Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

কোন দিকে যাবেন- সরকারি নাকি বেসরকারি চাকরি?

বস্তুত আমাদের দেশে আনুষ্ঠানিক পড়াশোনা সমাপ্ত করার পর চাকরিচ্ছুক প্রার্থীদের সামনে দু’ধরনের পথ খোলা থাকে। বলাবাহুল্য, আমাদের চোখের সামনে এই দুটি পথই ভাসে সব সময়, কোনোটা প্যাশনে, কোনোটা চিন্তা চেতনায় কিংবা ধ্যানে জ্ঞানে। তন্মধ্যে একটি হলো সরকারি চাকরি, আরেকটি বেসরকারি চাকরি।

বলা চলে এই দুটি পথ সম্পূর্ণ ভিন্ন এবং উপরন্তু এর জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি এবং সে অনুযায়ী জীবনযাপনের পদ্ধতিও অনেকাংশে ভিন্ন। আর তাই যখন ক্যারিয়ারের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গ্রহণের সময় আসে, তখন অনেকেই নানা রকম দ্বিধায় ভুগে থাকেন। চাকরির জীবন সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা অনেকেরই না থাকায় এবং সুযোগগুলো সম্পর্কে খোঁজ খবর না রাখার কারণেও অনেকে পিছিয়ে পড়েন। তাই সিদ্ধান্ত নিতে দেরি করে ফেলেন অনেকে। এরই ফাঁকে জীবনের ফাঁক গলে বেরিয়ে যায় মূল্যবান কিছু সময়। এক্ষেত্রে মূল জরুরি কথা হচ্ছে দ্বিধায় না ভুগে খুব দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়া। আপনার সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় অবশ্যই বিবেচনা করে দেখবেন যে আপনি যে রকমের জীবন চাচ্ছেন তা আপনার চাকরি বা কাজ আপনাকে দিতে পারবে কিনা।

বর্তমানে আমাদের দেশে অনেকেই আছেন যারা সরকারি কিংবা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে অথবা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছেন কিংবা পড়ছেন। এখানে আমি চাকরির দৌড়ে কাউকে এগিয়ে রাখব না। কোনো না কোনো সময়ই এদের মধ্যে কেউ না কেউ ফার্স্ট হচ্ছেন কিংবা ভালো ভালো অবস্থানে নিজেদের তুলে ধরতে পারছেন কিংবা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন তার কাঙ্খিত চাকরি পাবার আশায়। তবে কঠোর পরিশ্রমে সব সম্ভব- এটা মহামনীষীরা বহু আগেই বলে গিয়েছেন।

এই চাকরি খোঁজার ক্ষেত্রে সফলতার চেয়ে ব্যর্থতার পাল্লাটা ভারী বেশি, যদিও পিছনে সমূহ কারণ বিদ্যমান। একে তো আমাদের বেহাল শিক্ষা ব্যবস্থা, অন্যদিকে আমাদের সামগ্রিক প্রস্তুতিতে অবহেলা। অন্যদিকে বলা যায় চাকরির দৌড়ে আমাদের সমাজও কিন্তু বেশ অনেকটাই এগিয়ে। এ ব্যাপারে কিন্তু বর্তমান সমাজ ব্যবস্থাকেও ছেড়ে দিলে চলবে না।

এই ব্যাপারে সহায়ক বিষয়গুলো নিয়েই আজ লেখাটি সাজানো হয়েছে।

চাকরি প্রাপ্তির উপায়

যা-ই হোক, সরকারি এবং বেসরকারি চাকরি প্রাপ্তির উপায় পুরোটাই ভিন্ন প্রক্রিয়ায় সম্পন্ন হয়। সাধারণত সরকারি চাকরির নিয়োগ প্রক্রিয়া বেশ দীর্ঘ সময় ধরে হয়। প্রচন্ড রকমের প্রতিযোগীতামূলক পরীক্ষার মধ্য দিয়ে নিজেকে অবস্থান তৈরি করে নিতে হয়। এখানে রয়েছে কোটাসহ অন্যান্য বিষয়, যেগুলোও বিবেচনায় নেয়া হয়। তবে সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে নিয়োগের জন্য লম্বা সময় খুব বড় একটা ইস্যু হয়ে কাজ করে। এখানে আপনাকে এগিয়ে যেতে হবে সবুরে মেওয়া ফলে এই বুলি আওরাতে আওরাতে। তবে যাদের অনেক ধৈর্য আছে, তারা ধৈর্য ধরে প্রস্তুতি নিয়ে এখানে সুযোগ লাভ করতে পারেন।

