রিও ডি জেনেইরো ব্রাজিলের সবচেয়ে সৌন্দর্যময় আইকনিক শহর। সমুদ্র উপকূলীয় এই শহরটি ব্রাজিলের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর। বিশ্বব্যাপী এটি রিও নামেই বেশি পরিচিত। শহরটি বিশ্বব্যাপী পরিচিতি পাওয়ার বেশ কিছু কারণ রয়েছে। সেসবের মধ্যে সবচেয়ে বেশি পরিচিত কর্কুভাদু পর্বতের উপরে অবস্থিত ৩৮ মিটার উচ্চতা বিশিষ্ট ‘ত্রাণকর্তা যিশুখ্রিস্ট’ (Cristo Redentor) নামক মূর্তি। এছাড়া এই শহরে রয়েছে কোপাকাবানা, ইপানেমা সৈকত এবং গ্রানাইট শিলাময় পাঁউ দি আসুকার পর্বত।
প্রতিবছর এখানে বিশ্বের সর্ববৃহৎ কার্নিভালের আয়োজন করা হয়, যার গাড়ি বহর ও মিছিল, রং-বেরঙের বেশভূষা, সাম্বা নর্তক-নর্তকী দল বিশ্বজুড়ে বিখ্যাত। এছাড়া ফুটবলের কথা উঠলেই চলে আসে রিওর কথা, কারণ প্রায় ৮০ হাজার দর্শক ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন ইতিহাসের বিখ্যাত মারাকানা স্টেডিয়াম এই শহরেই অবস্থিত।
রিও ডি জেনেইরো শহরটি প্রকৃতি এবং আধুনিকতার মিশেলে গড়া। সাগর পাড়ে বয়ে চলা বিস্তৃত বসতি পাখির চোখে দেখতে বেশ মনোমুগ্ধকর। ১৯৬০ সালে রাজধানী ব্রাসিলিয়াতে সরিয়ে নেওয়ার আগপর্যন্ত এটি ছিল ব্রাজিলের রাজধানী। ২০১২ সালে শহরটি ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে স্বীকৃতি পায়।
কিন্তু চমকপ্রদ ব্যাপার হলো ল্যাটিন আমেরিকার এই শহরটি একসময় ছিল পর্তুগালের রাজধানী। হ্যাঁ, ঠিকই শুনেছেন, একসময় ইউরোপের দেশ পর্তুগালের রাজধানী ছিল ল্যাটিন আমেরিকার শহর রিও ডি জেনেইরো। ১৮০৮ থেকে ১৮২২ সাল পর্যন্ত মোট ১৩ বছর পর্তুগাল সাম্রাজ্যের রাজধানী ছিল ব্রাজিলের এই অসাধারণ শহরটি।
স্পেনীয়রা যখন দক্ষিণ আমেরিকার দিকে যাত্রা শুরু করে তখন পর্তুগিজরা দক্ষিণ আমেরিকার পূর্বাংশ দখল করে নেয়। পরবর্তীতে এই বৃহত্তম ভূখণ্ড পর্তুগিজ সাম্রাজ্যের অংশ হয়ে ওঠে, যা আজকের ব্রাজিল নামে পরিচিত।
১৮০৭ সালের অক্টোবরে নেপোলিয়ন বোনাপার্টের সৈন্যবাহিনী পশ্চিম ইউরোপের মধ্য দিয়ে যাওয়ার সময় স্পেন ও ফ্রান্সের সাথে একটি গোপন চুক্তি করে, যেখানে তারা পর্তুগালকে বিভক্ত করার পরিকল্পনা করে এবং একইসাথে পর্তুগালকে আক্রমণ করে বসে। সে সময় পর্তুগিজ যুবরাজ ষষ্ঠ জন রাজ্য পরিচালনা করতেন। একইসাথে তিনি অন্য উপনিবেশগুলোও শাসন করতেন।
