মরক্কো ও ইসরায়েলের গোপন সম্পর্কের বৃত্তান্ত

২০২০ সালের ১৩ আগস্ট উপসাগরীয় আরব রাষ্ট্র সংযুক্ত আরব আমিরাত (সংক্ষেপে ‘ইমারাত’) কর্তৃক ইসরায়েলকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি প্রদানের ঘটনা আন্তর্জাতিক প্রচারমাধ্যমে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। উপসাগরীয় আরব রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে ইমারাতই প্রথম আনুষ্ঠানিকভাবে ইসরায়েলকে স্বীকৃতি প্রদান করল, কিন্তু ইসরায়েলকে স্বীকৃতি প্রদানের ক্ষেত্রে সমগ্র আরব বিশ্বের মধ্যে ইমারাত প্রথম নয়। ইতোপূর্বে আরো তিনটি আরব রাষ্ট্র (মিসর, জর্দান ও মৌরিতানিয়া) ইসরায়েলকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি প্রদান করেছে, যদিও পরবর্তীতে এদের মধ্যে একটি রাষ্ট্র (মৌরিতানিয়া) স্বীকৃতি প্রত্যাহার করে নিয়েছে। এক্ষেত্রে একটি বিষয় লক্ষণীয়, এই ৪টি আরব রাষ্ট্রের মধ্যে কোনোটিই ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সঙ্গে সঙ্গে ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দেয়নি। পরপর ৪টি ঘোষিত (১৯৪৮–১৯৪৯, ১৯৫৬, ১৯৬৭, ১৯৭৩) ও ১টি অঘোষিত (১৯৬৭–১৯৭০) যুদ্ধে সামরিকভাবে পরাজিত হওয়ার পর মিসর ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক ‘স্বাভাবিকীকরণ’ (normalization) করেছে। পরপর ৩টি যুদ্ধে (১৯৪৮–১৯৪৯, ১৯৬৭, ১৯৭৩) সামরিকভাবে পরাজিত হওয়ার পর পর জর্দান ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক ‘স্বাভাবিকীকরণ’ করেছে। ঠিক একইভাবে কয়েক দশক ধরে ইসরায়েলের বিরোধিতা করার পর ইরান ও তুরস্কের সঙ্গে ভূরাজনৈতিক দ্বন্দ্বের প্রেক্ষাপটে ইমারাত ইসরায়েলকে স্বীকৃতি প্রদান করেছে।

এই রাষ্ট্রগুলোর বাইরে একটি আরব রাষ্ট্র রয়েছে, যেটির সঙ্গে এখনো ইসরায়েলের আনুষ্ঠানিক কূটনৈতিক সম্পর্ক নেই, কিন্তু রাষ্ট্রটি ১৯৫৬ সালে স্বাধীনতা লাভের পর থেকেই ইসরায়েলের সঙ্গে গোপনে সহযোগিতামূলক সম্পর্ক বজায় রেখে চলেছে। রাষ্ট্রটি হচ্ছে উত্তর আফ্রিকার আরব–বার্বার অধ্যুষিত ‘আল–মামলাকা আল–মাগরিবিয়া’ বা ‘মরক্কো রাজ্য’, সংক্ষেপে ‘আল–মাগরিব’ বা মরক্কো। ৪,৪৬,৫৫০ বর্গ কি.মি. (মরোক্কান সরকারের মতে, ৭,১০,৮৫০ বর্গ কি.মি.) আয়তনবিশিষ্ট এবং প্রায় ৩ কোটি ৬৪ লক্ষ জনসংখ্যা–অধ্যুষিত আরব লীগের সদস্য এই রাষ্ট্রটি ১৯৫৬ সালের ৭ এপ্রিল ফ্রান্স ও স্পেনের কাছ থেকে স্বাধীনতা অর্জনের পর থেকেই ইসরায়েলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রেখে চলেছে।

