১.
“অভিনন্দন, মিস্টার আলি! আপনার একটি ফুটফুটে কন্যাসন্তান হয়েছে।”
“বাস্টার্ড!”
ঠিক এমনটিই ছিল জন্মের পর নিজের বাবার কাছ থেকে পাওয়া তার অভ্যর্থনা। তবে নিজের জন্মের ঠিক পরমুহূর্তের এই কাহিনী তাকে যতটা না দুঃখভারাক্রান্ত করে, তার চেয়ে বেশি তাকে উদ্বিগ্ন করে তোলে আরেকটি চিন্তা। যদি তখনকার দিনেও সন্তান গর্ভে থাকাকালীনই জানা যেত সন্তানটি ছেলে নাকি মেয়ে, এবং তার বাবা-মাও জানতে পারত পর পর দুটি মেয়ের পর তাদের তৃতীয় সন্তানটিও মেয়ে হতে চলেছে, তাহলে তারা কি আদৌ তাকে পৃথিবীতে আনত?
২.
তখন তার বয়স পাঁচ বছর। বাংলাদেশে বেড়াতে এসেছে তারা। সবার অলক্ষ্যে এক নিকটাত্মীয় ঝাঁপিয়ে পড়ল তার উপর। তার ছোট্ট শরীরের উপর চলল পাশবিক নির্যাতন। পাঁচ বছরের বাচ্চা মেয়ের পক্ষে বোঝা অসম্ভব ঠিক কী হচ্ছে তার সাথে। শুধু এটুকু সে বুঝতে পারল, যা হচ্ছে তা একদমই ঠিক না। খুব বাজে কিছু হচ্ছে। একদম বিভীষিকাময় কিছু একটা।
সেদিনের সেই দুঃসহ স্মৃতি তাকে তাড়া করে বেড়াল তার গোটা শৈশব জুড়ে। সবসময় আতঙ্কের মধ্যে থাকে সে। তীব্র অবসাদ। সবকিছুতে অনীহা। আত্মবিশ্বাসের অভাব। এরপর একদিন স্কুলের বায়োলজি ক্লাসে সে যৌনতা সম্পর্কে জানতে পারল। তারপর খুব সহজেই দুইয়ে দুইয়ে চার মিলিয়ে ফেলল।
সেই উপলব্ধি খুব সহজ কোনো ব্যাপার ছিল না তার জন্য। ল্যাবরেটরিতে সবার সামনেই হড়হড় করে বমি করে দিল সে।
৩.
কিশোরী মেয়েটি এখন জানে, পাঁচ বছর বয়সে তার সাথে কী হয়েছিল। কিন্তু আগেও যেমন সে এই কথা পরিবারের কাউকে বলতে পারেনি, এখনো পারল না। শুধু স্কুলে নিজের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ বান্ধবীকে খুলে বলল গোটা ঘটনাটা। দেখা গেল, ওই বান্ধবীর সাথেও একই রকম ঘটনা ঘটেছে।
সে বুঝতে পারল, পৃথিবীটা খুব খারাপ। বিশেষ করে তার মতো বাচ্চা মেয়েদের জন্য।
৪.
তার বয়স তখন দশ বছর। সবে একটি ক্লাস শেষ হয়েছে। এবার লাঞ্চ বিরতি। লাঞ্চ করতে যাবে সে। পোর্টাক্যাবিনগুলোর মাঝখানে একটি খালি জায়গায় আসতেই সে আবিষ্কার করল কয়েকজন দাঁড়িয়ে আছে তার অপেক্ষায়। তাকে দেখামাত্রই বিভিন্ন কটু কথা বলতে শুরু করল তারা।
প্রায়ই এমন অভিজ্ঞতা হয় তার। তার চেহারা নিয়ে, গায়ের রঙ নিয়ে, শরীর নিয়ে আজেবাজে কথা বলে সবাই। তাই এগুলো অনেকটাই সয়ে গেছে। সে এক টিচারের কাছে গিয়ে বলল, “মিস, আমাকে বুলি করা হচ্ছে।”
“ওদেরকে ইগনোর করো, দেখবে ওরা চলে গেছে।”
ইগনোর সে করল ঠিকই, কিন্তু তারা চলে গেল না।
লাঞ্চের পর ওই একই জায়গা দিয়ে যখন সে ফিরছে, একজন তাকে স্বাগত জানাল তার ‘পৌরুষ প্রদর্শনের’ মাধ্যমে। ট্রাউজারের ফাঁক দিয়ে বাইরে বের করা শিশ্নটা যেন তার জন্যই অপেক্ষা করে ছিল। তাকে দেখামাত্রই শক্ত হয়ে গেল সেটি।
“তাকা এটার দিকে!” ছেলেটি নির্দেশ দিল তাকে। লজ্জিত ও বিব্রত অবস্থায় সে অন্যদিকে তাকাল।
“তুই কুচ্ছিত!”
