Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

দ্য টেক্সটিং-সুইসাইড কেস: মুঠোফোন বার্তা যখন মৃত্যুর কারণ

১২ জুলাই, ২০১২ সাল। দুই কিশোর-কিশোরীর মধ্যে মুঠোফোনে বার্তার আদান-প্রদান চলছে,

রয়: সবকিছু প্রস্তুত, তারপরও…

কার্টার: তার আর পর নেই রয়! তুমি এটা সেটা বলে অনেকদিন ধরেই পাশ কাটিয়ে যাচ্ছ, আরে দেরি করা চলবে না।

কার্টার: অপেক্ষা করলে কেবল অপেক্ষাই সার হবে, কাজটা করে ফেল, বেশি ভেবো না।

কার্টার: এখনই করে ফেলতে পারো।

রয়: ভোরের আলো ফুটি ফুটি করছে, আমি কি বেশি দেরি করে ফেলেছি?

কার্টার: এখনই সবচেয়ে ভালো সময়। সবাই ঘুমাচ্ছে, যা করার করে ফেল।

রয় ও কার্টার

কনরাড হেনরি রয় ১৯৯৫ সালের ১২ সেপ্টেম্বর ম্যাসাচুসেটসের ম্যাটাপয়সেট শহরে জন্মগ্রহণ করেন। দুই বোনের এক ভাই রয় পড়ালেখা, খেলাধুলা সবকিছুতেই বেশ ভালো। তার বাবা আর দাদা দুর্ঘটনায় পড়া জাহাজ টেনে সরিয়ে আনতেন, স্কুলের পাশাপাশি রয় তাদের সাথে এই কাজও করতেন। তবে তার জীবন একেবারে ছক কাটা সুন্দর কিছু ছিল ভাবলে ভুল হবে। সতের বছর বয়সে প্যারাসিটামলের বিষক্রিয়ায় হাসপাতালে ভর্তি হতে হয় তাকে। সেরে ওঠার পর পড়েন বিষণ্ণতায়, ফলাফল- ওষুধের উপর নির্ভরশীলতা। 

হেনরি কনরাড রয়; Image Source: cbsnews.com

মিশেল কার্টারের জন্ম ম্যাসাচুসেটসেই, ১৯৯৬ সালের ১১ আগস্ট প্লেইনভিল শহরে গেইল আর ডেভিড কার্টারের ঘরে। আট বছর বয়স থেকেই নানা মানসিক সমস্যা দেখা দেয় তার মাঝে, নিজের ক্ষতি করার প্রবৃত্তিও প্রস্ফুটিত হতে থাকে। ফলশ্রুতিতে ১৪ বছর বয়স থেকেই নানারকম ওষুধ তার জীবনের অনুষঙ্গ হয়ে যায়, কাউন্সেলিংয়ের সাহায্যও নিতে হয় তাকে। এর বাইরে পরিবার, বন্ধুবান্ধব আর পাড়াপ্রতিবেশীরা তাকে বর্ণনা করেছেন মোটামুটি নিরীহ প্রকৃতির মেয়ে হিসেবেই। তবে মানসিক কারণেই কার্টার তার সামাজিক যেকোনো সম্পর্ক নিয়ে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগতেন, সবার কাছ থেকে অতিরিক্ত মনোযোগ প্রত্যাশা করতেন সবসময়।

মিশেল কার্টার © Boston Globe/Getty Images

দুই শহরের দুই কিশোর-কিশোরীর প্রথম দেখা ফ্লোরিডাতে, ২০১২ সালে, তাদের আত্মীয়দের বাসায় ছুটি কাটাতে গিয়ে। দুজনেরই মানসিক সমস্যার ইতিহাস থাকায় নিজেদের মধ্যে মিল খুঁজে পায় তারা। ফলে পরিচয় খুব দ্রুতই বন্ধুত্বে গড়ায়, যা অব্যাহত থাকে ম্যাসাচুসেটসে ফিরে আসার পরেও। তাদের বাসস্থানের দূরত্ব ছিল ৩৫ কিলোমিটার, তারপরও সরাসরি দেখাসাক্ষাৎ খুব একটা হতো না। বেশিরভাগ সময়ে মুঠোফোনে বার্তা পাঠিয়ে কথা চলতো।

রয় আর কার্টার মুঠোফোন বার্তার মাধ্যমে যোগাযোগ বজায় রাখে; Image Source: people.com