১৯৪৮ সালের ১৪ মে ফিলিস্তিনের ভূমিতে জায়নবাদী ইহুদিরা ইসরায়েল নামক একটি স্বাধীন রাষ্ট্র ঘোষণা করে। সমগ্র আরব বিশ্বে এর তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয় এবং ফরাসি–অধিকৃত ও স্পেনীয়–অধিকৃত মরক্কোতেও এর ব্যতিক্রম ঘটেনি। মরক্কোর জনসাধারণ ফিলিস্তিনি ভূমিতে ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার তীব্র বিরোধী ছিল। মরক্কোতে অতি প্রাচীনকাল থেকে ইহুদিদের বসবাস ছিল এবং ইসরায়েলের স্বাধীনতা ঘোষণাকালে সমগ্র মুসলিম বিশ্বের মধ্যে মরক্কোয় সবচেয়ে বেশি সংখ্যক ইহুদি বসবাস করত। এ সময় মরক্কোতে বসবাসকারী ইহুদিদের সংখ্যা ছিল ২,৫০,০০০ থেকে ৩,৫০,০০০। ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ফলে একদিকে ইহুদিদের প্রতি মরক্কোর মুসলিমদের তীব্র ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছিল, অন্যদিকে জায়নবাদীরা মরক্কোসহ বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ইহুদিদের ইসরায়েলে অভিবাসনের জন্য উৎসাহিত করছিল। বিশেষত মরক্কোর ইহুদিদের মধ্যেকার দরিদ্রতর অংশকে জায়নবাদীরা ইসরায়েলে যাওয়ার জন্য উৎসাহ দিচ্ছিল, কারণ এরা ইসরায়েল রাষ্ট্রের জন্য সস্তা শ্রমের উৎস হয়ে উঠতে পারত।

১৯৫৪ সালে ইসরায়েলে মরক্কো থেকে আগত ইহুদিরা; Source: Wikimedia Commons

এ পরিস্থিতিতে ১৯৪৮ সালের ২৩ মে মরক্কোর আলাউয়ি রাজবংশভুক্ত রাজা পঞ্চম মোহাম্মেদ জাতির উদ্দেশ্যে একটি ভাষণে মরোক্কান ইহুদিদের জায়নবাদী কার্যক্রমে যুক্ত হওয়া থেকে বিরত থাকা আহ্বান জানান এবং ঐতিহাসিকভাবে মরক্কোর ইহুদিদের রাষ্ট্র সুরক্ষা দিয়ে এসেছে দাবি করে মরোক্কান মুসলিমদের ইহুদিবিরোধী সহিংসতা থেকে বিরত রাখার আহ্বান জানান। কিন্তু একজন মরোক্কান ইহুদি বিস্ফোরকসহ ইসরায়েলে যাওয়ার উদ্দেশ্যে সীমান্ত অতিক্রম করে আলজেরিয়ায় প্রবেশকালে ধরা পড়লে ১৯৪৮ সালের ৭–৮ জুন ফরাসি–নিয়ন্ত্রিত মরক্কোর ওয়েজদা ও জেরেদা শহরে ইহুদিবিরোধী দাঙ্গা শুরু হয়। এই দাঙ্গায় ৪৩ জন ইহুদি ও ১ জন ফরাসি নিহত হয় এবং প্রায় ১৫০ জন ইহুদি আহত হয়। এই ঘটনার পর ১৯৪৮–১৯৪৯ সালে প্রায় ১৮,০০০ ইহুদি মরক্কো ত্যাগ করে ইসরায়েলে চলে যায়।

১৯৫৬ সালে মরক্কো স্বাধীনতা লাভ করে এবং তখন থেকে আলাউয়ি রাজবংশ মরক্কোর শাসনক্ষমতায় অধিষ্ঠিত রয়েছে। স্বাধীন মরক্কোতে সরকারিভাবে কোনো ইহুদিবিরোধী নীতি গ্রহণ করা হয়নি। রাজা পঞ্চম মোহাম্মেদ ইহুদিবিদ্বেষী ছিলেন না এবং মরক্কো স্বাধীন হওয়ার পর রাষ্ট্রটির আইনসভায় ৩ জন ইহুদি সদস্য ছিল। ১৯৫৬ থেকে ১৯৬১ সাল পর্যন্ত মরোক্কান ইহুদিদের দেশত্যাগ নিষিদ্ধ ছিল, কিন্তু এ সময় বেআইনিভাবে মরোক্কান ইহুদিদের দেশত্যাগ অব্যাহত থাকে। ১৯৬১ সালে মরক্কো ও ইসরায়েলের মধ্যে একটি অনানুষ্ঠানিক চুক্তি হয় এবং চুক্তি অনুযায়ী মরক্কোর সরকার দেশটির ইহুদিদের ইসরায়েলে গমনের অনুমতি প্রদান করে। বিনিময়ে দেশত্যাগকারী প্রত্যেক ইহুদির জন্য ইসরায়েল মরক্কোকে একটি নির্দিষ্ট অঙ্কের অর্থ প্রদান করতে সম্মত হয়। ১৯৬১ সালে রাজা মোহাম্মেদের মৃত্যু হলে তার শোকানুষ্ঠানে মুসলিমদের পাশাপাশি ইহুদিরাও যোগ দান করেছিল। মোহাম্মেদের মৃত্যুর পরবর্তী তিন বছরে আরো প্রায় ৮০,০০০ ইহুদি মরক্কো ত্যাগ করে।

