উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উনের সাথে আসন্ন সম্মেলন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে চলছে নানা জল্পনা-কল্পনা। তবে এক সম্মেলনেই উত্তর কোরিয়া তার পারমাণবিক তৎপরতা পুরোপুরি পরিহার করতে সম্মত হবে, এমনটি অবশ্য আশা করছেন না মার্কিন প্রেসিডেন্ট। এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চপদস্থ কূটনীতিবিদদের সাথে পিয়ংইয়ং এর কর্মকর্তার আলোচনাও মাত্র শেষ হয়েছে।
সম্প্রতি টেক্সাসে যাওয়ার পথে রয়টার্সকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প জানান, এখনও তিনি উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উনের সাথে এক অভূতপূর্ব সম্মেলনের আশা করছেন। তিনি বলেন, “আমি এক সাক্ষাতেই এটি সম্পন্ন করতে চাই। তবে প্রায়ই দেখা যায় চুক্তি এভাবে সম্পন্ন হয় না। তাই প্রথম, দ্বিতীয় এমনকি তৃতীয়বারেও এটি সম্পন্ন না হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে কিছু ক্ষেত্রে এটি সম্পন্ন হবে।”
তবে এটি সঠিকভাবে বোঝা যায়নি যে, ট্রাম্প আসলে একের অধিক সাক্ষাৎ বলতে কী বুঝিয়েছেন। পারমাণবিক অস্ত্র পরিহার করতে কিম জং উনের সাথে তার একাধিক সম্মেলনের প্রয়োজন, নাকি অন্য কর্মকর্তাদের মাঝে আলোচনার দরকার, সেটি নিয়ে ভাবার প্রয়াস রয়েছে।
প্রায় কয়েক দশক ধরেই উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক তৎপরতা পশ্চিমা বিশ্বের জন্য উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সম্প্রতি ক্ষেপনাস্ত্রের ক্ষেত্রে দেশটির অগ্রগতি হয়েছে। কিন্তু মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প কিছুতেই দেশটিকে পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি করতে বা রাখতে দেবে না, যা যুক্তরাষ্ট্রে আঘাত হানতে পারে।
পারমাণবিক তৎপরতা বন্ধ বলতে তিনি বুঝিয়েছেন দেশটির পারমাণবিক অস্ত্রসমূহ বর্জনের পরিবর্তে এর উপর থেকে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞাগুলো তুলে নেওয়া। তবে পিয়ংইয়ং এর কর্তৃপক্ষ পারমাণবিক অস্ত্রকে দেশটির টিকে থাকার ক্ষেত্রে অপরিহার্য হিসেবে বিবেচ্য করে এবং একতরফাভাবে নিরস্ত্রীকরণে সম্মত না-ও হতে পারে।
পম্পেওর বক্তব্য
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও ও উত্তর কোরিয়ার উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা কিম ইয়ং চোল গত বৃহস্পতিবারে নিউ ইয়র্কে দুই দিনের আলোচনা শেষ করেছেন। আলোচনা শেষে পম্পেও জানান, উত্তর কোরিয়ার কর্মকর্তার সাথে তার আলোচনা সঠিক পথে এগোচ্ছে বলেই তার বিশ্বাস। তিনি বলেন, “আমাদের দেশ দুটি সম্পর্কের একটি গুরুত্বপূর্ণ পর্যায় অতিক্রম করছে, যেখানে এই সুযোগটি অপচয় করতে দেওয়ার চেয়ে দুঃখজনক কিছু হতে পারে না।”
কিম জং উনের চিঠি
ট্রাম্প জানান, কিম জং উনের পক্ষ থেকে একটি চিঠি উপস্থাপন করতে উত্তর কোরিয়া থেকে একজন দূত সম্ভবত এই শুক্রবারে হোয়াইট হাউস সফর করবেন। গত বৃহস্পতিবার ট্রাম্প পিয়ংইয়ংকে শত্রুভাবাপন্ন বলে মন্তব্য করে শীর্ষ সম্মেলনটি বাতিল করে দিয়েছিলেন। তবে তিনি জানান, মত পরিবর্তন করলে কিম জং উন তাকে ফোন করতে অথবা চিঠি লিখতে পারেন। এই চিঠিটি সম্ভবত সেই মন্তব্যের জবাবেই পাঠাচ্ছেন কিম।
কূটনৈতিক উদ্বেগ