“তুই জঘন্য!”
“কালো কুত্তি কোথাকার!”
এগুলো বলতে বলতেই তার চুল আঁকড়ে ধরল ছেলেটি। ভাগ্যিস তার চুলগুলো তখন ছোট ছোট করে কাটা ছিল। তাই খুব বেশি আঘাত পেতে হলো না তাকে। তবে যেটুকু পেল, তা তার মাথা থেকে রক্ত বের করে দেয়ার জন্য যথেষ্ট ছিল।
এবার সবগুলো ছেলে মিলে তাকে ধরে তার হাতটা পোর্টাক্যাবিনের দরজার মাঝে ঢুকিয়ে দিল। সে লড়াইয়ের কোনো চেষ্টাই করল না। কারণ সে জানে, পারবে না। সপ্তাহখানেক আগে যখন তারা তাকে ছেলেদের টয়লেটে নিয়ে গিয়ে তার মাথা চুবিয়ে ধরেছিল কমোডের পানির ভিতর, তখন সে নিজেকে ছাড়ানোর আপ্রাণ করেছিল। তা না পারলেও, এটুকু অন্তত সে বুঝে গিয়েছিল যে ওরা তার তুলনায় অনেক বেশি শক্তিশালী। তার ভালো লাগুক বা না লাগুক, তারা সেটি করবেই, যা তারা চায়।
তারা পরপর তিনবার দরজা দিয়ে তার আঙ্গুলে আঘাত করল। আঙ্গুলগুলো একদম থেতলে গেল। আর তারা “কুচ্ছিত কালো কুত্তি” বলতে বলতে ওই স্থান ত্যাগ করল।
কাঁদতে লাগল সে। প্রচণ্ড ব্যথা লাগছে তার। আঙ্গুলে। শরীরে। মনে। সব জায়গায়।
৫.
স্কুল থেকে ফিরে নিজের বিছানার পাশে বসল সে। কিছুদিন আগে টিভিতে আত্মহত্যার কথা জেনেছিল সে। তখনই তার মনে হয়েছিল, জীবনের সব দুঃখ থেকে মুক্তিলাভের এটিই বোধহয় সবচেয়ে ভালো উপায়।
মৃত্যু কেমন, সে ব্যাপারে কোনো ধারণাই নেই তার। শুধু সে জানে, মৃত্যু মানে জীবনের সমাপ্তি। নিজের জীবনটাকে সে খুবই ঘৃণা করে। তাই এই জীবন আর না রাখাই তার একমাত্র উদ্দেশ্য। আর সে উদ্দেশ্যে ওষুধও কিনে এনেছে সে। তার পকেটভর্তি ট্যাবলেট।
একটি ট্যাবলেট মুখে পুরল সে। গেলার চেষ্টা করল। কিন্তু শুকনো অবস্থায় ওষুধ গেলা খুবই কষ্টকর। তার পুরো মুখই তিতকুটে স্বাদে ছেয়ে গেল।
“নাহ, এভাবে হবে না, পানি লাগবে,” নিজেকে বলল সে। পানি আনতে নিচতলায় নামল। লিভিংরুম পেরোনোর সময় দেখল, তার মাকে ঘিরে রয়েছে সকলে। সকলের চোখেমুখে উত্তেজনা। “ব্যাপারটা কী!” খানিকক্ষণের মধ্যেই রহস্যের উন্মোচন হলো। তার মা সন্তানসম্ভবা। তাদের আরেকটি ভাই বা বোন হবে!
অনাগত ভাই বা বোনকে না দেখে তো জীবনকে বিদায় বলা যায় না। তাই মৃত্যুর দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গিয়েও সাময়িকভাবে আত্মহত্যার সিদ্ধান্তে ইস্তফা দিল সে।
৬.
