মোহাম্মদ বিন সালমানের নেতৃত্বে বদলে যাওয়া সৌদি পররাষ্ট্রনীতি

আরব উপদ্বীপে সৌদি আরবের জন্ম অটোমান সাম্রাজ্যের একটি প্রদেশ হতে। শেখ মোহাম্মদ ইবনে আবদুল ওয়াহাব এর আদর্শিক নেতৃত্ব ও ইবনে সৌদের সামরিক ও রাজনৈতিক নেতৃত্বে গঠিত হয় প্রথম সৌদি রাষ্ট্র। পরবর্তীতে দ্বিতীয় সৌদি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা হলেও তা টেকেনি, ১৯৩২ সালে এসে প্রতিষ্ঠিত হয় আধুনিক সৌদি রাষ্ট্র। অটোমান সাম্রাজ্যের পতনের পর মুসলিম বিশ্বের ধর্মীয় গুরুত্বপূর্ণ দুটি শহরের দায়িত্ব চলে যায় সৌদি আরবের হাতে। মধ্যপ্রাচ্যে ব্রিটিশ উপনিবেশে পরিণত হলে ব্রিটিশরা সৌদি আরবে তেলসম্পদ অনুসন্ধান শুরু করে। কিন্তু  ১৯৩৩ সালে ইরাক পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনের পরিবর্তে সেই কাজের দায়িত্ব বর্তায় ক্যালিফোর্নিয়া স্ট্যান্ডার্ড অয়েল কোম্পানির উপর, পরবর্তীতে ১৯৪৪ সালে যার নাম হয় অ্যারাবিয়ান অ্যামেরিকান অয়েল কোম্পানি বা ARAMCO । ১৯৫০ সালে বাদশাহ আবদুল-আজিজ তেল জাতীয়করণ করার পর সৌদি আরবের তেল রাজস্ব বাড়তে থাকে, বাড়তে থাকে সৌদি আরবের রাজনীতি, পররাষ্ট্রনীতিতে তেলের প্রভাব। একসময় সৌদি পররাষ্ট্রনীতি বলতেই শুধু তেল বাণিজ্যকেই বোঝাত।

গত শতাব্দীর পঞ্চাশের দশক থেকে শেষ দশক পর্যন্ত সৌদি আরবের পররাষ্ট্রনীতির গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল  আরব জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের উত্থানের মুখে সৌদি রাষ্ট্রের অখণ্ডতা রক্ষা ও গোত্রীয় শাসন বজায় রাখার চ্যালেঞ্জ, ফিলিস্তিন ইস্যুতে আরব তথা মুসলিম বিশ্বের সাথে ও নিরাপত্তার স্বার্থে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সম্পর্কের ব্যালেন্স করা, ইরানের উত্থানের ফলে সৌদি অভ্যন্তরীণ শিয়া-সুন্নি দ্বন্ধের ঘনীভূতকরণ, ইরানের আক্রমণের ভয় ইত্যাদি। তাছাড়া বাদশাহ ফয়সাল ক্ষমতায় আসার পর তিনিই প্রথম সৌদি আরবে পাশ্চাত্যের ন্যায় আধুনিকায়ন করেন। আধুনিকায়ন সৌদি আরবের অভ্যন্তরীণ সমস্যার তৈরি করে, বিরূপ মনোভাব তৈরি করে ওলামাদের সাথে।

মানচিত্রে আধুনিক সৌদি আরব; Image source: iStock

১৯৬৭ সালের আরব-ইসরায়েল যুদ্ধের পর আরব জাতীয়তাবাদী আন্দোলন স্তিমিত হয়ে গেলে সৌদি আরবের চিন্তার বোঝা একটু হালকা হয়। আবার এই যুদ্ধ সৌদি শাসকদের ফেলে দোটানায়। একদিকে আরববিশ্ব, অন্যদিকে সৌদি আরবের অন্যতম কৌশলগত মিত্র যুক্তরাষ্ট্র দাঁড়ায় ইসরায়েলের পক্ষে। সৌদি আরবের পক্ষে যুদ্ধে কোনো পক্ষ সমর্থন তার জন্য ক্ষতিকর। কিন্তু বাদশাহ ফয়সাল কাউকে সমর্থন না দিয়ে আরব বিশ্বে প্রচুর অর্থসাহায্য পাঠিয়ে দিলেন। রক্ষা পেলো দুই কূলই। এভাবে সৌদি আরব আরববিশ্ব ও যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সম্পর্ক রক্ষা করে চলছিল, আরববিশ্বও তাদের গোত্রীয় শাসন টিকিয়ে রাখতে সৌদি আরবের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সম্পর্ক রক্ষা করতে পেরে খুশি ছিল। আবার ১৯৮৮ সালে ইরাক-ইরান যুদ্ধের সমাপ্তি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইরানবিরোধী অবস্থান সৌদি আরবকে ইরানের ভয় কিছুটা হলেও কমিয়ে দেয়।

একবিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে ২০০১ সালের টুইন টাওয়ার হামলার ফলে বিশ্বব্যাপী সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, সেখানে সৌদি আরব যোগ দেয়। টুইন টাওয়ারে হামলার পরিকল্পনাকারীদের অধিকাংশই ছিল সৌদি নাগরিক, দায় আসে সৌদি আরব ও ওয়াহাবিজম আদর্শের। সৌদি সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অংশ নেয়, প্রিন্স সালমান সংস্কার নিয়ে আসেন ওয়াহাবিজমের। আরব বসন্তের গণতন্ত্রের হাওয়া যখন মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে বইছে, সৌদি আরবে তার কিছু প্রভাব আসলেও বলা যায় অপ্রভাবিতই থাকে দেশটি। পরবর্তীতে সংস্কার আনা হয় দেশটিতে।

২০১০ সাল থেকে শুরু হয় সৌদি আরবের পররাষ্ট্রনীতির ভিন্ন পথে যাত্রা। সৌদি আরবের ৮০ বছরের বেশি কৌশলগত মিত্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তেল উৎপাদন শুরু করে। স্বভাবতই তেলের জন্য সৌদি আরবের উপর আগের মতো নির্ভরশীল থাকেনি যুক্তরাষ্ট্র। আরব বসন্তে ওবামা প্রশাসন গণতন্ত্রের আন্দোলনকে সমর্থন করে। ২০১৫ সালে ইরানের সাথে যুক্তরাষ্ট্র নিউক্লিয়ার চুক্তি স্বাক্ষর করে ইরানের উপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়। ২০১৬ সালে ট্রাম্প প্রশাসন প্রিন্স সালমানের জন্য সুবিধাজনক ছিল, ট্রাম্প খাশোগী হত্যার জন্য দায়ী এমবিএস-কে আড়াল করেন। কিন্তু বাইডেন প্রশাসন আসার পর সৌদি-আমেরিকা সম্পর্ক তিক্ত হতে শুরু করে, এমবিএসের সমালোচনা করেন খাশোগী হত্যায়। হুতি বিদ্রোহীদের যে অস্ত্র দিয়ে আক্রমণ চালান এমবিএস, সেই অস্ত্র দেয়া বন্ধ করে দেয়ার কথা বলে আমেরিকা। ২০১৭ সালে ট্রাম্পের সফরের পর কাতারের উপর আন্তর্জাতিক অবরোধ দিলেও তা তেমন প্রভাব ফেলতে পারেনি।

ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাথে এমবিএস; Image source: Middle East Eye

অর্থাৎ একদিকে সৌদি আরবে প্রতিবেশী আরব দেশগুলোর সাথে বৈরী সম্পর্ক যেমন বাড়ছে, তেমনই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সম্পর্ক হচ্ছে দুর্বল। চীনের সাথে বাড়ছে বাণিজ্যিক সম্পর্ক। রাশিয়া তেলের বাজারে প্রভাব রাখায় সৌদি আরবের তাদের সাথে সুসম্পর্ক রাখা জরুরি, নয়তো সৌদির তেলের বাজার হুমকির মুখে পড়বে। এমন পরিস্থিতিতে প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান ব্যতিক্রম পররাষ্ট্রনীতি হাতে নেন। শুরুতে এমবিএস ইয়েমেনে যুদ্ধ বন্ধের দিকে না গিয়ে আরও বৃদ্ধি করেন। তার পররাষ্ট্রনীতি ইরান, ইরাক, তুরস্ক, কাতার, ইয়েমেন ও লেবাননের সাথে বৈরী সম্পর্ক তৈরি করে। একের পর এক ভুল সিদ্ধান্তের পাশাপাশি এমবিএস মিত্র বাছাইয়েও করেন ভুল। এই ভুলগুলো থেকে তিনি শিক্ষা নেন, সৌদি পররাষ্ট্রনীতিতে ইউ-টার্ন নিয়ে আসেন। সম্পর্কোন্নয়ন করেন প্রতিবেশী আরব রাষ্ট্রগুলোর সাথে, অর্থনীতির পাশাপাশি সামরিক অস্ত্র কিনছেন চীন থেকে, কমিয়ে আনছেন পেট্রোডলারের আধিপত্য। স্থানীয় প্রতিবেশী রাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক সুপার-পাওয়ারদের সাথে সৌদি আরবের বর্তমান সম্পর্ক বিশ্লেষণ করলে এমবিএসের পররাষ্ট্রনীতি বুঝতে সহজ হবে।

