বর্তমান যুবসমাজকে শারীরিক ও মানসিকভাবে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিচ্ছে যে ব্যাপারগুলো, তাদের মধ্যে পর্নোগ্রাফি অন্যতম। সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হলো, পর্নোগ্রাফি হাল আমলের কোনো বস্তু নয়। মানব সভ্যতার সূচনালগ্ন থেকে, বিশেষত যখন থেকে মানুষ শিল্প-সাহিত্যে তাদের মনের ভাব প্রকাশের যোগ্যতা অর্জন করেছে, তখন থেকে মানব শরীরের প্রতি নিজেদের আকর্ষণকে তারা ব্যক্ত করার চেষ্টা করে এসেছে। আর এভাবেই জন্ম হয়েছে পর্নোগ্রাফির।
কিন্তু তারপরও পর্নোগ্রাফির ইতিহাস ও বিবর্তনকে খুব সহজে বিশ্লেষণ করা সম্ভব নয়। এর কারণ হলো, পর্নোগ্রাফিকে এখনো সুনির্দিষ্ট কোনো সংজ্ঞায় সংজ্ঞায়িত করা যায়নি। আভিধানিকভাবে পর্নোগ্রাফি (pornography) শব্দটি এসেছে গ্রিক porni (prostitute) ও graphein (to write) থেকে। অর্থাৎ শব্দের উদ্ভবের দিক থেকে পর্নোগ্রাফি বলতে বোঝায় সেসব শিল্প বা সাহিত্যকে, যাতে পতিতাদের জীবনাচার তুলে ধরা হয়। তবে প্রচলিত অর্থে পর্নোগ্রাফি হলো বই, ছবি, মূর্তি, ভাস্কর্য, ভিডিও কিংবা অন্যান্য মাধ্যমে যৌনক্রিয়া বা নগ্নতার প্রতিফলন, যেগুলোর লক্ষ্য থাকে দর্শকদের মধ্যে যৌন উন্মাদনা জাগিয়ে তোলা। যেহেতু পর্নোগ্রাফির মূল ভিত্তি হলো নগ্নতা, তাই চলুন নগ্নতাকে মূল সূচক ধরে মানবসভ্যতার ইতিহাসে পর্নোগ্রাফির বিবর্তনের ইতিহাস জানা যাক।
পর্নোগ্রাফির প্রাচীন নিদর্শন
অতি প্রাচীনকালের গুহাচিত্রে নগ্নতার নিদর্শন পাওয়া যেতো। এছাড়াও দানিয়ুব নদীর তীরে পাথরের উপর খোদাইকৃত বিশালবক্ষা এক নারীর ভাস্কর্য পাওয়া গিয়েছিল প্রায় ২৫,০০০ বছর প্রাচীন। ভাস্কর্যটির নাম দ্য ভেনাস অফ উইলেনফোর্ড। প্রাচীন গ্রিক ও রোমানরা বিপরীতকামী, সমকামী ও গোষ্ঠীবদ্ধ যৌনতার অজস্র দৃষ্টান্ত রেখে গিয়েছেন। পেরুর মোচে সভ্যতায়ও মৃৎশিল্পের উপর যৌনক্রিয়ার চিত্র ফুটিয়ে তোলা হতো।
২০০৫ সালে নৃতাত্ত্বিকরা জার্মান শিকারী-সংগ্রাহকদের একটি পাথুরে ভাস্কর্য খুঁজে পান, যেখানে নারী-পুরুষের সঙ্গমের চিত্র খোদাই করা ছিল। ভাস্কর্যটির বয়স অন্তত৭,২০০ বছর। নৃতাত্ত্বিকরা এই ভাস্কর্যটি যে স্থানে পাওয়া গিয়েছে, সেটিকেই পৃথিবীর প্রাচীনতম পর্ন সাইট হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। খিস্টপূর্ব ৭৯ অব্দে মাউন্ট ভিসুভিয়াসের অগ্ন্যুৎপাতের ফলে রোমান শহর পম্পেই এবং হারকিউলানিয়াম লাভার নিচে চাপা পড়ে ধ্বংস হয়ে যায়। কালক্রমে শহর দুটির অবস্থান সবাই ভুলে গিয়েছিল; পরবর্তীতে অষ্টাদশ শতকে ঘটনাক্রমে শহরগুলো আবার খুঁজে পাওয়া যায়। এদের মধ্যে পম্পেই নগরীর ধ্বংসাবশেষ থেকে শত শত যৌনতা নির্ভর প্রাচীরচিত্র ও ভাস্কর্য উদ্ধার করা হয়।
