২০১১ সালের ১৯ মার্চ। লিবিয়ান সেনাবাহিনী এগিয়ে যাচ্ছিল লিবিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর বেনগাজির দিকে, প্রায় একমাস ধরে যে শহরটিসহ দেশটির প্রায় সমগ্র পূর্বাঞ্চল ছিল বিদ্রোহীদের নিয়ন্ত্রণে। সন্ধ্যা পৌনে সাতটার দিকে লিবিয়ান সেনাবাহিনী যখন বেনগাজি শহরের উপকণ্ঠে পৌঁছে যায়, ঠিক তখন তাদের উপর সর্বপ্রথম বিমান হামলা শুরু করে ফ্রান্স। এর মাত্র কিছুক্ষণ আগেই অবশ্য জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে রেজোল্যুশন ১৯৭৩ পাস হয়, যার অধীনে ‘বেসামরিক জনগণকে রক্ষার জন্য’ যেকোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করার অনুমতি দেওয়া হয় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে, কিন্তু ফরাসি বিমানগুলো লিবিয়ার উদ্দেশ্যে যাত্রা করেছিল রেজোল্যুশনটি পাস হওয়ারও আরো চার ঘণ্টা আগে।
শুধু লিবিয়ার উপর প্রথম আক্রমণ না, জাতিসংঘে যে রেজোল্যুশনটি পাশ হয়েছিল, সেটিও ছিল ফ্রান্সেরই প্রস্তাব করা। লিবীয় নেতা মোয়াম্মার আল-গাদ্দাফির উপর থেকে সমর্থন প্রত্যাহার করে বিশ্বের প্রথম রাষ্ট্র হিসেবে বিদ্রোহীদের নবগঠিত ন্যাশনাল ট্রানজিশনাল কাউন্সিলকে (এনটিসি) লিবিয়ার বৈধ সরকার হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে উদাহরণ সৃষ্টি করেছিল তারা। এমনকি ফ্রান্সের দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়েই ব্রিটেন গাদ্দাফির উপর থেকে সমর্থন প্রত্যাহার করে নিয়েছিল। লিবিয়ার বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান পরিচালনার জন্য আন্তর্জাতিক বিশ্বকে প্রভাবিত করার ব্যাপারে ফ্রান্সের ভূমিকা ছিল অন্য যেকোনো রাষ্ট্রের চেয়ে বেশি। অন্য অনেক রাষ্ট্র পরোক্ষভাবে সাহায্য-সহযোগিতা করলেও ফ্রান্স এবং কাতার ছিল দুটি রাষ্ট্র, যারা জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে সরাসরি বিদ্রোহীদেরকে অস্ত্র সাহায্য দিয়ে গাদ্দাফির পতন নিশ্চিত করেছিল।
কিন্তু কেন ফ্রান্স গাদ্দাফিকে ক্ষমতাচ্যুত করার জন্য এত উদগ্রীব ছিল? কেন লিবিয়ার ব্যাপারে তারা কিছু কিছু ক্ষেত্রে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চেয়েও বেশি ভূমিকা পালন করেছিল? বিভিন্ন সময় বিশ্লেষকরা এর বিভিন্ন রকম ব্যাখ্যা দিয়েছেন। সম্প্রতি অনুসন্ধানী সংবাদ মাধ্যম ইন্টারসেপ্টের একটি প্রতিবেদনে আবারও আলোকপাত করা হয়েছে বিষয়টির প্রতি। ঐ প্রতিবেদনে এবং অন্যান্য পত্রপত্রিকায় আসা ফ্রান্সের লিবিয়া আক্রমণের পেছনের কারণগুলোর ব্যাখ্যা নিয়েই আমাদের আজকের আয়োজন।
অস্ত্রের বাজার সৃষ্টি করা