৬ আগস্ট, ১৯৯৫। তার জীবনের খুবই স্মরণীয় একটি দিন। এই দিনই পৃথিবীতে আগমন ঘটে তার ছোট ভাইটির। অবসান হয় তার দীর্ঘ প্রতীক্ষার।
ছোট ভাইকে কোলে তুলে নিল সে। ছোট ছোট হাত, ছোট ছোট পা। কোনো মানবসন্তান যে এত সুন্দর হতে পারে তা তার কল্পনাতেই ছিল না। নিজের জীবনের পাশাপাশি মানুষের ব্যাপারেও তার মনে খুব বাড়াবাড়ি রকমের বিতৃষ্ণা ছিল। ছোট ভাইয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে সেই বিতৃষ্ণা দূর হলো। সব মানুষ তো আর খারাপ হতে পারে না। এরকম নিরীহ, নিষ্পাপ মানুষও তো হয়, যাদেরকে কখনো কোনো পঙ্কিলতা স্পর্শ করেনি।
“আমি কোথাও যেতে পারব না। আমার থাকতে হবে ওর জন্য। ওর আমাকে প্রয়োজন হবে।”
এভাবেই আত্মহত্যার পরিকল্পনাকে পুরোপুরি বাতিল ঘোষণা করল সে। শুরু হলো এক নতুন জীবন।
প্রিয় পাঠক, এতক্ষণ যার কথা জানলেন, তিনি কোনো গল্প-উপন্যাসের কাল্পনিক চরিত্র নন। যে ঘটনাগুলোর অবতারণা করলাম, সেগুলোও মনগড়া কিছু নয়। বাস্তবেই এই ঘটনাগুলো ঘটেছে ব্রিটেনে বসবাসরত, বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত নাদিয়া হুসাইনের সাথে।
এর বাইরেও নাদিয়ার আরো বড় পরিচয় আছে। তা-ও আবার একটি নয়, একাধিক। ২০১৫ সালে তিনি বিবিসিতে প্রচারিত ‘গ্রেট ব্রিটিশ বেক অফ’-এর ষষ্ঠ আসরের বিজয়ী হন। এরপর থেকে তিনি বিবিসিতে প্রামাণ্যচিত্র দ্য ক্রনিকলস অফ নাদিয়া, এবং রান্নার অনুষ্ঠান নাদিয়া’স ব্রিটিশ ফুড অ্যাডভেঞ্চার, নাদিয়া’স ফ্যামিলি ফেভারিটস, এবং দ্য বিগ ফ্যামিলি কুকিং শো-ডাউন অনুষ্ঠানগুলো উপস্থাপনা করে আসছেন। এছাড়া তিনি নিয়মিত কন্ট্রিবিউটর হিসেবে কাজ করছেন বিবিসির জনপ্রিয় অনুষ্ঠান দ্য ওয়ান শো-তেও।
লেখক হিসেবেও অল্প সময়েই দারুণ জনপ্রিয়তা পেয়েছেন নাদিয়া। দ্য টাইমস ম্যাগাজিনে নিয়মিত কলাম লেখেন তিনি। চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন পেঙ্গুইন র্যান্ডম হাউজ, হোডার চিলড্রেন’স বুকস, এবং হার্লিকুইনের মতো প্রকাশনা সংস্থাগুলোর সাথেও।
তবে নাদিয়া মূলত বিশ্বব্যাপী পরিচিতি লাভ করেন ২০১৬ সালে রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথের জন্মদিন উপলক্ষ্যে কেক তৈরির আমন্ত্রণ লাভের মাধ্যমে। সেই সুবাদে তিনি ডেব্রেট কর্তৃক নির্বাচিত হন যুক্তরাজ্যের সবচেয়ে প্রভাবশালী ৫০০ ব্যক্তির অন্যতম হিসেবে। বিবিসি নিউজের হানড্রেড উইম্যান লিস্টেও ছিলেন তিনি। আর এভাবেই তিনি ব্রিটেনে বসবাসরত হিজাব পরিহিতা মুসলিম নারীদের রোল মডেলে পরিণত হয়েছেন।
