[২য় পর্ব পড়ুন]
দনবাসে ইউক্রেনীয় ড্রোন স্ট্রাইক সম্পর্কে ইউক্রেনীয় সরকারের অবস্থান
দনবাসে পরিচালিত ইউক্রেনীয় ড্রোন স্ট্রাইক সম্পর্কে ইউক্রেনীয় সরকারের প্রতিক্রিয়া ছিল বৈপরীত্যে পরিপূর্ণ। প্রথমে ইউক্রেনীয় সশস্ত্রবাহিনীর জেনারেল স্টাফ একটি ফেসবুক পোস্টে জানান, তারা একটি তুর্কি–নির্মিত কমব্যাট ড্রোন ব্যবহার করে দনেৎস্কের একটি হাউইটজার ধ্বংস করেছে। কিন্তু এরপর ইউক্রেনীয় প্রতিরক্ষামন্ত্রী আন্দ্রি তারান ইউক্রেনীয় প্রচারমাধ্যমকে প্রদত্ত একটি বক্তব্যে দাবি করেন, ইউক্রেন দনবাসে আক্রমণ পরিচালনার জন্য তুর্কি–নির্মিত ড্রোন ব্যবহার করেনি, এটি মূলত ‘রুশ মার্সেনারি’দের উস্কানি এবং ইউক্রেনের বিরুদ্ধে ‘আগ্রাসন’ চালানোর জন্য তারা এই পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে। পরবর্তীতে আবার ইউক্রেনীয় সরকারের মতের পরিবর্তন ঘটে এবং ইউক্রেনীয় রাষ্ট্রপতি ভলোদিমির জেলেনস্কি ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী দিমিত্রো কুলেবা উভয়েই ইউক্রেন কর্তৃক দনবাসে ড্রোন স্ট্রাইক পরিচালনার ব্যাপারটি স্বীকার করে একে ‘ন্যায়সঙ্গত’ বলে দাবি করেন। ইউক্রেনীয় প্রতিরক্ষামন্ত্রী তারান দাবি করেন যে, তিনি কখনো ইউক্রেন কর্তৃক দনবাসে ড্রোন আক্রমণ পরিচালনার বিষয়টি অস্বীকার করেননি। যে প্রচারমাধ্যম তারানের আগেকার বক্তব্যটি প্রচার করেছে, তাদের ওয়েবসাইট হ্যাক করে কেউ এই ভুয়া তথ্য প্রচার করেছিল বলেও দাবি করা হয়।
দনবাসে ইউক্রেনীয় ড্রোন স্ট্রাইক সম্পর্কে ইউক্রেনীয় বিশ্লেষকদের মতামত
ইউক্রেনীয় সামরিক বিষয়ক সাংবাদিক ইউরি বুতুসভ মার্কিন রাষ্ট্র–নিয়ন্ত্রিত প্রচারমাধ্যম ‘রেডিও ফ্রি ইউরোপ/রেডিও লিবার্টি’কে প্রদত্ত একটি সাক্ষাৎকারে এই প্রসঙ্গে মন্তব্য করেছেন যে, ইউক্রেন কর্তৃক দনবাসে পরিচালিত ড্রোন স্ট্রাইকটি ছিল একটি সীমিত মাত্রার আক্রমণ, কারণ এই আক্রমণে দনেৎস্কের সৈন্যদের ওপর আঘাত করা হয়নি, ড্রোনে থাকা সবগুলো ক্ষেপনাস্ত্র ব্যবহার করা হয়নি এবং আক্রমণ পরিচালনায় মাত্র একটি ড্রোন ব্যবহার করা হয়েছে। তার মতে, দনবাসে অবস্থিত রুশ–সমর্থিত প্রজাতন্ত্রগুলোর ও রাশিয়ার ইউক্রেনীয় ড্রোন ভূপাতিত করার সামর্থ্য নেই এবং এজন্য এই আক্রমণের ফলে তারা ‘ভীত’ হয়ে পড়েছে। অবশ্য তিনি এটাও যোগ করেছেন যে, দনবাসে ইউক্রেন কর্তৃক তুর্কি–নির্মিত ড্রোন ব্যবহারের ফলে দনবাসে বিদ্যমান ‘খেলার নিয়ম’ পরিবর্তিত হয়েছে বলে তিনি মনে করেন না, কারণ কেবল ড্রোন ব্যবহার করে কোনো যুদ্ধে বিজয় লাভ করা সম্ভব নয় এবং ড্রোনের সঙ্গে অন্যান্য সামরিক সরঞ্জাম সমন্বিতভাবে ব্যবহার করলেই কেবল যুদ্ধক্ষেত্রে সামরিক সাফল্য অর্জন করা সম্ভব।
বুতুসভের ভাষ্যমতে, ইউক্রেনীয় সরকার মূলত অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক কারণে এই আক্রমণ চালিয়েছে। ইউক্রেনের বর্তমান রাষ্ট্রপতি ভলোদিমির জেলেনস্কি ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে রাশিয়ার সঙ্গে ইউক্রেনের সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ করার প্রচেষ্টা চালিয়েছেন এবং এজন্য ইউক্রেনীয় জনসাধারণের একাংশ তাকে ইউক্রেনের ‘জাতীয় স্বার্থ’ বিসর্জন দেয়ার দায়ে অভিযুক্ত করেছে। এজন্য জেলেনস্কি দনবাসে ড্রোন আক্রমণ পরিচালনার মাধ্যমে এটি প্রমাণ করার চেষ্টা করছেন যে, তিনি দনবাসের ‘বিচ্ছিন্নতাবাদী’দের প্রতি মোটেই নমনীয় নন।