২০০৩ সালে লিবিয়ার উপর থেকে জাতিসংঘের অবরোধ উঠে যাওয়ার পর থেকেই পশ্চিমা বিশ্বের সাথে লিবিয়ার সম্পর্কের উন্নয়ন ঘটতে থাকে। ২০০৬ সালে গাদ্দাফি ফ্রান্সের আইটুই কোম্পানির কাছ থেকে নজরদারির প্রযুক্তি ক্রয় করেন। ঐ কোম্পানিটির সাথে ফ্রান্সের তৎকালীণ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং পরবর্তীকালের প্রেসিডেন্ট নিকোলাস সারকোজির ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। ২০০৭ সালে সারকোজি যখন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট হন, তখন গাদ্দাফির সাথে তার সম্পর্কের আরো উন্নতি হয় এবং গাদ্দাফি তিন দশকের মধ্যে প্রথমবারের মতো ফ্রান্স সফর করেন।
ঐ সফরের সময় গাদ্দাফি ফ্রান্সের কাছ থেকে ১৪টি রাফায়েল ফাইটার জেটসহ মোট ৫.৮৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার সমমূল্যের অস্ত্র এবং সামরিক পণ্য কেনার প্রতিশ্রুতি দেন। ঐ প্রতিশ্রুতি ফ্রান্সের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল, কারণ তখন পর্যন্ত আন্তর্জাতিক বাজারে রাফায়েল বিমানগুলোর কোনো ক্রেতা ছিল না। কিন্তু গাদ্দাফির প্রতিশ্রুতি শুধু প্রতিশ্রুতিই থেকে যায়। ২০১০ সাল পর্যন্তও ফ্রান্সের সাথে চুক্তিটির ব্যাপারে লিবিয়ার আলোচনা চূড়ান্ত রূপ লাভ করেনি।
During the visit, Gaddafi said Libya would purchase $5.86 billion of French military equipment. That was still under negotiation when protests broke out in Tunisia in 2011, and Sarkozy was badly embarrassed by diplomatic blunders in Tunisia as the Arab Spring took form. 4/
— Joe Penney (@joepenney) April 29, 2018
ঠিক সে সময় লিবিয়া সংকট ফ্রান্সের সামনে একটি সুযোগ এনে দেয়। মার্চের ১৯ তারিখে গাদ্দাফির সেনাবাহিনীর উপর যে ২০টি ফরাসি যুদ্ধবিমান সর্বপ্রথম আক্রমণ করে, সেগুলো ছিল এই রাফায়েল বিমান। এর মাধ্যমে বিমানগুলো আন্তর্জাতিক অঙ্গণে ব্যাপক পরিচিতি পায়। গণমাধ্যমে এগুলো পরিচিত হয় নিশ্চিত গণহত্যা থেকে বেনগাজিবাসীকে রক্ষা করার কাজে ব্যবহৃত প্লেন হিসেবে, যদিও পরবর্তীতে ব্রিটিশ পার্লামেন্টের অনুসন্ধানে উঠে এসেছিল যে, বেনগাজির জনগণ সেরকম অর্থে গণহত্যার কোনো ঝুঁকিতে ছিল না।
পরবর্তী সাত মাস জুড়ে ফ্রান্সের রাফায়েল যুদ্ধবিমানগুলো লিবিয়াতে অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ স্থানে হামলা চালায়। এদের মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হলো ২০ অক্টোবরের হামলাটি। সেদিন গাদ্দাফির গাড়িবহরের উপর মার্কিন ড্রোনের একটি আক্রমণের পর ফ্রান্সের এই রাফায়েল জেটের পরপর কয়েকটি হামলার মাধ্যমেই গাদ্দাফির সঙ্গীদের অনেকে নিহত হয় এবং বিদ্রোহীদের হাতে গাদ্দাফির ধরা পড়া নিশ্চিত হয়। লিবিয়া যুদ্ধের পর রাফায়েল বিমানগুলোর বিক্রয় বহুগুণে বেড়ে যায়। মিসর, ভারত এবং কাতারসহ বেশ কয়েকটি রাষ্ট্র এই বিমানগুলোর নতুন ক্রেতা হিসেবে আবির্ভূত হয়।
অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে নিজেকে যোগ্য প্রমাণ করা
লিবিয়ায় যখন বিদ্রোহ শুরু হয়, তখন সারকোজি ছিলেন পরবর্তী প্রেসিডেন্ট নির্বাচন থেকে মাত্র ১৩ মাস দূরে। অথচ বিভিন্ন জরিপ অনুযায়ী তার জনসমর্থন ছিল একেবারেই তলানিতে। তিনি ছিলেন ১৯৫৮ সালের পঞ্চম ফরাসি প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পর থেকে ফ্রান্সের সবচেয়ে অজনপ্রিয় প্রেসিডেন্ট। তার প্রতিদ্বন্দ্বী ম্যারি লা পেন ছিলেন তার থেকে ২৩% পয়েন্টে এগিয়ে, যার ফলে নির্বাচনে তার জয় একপ্রকার নিশ্চিতই ছিল।
সেসময় সারকোজির প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী গাদ্দাফি ছিলেন না, ছিলেন ম্যারি লা পেন। লা পেন ছিলেন উগ্র ডানপন্থী দল ন্যাশনাল ফ্রন্ট পার্টির প্রতিনিধি। ফলে তার ভোটারদেরকে হাত করার জন্য সেসময় সারকোজির জন্য বেশ শক্ত এবং উগ্র জাতীয়তাবাদী ধরনের অবস্থান নেওয়া জরুরি ছিল। গাদ্দাফির বিরুদ্ধে আক্রমণে নেতৃত্ব দেওয়ার মধ্য দিয়ে সারকোজি সে প্রচেষ্টাই করেছিলেন।
আন্তর্জাতিক অঙ্গণে হারানো ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধার করা
ফরাসি প্রেসিডেন্ট নিকোলাস সারকোজির সাথে তিউনিসিয়া, মিসর এবং লিবিয়ার একনায়কদের খুবই সুসম্পর্ক ছিল। ২০১০ সালের ডিসেম্বরে তিউনিসিয়াতে যখন প্রথম গণআন্দোলন শুরু হয়, তখন অন্য অনেক রাষ্ট্রপ্রধানের মতোই তিনিও বুঝতে পারেননি, তা এতদূর পর্যন্ত গড়াবে। ফলে তিনি তখন তিউনিসিয়ার প্রেসিডেন্ট জেইন আল আবেদিন বিন আলির পক্ষে শক্ত অবস্থান নিয়েছিলেন। সারকোজির তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মিশেল অ্যাঁলিওত ম্যারি (Michèle Alliot-Marie), যিনি সে সময় তিউনিসিয়া ছুটি কাটাচ্ছিলেন এবং বিন আলির ঘনিষ্ঠ সহযোগী এক ব্যবসায়ীর প্রাইভেট প্লেন ব্যবহার করছিলেন, তিনি তিউনিসিয়ার বিক্ষোভ দমনের জন্য ফরাসি নিরাপত্তা বাহিনী নিয়োগ করার প্রস্তাবও দিয়েছিলেন।
২০১১ সালের জানুয়ারিতে মিসরের গণঅভ্যুত্থান শুরু হওয়ার কয়েক সপ্তাহ আগেও ফ্রান্সের প্রধানমন্ত্রী ফ্রাঁসোয়া ফিঁও (François Fillon) হুসনে মোবারকের আমন্ত্রণে সপরিবারে মিসর ভ্রমণে গিয়েছিলেন। সেসময় তিনি মিসরের সরকারি খরচে প্রাইভেট প্লেন এবং নীল নদের তীরে প্রমোদতরী ব্যবহার করে অবকাশ যাপন করছিলেন। তিউনিসিয়া এবং মিসরের আন্দোলন শেষপর্যন্ত সফল হওয়ার মাধ্যমে বিন আলি ও মোবারকের পতন ঘটলে এসব ঘটনা ফ্রান্সের ভাবমূর্তিকে দারুণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে। এর মাধ্যমে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ফ্রান্স স্বৈরশাসকদের মিত্র হিসেবে পরিচিতি পাওয়ার একটা সম্ভাবনা তৈরি হয়।