২০১১ সালে রয়ের মা লিন সেইন্ট ডেনিস আর বাবা কনরাড রয় জুনিয়র বিচ্ছেদের আবেদন করলে রয়ের মানসিক জগত নতুন করে বিশৃঙ্খল হয়ে যায়। ২০১২ সালের অক্টোবরে মানসিকভাবে বিক্ষিপ্ত রয় আত্মহত্যার চিন্তা করে। কার্টারের সাথে কীভাবে এই কাজ করা যায় তা নিয়ে পরামর্শও করে সে। তবে এই সময় কার্টার তাকে এরকম কিছু করতে নিরুৎসাহিত করে, পরামর্শ দেয় উপযুক্ত চিকিৎসা নিতে।  

আত্মহত্যা

২০১৪ সালের দিকে কার্টার নতুন একটি ওষুধ খেতে আরম্ভ করে। পরবর্তীতে দাবি করা হয়েছিল- এই ওষুধের প্রভাবে তার বিচারবুদ্ধি ভোঁতা হয়ে গিয়েছিল। এই সময় রয়ের মানসিক অবস্থারও অবনতি ঘটে।

স্কুলে কিন্তু রয় ভালোই করছিল। ভালো ফলাফলের দরুণ ম্যাসাচুসেটসের ফিচবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার জন্য বৃত্তি পায় সে। তবে সে পারিবারিক জাহাজের ব্যবসায় পূর্ণ মনোযোগ দিতে মনস্থির করে, ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ ছেড়ে দেয়। ফুল টাইম ব্যবসা চালাতে তার জাহাজের ক্যাপ্টেনের লাইসেন্স দরকার ছিল, সেটাও হয়ে যায়।

জুনে রয় বান্ধবীকে লিখে পাঠাল- তাদের রোমিও-জুলিয়েটের মতো হওয়া উচিত। এই সময় থেকে তার বার্তাগুলোতে ক্রমশই আত্মহননের প্রবল ইচ্ছে দেখা যায়। ১২ জুলাই পরিবারের সাথে সমুদ্রসৈকতে বেড়াতে যায় সে, সেখান থেকে ফিরে বন্ধুর বাসায় ডিনারের দাওয়াতের কথা বলে বেরিয়ে পড়ে। এই ছিল পরিবারের সাথে তার শেষ দেখা।

রয় চলে যাবার একটু পর কার্টার তার বোনকে বার্তা পাঠিয়ে জানতে চায় সে কোথায়। স্বাভাবিকভাবেই রয়ের বলে যাওয়া কথাই জানানো হয় তাকে। তবে রয় মিথ্যে বলেছিলেন, গাড়ি চালিয়ে তিনি আদতে চলে যান কাছেই ফেয়ারহ্যাভেন শহরের এক দোকানের পার্কিং লটে (Kmart)। এখানে বসে রয় গাড়ির ভেতরে কার্বন মনোক্সাইড গ্যাস টেনে নেবার বন্দোবস্ত করেন। এ সময় কার্টারের সাথে তার বার্তা চালাচালি হয়। অবশেষে নিজের পরিকল্পনা কাজে পরিণত করেন তিনি।

ফেয়ারহ্যাভেনের এই কে-মার্টের পার্কিং লটে নিজের প্রাণ কেড়ে নেন রয়; Image Source: wbsm.com

ওদিকে রয় না ফেরায় পরিবার চিন্তায় পড়ে যায়, পুলিশ খবর দেয় তারা। পরদিন ভোরে গাড়ির ভেতরে তার মৃতদেহ খুঁজে পায় পুলিশ। পাশে পড়ে থাকা চিঠিতে পরিবারের কাছে ক্ষমা চেয়ে যায় রয়।

ঘটনার অব্যবহিত পরে রয়ের মা পুলিশকে জানান, সেদিন তার ছেলে ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন ছিল বটে, তবে গুরুতর কিছু তার মনে হয়নি। বরং, মায়ের সাথে বেশ খোলামেলা আলাপ করেছিল সে, সেইন্ট ডেনিস তাকে পরামর্শ দিয়েছিলেন তাড়াহুড়ো করে কোনো সিদ্ধান্ত না নিতে। তিনি উল্লেখ করেন, আলোচনার মাঝে একবার বাইরে গিয়ে মুঠোফোন দেখছিল রয়, তবে সেটা বিশেষ কিছু মনে হয়নি তার কাছে।