বস্তুত, দনবাসে ইউক্রেনীয় ড্রোন স্ট্রাইক সম্পর্কে অধিকাংশ ইউক্রেনীয় বিশ্লেষকের বক্তব্য সাধারণভাবে অতি জাতীয়তাবাদী ও রুশবিরোধী ধাঁচের। বুতুসভ মন্তব্য করেছেন যে, জেলেনস্কি রাশিয়ার সঙ্গে ইউক্রেনের সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ করার চেষ্টা করেছেন, কিন্তু কার্যত জেলেনস্কি এরকম কোনো পদক্ষেপ নিয়েছেন বলে প্রতীয়মান হয় না। জেলেনস্কি ‘মিনস্ক প্রোটোকল’ ও ‘মিনস্ক ২’ চুক্তির শর্তাবলি মেনে চলতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন, বিভিন্ন সময়ে রাশিয়ার বিরুদ্ধে অত্যন্ত কঠোর বক্তব্য প্রদান করেছেন, ইউক্রেনের অভ্যন্তরে ও আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বিভিন্ন রুশবিরোধী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন এবং মার্কিন–নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট ‘ন্যাটো’তে ইউক্রেনকে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য জোর প্রচেষ্টা চালিয়েছেন। সুতরাং জেলেনস্কি রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ করার প্রচেষ্টা চালিয়েছেন, এই বক্তব্যকে ঠিক বস্তুনিষ্ঠ বলা যায় না।
অবশ্য এটি সত্যি যে, সম্প্রতি জেলেনস্কি ও ইউক্রেনীয় সরকারের জনপ্রিয়তা উল্লেখযোগ্য মাত্রায় হ্রাস পেয়েছে। চলতি মাসে ‘কিয়েভ ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ সোশিওলজি’ কর্তৃক পরিচালিত একটি জরিপ অনুযায়ী, মাত্র ২৪.৭% ইউক্রেনীয় নাগরিক পরবর্তী নির্বাচনে জেলেনস্কিকে ভোট দিতে ইচ্ছুক। কিন্তু জেলেনস্কির জনপ্রিয়তা হ্রাসের মূল কারণ তার ‘রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ করার চেষ্টা’ নয়। জেলেনস্কি দনবাস সংঘাত নিরসনে ব্যর্থ হয়েছেন, ইউক্রেনের অর্থনৈতিক অবস্থা ক্রমশ খারাপের দিকে যাচ্ছে, কোভিড–১৯ মহামারী মোকাবিলার ক্ষেত্রে ইউক্রেনীয় সরকার বিশেষ সাফল্যের পরিচয় দিতে পারেনি এবং সম্প্রতি ইউক্রেন গুরুতর জ্বালানি সঙ্কটের সম্মুখীন হয়েছে। এগুলো জেলেনস্কির জনপ্রিয়তা হ্রাসের মূল কারণ। এমতাবস্থায় তিনি দনবাসে রুশ–সমর্থিত প্রজাতন্ত্রগুলোর বিরুদ্ধে কিছু ছোটখাটো সামরিক সাফল্য অর্জন করার মাধ্যমে তার জনপ্রিয়তা বৃদ্ধির চেষ্টা করতে পারেন, এটি অস্বাভাবিক নয়।
‘ওলেক্সান্দর রাজুমকভ ইউক্রেনিয়ান সেন্টার ফর ইকোনমিক অ্যান্ড পলিটিক্যাল রিসার্চে’র সামরিক প্রকল্পের পরিচালক মিকোলা সুঙ্গুরোভস্কির ভাষ্যমতে, দনবাসে সৃষ্ট পরিস্থিতির জন্য রুশদের ‘উস্কানি’ দায়ী এবং রুশরা ইউক্রেনকে অস্থিতিশীল করার জন্য দনবাসে এসব উস্কানিমূলক কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে। তার মতে, ইউক্রেন কর্তৃক দনবাসে পরিচালিত ড্রোন স্ট্রাইকের উদ্দেশ্য ছিল রুশ ‘উস্কানি’র জবাব দেয়া, কিন্তু এই আক্রমণ সত্ত্বেও রুশরা এই অঞ্চলে উস্কানিমূলক কর্মকাণ্ড অব্যাহত রাখবে বলে তিনি মনে করেন। তদুপরি, সুঙ্গুরোভস্কির ভাষ্য অনুযায়ী, দনেৎস্ক ও লুহানস্কের অধিবাসীরা ‘চরমপন্থী’ ও রাশিয়ার ‘সস্তা খরচযোগ্য জনবল’। তিনি মনে করেন, রুশরা চায় এসব ‘চরমপন্থী’রা দনবাসেই মারা যাক, কারণ তারা এদেরকে রাশিয়ায় চলে যাওয়ার সুযোগ দিতে আগ্রহী নয়!