ভারতবর্ষে পর্নোগ্রাফি
৯৫০ খ্রিস্টাব্দে ভারতের মধ্য প্রদেশের খাজুরাহোতে চান্দেলদের হাত ধরে মোট ৮৫টি মন্দিরের প্রথমটির নির্মাণকাজ শুরু হয়। দেয়ালে খোদাই করা যৌনক্রিয়া ও নগ্নতার ভাস্কর্যের কারণে মন্দিরগুলো খুবই জনপ্রিয়। এসকল ভাস্কর্যে বাৎস্যায়নের কামসূত্রকে অনুসরণ করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে ভারতের অধিবাসীদের কাছে এগুলো ধর্মীয়, পবিত্র সম্পদ হিসেবে বিবেচিত হলেও, উনিশ শতকের শুরুতে ইউরোপিয় পণ্ডিতরা যখন ভারতবর্ষে আসতে শুরু করেন, তারা খাজুরাহোর ভাস্কর্যসমূহকেও পর্নোগ্রাফির নিদর্শন হিসেবে অভিহিত করেন। তবে আদৌ এগুলো পর্নোগ্রাফি কিনা, এ নিয়ে এখনো বিতর্ক আছে।
ইউরোপে পর্নোগ্রাফি
১৫৫৭ খ্রিস্টাব্দে পোপ চতুর্থ পল রোমান ক্যাথলিক চার্চের প্রথম নিষিদ্ধ বইয়ের তালিকা তৈরি করেন। তালিকার ৫৫০টি বইয়ের অধিকাংশই নিষিদ্ধ ছিল ধর্মীয় কারণে অর্থাৎ যেসব বইতে ধর্ম বিষয়ক ক্যাথলিক মতবাদকে অস্বীকার করা হয়েছে। তবে তালিকায় কিছু এমন বইও ছিল, যেগুলো শুধুমাত্র মাত্রাতিরিক্ত যৌনতাকে উপজীব্য করে রচিত হয়েছিল। আবার এমন কিছু কিছু বইও ছিল সেই তালিকায়, বিশেষত জিওভান্নি বোকাচ্চিও রচিত বইগুলো, যেগুলোর বিরুদ্ধে একাধারে ধর্ম অবমাননা ও স্পষ্ট যৌনতা- উভয় অভিযোগই ছিল। ১৯৬৫ সালে পোপ ষষ্ঠ পল কর্তৃক বন্ধ হয়ে যাওয়ার আগ পর্যন্ত, ভ্যাটিকান নিয়মিতই লিব্রোরাম প্রোহিবিটোরাম বা নিষিদ্ধ বইয়ের তালিকা প্রকাশ করে এসেছে।
১৭৪৮ সালে জন ক্লিল্যান্ড যৌনতানির্ভর একটি বই বিতরণ শুরু করেন, যেটির শিরোনাম ছিল মেমোয়েরস অব উইমেন প্লেজার (Memoirs of a Woman of Pleasure)। পরবর্তীতে বইটি দ্য লাইফ অ্যান্ড অ্যাডভেঞ্চার অব মিস ফ্যানি হিল (The Life and Adventures of Miss Fanny Hill) শিরোনামে প্রকাশিত হয়। পরের বছরই ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ বইটি বাজেয়াপ্ত করে এবং ষাটের দশক পর্যন্ত বইটি যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেন দুই দেশেই নিষিদ্ধ ছিল। তারপরও সরকারের চোখ ফাঁকি দিয়ে নিয়মিতই বইটির পাইরেটেড কপি বাজারে পাওয়া গেছে।