এদিকে ফ্রান্স এবং স্পেন একজোট হওয়ার ফলে গ্রেট ব্রিটেন, আয়ারল্যান্ড, যুক্তরাজ্যসহ ইউরোপের অন্যান্য দেশ পর্তুগালের সহায়তায় এগিয়ে আসে এবং ফ্রান্স ও স্পেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। ইতিহাসে এটা পেনিনসুলার যুদ্ধ নামে পরিচিতি পায়। রক্তক্ষয়ী এই যুদ্ধে নেপোলিয়নের বীরত্ব প্রকাশ পায়। তার নেতৃত্বে একের পর এক ইউরোপীয় শহরগুলো দখল করে নিতে থাকে ফরাসিরা।
এই যুদ্ধে পর্তুগিজদের অবস্থা যখন টালমাটাল, তখন ধারণা করা হচ্ছিল অবরোধ করা হতে পারে রাজধানী লিসবনকে। অবরোধ করার কয়েকদিন আগেই রাজপরিবার পর্তুগালের রাজধানী লিসবন থেকে পালিয়ে যায়। ব্রিটিশ রয়্যাল নেভির সহায়তায় তারা আটলান্টিক মহাসাগর পাড়ি দিয়ে আশ্রয় নেয় ব্রাজিলে। ১৮০৭ সালের ২২ জানুয়ারি প্রিন্স জনসহ রাজপরিবারের নৌবহর সালভাদরে এসে পৌঁছায়।
তখন সালভাদর ছিল ব্রাজিলের রাজধানী। সেখানে প্রিন্স জন আবার্টুরা ডস পোর্টোস আইনে স্বাক্ষর করেন, যা ব্রাজিল এবং বন্ধুসুলভ দেশগুলোর মধ্যে বাণিজ্যে স্বাধীনতা প্রদান করে। এই বিতর্কিত আইন করার ফলে ব্রাজিলসহ অন্য উপনিবেশগুলো আর স্রেফ উপনিবেশ থাকল না, পরিণত হলো পর্তুগালের সহরাজ্য বা মূল পর্তুগালের অংশ হিসেবে, কেননা এই চুক্তির অধীনে সরাসরি ইউরোপের সাথে মুক্ত বাণিজ্যসহ বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা অর্জিত হয়। এর মাধ্যমে এ অঞ্চলে অর্থনৈতিকভাবে ব্যাপক উন্নতি ঘটতে থাকে।
এই আইন ব্রিটিশদের জন্য ওই অঞ্চলে প্রভাব বিস্তার করতে সাহায্য করে। মূলত পেনিনসুলার যুদ্ধে পর্তুগালকে সাহায্য করার জন্য ব্রিটিশদের এই সুযোগ সুবিধা দেন প্রিন্স জন। এই নতুন আইনটি ব্রাজিলকে কেবল পর্তুগালের সাথে সরাসরি বাণিজ্যিক সম্পর্ক বজায় রাখার অনুমতি দেয়নি, বরং ঔপনিবেশিক চুক্তি ভঙ্গ করে। তখন ব্রাজিল হয়ে ওঠে মূল পর্তুগালের অংশ। ফলে ব্রাজিলের ব্যাপক অর্থনৈতিক উন্নতি ঘটতে থাকে।
এদিকে ১৮০৭ সালে লন্ডনে একটি গোপন চুক্তি সেরে ফেলেন পর্তুগিজ রাষ্ট্রদূত ডোমিংগো আন্তোনিও ও ব্রিটিশ কর্মকর্তা ডি সওসা কৌতিনহো। চুক্তি অনুযায়ী ব্রাজিলের বন্দরগুলোতে প্রবেশাধিকার পায় ব্রিটিশরা। বিনিময়ে পর্তুগিজ রাজপরিবার এবং নৌবন্দরগুলোকে তারা সামরিক সুরক্ষার নিশ্চয়তা দেয়। সওসা কৌতিনহোর গোপন চুক্তি ১৮০৮ সালে প্রিন্স জনের আবার্টুরা ডস পোর্টোস আইনকে কার্যকর করার পথ সুগম করে দেয়। এ সমস্ত চুক্তির মাধ্যমে ব্রাজিল কেবল কৃষিনির্ভর নয়, বরং শিল্প ও অর্থনৈতিকভাবে উন্নতি লাভ করতে শুরু করে। ইউরোপ থেকে আসতে শুরু করে বড় বড় বিনিয়োগ। ব্রিটিশ এবং পর্তুগালের সহায়তায় রিও ডি জেনেইরোতে গড়ে উঠতে থাকে বড় বড় শিল্পপ্রতিষ্ঠান। অন্যদিকে পর্তুগালে যুদ্ধাবস্থা চলার কারণে প্রচুর অভিবাসী পাড়ি জমায় ব্রাজিলে। এর ফলে জনসংখ্যাও ক্রমশ বাড়তে থাকে।