সুঙ্গুরোভস্কির বক্তব্য স্পষ্টতই রুশবিরোধী এবং দনেৎস্ক ও লুহানস্কের প্রতি অবমাননাকর। তিনি দনেৎস্ক ও লুহানস্কের অধিবাসীদের সকলকে ঢালাওভাবে ‘চরমপন্থী’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন, এবং ইউক্রেনীয় সরকার পূর্ব ইউক্রেনের রুশপন্থী ইউক্রেনীয়দেরকে ‘অমানবিক’ হিসেবে উপস্থাপনের জন্য যে প্রচারণা অভিযান শুরু করেছে, এই ধরনের বক্তব্য সেটিরই অংশ।
ইউক্রেনভিত্তিক ‘ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজে’র সামরিক বিশ্লেষক নিকোলাই বেলেস্কভ অনুরূপভাবে দনবাসের সাম্প্রতিক পরিস্থিতির জন্য রাশিয়াকে দায়ী করেছেন এবং মন্তব্য করেছেন যে, দনবাসে পরিচালিত ইউক্রেনীয় ড্রোন স্ট্রাইকের ফলে সেখানে রুশ ‘উস্কানি’ বন্ধ হবে না, বরং পরবর্তীতে উস্কানিমূলক কার্যক্রম পরিচালনার আগে রুশরা আরো ভালোভাবে প্রস্তুতি নিয়ে রাখবে। তার মতে, যুক্তরাষ্ট্র যদিও ইউক্রেনের প্রধান মিত্ররাষ্ট্র, তারা এখন পর্যন্ত ইউক্রেনকে যে ধরনের সহায়তা করেছে, তার চেয়ে বেশি মাত্রায় তারা ইউক্রেনকে সহায়তা করবে বলে প্রতীয়মান হয় না। এই পরিস্থিতি বেলেস্কভ ও সুঙ্গুরোভস্কি উভয়েই যুক্তরাষ্ট্রের পাশাপাশি অন্যান্য রুশবিরোধী রাষ্ট্রের সঙ্গে মিত্রতা স্থাপন ও তাদের কাছ থেকে সামরিক সরঞ্জাম সংগ্রহ করাকে ইউক্রেনের জন্য লাভজনক হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন।
অন্যদিকে, ‘কিয়েভ সেন্টার ফর পলিটিক্যাল স্টাডিজ অ্যান্ড কনফ্লিক্টোলজি’র পরিচালক মিখাইল পোগ্রেবিনস্কির মতে, ইউক্রেনীয় সশস্ত্রবাহিনী কর্তৃক একই দিনে দনেৎস্কের ওপর ড্রোন স্ট্রাইক পরিচালনা এবং দনেৎস্কের সীমান্তবর্তী স্তারোমারিয়েভকা গ্রামে আক্রমণ চালানো কোনো কাকতালীয় ঘটনা নয়। তার ভাষ্যমতে, সম্প্রতি সাধারণভাবে ইউক্রেন এবং বিশেষভাবে জেলেনস্কি বেশ কয়েকটি সমস্যার মুখোমুখি হয়েছে। ইউক্রেনে কোভিড–১৯ মহামারী পরিস্থিতির অবনতি ঘটছে, ‘নর্ড স্ট্রিম ২’ পাইপলাইনের কার্যক্রম শুরু হতে যাচ্ছে এবং ইউক্রেনের জ্বালানি সঙ্কটে ভোগার আশঙ্কা রয়েছে। এসব কারণে ইউক্রেনীয় রাষ্ট্রপতি ও তার সহযোগীদের চারপাশে একটি ‘পরাজয়ের আবহ’ সৃষ্টি হয়েছে। এজন্য ইউক্রেনীয় জনসাধারণের মনোযোগ অন্যদিকে সরিয়ে রাখতে তারা দনবাসে ড্রোন আক্রমণ চালিয়েছে, এবং সেদিক থেকে তাদের উদ্দেশ্য সফল হয়েছে, কারণ ইউক্রেনীয় প্রচারমাধ্যমে এই বিষয়টি ব্যাপকভাবে প্রচার লাভ করেছে।
অবশ্য পোগ্রেবিনস্কির মতে, জেলেনস্কির পরিকল্পনা পুরোপুরি সফল হয়নি। জার্মানি ও ফ্রান্স যে ইউক্রেনের এই পদক্ষেপের নিন্দা জানাবে, সেটি জেলেনস্কি ও তার সহযোগীরা ধারণা করেননি। তদুপরি, ইউক্রেনের উদ্দেশ্য ছিল দনেৎস্কের ওপর ড্রোন আক্রমণ চালিয়ে পাল্টা আক্রমণ চালানোর জন্য মস্কো ও দনেৎস্ককে প্ররোচিত করা। রাশিয়া বা দনেৎস্ক ইউক্রেনীয় ড্রোন আক্রমণের প্রত্যুত্তরে ইউক্রেনের ওপর পাল্টা আক্রমণ চালালে তখন সেটিকে কেন্দ্র করে ইউক্রেন ‘নর্ড স্ট্রিম ২’ পাইপলাইনের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা আরোপের দাবি জানাত বা অন্ততপক্ষে পাইপলাইনটির কার্যক্রম শুরুর ব্যাপারটি পিছিয়ে দেয়ার চেষ্টা করত। কিন্তু মস্কো বা দনেৎস্ক ইউক্রেনের ওপর পাল্টা আক্রমণ চালায়নি, এবং দনেৎস্কের ওপর ইউক্রেনীয় ড্রোন স্ট্রাইকের পর লুহানস্কের আক্রমণে ইউক্রেনীয় কেমিক্যাল ট্রুপসের একটি যান ধ্বংস হলেও ইউক্রেন চাইলেই লুহানস্কের কার্যক্রমের দায় রাশিয়া বা দনেৎস্কের ওপর চাপিয়ে দিতে পারে না।
পোগ্রেবিনস্কির ধারণা, দনেৎস্কের ওপর ইউক্রেনীয় ড্রোন স্ট্রাইকের পর রাশিয়া বা দনেৎস্ক যে সরাসরি এই আক্রমণের কোনো প্রত্যুত্তর দেয়নি, সেটি এমনি এমনি হয়নি, বরং মস্কো ও দনেৎস্ক পরস্পরের সঙ্গে আলোচনা করেই এই সতর্ক প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে। তার মতে, মস্কো বা দনেৎস্ক সরাসরি ইউক্রেনীয় ড্রোন স্ট্রাইকের প্রত্যুত্তর না দিয়ে চাতুর্যের পরিচয় দিয়েছে এবং এর ফলে এই আক্রমণ পরিচালনার পশ্চাতে ইউক্রেনীয় সরকারের একটি অন্যতম উদ্দেশ্য ব্যর্থ হয়েছে।
দনবাসে ইউক্রেনীয় ড্রোন স্ট্রাইক, ইউরোপীয় জ্বালানি ভূরাজনীতি এবং রুশ–মার্কিন দ্বন্দ্ব
রুশ সাংবাদিক ও সামরিক বিশ্লেষক, ‘ন্যাশনাল ডিফেন্স’ ম্যাগাজিনের প্রধান সম্পাদক এবং ‘সেন্টার ফর অ্যানালাইসিস অফ ওয়ার্ল্ড আর্মস ট্রেড’ থিঙ্ক ট্যাঙ্কের পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল ইগর করোৎচেঙ্কোর ভাষ্য অনুযায়ী, ইউক্রেন কর্তৃক দনবাসে তুর্কি–নির্মিত ‘বায়রাক্তার টিবি–২’ ড্রোন ব্যবহারের ফলাফল খুবই ‘করুণ’ হতে পারে। তার মতে, ইউক্রেনীয় ড্রোনগুলো বিনা বাধায় দনবাসের রুশ–সমর্থিত প্রজাতন্ত্রগুলোর বেসামরিক অবকাঠামোর ওপর আক্রমণ চালাতে পারে, কারণ প্রজাতন্ত্রগুলোর কাছে ড্রোন ভূপাতিত করতে সক্ষম এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম নেই। তিনি দনবাসে ইউক্রেন কর্তৃক ড্রোন স্ট্রাইক পরিচালনাকে ‘উস্কানি’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।
করোৎচেঙ্কোর মতে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দনবাসে চলমান যুদ্ধে রাশিয়াকে সরাসরি লিপ্ত হতে বাধ্য করার জন্য এই ধরনের পদক্ষেপ নিতে ইউক্রেনকে উৎসাহ দিচ্ছে। ইউক্রেন দনবাসের রুশ–সমর্থিত প্রজাতন্ত্রগুলোর ওপর ব্যাপক হারে ড্রোন আক্রমণ চালাতে শুরু করলে প্রজাতন্ত্রগুলোকে রক্ষা করার জন্য রাশিয়াকে সক্রিয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। রাশিয়া রোস্তভ প্রদেশে ‘এস–৪০০ ত্রিউম্ফ’ এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম ও ইলেক্ট্রনিক ওয়ারফেয়ার সিস্টেম মোতায়েনের মাধ্যমে দনবাসে একটি ‘নো ফ্লাই জোন’ সৃষ্টি করতে পারে এবং এর মধ্য দিয়ে দনেৎস্ক ও লুহানস্কের ওপর ইউক্রেনীয় ড্রোন আক্রমণ প্রতিহত করতে পারে। কিন্তু দনবাসে চলমান যুদ্ধে রাশিয়া বেশি সক্রিয়ভাবে জড়িয়ে পড়লে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে পশ্চিমা বিশ্ব তাদের উপর নতুন করে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপের সুযোগ পাবে, যা ‘নর্ড স্ট্রিম ২’ প্রকল্পকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে।
