যখন দুইটি প্রতিবেশি রাষ্ট্রের মধ্যে বিরোধ দেখা দেয়, তখন সীমিত সময়ের জন্য (কিংবা কিছু কিছু ক্ষেত্রে, স্থায়ীভাবে) রাষ্ট্র দুইটির মধ্যেকার সীমান্ত বন্ধ করে দেওয়া খুব স্বাভাবিক একটি ঘটনা। কিন্তু যদি রাষ্ট্র দুইটির মধ্যে একটি যদি অপর প্রতিবেশীকে নিজের থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন করে একটি দ্বীপে পরিণত করার সিদ্ধান্ত নেয়, তাহলে কেমন হবে? কার্যত, এরকম ঘটনা ইতিহাসে অত্যন্ত বিরল বললে অত্যুক্তি করা হবে না। কিন্তু ২০১৮ সালে সত্যি সত্যি একটি রাষ্ট্র এরকম প্রকল্প হাতে নিয়েছিল। রাষ্ট্রটি হচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যের সর্ববৃহৎ আরব রাষ্ট্র সৌদি আরব, এবং তাদের লক্ষ্য ছিল তাদের ‘অবাধ্য’ প্রতিবেশী কাতারকে একটি বিচ্ছিন্ন দ্বীপে পরিণত করা।
মাত্র ১১,৫৮১ বর্গ কি.মি. আয়তনবিশিষ্ট এবং প্রায় ২৮ লক্ষ জনসংখ্যার অধিকারী ক্ষুদ্র রাষ্ট্র কাতার। কাতার মূলত একটি উপদ্বীপ। ভূগোলের পরিভাষায়, সাধারণত যে ভূখণ্ডের তিনদিকে জল ও একদিকে স্থল, সেটিকে ‘উপদ্বীপ’ (peninsula) হিসেবে আখ্যা দেওয়া হয়। কাতারের উত্তর, পূর্ব ও পশ্চিমে পারস্য উপসাগর এবং দক্ষিণে সৌদি আরব অবস্থিত, অর্থাৎ কাতার একটি উপদ্বীপ। সৌদি আরব কাতারের একমাত্র প্রতিবেশী রাষ্ট্র। বাহরাইন উপসাগরের মাধ্যমে কাতার নিকটবর্তী রাষ্ট্র বাহরাইন থেকে ভৌগোলিকভাবে বিচ্ছিন্ন। সুতরাং, ৮৭ কি.মি. দীর্ঘ সৌদি–কাতারি সীমান্তই বিশ্বের সঙ্গে কাতারের একমাত্র স্থল সংযোগপথ।
১৯৭১ সালে ব্রিটেনের কাছ থেকে স্বাধীনতা অর্জনের পর কাতারের ক্ষমতাসীন ‘আল–থানি’ রাজবংশ প্রাথমিকভাবে তাদের বৃহৎ প্রতিবেশী সৌদি আরবের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রেখেছিল, এবং এসময় ক্ষুদ্র কাতারকে সৌদি আরবের একটি ‘আশ্রিত রাষ্ট্র’ (protectorate) হিসেবে বিবেচনা করা হতো। কিন্তু ১৯৯০–এর দশকে সৌদি আরব ও কাতারের মধ্যে সীমান্ত নিয়ে দ্বন্দ্ব দেখা দেয়, এবং ১৯৯২ সালে সৌদি ও কাতারি সীমান্তরক্ষীদের মধ্যে এক রক্তাক্ত সংঘর্ষে কয়েকজন কাতারি সীমান্তরক্ষী নিহত হয়। এর ফলে কিছু সময়ের জন্য রাষ্ট্র দুইটির মধ্যেকার সম্পর্কের ব্যাপক অবনতি ঘটে। কেবল ২০০১ সালে এসেই কাতার ও সৌদি আরবের মধ্যবর্তী সীমান্ত চূড়ান্তভাবে নির্ণীত হয়, এবং এর মধ্য দিয়ে সৌদি–কাতারি সীমান্ত বিরোধের নিষ্পত্তি ঘটে।