শিশুসাহিত্য এবং রন্ধন বিষয়ক বই লিখে হাত পাকানোর পর ৩৪ বছর বয়সী নাদিয়া নিজের জীবনের টুকরো টুকরো স্মৃতির সমন্বয়ে রচনা করেছেন আত্মকথা ‘ফাইন্ডিং মাই ভয়েস’ বইটি, যা ১৭ অক্টোবর প্রকাশিত হয়েছে। এই বইয়ে নিজের জীবনের নানা অজানা দিক তুলে ধরেছেন তিনি, যার মধ্যে রয়েছে পাঁচ বছর বয়সে যৌন নিপীড়নের শিকার হওয়া, কৃষ্ণাঙ্গ হওয়ায় স্কুলে নিয়মিত বুলিং এর শিকার হওয়া, দশ বছর বয়সে আত্মহত্যার প্রচেষ্টা এবং কয়েক দশক পোস্ট ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিজঅর্ডারে ভোগার মতো বিষয়গুলো।
দীর্ঘদিন নাদিয়া নিজের মাঝে চেপে রেখেছিলেন এগুলো। যেমন- যৌন নিগ্রহের বিষয়টিও তিনি তার বোনদেরকে জানিয়েছেন মাত্র অল্প কিছুদিন আগে। কিন্তু এখন নিজে তিন সন্তানের জননী হিসেবে তিনি জানেন, এই বিষয়গুলো অন্যদের সাথে ভাগ করে নেয়া কতটা জরুরি। আর সে কারণেই তিনি বই রচনার মাধ্যমে নিজের কাহিনী সবাইকে জানানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, যেন তার মতো অন্যরাও এগিয়ে আসতে পারে, এবং পরবর্তী প্রজন্মকেও এ ধরনের অভিজ্ঞতা নিজের মনে লুকিয়ে রেখে মানসিক সমস্যায় ভুগতে না হয়।
“এই বিষয়গুলো নিয়ে আমাদের কথা বলা জরুরি। কেননা আমরা এগুলো নিয়ে যতটা কথা বলি, বাস্তবে হয়তো এই ঘটনাগুলো আরো অনেক বেশি হয়ে থাকে। যদি আমার সন্তানদের সাথে কখনো এমন হতো, আমি বলতেও চাই না আমি কী করতাম। আমার কিছু বলার ভাষা নেই।”
তবে আরেকটি চিন্তার বিষয় হলো, এই বইটি পড়ার পর তার বাবা-মায়ের প্রতিক্রিয়া কেমন হবে। তারা বইটির কিছু অংশ ইতিমধ্যেই পড়েছেন, কিন্তু পুরোটা পড়া হয়নি। বইটি আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশিত হওয়ার পর হয়তো তারা পড়বেন বইটি, এবং অনেক অংশই তাদের জন্য খুবই অস্বস্তিকর হবে। অবশ্য সেটিকে সময়ের উপরই ছেড়ে দিতে চান নাদিয়া।
২০১৫ সালে গ্রেট ব্রিটিশ বেক অফে জয়ী হওয়ার আগ পর্যন্ত নাদিয়া ছিলেন মানসিকভাবে খুবই ভঙ্গুর ও আত্মবিশ্বাসহীন একজন নারী। কিন্তু এখন তিনি সম্পূর্ণ ব্যতিক্রমী একজন। ব্রিটেনে বসবাসরত মুসলিম নারীদের কাছে তিনি স্বনির্ভরতার প্রতীক। তাকে দেখেই অনুপ্রেরণা পাচ্ছে সেখানকার অনেক মুসলিম নারী, যারা মাত্র কয়েক বছর আগেও বড় কিছু করার স্বপ্ন দেখতে ভয় পেত। নাদিয়া নিজে কখনো ব্রিটিশ টেলিভিশনে হিজাব পরিহিতা মুসলিম নারীদের দেখেননি, তাই তার জীবনেও তেমন কোনো রোল মডেল ছিল না। কিন্তু তিনি জানেন, বর্তমানে অনেকেই তাকে দেখে সাহস পায়, নিজেদেরকে তার মতো করে গড়ে তুলতে চায়। আর শুধু ব্রিটেনের মুসলিম সম্প্রদায় কেন, সকল ধর্ম ও শ্রেণীর কাছ থেকেই তিনি শ্রদ্ধা পান।
