বর্ণবাদ এমন একটি বৈষম্যমূলক আচরণ, যা মানুষের মধ্যে বিভাজন ও পার্থক্য তৈরি করে। এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকা এবং অক্সফোর্ড ডিকশনারির সংজ্ঞা অনুযায়ী, বর্ণবাদ হলো সেই দৃষ্টিভঙ্গি, চর্চা অথবা কার্যকলাপ যেখানে বিশ্বাস করা হয় যে, মানুষ বৈজ্ঞানিকভাবেই বিভিন্ন গোষ্ঠীতে বিভক্ত এবং একইসাথে বিশ্বাস করা হয় যে, কোনো কোনো গোষ্ঠী অন্য গোষ্ঠীর চেয়ে নির্দিষ্ট কিছু বৈশিষ্ট্যের জন্য উঁচু অথবা নিচু; কিংবা তার উপর কর্তৃত্ব করার অধিকারী; অথবা বেশি যোগ্য কিংবা অযোগ্য।
প্রকৃতপক্ষে, বর্ণবাদের সঠিক সংজ্ঞা নির্ধারণ করা অনেকটাই কঠিন। কারণ, গবেষকদের মধ্যে গোষ্ঠী ধারণাটি নিয়ে মতবিরোধ রয়েছে। এছাড়াও কোনটি বৈষম্য আর কোনটি বৈষম্য নয়, সেটি নিয়েও সবাই একমত নয়। বর্ণবাদ কখনো শরীরের চামড়ার রং দিয়ে হতে পারে, কখনো আঞ্চলিকতা দিয়ে হতে পারে, কখনো গোত্র দিয়ে হতে পারে, আবার কখনো বর্ণ দিয়ে হতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রে বর্ণবাদের সূচনা
যুক্তরাষ্ট্রে বর্ণবাদের ইতিহাস সুদীর্ঘ। ১৫২৫ সাল থেকে ১৮৬৬ সালের মধ্যে প্রায় সাড়ে বারো মিলিয়ন কৃষ্ণাঙ্গ মানুষকে আফ্রিকা মহাদেশের বিভিন্ন উপকূল থেকে জোর করে ধরে নিয়ে শেকলবন্দি করে জাহাজে আমেরিকায় পৌঁছানো হয়েছিল। ক্রমবর্ধমান ঔপনিবেশিক অঞ্চলের উৎপাদন ও শ্রম ব্যবস্থাকে কাজে লাগিয়ে আফ্রিকা মহাদেশ থেকে আনা কৃষ্ণাঙ্গ দাসদের ব্যবহার করে স্প্যানিশ, ব্রিটিশ ও ডাচ ঔপনিবেশিক শক্তিসমূহ সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেছিল।
আমেরিকার কৃষি উৎপাদন, খনিজ সম্পদ উন্নয়ন, রেললাইন নির্মাণ থেকে শুরু করে নতুন আমেরিকান সভ্যতার গঠনে কৃষ্ণাঙ্গ ক্রীতদাসেরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ব্রিটিশদের চাপিয়ে দেয়া অন্যায্য ট্যাক্স ও সম্পদ লুণ্ঠনের বিরুদ্ধে আমেরিকার জনগণের বিদ্রোহ ও ১৭৭৫ সালে শুরু হওয়া স্বাধীনতা যুদ্ধে প্যাট্রিয়টিক বাহিনীতে কৃষ্ণাঙ্গরা অসম সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছিল। দীর্ঘ আট বছর ধরে চলা যুদ্ধ শেষে ১৭৮৩ সালে আমেরিকার স্বাধীনতা অর্জনের সংগ্রামে তারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
দাসপ্রথা বিলোপের পর বর্ণবাদ
১৮৬১ সালের নির্বাচনে রিপাবলিকান দল থেকে বিজয়ী প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকন দাসপ্রথা বিলুপ্তির সিদ্ধান্ত নিলে উত্তরাঞ্চলের সাতটি রাজ্য একত্রে ইউনিয়ন স্টেটের শক্তি নিয়ে প্রতিপক্ষ দক্ষিণাঞ্চলের ১১টি রাজ্যের কনফেডারেশনের বিরুদ্ধে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছিল। দাসত্ব প্রথা বিলোপের পক্ষে-বিপক্ষে অবস্থান, মূলত এটিই ছিল আমেরিকার গৃহযুদ্ধের কারণ। গৃহযুদ্ধে বিজয় লাভের পর আব্রাহাম লিংকন ১৮৬৩ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে আমেরিকায় দাসপ্রথা বিলুপ্ত ঘোষণা করেছিলেন। কিন্তু তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র থেমে থাকেনি; ১৮৬৫ সালে তাকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছিল।
