২০০৫ সালের ১৭ই ফেব্রুয়ারি দুই প্রতিবেশী দেশ নিউজিল্যান্ড এবং অস্ট্রেলিয়া অকল্যান্ডের ইডেন পার্কে প্রথম আন্তর্জাতিক টি-টুয়েন্টি ম্যাচে মুখোমুখি হয়েছিলো। এর আগে ঘরোয়া ক্রিকেটে টি-টুয়েন্টি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হলেও প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচ ছিলো এটিই। দুই দলের শরীরি ভাষা দেখে বোঝা মুশকিল ছিলো, আদৌ এটি কোনো আন্তর্জাতিক ম্যাচ কিনা। জার্সিতে সবার আসল নামের পরিবর্তে ডাকনাম লেখা ছিলো। অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেটারদের তুলনায় নিউজিল্যান্ডের ক্রিকেটাররা বেশি খোশমেজাজি ছিলেন। নকল গোঁফ এবং পরচুলা লাগিয়ে খেলতে নামেন কিউই ক্রিকেটাররা। অকল্যান্ডের আনন্দঘন পরিবেশে টসে জিতে প্রথমে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন রিকি পন্টিং। মাত্র ২১ রানে দুই ওপেনার গিলক্রিস্ট ও মাইকেল ক্লার্কের উইকেট হারানোর পর দলের দায়িত্ব নিজের কাঁধে নিয়ে ৫৫ বলে আটটি চার এবং পাঁচটি ছয়ের মারে ৯৮* রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেন চার নাম্বারে ব্যাট করতে নামা পন্টিং। ক্যাটিচ ৩০, মাইক হাসি ৩১* এবং সায়মন্ডস ৩২ রানের ইনিংস খেলে পন্টিংয়ে যোগ্য সমর্থন যুগিয়েছিলেন। এতে করে অস্ট্রেলিয়া নির্ধারিত ২০ ওভারে পাঁচ উইকেটে ২১৪ রান সংগ্রহ করে।
নিউজিল্যান্ড নিজেদের ইনিংসের শেষ বলে অল আউট হওয়ার আগে ১৭০ রান সংগ্রহ করে। নিউজিল্যান্ডের হয়ে সর্বোচ্চ ৬৬ রান করেন স্কট স্টাইরিস। মাইকেল ক্যাসপ্রোভিচ চার উইকেট শিকার করে অস্ট্রেলিয়াকে ৪৪ রানের জয় এনে দেন। দর্শকদের বিনোদন দেওয়ার জন্য অস্ট্রেলিয়ার পেসার গ্লেন ম্যাকগ্রা ইনিংসের শেষ বলটি ট্রেভর চ্যাপেলের মতো আন্ডারআর্ম ডেলিভারি করার জন্য প্রস্তুতি সেরে নিয়েছিলেন। আম্পায়ার বিলি বাউডেনও কম যাননা । তিনি পকেট থেকে লাল কার্ড বের করে ম্যাকগ্রাকে লাল কার্ডে দেখান। ম্যাচ শেষে রিকি পন্টিং বলেছিলেন, “আমি মনে করি এটি (টি-টুয়েন্টি ম্যাচ) সিরিয়াসলি খেলা অনেক কঠিন।
টি-টুয়েন্টি ক্রিকেট বর্তমানে ক্রিকেটবিশ্বে অধিক জনপ্রিয়। প্রায় সব ক্রিকেট খেলুড়ে দেশ-ই ঘটা করে টি-টুয়েন্টি ম্যাচের টুর্নামেন্ট আয়োজন করে। ২০০৫ সালে টি-টুয়েন্টি ক্রিকেটের আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু হওয়ার পর ২০০৭ সালে দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রথম টি-টুয়েন্টি বিশ্বকাপের আসর বসে। ঐ বছর ওয়ানডে বিশ্বকাপে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারত ও পাকিস্তান গ্রুপ পর্ব থেকে বাদ পড়ে যাওয়ার দরুন আইসিসি খুব বেশি আয় করতে পারেনি। তাই তড়িঘড়ি করে টি-টুয়েন্টি বিশ্বকাপ আয়োজন করে আইসিসি, যার ফাইনালে ওঠে ভারত এবং পাকিস্তান! টি-টুয়েন্টি বিশ্বকাপ আয়োজনের পরের বছর থেকে আইপিএলের যাত্রা শুরু হয়। আইপিএল টি-টুয়েন্টি ক্রিকেটে নতুন মাত্রা যোগ করে। দর্শকপ্রিয়তা পাওয়ার পাশাপাশি ক্রিকেটারদের পকেটও ভারি করছে আইপিএল। এখন সব দেশের ক্রিকেট বোর্ডই টি-টুয়েন্টি লিগ আয়োজন করার জন্য আলাদা সময়সূচী বরাদ্দ রাখে।
আন্তর্জাতিক টি-টুয়েন্টি ক্রিকেটের পথ চলার তের বছর পার না হতেই অনেকেই উদ্বেগ প্রকাশ করছেন নিকট অতীতে ক্রিকেটের অন্যান্য ফরম্যাটগুলো হারিয়ে যাবে।
ফিচার ইমেজ- Getty Images