গত বছরও ট্রাম্প ও কিম একে অপরকে তিরস্কার করেছেন এবং যুদ্ধের হুমকি দিয়েছেন। তবে এবছরের মার্চ মাসে তাদের আচরণ নমনীয় হয়ে আসে এবং তা একটি চূড়ান্ত সম্মেলনের দিকে অগ্রসর হয়। যদি উত্তর কোরিয়ার দূত হোয়াইট হাউজে যান, তবে এটি ২০০০ সালের পরে অর্থাৎ জো মিয়ং রক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের সাথে সাক্ষাতের পরে, সেখানে কোনো উচ্চ পর্যায়ের পিয়ংইয়ং কর্মকর্তার প্রথম সফর হবে।
এদিকে পম্পেও এবং কিম ইয়ং চোল বৃহস্পতিবার নিউইয়র্কে দ্বিতীয় দিনের জন্য সাক্ষাৎ করেন। তারা তাদের সাম্প্রতিক বৈঠকের শুরুতে একটি কনডমিনিয়ামে হাত করমর্দন করেন। এরপর উভয় পক্ষের চারজন কর্মকর্তা একটি কক্ষের টেবিলের চারপাশে একে অপরের বিপরীত দিকে আলোচনার জন্য বসেন।
কিম ইয়ং চোল উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উনের নিকটতম সহযোগী। তিনি ক্ষমতাসীন ওয়ার্কার্স পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও দক্ষিণ কোরিয়া ২০১০ ও ২০১৩ সালে উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক ও ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি সমর্থন করার জন্য কিম ইয়ং চোলকে তালিকাভুক্ত করে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সরকারি ভ্রমণের জন্য তাকে বিশেষ অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
একজন উচ্চপদস্থ গোয়েন্দা কর্মকর্তা হিসেবে তার কার্যকালের সময়, কিম ইয়ং চোলকে ২০১০ সালে দক্ষিণ কোরিয়ার নৌবাহিনীর একটি জাহাজ এবং একটি দ্বীপে মারাত্মক হামলা চালানোর অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়েছিল। এছাড়া তিনি ২০১৬ সালে সনি পিকচার্সে সাইবার আক্রমণের জন্য মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থার দ্বারা চিহ্নিত হন। তবে উত্তর কোরিয়া উভয় হামলায় জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করে।
পারমাণবিক অস্ত্র বর্জন করার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিকট থেকে উত্তর কোরিয়া প্রত্যাশিতভাবে অর্থনৈতিকভাবে নিষেধাজ্ঞায় ছাড় পাবে। এর ফলে তারা খাদ্য ও অন্যান্য সাহায্য পেতে পারে। সাথে সাথে দক্ষিণ কোরিয়ার সাথেও তাদের সম্পর্ক দৃঢ় হবে। যদিও দুই কোরিয়া মাঝের সামরিক যুদ্ধ শেষ হয়েছে ১৯৫৩ সালেই, তবুও উত্তর ও দক্ষিণ কোরিয়া এখনও যুদ্ধে লিপ্ত। কেননা তাদের শান্তি চুক্তি কখনও স্বাক্ষরিতই হয়নি।
উত্তর কোরিয়ার প্রধান বাণিজ্যিক অংশীদার ও গুরুত্বপূর্ণ সহযোগী চীন জানিয়েছে, এটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও উত্তর কোরিয়ার মধ্যকার উদীয়মান বিশ্বাসকে সমর্থন এবং উত্সাহিত করছে। চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মুখপাত্র হুয়া চুনিং বেইজিং থেকে জানান, “পারমাণবিক তৎপরতা বন্ধের লক্ষ্য অর্জনের জন্য কাজ করার সাথে সাথে, আমাদের উচিত কোরীয় উপদ্বীপে শান্তি বজায় রাখার জন্য দীর্ঘমেয়াদী ও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা।”
পূর্ববর্তী অভিজ্ঞতা থেকে বলা যায়, আসন্ন এ সম্মেলন নিয়ে নানা ধরনের উদ্বেগ কাজ করছে। তবে সবকিছুর মাঝেই দুদেশের নেতাগণ সম্মেলনের প্রস্তুতি নিয়ে চলেছেন। এই নেতারা শুধু নিজ দেশই নয়, বরং বিশ্ববাসীর জন্যও এখন শান্তির বার্তা বয়ে আনুক এই প্রত্যাশা।
Featured Image Source: 2NewsNow.com