উল্লেখ্য, ইউরোপীয় রাষ্ট্রগুলোর সিংহভাগ নিজেদের প্রাকৃতিক গ্যাসের চাহিদা পূরণের জন্য রাশিয়ার ওপর নির্ভরশীল এবং রাশিয়া ইউরোপীয় রাষ্ট্রগুলোর কাছে গ্যাস রপ্তানির মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অর্থ আয় করে। ইউরোপীয় রাষ্ট্রগুলোর কাছে রপ্তানিকৃত রুশ গ্যাসের বৃহদাংশ পাইপলাইনের মাধ্যমে উক্ত রাষ্ট্রগুলোকে সরবরাহ করা হতো, এবং এই পাইপলাইনগুলো ইউক্রেনের মধ্য দিয়ে গেছে। এজন্য রাশিয়া ইউক্রেনকে বিপুল পরিমাণ ‘ট্রানজিট ফি’ প্রদান করত এবং এর পাশাপাশি ইউক্রেনের কাছে বাজারমূল্যের চেয়ে অনেক কম মূল্যে গ্যাস বিক্রি করত। এই প্রক্রিয়া ইউক্রেনের জন্য অত্যন্ত লাভজনক ছিল। কিন্তু ২০১৪ সালে ইউক্রেনে অতি পশ্চিমাপন্থী ও রুশবিরোধী সরকার ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হওয়ার পর রাশিয়া ইউক্রেনের মধ্য দিয়ে যাওয়া পাইপলাইনগুলোর নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে এবং ইউক্রেনের ওপর থেকে নির্ভরশীলতা হ্রাস করার জন্য বিকল্প খুঁজতে শুরু করে।
রাশিয়ার জন্য এই বিকল্প হচ্ছে ‘নর্ড স্ট্রিম ২’ পাইপলাইন, যেটি রাশিয়া থেকে বাল্টিক সাগর হয়ে জার্মানি পর্যন্ত বিস্তৃত। ২০২১ সালে উক্ত পাইপলাইনটির নির্মাণকাজ সমাপ্ত হয়েছে এবং এটির মাধ্যমে গ্যাস রপ্তানি শুরু হলে রাশিয়া আর ইউরোপীয় রাষ্ট্রগুলোর কাছে গ্যাস রপ্তানির জন্য ইউক্রেনের মধ্য দিয়ে যাওয়া পাইপলাইনগুলোর ওপর নির্ভরশীল থাকবে না। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেন এই পাইপলাইন প্রকল্পের তীব্র বিরোধী, কারণ যুক্তরাষ্ট্র ইউরোপীয় রাষ্ট্রগুলোর কাছে তাদের নিজস্ব ‘তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস’ বা ‘এলএনজি’ বিক্রি করতে ইচ্ছুক এবং এই পাইপলাইন নির্মাণের ফলে ইউক্রেন বিপুল পরিমাণ রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হওয়ার পাশাপাশি সস্তায় রুশ গ্যাস ক্রয়ের সুযোগ হারাবে ও রাশিয়ার ওপর চাপ প্রয়োগের একটি গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার হারিয়ে ফেলবে।
যুক্তরাষ্ট্র ‘নর্ড স্ট্রিম ২’ পাইপলাইন প্রকল্পের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল এবং উক্ত পাইপলাইন নির্মাণ বন্ধ করতে জার্মানির ওপর চাপ দিচ্ছিল। কিন্তু জার্মানি নিজেদের জ্বালানি নিরাপত্তার জন্য এই পাইপলাইনকে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচনা করে এবং এজন্য তারা মার্কিন চাপ অগ্রাহ্য করেছে। জার্মানির সঙ্গে মিত্রতা বজায় রাখার স্বার্থে যুক্তরাষ্ট্র ২০২১ সালের মে মাসে উক্ত পাইপলাইন প্রকল্পের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নিতে বাধ্য হয়েছে। কিন্তু কার্যত তারা উক্ত পাইপলাইন নিয়ে মোটেই সন্তুষ্ট নয়। এমতাবস্থায় দনবাসে বিদ্যমান পরিস্থিতির অবনতি ঘটলে এবং দনবাসে অবস্থিত রুশ–সমর্থিত প্রজাতন্ত্রগুলোর