১৮৫৭ সালে রবলে ডাংলিসনের Medical Lexicon: A Dictionary of Medical Science বইটির মাধ্যমে সর্বপ্রথম ইংরেজিতে পর্নোগ্রাফি টার্মটি ব্যবহৃত হয়। সেখানে টার্মটিকে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছিল এভাবে: “A description of prostitutes or of prostitution as a matter of public hygiene.” অর্থাৎ পর্নোগ্রাফি হলো যৌনকর্মী বা যৌনপল্লীর একটি রুপ যা সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্যের সাথে জড়িত। তবে ইতোমধ্যেই যেহেতু গ্রিক ও ফরাসি ভাষায় টার্মটি যৌনতানির্ভর শিল্প ও সাহিত্যকে ইঙ্গিত করতে ব্যবহৃত হতো, তাই ইংরেজিতেও সেই অর্থটিই কয়েক দশকের মধ্যে দারুণ জনপ্রিয়তা পায়।
১৮৬৫ সালে অলিম্পিয়া নামে একটি ছবি প্রকাশিত হয়। এটি ছিল মূলত প্যারিস স্যালনের একজন পতিতার পোর্ট্রেট। শিল্পী এডোয়ার্ড ম্যানেটস এ ছবিটি এঁকেছিলেন। ছবিটি নিয়ে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় বয়ে গিয়েছিল। তবে সেটি এর নগ্নতার জন্য নয়, বরং শিল্পী যেভাবে একজন পতিতাকে এখানে ‘অনারীসুলভ ভঙ্গিতে’ উপস্থাপন করেছেন সেজন্য। এছাড়াও এটিকে পর্নোগ্রাফি হিসেবে আখ্যা দেয়ার কারণ এই ছবির পতিতাটি কোনো দেবী নয়, কেবলই একজন নগ্ন নারী।
সফটকোর ও হার্ডকোর ফিল্মের উদ্ভব
প্রথম সফটকোর এরোটিক (Softcore Errotica) ফিল্মটি তৈরী হয় ১৮৯৯ সালে। ইউজিন পিরু পরিচালিত ফিল্মটির নাম Coucher de la Mariée, যাতে অভিনয় করেন ১৮৯৬ থেকে ১৯১৩ সাল পর্যন্ত ৮টি কমেডি ফিল্মে অভিনয় করা লুইজ উইলি। এই ফিল্মটিতে তিনি স্ট্রিপটিজ করেন এবং ক্যামেরা সামনে স্নান করেন। এই সিনেমার মুক্তির ৯ বছর পর, ১৯০৮ সালে মুক্তি পায় হার্ডকোর পর্নোগ্রাফিক ফিল্ম, যার নাম L’Ecu d’Or ou la Bonne Auberge. তবে এটিই প্রথম হার্ডকোর (Hardcore) পর্নোগ্রাফিক ফিল্ম কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে, কেননা সেই সময় আরো বেশ কিছু ফিল্ম নির্মিত হয়, যা পরবর্তীতে সেন্সর বোর্ড কর্তৃক ধ্বংস করে ফেলা হয়। এ ধরনের ফিল্মগুলো তখনকার দিকে পতিতালয়ে দেখানো হতো।
পর্নোগ্রাফি আইন