১৯৬১ সালে রাজা মোহাম্মেদের মৃত্যুর পর তার ছেলে দ্বিতীয় হাসান মরক্কোর নতুন রাজা হন। মরক্কোর ইতিহাসে হাসান একজন বিতর্কিত ব্যক্তিত্ব। একদিকে তিনি ফিলিস্তিনি স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রতি সমর্থন জ্ঞাপন করেন, আরব ও ইসরায়েলিদের মধ্যে শান্তি স্থাপনের প্রচেষ্টা চালিয়ে ‘শান্তির দূত’ হিসেবে খ্যাতি পান এবং মরক্কোকে প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের মধ্যে (এবং ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনিদের মধ্যে) যোগসূত্র হিসেবে প্রতিষ্ঠার প্রয়াস পান। কিন্তু অন্যদিকে তার শাসনামলে মরক্কোয় শত শত রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীকে বিনা বিচারে কারারুদ্ধ করে রাখা হয়, অনেককে গুম করা হয় এবং মরক্কো সামরিক শক্তিবলে পশ্চিম সাহারা দখল করে নেয়। সর্বোপরি, হাসান আনুষ্ঠানিকভাবে ফিলিস্তিনি স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রতি সমর্থন জানান, কিন্তু গোপনে ইসরায়েলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সামরিক, অর্থনৈতিক ও নিরাপত্তামূলক সম্পর্ক গড়ে তোলেন।

তার এই সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে ‘রিয়েলপলিটিক’ ও ‘ভূরাজনৈতিক বিবেচনা’র পাশাপাশি আদর্শগত সামঞ্জস্যও সক্রিয় ছিল। মরক্কো ও ইসরায়েল উভয়েই স্নায়ুযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে নিজ নিজ স্বার্থে পশ্চিমা বিশ্বের পক্ষাবলম্বন করেছিল এবং তাদের উভয়েই রাজনৈতিকভাবে কমিউনিজম ও উগ্র আরব জাতীয়তাবাদের বিরোধী ছিল। ইসরায়েল আরব ও মুসলিম বিশ্ব এবং আফ্রিকায় প্রভাব বিস্তারের অংশ হিসেবে মরক্কোর সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তুলতে আগ্রহী ছিল, অন্যদিকে রাজা হাসান মরক্কোর অভ্যন্তরে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখা ও রাজতন্ত্রবিরোধী হুমকি প্রতিহত করার ক্ষেত্রে ইসরায়েলি সহায়তা লাভের উদ্দেশ্যে ইসরায়েলের সঙ্গে গোপন সম্পর্ক বজায় রাখতে ইচ্ছুক ছিলেন।

মরক্কোর রাজা দ্বিতীয় হাসান গোপনে ইসরায়েলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কে গড়ে তুলেছিলেন; Source: Morocco World News

১৯৬৭ সালের আরব–ইসরায়েল যুদ্ধে ইসরায়েলের পরিপূর্ণ বিজয়ে মরক্কোর গুরুত্বপূর্ণ অবদান ছিল। যুদ্ধের দুই বছর আগে ১৯৬৫ সালের সেপ্টেম্বরে আরব লীগভুক্ত রাষ্ট্রগুলোর নেতারা মরক্কোর বন্দর নগরী কাসাব্লাঙ্কায় অনুষ্ঠিত একটি সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেন। রাজা হাসান এই সম্মেলনে ইসরায়েলি গোয়েন্দাদের অনুপ্রবেশের অনুমতি প্রদান করেছিলেন। ইসরায়েলের আভ্যন্তরীণ গোয়েন্দা সংস্থা ‘শিন বেত’ এবং বৈদেশিক গোয়েন্দা সংস্থা ‘মোসাদ’–এর সদস্যরা এই সম্মেলনে অনুপ্রবেশ করেছিল, কিন্তু আরব নেতারা তাদের চিনে ফেলতে পারেন এই আশঙ্কায় হাসান তাদেরকে সেখান থেকে চলে যেতে বলেন।