রক্ষার জন্য রাশিয়া এই যুদ্ধে সক্রিয়ভাবে হস্তক্ষেপ করতে বাধ্য হলে যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়ার ওপর (এবং বিশেষ করে ‘নর্ড স্ট্রিম ২’ পাইপলাইনের ওপর) নিষেধাজ্ঞা আরোপ করার অজুহাত পাবে। তদুপরি, এরকম পরিস্থিতিতে জার্মানি রাশিয়ার পক্ষ নিতে পারবে না, কারণ সেটা করলে তাদেরকে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে ‘আগ্রাসন’ পরিচালনায় রাশিয়াকে সহায়তা করার দায়ে অভিযুক্ত করা হবে।
সামগ্রিক পরিস্থিতি বিবেচনায় রেখে রুশ বিশ্লেষকরা ধারণা করছেন, দনেৎস্কের ওপর ইউক্রেন কর্তৃক পরিচালিত ড্রোন স্ট্রাইকের পশ্চাতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ প্রভাব থাকতে পারে। কার্যত বর্তমানে মার্কিন–নেতৃত্বাধীন পশ্চিমা বিশ্ব ও রাশিয়ার মধ্যে ‘অঘোষিত স্নায়ুযুদ্ধ’ চলছে, এবং এই প্রেক্ষাপটে দনবাসে ইউক্রেনীয় কার্যক্রমের পশ্চাতে যুক্তরাষ্ট্রের গোপন ভূমিকা থাকা অস্বাভাবিক নয়। উল্লেখ্য, ইউক্রেন কর্তৃক দনবাসে ড্রোন স্ট্রাইক পরিচালনার পর জার্মানি ও ফ্রান্স ইউক্রেনের এই পদক্ষেপের বিরোধিতা করে ইউক্রেনকে সতর্ক করেছে, কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র এই ধরনের কোনো বক্তব্য প্রদান করেনি। উল্টো এই ঘটনার পর যুক্তরাষ্ট্রের রাশিয়া, ইউক্রেন ও ইউরেশিয়া বিষয়ক উপ–সহকারী প্রতিরক্ষামন্ত্রী লরা কুপার ইউক্রেনের নিকট ‘প্রতিরক্ষামূলক মারণাস্ত্র’ সরবরাহের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের মিত্ররা যে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে রেখেছে, সেটি তুলে নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
রুশ আইনসভার নিম্নকক্ষ ‘গোসুদার্স্তভেন্নায়া দুমা’র সদস্য ওলেগ মরোজভ রুশ অনলাইন পত্রিকা ‘ভেজগ্লিয়াদ’কে প্রদত্ত একটি সাক্ষাৎকারে মত প্রকাশ করেছেন যে, জেলেনস্কি আশা করেছিলেন, দনেৎস্কে ইউক্রেনীয় ড্রোন স্ট্রাইক ও স্তারোমারিয়েভকায় ইউক্রেনীয় আক্রমণের ফলে রাশিয়া ও দনেৎস্ক তীব্র পাল্টা আক্রমণ চালাবে এবং এর ফলে ইউক্রেনীয় সশস্ত্রবাহিনী দনবাসে একটি ছোটখাটো সামরিক বিপর্যয়ের সম্মুখীন হবে। এর ফলে ইউক্রেনকে ‘রুশ আগ্রাসন’ থেকে রক্ষা করার জন্য যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন রাশিয়ার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবে এবং রাশিয়া ও পশ্চিমা বিশ্বের মধ্যেকার সম্পর্কের চূড়ান্ত অবনতি ঘটবে। সেক্ষেত্রে রাশিয়া ও পশ্চিম ইউরোপীয় রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে গ্যাস বাণিজ্য বন্ধ বা স্থগিত হয়ে যাবে এবং পশ্চিম ইউরোপীয় রাষ্ট্রগুলোকে অপেক্ষাকৃত বেশি দামি মার্কিন এলএনজি ক্রয় করতে হবে।