এদিকে, ১৯৯৫ সালে হামাদ বিন খলিফা আল–থানি একটি রক্তপাতহীন অভ্যুত্থানের মাধ্যমে কাতারের শাসনক্ষমতা দখল করেন, এবং একটি স্বতন্ত্র পররাষ্ট্রনীতি অনুসরণ করতে আরম্ভ করেন, যেটি সৌদি আরবকে ক্ষুব্ধ করে। কাতারের ওপর চাপ প্রয়োগের উদ্দেশ্যে ২০০২ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত সৌদি আরব কাতার থেকে তাদের রাষ্ট্রদূত প্রত্যাহার করে রেখেছিল। কিন্তু ২০১০–এর দশকে আরব বসন্তের প্রেক্ষাপটে তাদের মধ্যে সম্পর্কোন্নয়ন ঘটে, এবং বিভিন্ন আঞ্চলিক ইস্যুতে তারা সাদৃশ্যপূর্ণ অবস্থান গ্রহণ করে। সৌদি আরব ও কাতার উভয়েই সিরীয় গৃহযুদ্ধে বিভিন্ন সিরীয় সুন্নি মিলিট্যান্ট গ্রুপকে সমর্থন করে, এবং ইয়েমেনে সৌদি–নেতৃত্বাধীন জোটের সামরিক অভিযানে কাতার সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে।
কিন্তু ২০১৭ সাল নাগাদ বিভিন্ন বিষয়কে কেন্দ্র করে সৌদি আরব ও তার মিত্র রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে কাতারের সম্পর্কের পুনরায় অবনতি ঘটে, এবং ২০১৭ সালের ৫–৬ জুন মার্কিন রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমর্থনপুষ্ট হয়ে সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহরাইন ও মিসর কাতারের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করে। এর মধ্য দিয়ে আরম্ভ হয় ‘কাতার কূটনৈতিক সঙ্কট’। পরবর্তীতে ইয়েমেন, কমোরোস, মৌরিতানিয়া ও মালদ্বীপ কাতারের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করে, জিবুতি ও নাইজার কাতারের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ককে নিম্ন পর্যায়ে নামিয়ে আনে, এবং ইরিত্রিয়া ও গ্যাবনও সৌদি–নেতৃত্বাধীন জোটের প্রতি তাদের সমর্থন ব্যক্ত করে। সৌদি আরব কাতারের সঙ্গে তাদের স্থল সীমান্ত স্থায়ীভাবে বন্ধ করে দেয় এবং সৌদি–নেতৃত্বাধীন জোট তাদের জলসীমা ও আকাশসীমাকে কাতারের জন্য নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। সৌদি কেন্দ্রীয় ব্যাংকও কাতারি ব্যাংকগুলোর সঙ্গে লেনদেন বন্ধ করে দেয়।
সৌদি–নেতৃত্বাধীন জোট কাতারকে ১৩টি শর্ত সংবলিত একটি চরমপত্র প্রদান করে, এবং এই শর্তগুলো কাতার পূরণ করার আগ পর্যন্ত কাতারের ওপর তাদের অবরোধ বজায় রাখার ঘোষণা দেয়। এই শর্তগুলোর মধ্যে রয়েছে– ইরানের সঙ্গে কূটনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক নিম্নতম পর্যায়ে নামিয়ে আনা, কাতারে অবস্থিত তুর্কি সামরিক ঘাঁটি বন্ধ করা ও তুর্কি–কাতারি সামরিক সম্পর্ক হ্রাস করা, আঞ্চলিক মিলিট্যান্ট গ্রুপগুলোকে সহায়তা প্রদান বন্ধ করা, মিসরের মুসলিম ব্রাদারহুডকে সমর্থন প্রদান বন্ধ করা, সৌদি জোটভুক্ত রাষ্ট্রগুলোর অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ থেকে বিরত থাকা এবং ‘আল–জাজিরা’সহ অনুরূপ প্রচারমাধ্যমগুলো বন্ধ করে দেয়া। এক কথায়, সৌদি আরব ও তার মিত্র রাষ্ট্রগুলোর মূল লক্ষ্য ছিল কাতারের স্বতন্ত্র পররাষ্ট্রনীতির অবসান ঘটিয়ে এটিকে পুনরায় সৌদি আরবের একটি ‘বর্ধিতাংশে’ পরিণত করা।