সম্মেলনটির উদ্দেশ্য ছিল ইসরায়েলের বিরুদ্ধে সম্ভাব্য যুদ্ধের জন্য আরব রাষ্ট্রগুলোর অভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ। কিন্তু সম্মেলন চলাকালে আরব রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে অন্তর্দ্বন্দ স্পষ্ট হয়ে ওঠে এবং মিসরীয় রাষ্ট্রপতি গামাল আব্দেল নাসের ও জর্দানীয় রাজা হুসেইনের মধ্যে তীব্র বাকবিতণ্ডা হয়। এটিও স্পষ্ট হয় যে, আরব রাষ্ট্রগুলো যুদ্ধের জন্য মোটেই প্রস্তুত নয়। রাজা হাসান অন্যান্য নেতাদের অগোচরে পুরো সম্মেলনের কথোপকথন রেকর্ড করে রাখেন এবং এই রেকর্ডিং ইসরায়েলি গোয়েন্দাদের হাতে তুলে দেন। এর ফলে আরবদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে ইসরায়েলিরা স্পষ্ট ধারণা লাভ করে এবং সম্ভাব্য যুদ্ধের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করে, ফলে ১৯৬৭ সালের যুদ্ধে বিভক্ত ও অপ্রস্তুত আরব রাষ্ট্রগুলোকে তারা মাত্র ৬ দিনের যুদ্ধে পরাজিত করতে সক্ষম হয়। মরক্কোয় এই অভিযানটিকে মোসাদের তৎকালীন পরিচালক মেয়ার আমিত সংস্থাটির ইতিহাসের অন্যতম ‘গৌরবময় সাফল্য’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছিলেন।

ইসরায়েলকে এই গুরুত্বপূর্ণ সহায়তা প্রদানের বিনিময়ে মরক্কো ইসরায়েলের কাছে পাল্টা একটি সহায়তা দাবি করে। মরক্কোর প্রখ্যাত বামপন্থী নেতা মেহদি বেন বারকাকে খুঁজে বের করে তাকে নির্মূল করার জন্য মরক্কোর সিনিয়র কর্মকর্তারা মোসাদকে অনুরোধ করেন। বেন বারকা ছিলেন মরক্কোর বামপন্থী দল ‘জনপ্রিয় শক্তিসমূহের জাতীয় সঙ্ঘ’ (ফরাসি: Union Nationale des Forces Populaires, ‘UNPF’) এর নেতা। ১৯৬২ সালে মরক্কোর রাজা হাসানকে উৎখাত করার একটি ষড়যন্ত্রে তিনি জড়িত ছিলেন এবং ১৯৬৩ সালে সীমান্ত নিয়ে মরক্কো ও আলজেরিয়ার মধ্যে যুদ্ধ শুরু হলে বামপন্থী আলজেরিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ না করার জন্য তিনি মরোক্কান সৈন্যদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৬৩ সালে মরোক্কান সরকার তাকে নির্বাসিত করে এবং নানা দেশ ঘুরে বামপন্থী রাজনীতিতে অংশগ্রহণের পর ১৯৬৫ সালে তিনি ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে অবস্থান করছিলেন। দেশের বাইরে থাকলেও রাজা হাসান তাকে হুমকি হিসেবে বিবেচনা করছিলেন এবং মরোক্কান গোয়েন্দা সংস্থা বেন বারকাকে খুঁজে বের করতে ব্যর্থ হওয়ায় তিনি এক্ষেত্রে ইসরায়েলি সহায়তা প্রার্থনা করেন। ১৯৬৫ সালের অক্টোবরে মোসাদ সদস্যরা বেন বারকাকে খুঁজে বের করে এবং ফরাসি গোয়েন্দা সংস্থার সহযোগিতায় তাকে অপহরণ করে। দুই দিন নির্যাতনের পর বেন বারকাকে খুন করা হয়

