Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

ভারতের আসামে ‘শিশু অপহরণকারী’ গুজবে গণপিটুনিতে আবারও দুজন নিহত!

যোগাযোগ ব্যবস্থায় অসামান্য অবদান রাখলেও নানারকম বিপত্তি সৃষ্টি করছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো। দ্রুত খবর পৌঁছে দেওয়া সবসময় যে ইতিবাচক না হয়ে নেতিবাচক প্রভাবও ফেলতে পারে, তা আর সচেতন ব্যক্তিদের অজানা নেই। তবে অসচেতন ব্যক্তিরাই সৃষ্টি করছে সাংঘাতিক কিছু ঘটনার। তারা নিজেরা যেমন বিপদে পড়ছে, তেমনই বিপদে ফেলছে কিছু নিরীহ মানুষকে। হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে ভারতে ছড়িয়ে পড়া শিশু অপহরণের গুজব গত বেশ কিছুদিনে ৭ জনকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছে

গত শনিবার ভারতের আসামের এক গ্রামে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভুয়া তথ্যের ভিত্তিতে নির্মমতার শিকার হন দুজন নিরপরাধ ব্যক্তি। হোয়াটসঅ্যাপে ছেলেধরা বলে খবর ছড়িয়ে পড়লে গ্রামবাসীর গণপিটুনিতে প্রাণ হারান দুই জন। কীভাবে এই নির্মমতার শিকার হন তারা? এ ধরনের ভুয়া তথ্য মোকাবেলা করতেই বা কী পদক্ষেপ নিচ্ছে সেখানকার পুলিশ?

কী ঘটেছিল?

অভিজিত নাথ (৩০) ও নীলোৎপল দাস (২৯) গত শনিবার ঝর্ণা দেখার উদ্দেশ্যে গাড়িতে করে আসামের প্রত্যন্ত অঞ্চলে রওনা দেন। পথনির্দেশ নিতে তারা পাঞ্জুরি কাচারি গ্রামে থামেন। এদিকে দুজন ছেলেধরা গ্রামে প্রবেশ করেছে বলে হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে তথ্য ছড়িয়ে পড়ে। প্রায় ২০০ জনের মতো জনতা এই দুজনকেই ছেলেধরা মনে করে গণপিটুনি দিয়ে হত্যা করে। নীলোৎপল দাস পেশায় একজন অডিও ইঞ্জিনিয়ার এবং অভিজিত নাথ একজন ডিজিটাল আর্টিস্ট ছিলেন।

নিহত অভিজিত নাথ ও নীলোৎপল দাস; Source: BBC

গ্রামের এক বাসিন্দা জানান, “আমাদের গ্রামে ছেলেধরা ঢুকেছে বলে গুজব ছড়িয়ে পড়ে। এই খবর হোয়াটসঅ্যাপ ও ফেসবুকের মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া হয়। সেখানে আরও বলা হয়, একজন ছেলেধরার লম্বা চুল রয়েছে।”  তিনি আরও বলেন, “ছেলে দুটিকে থামিয়ে তারা কোথা থেকে এসেছে তা জিজ্ঞেস করা হচ্ছিল। কিন্তু এর মাঝেই কিছু স্থানীয় মানুষজন এসে তাদের মারধর শুরু করে।

মারধরের সময় নীলোৎপল দাস হাতজোড় করে নিজের প্রাণভিক্ষা চাইতে থাকেন। তাকে মারধরের সময় তা ভিডিও করে আক্রমণকারীরা। ভিডিওটি পরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এতে দেখা যায় তিনি “আমাকে মেরে ফেলবেন না, আমাকে মারবেন না, দয়া করে আমাকে যেতে দিন, বিশ্বাস করুন আমি সত্যি বলছি” বলে আকুতি জানাতে থাকেন। তাকে বাঁশ দিয়ে বেদম মেরে পাশের একটি গাছে ফাঁসি দেওয়া হয়। তার সাথে থাকা অভিজিত দাসকেও একইভাবে হত্যা করা হয়। একজন স্থানীয় টেলিভিশন সাংবাদিক জানান, মারার সময় তাদের প্রাণভিক্ষা চাওয়ার ভিডিও শুধু ধারণই করা হয়নি, সেটি ফেসবুকে ছড়িয়ে দিয়ে হত্যার দায়ও স্বীকার করেছে তারা।  

ছেলেধরার গুজব ছড়াচ্ছে কীভাবে?

