লিবিয়ার রাজধানী ত্রিপোলিতে ভয়াবহ সংঘর্ষ, এয়ারপোর্ট বন্ধ

লিবিয়ার রাজধানী ত্রিপোলিতে সোমবার সকাল থেকে ভয়াবহ সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে। সংঘর্ষের কারণে ত্রিপোলির প্রধান এয়ারপোর্ট খালি করে দিয়ে সকল ফ্লাইট বাতিল করা হয় এবং জরুরী অবস্থা ঘোষণা করা হয়। শেষ সংবাদ পাওয়া পর্যন্ত, কয়েক ঘণ্টাব্যাপী চলা এ সংঘর্ষে অন্তত ১৩ জন নিহত এবং ৫০ জন আহত হয়েছে।

সোমবার সকালে রাজধানীর তাজুরা নামক এলাকা থেকে বাশির বোগরা নামের এক বেসামরিক নেতার নেতৃত্বে বোগরা মিলিশিয়া বাহিনী, সরকার সমর্থিত স্পেশাল ডিটারেন্স ফোর্সের (RADAA) উপর আক্রমণ করে। ঘটনার সময় RADAA সদস্যরা এয়ারপোর্ট সহ আশেপাশের এলাকার নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত ছিল। লিবিয়ার জাতিসংঘ সমর্থিত ঐক্যমত সরকারের (Government of National Accord) পক্ষ থেকে এই ঘটনার নিন্দা জানানো হয়। সরকার এক বিবৃতিতে এয়ারপোর্ট সংলগ্ন এলাকার আশেপাশে জরুরী অবস্থা জারির ঘোষণা দেয়। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়, এয়ারপোর্ট সংলগ্ন স্পেশাল ডিটারেন্স ফোর্সের প্রধান ঘাঁটিতে বন্দী থাকা আইএস এবং আল-কায়েদা সদস্যদেরকে মুক্ত করাই ছিল এই হামলার প্রধান লক্ষ্য

উল্লেখ্য, ২০১১ সালের পর থেকে লিবিয়াতে কোনো নিয়মিত পুলিশ বা সেনাবাহিনী গড়ে উঠতে পারেনি। জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় গঠিত ঐক্যমতের সরকারও বিভিন্ন মিলিশিয়া বাহিনীর আনুগত্যের উপর নির্ভরশীল। স্পেশাল ডিটারেন্স ফোর্স, সংক্ষেপে SDF (রাদা) হচ্ছে সরকারের অন্যতম প্রধান শক্তি, যারা মূলত অপরাধ দমন এবং সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান পরিচালনা করে থাকে। গত বছর ইংল্যান্ডের ম্যানচেস্টারে আত্মঘাতী হামলাকারী লিবিয়ান আইএস জঙ্গির ভাইকেও তারা ত্রিপোলি থেকে গ্রেপ্তার করেছিল এবং তার স্বীকারোক্তি প্রকাশ করেছিল।

ত্রিপোলির মিতিগা এয়ারপোর্ট সংলগ্ন এসডিএফের প্রধান ঘাঁটির অভ্যন্তরস্থ কারাগারে বিভিন্ন অভিযানে বন্দী হওয়া কয়েক হাজার অপরাধী আছে বলে ধারণা করা হয়, যাদের একটা অংশ আইএস এবং আল কায়েদা সহ বিভিন্ন জঙ্গিগোষ্ঠীর সদস্য। বিভিন্ন সময় রাজধানী ত্রিপোলির কিংবা এয়ারপোর্টের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার প্রচেষ্টা ছাড়াও নিজেদের দলের বন্দীদেরকে মুক্ত করার জন্যও বিভিন্ন মিলিশিয়া গ্রুপ তাদের উপর আক্রমণ করার চেষ্টা করেছে। সোমবারের আক্রমণটি সেরকমই একটি আক্রমণ ছিল বলে সরকার এবং এসডিএফ দাবি করেছে

সোমবার সকালের বোগরা এবং এসডিএফের মধ্যকার যুদ্ধে এয়ারপোর্টের আশেপাশের এলাকা থেকে ধোঁয়া উঠতে দেখা যায়। সামাজিক গণমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ছবিতে রাস্তাঘাটে মিলিশিয়া সদস্যদেরকে অস্ত্র হাতে এবং মেশিনগান ও অ্যান্টিএয়ারক্রাফট সম্বলিত পিকআপ ট্রাক ও সাঁজোয়া যানে যুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে দেখা যায়। প্রচন্ড গোলাগুলির কারণে এলাকার স্কুলগুলো ছুটি দিয়ে দেওয়া হয় এবং সরকারি কর্মকর্তাদেরকে অফিস খালি করে চলে যেতে বলা হয়।

এয়ারপোর্ট সংলগ্ন এলাকা; Source: SDF

এয়ারপোর্ট সংলগ্ন এলাকা; Source: SDF

সংঘর্ষের কারণে মিতিগা এয়ারপোর্টের সকল ফ্লাইট বাতিল করা হয় এবং আগত বিমানগুলোকে মিসরাতা এয়ারপোর্টে নামতে নির্দেশ দেওয়া হয়। এয়ারলাইন্সগুলোও এয়ারপোর্ট থেকে তাদের কর্মচারীদেরকে নিরাপদে সরিয়ে নিয়ে যায়। গুলিতে এয়ারপোর্টে অবস্থিত আফ্রিকান এয়ারওয়েজের একাধিক এয়ারবাস বিমানও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানা গেছে

সকাল আটটার দিকে শুরু হওয়া সংঘর্ষ স্থানীয় সময় দুপুর দুইটা পর্যন্ত চলার পর ধীরে ধীরে স্তিমিত হয়ে আসে। এসডিএফের পক্ষে সরকার সমর্থিত আরো কয়েকটি মিলিশিয়া বাহিনী যোগ দেওয়ায় বোগরা মিলিশিয়া বাহিনী তাজুরার দিকে ফিরে যায় বলে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে উঠে আসে।

উল্লেখ্য, মিতিগা পূর্বে ত্রিপোলির প্রধান এয়ারপোর্ট ছিল না, এটি ছিল একটি সামরিক ঘাঁটি ও সামরিক এয়ারপোর্ট। কিন্তু ২০১৪ সালে ইসলামপন্থী বেসামরিক বাহিনীর আক্রমণে ত্রিপোলির আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়ে যাওয়ার পর থেকেই মিতিগা সামরিক ঘাঁটির এয়ারপোর্টকেই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।

ফিচার ইমেজ- SDF

Related Articles

Exit mobile version