তাই বলে তার উপর কটূক্তি যে একেবারে কমে গেছে, তা-ও কিন্তু নয়। টুইটারে তার সোয়া দুই লাখের মতো ফলোয়ার রয়েছে, এবং সেখানে তিনি প্রতিদিনই এক বা একাধিক লোকের কাছ থেকে বর্ণবিদ্বেষের শিকার হন। তাই নাদিয়া সহজেই উপলব্ধি করতে পারেন, তিনি একজন পাবলিক ফিগারে পরিণত হওয়ার পরও যদি এ ধরনের বিদ্বেষের সম্মুখীন হন, তাহলে আজও হয়তো অনেক কিশোরীকেই স্রেফ ধর্ম ও গায়ের রঙের কারণে লাঞ্চ বিরতিতে নিজ স্কুলের ছেলেদের দ্বারা হেনস্তা হতে হয়। এমন পরিস্থিতির অবসান চান তিনি, আর সেজন্যই তিনি নিজের জীবনের দুঃসহ স্মৃতি মানুষের সামনে তুলে ধরার সাহসী সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।।
আজ নাদিয়া যে একজন স্বাধীন, স্বনির্ভর ও সাহসী নারী, এর পেছনে বিশেষ অবদান রয়েছে তার স্বামী আবদালেরও। মাত্র ২০ বছর বয়সে আবদালের সাথে বিয়ে হয়েছিল তার। অ্যারেঞ্জড ম্যারেজ ছিল সেটি। বর্তমান সময়ে অধিকাংশ দম্পতি আগে একে অপরের প্রেমে পড়ে, তারপর তারা সারাজীবন একসাথে থাকার উদ্দেশ্যে বিয়ে করে। কিন্তু নাদিয়া ও আবদাল আগে বিয়ে করেছিলেন, এবং তারপর তাদের জীবনে প্রেমের ফুল ফুটেছে। নাদিয়াকে গ্রেট ব্রিটিশ বেক অফে অংশগ্রহণ থেকে শুরু করে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছেন আবদালই।
নাদিয়ার মানসিক সমস্যার বিষয়টিও খুব ভালো করেই বোঝেন আবদাল। এ বিষয়ে সবসময় খুব সচেতনও থাকেন। নাদিয়ার মেজাজ-মর্জি কখন কী রকম, তা বুঝে চলতে হয় তাকে। হয়তো তিনি নাদিয়াকে জিজ্ঞেস করেছেন, “তুমি ঠিক আছো তো?” নাদিয়াও স্বাভাবিকভাবেই বলেছেন, “হ্যাঁ, আমি ঠিক আছি।” কিন্তু তাতেও নিশ্চিত হতে পারেন না আবদাল। কারণ তিনি জানেন, বাহ্যিকভাবে স্বাভাবিক থাকার ভান করে থাকলেও অনেক সময়ই তার স্ত্রীর মনের ভিতর বিষাদের চোরাস্রোত বয়ে যেতে থাকে। তাই শুধু কথার মাধ্যমে নয়, প্রতিমুহূর্তেই সকল ইন্দ্রিয় প্রয়োগের মাধ্যমে স্ত্রীর প্রকৃত মন বুঝতে হয় তাকে।
“আমার খারাপ লাগে তার জন্য। সবসময়ই তাকে আমার অনুভূতির ব্যাপারে দ্বিতীয় অনুমান করতে হয়। কিন্তু এটিকে সে জীবনের অংশ হিসেবেই মেনে নিয়েছে।”
নিজে যেহেতু অ্যারেঞ্জড ম্যারেজের মাধ্যমেই অসাধারণ একজন জীবনসঙ্গী খুঁজে পেয়েছেন এবং দাম্পত্য জীবনে সুখী হয়েছেন, তাহলে নিজের সন্তানদের জীবনসঙ্গীও কি তিনি ও তার স্বামী নিজেরাই ঠিক করবেন? নাদিয়ার সোজাসাপটা উত্তর, “কক্ষনো না। আমার আরো অনেক জরুরি কাজ আছে।”
বিশ্বের চমৎকার সব বিষয়ে রোর বাংলায় লিখতে আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন এই লিঙ্কেঃ roar.media/contribute/