মরোজভের ভাষ্যমতে, ইউক্রেনের এই পরিকল্পনা ব্যর্থ হয়েছে। জার্মানি ও ফ্রান্স ইউক্রেন কর্তৃক দনবাসে ড্রোন ব্যবহারের নিন্দা জানিয়েছে এবং এই বিষয়ে রাশিয়ার সঙ্গে কোনো ধরনের সঙ্কটে জড়াতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। মরোজভের ধারণা, এটি ইউক্রেনীয় সৈন্যদের মনোবল হ্রাস করার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখবে, কারণ এই ঘটনায় জার্মানি ও ফ্রান্সের প্রতিক্রিয়া থেকে এটি স্পষ্ট হয়েছে যে, রাশিয়ার সঙ্গে ইউক্রেনের যুদ্ধ বেঁধে গেলে ইউক্রেন ইউরোপীয় রাষ্ট্রগুলোর কাছ থেকে সহায়তা নাও পেতে পারে।
দনেৎস্ক ও লুহানস্কের আকাশসীমার নিরাপত্তা সংক্রান্ত পরিস্থিতি
রুশ সশস্ত্রবাহিনীর জেনারেল স্টাফের অন্তর্ভুক্ত ‘স্পেশাল অপারেশন্স ফোর্সেস কমান্ডে’র অ্যান্টি–এয়ারক্রাফট মিসাইল ফোর্সের প্রাক্তন অধিনায়ক কর্নেল সের্গেই খাতিলেভ রুশ দৈনিক পত্রিকা ‘মস্কোভস্কি কমসোমলেৎস’কে প্রদত্ত একটি সাক্ষাৎকারে জানান, ‘মিনস্ক প্রোটোকল’ ও ‘মিনস্ক ২’ চুক্তি অনুযায়ী দনবাসের যুদ্ধক্ষেত্রে যুদ্ধবিমান ও ড্রোনের ব্যবহার নিষিদ্ধ, এজন্য দনেৎস্ক ও লুহানস্ক প্রজাতন্ত্রদ্বয় শক্তিশালী এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম গড়ে তোলার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেনি। তিনি উল্লেখ করেন, দনেৎস্ক ও লুহানস্ক সৈন্যদের কাছে সোভিয়েত–নির্মিত ‘বুক’ সারফেস–টু–এয়ার মিসাইল রয়েছে, যেগুলোর সাহায্যে ড্রোন ভূপাতিত করা সম্ভব, এবং ২০০৮ সালে রুশ–জর্জীয় যুদ্ধের সময় আবখাজিয়ার বাবুশারি বিমানবন্দরে মোতায়েনকৃত রুশ এয়ার ডিফেন্স সৈন্যরা ‘বুক–এম২’ ক্ষেপনাস্ত্রের সাহায্যে ৬ থেকে ৮টি জর্জীয় ড্রোন ধ্বংস করেছিল।
অবশ্য খাতিলেভের ভাষ্য অনুযায়ী, ক্ষেপনাস্ত্রের সাহায্যে ড্রোন ভূপাতিত করা অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিকর, কারণ ড্রোনের মূল্যের চেয়ে ক্ষেপনাস্ত্রের মূল্য বেশি। তদুপরি, দনেৎস্ক ও লুহানস্কে আকাশসীমা ইউক্রেনীয় আকাশযানের জন্য পুরোপুরি বন্ধ করতে চাইলে সেজন্য বহু সংখ্যক রেডিও ইঞ্জিনিয়ারিং ইউনিট, বিশেষজ্ঞ ও রাডার স্টেশনের প্রয়োজন হবে, যুদ্ধক্ষেত্র জুড়ে প্রতি ৫ থেকে ১০ কিলোমিটারে একটি করে অনুরূপ স্টেশন স্থাপন করতে হবে এবং সেগুলোতে সার্বক্ষণিকভাবে সৈন্য মোতায়েন রাখতে হবে। সেক্ষেত্রে এসব ঘাঁটিতে থাকা সামরিক সরঞ্জাম ও অন্যান্য যন্ত্রপাতি দ্রুত প্রতিস্থাপন করা এবং নির্দিষ্ট সময় পর পর সৈন্যদের প্রতিস্থাপন করার প্রয়োজন হবে। অর্থাৎ, রাশিয়া, দনেৎস্ক ও লুহানস্কের জন্য দনবাসের যুদ্ধক্ষেত্রের আকাশসীমা নিয়ন্ত্রণ প্রক্রিয়া খুবই ব্যয়বহুল হবে।
এমতাবস্থায় খাতিলেভের মতে, দনবাসের আকাশসীমা নিয়ন্ত্রণের সবচেয়ে সস্তা ও কার্যকরী উপায় হচ্ছে ‘মিনস্ক প্রোটোকল’ ও ‘মিনস্ক ২’ চুক্তির শর্তাবলি মেনে চলার জন্য ইউক্রেনকে বাধ্য করা, এবং এটি কোনো সামরিক নয়, বরং রাজনৈতিক কাজ। তার মতে, এর পাশাপাশি দনবাসের রুশ–সমর্থিত প্রজাতন্ত্রগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য প্রজাতন্ত্রগুলোতে বিদ্যমান এয়ার ডিফেন্স সৈন্যদের ও ইউনিটগুলোকে যতদূর সম্ভব কার্যকরভাবে সংগঠিত করা প্রয়োজন এবং এক্ষেত্রে প্রয়োজনে রুশ এয়ার ডিফেন্স সৈন্যদেরকেও ব্যবহার করা যেতে পারে।
