পুরো দুনিয়ায় ভারতীয় সাধুদের অলৌকিকতা এবং আধ্যাত্মিক শক্তির গল্প অত্যন্ত জনপ্রিয়। সুদূর ইউরোপ, আমেরিকা থেকে হাজার হাজার আগ্রহী ভারতে ছুটে এসেছে আধ্যাত্মিক জ্ঞানের সন্ধানে। প্রত্যেক সাধুর ছিল বৈচিত্র্যময় জীবনযাপন এবং স্বতন্ত্র সাধনা পদ্ধতি। ভারতের কিছু গুরুত্বপূর্ণ সাধককে নিয়ে সাজানো হয়েছে ‘ভারতীয় সাধুদের গল্প’। আজকে আপনাদের কাছে উপস্থাপন করব ভারতের বিখ্যাত এবং রহস্যময় সাধক শ্রীতৈলঙ্গনাথ স্বামীজিকে।
শ্রীতৈলঙ্গনাথ স্বামীজি
বারানসীর পঞ্চগঙ্গার প্রাচীনঘাটের নিকটে মহাকায় উলঙ্গ সাধু পদ্মাসনে চোখ বন্ধ করে বসে আছেন। তার সামনে হাজার নর-নারী সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে আছে। একজন একজন করে সাধুর পায়ে মাথা ঠেকিয়ে স্থান ত্যাগ করছে। এরা সবাই সন্ধ্যাকালীন স্নান শেষে সাধুকে প্রণাম করে হৃষ্ট মনে আপন নিবাসে ফেরত যাচ্ছে। কিন্তু নির্বিকার ধ্যানগম্ভীর সাধুর এতে কোনো ভ্রূক্ষেপ নেই।
বারানসির আপামর জনতার কাছে উলঙ্গ, মৌন সাধক তৈলঙ্গস্বামী নামে পরিচিত। ভক্তরা তাকে ভালবেসে সচল বিশ্বনাথ বলেও সম্ভাষণ করেন।
শ্রীতৈলঙ্গনাথ স্বামীজির জন্মসাল নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। তবে সপ্তদশ শতকের প্রথম দিকেই তার জন্ম বলে বেশিরভাগ ইতিহাসবিদের দাবি। প্রচলিত আছে, অন্ধ্রদেশের ভিজিয়ানা গ্রামের হোলিয়া নামক অঞ্চলে তার জন্ম। তার জন্মদাতার নাম নরসিংহ রাও এবং মাতার নাম বিদ্যাবতী রাও। নরসিংহ রাও এ অঞ্চলে ধনবান ব্যক্তি ছিলেন। ধার্মিকতা আর সততার জন্য জনপ্রিয় ছিলেন হোলিয়া জনগণের কাছে। তার স্ত্রী বিদ্যাবতীরও ভক্তিমতী, সাধিকা হিসেবে সুনাম ছিল যথেষ্ট।
নরসিংহ রাও তার স্ত্রী বিদ্যাবতীর সাথে অনেকদিন যাবত ঘর করার পরেও সন্তানসুখ লাভ করছিলেন না। বংশরক্ষার তাগিদে নরসিংহ রাও পুনরায় বিয়ে করতে বাধ্য হন। কিন্তু কয়েকমাসের মধ্যে বিদ্যাবতী সবাইকে অবাক করে অন্তঃসত্ত্বা হন। প্রচলিত আছে, তিনি রাতদিন নিজ গৃহে প্রতিষ্ঠিত শিবলিঙ্গের পূজাতেই মগ্ন থাকতেন এবং অসুস্থ অসহায় মানুষের সেবাতে নিজেকে নিয়োজিত করেন। তার ভক্তি আর সেবার গুণে মুগ্ধ হয়ে দেবাধিদেব তার ওপর কৃপাধারা বর্ষিত করেন।
১৬০৭ খ্রিষ্টাব্দে বিদ্যাবতীর কোল আলো করে জন্মগ্রহণ করে এক পুত্রসন্তান। শিবের করুণায় জন্ম, তাই তার নাম দেওয়া হয় শিবরাম। এই শিবরামই হলেন শ্রীতৈলঙ্গনাথ স্বামীজি। ছোটবেলা থেকে শিবরাম ছিলেন উদাসীন। কখনো নদীর ধারে, কখনো শ্মশানঘাটে চুপটি করে বসে থাকতেন। দুরন্তপনা এবং বালকসুলভ আচরণ ছিল না। বাল্যকাল থেকেই যেন তিনি ছিলেন একজন ক্ষুদে সন্ন্যাসী।