ইরান

পাহলভী বংশের পতন হলে ইরানে সফল ‘ইসলামি বিপ্লব’ বা ‘ইরানি বিপ্লব’ শিয়া মতাদর্শী সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়, যার ফলে মধ্যপ্রাচ্যের সুন্নি আরব দেশসমূহের মধ্যে আন্দোলনের প্রভাব ছড়িয়ে পড়ার ভয় জন্ম নেয়। ভয় হয় ইরানের আক্রমণের। কিন্তু মার্কিন সহায়তায় সাদ্দাম হোসেন ইরান আক্রমণ করেন। মার্কিনীদের ইরান বিরোধিতা ইরান-আমেরিকা দ্বন্দ্ব চরমে তোলে। সৌদি আরব ইরানের বিপ্লবের ছোঁয়ায় প্রভাবিত হয়, বাড়ে অভ্যন্তরীণ শিয়া-সুন্নী দ্বন্দ্ব, পাশাপাশি রয়েছে ইরানের আক্রমণের ভয়। সৌদি আরব-ইরান জড়ায় বিভিন্ন প্রক্সি যুদ্ধে। ইরান সৌদি তেলক্ষেত্রে আক্রমণ চালায়। মার্কিন নিরাপত্তা আক্রমণ রুখতে ব্যর্থ হওয়ায় মার্কিন-সৌদি সম্পর্কের চিড় ধরে। এমনও হয়েছে যে প্রিন্স সালমান ইরানের সর্বোচ্চ নেতাকে হিটলারের সাথে তুলনা দেন। ২০১৬ সালে দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন হয়। গত কয়েক বছর ধরে সৌদি আরব ইরানের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার চিন্তা শুরু করে। ফলস্বরূপ, ২০২২ সালের ১০ ডিসেম্বর চীনের মধ্যস্থতায় সৌদি-ইরান কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনরায় স্থাপনের কথা ঘোষণা দেয়। উভয় দেশ ২০ বছর আগে স্বাক্ষরিত  নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক সহযোগিতার চুক্তি বাস্তবায়নে অঙ্গীকারাবদ্ধ হয়।

বাশার আল আসাদ সৌদি আরব সফরকালীন এমবিএসের সাথে বৈঠক করেন; Image source: BBC

সিরিয়া

সৌদি আরব ও সিরিয়ার সম্পর্কের উত্থান-পতন হলেও ২০১১ সালে সিরিয়ার গৃহযুদ্ধের সময় সৌদি আরব আসাদ সরকারবিরোধী অবস্থান নেয়। অপরদিকে ইরান আসাদ সরকারকে অস্ত্র দিয়ে পাশে দাঁড়ায়। সিরিয়ান ডেমোক্রেটিক ফোর্সকে সৌদি আরব তখন থেকেই আসাদের বিরুদ্ধে সমর্থন দিয়ে আসছিল। সিরিয়ার আরব লীগের সদস্যপদও কেড়ে নেয়া হয়। সৌদি আরব বলে আসছিল সিরিয়া যদি ইরানের প্রভাব কমিয়ে আনে, ইরানকে তার দেশের থেকে দূরে সরিয়ে দেয়, তবে তার সাথে সম্পর্ক পুনরায় প্রতিষ্ঠার কথা ভাববে। অবশেষে, প্রিন্স সালমানের অংকের ফলাফল কষে দেখেন সিরিয়ায় সংঘাতে জড়িয়ে সৌদি আরবের লাভ নয়, বরং ক্ষতি হচ্ছে বেশি। সিরিয়ার সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক করেন এমবিএস। সম্প্রতি আসাদ সৌদি আরবে সফর করেন।