দনবাসে ইউক্রেনীয় ড্রোন স্ট্রাইক এবং ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রাশিয়ার ‘জ্বালানি যুদ্ধ’
দনবাসে পরিচালিত ইউক্রেনীয় ড্রোন স্ট্রাইকের পর রুশ সরকার জানায় যে, তারা ১ নভেম্বর থেকে ইউক্রেনের কাছে কয়লা রপ্তানি করা বন্ধ রাখবে। এই প্রসঙ্গে ইউক্রেনীয় আইনসভা ‘ভের্খোভনা রাদা’র জ্বালানি, আবাসন ও সামাজিক সেবা বিষয় সংসদীয় কমিটির সভাপতি আন্দ্রেই গেরুস আইনসভার অধিবেশনে মন্তব্য করেছেন, রাশিয়ার এই সিদ্ধান্ত ‘জ্বালানি যুদ্ধ’ হিসেবে প্রতীয়মান হচ্ছে।
মস্কোয় অবস্থিত ‘ফাইন্যান্সিয়াল ইউনিভার্সিটি আন্ডার দ্য গভর্নমেন্ট অফ দ্য রাশান ফেডারেশন’ এবং ‘ন্যাশনাল সিকিউরিটি এনার্জি ফান্ডে’র সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অর্থনীতিবিদ ইগর ইয়ুশকভ এই প্রসঙ্গে মন্তব্য করেছেন যে, রাশিয়া কর্তৃক ইউক্রেনের নিকট কয়লা রপ্তানি বন্ধ করা যে দনবাসে ইউক্রেনীয় সৈন্যদের কার্যক্রমের ‘অপ্রতিসম’ জবাব (asymmetric response) হতে পারে, এই সম্ভাবনা উড়িয়ে দেয়া যায় না। তিনি দনবাসে ইউক্রেনীয় কার্যক্রমের প্রতি রুশ অবস্থানকে এভাবে বর্ণনা করেছেন, “তোমাদের কী মনে হয়, তোমরা ড্রোন কিনেছো আর সেটা এখন দনেৎস্ক আর লুহানস্কের বিরুদ্ধে ব্যবহার করবে? তোমাদের কি মনে হয় যে, তোমরাই সবচেয়ে চালাক? দেখা যাক!”
ইউশকভের প্রদত্ত তথ্য অনুযায়ী, ইউক্রেনের মজুদকৃত কয়লার পরিমাণ খুবই অল্প এবং তা দিয়ে কয়েক সপ্তাহের বেশি চলবে না। তারা যদি অন্য কোনো দেশ থেকে কয়লা কিনতে চায়, তাদেরকে উচ্চ মূল্য দিয়ে কিনতে হবে, কারণ বর্তমানে বিশ্ব বাজারে কয়লার মূল্য ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। এটি ইউক্রেনের অর্থনীতির জন্য খুবই ক্ষতিকর হয়ে দাঁড়াতে পারে। ইউশকভের মতে, রুশ–ইউক্রেনীয় সম্পর্ক স্বাভাবিক হলে রাশিয়া আবার ইউক্রেনের কাছে কয়লা সরবরাহ শুরু করতে পারে, কিন্তু ২০২১ সালের মধ্যে সেটি হওয়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।
অর্থাৎ, দনবাসে পরিচালিত ইউক্রেনীয় ড্রোন আক্রমণের ফলে রাশিয়া ইউক্রেনের বিরুদ্ধে এক ধরনের ‘অর্থনৈতিক যুদ্ধে’ লিপ্ত হয়েছে। এই অর্থনৈতিক যুদ্ধে ইউক্রেনের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণই বেশি হবে, কারণ বর্তমানে রাশিয়া চীনের কাছে বিপুল পরিমাণ কয়লা বিক্রি করছে এবং চীন রাশিয়ার কাছ থেকে আরো কয়লা কিনতে চাচ্ছে। ফলে সাময়িকভাবে ইউক্রেনীয় বাজার হারালেও রুশ কয়লাশিল্প ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হবে না। কিন্তু জ্বালানি সঙ্কটের দ্বারপ্রান্তে থাকা ও অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল ইউক্রেনের জন্য রুশদের এই অর্থনৈতিক যুদ্ধ খুবই ক্ষতিকর হয়ে দাঁড়াবে। অবশ্য রুশদের জন্য এর ফলাফল উল্টোও হতে পারে, কারণ রুশদের অর্থনৈতিক যুদ্ধে ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হয়ে ইউক্রেনীয় সরকার দনবাসে আরো আক্রমণাত্মক নীতি গ্রহণ করতে পারে।