ফলে ২০১১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে যখন লিবিয়াতে সরকার বিরোধী বিদ্রোহ শুরু হয় এবং অল্প কয়েকদিনের মধ্যেই তা সশস্ত্র রূপ নেয়; তখন সারকোজি বুঝতে পারেন গাদ্দাফিও হয়তো শেষপর্যন্ত টিকে থাকতে পারবেন না। গাদ্দাফির একাধিক মন্ত্রী এবং রাষ্ট্রদূতের পদত্যাগ, আরব রাষ্ট্রগুলোর একযোগে তার বিরুদ্ধে অবস্থান, এবং সর্বোপরি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সবুজ সংকেত সেসময় সারকোজির সামনে ফ্রান্সের এবং নিজের হারানো ভাবমূর্তি ফিরিয়ে আনার এক দারুণ সুযোগ সৃষ্টি করে দেয়। ফলে তিনি গাদ্দাফির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়ে সেটিকে স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে এবং গণতন্ত্রের পক্ষে অবস্থান হিসেবে প্রচার করার এবং আধুনিক বিশ্বের এক শক্তিশালী নেতা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করার উদ্যোগ নেন।
গাদ্দাফির কাছ থেকে অর্থ গ্রহণের প্রমাণ নষ্ট করা
২০০৭ সালের নির্বাচনের পূর্বে নিকোলাস সারকোজি গাদ্দাফির কাছ থেকে ৫০ মিলিয়ন ইউরো নিয়েছিলেন। ঐ ঘটনার সূত্র ধরে ফ্রান্সে সারকোজির বিরুদ্ধে তদন্তে চলছে, সম্প্রতি পুলিশ তাকে দুইদিনের জন্য আটক করে জিজ্ঞাসাবাদও করেছে। সারকোজির বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগ, সাক্ষ্য-প্রমাণ এবং মামলাটির ভবিষ্যত নিয়ে আমাদের একটি বিস্তারিত বিশ্লেষণ আছে, যা আপনি পড়তে পারেন এখান থেকে। কেউ কেউ মনে করেন, গাদ্দাফি বিরোধী আন্দোলন শুরু হওয়ায় সারকোজি সে সুযোগটাকে কাজে লাগিয়ে লিবিয়ার উপর আক্রমণ করতে চেয়েছিলেন এই উদ্দেশ্যে, যেন সে সংক্রান্ত সকল তথ্য-প্রমাণ নষ্ট করে ফেলা সম্ভব হয়।
অনেকে অবশ্য এ ধারণার সাথে পুরোপুরি একমত নন। কারণ, বাস্তবে ২০১১ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত কেউ সারকোজির নির্বাচনী অনিয়ম এবং গাদ্দাফির সাথে অর্থ লেনদেনের বিষয়ে জানত না। কিন্তু গাদ্দাফির বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ার পরেই প্রথমে গাদ্দাফি এবং পরবর্তীতে গাদ্দাফির ছেলে সাইফ আল-ইসলাম সারকোজির বিরুদ্ধে প্রথম প্রকাশ্যে তাদের কাছ থেকে টাকা নেওয়ার অভিযোগ করেন। পরবর্তীতে অন্যান্য লিবিয়ান কর্মকর্তার বক্তব্যে, ফরাসি এক ব্যবসায়ীর স্বীকারোক্তিতে এবং ফরাসি গণমাধ্যমের অনুসন্ধানে ধীরে ধীরে এ সংক্রান্ত আরো তথ্য প্রমাণ উঠে আসে।
WATCH: During an exclusive interview with Euronews in 2011, Colonel Gaddafi’s son demanded Sarkozy to repay Libya the money he took for his 2007 campaign election that helped him become French president.