দাসত্ব প্রথার বিলুপ্তি ঘটলেও শ্বেতাঙ্গ আধিপত্যবাদ, ঘৃণা ও প্রতিহিংসার সংস্কৃতি থেকে আমেরিকা কখনো বেরিয়ে আসতে পারেনি। ঊনবিংশ শতকের মাঝামাঝি পর্যায় থেকে শেষ পর্যন্ত পুরো আমেরিকায় জাতিগত নিধন ছিল একটি সাধারণ ব্যাপার। কখনো ক্যাথলিক গোষ্ঠী, কখনো শ্বেতাঙ্গ এমন নানা কল্পিত আভিজাত্যের বশবর্তী হয়ে এসব নিধন চালানো হয়েছে। ক্যালিফোর্নিয়া ইন্ডিয়ান কিলিং এই নিধনযজ্ঞে এক ভয়াবহ উদাহরণ। ১৮৪৬ থেকে ১৮৭৩ সাল পর্যন্ত সময়ে স্থানীয় ইন্ডিয়ান জনগোষ্ঠীর প্রায় সবাইকে হত্যা করা হয়েছিল। এসব নিধনকর্মকে জেনোসাইড থেকে আলাদা করতে ‘লিঞ্চিং’ শব্দটি ব্যবহার করা হয়।
আব্রাহাম লিংকনের হত্যাকাণ্ডের প্রায় একশো বছর পর কৃষ্ণাঙ্গ নেতা মার্টিন লুথার কিং জুনিয়রের নেতৃত্বে গত শতাব্দীর পঞ্চাশের দশকে আমেরিকায় কৃষ্ণাঙ্গ জনগোষ্ঠীর মানবাধিকার নিশ্চিতকরণ ও রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক বৈষম্যের বিরুদ্ধে নাগরিক অধিকার আন্দোলন গড়ে ওঠে। ১৯৬৩ সালের ২৮শে আগস্ট লিংকন মেমোরিয়ালের সামনে লাখ লাখ মানুষের উপস্থিতিতে মার্টিন লুথার কিং তার বিখ্যাত ‘আই হ্যাভ অ্যা ড্রিম’ শিরোনামে একটি ভাষণ দেন।
এরপর মার্টিন লুথার কিংয়ের নেতৃত্বাধীন তীব্র আন্দোলনের ফলে ১৯৬৪ সালে যখন আমেরিকায় কৃষ্ণাঙ্গদের জন্য নাগরিক অধিকার আইন আর ১৯৬৫ সালে ভোটাধিকার আইন পাস হয়েছিল। কিন্তু তৎকালীন উগ্র শ্বেতাঙ্গরা কৃষ্ণাঙ্গদের সঙ্গে সম্পর্ক রক্ষা করে চলতে বাধ্য করা কোনো আইন না মেনে নেওয়ার ঘোষণা করেছিল। ১৯৬৮ সালের ৪ঠা এপ্রিল শ্বেতাঙ্গ উগ্রপন্থী সন্ত্রাসীদের গুলিতে মার্টিন লুথার কিং নিহত হন। নাগরিক অধিকার আন্দোলনের নেতা মার্টিন লুথার কিং নিপীড়ন থেকে বাঁচার যে প্রত্যাশা করেছিলেন, সেটি আমেরিকান সমাজে এখনও পুরোপুরি বাস্তবায়িত হয়নি।
১৮৬৬ সালে প্রতিষ্ঠিত শ্বেতাঙ্গদের গোপন সন্ত্রাসী দল কু ক্লাক্স ক্লান (কেকেকে) কৃষ্ণাঙ্গদের বিরুদ্ধে নিপীড়ন চালাত। শ্বেতাঙ্গ আধিপত্যে বিশ্বাসী এই সন্ত্রাসী সংগঠন কৃষ্ণাঙ্গ মানবাধিকার কর্মী, কমিউনিস্ট ও আফ্রো-আমেরিকান নাগরিকদের হত্যা করত। তাদের পথ থেকে তুলে নিয়ে গাছের ডালে রশিতে ঝুলিয়ে দিয়ে উল্লাস করত, এমনকি কৃষ্ণাঙ্গ মানুষের গায়ে পেট্রোল ঢেলে আগুন দিয়ে পথে ফেলে দিয়ে চলে যেত। যুক্তরাষ্ট্র গোপনে কু ক্লাক্স ক্লান-এর কার্যক্রম এখনও সক্রিয় রয়েছে। সংগঠনটি কৃষ্ণাঙ্গদের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ উসকে দিতে বিভিন্ন অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছে।