১৮০৮ সালের ৭ মার্চ যখন পর্তুগিজ রাজপরিবার রিও ডি জেনেইরোতে পৌঁছাল, তখন এই শহরের জনসংখ্যা খুব বেশি ছিল না। অল্প কিছু লোক এখানে বাস করত, যাদের অধিকাংশের পেশা ছিল কৃষি ও মৎস্য শিকার। তৎকালে এখানে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সমুদ্র বন্দর ছিল। মোট জনসংখ্যার এক-তৃতীয়াংশ লোক ছিল দাস। বেশিরভাগ দাস-দাসী আফ্রিকা থেকে বন্দী করে এখানে নিয়ে আসা হয়। সে সময় এখানে মোট আদিবাসীর সংখ্যা ছিল আট লাখের মতো। ঔপনিবেশিক শাসন এবং বিভিন্ন কারণে আদিবাসীর সংখ্যা ক্রমেই কমে আসছিল। অন্যদিকে বৃদ্ধি পাচ্ছিল সাদা চামড়ার ইউরোপীয়ানদের সংখ্যা। রিও পর্তুগিজ সাম্রাজ্যের রাজধানী থাকাকালে ১৮১৮ থেকে ১৮২২ সাল পর্যন্ত ব্রাজিলের দাসের সংখ্যা দ্বিগুণ পরিমাণে বৃদ্ধি পায়।
ব্রাজিলের অন্যান্য শহরের ন্যায় রিওর জনসংখ্যা কম থাকলেও আটলান্টিক মহাসাগরের পাড় ধরে জনসংখ্যার ঘনত্ব তুলনামূলক বেশি ছিল। হীরা আর স্বর্ণের খোঁজে অনেক আগে থেকেই ইউরোপ থেকে প্রচুর মানুষ পাড়ি জমাত দক্ষিণ আমেরিকায়। এর প্রভাবেও জনসংখ্যা বাড়তে থাকে। আবার চিনি শিল্পকে শক্তিশালী করতে সে সময় আফ্রিকা থেকে নিগ্রোদের বন্দী করে নিয়ে এসে কাজ করানো হত শ্রমিক হিসেবে। ব্রাজিলে সে সময় নিরক্ষরতা, স্বাস্থ্যহীনতা, পুষ্টির অভাব প্রকট আকার ধারণ করে। রাজপরিবার রিওতে আসার পর মৌলিক চাহিদাগুলো ধীরে ধীরে পূরণ হতে থাকে। সে সময় মাত্র ২.৫ শতাংশ মানুষ অক্ষরজ্ঞান সম্পন্ন ছিল।
তৎকালীন ক্ষুদ্র ও দরিদ্র রিও পর্তুগাল সাম্রাজ্যের রাজধানী হওয়ার জন্য মোটেও উপযুক্ত ছিল না। তবে রাজপরিবারকে স্বাগত জানানোর জন্য সেখানে প্রায় এক সপ্তাহ যাবৎ উৎসব পালন করা হয়। যেসব মানুষ পর্তুগালকে রক্ষার জন্য ফ্রান্সের সঙ্গে যুদ্ধ করেছিল এবং পর্তুগিজ সাম্রাজ্যকে রক্ষা করার জন্য রাজপরিবারের সাথে দক্ষিণ আমেরিকায় আসে, তাদের সবাইকে সম্মানিত করা হয়। দেওয়া হয় বিভিন্ন সম্মানজনক উপাধি। এক্ষেত্রে ব্রিটিশদেরকে সবচেয়ে বেশি সম্মানিত করা হয়। মোট ১৪৫টি উপাধির মধ্যে মাত্র ৬টি পেয়েছিল ব্রাজিলীয়রা।