কিন্তু বিপুল প্রাকৃতিক সম্পদের (প্রধানত প্রাকৃতিক গ্যাস ও খনিজ তেল) অধিকারী কাতার বিশ্বের সবচেয়ে সমৃদ্ধ রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে একটি, এবং কাতারের জনসাধারণের মাথাপিছু আয় বিশ্বের মধ্যে সর্বোচ্চ। আয়তনের তুলনায় কাতারের আঞ্চলিক প্রভাব বহুগুণ বেশি, এবং ইরান ও তুরস্ক কাতারকে সৌদি–নেতৃত্বাধীন অবরোধের প্রভাব কাটিয়ে উঠতে সহায়তা করেছে। ফলে সৌদি–নেতৃত্বাধীন জোটের প্রত্যাশাকে ভুল প্রমাণিত করে কাতার তাদের প্রদত্ত শর্তাবলি মেনে নিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। উল্টো কাতার বর্তমানে সৌদি আরবের সঙ্গে এক ব্যয়বহুল অস্ত্র প্রতিযোগিতায় লিপ্ত।
এমতাবস্থায় কাতারকে শাস্তি প্রদানের উদ্দেশ্যে সৌদি আরব ২০১৮ সালে একটি অভিনব পরিকল্পনা প্রণয়ন করে। তুলনামূলকভাবে ক্ষুদ্র সৌদি–কাতারি সীমান্ত বরাবর তারা একটি খাল খনন করার পরিকল্পনা করে, এবং এর মধ্যে দিয়ে তারা কাতারকে সৌদি আরব থেকে সম্পূর্ণভাবে বিচ্ছিন্ন করে ফেলার আগ্রহ প্রকাশ করে। কাতারের তিনদিকে পারস্য উপসাগর অবস্থিত, এবং যদি সৌদি–কাতারি সীমান্তে পরিকল্পনা মোতাবেক একটি খাল খনন করা হয়, তাহলে রাষ্ট্রটি কার্যত একটি দ্বীপে পরিণত হবে। এই প্রস্তাবিত খালটির নামকরণ করা হয়েছিল ‘সালওয়া খাল’। উল্লেখ্য, সৌদি আরব ও কাতারের মধ্যে একমাত্র অফিসিয়াল বর্ডার ক্রসিংয়ের নাম হচ্ছে সালওয়া।
২০১৮ সালের এপ্রিলে সৌদি সরকারপন্থী ওয়েবসাইট ‘সাবক’–এ এই প্রকল্পের কথা প্রচারিত হয়। পরিকল্পনা অনুযায়ী, প্রস্তাবিত খালটির দৈর্ঘ্য হবে ৭০ কি.মি. (বা ৪৩ মাইল) এবং প্রস্থ হবে ২০০ মিটার। খালটি পশ্চিম থেকে পূর্বে পারস্য উপসাগরের সঙ্গে যুক্ত হবে, এবং সৃষ্ট চ্যানেলটি হবে ২০ মিটার গভীর, যেটি দিয়ে ২৯৫ মিটার পর্যন্ত দীর্ঘ ও ৩৩ মিটার পর্যন্ত চওড়া মালবাহী ও যাত্রীবাহী নৌযান চলাচল করতে পারবে। প্রস্তাবিত খালটি নির্মাণ করতে খরচ পড়বে প্রায় ২৮০ কোটি (বা ২.৮ বিলিয়ন) সৌদি রিয়াল বা প্রায় ৭৪ কোটি ৭০ লক্ষ (বা ৭৪৭ মিলিয়ন) মার্কিন ডলার।
২০১৮ সালে সৌদি প্রচারমাধ্যম জানায় যে, ৯টি স্থানীয় কোম্পানি এই প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছে, এবং খাল খননের কাজে অভিজ্ঞ ৫টি কোম্পানিকে এই প্রকল্পের সঙ্গে জড়িত হওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে, যাদের মধ্যে থেকে একটিকে এই প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ দেয়া হবে। অবশ্য সৌদি ও কাতারি সরকার এই প্রকল্প সম্পর্কে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো মন্তব্য করা থেকে বিরত থেকেছে, যদিও ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের সিনিয়র উপদেষ্টা সৌদ আল–কাহতানি টুইট করেছিলেন যে, সালওয়া খাল প্রকল্প একটি বিরাট ঐতিহাসিক প্রকল্প যেটি ঐ অঞ্চলের ভূগোলকে বদলে দেবে!