১৯৬৯ সাল পর্নোগ্রাফি ইন্ডাস্ট্রির জন্য একটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ বছর, কেননা এ বছরেই বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে ডেনমার্কে পর্নোগ্রাফিকে আইনত বৈধ ঘোষণা করা হয়। সে বছরের ১ জুলাই থেকে দেশটিতে পর্নোগ্রাফি বৈধ হয়ে যায়, যে কারণে ইতিপূর্বে দেশটিতে থাকা পর্নোগ্রাফি সংক্রান্ত সকল আইনই বাতিল হয়ে যায়। ১৯৭৩ সালে, যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্ট মিলার বনাম ক্যালিফোর্নিয়া মামলার রায় ঘোষণার সময় অশ্লীলতাকে একটি তিন পর্বের পরীক্ষার মাধ্যমে সংজ্ঞায়িত করে।
- যদি একজন গড়পড়তা মানুষের কাছে কোনো নির্দিষ্ট শিল্প বা সাহিত্যের নিদর্শনকে কামোদ্দীপক বলে মনে হয়;
- যদি সেটির বিষয়বস্তু আক্রমণাত্মক হয়, যৌন আচরণের প্রতি আঘাত করে, কিংবা স্টেট ল’য়ের পরিপন্থী হয়;
- যদি সামগ্রিকভাবে সেটির কোনো গুরুত্বপূর্ণ সাহিত্যিক, শৈল্পিক, রাজনৈতিক বা বৈজ্ঞানিক মূল্য না থাকে।
বাংলাদেশের পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইন, ২০১২ ও অনেকটা এমনই। সেখানে পর্নোগ্রাফির সংজ্ঞায় বলা হয়েছে:
- যৌন উত্তেজনা সৃষ্টিকারী কোনো অশ্লীল সংলাপ, অভিনয়, অঙ্গভঙ্গি, নগ্ন বা অর্ধনগ্ন নৃত্য যাহা চলচ্চিত্র, ভিডিও চিত্র, অডিও ভিজ্যুয়াল চিত্র, স্থির চিত্র, গ্রাফিকস বা অন্য কোনো উপায়ে ধারণকৃত ও প্রদর্শনযোগ্য এবং যাহার কোনো শৈল্পিক বা শিক্ষাগত মূল্য নাই;
- যৌন উত্তেজনা সৃষ্টিকারী অশ্লীল বই, সাময়িকী, ভাস্কর্য, কল্পমূর্তি, মূর্তি, কাটুর্ন বা লিফলেট;
- উপ-দফা (১) বা (২) এ বর্ণিত বিষয়াদির নেগেটিভ ও সফট ভার্সন।
ইন্টারনেটের ভূমিকা
সাম্প্রতিক সময়ে শুধু যুক্তরাষ্ট্র বা বাংলাদেশই নয়, পৃথিবীর প্রায় সকল দেশেই পর্নোগ্রাফির বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ পর্যায়ের আইন জারি হয়েছে। তারপরও পর্নোগ্রাফি সৃষ্টির প্রবণতা তেমন কমছে না? এর কারণ কী? কারণ হলো ইন্টারনেট। ১৯৯০-এর দশক থেকে ইন্টারনেটের কারণে পর্নোগ্রাফি ইন্ডাস্ট্রিতে ব্যাপক উন্নতি ঘটেছে। ইন্টারনেটের বদৌলতে ঘরে বসে, নিরাপদে, এবং প্রায় কোনো অর্থ ছাড়াই পর্নোগ্রাফি পাওয়া যাচ্ছে। এ কারণে এই মুহূর্তে বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুতবর্ধনশীল ও নিরাপদ ইন্ডাস্ট্রিগুলোর একটি হলো পর্ন ইন্ডাস্ট্রি।
পর্ন ইন্ডাস্ট্রি ঠিক কতটা এগিয়ে গেছে, তার প্রমাণ মিলবে নিচের পরিসংখ্যানগুলো থেকে:
- এই মুহূর্তে গোটা বিশ্বে লক্ষাধিক পর্ন সাইট রয়েছে।
- প্রতি মাসে পর্ন সাইটগুলো যে পরিমাণ ট্রাফিক গ্রহণ করে, তা নেটফ্লিক্স, অ্যামাজন ও টুইটার কর্তৃক গৃহীত মোট ট্রাফিকের চেয়ে বেশি।
