সৌদি আরবের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো নারীরা পুরুষদের পাশাপাশি স্টেডিয়ামে ফুটবল খেলা উপভোগ করার সুযোগ পেল। গতকাল শুক্রবার জেদ্দার কিং আব্দুল্লাহ স্পোর্ট সিটি স্টেডিয়াম নারীদের জন্য তাদের দরজা উন্মুক্ত করার মাধ্যমে এই ঐতিহাসিক ঘটনার সূচনা করে।
সৌদি আরবের রক্ষণশীল সামাজিক এবং রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় নারীদের চলাচলের উপর বিভিন্ন ধরনের নিষেধাজ্ঞা আছে। এর আগে নারীরা শুধুমাত্র ইনডোর স্টেডিয়ামে সীমিতভাবে কেবল নারীদের জন্যই আয়োজিত খেলাধুলা উপভোগ করতে পারত। কিন্তু অত্যন্ত জনপ্রিয় খেলা ফুটবল সহ পুরুষদের কোনো অনুষ্ঠানে তারা উপস্থিত হতে পারত না।
কিন্তু গত বছর মুহাম্মদ বিন সালমান যুবরাজ হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই নারী স্বাধীনতা সহ সৌদি আরবের সামাজিক ব্যবস্থায় বিভিন্ন সংস্কারমূলক পদক্ষেপ নিতে শুরু করেন। তারই ধারাবাহিকতায় গত বছরের অক্টোবর মাসে সৌদি আরবের জেনারেল স্পোর্টস অথরিটি ঘোষণা দেয় যে, ২০১৮ সাল থেকে জেদ্দা, দাম্মাম এবং রিয়াদের স্টেডিয়ামগুলোকে সপরিবারে খেলা দেখার জন্য উপযোগী করে প্রস্তুত করা হবে।
সেই প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী গতকাল শুক্রবার সৌদি লীগের ১৭তম রাউন্ডের আল-আহলি বনাম আল-বাতিনের মধ্যকার খেলাটি দেখার জন্য প্রথমবারের মতো দর্শকদেরকে সপরিবারে স্টেডিয়ামে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়। প্রবেশপথে অবশ্য দুটি ভিন্ন সারি ছিল- একটি শুধু পুরুষদের জন্য, অন্যটি যারা সপরিবারে এসেছে তাদের জন্য। নারী দর্শকদেরকে কালো আবায়ার সাথে স্কার্ফ পরিধান করে এবং হাতে পক্ষের দলের পতাকা হাতে নিয়ে স্টেডিয়ামে প্রবেশ করে আসন গ্রহণ করতে দেখা যায়।
সৌদি সরকার জানিয়েছে, আপাতত নারী দর্শকরা শনিবারে একটি এবং আগামী বৃহস্পতিবার আরো একটি ম্যাচ উপভোগ করতে পারবে। তবে আগামী মৌসুমের শুরু নাগাদ দেশের সবগুলো স্টেডিয়ামই নারী দর্শকদের জন্য উপযোগী হয়ে যাবে। সেগুলোতে নারীদের জন্য পৃথক ক্যাফে এবং নামাজ পড়ার স্থান সহ সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা থাকবে।
শনিবারের ফুটবল ম্যাচটিতে অংশগ্রহণ করবে দেশটির অন্যতম জনপ্রিয় ফুটবল ক্লাব আল-ইত্তিহাদ। তারা তাদের টুইটার অ্যাকাউন্ট থেকে এক নারীর মুখমন্ডলকে ক্লাবটির লগোর সোনালি রংয়ে রঞ্জিত করে নারী দর্শকদেরকে স্বাগত জানিয়েছে। টুইট বার্তায় তারা উল্লেখ করেছে, নারী এবং পুরুষ উভয়েই ক্লাবটির ভক্ত এবং তাদের সমর্থন ছাড়া সাফল্য অর্জন করা সম্ভব না।
সৌদি সরকারের এই সিদ্ধান্তে নারী দর্শকদেরকে খুব উচ্ছ্বসিত দেখা যায়। লামিয়া খালেদ নাসের নামে ৩২ বছর বয়সী এক নারী দর্শক এএফপিকে জানান, “এই ঘটনা প্রমাণ করে যে, আমরা একটি উজ্জল ভবিষ্যতের দিকে যাচ্ছি। আমি এই বিশাল পরিবর্তনের সাক্ষী হতে পেরে খুবই গর্বিত।”
মুনিরা আল-ঘামদি নামে আরেক দর্শক বলেন, “সত্যি কথা বলতে, এই সিদ্ধান্তটি অনেক আগেই নেওয়া উচিৎ ছিল। কিন্তু আল্লাহ্র কাছে কৃতজ্ঞতা যে এটি সঠিক সময়েই ঘটেছে। এবং আশা করি সামনে আরো যেসব সিদ্ধান্ত আসবে, সেগুলো নারীদের জন্য আরো সুন্দর হবে।”
নারীদেরকে স্টেডিয়ামে প্রবেশ করতে দেওয়ার সিদ্ধান্ত সৌদি আরবের চলমান বহুমুখী সংস্কার কর্মসূচীর মধ্যে একটি। গত বৃহস্পতিবারই দেশটির ইতিহাসে প্রথম বারের মতো নারীদের জন্য গাড়ির প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ বছরের জুন মাস থেকে নারীরা গাড়িও চালানো শুরু করতে পারবে। এছাড়াও শীঘ্রই দেশটিতে সিনেমা হলও চালু করা হবে বলে গত বছর জানানো হয়েছিল।
ফিচার ইমেজ- AFP