সংসারের প্রতি ছেলের উদাসীনতা নরসিংহ রাও-এর দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তিনি ছেলেকে বিয়ের জন্য জোর করতে লাগলেন। সবাইকে অবাক করে দিয়ে বিদ্যাবতী শিবরামের পাশে এসে দাঁড়ান। নরসিংহ রাওকে বোঝান, শিবরাম শিবের শরণাপন্ন হবার জন্যই জন্ম নিয়েছেন। তাই তাকে সেটা করতে দেওয়াটাই উত্তম।
বিদ্যাবতীর কথা মেনে নেন নরসিংহ রাও, বিয়ের জন্য আর কোনো জোর-জবরদস্তি করেননি। শিবরামের সন্ন্যাসী হবার প্রথম বাধা তার মায়ের জন্য দূর হয়ে যায়। বিদ্যাবতী সংসারের পাশাপাশি একাগ্রচিত্তে শিবের আরাধনা করতেন। সেই আরাধনা থেকে লব্ধ জ্ঞান তিনি ছেলের সাথে ভাগ করে নেওয়া করা শুরু করলেন। শিবরামের সাধন জীবনে মা-ই ছিলেন তার প্রথম শিক্ষক।
জীবনযুদ্ধে শিবরাম তার পিতা-মাতা দুজনকেই হারিয়ে ফেলেন। তখন তার বয়স ছিল চল্লিশের সন্নিকটে। যখন তার পিতা নরসিংহ রাও পরলোকগমন করেন, এর বারো বছরের ব্যবধানে তার মা বিদ্যাবতীও মারা যান। মায়ের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে সংসারের প্রতি যা যোগাযোগ ছিল, তা-ও ছিন্ন হয়ে গেল। সবাইকে জানিয়ে দিলেন, তিনি আর সংসারে বাস করবেন না।
আত্মীয়স্বজনের হাজার অনুরোধ, ছোট ভাইয়ের কান্নায়ও তাকে আটকানো গেলো না। পৈতৃক সকল সম্পত্তি ছোট ভাই শ্রীধরকে দান করে দিলেন। শ্রীধর তার বড় ভাইয়ের জন্য গ্রামের শ্মশানে একটি পর্ণকুটির নির্মাণ করেন। সেই পর্ণকুটিরে নিমগ্ন হয়ে পড়েন আধ্যাত্মিক সাধনায়। এভাবেই শুরু হয় তার সন্ন্যাস জীবন।
শিবরামের সাধনকুটিরের একপাশে রয়েছে চিতাভস্ম শশ্মান, আরেক পাশে রয়েছে শান্ত নদী। জীবন-মরণের এই পটভূমিকায় তিনি দুর্জ্ঞেয় শিবজ্ঞান লাভ করতে চান। একান্তে, পরম নিষ্ঠায়, সাধনায় নিমগ্ন হলেন।
কিন্তু কঠিন সাধনা সত্ত্বেও সিদ্ধি-সাধনা লাভ করতে পারছিলেন না। গুরু ছাড়া সিদ্ধি সাধন হয় না। তাই শিবরাম গুরু সন্ধানের জন্য মনস্থির করলেন। এমন সময়ে তার কুটিরে হাজির হন স্বামী ভগীরাথনন্দ। তিনি পাঞ্জাবের বাস্তুর গ্রামে বাস করতেন, অদৃশ্য এক শক্তির টানে হাজির হন শিবরামের কুটিরে।
তারই ইঙ্গিতে পুষ্করে রওনা হন। এই পবিত্র তীর্থে সন্ন্যাস ধর্মের দীক্ষা নেন তিনি। স্বামী ভগীরাথনন্দ শিবরামের ঈশ্বর নির্দিষ্ট পথপ্রদর্শক গুরু। তখনই স্বামী ভগীরাথনন্দ তাকে গণপতি সরস্বতী নামে ভূষিত করেন। কিন্তু, তেলঙ্গ নামক দেশ থেকে এসেছিলেন বলে কাশীভক্তরা তাকে শ্রীতৈলঙ্গনাথ স্বামীজি নামে ডাকতেন।