১৯৬৭ সালের আরব–ইসরায়েল যুদ্ধ চলাকালে মরক্কো আরব রাষ্ট্রগুলোকে কূটনৈতিক সমর্থন প্রদান করে, কিন্তু সরাসরি যুদ্ধে অংশগ্রহণ থেকে বিরত ছিল। যুদ্ধে আরবদের পরাজয় মরক্কোর জনসাধারণের মধ্যে ইসরায়েলবিরোধী মনোভাব তীব্র করে তোলে। এই যুদ্ধের পর অবশিষ্ট মরোক্কান ইহুদিদের অধিকাংশ মরক্কো ত্যাগ করে, কিন্তু এদের সিংহভাগ ইসরায়েলে না গিয়ে ইউরোপ অথবা উত্তর আমেরিকার রাষ্ট্রগুলোতে চলে যায়। এ পর্যায়ে মরক্কো ত্যাগকারী ইহুদিদের মধ্যে অধিকাংশই ছিল উচ্চশিক্ষিত। পরবর্তীতে রাজা হাসান দেশত্যাগী ইহুদিদের মরক্কোয় প্রত্যাবর্তনের জন্য আহ্বান জানান, কিন্তু তাতে কোনো কাজ হয়নি।

মরোক্কান সরকারের অনুরোধে নির্বাসিত মরোক্কান বামপন্থী নেতা মেহদি বেন বারকাকে মোসাদ সদস্যরা ১৯৬৫ সালে অপহরণ ও খুন করে; Source: Yabiladi News

১৯৭৩ সালের আরব–ইসরায়েল যুদ্ধে মরক্কো সক্রিয়ভাবে আরব জোটের পক্ষে অংশগ্রহণ করে। নিষ্ক্রিয় থাকলে মরক্কোর জনসাধারণ অত্যন্ত ক্ষিপ্ত হয়ে উঠতে পারে এই আশঙ্কায় এবং অন্যান্য আরব রাষ্ট্রের চাপের কারণে মরক্কো এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। যুদ্ধ চলাকালে মরক্কো মিসরে একটি পদাতিক ব্রিগেড এবং সিরিয়ায় একটি সাঁজোয়া রেজিমেন্ট প্রেরণ করে। মোট ৫,৫০০ জন মরোক্কান সৈন্য ৩০টি ট্যাঙ্ক এবং ৫২টি যুদ্ধবিমান নিয়ে এই যুদ্ধে অংশ নেয়। মিসর ও সিরিয়ায় যেসব আরব রাষ্ট্র স্বেচ্ছাসেবক সৈন্যদল প্রেরণ করেছিল তাদের মধ্যে আকৃতির দিক থেকে মরোক্কান সৈন্যদলটি ছিল তৃতীয় (প্রথম ছিল ইরাক এবং দ্বিতীয় ছিল জর্দান)। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ফরাসি সশস্ত্রবাহিনীর অংশ হিসেবে উত্তর আফ্রিকা ও ইউরোপের মাটিতে ‘মরোক্কান অভিযাত্রী বাহিনী’ হিসেবে যুদ্ধে অংশ নেয়ার পর এটি ছিল মরোক্কানদের জন্য প্রথম যুদ্ধ। যুদ্ধ চলাকালে মরোক্কান বিমানবাহিনী ইসরায়েলের ওপর বোমাবর্ষণও করেছিল। এই যুদ্ধে একজন কর্নেলসহ বেশ কয়েকজন মরোক্কান সৈন্য নিহত হয় এবং ৬ জন সৈন্য ইসরায়েলিদের হাতে বন্দি হয়।

যুদ্ধের পরও মরক্কো ও ইসরায়েলের মধ্যে গোপন সম্পর্ক বজায় ছিল। ১৯৭৫ সালে মরক্কোর সীমান্তবর্তী স্পেনীয় উপনিবেশ ‘স্পেনীয় সাহারা’ বা ‘পশ্চিম সাহারা’য় স্বাধীনতাকামী ‘পোলিসারিও ফ্রন্ট’ গেরিলাদের সঙ্গে ক্রমবর্ধমান দ্বন্দ্বের প্রেক্ষাপটে স্পেন এতদঞ্চল থেকে নিজেকে প্রত্যাহার করে নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। মরক্কো ও মৌরিতানিয়া অঞ্চলটি দখলের জন্য সৈন্য প্রেরণ করে। পোলিসারিও ফ্রন্ট মরোক্কান ও মৌরিতানীয় দখলদারিত্বের তীব্র বিরোধিতা করে, ১৯৭৬ সালে অঞ্চলটিতে ‘সাহরাউয়ি আরব গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র’ নামে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র ঘোষণা করে এবং মরক্কো ও মৌরিতানিয়ার বিরুদ্ধে গেরিলা যুদ্ধ শুরু করে।

