চাকুরি যুদ্ধের প্রথম ধাপ হল ইন্টারভিউ। সুতরাং প্রথম ধাপটা হতে হবে মজবুত। তা না হলে চাকুরি দুষ্প্রাপ্য হয়ে উঠবে। আপনারা হয়ত অনেকেই ইন্টারভিউর সাধারণ কিছু নিয়ম কানুন জানেন। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রে দেখা যায় ইন্টারভিউ বোর্ডে উপনীত হয়ে আমরা কিছু ছোট খাট ভুল করি যা বোর্ড মেম্বারদের চোখে পড়ে এবং এর মাধ্যমে তারা আপনার ব্যক্তিত্বের বিভিন্ন দিক সম্পর্কে অবহিত হন। যে ১৪ টি কাজ কখনই করবেন না-
১। একই কোম্পানির বিভিন্ন পদে আবেদন করবেন না
একই কোম্পানির বিভিন্ন পদে আবেদনের মাধ্যমে আপনি হয়ত আপনার বহুমুখী প্রতিভার জানান দিচ্ছে কিন্তু কোম্পানির ম্যানেজার বা মালিকের দৃষ্টিতে দেখলে ব্যাপারটা কি দাঁড়ায়? তার চোখে আপনি হলেন “Jack Of all trades but master of none”। একটি কোম্পানিতে একটি নির্দিষ্ট বিষয়ের দক্ষ লোকবলের প্রয়োজন, তাদের বহুমুখী প্রতিভাদরদের দরকার নেই।
আর আপনার এই হন্যে হয়ে চাকুরি খোঁজাটা তাদের চোখে লক্ষ্যহীন মানুষে পরিণত করবে। ফলশ্রুতিতে আপনি আর ইন্টারভিউর ডাক পাবেন না।
২। সঠিক প্রস্তুতি নিয়ে ইন্টারভিউ বোর্ডে উপস্থিত হন
কোম্পানি এবং পদ সম্পর্কে ভালোভাবে না জেনে কখনই ইন্টারভিউর সম্মুখীন হবেন না। কারণ প্রশ্নকর্তা আপনার কাছ থেকে এই ব্যাপারটা প্রথমেই জানতে চাইতে পারেন। তাছাড়া এটি একজন সচেতন মানুষের পরিচায়ক। অবশ্যই CV বা Resume এর অতিরিক্ত কপি নিয়ে যাবেন।
৩। যথাসময়ে ইন্টারভিউ বোর্ডে উপস্থিত হবেন
আমাদের অনেকেরই একটা সমস্যা রয়েছে। যথাসময়ে কোথাও উপস্থিত হতে পারি না। নির্দিষ্ট সময়ের বেশ পরে আমরা কোনো স্থানে উপস্থিত হই। ইন্টারভিউ বোর্ডে এই কাজ ভুলেও করার চেষ্টা করবেন না। এটা দ্বারা বুঝায় আপনি অন্য কারো সময়ের প্রতি শ্রদ্ধাহীন এবং সময় উদাসীন একজন মানুষ।
৪। পোশাক – আশাক থাকতে হবে পরিচ্ছন্ন ও মার্জিত
অনেকের মতে বইয়ের মলাট দেখে বইয়ের মান নির্ধারণ করা যায় না কিংবা বইটি কেমন সেটিও নির্ধারণ করা উচিত নয়। কিন্তু মানুষের তাই করে। ঠিক তেমনি আপনাকে দেখতে যদি খারাপ দেখায় তাহলে আপনার প্রতি ইন্টারভিউ বোর্ড মেম্বারদের একটি বিরুপ মনোভাব জন্মাবে তা আপনি ইন্টারভিউ তে যাই বলেন না কেন, যতটা গুছিয়েই কথাবলেন না কেন। সুতরাং সাধারণ অফিশিয়াল পোশাক পড়ে যাবার চেষ্টা করবেন। বেশি ঢিলেঢালা কিংবা বেশি টাইটফিট জামা না পরাই ভাল।