অন্যদিকে বেসরকারি চাকরির নিয়োগ প্রক্রিয়া খুব দ্রুতগতির হয়ে থাকে। মূলত যারা ২০-২২ বছরের পড়ালেখা নামক জীবনযুদ্ধ শেষ করে আবার নতুন একটা যুদ্ধে নিজেকে শামিল করতে চান না, তারাই আসেন এই সেক্টরগুলোতে। এখানে স্বল্প সময়ের মধ্যেই নিয়োগ সম্পন্ন হয় এবং এই খাতে বছরের বেশিরভাগ সময়ই নতুন নতুন চাকরির সুযোগ সৃষ্টি হয়। তবে এই খাতেও ব্যক্তিগত পর্যায়ের পরিচিতি এবং তদবির প্রচলিত আছে। বেসরকারি চাকরির ক্ষেত্রে একটা বিষয় মাথায় রাখতে হবে যে, এখানে সব সময়ই ফ্রেশ গ্র্যাজুয়েটদেরও চাহিদা বেশি, আর তাই পড়াশোনা শেষ করার পরপরই এই চাকরিতে প্রবেশের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হয়।

বেতন

চাকরির সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় বেতন একটা বড় একটা বিবেচ্য বিষয় হিসেবে কাজ করে। একটু মজা করে বললে এমনটা দাঁড়ায়, অতীতে আপনি যতই শৌর্যবীর্যের অধিকারী হয়ে থাকেন না কেন, আপনার চাকরিকালে ওই বেতনটিই আপনার বর্তমান শৌর্যবীর্যের ধারক ও বাহক রুপে আবির্ভূত হবে।

অবশ্য বেতনের এই নিয়ন্ত্রিত দৌড়ে সরকারী চাকরির অবস্থান একটু মাঝামাঝি পর্যায়ের দিকে। কারণ দেখা যায় চাকরির একটি নির্দিষ্ট সময় পর বেতন এক জায়গায় স্থির হয়ে থাকে, যদিও সেটা আপনার গ্রেড কিংবা র‍্যাংকের উপর ভিত্তি করে ঠিক হয়। তবে বর্তমানে সরকারি চাকুরিগুলোতে সরকারের জাতীয় বেতন স্কেল অনুযায়ী বেতন-ভাতা ও অন্যান্য সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। বাংলাদেশ সরকার সর্বশেষ ঘোষিত বেতন স্কেলে বেতন প্রায় দ্বিগুণ করায় সরকারি চাকরিতে এখন মোটামুটি সন্তোষজনক বেতন প্রাপ্তি নিশ্চিত হয়েছে। ফলে সরকারি চাকরিতে এদেশের তরুণদেরও আগ্রহ বাড়ছে।

অন্যদিকে বেসরকারি চাকরিতে বিভিন্ন কোম্পানীতে শুরুর দিকে তেমন উচ্চ বেতন প্রাপ্তির সম্ভাবনা না থাকলেও অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে অনেক উচ্চ বেতনের সম্ভাবনা থাকে যেটা সরকারি চাকরিতে পাওয়া সম্ভব হয় না। এদিকে বেসরকারি কর্পোরেট চাকরির ঝলমলে জীবন-পদ্ধতি সহজেই যেকোনো তরুণকে আকর্ষণ করতে সক্ষম।

কর্মপরিবেশ

বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে চাকরির কর্ম পরিবেশ স্বাভাবিকভাবেই তরুণদের আকৃষ্ট করে থাকে। এখানে কাজের জন্য থাকে চ্যালেঞ্জিং পরিবেশ। সবকিছুই ঝকঝকে, তকতকে, স্মার্ট আর আকর্ষণীয়। অনেক ক্ষেত্রেই কাজের সুবিধার্থে কর্মীদের সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ও কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করা হয়।

কিন্তু অন্যদিকে সরকারি চাকরিতে অনেক সময়ই কাজ করার পরিবেশের ব্যাপারে কিছুটা হলেও আপোষ করে নিতে হয়, যা পুরোপুরি আপনার উপর নির্ভর করবে।