শ্রীতৈলঙ্গনাথ স্বামীজি ভগীরথস্বামীর নির্দেশ অনুযায়ী হঠযোগ ও রাজযোগের দুরূহ সোপানগুলো একে একে তিনি অতিক্রম করেন। দশ বছর কঠিন সাধনার দ্বারা নিজেকে পরিণত করেন এক যোগসিদ্ধি মহাপুরুষ হিসেবে।
ভগীরথস্বামী পুষ্করেই প্রাণত্যাগ করেন। গুরুজীর মৃত্যুর পর শ্রীতৈলঙ্গনাথ স্বামীজি পুষ্কর ত্যাগ করে তীর্থ পরিক্রমায় বের হন। কিন্তু কোনো অঞ্চলে তার মন টেকে না। যাযাবরের মতো দুর্গম তীর্থে ভ্রমণ করতে থাকেন। যেখানে যান, সেখানেই তার অলৌকিক গল্প সারা অঞ্চলে ছড়িয়ে যায়। লোকসমাগমও বেড়ে যায়। তখন তিনি সেই স্থান ত্যাগ করে অন্য স্থানে চলে যান।
এভাবে ঘুরতে ঘুরতে একদিন তিনি নেপালে এসে উপস্থিত হন। নেপালের এক গহীন অরণ্যে কিছুকালের জন্য কঠোর তপস্যায় নিমজ্জিত হন।
নেপালের এক শিকারি ওই অরণ্যে শিকারের জন্য উপস্থিত হয়, অনেক খোঁজাখুঁজি করে এক বাঘের সন্ধান পায়। বাঘের উদ্দেশে গুলি ছোঁড়ে। কিন্তু একটা গুলিও বাঘের গায়ে লাগলো না।
শিকারির জেদ চেপে যায়। দলবল নিয়ে বাঘের পিছনে ছোটা শুরু করে। ছুটতে ছুটতে গভীর অরণ্যে প্রবেশ করে, এরপর যে দৃশ্য দেখল, তা তাকে হতবাক করে দেয়।
গাছের নিচে বসে আছেন এক সন্ন্যাসী। গায়ে এক ফোঁটা কাপড়ের সুতা নেই। সেই সন্ন্যাসীর সামনে সেই পলায়নরত বাঘ চুপটি করে বসে আছে, আর সন্ন্যাসী তার গায়ে আদর করছেন যেন, বাঘটি তার পোষা; ঠিক যেন বসতবাড়ির হুলো বেড়ালের মতো।
এই সন্ন্যাসীই শ্রীতৈলঙ্গনাথ স্বামীজি।
শ্রীতৈলঙ্গনাথ স্বামীজি শিকারিকে কাছে আসার ইঙ্গিত দেন। শিকারি তাকে প্রণাম করে, তারপর সন্ন্যাসী তাকে বলেন,
“দ্যাখো বাবা, আমার এখানে তোমার ভয়ের কোনো কারণই নেই, তোমার মনের হিংসা দূর করে দাও, বাঘ তোমাকে কোনো ক্ষতি করতে আসবে না। সব জীব ঈশ্বরের সৃষ্টি, তুমি সত্যিকারের প্রেম দাও, তারাও তোমাকে সত্যিকারের প্রেম দেবে।”
শিকারি কাঠমুণ্ডুতে পৌঁছে প্রধানমন্ত্রীকে ঘটনাটি সবিস্তারে জানাল। প্রধানমন্ত্রী শ্রীতৈলঙ্গনাথ স্বামীজির দর্শনে হাজির হন এবং বিভিন্ন উপঢৌকনে তাকে ভূষিত করেন।
শ্রীতৈলঙ্গনাথ স্বামীজি সেই উপঢৌকন মানাও করেন না, আবার গ্রহণও করেন না। তার সামনে দিয়ে দস্যু-তস্কররা উপঢৌকনগুলো আত্মসাৎ করে। তার এই অলৌকিক গুণের জন্য অরণ্যতে লোক সমাগম শুরু হলো। বাধ্য হয়ে তাকে বনাঞ্চল ত্যাগ করতে হয়। এভাবে তিব্বত, হিমালয় ঘুরে এসে ১৮৪৪ সালের মাঘ মাসে শ্রীতৈলঙ্গনাথ স্বামীজি বারানসীধামে আসেন। তখন শীতের প্রকোপ শুরু হয়েছিল।
এই সময়ে একদিন অসিঘাটে উলঙ্গ সন্ন্যাসীর আগমন হয়। কাশীর জনসাধারণ জীবনে এক আলোড়ন সৃষ্টি হয়। বারানসে গুজব ছড়িয়ে যায়, তাকে প্রণাম না করলে পুণ্য সম্পন্ন হবে না। তাই সকাল থেকে সহস্র ভক্তেরা তাকে প্রণাম করত। স্বামীজী কিছুই বলতেন না, চুপচাপ বসে থাকতেন। তিনি কথা বলতেন না তেমন, মৌনভাব ধারণ করে থাকতেন।