৫। অবশ্যই মোবাইল ফোন বন্ধ রাখবেন
আমাদের অনেকেরই ধারণা ইন্টারভিউ বোর্ডে ফোন কল রিসিভ করলে কিছু হয় না। কিন্তু বোর্ড মেম্বেরগণ এতে প্রচন্ড বিরক্ত হন। এ ধরণের কাজকর্ম দ্বারা বোঝা যায় প্রার্থী চাকুরি সম্পর্কে কতটা সিরিয়াস। সুতরাং ইন্টারভিউ বোর্ডে ঢোকার আগে অবশ্যই মোবাইল ফোন বন্ধ রাখবেন।
৬। অশালীন শব্দ উচ্চারণ থেকে বিরত থাকুন
“Bloody Hell”, “Shit”, “বালছাল”, “What the fuck”, এসব উচ্চারণ থেকে বিরত থাকুন। প্রাত্যহিক জীবনে আমরা উত্তেজনার বশত কিছু গালি ব্যবহার করে ফেলি। কিন্তু সেটা গুরুজন কিংবা ইন্টারভিউ বোর্ডে উচ্চারণ করাটা মোটেই সুখকর নয়। সুতরাং যেকোনো আলোচনায় নিজের আচরণ সংযত রাখার চেষ্টা করুন।
৭। স্যালারি সম্পর্কিত প্রশ্ন এড়িয়ে চলুন
ইন্টারভিউর প্রাথমিক পর্যায়ে কখনই স্যালারি সম্পর্কে প্রশ্ন করবেন না। কারণ একজন চাকুরিদাতা কখনই তেমন বেতনভুক কর্মচারী আশা করবেন না যিনি শুধু অর্থের নিগড়ে বন্দি হয়ে তাদের কাজ করছেন। শুধু শুধু স্যালারির কথা প্রথমেই জিজ্ঞাসা করে নিজের লাল বাতি নিজে জ্বালাবেন না। আপনি চাইলে ইন্টারভিউর শেষ পর্যায়ে স্যালারি সম্পর্কে যেকোন প্রশ্ন করতে পারেন। সেটা চাকুরিদাতারাও আশা করবেন। অধিকাংশ ক্ষেত্রে দেখা যায় তারাই স্যালারি সম্পর্কিত তথ্য আবেদনকারীকে জানান।
৮। নার্ভাসনেস প্রকাশ করবেন না
“আমার খুব নার্ভাস লাগছে”, “খুব হাত পা কাপছে”, “টেনশন হচ্ছে” এ ধরণের বিরক্তকর কথাবার্তা আপনার unsmartness কে তুলে ধরে। চাকুরিদাতা কিংবা ইন্টারভিউ বোর্ড মেম্বার খুব ভালোভাবেই জানেন ইন্টারভিউর সময় অনেক প্রার্থীই নার্ভাস হয়ে পড়েন কিন্তু বার বার মুখে বলে বহিঃপ্রকাশ ঘটানোটা একদিকে যেমন অপ্রাপ্তবয়স্কের আচরণ তেমনি বিরক্তকর। সুতরাং এ বিষয়গুলো সাবধানে এড়িয়ে চলুন।
৯। “ স্যার, আমার এই চাকুরিটা খুবই দরকার”
আপনার চাকুরির খুব দরকার হতেই পারে। হোক সেটা অর্থনৈতিক কিংবা সামাজিক কারণে। আপনি যে হন্যে হয়ে চাকুরি খুজছেন সেটা কখনই আপনার মনোভাবে প্রকাশ করবেন না। কিংবা কখনই নিজের অবস্থার কথা বর্ণনা করে বলবেন না “ এই কারণে আমার চাকুরিটা খুব দরকার”। আধুনিক চাকুরিদাতাদের মতে, তারা এমন চাকুরে চান না যারা শুধু চাকুরি করা কিংবা কিছু অর্থের জন্য চাকুরি করেন, তারা চান যারা নিজের ক্যারিয়ার সুন্দরভাবে গড়তে চায় তেমন যুবসমাজকে চাকুরি দিতে। সুতরাং “Be Smart”।