চাকরি নিরাপত্তা

বাংলাদেশে তরুণদের মধ্যে চাকরির সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় চাকরি নিরাপত্তা বিষয়টি অনেক গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দেখা দেয়। কারণ এই দেশে একটি নির্দিষ্ট বয়স পরে চাকরি খুঁজে পাওয়া বেশ দুষ্কর। আর তাই সরকারি চাকরিতে চাকরির নিশ্চয়তা তরুণদেরও আকৃষ্ট করছে। এখানে আপনার স্যালারি বেসরকারি থেকে কম হলেও ভবিষ্যতে আপনাকে চাকরি হারানো কিংবা অবসরকালীন ভাতা নিয়ে ভাবতে হবে না। বলা যায় অনেকটা সেই কারণেই মানুষ সরকারি চাকরিটিকে একটু বেশিই গুরুত্ব দেয়।

অন্যদিকে বেসরকারি চাকরিতে চাকরি নিরাপত্তার বিষয়টি এখনো উপেক্ষিতই রয়ে গেছে। আর এ কারণে অনেকেই ভালো ভালো চাকরি করা সত্ত্বেও এই বিষয়টি নিয়ে বেশ উদ্বিগ্নতায় ভুগে থাকেন।

চাকরির বয়স

চাকরি করার সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করার জন্য একটি বড় নিয়ামক হয়ে কাজ করে মূলত চাকরিতে প্রবেশের বয়স বিষয়ক ভাবনাগুলো। আমাদের দেশে ৩০ বছর পর্যন্ত একজন তরুণ সরকারি চাকরিতে প্রবেশ করতে পারেন। কিন্তু বেসরকারি এন্ট্রি লেভেলের চাকরির জন্য এই বয়সটা মোটেও উপযুক্ত নয়।

বেশিরভাগ বেসরকারি চাকরিদাতারা এই ক্ষেত্রে সদ্য স্নাতক শেষ করা তরুণদের অগ্রাধিকার দিয়ে থাকেন। আর তাই পাশ করার পরই তরুণদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে চাকরি কোনটা করবেন, সরকারি নাকি বেসরকারি? তবে পদ অনুযায়ী চাকরির বয়সের তারতম্য খানিকটা হলেও ঘটে থাকে। অনেক ক্ষেত্রে অভিজ্ঞতাকে শিক্ষাগত যোগ্যতার উপরেও স্থান দেয়া হয়।

ঢাকায় থাকা কিংবা না থাকা

আমাদের দেশে অনেকের মাঝে চাকরি খোঁজার সময় একটা প্রশ্ন বড় হয়ে দেখা দেয়- “ঢাকায় থাকবো কি থাকবো না?” যারা ঢাকার স্থায়ী বাসিন্দা, সেখানেই ছোটবেলা থেকে লালিত-পালিত, তারা অনেকেই ঢাকা ছেড়ে যেতে চান না। আবার যারা মফস্বল থেকে ঢাকায় পড়াশোনার জন্য আসেন, তাদের অনেকেই যেন ঢাকা ছাড়তে পারলেই হাফ ছেড়ে বাঁচেন। আর তাই চাকরির সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় ঢাকায় অবস্থান কিংবা বাইরে যাবার প্রশ্নটি উঠে আসে।

সরকারি চাকরিতে বেশিরভাগ সময়ই শুরুর দিকে ঢাকার বাইরে কর্মস্থল হয়ে থাকে। এমনকি কিছু চাকরিতে সারা জীবনই ঢাকার বাইরে  কাটিয়ে দিতে হয়। অন্যদিকে বেশির ভাগ কর্পোরেট এবং প্রাইভেট চাকরি ঢাকা কেন্দ্রিক। অধিকাংশ কর্পোরেট অফিস এবং বাণিজ্যিক কেন্দ্র ঢাকায় অবস্থিত।

মূলত আমাদের বর্তমান সমাজ ব্যবস্থা, লাগামহীন ক্ষমতার বিন্যাস, নৈতিক কিংবা অনৈতিক সুবিধা ভোগের তৎপরতাসহ আরো অনেক বিষয়গুলো আপনাআপনিই চলে আসে। এক্ষেত্রে পরামর্শ হবে, আপনি যে মাধ্যম থেকেই আসুন না কেন, আপনাকে চাকরি পেতে হলে অবশ্যই সেই চাকরির মনন ও মানসিকতায় নিজেকে তৈরি করতে হবে।

তথ্যসূত্র

১/ quora.com/Which-one-is-better-a-70K-private-job-or-a-40K-government-job

২/ embibe.com/news/government-jobs-vs-private-jobs-which-is-better-and-why/

৩/ moneyconnexion.com/why-private-jobs-are-better-than-government-jobs.htm

Related Articles