ইয়েমেন ও হুতি বিদ্রোহী

নিরাপত্তা ও রাষ্ট্রীয় স্থিতিশীলতার নাম করে সৌদি আরব ২০১৫ সাল থেকে ইয়েমেনে যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে। প্রিন্স সালমানের আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে উত্থান এর মধ্য দিয়েই। এমবিএস প্রতিরক্ষা মন্ত্রী থাকাবস্থায় মাত্রা আরও বৃদ্ধি করেন। বাইডেন প্রশাসন আসার পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র হুতিদের আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী সংগঠন তকমা উঠিয়ে নিয়ে সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণ ও যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দেন। কিন্তু সৌদি আরব হুতিদের উপর আক্রমণ বাড়িয়ে দেয়। হুতি বিদ্রোহীদের ইরান সমর্থন দেয়। ইরানের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক হওয়ার ফলে ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীদের সাথেও যুদ্ধবিরতি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।

সৌদি আরব ও ওমানি কর্মকর্তাদের সাথে হুতি নেতাদের বৈঠক। হচ্ছে যুদ্ধবিরতি চুক্তির মেয়াদ বৃদ্ধি; Image source: CGTN

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র

৯/১১ এর ঘটনার পরও বুশ প্রশাসন সৌদি আরবকে তাদের সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অংশ করে। সম্পর্কের চিড় ধরা শুরু হয় ওবামা প্রশাসনের সময় থেকে। আমেরিকায় তেল আবিষ্কারে ব্যাপক উন্নতি, ওবামা প্রশাসনের আরব বসন্তে গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে সমর্থন সৌদি-আমেরিকা সম্পর্কে ফাটল ধরায়। দুই মেয়াদ পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট হন ডোনাল্ড ট্রাম্প। ট্রাম্প ও তার জামাতার সাথে এমবিএসের ব্যক্তিগত সম্পর্কের দরুন ট্রাম্পের প্রশাসনের সাথে সম্পর্ক ভালো হয়। কিন্তু অচিরেই বিকেল গড়িয়ে নামে সন্ধ্যা, আমেরিকায় পরবর্তী নির্বাচনে জয়ী হয়ে আসেন ডেমোক্রেটিক দলের জো বাইডেন।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ২০২১ সালে  ইয়েমেনে হামলার জন্য সৌদি আরবকে কোনো প্রকার সমর্থন দেয়া বন্ধ ঘোষণা করেন এবং খাশোগী হত্যার জন্য সমালোচনা করেন, যা স্পষ্টত দু’পক্ষের সম্পর্কের অবনতি ঘটায়। ইউক্রেনে যুদ্ধের ফলে তেলের বাজারে স্থিতিশীলতা আনতে বাইডেন ২% তেল উৎপাদন বাড়ানোর কথা বলেন, সৌদি আরব বরং ২% কমিয়ে দেয় যা রাশিয়ার জন্য খোশখবর। এর দ্বারা এমবিএস বলতে চান, আমরা যেমন আমেরিকার সিদ্ধান্তে নাক গলাই না, তাদেরও তা করা উচিত না। আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে চিরস্থায়ী বন্ধু বলে কিছু নেই, এমবিএস তাই মার্কিনীদের উপর নির্ভরশীল না থেকে চীনের সাথে সুসম্পর্ক গড়ে তোলেন।

