়া পায়। তার নাম-পরিচয় কখনোই দিল্লি পুলিশ বা আদালতের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করা হয়নি। বরাবরই তাকে উল্লেখ করা হয়েছে ‘এক্স’ নামে।
অপরদিকে বাসচালক রাম সিং ২০১৩ সালের মার্চে তিহার জেলে আত্মহত্যা করে। তবে অনেকেরই ধারণা, আসলে সে আত্মহত্যা করেনি, বরং জেলের অন্যান্য কয়েদিরা তাকে খুন করেছিল।
দিল্লি মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটের কোর্টে বাকি চার ধর্ষকের দ্রুত শুনানি অনুষ্ঠত হয়। তাদের বিরুদ্ধে ধর্ষণ, অপহরণ, হত্যা ও প্রমাণ নষ্টের অভিযোগ আনা হয়। ২০১৩ সালের সেপ্টেম্বরে তাদেরকে মৃত্যুদণ্ডের রায় দেয়া হয়। ভারতের সাজা হিসেবে মৃত্যুদণ্ড প্রদান বিরলতম একটি ঘটনা। এ থেকেই বোঝা যায়, আদালত জ্যোতির সাথে হওয়া ঘটনাটিকে বর্বরতম অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করেছিল।
এরপর ২০১৭ সালে সুপ্রিম কোর্টে অক্ষয় ঠাকুর বাদে বাকি তিন আসামী তাদের শেষ সুযোগ হিসেবে ক্ষমাপ্রার্থনা করেছিল। কিন্তু ২০১৮ সালের ৯ জুলাই তাদের মৃত্যুদণ্ডের রায় বহাল রাখা হয়। ২০১৯ সালের ১৮ ডিসেম্বর অক্ষয় কুমারের মৃত্যুদণ্ড পুনর্বিবেচনার আর্জি খারিজ করা হয়। ২০২০ সালের ৭ জানুয়ারি পাতিয়ালা হাউজ কোর্ট রায় দেয়, ২২ জানুয়ারি ফাঁসিতে ঝোলানো হবে চার অপরাধীকে। কিন্তু সেটিও শেষ পর্যন্ত হয়নি। ১৭ জানুয়ারি বিনয় ও মুকেশের রায় সংশোধনের আর্জি খারিজ হয় সুপ্রিম কোর্টে, এবং ফাঁসির নতুন দিন ধার্য হয় ১ ফেব্রুয়ারি, ২০২০। এরপর আবার নতুন নতুন আর্জির জেরে ফাঁসির জন্য নির্ধারিত দিন পিছিয়ে প্রথমে হয় ২ মার্চ, এবং তারপর আবার পিছিয়ে হয় ২০ মার্চ। শেষ পর্যন্ত ২০ মার্চ ভোর ৫টা ৩০-এ, অপরাধের সাত বছর তিন মাস চার দিন পর, দিল্লির তিহার জেলে ফাঁসিকাষ্ঠে ঝোলানো হয় চার প্রাপ্তবয়স্ক অপরাধীকে।
যেভাবে জ্যোতির গণধর্ষণ পাল্টে দিয়েছে ভারতের ধর্ষণ আইন
জ্যোতির সাথে হওয়া নির্মমতা যে পরিমাণ মিডিয়া কাভারেজ পেয়েছিল, এবং সাধারণ মানুষ যেভাবে ক্ষোভে ফেটে পড়ে রাস্তায় নেমে এসেছিল, তা রীতিমতো নাড়িয়ে দিয়েছিল তৎকালীন মনমোহন সিং নেতৃত্বাধীন সরকারের ভিত। ভারতের সাবেক বিচারপতি জে এস ভার্মার নেতৃত্বে একটি জুডিশিয়াল কমিটি গঠন করা হয়েছিল, যাদের দায়িত্ব ছিল ধর্ষণের মামলার আইন আরো কঠোর ও নিখুঁত করে তোলা। সে অনুযায়ী এখন ভারতে ধর্ষণের মামলায় দ্রুততম বিচারের ব্যবস্থা করা হয়েছে, এবং কোনো নারীকে অনুসরণ, অন্যের যৌনক্রিয়া লুকিয়ে দর্শন কিংবা উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে কোনো নারীকে স্পর্শ করাও অপরাধ হিসেবে তালিকাভুক্ত হয়েছে।