১৮১৫ সালে ডম ষষ্ঠ জোয়াউঁ, তার মায়ের পক্ষে রিজেন্ট হিসেবে ব্রাজিলকে পর্তুগিজ উপনিবেশ থেকে উন্নীত করে পর্তুগালের সাথে একত্রিত একটি সার্বভৌম যুক্তরাজ্যীয় রাজতন্ত্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেন, যার নাম হয় ‘ইউনাইটেড কিংডম অফ পর্তুগাল’, ব্রাজিল, অ্যান্ড দ্য আলগ্রাভিস। এর মাধ্যমে ব্রাজিল প্রাশাসনিকভাবে ব্যাপক স্বাধীনতা পায় এবং পরিণত হয় এক টুকরো পর্তুগালে। ১৮১৪ সালে নেপোলিয়ন পরাজিত হওয়ার আগপর্যন্ত রাজপরিবার রিওতেই ছিল। এই সময়ে শহরে ব্যাপক উন্নতি হয়, দ্রুততার সাথে জনবসতি বৃদ্ধি পেতে থাকে ও শিল্প অবকাঠামোগত উন্নতি হতে থাকে। সে সময় রিও ডি জেনেইরো পরিণত হয় দক্ষিণ আমেরিকার সবচেয়ে জনপ্রিয় শহরে। অর্থনৈতিকভাবেও হয়ে ওঠে শক্তিশালী।
এদিকে রাজার অনুপস্থিতি এবং ব্রাজিলের বাণিজ্যিক স্বাধীনতার কারণে পর্তুগাল মারাত্মক রাজনৈতিক সঙ্কটে পড়ে। এই সংকট মেটাতে ২৫ এপ্রিল ১৮২১ সালে প্রিন্স জন পর্তুগালে ফেরত আসেন। অন্যথায় তার সিংহাসন হারানোর ঝুঁকি ছিল। এদিকে জনের উত্তরাধিকার এবং অনেক রাজপরিবারের সদস্য রিওতে থেকে গেল।পর্তুগালের জনগণ এবং রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ ব্রাজিলকে পুনরায় উপনিবেশ করার প্রস্তাব দেয়। ব্রাজিলের উপর থেকে বাণিজ্যিক স্বাধীনতা তুলে নেওয়ার দাবি জানায় এবং সমস্ত রাজকর্মচারীকে ব্রাজিল থেকে ফেরত নিয়ে আসার দাবি জানায়।
১৮২১ সালের ২৬ এপ্রিল রাজা ষষ্ঠ জোয়াউঁ ইউরোপে ফিরে যান। যাবার পূর্বে তার বড় ছেলে পেদ্রো জি কান্তারাকে ব্রাজিলের রিজেন্ট হিসেবে স্থলাভিষিক্ত করেন। পরবর্তীতে পর্তুগিজ সরকার ব্রাজিলকে পুনরায় পর্তুগিজ উপনিবেশে পরিণত করতে চেষ্টা করে। কিন্তু ১৮০৮ সাল থেকে চলে আসা অঞ্চলটির নিজেদের অর্জন থেকে বঞ্চিত ব্রাজিলীয়রা পুনরায় ঔপনিবেশিক শাসনের বিরোধিতা করে।
রিজেন্ট পেদ্রো পর্তুগালে ফিরতে অস্বীকৃত জানান ও ব্রাজিলীয়দের দাবির পক্ষে অবস্থান নেন। তিনি ১৮২২ সালের সেপ্টেম্বরে ব্রাজিল সাম্রাজ্য গঠন করেন। এরপর ১৮২২ সালের ১২ অক্টোবর নিজের নাম পরিবর্তন করে ‘ডম পেদ্রো’ রাখেন। ১৮২২ সালের ৭ নভেম্বর পেদ্রো আনুষ্ঠানিকভাবে পর্তুগালের ৩২২ বছরের ঔপনিবেশিক শাসনের অবসান ঘটিয়ে ব্রাজিলের স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। একই বছরের ১২ অক্টোবর তিনি ব্রাজিলের প্রথম সম্রাট হিসেবে স্থলাভিষিক্ত হন এবং ১৮২২ সালের ১ ডিসেম্বর সিংহাসনে আরোহণ করেন।
মূলত, রিও ডি জেনেইরো পর্তুগালের রাজধানী থাকাবস্থায় এমন কিছু পরিস্থিতি তৈরি হয় যা ব্রাজিলকে স্বাধীনতার দিকে এগিয়ে নিয়ে যায়। ক্ষুদ্র রিও শহরটি রাজধানী হওয়ার সাথে সাথেই অর্থনৈতিকভাবে ব্যাপক শক্তিশালী হয় এবং জনসংখ্যা ক্রমাগত বৃদ্ধি পেতে থাকে। ফলে বিভিন্ন কোণ থেকে রাজনৈতিক বিকেন্দ্রীকরণ শুরু হতে থাকে। এটি বাণিজ্য ও পরবর্তী অভিবাসন বৃদ্ধির সাথে মিলিত হয়ে এই শহরকে নতুন বিশ্বের একটি প্রধান অর্থনৈতিক কেন্দ্রে রূপান্তর করে।
