আবারো প্রেসিডেন্ট প্রার্থী জো বাইডেন: সামনে যতো রাজনৈতিক সমীকরণ

নানা রাজনৈতিক জল্পনা আর কল্পনার শেষে ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্সিয়াল ইলেকশনের জন্য নিজের প্রার্থিতা ঘোষণা করেছেন জো বাইডেন, ব্যতিক্রম না হলেও নির্বাচনে ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থীও হচ্ছেন তিনিই। ২০২০ সালের নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে হারিয়ে আসা জো বাইডেন গত আড়াই বছর ধরে আছেন হোয়াইট হাউজে, প্রেসিডেন্ট হিসেবে প্রায় অবারিত ক্ষমতা নিয়ে তিনি শাসন করছেন যুক্তরাষ্ট্রকে। তার সময়ে যুক্তরাষ্ট্র আবার ফিরে এসেছে আন্তর্জাতিক রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দুতে, বিশ্বমঞ্চে যুক্তরাষ্ট্র মোকাবেলা করছে রাশিয়া আর চীনকে। মহামারি আর অর্থনৈতিক উত্থান-পতনও সামাল দিচ্ছেন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, তার ব্যাপারে মিশ্র প্রতিক্রিয়া রয়েছে ভোটার আর সমর্থকদের মধ্যে।

জো বাইডেন; Image Source: Politico

জো বাইডেনের প্রার্থিতা ঘোষণা

২৫ এপ্রিল ২০২৩ সালে জো বাইডেন প্রেসিডেন্ট পদে আবারো নিজের প্রার্থিতার ঘোষণা দেন, ইচ্ছা প্রকাশ করেন হোয়াইট হাউজে থেকে আরো এক মেয়াদ যুক্তরাষ্ট্রকে সেবা দেওয়ার। প্রার্থিতার ঘোষণায় বাইডেন ঘোষণা দেন, তিনি ডোনাল্ড ট্রাম্পের অনুসারী ম্যাগা চরমপন্থিদের মোকাবেলা করতে চান, লড়াই করতে চান আমেরিকার আত্মার জন্য। প্রার্থিতার ঘোষণায় ছাড়া ভিডিওতে জো বাইডেন ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন নারী অধিকার, স্বাস্থ্যসেবা আর সামাজিক নিরাপত্তা কার্যক্রম নিয়ে কাজ করার।

ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট হওয়ার সুবিধা

জো বাইডেন ২০২৪ সালে নির্বাচনে অংশ নেবেন ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট হিসেবে, ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট হিসেবে উপভোগ করবেন এয়ার ফোর্স ওয়ানের সেবাসহ নিরাপত্তা সংস্থাগুলোর সর্বোচ্চ সেবা। আমেরিকান প্রেসিডেন্ট নির্বাচন প্রার্থীদের জন্য একটি ক্লান্তিকর প্রক্রিয়া, প্রক্রিয়ার প্রথম বছর খানেক সময় যায় প্রাইমারি নির্বাচনে লড়তে লড়তেই। ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্টকে আমেরিকার রাজনৈতিক দলগুলো সাধারণত প্রাইমারি লড়াইয়ের প্রক্রিয়া থেকে মুক্তি দেয়, দলের সম্মতিক্রমে প্রার্থী হন ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্টই। একই ধরনের সুবিধা জো বাইডেনও পাবেন।

জো বাইডেন ২০২৪ সালে নির্বাচনে অংশ নেবেন ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট হিসেবে; Image Source: Reuters

ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট হিসেবে জো বাইডেনের কাছে নির্বাচনী ক্যাম্পেইন পরিচালনার জন্য তুলনামূলক অধিক অর্থের সংস্থান থাকবে, নির্বাচনী ক্যাম্পেইনের জন্য অর্জিত অর্থ ব্যয় করতে পারবেন নির্বাচনের আগের কয়েক মাসের প্রচারণার উন্মাদনায়। প্রাইমারিতে লড়ে আসা প্রার্থীদের শুরুতে অল্প অর্থ নিয়েই প্রাইমারি লড়তে হয়, ক্যাম্পেইন চালাতে হয় আইওয়ার তুষারপাত কিংবা মিশিগানের তীব্র শীতের মধ্যেই। আমেরিকান প্রেসিডেন্ট নির্বাচন নিয়ে অব্যর্থ পূর্বাভাস দেওয়া অ্যালান লিকম্যানের মডেলেও দেখা যায়, ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে সুবিধা পান তুলনামূলকভাবে।

জো বাইডেনের বয়স

জো বাইডেন যখন ২০২০ সালে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হন, তখনই তিনি ছিলেন আমেরিকার সবচেয়ে বয়স্ক প্রেসিডেন্ট। পুনরায় নির্বাচিত হয়ে প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার সময় তার বয়স হবে ৮২ এবং দায়িত্ব ছাড়ার সময় তার বয়স হবে ৮৬। বয়সের ইস্যুতেই ৭০ শতাংশ আমেরিকান আর ৫১ শতাংশ ডেমোক্রেট মনে করেন, ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্সিয়াল ইলেকশনে জো বাইডেনের প্রার্থী হওয়া উচিত নয়