গেরিলা আক্রমণের ফলে প্রায় ২,০০০ মৌরিতানীয় সৈন্য নিহত হওয়ার পর ১৯৭৯ সালে মৌরিতানিয়া অঞ্চলটি থেকে সৈন্য প্রত্যাহার করে নেয়, কিন্তু মরক্কোর কয়েক হাজার সৈন্য নিহত ও প্রায় ২,৫০০ সৈন্য বন্দি হওয়ার পরও মরক্কো অঞ্চলটি দখল করতে বদ্ধপরিকর থাকে এবং আন্তর্জাতিক নিন্দা উপেক্ষা করে অঞ্চলটি আনুষ্ঠানিকভাবে দখলের ঘোষণা দেয়। পশ্চিম সাহারার ৮০% অঞ্চল বর্তমানে মরক্কোর নিয়ন্ত্রণাধীন এবং ‘দক্ষিণাঞ্চলীয় প্রদেশসমূহ’ নামে পরিচিত; বাকি ২০% পোলিসারিও ফ্রন্টের অধীন এবং ‘মুক্তাঞ্চল’ নামে পরিচিত।

গেরিলা আক্রমণ রোধ করার জন্য মরক্কো অঞ্চলদ্বয়ের মধ্যে বালুর তৈরি ২,৭০০ কি.মি. দীর্ঘ একটি দেয়াল নির্মাণ করেছে, যেটি ‘মরোক্কান পশ্চিম সাহারা দেয়াল’ নামে পরিচিত এবং ১,২০,০০০ মরোক্কান সৈন্য এটি পাহারা দেয়। ইসরায়েল এই গেরিলাদের দমনের জন্য মরক্কোকে সামরিক সহায়তা প্রদান করেছে, রাজকীয় মরোক্কান সশস্ত্রবাহিনীকে প্রশিক্ষণ দিয়েছে এবং এই দেয়ালটি তৈরি করতেও মরক্কোকে সহায়তা করেছে, যদিও মরক্কো ও ইসরায়েল উভয়েই এই বিষয়টিকে অস্বীকার করেছে।

এসময় মিসর ও ইসরায়েলের মধ্যে শান্তি আলোচনা চলাকালে মরক্কো তাদের মধ্যে মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা পালন করে। ১৯৭৬ সালে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী ইৎঝাক রাবিন গোপনে মরক্কো সফর করেন। এসময় মিসরীয় রাষ্ট্রপতি আনোয়ার সাদাত ইসরায়েল সফরের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন এবং এটি নিয়ে আলোচনার জন্য ইসরায়েলি পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোশে দায়ান ১৯৭৭ সালে দুই বার মরক্কো সফর করেন। মরোক্কান সরকার সবগুলো সফরের খবরই গোপন রাখে, অন্যদিকে ইসরায়েলও এই ব্যাপারে মৌনতা অবলম্বন করে। এভাবে ১৯৭৯ সালে স্বাক্ষরিত মিসর–ইসরায়েল শান্তিচুক্তি স্বাক্ষরের ক্ষেত্রে মরক্কো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল।

মরক্কোর ‘দক্ষিণাঞ্চলীয় প্রদেশসমূহ’ ও পোলিসারিও ফ্রন্ট–নিয়ন্ত্রিত ‘মুক্তাঞ্চল’কে বিভক্তকারী ‘মরোক্কান পশ্চিম সাহারা দেয়াল’। ধারণা করা হয়, এই দেয়ালটি নির্মাণে ইসরায়েল মরক্কোকে সহায়তা করেছিল; Source: Deutsche Welle