পুলিশের বৈষম্যমূলক আচরণ এবং অবাধ অস্ত্র বিক্রয়
সংবাদমাধ্যম ওয়াশিংটন পোস্ট সংগৃহীত তথ্য অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্র ২০১৯ সালে পুলিশের গুলিতে ১,০১৪ জন মৃত্যুবরণ করেছেন, যাদের মধ্যে অধিকাংশই কৃষ্ণাঙ্গ আমেরিকান। ম্যাপিং পুলিশ ভায়োলেন্স নামে একটি বেসরকারি সংস্থার চালানো জরিপে দাবি করা হয়েছে, আমেরিকায় পুলিশের গুলিতে শ্বেতাঙ্গদের তুলনায় তিনগুণ বেশি মারা যায় কৃষ্ণাঙ্গরা। আইন অনুযায়ী আত্মরক্ষায়, অথবা অন্য কারো মৃত্যু ও গুরুতর আহত হওয়া ঠেকাতে আইন অনুযায়ী মার্কিন পুলিশ শক্তি প্রয়োগ করতে পারে। এভাবে আইনি সুরক্ষার অপব্যবহার করে পুলিশ কৃষ্ণাঙ্গদের সাথে চরম বৈষম্যমূলক আচরণ করেছে। আপরাধ করেও অতীতে পুলিশ কর্মকর্তাদেরকে বারবার দায়মুক্তি দেওয়া হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের দ্বিতীয় সংশোধনীতে বলা হয়েছে, “নাগরিকের অস্ত্র রাখা ও বহন করার অধিকার থাকবে এবং এ অধিকার লঙ্ঘন করা যাবে না।” ১৭৯১ সালে সংবিধানের এই দ্বিতীয় সংশোধনী আরোপ করা হয়েছিল মূলত সাবেক ঔপনিবেশিক শাসনকে সুসংহত করা এবং আমেরিকায় আসা শ্বেতাঙ্গদের নিজেদের রক্ষা করার জন্য। ১৯৯৪ সালে অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ আইনে সংশোধনী আনা হয় এবং তাতে ক্ষেত্রবিশেষে প্রাণঘাতী অস্ত্র বহনকে নিষিদ্ধও করা হয়। কিন্তু ২০০৪ সালে জর্জ ডব্লিউ বুশের সময় সেই সংশোধনী বাতিল করা হয়। শ্বেতাঙ্গ শ্রেষ্ঠত্ববাদীরা অস্ত্র নিয়ন্ত্রণের বিপক্ষে।
যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি বছর জনসমাগম স্থানে অনেক নির্বিচারে গুলির ঘটনা ঘটে থাকে। অনেকসময় পরিকল্পিতভাবে ঘটানো এসব ঘটনায়ও অনেক কৃষ্ণাঙ্গ নাগরিক প্রাণ হারিয়েছেন। জনসমর্থন থাকার পরও যুক্তরাষ্ট্রের আইনপ্রণেতারা কঠোর অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ আইন প্রণয়নে গড়িমসি করে থাকেন। এক্ষেত্রে ন্যাশনাল রাইফেল অ্যাসোসিয়েশন (NRA) যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটরদের সবসময় প্রভাবিত করে যাচ্ছে।
জর্জ ফ্লয়েড হত্যাকাণ্ড ও সাম্প্রতিক গণজাগরণ