সৌদি সরকারি/সরকারপন্থী প্রচারমাধ্যমে সালওয়া খাল প্রকল্পটিকে একটি বিরাট অর্থনৈতিক ও অবকাঠামোগত প্রকল্প হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে। তাদের বক্তব্য অনুযায়ী, জলপথটিকে একটি বৃহৎ বাণিজ্যিক ও পর্যটনকেন্দ্রে রূপান্তরিত করা হবে। জলপথটি বরাবর কমপক্ষে ৫টি বিলাসবহুল রিসোর্ট নির্মাণ করা হবে, যেগুলোর নিজস্ব সৈকত থাকবে! তদুপরি, জলপথটির তীরে ৩টি সমুদ্রবন্দর নির্মাণ করা হবে, এবং অঞ্চলটিকে একটি ‘মুক্ত বাণিজ্য অঞ্চল’ (free trade zone) হিসেবে ঘোষণা করা হবে।
অবশ্য জলপথটিকে একদম সৌদি–কাতারি সীমান্ত বরাবর নির্মাণ করা হবে না। বরং সৌদি–কাতারি সীমান্ত থেকে সৌদি ভূখণ্ডের প্রায় ১ কি.মি. ভিতরে এই জলপথটি নির্মাণ করা হবে। প্রস্তাবিত খাল এবং সৌদি–কাতারি সীমান্তের মধ্যবর্তী অঞ্চলটিকে একটি সামরিক অঞ্চলে পরিণত করা হবে, এবং এই অঞ্চলকে পারমাণবিক বর্জ্যের একটি ডাম্পিং গ্রাউন্ডে পরিণত করা হবে। পরিকল্পনার শেষ অংশটির কারণে কিছু কিছু পশ্চিমা প্রচারমাধ্যমে এটিকে ‘draconian’ বা মাত্রাতিরিক্ত হিসেবে আখ্যায়ত করেছে। সৌদি আরবের উদ্দেশ্য পরিষ্কার– তারা কাতারকে পরিবেশগতভাবেও ক্ষতিগ্রস্ত করতে চেয়েছিল।
অবশ্য প্রকল্পটির অর্থনৈতিক তাৎপর্য প্রকৃতপক্ষে কতটুকু এবং প্রকল্পটি আদৌ টেকসই কিনা, সেটি নিয়ে বিশ্লেষকরা যথেষ্ট সন্দিহান ছিলেন। তাদের এই সংশয়ের পিছনে নানাবিধ কারণ ছিল।
প্রথমত, প্রস্তাবিত খালটি যে অঞ্চলে নির্মিত হওয়ার কথা রয়েছে, সেটিতে জনবসতি কম, এবং অঞ্চলটি সৌদি আরবের প্রধান শিল্পকেন্দ্রগুলো থেকে অনেক দূরে। ফলে এই অঞ্চলে উক্ত খালটি নির্মাণ করলেও সেটি ব্যবহারের বাণিজ্যিক চাহিদা কতটুকু হবে, সেটি নিয়ে সংশয় বিদ্যমান।
দ্বিতীয়ত, প্রস্তাবিত খালটি কাতারের নিকটবর্তী হওয়ায় সৌদি–কাতারি সীমান্ত খোলা থাকলে জলপথটির বাণিজ্যিক ও পর্যটন সংক্রান্ত গুরুত্ব বহুগুণ বৃদ্ধি পেত, কারণ এই বাণিজ্য ও পর্যটনের একটি বড় অংশ কাতারের সঙ্গে হতে পারত। কিন্তু সৌদি–কাতারি সীমান্ত যেহেতু বন্ধ থাকবে (এবং কার্যত সৌদি আরব থেকে কাতারকে চিরতরে বিচ্ছিন্ন করার জন্য এই খালটি নির্মাণ করার প্রস্তাব করা হয়েছিল), সেহেতু এই প্রকল্পে কাতারের কোনো ভূমিকা থাকবে না। ফলে খালটির অর্থনৈতিক তাৎপর্য বহুলাংশে হ্রাস পাবে।