১৯৮০–এর দশকে রাজা দ্বিতীয় হাসান মধ্যপ্রাচ্যের শান্তি প্রক্রিয়ার স্থবিরতা নিয়ে হতাশ হয়ে পড়ছিলেন এবং এই প্রক্রিয়াটিকে সচল করার জন্য মরক্কোয় তিনি যে সম্মেলন আহ্বান করেছিলেন সেটিও অনুষ্ঠিত হয়নি। এই প্রেক্ষাপটে ১৯৮৬ সালের ২৩ জুলাই ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী শিমন পেরেজ মরক্কো সফর করেন এবং রাজা হাসানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। মরোক্কান সরকার এই সফরের বিষয়টি জনসাধারণের কাছ থেকে গোপন রাখার চেষ্টা করলেও ইসরায়েলি প্রচারমাধ্যমে এই তথ্যটি প্রকাশিত হয় এবং এর ফলে ইসরায়েলবিরোধী আরব রাষ্ট্রগুলো মরক্কোর ওপর ক্ষিপ্ত হয়। সিরিয়া সাময়িকভাবে মরক্কোর সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করেছিল। কিন্তু মরক্কোর সঙ্গে ইসরায়েলের সম্পর্ক বজায় থাকে এবং ১৯৯০–এর দশকে জর্দান ও ‘ফিলিস্তিনি মুক্তি সংস্থা’র (‘Palestine Liberation Organization’, PLO) সঙ্গে ইসরায়েলের শান্তিচুক্তি স্বাক্ষরের ক্ষেত্রেও মরক্কো মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা গ্রহণ করে। ১৯৯৪ সালে পিএলও এবং ইসরায়েলের মধ্যে শান্তিচুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ার পর মরক্কো ও ইসরায়েলের মধ্যে নিম্ন পর্যায়ের কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপিত হয়। ১৯৯৯ সালে রাজা দ্বিতীয় হাসানের মৃত্যুর পর ইসরায়েলি নেতৃবৃন্দ আনুষ্ঠানিকভাবে শোক প্রকাশ করে।

দ্বিতীয় হাসানের মৃত্যুর পর তার ছেলে ষষ্ঠ মোহাম্মেদ মরক্কোর নতুন রাজা হন। তিনি ক্ষমতায় আরোহণের কিছুদিনের মধ্যেই ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনিদের দ্বিতীয় ‘ইন্তিফাদা’ আরম্ভ হয় এবং এই প্রেক্ষাপটে জনরোষ এড়াতে মরক্কো ইসরায়েলের সঙ্গে স্থাপিত নিম্ন পর্যায়ের কূটনৈতিক সম্পর্ক ছেদ করে। কিন্তু রাষ্ট্র দুইটির মধ্যে সহযোগিতা অব্যাহত থাকে। রাজা ষষ্ঠ মোহাম্মেদের সিনিয়র উপদেষ্টা আন্দ্রে আজৌলায় একজন ইহুদি এবং তিনি মরক্কোর রাজনীতিতে অত্যন্ত প্রভাবশালী। উল্লেখ্য, মরক্কোয় বর্তমানে মাত্র ৩,০০০ ইহুদি বসবাস করে, কিন্তু দেশটির ব্যবসা-বাণিজ্যে এবং আংশিকভাবে রাজনীতি ও সংস্কৃতিতে তাদের প্রভাব অনুপাতের চেয়ে অনেক বেশি। মরক্কো একমাত্র আরব রাষ্ট্র যেটিতে একটি ‘ইহুদি জাদুঘর’ বিদ্যমান।

মরক্কো ও ইসরায়েলের মধ্যে অর্থনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে, কিন্তু তার মাত্রা খুব বেশি নয়। উদাহরণস্বরূপ, ২০১৪ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে মরক্কো ও ইসরায়েলের মধ্যে প্রায় ১৪ কোটি ৯০ লক্ষ (বা ১৯৪ মিলিয়ন) মার্কিন ডলার সমমূল্যের বাণিজ্য সম্পাদিত হয়েছে। রাষ্ট্র দুইটির মধ্যে অর্থনীতির যে খাতটি ক্রমশ প্রসারিত হচ্ছে সেটি হলো পর্যটন খাত। ইসরায়েলি পাসপোর্ট নিয়ে মরক্কোয় প্রবেশ করা যায়। ২০১৯ সালে প্রায় ৪৫,০০০ ইসরায়েলি পর্যটক মরক্কো ভ্রমণ করেছে, অন্যদিকে প্রায় ৩,০০০ মরোক্কান পর্যটক ইসরায়েল ভ্রমণ করেছে। এর মধ্য দিয়ে রাষ্ট্র দুইটির জনসাধারণের মধ্যে সরাসরি যোগাযোগ বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং ইসরায়েলি বিশ্লেষকরা আশা করছেন, এর মধ্য দিয়ে মরোক্কান জনসাধারণের মধ্যে বিদ্যমান ইসরায়েলবিরোধী মনোভাব আংশিকভাবে হলেও হ্রাস পাবে৷

২০২০ সালে কোভিড–১৯ মহামারীর মধ্যে ইসরায়েলি পর্যটকরা মরক্কো থেকে প্রত্যাবর্তন করছে; Source: The Times of Israel