২০১৩ সালে ভারতের তৎকালীন বাণিজ্য মন্ত্রী ঘোষণা দেন ‘নির্ভয়া ফান্ড’ গড়ে তোলার, যেটির মূল লক্ষ্য হবে নারীদের নিরাপত্তা, সুরক্ষা ও অর্থনৈতিক স্বাবলম্বিতার জন্য তহবিল সৃষ্টি।
আর সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, ২০১৩ সালের মার্চে ভারতের লোকসভা ও রাজ্যসভা ইন্ডিয়ান পেনাল কোড, ইন্ডিয়ান এভিডেন্স অ্যাক্ট এবং কোড অফ ক্রিমিনাল প্রসিডিউরে ‘দ্য ক্রিমিনাল ল (অ্যামেন্ডমেন্ট) অ্যাক্ট, ২০১৩’ পাস করে, যেটি অনেকক্ষেত্রে ‘নির্ভয়া অ্যাক্ট’ হিসেবেও বিবেচিত হয়। এই সংস্কারকৃত আইন অনুযায়ী, যেকোনো যৌন নিগ্রহকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়। এছাড়া সাধারণ ধর্ষণের জন্য ২০ বছরের কারাদণ্ড, আর ধর্ষণ মাত্রাতিরিক্ত হলে মৃত্যুদণ্ড প্রদানের আইন করা করা।
শেষ কথা
২০১২ সালে জ্যোতির গণধর্ষণের ঘটনাটি গোটা বিশ্বব্যাপী যেভাবে আলোড়িত ও আলোচিত হয়েছিল, তা নারীদের নিরাপত্তার ক্ষেত্রে ভারতের ভাবমূর্তি অনেকটাই নষ্ট করে দিয়েছে। দিল্লিকে তো এখন অনেকেই ধর্ষণের রাজধানী হিসেবে চিহ্নিত করে। তবে ইতিবাচক দিকটি হলো, জ্যোতির গণধর্ষণের পর ভারতের মানুষ ধর্ষণের বিষয়ে অনেক বেশি সচেতন হয়ে গেছে। ইতিপূর্বে অধিকাংশ ধর্ষণের ঘটনাতেই পুলিশের কাছে মামলা দায়ের করা হতো না। কিন্তু এখন ধর্ষণবিরোধী আইন জোরদার করার ফলে, অনেকেই ভাবতে শুরু করেছে যে পুলিশের দ্বারস্থ হলে হয়তো ন্যায়বিচার পাওয়া গেলেও যেতে পারে, আর তাই ধর্ষণের অভিযোগে দায়েরকৃত মামলার সংখ্যা এখন অতীতের তুলনায় অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে।
শুরুতে জ্যোতির বাবা-মা বিচারপ্রক্রিয়া নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করলেও, একটা পর্যায়ে তাদেরও ধৈর্যচ্যুতি ঘটে, এবং বারবার রায় কার্যকরের দিনক্ষণ পাল্টানোকে তারা আইনের দুর্বলতা হিসেবে আখ্যায়িত করেন। প্রতি বছর ১২ ডিসেম্বর ভারতের তারকা থেকে শুরু করে শীর্ষস্থানীয় রাজনীতিবিদ, সকলেই নির্ভয়া তথা জ্যোতির কথা সশ্রদ্ধচিত্তে স্মরণ করেন বটে, কিন্তু আরো হাজারটা ইস্যুর ভিড়ে বছরের অন্যান্য সময়ে জ্যোতির কথা কারোই তেমন একটা মনে থাকে না। অবশ্য ২০১৯ সালে জ্যোতির ধর্ষণ পরবর্তী পুলিশি তদন্তের উপর ভিত্তি করে নির্মিত নেটফ্লিক্স অরিজিনাল সিরিজ ‘দিল্লি ক্রাইম’-এর বদৌলতে নতুন করে পাদপ্রদীপের আলোয় আসে ২০১২ সালে সংগঠিত গণধর্ষণের এ ঘটনাটি।
চমৎকার সব বিষয়ে রোর বাংলায় লিখতে আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন এই লিঙ্কে: roar.media/contribute/