রয়ের মৃত্যুর ঘটনা জানাজানি হলে কার্টার তার মাকে দুঃখ প্রকাশ করে বার্তা পাঠায়। তবে রয়ের সাথে তার সম্পর্ক নিয়ে কেউ খুব বেশি কিছু জানত না, কারণ ফ্লোরিডা থেকে ফিরে আসার পর সামনাসামনি তাদের দেখা হয় কদাচিৎ।

সন্দেহের বীজ

পুলিশ প্রথমে আর আট-দশটা আত্মহত্যার মতো করেই রয়ের কেসকে দেখেছিল। তবে একজন গোয়েন্দা একপর্যায়ে রয়ের টেক্সট মেসেজগুলো পড়ে দেখার কথা ভাবেন, এরপরই তাদের চিন্তাধারা পরিবর্তন হয়ে যায়।

কার্টারের আচার-আচরণও এ সময় রয়ের পরিবার ও বন্ধুবান্ধবের সন্দেহ উদ্রেক করে। শেষকৃত্যের দিন উপস্থিত হয়ে প্রচুর কান্নাকাটি করে সে, যা অনেকের কাছেই মেকি মনে হয়। বার বার রয়ের পরিবারকে সান্ত্বনা দিতে চেষ্টা করে সে, যদিও তাদের কারো সাথেই কার্টারের তেমন কোনো পরিচয় ছিল না। তবে এসব নিয়ে কোনো কথা হয়তো উঠত না যদি না মুঠোফোন বার্তা ভিন্ন কিছুর ইঙ্গিত দিত।

কার্টার এ সময় রয়ের স্মরণে একটি অনুষ্ঠানেরও আয়োজন করে। তবে সেটা সে করে প্লেইনভিলে, ম্যাটাপয়সেটে নয়। উদ্দেশ্য কিন্তু ভালোই ছিল- অনুষ্ঠান থেকে প্রাপ্ত অর্থ রয়ের পরিবার আর আত্মহত্যা নিরুৎসাহিত করতে যারা কাজ করে তাদের দেয়া হয়। কিন্তু রয়ের শহরে আয়োজন না করায় অনেকে মনে করল- এ কাজ কার্টার করেছে কেবল নিজের নাম ফাটাতে, পুলিশও এ সময় নড়েচড়ে বসে। এমনকি কার্টারের সহপাঠীরাও সন্দিহান হয়ে পড়ে। রয়ের মৃত্যুর দু’মাস পরে তাদের একজনকে বার্তা পাঠায় কার্টার, “আমি চাইলে তাকে থামাতে পারতাম।

নিজের এক বন্ধুর কাছে রয়ের আত্মহত্যার ব্যাপারে তথ্য দেয় কার্টার; Image Source: historyvshollywood.com 

আটক ও বিচার

কার্টারের ব্যাপারে চাঞ্চল্যকর তথ্য আসতে থাকলে পুলিশ তার সাথে কথা বলে। তাদের কাছে সে অবশ্য ভিন্ন কথা বলল, রয়ের সাথে ১২ জুলাই তার কথা হয়েছিল সত্যি, কিন্তু মাঝপথে ফোন কেটে যায় এবং সংযোগ স্থাপনের পরবর্তী সকল চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছিল।

এরপর ডিটেকটিভরা সার্চ ওয়ারেন্ট বের করে কার্টারে মুঠোফোন জব্দ করেন। সেখানে খুঁজে পেলেন রয়ের সাথে তার কথোপকথন। তারা এটাও দেখতে পান যে, ১২ জুলাই একপর্যায়ে রয়ের মনে ভাবান্তর উপস্থিত হলে সে গাড়ি থেকে বেরিয়ে গিয়েছিল, কার্টার তাকে উদ্বুদ্ধ করে আবার ফিরে যেতে।

২০১৫ সালের শুরুতে কার্টারকে গ্রেফতার করা হয়। ফেব্রুয়ারির ৫ তারিখ অনিচ্ছাকৃত নরহত্যার দায়ে তার নামে অভিযোগ গঠন করে পুলিশ। ঘটনার সময় তার বয়স ছিলো ১৭, তবে আদালতের নির্দেশে তাকে প্রাপ্তবয়স্কের মতো করেই বিচার করা হবে বলে জানানো হয়।