২০২০ সালের ২৬ মে, মিনেসোটার মিনিয়াপোলিস শহরে পুলিশের হাতে কৃষ্ণাঙ্গ ব্যক্তি জর্জ ফ্লয়েডের মৃত্যুর ঘটনায় পুরো আমেরিকায় বর্ণবাদ বিরোধী আন্দোলন ছড়িয়ে পড়েছিল। এ সময় যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন শহরে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সাথে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটেছিল। কৃষ্ণাঙ্গ হত্যার প্রতিবাদে মার্কিন প্রেসিডেন্টের বাসভবন হোয়াইট হাউসের সামনেও নজিরবিহীন প্রতিবাদ-বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এমনকি বিক্ষোভকারী এবং পুলিশের মধ্যে সংঘর্ষ নিয়ন্ত্রণে আনতে যুক্তরাষ্ট্রের বেশ কয়েকটি শহরে কারফিউ জারি করা হয়। তবে প্রতিবাদকারীরা কারফিউ ভেঙে জর্জ ফ্লয়েড হত্যাকাণ্ডের বিচার, পুলিশের কার্যক্রম সংস্কার এবং বর্ণবৈষম্য রোধের দাবিতে বিক্ষোভ অব্যাহত রেখেছিল।
ঐ ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্র ছাড়াও বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়েছে, সেসব বিক্ষোভে অংশগ্রহণকারীরা সমাজ ব্যবস্থা থেকে বর্ণবাদসহ সবধরনের বৈষম্য অবসানের দাবি তুলেছেন। গত বছরের বর্ণবাদ বিরোধী বিক্ষোভে নতুন এক অনুষঙ্গ লক্ষ করা গেছে। বিক্ষোভকারীরা অনেক জায়গায় অনেক ঐতিহাসিক নেতার প্রতিকৃতি ভাঙচুর করেছেন কিংবা অপসারণের দাবি জানিয়েছেন।
কেন এই ভাঙচুর?
শুধু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নয়; বেলজিয়াম, ব্রিটেনসহ কয়েকটি দেশে দাস ব্যবসায়ী এবং ঔপনিবেশবাদী নেতাদের প্রতিকৃতি ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছিল। যুক্তরাষ্ট্রের বেশ কয়েকটি শহরে ইতালীয় অভিযাত্রী ক্রিস্টোফার কলম্বাসের প্রতিকৃতি ভাঙা হয়।
ক্রিস্টোফার কলম্বাস ষোড়শ শতাব্দীতে আমেরিকায় এসে স্থানীয়দের দাস হিসেবে ব্যবহার করেছিলেন বলে অভিযোগ করা হয়ে থাকে। ইতোমধ্যে মিনেসোটা ও ভার্জিনিয়া রাজ্য এবং বোস্টন ও মিয়ামি শহরে কলম্বাসের প্রতিকৃতি ভেঙে ফেলা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের অনেক মানুষ কলম্বাসকে ‘নতুন পৃথিবীর আবিষ্কারক’ হিসেবে স্মরণ করে থাকে। কিন্তু আমেরিকার আদিবাসীরা কলম্বাসের অভিযানই আমেরিকার ঔপনিবেশিক শাসনের এবং আদি আমেরিকান অধিবাসীদের গণহত্যার পেছনের কারণ হিসেবে মনে করে।
ভার্জিনিয়ার রিচমন্ডে কনফেডারেট প্রেসিডেন্ট জেফারসন ডেভিসের একটি প্রতিকৃতি উৎপাটন করে ফেলেছিল বিক্ষোভকারীরা। ঊনিশ শতকের মাঝামাঝি সময়ে যুক্তরাষ্ট্রে কয়েকটি রাজ্য ছিল, যাদের পরিচিতি ছিল কনফেডারেট রাজ্য হিসেবে, কনফেডারেট রাজ্যগুলো দাসপ্রথার সমর্থক ছিল এবং সেসব রাজ্য দাসপ্রথাকে বৈধতা দেয়ার পক্ষে ছিল। আমেরিকার গৃহযুদ্ধে কনফেডারেটরা পরাজিত হয়। এছাড়াও, প্রতিবাদকারীরা যুক্তরাষ্ট্রে কনফেডারেট নেতাদের নামে নামকরণ করা সেনাঘাঁটিগুলোর নাম পরিবর্তন এবং কংগ্রেস ভবন ও প্রাঙ্গণ থেকে বর্ণবাদী ব্যক্তিত্বদের সব প্রতিকৃতি সরিয়ে ফেলার দাবি জানায়।