- প্রতি বছর ইন্টারনেট থেকে যে পরিমাণ কনটেন্ট ডাউনলোড করা হয়, তার ৩৫%-ই পর্নোগ্রাফি সম্পর্কিত।
- অনিচ্ছাসত্ত্বেও ৩৪% ইন্টারনেট ব্যবহারকারী বিজ্ঞাপন, পপ-আপ প্রভৃতির মাধ্যমে পর্ন সাইটগুলোর সাথে সম্পৃক্ত হয়ে যায়।
- ২০০৪ সালে সোশ্যাল সায়েন্স কোয়ার্টারলির (Social Science Quarterly) এক গবেষণায় উঠে এসেছে, যেসব মানুষ বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্কে জড়িত, তাদের মধ্যে পর্নোগ্রাফির ভোক্তা হওয়ার সম্ভাবনা ৩০০% বেশি।
- ইন্টারনেটে মোট যে পরিমাণ ডাটা ট্রান্সফার হয়, তার অন্তত ৩০% পর্নোগ্রাফি সম্পর্কিত।
- ইন্টারনেটে সবচেয়ে বেশি পাওয়া যায় এবং জনপ্রিয় হলো কিশোর-কিশোরীদের নিয়ে তৈরি পর্ন ভিডিও (যদিও টিনেজ পর্নে অভিনয় করা মেয়েদের অনেকের বয়স ২০ বছরের বেশি হয়ে থাকে)।
- অনলাইনে সবচেয়ে দ্রুত বর্ধনশীল ব্যবসাগুলোর একটি হলো চাইল্ড পর্ন, যেখানে শিশুদের সাথে জোরপূর্বক যৌনক্রিয়ার দৃশ্য ধারণ করে ইন্টারনেটে ছাড়া হয়।
- শুধু যুক্তরাষ্ট্রের এখন পর্যন্ত ৬,২৪,০০০ জন চাইল্ড পর্ন ট্রেডারের হদিস মিলেছে।
- পর্নোগ্রাফি একটি ৯৭ বিলিয়ন ডলার মূল্যমানের ইন্ডাস্ট্রি, যার মধ্যে মাত্র ১২ বিলিয়ন ডলার আসে যুক্তরাষ্ট্র থেকে।
- শুধু ২০১৬ সালেই, বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় পর্ন ওয়েবসাইটটিতে প্রায় ৪৬০ কোটি ঘণ্টা পর্ন দেখা হয়েছিল।
- বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় ৩০০টি ওয়েবসাইটের মধ্যে ১১টিই পর্ন সাইট।
- ২০১৮ সালে যে পর্ন শব্দটি বিশ্বের সবচেয়ে বড় ফ্রি পর্ন সাইটে সর্বাধিকবার সার্চ করা হয়েছিল, সেটি হলো ‘লেসবিয়ান’।
- শুধু ২০১৮ সালেই বিশ্বের সবচেয়ে বড় ফ্রি পর্ন সাইটটিতে ৩,৩৫০ কোটি বার প্রবেশ করা হয়েছিল।
- ইন্টারনেট ব্যবহারকারী ১২-২৪ বছর বয়সী ৬৪% কিশোর-তরুণ-যুবকরাই সপ্তাহে অন্তত এক বা একাধিকবার পর্নোগ্রাফি দেখে থাকে।
- ২৫ বা ততোধিক বছর বয়সী নারীদের তুলনায়, কিশোরী মেয়েদের মধ্যে পর্নোগ্রাফি দেখার প্রবণতা অনেক বেশি।
- একটি গবেষণায় উঠে এসেছে, ১৪ থেকে ১৯ বছর বয়সী যেসব মেয়েরা পর্নোগ্রাফি ভিডিও দেখে, সম্ভাবনা বেশি যে তারাও কোনো একসময় যৌন নিপীড়ন বা নিগ্রহের শিকার হয়েছে।
- একটি সুইডিশ গবেষণায় দেখা গেছে, ১৮ বছর বয়সী যেসব ছেলে নিয়মিত পর্ন দেখে, তাদের মধ্যে টাকার বিনিময়ে যৌনক্রিয়া করার প্রবণতা বেশি থাকে।