কাশীর ব্রিটিশ প্রশাসনের সাথে শ্রীতৈলঙ্গনাথ স্বামীজির কয়েকবার ঝামেলা বেঁধে যায়।
মেমসাহেবরা প্রায়ই বেনারসের ঘাটে প্রাতঃকালীন অথবা সন্ধ্যাকালীন ভ্রমণের জন্য যেতেন, তখন তারা উলঙ্গ স্বামীজীকে দেখে বিব্রত বোধ করতেন। তাই তারা ম্যাজিস্ট্রেটকে ব্যাপারটা জানালেন। ম্যাজিস্ট্রেট সরেজমিনে দেখতে আসলেন। দেখে তো তার চক্ষু চড়কগাছ। এই উলঙ্গ ব্যক্তি কী করে ঘাটে? তা-ও আবার প্রকাশ্যে? রেগেমেগে ম্যাজিস্ট্রেট মামলা ঠুকে দিলেন স্বামীজীর নামে। ম্যাজিস্ট্রেট তাকে নিজের হাতে গ্রেফতার করে জেলে ঢুকিয়ে দিলেন।
পরদিন রুটিন মাফিক ম্যাজিস্ট্রেট আবার জেল ভিজিটে গিয়ে দেখেন, জেলের সামনে স্বামীজী বসে আছেন আপনমনে। রেগেমেগে অগ্নিরূপ ধারণ করলেন, পেয়াদাদের ডাকলেন। পেয়াদারা আদেশ পেয়ে ছুটে আসে, তারাও স্বামীজীকে দেখে হতবাক হয়ে যান। কীভাবে স্বামীজী কারাকক্ষ থেকে বাইরে এলেন?
ম্যাজিস্ট্রেট এবার নিজের হাতে স্বামীজীকে কারাকক্ষে প্রবেশ করিয়ে, তালাবন্ধ করে দেন এবং চাবি তারই কাছে রেখে দেন। পরদিন ম্যাজিস্ট্রেট নিজের কার্যালয়ে এসে দেখেন, তার দরজার সামনে উলঙ্গ স্বামীজী দাঁড়িয়ে আছেন। এবার ম্যাজিস্ট্রেট আকাশ থেকে পড়লেন। কীভাবে সম্ভব হলো? চাবি তো তার কাছে। কারও তো তালা খোলা সম্ভব না, আর কারাকক্ষের পেয়ারাদের ফাঁকি দিয়ে চলেও বা এলেন কী করে?
ম্যাজিস্ট্রেট জিজ্ঞেস করেন স্বামীজীকে কীভাবে তিনি আসতে পারলেন? মৌন সন্ন্যাসী কথার উত্তর না দিয়ে শুধুই হাসতেন। ম্যাজিস্ট্রেট বুঝলেন ব্যক্তিটি সাধারণ কেউ নয়। তাই তাঁর নামে মামলা খারিজ করে দেন এবং পুলিশকে আদেশ দেন তারা যেন মৌন সন্ন্যাসীকে কখনই বিরক্ত না করে এবং তাঁকে স্বাধীনভাবে ঘুরতে দেওয়া হয়।
কিছুকাল পরেই ম্যাজিস্ট্রেট কাশী থেকে বদলী হন। নতুন ম্যাজিস্ট্রেট ছিলেন অনেক কড়া মেজাজের এবং প্রাক্তন ম্যাজিস্ট্রেট কুসংস্কারাচ্ছন্ন ছিল বলে ধারণা করেন, তাই আবার মৌন সন্ন্যাসীকে কারাকক্ষে বন্দী দেওয়ার আদেশ দেন।
এবার এজলাসের দিন স্বামীজীর ভক্তরা তাঁর পক্ষের উকিল নিয়োগ দেন, এবং উকিল তাঁর নগ্ন হওয়ার কারণ প্রকাশ করেন, উকিল দাবী করেন স্বামীজীর এই জগতের কোনোকিছুর প্রতি মায়ামোহ রাখেন না, তাই তিনি পোশাক পরিধান করেন না, যেকোনো খাদ্যই গ্রহণ করতে পারেন, তাঁর কোনোই বাছবিচার নেই। তিনি বাছবিচারের জায়গা রাখেন না।
শুনে ম্যাজিস্ট্রেট একটা কুটিল হাসি দিয়ে বলে, “তাই? যেকোনো খাদ্য?”