কার্টারের উকিলেরা দাবি করেন- আত্মহত্যায় প্ররোচনা আইনে সংজ্ঞায়িত নয়, এবং অপরাধ হিসেবে একে তখনও অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। তারা ম্যাসাচুসেটসের সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত চলে যান, যুক্তি দেন যে- টেক্সট মেসেজের ভিত্তিতে তাদের মক্কেলকে অভিযুক্ত করা হচ্ছে তা ‘ফ্রি স্পিচে’র মধ্যে পড়ে, এবং এই ‘ফ্রি স্পিচ’ সংবিধানের প্রথম সংশোধনী দ্বারা স্বীকৃত। তবে আদালত বিবাদীর যুক্তিতর্ক খারিজ করে পুলিশের আনা চার্জ বহাল রাখে। সুতরাং, শুনানীর দিনক্ষণ ঠিক করা হলো।

আদালতে মিশেল কার্টার © Matt West/The Boston Herald via AP, Pool

২০১৭ সালের ৫ জুন আদালত বসে। কার্টারের সামনে জুরির মাধ্যমে বিচারের সুযোগ থাকলেও সম্ভবত উকিলদের পরামর্শে তা প্রত্যাখ্যান করে সে। তার উকিলেরা মনে করেছিল- মানুষ পত্রপত্রিকায় কার্টারের নামে নেতিবাচক সংবাদে প্রভাবিত হয়ে আছে, ফলে জুরিদের রায় তার বিপক্ষে যেতে পারে। অন্যদিকে, একজন বিচারক আইনগত দিক বিচার-বিশ্লেষণে অধিক দক্ষ, তার কাছে কার্টার আর রয়ের টেক্সট মেসেজকে ‘ফ্রিডম অব এক্সপ্রেশন’ হিসেবে উপস্থাপনের সুযোগ রয়েছে। তাদের ধারণা ছিল- এর জোরে পুরো কেস বাতিল করে দিতে পারবেন তারা। 

কার্টারের বিচারক ছিলেন ম্যাসাচুসেটসের ব্রিস্টল কাউন্টির কিশোর আদালতের বিচারক লরেন্স মুনিজ। দুই সপ্তাহ ধরে চলা শুনানীর সময় সরকারি উকিল রয়কে করা তার বিভিন্ন টেক্সট মেসেজ পড়ে শোনান। তাদের বক্তব্য ছিল- এর দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, রয়কে আত্মহত্যা করতে প্ররোচিত করেছে কার্টার, এমনকি যখন সে পিছিয়ে আসতে চেয়েছিল, তখন মেয়েটিই তাকে প্রভাবিত করে আত্মহত্যা করায়।

লরেন্স মুনিজ; Image Source: gazettenet.com

তারা বেশ কয়েকটি বার্তা প্রদর্শন করেন যেখানে কার্টার রয়কে আত্মহত্যার বেশ কিছু উপায়ও বাতলে দিয়েছে। তারা দাবি করেন, কেবল নিজের ওপর মনোযোগ আকর্ষণের অসুস্থ উন্মাদনায় এই কাণ্ড ঘটিয়েছে সে, রয়ের মৃত্যুকে পুঁজি করে তার কাজকর্ম সেটাই প্রমাণ করে।

রয়ের পরিবার আদালতে উপস্থিত ছিল। তার খালা কিম বজ্জি সাংবাদিকদের জানান, তারা বিশ্বাস করেন রয়ের মৃত্যুর দায় কার্টারেরই। শুধু তা-ই নয়, এরপর তাদের কাছে এসে শোক প্রকাশ করার দুঃসাহসও করেছে সে। 

তবে, বিবাদী পক্ষের উকিলেরাও শক্ত যুক্তি-প্রমাণ দেখান। এটা সত্যি যে রয়ের মানসিক স্বাস্থ্য কখনোই খুব একটা ভাল ছিল না, এবং অতীতে আত্মহত্যার চেষ্টার ইতিহাস আছে তার। ফলে তারা পুরো বিষয়টি রয়ের নিজস্ব পরিকল্পনা বলেই উপস্থাপন করেন, কার্টার সেখানে বলির পাঁঠা হয়ে দাঁড়িয়েছে মাত্র।

কার্টারের পক্ষে আরো কিছু বিষয় ছিল। বছরখানেক আগের মুঠোফোন বার্তাগুলো থেকে এমনকি পুলিশ পর্যন্ত স্বীকার করে নেয় যে, একসময় বন্ধুকে আত্মহত্যা না করতে প্রচুর উপদেশ দিয়েছে কার্টার, এমনকি তাকে চিকিৎসকের কাছেও যেতে বারবার বলেছে। তাছাড়া মানসিক অসুস্থতার দরুণ নিয়মিত ওষুধ সেবনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় তার বিচারবুদ্ধিও কিন্তু সম্পূর্ণ স্বাভাবিক বলে মনে করা যায় না। কার্টারের অন্যতম উকিল জোসেফ কোটাল্ডো সরাসরি বলেন যে, রয় নিজে পরিকল্পনা করে আত্মহত্যা করেছে, এর মধ্যে কার্টারকে অহেতুক টেনে আনা হয়েছে।