তৃতীয়ত, নিকটবর্তী পারস্য উপসাগর দিয়ে যেসব নৌযান চলাচল করে, তাদের জন্য এই সংকীর্ণ খাল দিয়ে যাতায়াত করা অর্থনৈতিকভাবে খুব একটা যুক্তিযুক্ত নয়। ফলে তারা এই জলপথ ব্যবহার করতে আগ্রহী হবে, এই সম্ভাবনা কম। এর ফলে খালটির অর্থনৈতিক তাৎপর্য আরো হ্রাস পাবে।
চতুর্থত, প্রস্তাবিত খালটি ও সৌদি–কাতারি সীমান্তের মধ্যবর্তী অঞ্চলে যে বেদুইন গোত্রগুলো যাতায়াত করত, খাল নির্মাণের ফলে তাদের এই অঞ্চলে যাতায়াত বন্ধ হয়ে যাবে। এ সম্পর্কে প্রকল্পটিতে কোনোকিছুই উল্লেখ করা হয়নি। যদিও এটির সঙ্গে খালটির অর্থনৈতিক তাৎপর্যের সম্পর্ক সামান্য, কিন্তু স্থানীয় বেদুইনদের জন্য প্রস্তাবিত খালটি একটি সমস্যাজনক প্রকল্প।
সর্বোপরি, উক্ত অঞ্চলকে পারমাণবিক বর্জ্যের ডাম্পিং গ্রাউন্ডে পরিণত করার যে পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে, পরিবেশগতভাবে সেটির প্রভাব অত্যন্ত ক্ষতিকর হতে পারে, এবং এই ক্ষতিকর প্রভাব কেবল কাতারের ক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ থাকবে, এটি নিশ্চিতভাবে বলা সম্ভব নয়।
এমতাবস্থায় সালওয়া খাল প্রকল্পটি যতটা না অর্থনৈতিক ছিল, তার চেয়ে বেশি ছিল রাজনৈতিক প্রকল্প। এই খালটি নির্মাণ করা হলে কাতার ভৌগোলিকভাবে একটি বিচ্ছিন্ন রাষ্ট্র হয়ে পড়ত, এবং এটিই ছিল এই খাল নির্মাণের পরিকল্পনার পশ্চাতে সৌদি সরকারের মূল লক্ষ্য। কিন্তু এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করলে কাতারের ওপর সৌদি প্রভাব বৃদ্ধি পাবে, এই সম্ভাবনা যেমন সীমিত, তেমনিভাবে ভবিষ্যতে সৌদি–কাতারি সম্পর্কের উন্নতি ঘটলেও প্রস্তাবিত খালটি এক্ষেত্রে একটি বড় অন্তরায় হয়ে দাঁড়াবে।
ধারণা করা যায়, সবকিছু বিবেচনা করেই সৌদি সরকার এখন পর্যন্ত এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের পথে আর অগ্রসর হয়নি। কিছু কিছু প্রচারমাধ্যমের মতে, সৌদি সরকারের এই অভিনব প্রকল্পটি কার্যত বর্তমানে পরিত্যক্ত। ভবিষ্যতে যদি সৌদি–কাতারি সম্পর্কের উন্নতি ঘটে, সেক্ষেত্রে এই প্রকল্পটি কখনো বাস্তবায়িত হওয়ার সম্ভাবনাও ক্ষীণ। কিন্তু প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হোক আর নাই হোক, মানব ইতিহাসের একটি অভিনব প্রকল্প হিসেবে সালওয়া খাল প্রকল্পটির নাম থেকে যাবে।