ফলে ব্রাজিল নিজেকে পর্তুগালের একটি সহ-রাজ্য হিসেবে ঘোষণা করে, যেখানে ব্রাজিল ছিল পর্তুগালের একটি উপনিবেশ মাত্র। এটি ছিল পর্তুগাল থেকে ব্রাজিলের ক্রমবর্ধমান স্বাধীনতার একটি প্রতিমূর্তি। ১৮২২ সালে ব্রাজিল একটি সংবিধান প্রণয়ন করতে সমর্থ হয়, এর ঠিক এক বছর পর যখন রাজপরিবার ইউরোপে চলে আসে তখন স্বাধীনতার আন্দোলন দানা বাঁধতে শুরু করে।
রাজপরিবার ব্রাজিলে আসার আগে এটা তেমন গুরুত্বপূর্ণ ছিল না, কারণ তখন ব্রাজিলের তেমন রাজনৈতিক গুরুত্ব ছিল না। কিন্তু রাজধানী ঘোষণা হওয়ার সাথে সাথেই এর গুরুত্ব বাড়তে থাকে। রাজকীয় আদালতের উপস্থিতির ফলস্বরূপ ব্রাজিলীয় রাষ্ট্রের স্থিতিশীলতা ও সমৃদ্ধির ফলে প্রতিবেশী দেশগুলোতে সহিংসতা ও অস্থিতিশীলতার ছড়িয়ে পড়ে। এ সমস্ত কারণে ব্রাজিল স্বাধীনতার দিকেই এগিয়ে যাচ্ছিল।
পেদ্রোর বয়স যখন মাত্র ৯ বছর তখন পর্তুগিজ রাজপরিবার রিওতে আসে। অর্থাৎ, পুরোটা সময়ই তিনি রিও ডি জেনিরোতে বেড়ে ওঠেন। কাজেই পর্তুগালের তুলনায় তিনি ব্রাজিলকে নিজের জীবনের সাথে বেশি মানিয়ে নেন। সেই কারণে নিজেকে পর্তুগিজ হিসেবে না দেখে তিনি দেখেছিলেন একজন ব্রাজিলিয়ান হিসেবে। এরপর যখন তাকে ব্রাজিল থেকে ফেরত যাওয়ার জন্য আহ্বান জানানো হয়, তখন তিনি তা প্রত্যাখ্যান করে থেকে যান। পর্তুগিজ মুকুটের উত্তরাধিকারী হিসেবে তার অবস্থানের কারণে পেদ্রো ব্রাজিলকে পুনরায় দখল করার জন্য পর্তুগিজদের পক্ষ থেকে যেকোনো গুরুতর প্রচেষ্টা রোধ করতে সক্ষম হন।
স্বাধীনতাকালে পেদ্রো ছিলেন যুবক। আবার পর্তুগাল থেকে অভিবাসী হয়ে যারা রিওতে এসেছিল তাদের অধিকাংশই ছিল তরুণ। ফলে এই বিশাল জনগোষ্ঠীর কাছ থেকে তিনি ব্যাপক সমর্থন পান। অভিবাসীদের প্রায় সবাই পর্তুগালে ফেরত না গিয়ে স্থায়ীভাবে ব্রাজিলে বসবাস শুরু করে। নতুন অভিবাসীরা সদ্য স্বাধীন ব্রাজিলের অর্থনৈতিক উন্নতির পথগুলো দেখতে পায় এবং তাদের মধ্যে পূর্বের ঔপনিবেশিক শাসনের প্রতি তীব্র ঘৃণা জন্মায়।
রিও ডি জেনেইরোতে রাজধানী স্থানান্তরের ঘটনা পর্তুগিজ সাম্রাজ্যে এক ব্যাপক পরিবর্তন সাধন করে। অন্যদিকে ঔপনিবেশিক শাসন ভেঙে তা ব্রাজিলকে এনে দেয় স্বাধীনতা। পর্তুগিজ সাম্রাজ্যের পতনের জন্যও এ ঘটনা পরোক্ষভাবে দায়ী। মোট কথা, রিও পর্তুগালের রাজধানী থাকাকালে ১৩ বছরে পরিবর্তন হয় বিশ্বের মানচিত্র, উন্মোচিত হয় কয়েকটি দেশের স্বাধীনতার ফলক, পটভূমি পরিবর্তন হয় বিশ্ব রাজনীতির, যা আজও অবিস্মরণীয় হয়ে আছে।