১০ মে, ১৯১৯। ফ্রান্সের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল।
আজকের এ দিনটা একটু অন্যরকম সুন্দর। কেননা, একজন মার্কিন যোদ্ধা, কার্ল হোয়ে, যিনি তার স্নেহময়ী মাকে লিখতে বসেছেন ছোট্ট একটি চিঠি। চিঠিটি পাঠানো হবে ডাকযোগে। পাঠানোও হয়েছিল সেদিন, কিন্তু কথার ফুলঝুড়ি দিয়ে সাজানো সে চিঠিখানা পৌঁছেছে তার ঠিক ১০০ বছর পর!
কোথায় ছিল এতদিন সে চিঠি? এ বিষয়ে কেউ কিছু বলতে না পারলেও সম্প্রতি অনলাইন কেনাকাটার প্লাটফর্ম ‘ই-বে’তে চিঠিটি নজর কাড়ে একদল গবেষকের। শত বছরের পুরনো সে চিঠিখানা পড়তে আগ্রহী হয়ে ওঠেন তারা। সঙ্গে সঙ্গে কিনে নেন ১৫০ ডলারের বিনিময়ে।
গবেষক দলের প্রধান রই ম্যানডেল জীর্ণশীর্ণ খাম থেকে অতি সাবধানে বের করেন চিঠিখানা। পড়ে বুঝতে পারেন, মাকে উদ্দেশ্য করে খুবই চমৎকার ভাষায় লেখা হয়েছে এটি। তখনই আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন তিনি। সিদ্ধান্ত নেন, যে করেই হোক চিঠিখানা পৌঁছে দেবেন গন্তব্যে। অতঃপর, হোয়ের নামের সূত্র ধরে নেমে পড়েন তার পরিবারের খোঁজে।
বহুদিনের প্রচেষ্টার পর অবশেষে একসময় তারা খুঁজে পান হোয়ের পরিবারের সন্ধান। জানতে পারেন, যে মাকে উদ্দেশ্য করে তিনি চিঠিটি লিখেছিলেন, সেই মা মারা গেছেন বহুবছর আগেই। ফলে, এখন পরিবারে আছে কেবল হোয়ের মেয়ে ও একমাত্র নাতনি জ্যান বেলিস স্কুইরেস।
আরও জানতে পারেন, যুদ্ধ থেকে একদিন হোয়েও ফিরে এসেছিলেন। বিয়ে করে সাজিয়েছিলেন ছোট্ট একটি সংসার। কিছুদিন পর তাদের সংসার আলো করে আসে ফুটফুটে এক কন্যাসন্তান। কিন্তু, ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে ভয়ংকর এক দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হন হোয়ে। মারা যান বিয়ের অল্প কিছুদিনের ভেতরেই। উত্তরসূরি হিসেবে রেখে যান কেবল ছয় বছরের ছোট্ট মেয়েকে। হোয়ের মৃত্যুর সময় যে মেয়েটির বয়স ছিল মাত্র ছয় বছর, তিনি এখন অশীতিপর বৃদ্ধা। চিঠির খামের উপর লেখা পুরনো ঠিকানা ছেড়ে একসময় তারা চলে আসেন যুক্তরাষ্ট্রের ওরেগন অঙ্গরাজ্যের বেভারটন শহরের বাসায়।
২০২৩ সালের এপ্রিলে অনেক জল্পনা-কল্পনা ও বাধা-বিপত্তি পেরিয়ে গবেষকদল চিঠিটি হস্তান্তর করেন হোয়ের নাতনি জ্যান বেলিস স্কুইরেসের হাতে। চিঠিটি পেয়ে স্কুইরেসের চোখের কোণে আকিঁবুকিঁ কাটে আনন্দাশ্রু। হোয়ের মেয়েও ভেঙে পড়েন কান্নায়। স্কুইরেসের মনে হয়, যেন ভিন্ন কোনো পৃথিবী থেকে নানা তাদের পাঠিয়েছেন আশ্চর্য এই উপহার। আর তাই গবেষকদলের প্রতি শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতায় মাথা অবনত হয়ে আসে তার। গবেষকরাও অবশেষে চিঠিটি তার আপন গন্তব্যে পৌঁছাতে পেরে পরম আনন্দ উপলব্ধি করেন।