রায় ও দণ্ড

শেষ পর্যন্ত বাদীপক্ষের সাথেই একমত হন বিচারক। জুন মাসে মুনিজ তাকে অনিচ্ছাকৃত হত্যার দায়ে দোষী সাব্যস্ত করেন। তার ব্যবহারকে হঠকারী এবং অপরিণামদর্শী বলে অভিহিত করেন তিনি। তাকে সর্বমোট আড়াই বছরের কারাদণ্ড দেন তিনি, তবে এর মধ্যে দেড় বছরই কেবল তাকে জেলে কাটাতে হবে। মুক্তির পর পাঁচ বছরের প্রবেশনের নির্দেশও দেন তিনি।  

কার্টারর উকিলেরা রায়ের বিরুদ্ধে আপীল করেন। তারা ‘ফ্রি স্পিচ’ এবং সংবিধানের ‘ফার্স্ট অ্যামেন্ডমেন্টের’ আওতায় মুঠোফোন বার্তা ব্যবহার করে দোষ প্রমাণের বিরুদ্ধে আবেদন করেন। তবে আপীল বাতিল খারিজ হয়ে যায়। ২০১৯ সালে ম্যাসাচুসেটসের ব্রিস্টল কাউন্টি কারাগারে সাজা খাটতে শুরু করে কার্টার। ভালো ব্যবহারের সুবাদে ২০২০ সালের জানুয়ারিতে মেয়ার শেষের চার মাস আগেই মুক্তি পায় সে।

ভালো ব্যবহারের জন্য মেয়াদপূর্তির আগেই ছাড়া পেয়ে যায় কার্টার; Image Source: bostonglobe.com

কার্টার যখন জেলখানায়, তখন তার উকিলেরা সরাসরি যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্ট বরাবর আবেদনের অনুমতি চান। তাদের যুক্তি ছিল- মুনিজের রায়ে সংবিধানের প্রথম সংশোধনীর লঙ্ঘন হয়েছে। তবে সুপ্রিম কোর্ট তাদের বক্তব্য শুনতে অস্বীকৃতি জানায়।

কার্টার মুক্তি পাবার পর রয়ের মা পরিবারের পক্ষ হয়ে একটি বক্তব্য দেন। সেখানে গত কয়েকবছর তাদের পাশে থাকার জন্য সবাইকে ধন্যবাদ দেন তিনি। তিনি জানান, এখন সময় হয়েছে বিষয়টির সমাপ্তি টেনে জীবনকে এগিয়ে নেয়ার।

কার্টারের বিচার যুক্তরাষ্ট্র তথা আইনের ইতিহাসে বেশ গুরুত্বপূর্ণ। কিশোর-কিশোরীদের মানসিক স্বাস্থ্যের ব্যাপারে বেশ বড় একটি আলো ফেলে এটি। আত্মহত্যার প্ররোচনাকে কীভাবে সংজ্ঞায়িত করা যায়, কীভাবেই বা এর বিচার সম্ভব- সেটা নিয়ে উদাহরণ তৈরি করতেই ভূমিকা রাখে এই কেস। যদিও এখনও প্রচুর বিতর্ক রয়ে গেছে যে একজনের আত্মহত্যায় আরেকজনকে দণ্ড প্রদান কতটা যুক্তিসঙ্গত। স্বাভাবিকভাবেই প্রতিটি ঘটনা এক্ষেত্রে আলাদা বিবেচনার দাবি রাখবে, সবগুলোকে একই নিক্তিতে ফেলে মাপা যাবে না। 

কার্টার আর রয়ের ঘটনা নিয়ে হুলু নির্মাণ করেছে ‘দ্য গার্ল ফ্রম প্লেইনভিল’; Image Source: bostonglobe.com

অতি সম্প্রতি কার্টার আর রয়ের ঘটনা নিয়ে স্ট্রিমিং সাইট হুলু প্রচার শুরু করেছে ‘দ্য গার্ল ফ্রম প্লেইনভিল’ নামে একটি মিনি সিরিজ। সত্য আর কল্পনার মিশেলে রয়ের মৃত্যু আর বিচারের ঘটনা তুলে আনা হয়েছে সেখানে। 

Related Articles