উকিল বললেন, “হ্যাঁ, যেকোনো খাদ্য।”
ম্যাজিস্ট্রেট বললেন, “তাহলে সন্ন্যাসীকে বলো মধ্যাহ্নে আমাদের সাথে গো-মাংস ভক্ষণ করতে।”
মৌন সন্ন্যাসী তার মৌনতা ভঙ্গ করলেন। স্বামীজী জানান, “তাহলে আমার সাথেও তোমাকে খেতে হবে, আমার মধ্যাহ্নের আহার তোমাকেও গ্রহণ করতে হবে।” ম্যাজিস্ট্রেট মনে করলেন, সন্ন্যাসী মানুষ ফলমূলই তো খাবে, তাই তিনি রাজি হয়ে যান।
সবাইকে অবাক করে সন্ন্যাসী মলত্যাগ করলেন এবং সেই মল হাতে নিয়ে বলেন, “এটাই আমার মধ্যাহ্ন ভোজ, খাবেন?” বলেই নিজের মল নিজেই ভক্ষণ করেন। সেই মল নাকি ছিল সুগন্ধে ভরা। পুরা এজলাস কক্ষ সুগন্ধে ভরে যায়। ম্যাজিস্ট্রেট তক্ষুনি তাঁকে মুক্তির আদেশ দেন এবং তাকে বিরক্ত না করার আদেশ প্রদান করেন।
১৮৬৮ সালে শ্রীরামকৃষ্ণ মথরবাবুর সাথে কাশীতে তীর্থভ্রমণ করতে আসেন। কাশীতে এসে শ্রীতৈলঙ্গনাথ স্বামীজির কাছে যান।
শ্রীতৈলঙ্গনাথ স্বামীজিকে দর্শনের পর শ্রীরামকৃষ্ণ সন্তুষ্ট হন। স্বামীজি মণিকর্ণিকা ঘাটে রোদ পোহাচ্ছিলেন। শ্রীরামকৃষ্ণ তার ভাগ্নেকে সঙ্গে নিয়ে আসেন। স্বামীজি সাদরে গ্রহণ করেন শ্রীরামকৃষ্ণকে। এরপর কয়েকদিন শ্রীরামকৃষ্ণ স্বামীজির কাছে নিয়মিত যান এবং তারা নিভৃতে বিভিন্ন তত্ত্বজ্ঞান সম্পর্কে আলোচনা করেন।
পরে শ্রীরামকৃষ্ণ অনেকবার তার ভক্তদের সাথে, তাঁর এবং স্বামীজির কথোপকথনের ঘটনাটি উল্লেখ করেন।
শেষের দিকে পঞ্চগঙ্গার ঘাটে বাস করতেন। তার ভক্ত মঙ্গল ভট্টের ঘরে ছিল তার ক্ষুদ্র আবাস। প্রায় সাত বছর সাধ্যসাধনার পরেই তিনি সফল হন তার গৃহে মহাযোগীকে আসন প্রদান করতে। একদিন পঞ্চগঙ্গার ঘাটে তিনি তার ভক্তদের ডেকে বলেন
“ব্যাটা সব, তোরা এবার বিদায় হ, আমি এবার দেহত্যাগ করব।”
শুনে তার ভক্তরা আহাজারি করে ওঠে। মঙ্গল ভট্ট জেদ করে দাবি করেন, স্বামীজির প্রস্তর মূর্তি স্থাপন করবেন। স্বামীজি রাজি হন না, কিন্তু তার ভক্তরা দাবি থেকে নড়বে না। স্বামীজি বাধ্য হয়ে রাজি হয়ে যান। মাসখানেকের মধ্য প্রস্তুত হয় তার বৃহৎ প্রস্তরমূর্তি।
মহাপ্রয়াণের পূর্বে কিছু কিছু সাধন উপদেশ দান করেন তার ভক্তদের, এবং তার কথামতো চন্দন কাঠের সিন্দুক নির্মাণ করা হয়, যা তার মৃত্যুর পরে গঙ্গাগর্ভে তার মরদেহ সিন্দুকের সমাধি করিয়ে নিক্ষেপ করা হয়। গঙ্গায় বিলীন হয়ে যায় তার জীবদেহ।
১৮৮৭ সালের পৌষমাস, শুক্লা একাদশীর পুণ্য তিথিতে স্বামীজি শেষযাত্রার জন্য নির্ধারিত ছিল। এই তিথিতেই ব্রহ্মরন্ধ্রের পথে সম্পন্ন হলো স্বামীজির মানবযাত্রা। দেহত্যাগের পূর্বে তাঁর বয়স ছিল আড়াইশো বছরেরও বেশি। বারানসীতে তিনি দেড়শো বছর তার লীলানাট্য পরিচালনা করেন।