চীন, রাশিয়া

তেলের বাজারে রাশিয়া বড় অংশ দখল করে আছে। সৌদি আরবের তেলের বাজারে নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখতে হলে রাশিয়াকে সাথে রাখতেই হয়। রাশিয়া যদি বেশি তেল উৎপাদন করে কম দামে বিক্রি করে, তাহলে সৌদি আরব সংকটে পড়বে। তাই রাশিয়াকে নিয়ে গড়ে উঠেছে ওপেক প্লাস। চীন মধ্যপ্রাচ্যের বাণিজ্যের অন্যতম অংশীদার হয় দুই বছর আগে। এমবিএস চাচ্ছেন মধ্যপ্রাচ্যকে আগামীর ইউরোপ বানিয়ে তুলতে, নিয়েছেন ভিশন ২০৩০। তিনি চাচ্ছেন শুধু তেলের উপর নির্ভর না করে অর্থনীতিতে বৈচিত্র্য নিয়ে আসতে, যাতে চীনের সহযোগিতা প্রয়োজন। অস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জাম কেনার পাশাপাশি চীনের সাথে সম্পর্ক তৈরি করলে অর্থনীতিতে অনেক এগিয়ে যেতে পারবে সৌদি আরব।  
চীনা মধ্যস্থতায় পূর্ণপ্রতিষ্ঠা হচ্ছে ইরান-সৌদি কূটনৈতিক সম্পর্ক; Image source: Atalayar
সৌদি আরব ১ ট্রিলিয়ন খরচ করে মেগা সিটি বানাচ্ছে, যেখানে থাকবে 5G নেটওয়ার্ক ব্যবস্থা, পাওয়ার গ্রিড,  এয়ার কন্ডিশনিং ইত্যাদি। এগুলোর জন্য বর্তমানে সৌদি আরবকে চীনের দ্বারস্থ হতে হতোই। তাছাড়া সৌদি আরব চাচ্ছে এই মরুর বুকে রেল সংযোগ তৈরি করতে, যেখানে চীনের রয়েছে সবচেয়ে বেশি দক্ষতা। চীন হয়ে উঠেছে সৌদি আরবের তেলের বড় সবচেয়ে বড় ক্রেতা। বাণিজ্যিক সুবিধার পাশাপাশি এমবিএস সামরিক সুবিধাও পাবেন চীন থেকে। চীনের মধ্যস্থতায় সৌদি আরব মধ্যপ্রাচ্যের প্রতিবেশীর সাথে সম্পর্ক উন্নয়নও করেছে। চীনের সাথে সম্পর্ক এমবিএসের দক্ষ ও বাস্তবিক পররাষ্ট্রনীতির প্রমাণ। 

ইসরায়েল-ফিলিস্তিন ইস্যু

এমবিএস আসার পর সৌদি আরব সম্পর্ক উন্নয়ন করেছে ইসরায়েলের সাথে, গড়ে তুলেছে কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক। সংযুক্ত আরব আমিরাত, সুদান, বাহরাইন, মরক্কো ইত্যাদি দেশ ইসরায়েলকে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার দাবী অমীমাংসিত রেখেই স্বীকৃতি দিলেও সৌদি আরব দেয়নি। কিন্তু এমবিএস সম্প্রতি বলেন, তিনি ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দেবেন যদি আমেরিকা সৌদি আরবকে নিউক্লিয়ার ওয়েপন দেয়। তিনি স্বীকৃতির সঠিক ব্যবহার করবেন এখন। পবিত্র দুই গুরুত্বপূর্ণ স্থানের রক্ষক হয়ে সৌদি বাদশাহ ও সৌদি আরব মুসলিম বিশ্বে নেতৃত্ব বজায় রাখলেও ফিলিস্তিন ইস্যুতে এমবিএস মুসলিম বিশ্বে জনপ্রিয়তা হারাচ্ছেন। তুরস্ক সেই জায়গা নিচ্ছে। কিন্তু সৌদি আরব বর্তমানে তুরস্কের সাথেও সম্পর্কোন্নয়নে নজর দিচ্ছে। সম্প্রতি প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান সৌদি আরবে সফর করেন। ইসরায়েল-ফিলিস্তিন ইস্যুতেও এমবিএসের বাস্তবিক পররাষ্ট্রনীতি লক্ষণীয়।

তাছাড়া সৌদি আরব অন্যান্য আরব রাষ্ট্রের সাথে সম্পর্কোন্নয়ন করছে। সময়ের সাথে সাথে আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে শত্রু-মিত্র বদলায়। এমবিএস শুরুতে এসে বুঝতে না পারলেও বর্তমানে তিনি বেশ সচেতন, নিয়েছেন সময়ের সাথে বাস্তবিক ও প্রায়োগিক পররাষ্ট্রনীতি। তার এই পররাষ্ট্রনীতিতে সর্বোচ্চ গুরুত্ব পাচ্ছে সৌদি আরবের স্বার্থ, যা উদাহরণ হতে পারে পৃথিবীর অন্যান্য দেশের রাষ্ট্রনায়কদের জন্য।

This article is written in Bangla. It is about the current foreign policy of Crown Prince Mohammad Bin Salman, the de facto ruler of Saudi Arabia.
All the references are hyperlinked inside text.
Feature Image: The Australian

Related Articles

Exit mobile version