১০। অধৈর্য হবেন না এবং বারবার ঘড়ি দেখবেন
কখনও কখনো ইন্টারভিউর সময় অনেক বেশি হয়। ৩০-৯০ মিনিট তো হতেই পারে। যেহেতু যোগ্য প্রার্থী নির্বাচন যেকোন প্রতিষ্ঠানের জন্যি গুরুত্বপূর্ণ কাজ। তাই ইন্টারভিউ বোর্ড একটু বেশি সময় নিতেই পারে। কিন্তু তাই বলে আপনি কখনই তাদের প্রশ্ন করবেন না “ইন্টারভিউ কখন শেষ হবে? ”। অধৈর্য মানুষ কেউই আশা করে না।
১১। অযথা বেশি নড়চড় করবেন না
আপনি খেয়াল করে দেখবেন আপনি কিংবা আশেপাশের কেউ যখন কথা বলেন – কেউ কেউ নখ কাটেন, হাতের আঙ্গুল ফোটান, কলম পেন্সিল দিয়ে হাতের কাছে যাই পাওয়া যায় তাতেই দাগাদাগি শুরু করেন, কোন জিনিষ রোল করাতে থাকেন এবং কেউ আরো ভয়ানক কাজ নাক খুটা শুরু করেন এবং তা সুন্দর করে হাতের কাছে যা পাওয়া যায় তাতেই মুছতে শুরু করেন। নারীদের সমস্যা এক্ষেত্রে আরো প্রকট। অনেক নারীই ওড়নার আঁচল পেচাতে থাকেন। এসব বাজে অভ্যাস যদি আপনার থেকে থাকে তবে অতি সত্বর বদালনোর চেষ্টা করবেন। এই বিষয়গুলো ইন্টারভিউ বোর্ডে খুব ভালোভাবে পরখ করা হয়।
১২। অপরের নামে বদনাম হতে বিরত থাকুন
ইন্টারভিউ বোর্ডের খুব সাধারণ একটি প্রশ্নের মধ্য অন্যতম হল – “আপনি কেন বর্তমানের চাকুরিটি ছেড়ে দিচ্ছেন?”। এক্ষেত্রে আপনার পূর্ব অফিসের প্রতি রাগ ক্ষোভ ভুলেও নতুন অফিসের বসদের সামনে ঝাড়বেন না। কারো নামে বদনাম কিংবা গীবতও করবেন না। কারণ এতে আপনার মন মানসিকতা সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণ পাওয়া যাবে। আপনি শালীনভাষায় আপনার অভিমত ব্যক্ত করতে পারেন।
১৩। নিজের ঢোল নিজে পেটাবেন না
আপনি বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী হতেই পারেন। আপনার বিভিন্ন কাজ, পুরস্কার কিংবা অভিজ্ঞতার বিষয়টি CV বা Resume এ উল্লেখ করবেন। কিন্তু তার পাশাপাশি বিনা প্রশ্নে নিজের গুণকীর্তন করবেন না। চাকুরিদাতা আপনার কাজ সম্পর্কে CV বা Resume পড়েই জানতে পারবেন, শুধু শুধু বেশি কথা বলে তাদের বিরক্ত করবেন না।
১৪। আপত্তিকর কথাবার্তা হতে বিরত থাকুন
ইন্টারভিউ বোর্ডের আরেকটি খুব সাধারণ একটি প্রশ্ন হল – “আপনি কেন আমাদের কোম্পানীতে জয়েন করতে চান?”। আপনি কখনই বলবেন না – ‘ আপনাদের অফিসে ছুটি বেশি/ আপনাদের অফিসে নাস্তার কোন লিমিটেশন নাই কিংবা তমুক ললনা এই কোম্পানিতে কর্মরত আছে” এই ধরণের উত্তর আপানার চাকুরি না হওয়ার জন্য যথেষ্ট।