সাম্প্রতিক সময়ে ইরানবিরোধিতা মরক্কো ও ইসরায়েলের মধ্যে সহযোগিতার নতুন ক্ষেত্র সৃষ্টি করেছে। মরোক্কান সরকার ইরানকে মরক্কোর আভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করার দায়ে অভিযুক্ত করেছে এবং এই অভিযোগে ২০১৮ সালের মে মাসে ইরানের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করেছে। অন্যদিকে, ইসরায়েল সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ইরানকে তার অস্তিত্বের প্রতি হুমকি হিসেবে বিবেচনা করতে শুরু করেছে এবং ইরানের সঙ্গে কার্যত একটি ‘স্নায়ুযুদ্ধে’ জড়িয়ে পড়েছে। এই প্রেক্ষাপটে রাষ্ট্র দুটি পারস্পরিক সহযোগিতায় লিপ্ত। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইরানের ওপর সর্বোচ্চ অর্থনৈতিক চাপ প্রয়োগের যে নীতি গ্রহণ করেছে, সেটিকে রাবাত ও জেরুজালেম উভয়েই সমর্থন করেছে। ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে পোল্যান্ডের ওয়ারশতে এবং ২০২০ সালের মার্চে মরক্কোর মারাক্কেশে মধ্যপ্রাচ্যে ‘সন্ত্রাসবাদ’ (বস্তুত ইরানি কার্যকলাপ) দমন নিয়ে যে বহুপাক্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে, তাতে মরক্কো ও ইসরায়েল উভয়েই অংশ নিয়েছে। সম্প্রতি রাষ্ট্র দুটির মধ্যে সামরিক সহযোগিতাও বৃদ্ধি পেয়েছে এবং ২০২০ সালের জানুয়ারিতে মরক্কো ৪ কোটি ৮০ লক্ষ (বা ৪৮ মিলিয়ন) মার্কিন ডলার মূল্যে ৩টি ইসরায়েলি গোয়েন্দা ড্রোন ক্রয় করেছে

সাম্প্রতিক সময় মরক্কো ও ইসরায়েলের মধ্যে সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণ ও পূর্ণ কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের আলোচনা শুরু হয়েছে। এই উদ্দেশ্যে ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে নিউ ইয়র্কে মরক্কোর পররাষ্ট্রমন্ত্রী নাসের বৌরিতা ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। ইসরায়েল প্রস্তাব দিয়েছে যে, তারা ‘পশ্চিম সাহারা’র ওপর মরক্কোর দখলদারিত্বকে স্বীকৃতি প্রদানের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সম্মতি আদায় করবে, বিনিময়ে মরক্কো ও ইসরায়েলের মধ্যে পূর্ণ কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপিত হবে। কিন্তু মরক্কোর বিভিন্ন সংস্থা ও জনসাধারণ এরকম চুক্তির ঘোর বিরোধী। তাদের মতে, ফিলিস্তিনিদের অধিকারের প্রতি সমর্থন মরোক্কানদের জাতীয় পরিচিতির অংশ, সুতরাং ‘দুই রাষ্ট্র সমাধানে’র ভিত্তিতে ফিলিস্তিনি–ইসরায়েলি দ্বন্দ্বের নিরসন হওয়ার আগ পর্যন্ত ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক ‘স্বাভাবিকীকরণ’ মরক্কোর জন্য উচিত হবে না।

কিন্তু মরক্কোতে জনমতের ভিত্তিতে নয়, বরং শাসকশ্রেণির স্বার্থের ভিত্তিতে পররাষ্ট্রনীতি প্রণীত হয়। সংযুক্ত আরব আমিরাতের সঙ্গে ইসরায়েলের সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণের প্রেক্ষাপটে এরপর মরক্কোর সঙ্গে সম্পর্কের ‘স্বাভাবিকীকরণ’ ঘটতে যাচ্ছে– এ রকম সংবাদ ইতোমধ্যেই ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যমে প্রচারিত হয়েছে। বৃহত্তর মধ্যপ্রাচ্যের বর্তমান ভূরাজনৈতিক পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে এজন্য বলা যায়, ইসরায়েলের সঙ্গে মরক্কোর সম্পর্কের ‘স্বাভাবিকীকরণ’ এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র।

This is a Bengali article about the secret relations between Morocco and Israel. Necessary sources are hyperlinked within the article.

Source of the featured image: MEE/Freepik.com

Related Articles

Exit mobile version