গুজবের জন্য মানুষ হোয়াটসঅ্যাপে ছড়িয়ে পড়া এমন একটি ভিডিওকে উল্লেখ করছে যেখানে আতঙ্কিত একটি শিশুকে অপহৃত হতে দেখা যায়। বিবিসির দেওয়া তথ্য অনুযায়ী গত মাসে ব্যাঙ্গালুরুতে দুজন মানুষকে হত্যার ঘটনার পরে একজন স্থানীয় ব্যক্তি তার মোবাইল ফোন থেকে বিবিসির প্রতিনিধি ড্যান জনসনকে ভিডিওটি দেখান। এটিতে দেখা যায়, দুজন মোটর সাইকেলে আরোহী ব্যক্তি একদল বাচ্চার কাছে থেমে একটি বাচ্চাকে জোর করে মোটর সাইকেলে তুলে নিয়ে যাচ্ছে।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেই ছড়াচ্ছে গুজব; Source: Patrick Pleul/ EPA/Shutterstoc 

তবে বিবিসি বলছে ভিডিওটি ভুয়া, এমনকি এটি ভারতের কোনো অঞ্চলেরও নয়। সম্পাদনা ছাড়া ভিডিওটি আসলে জনসচেতনতা সৃষ্টির জন্য পাকিস্তানের শিশু নিরাপত্তা বিষয়ক একটি চলচ্চিত্র। এর শেষ অংশে ব্যক্তিদের একজন একটি সংকেত দেখায়, যা পুরো ভিডিওটি ব্যাখ্যা করে। কিন্তু সম্পাদনা করে শেষের সেই অংশটি বাদ দিয়ে দেওয়া হয়েছে এবং এটিই হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে ভারতে ছড়িয়ে পড়ে।

ভিডিওটির সাথে লিখিত মেসেজও রয়েছে, যা শিশুদের ছিনতাইয়ের লক্ষ্যে শহরে “অপহরণকারীদের” আসার কথা বলে। যদিও এটি প্রাথমিকভাবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে, তবে পরবর্তীতে কিছু স্থানীয় গণমাধ্যম এই গুজবকে সত্য বলে প্রচার করায় তা আরও বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন করে। এর ফলে স্থানীয়রা অপরিচিত বা যারা আঞ্চলিক ভাষা বলতে পারে না তাদের আক্রমণ করার জন্য প্ররোচিত হচ্ছে।

কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে কী পদক্ষেপ গ্রহণ করছে?

 নীলোৎপল দাস ও অভিজিত নাথের হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত ১৬ জন ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ

আসামের একজন জ্যেষ্ঠ পুলিশ অফিসার মুকেশ আগারওয়াল বলেছেন, “যখন সোশ্যাল মিডিয়ায় কোনো গুজব  ছড়িয়ে পড়ে, তখন সেগুলো সম্পূর্ণ বন্ধ করার জন্য কিছু সময়ের প্রয়োজন হয়।” তিনি জানান, এ ধরনের বার্তা প্রেরণ বন্ধের চেষ্টা করার জন্য পুলিশ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সাইটগুলি দেখছে।

ভারতের অন্যান্য অঞ্চলে পুলিশ কর্মকর্তারা সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া শিশু অপহরণকারী সংক্রান্ত বার্তাগুলো বিশ্বাস করতে নিষেধ করছেন। গত মাসে দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর হায়দরাবাদে পুলিশ বাসিন্দাদের পাশে থেকে লাউডস্পিকারে ‘গুজব বিশ্বাস করবেন না’ বলে প্রচারণা চালিয়েছে। তামিলনাড়ু রাজ্যে সাম্প্রতিক মাসগুলোতে গুজব রোধ করার জন্য সচেতনতা শুরু করেছে প্রশাসন।

গুজবের ভিত্তিতে হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে জনগণের প্রতিবাদ; Source: YouTube

এছাড়া কর্ণাটকের মতো অন্যান্য দক্ষিণাঞ্চলের রাজ্যে পুলিশ তাদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম নিয়ন্ত্রণ কক্ষ স্থাপন করেছে যেখানে তারা পোস্ট, ভাইরাল মেসেজ এবং ভিডিওগুলি মনিটর করে। তেলঙ্গানার পুলিশ সতর্কবার্তা জারি করেছে এবং অনলাইনে ভুয়া ভিডিও বার্তা প্রচার করেছে এমন কিছু ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেছে। কর্মকর্তারা এখনও পর্যন্ত অনলাইনে ছড়িয়ে পড়া বার্তা ও ভিডিওর সাথে সম্পর্কিত শিশু অপহরণের কোনো ঘটনা খুঁজে পাননি।

আমাদের দেশেও সামাজিক যোগাযোগে ছড়ানো গুজবের মাধ্যমে বেশ কিছু সহিংস ঘটনা ঘটে গেছে। প্রযুক্তির ব্যবহার খারাপ কাজে নয়, ভালো কাজের জন্য করতে হবে। সে সাথে সচেতনও হতে হবে যেন কেউ গুজব ছড়িয়ে কারও ক্ষতিসাধন করতে না পারে। সর্বোপরি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকেও তাদের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করতে হবে।   

Featured Image Source: BBC

Related Articles