
প্রতিবছর বিশ্ব বিপুল পরিমাণ ইলেক্ট্রনিক বর্জ্য বা ই-বর্জ্য উৎপাদন করে। শুধুমাত্র ২০১৬ সালেই পৃথিবীতে উৎপাদিত ই-বর্জ্যের পরিমাণ ছিল প্রায় ৪৪.৭ মিলিয়ন মেট্রিক টন, যার ওজন প্রায় ৪,৫০০টি আইফেল টাওয়ারের ওজনের সমান। আর এই বিপুল পরিমাণ ই-বর্জ্যের ৪০ শতাংশই আসে এশিয়া থেকে।
ইলেক্ট্রনিক বর্জ্য বা ই-বর্জ্য বলতে সাধারণত বোঝানো হয় নষ্ট হয়ে যাওয়া যেকোনো ইলেকট্রিক্যাল বা ইলেকট্রনিক্স পদার্থ, যা বর্জ্য হিসেবে ফেলে দেওয়া হয়। যেকোনো ধরনের স্ক্রিন, মনিটর, টেলিভিশন, মোবাইল ফোন, কম্পিউটারের কীবোর্ড, মাউস বা কেসিং, প্রিন্টার, স্ক্যানার, ওয়াশিং মেশিন, ইলেকট্রিক্যাল ওভেন, মাইক্রোওয়েভ ওভেন, ভ্যাকুয়্যাম ক্লিনার থেকে শুরু করে ইলেকট্রিক্যাল বাল্ব, ক্যালকুলেটর, এমনকি বিদ্যুৎ চালিত খেলনাও ই-বর্জ্যের অন্তর্ভুক্ত।

Source: The Global E-waste Monitor 2017
সম্প্রতি ইন্টারন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন ইউনিট, দ্য ইউএন ইউনিভার্সিটি এবং ইন্টারন্যাশনাল সলিড ওয়েস্ট অ্যাসোশিয়েনের যৌথ উদ্যোগে বিশ্বের ই-বর্জ্যের উপর একটি গবেষণা পরিচালিত হয়। দ্য গ্লোবাল ই-ওয়েস্ট মনিটর ২০১৭-এ প্রকাশিত এই ফলাফল থেকে দেখা যায়, বিশ্বে ই-বর্জ্যের পরিমাণ উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। গত দুই বছরেই তা ৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে এবং আগামী ২০২১ সাল নাগাদ বার্ষিক ই-বর্জ্যের পরিমাণ ৫২.২ মিলিয়ন মেট্রিক টন ছাড়িয়ে যাবে।
ই-বর্জ্যের পরিমাণ বৃদ্ধির কারণ হিসেবে গবেষণায় ইলেকট্রনিক দ্রব্যের মূল্য হ্রাসকে দায়ী করা হয়। বিভিন্ন ধরনের ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতি সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে চলে আসায় এবং সহজলভ্য হওয়ায় মানুষ সহজেই সেগুলো ক্রয় করছে, এবং পছন্দ না হলেই খুব দ্রুত প্রতিস্থাপন করছে।

এশিয়াতে উৎপাদিত ই-বর্জ্য; Source: The Global E-waste Monitor 2017
গবেষণায় বলা হয়, ওশেনিয়া অঞ্চলের দেশগুলো, যেমন অস্ট্রেলিয়া এবং নিউজিল্যান্ডে ২০১৬ সালে মাথাপিছু বার্ষিক ই-বর্জ্যের পরিমাণ ছিল সবচেয়ে বেশি, ১৭.৩ কেজি। অন্যদিকে আফ্রিকান দেশগুলোতে এই পরিমাণ ছিল মাথাপিছু মাত্র ১.৯ কেজি। এশিয়ার দেশগুলোতে মাথাপিছু বর্জ্যের পরিমাণ ছিল ৪.২ কেজি, তবে এশিয়ার জনসংখ্যা বেশি হওয়ায় সমষ্টিগত পরিমাণে এশিয়া অন্য সব অঞ্চলকে ছাড়িয়ে গেছে। এশিয়ার মধ্যেও আবার সব দেশের ই-বর্জ্যের পরিমাণ সমান না। চীন, হংকং, ব্রুনেই এবং সিঙ্গাপুরে এই পরিমাণ ছিল মাথাপিছু ১৮ কেজি, অন্যদিকে আফগানিস্তান এবং নেপালে ছিল প্রায় শূন্যের কাছাকাছি।
গবেষণায় আরও বলা হয়, সারা বিশ্বের ই-বর্জ্যের মাত্র ২০ শতাংশ সঠিকভাবে সংগ্রহ এবং পুনরুৎপাদনের কাজে ব্যবহার করা হয়। বাকি ৮০ শতাংশেরই কোনো হিসেব থাকে না। সেগুলো সাধারণ বর্জ্যের সাথে নিক্ষেপ করা হয়। অনুন্নত দেশগুলোতে অনেক সময় স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও সেখান থেকেই এসব বর্জ্য সংগ্রহ করে পুনরুৎপাদনের কাজে ব্যবহার করা হয়।

পরিত্যক্ত মোবাইল ফোনের পুনর্ব্যবহারের আর্থিক মূল্য; Source: he Global E-waste Monitor 2017
অথচ পরিত্যাক্ত ইলেকট্রনিক বর্জ্য সঠিকভাবে সংগ্রহ এবং পুনরুৎপাদন কাজে ব্যবহার করা গেলে সেগুলো সোনা, রূপা, তামা, প্লাটিনাম সহ বিভিন্ন মূল্যবান ধাতুর শিল্পে ব্যবহার করা সম্ভব। ২০১৬ সালে এই ই-বর্জ্য পুনরুৎপাদন খাতের মূল্য ছিল প্রায় ৬,৫০০ কোটি মার্কিন ডলার। উন্নয়নশীল দেশগুলো যদি ই-বর্জ্য পরিকল্পিত এবং প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগে সংগ্রহ এবং পুনরুৎদন কাজে ব্যবহার করতে পারে, তাহলে তা প্রচুর মানুষের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি করতে পারবে, অর্থনৈতিকভাবে দেশগুলো লাভবান হবে এবং পরিবেশও ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পাবে।
ফিচার ইমেজ- beyondthe2boxset.com