জিম্বাবুয়ের স্বাধীনতার মহানায়কের খলনায়কোচিত পতন

ব্রিটিশ উপনিবেশ থাকাকালে সংখ্যালঘু শ্বেতাঙ্গরা ছড়ি ঘুরিয়েছিলো আম-জিম্বাবুইয়ানদের ওপর। শোষিত সেই জিম্বাবুইয়ানদের ভরসার প্রতীক ছিলেন এক নেতা! ১৯৮০ সালে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদ থেকে স্বাধীন হবার পর তাকেই নেতা মেনেছিলেন জনগণ। সাতটি বছর প্রধানমন্ত্রী থাকবার পর তিনি হলেন দেশটির রাষ্ট্রপতি। এরপর বছরের পর বছর ক্ষমতার গদিকে ‘বিক্রম’ জ্ঞান করে তাকে ‘বেতালের’ মতো আঁকড়ে থাকলেন। স্বাধীনতার মহানায়কের রাষ্ট্রনায়ক বা একনায়ক হবার নজির মোটেই দুর্লভ নয়। দুর্লভ হচ্ছে ইতিহাসের অধ্যায়ে এই বীরদের দুঃখজনক বিদায়, যা পূর্বের ইতিহাসকে ম্লান করে দেয়। এমন এক দুঃখজনক বিদায়ই বোধ হয় লেখা ছিলো জিম্বাবুয়ের সেই নেতার কপালে।

বলছি রবার্ট মুগাবের কথা; স্বাধীনতার পর দীর্ঘ ৩৭টি বছর এক নাগাড়ে দেশ শাসনের পর অবশেষে সরে দাঁড়াতে বাধ্য হলেন জিম্বাবুয়ের প্রেসিডেন্ট রবার্ট মুগাবে। সেনাবাহিনী কর্তৃক রক্তপাতহীন এক বিশেষ অভ্যুত্থানের মাধ্যমে প্রশাসনিকভাবে তাকে প্রথমেই নিষ্ক্রিয় করে দেওয়া হয়। পরবর্তীতে নিজের রাজনৈতিক দল কর্তৃক বহিষ্কৃত হয়ে এবং পার্লামেন্ট কর্তৃক অভিশংসন মাথায় নিয়ে পদত্যাগ করেন প্রেসিডেন্ট মুগাবে।

অভ্যুত্থানের আদি-অন্ত

“ঈশ্বর ছাড়া কেউই আমায় ক্ষমতাচ্যুত করতে পারবে না!”

বুঝতেই পারছেন উক্তিটি কার হতে পারে! প্রশাসনিক ক্ষমতা কুক্ষিগত করবার পাশাপাশি নিজের ক্ষমতাকে চিরস্থায়ী করতে মুগাবে নিরাপত্তা ও সামরিক বাহিনীকে এতই ব্যবহার করেছিলেন যে, এই অতি-আত্মবিশ্বাসী উক্তিটি তিনি করতে পেরেছিলেন! ভাগ্যের কী নির্মম পরিহাস, সেই সামরিক বাহিনীই তার ক্ষমতার এপিটাফ লিখলো। কেন হলো এমন?

বলা হয়ে থাকে, ক্ষমতার লোভে এতই অন্ধ হয়ে গিয়েছিলেন তিনি যে, জীবদ্দশায় নিজে ক্ষমতা ছেড়ে দেয়া তো দূরের কথা, বরং ক্ষমতার হাতবদল পরিবারের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখতে চেয়েছিলেন তিনি। এজন্য নিজের চেয়ে বয়সে ৪০ বছরের ছোট গ্রেস মুগাবেকে পরবর্তী প্রেসিডেন্ট হিসেবে অলিখিত মনোনয়ন দিয়েছিলেন তিনি। শুধু তা-ই নয়, তাঁর দল জিম্বাবুয়ে আফ্রিকান ন্যাশনাল ইউনিয়ন- প্যাট্রিয়টিক ফ্রন্ট (জ্যানু-পিএফ) এর তৃণমূল পর্যায়ের জনপ্রিয় নেতা ও দেশটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এমারসন নাঙ্গাগওয়াকে ৬ নভেম্বর বহিষ্কার করেন তিনি, যিনি ছিলেন গ্রেসের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট হবার পথে মূল কাঁটা। এটিকেই বলা হচ্ছে তাঁর রাজনৈতিক দাবার ছকে মন্ত্রী খোয়ানো চাল!