Read more: https://t.co/JE4l87W762 pic.twitter.com/Mo3SHK2D1V
— euronews (@euronews) March 20, 2018
২০১২ সালে ফরাসি অনুসন্ধানী ওয়েবসাইট মিডিয়াপার্ট সাবেক লিবিয়ান পররাষ্ট্রমন্ত্রী মুসা কুসার স্বাক্ষর করা একটা নথি প্রকাশ করে, যেখানে দেখা যায়, তিনি সারকোজির নির্বাচনী প্রচারণার জন্য ৫০ মিলিয়ন ইউরো প্রদানের নির্দেশ দিয়েছেন। মিডিয়াপার্টের ঐ রিপোর্ট প্রকাশের মাত্র এক সপ্তাহ পরেই অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনাতে দানিয়ুব নদীতে ভাসমান অবস্থায় একটি লাশ উদ্ধার করা হয়। লাশটি ছিল সাবেক লিবিয়ান জ্বালানীমন্ত্রী শুকরি গানেমের। পরবর্তীতে শুকরি গানেমের হোটেল থেকে পাওয়া নথিপত্রের মধ্যে তার একটি হাতে লেখা নোটও পাওয়া যায়, যেখানে সারকোজিকে তিন ধাপে ৬.৫ মিলিয়ন ইউরো প্রদানের খসড়া হিসেব লিপিবদ্ধ ছিল।
সারকোজিকে লিবিয়ান অর্থ প্রদানের বিষয়টি যিনি দেখাশোনা করেছিলেন, তিনি ছিলেন লিবিয়ার সভেরিন ওয়েলথ ফান্ডের প্রধান বশির সালেহ। মিডিয়াপার্টের অনুসন্ধানী প্রতিবেদন অনুযায়ী, ফ্রান্সের সহযোগিতায় বশির সালেহকে ত্রিপলি থেকে প্রথমে তিউনিসিয়ায়, এবং পরবর্তীতে ফ্রান্সে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। তার বিরুদ্ধে ইন্টারপোলের গ্রেপ্তারি পরোয়ানা থাকা সত্ত্বেও তার সাথে ফ্রান্সের গোয়েন্দা বাহিনীর প্রধানের বৈঠকের সংবাদ এবং প্যারিসে তার ঘুরে বেড়ানোর ছবি প্রকাশিত হয়। এর পরপরই বশির সালেহ ফ্রান্স ত্যাগ করেন এবং দক্ষিণ আফ্রিকার জোহান্সবার্গে আশ্রয় নেন। দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট জ্যাকব জুমার পদত্যাগের কিছুদিন পরেই এক অজ্ঞাত বন্দুকধারী বশির সালেহকে লক্ষ্য করে গুলি করে। গুরুতর আহত হলেও শেষপর্যন্ত বেঁচে যান তিনি।
নিকোলাস সারকোজি তার বিরুদ্ধে গাদ্দাফি প্রশাসনের কাছে থাকা প্রমাণ নষ্ট করার জন্যই গাদ্দাফির উপর আক্রমণ করতে উদ্যোগী হয়েছিলেন কিনা, তার পক্ষে শক্ত কোনো যুক্তি কিংবা প্রমাণ নেই। হয়তো উপরের যেকোনো একটি কারণে, অথবা সবগুলোর সম্মিলিত কারণে, অথবা এর বাইরের কোনো কারণেও তিনি এই যুদ্ধের ব্যাপারে উদ্যোগী হয়েছিলেন। কিন্তু তার আর্থিক লেনদেন সম্পর্কে সবচেয়ে বেশি তথ্য জানা দুজন ব্যক্তির একজনের রহস্যজনক মৃত্যু এবং অন্যজনকে হত্যার প্রচেষ্টার ঘটনায় তার দিকে সন্দেহের তীর কিছুটা হলেও নিক্ষিপ্ত হবে।
Featured Image Source: Thomas Samson/Gamma-Rapho/Getty Images