গত নির্বাচনের আগেও জো বাইডেনের বয়স নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। তখন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাথে বয়সের সামঞ্জস্য থাকায়, বয়সের ইস্যুটি নির্বাচনে আর প্রাসঙ্গিকই থাকেনি। এবারও রিপাবলিকান পার্টি থেকে প্রার্থিতার ঘোষণা দিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প, ডিস্যান্টিস, পেন্স, পম্পেও কিংবা নিকি হ্যালিদের চেয়ে অনেক এগিয়ে আছেন ডোনাল্ড ট্রাম্পই। ডোনাল্ড ট্রাম্পের সম্ভাব্য প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে ভাবা হচ্ছিলো ফ্লোরিডার গভর্নর রন ডিস্যান্টিসকে, সাম্প্রতিক সময়ে তার জনপ্রিয়তাও কমছে।

বয়স বড় ইস্যু হবে জো বাইডেনের ক্ষেত্রে; Image Source: Vox/Getty Images

রিপাবলিকান পার্টি থেকে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রার্থী হলেও এবারের নির্বাচনেও বয়সের ইস্যুটি আড়ালে চলে যাবে, নির্বাচনে তুলনামূলক সুবিধা দেবে জো বাইডেনকেই। বাইডেনের কট্টর সমর্থকরা সম্ভবত প্রার্থনা করছেন ট্রাম্পের প্রার্থিতার পক্ষেই, কারণ ট্রাম্পের সাথে বাইডেনের বয়সের ব্যবধান মাত্র ৪ বছর।

বাইডেনের আমলনামা

জো বাইডেন প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হয়েই আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে যুক্তরাষ্ট্রকে আবারও কেন্দ্রে নিয়ে আসার প্রচেষ্টা শুরু করেন। একইসাথে তাকে সামাল দিতে হয়েছে মহামারি আর অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতাও। অর্থনীতিতে চাকরি সৃষ্টির সংখ্যা যেমন জো বাইডেনের পক্ষ গেছে, বিপক্ষে গেছে মুদ্রাস্ফীতি। অবস্থা সামাল দেওয়ার ব্যর্থতায় জো বাইডেনের সময়েই বন্ধ হয়ে গেছে দুটি ব্যাংক। আফগানিস্তান থেকে সেনা প্রত্যাহারে ব্যর্থতার পরে বাইডেনের পররাষ্ট্রনীতি মার খেয়েছে মধ্যপ্রাচ্যেও, মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতিতে শক্তিশালী প্রবেশ ঘটেছে চীনের। ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটিজির সাফল্যও এখনও সীমিত, ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের মুখ্য সিকিউরিটি পার্টনার ভারতও যুক্তরাষ্ট্রের শর্তহীন মিত্র হয়নি। ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে ইউরোপে যখন তেলের সংকট তৈরি হলো, তখন বাইডেন মধ্যপ্রাচ্য সফর করেও সেখানকার রাষ্ট্রপ্রধানদের রাজি করাতে পারেননি তেলের উৎপাদন বৃদ্ধিতে।

Image Source: Politico

তবে, ইউক্রেন যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের সংযুক্ততা জো বাইডেনের পক্ষেই যাবে। ইউক্রেন ইস্যুকে কেন্দ্র করে ন্যাটোকে আবারো প্রাসঙ্গিক করেছেন বাইডেন, ন্যাটোতে ফিনল্যান্ড আর সুইডেন যুক্ত হওয়ায় বেড়েছে রাশিয়ার সীমান্তে ন্যাটোর উপস্থিতিও।

জনমিতির পরিবর্তন

যুক্তরাষ্ট্রকে বলা হয় সম্ভাবনার দেশ, পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তের অভিবাসীদের প্রিয় গন্তব্য যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান দুটি দলের মধ্যে ডেমোক্রেটদের দেখা হয় অভিবাসনবান্ধব দল হিসেবে, দেখা হয় বৈচিত্র্যের প্রতি সহিষ্ণু দল হিসেবেও। অভিবাসীদের পাশাপাশি কৃষ্ণাঙ্গরাও ডেমোক্রেটিক পার্টির সমর্থক। অভিবাসী আর কৃষ্ণাঙ্গদের মধ্যে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার সাদাদের তুলনায় বেশি। ফলে, ভোটের মাঠে নিয়মিতই বেশি সুবিধা পাচ্ছে ডেমোক্রেটিক পার্টি, আমেরিকার গত আটটি প্রেসিডেন্সিয়াল নির্বাচনের মধ্যে সাতটিতেই পপুলার ভোটে জিতেছে ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থীরা। ২০০৪ সালের নির্বাচনে জর্জ ডব্লিউ বুশ আর ২০১৬ সালের নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হয়েছিলেন পপুলার ভোটে না জিতেই।

জনমিতির এই চিত্র সুবিধা দেবে জো বাইডেনকে, সুগম করবে তার আরো চার বছর হোয়াইট হাউজে থাকার ইচ্ছাকে। গতবারের নির্বাচনেও জো বাইডেনকে জিতিয়ে আনতে মুখ্য ভূমিকা রেখেছিল এই গোষ্ঠীগুলোই।

This article is written about the reelection of Joe Biden in the 2024 US Presidential Election.
All the necessary links are hyperlinked inside.
Feature Image: Politico

Related Articles

Exit mobile version