প্রতিবাদকারীরা আফ্রিকা মহাদেশ থেকে অবাধ লুটপাট ও শোষণের অভিযোগে বেলজিয়ামের অ্যান্টওয়ার্প শহরে সাবেক রাজা দ্বিতীয় লিওপল্ডের প্রতিকৃতি সরিয়ে ফেলে। এছাড়াও যুক্তরাজ্যে ব্রিস্টলের বিক্ষোভকারীরা বিতর্কিত দাস ব্যবসায়ী এডওয়ার্ড কলস্টনের প্রতিকৃতি ভাঙচুর করে নদীর পানিতে নিক্ষেপ করেছিল। সাম্রাজ্যবাদী আখ্যা দিয়ে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে যুক্তরাজ্যকে নেতৃত্ব দেওয়া প্রধানমন্ত্রী উইনস্টন চার্চিলের প্রতিকৃতিতে গ্রাফিতি আঁকিয়ে বিক্ষোভকারীরা প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন।
ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিদায়
গত বছরের ৩রা নভেম্বর অনুষ্ঠিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে যুক্তরাষ্ট্রকে শ্রেষ্ঠত্বের স্বপ্ন দেখিয়ে ক্ষমতায় আসা ডোনাল্ড ট্রাম্প পরাজিত হয়েছেন। অর্থনৈতিক সংকট, করোনা মহামারি মোকাবেলায় অদক্ষতা ইত্যাদির পাশাপাশি গত বছরের বর্ণবাদ বিরোধী আন্দোলন ডোনাল্ড ট্রাম্পের পতনে ভূমিকা রেখেছে বলে ধারণা করা হয়। ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমর্থক শ্বেতাঙ্গ শ্রেষ্ঠত্ববাদীরা ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি কংগ্রেস অধিবেশন চলাকালীন ক্যাপিটল হিলে সশস্ত্র হামলা চালিয়েছিল। এ হামলাকে যুক্তরাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক ইতিহাসে কালো অধ্যায় হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।
২০২১ সালের ২০ জানুয়ারি নতুন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ক্ষমতা গ্রহণ করেছেন; তিনি অভিষেক ভাষণে, সকলকে সাথে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রকে সামনে এগিয়ে নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। এছাড়াও, যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে কমলা হ্যারিস এই প্রথমবার একজন কৃষ্ণাঙ্গ নারী ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ গ্রহণ করেছেন।
পরিশেষ
বিভিন্ন সময় বর্ণবাদী মন্তব্যের জন্য সমালোচিত ডোনাল্ড ট্রাম্পের ক্ষমতা থেকে অপসারণ এবং ইতিহাস গড়ে ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে কমলা হ্যারিসের শপথ গ্রহণের ঘটনা যুক্তরাষ্ট্রে শ্বেতাঙ্গ জাতীয়তাবাদীদের আধিপত্যবাদের লাগাম টেনে ধরতে ভূমিকা রাখতে পারে। মনস্তাত্ত্বিকেরা মনে করেন, মানুষের নিজের জন্য সুবিধাজনক তথ্য খোঁজার একধরনের প্রবণতা রয়েছে, যাকে বলে ‘কনফার্মেশন বায়াস’। নিজের বিশ্বাস আর আদর্শের সঙ্গে মেলে, সেরকম তথ্য খোঁজা, যেকোনো ঘটনাকে সেভাবে ব্যাখা করা কিংবা সমর্থন দেওয়া মানুষের সহজাত প্রবণতা। সাম্প্রতিক সময়ে, যুক্তরাষ্ট্রের এই নবজাগরণ বর্ণবাদ বিষয়ে অনেকের বদ্ধমূল ধারণা পরিবর্তনে সহায়ক হতে পারে।