- ২০১৫ সালের এক গবেষণায় উঠে এসেছিল যারা পর্নোগ্রাফি দেখে, তাদের মধ্যে মৌখিক ও শারীরিক আগ্রাসন বেশি থাকে।
- যুক্তরাজ্যের এক সাম্প্রতিক গবেষণা থেকে জানা যায়, ১১-১৬ বছর বয়সী ৪৪% ছেলে, যারা পর্নোগ্রাফি দেখে থাকে, তারা পর্নোগ্রাফির মাধ্যমেই প্রাথমিক ধারণা পেয়েছে যে তারা কোন ধরনের যৌনতায় আগ্রহী।
শেষ কথা
অন্যান্য দেশের যুবসমাজের মতো, আমাদের দেশের যুবসমাজের অবক্ষয়ের পেছনেও একটি বড় কারণ হলো পর্নোগ্রাফির প্রতি আসক্তি। এবং এক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় ভূমিকা পালন করছে অবশ্যই ইন্টারনেট। বাংলাদেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা এক কোটির বেশি। প্রতি বছর দেখা যায়, বাংলাদেশ থেকে গুগলে সবচেয়ে বেশি বার সার্চ দেয়া কি ওয়ার্ডগুলোর মধ্যে শীর্ষে থাকে বিভিন্ন বিদেশী পর্নতারকাদের নাম। এছাড়া দেশী কোনো তারকার ‘স্ক্যান্ডাল ভিডিও’ ফাঁসের খবর রটলে, তারাও থাকেন এ তালিকায়। গুগলে বিভিন্ন নারী আত্মীয়ের নাম কি ওয়ার্ড দিয়ে সার্চ দিলেও, সেখানে দেখা পাওয়া যায় বিভিন্ন পর্নোগ্রাফিক/এরোটিক পোস্টের সমাহার, বাংলায় যাদের বলা হয় চটি গল্প। ইউটিউব বা অন্যান্য ভিডিও শেয়ারিং ওয়েবসাইটগুলোতেও তথাকথিত ১৮+ ভিডিওর ছড়াছড়ি।
সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় থেকে চেষ্টা চালানো হচ্ছে বহুল প্রচলিত পর্ন সাইটগুলো ব্লক করে দেয়ার। এছাড়া অনলাইনে অশ্লীলতার সাথে যুক্ত কয়েকজন তারকাকেও পুলিশি হেফাজতে নেয়া হয়েছে। এগুলো অবশ্যই প্রশংসনীয় পদক্ষেপ। তবে যুবসমাজকে সঠিক পথে ফেরাতে কেবল এধরনের কাজই যথেষ্ট নয়। যুবসমাজকে রক্ষার্থে মাদকের বিরুদ্ধেও সমান সোচ্চার হতে হবে। পাশাপাশি খেলাধুলা, শিল্প-সাহিত্যচর্চা এবং পড়াশোনার পাশাপাশি এক্সট্রা-কারিকুলার অ্যাক্টিভিটিসে যোগদানে উৎসাহিত করা উচিত। সর্বোপরি, বেকারত্ব যেন যুবসমাজের হাহাকার ও দীর্ঘশ্বাসের কারণ হতে না পারে, সেজন্য কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করাও জরুরি। পাশাপাশি পরিবারের শিশু বা ছোটরা ইন্টারনেট কীভাবে বা কোন কাজে ব্যবহার করছে সেদিকেও বাবা-মা, বড় ভাই বোনদেরও নজর রাখা উচিত। তাছাড়া সম্মিলিত সচেতনতা ব্যতীত পর্নোগ্রাফির অভিশাপ থেকে মুক্তি পাওয়া অসম্ভব।
চমৎকার সব বিষয়ে রোর বাংলায় লিখতে আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন এই লিঙ্কে: roar.media/contribute/