রবার্ট ও গ্রেস মুগাবে; Source: theguardian.com

এ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ফুঁসে ওঠা জনমত ও সেনাপ্রধানকে বহিষ্কার করবার আশঙ্কা থেকে ব্যারাক ছেড়ে ১৪ নভেম্বর হারারের রাজপথে বেরিয়ে আসে সেনাবাহিনী। ১৫ নভেম্বর এক অভ্যুত্থানের দ্বারা তারা প্রেসিডেন্ট ও ফার্স্ট লেডিকে গৃহবন্দী করে সরকারি মুখপাত্র সংস্থা জেডবিসি’র দখল নেয়। সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে বিবৃতি আসে,

“এটা ক্ষমতা দখল নয়। প্রেসিডেন্টের চারপাশে যে অপরাধীদের বৃত্ত তৈরি হয়েছিল, যাঁদের অপরাধের জেরে দেশে সামাজিক ও অর্থনেতিক দুরবস্থা বেড়েই চলেছে তাঁদের সরাতেই এই পদক্ষেপ।”

অভ্যুত্থানে কলকাঠি নাড়ার অভিযোগ চীনের ঘাড়ে

অভ্যুত্থানের মাত্র ৫ দিন আগে জিম্বাবুয়ের সেনাপ্রধান কনস্ট্যান্টাইন চিঙ্গাওয়ার বেইজিং সফর ও চীনা প্রতিরক্ষামন্ত্রী নাং ওয়ানচানের সাথে সাক্ষাতের ছবি প্রকাশিত হওয়ায় জনমনে এ ধারণা ঘনীভূত হতে থাকে যে চীনের প্ররোচনাতেই ঘটেছে এই অভ্যুত্থান। ওদিকে স্বাধীনতা লগ্ন থেকে জিম্বাবুয়ের পুরোনো বন্ধু ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে সব থেকে বড় বিনিয়োগকারী চীন এ সফরকে নিছক কূটনৈতিক আখ্যা দিয়ে কলকাঠি নাড়ার অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে।

জিম্বাবুয়ের সেনাপ্রধানের চীন সফরের মুহূর্ত; Source: bbc.com

পার্টি থেকে বহিষ্কার

অভ্যুত্থানে গৃহবন্দী হবার ঠিক ২ দিন পর ১৮ তারিখ প্রথম জনসম্মুখে আসেন মুগাবে। জিম্বাবুইয়ান ওপেন ইউনিভার্সিটির সমাবর্তনে আগ থেকেই আমন্ত্রিত আচার্য মুগাবে সেদিন এলেন, লিখিত বক্তব্যও পাঠ করলেন, কিন্তু রাজনৈতিক বিষয়ে একটিবারের জন্যও মুখ খুললেন না। কিন্তু মুখ খুললো তার দল ক্ষমতাসীন জ্যানু-পিএফ। দলের এক বিবৃতিতে সেদিন জানানো হয়,

‘‘তিনি না চাইলেও রবিবারের (১৯ নভেম্বর) মধ্যেই ক্ষমতাচ্যুত করা হবে প্রেসিডেন্টকে। আর মঙ্গলবার অভিশংসন। দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে আমাদের পিছু হটবার কোনো জো নেই।’’

তীব্র শীত উপেক্ষা করে হারারের রাস্তায় ওদিকে চলছিলো মুগাবে-বিরোধী প্ল্যাকার্ডসহ মিছিল। কেউ কেউ সেনাপ্রধানকে পর্যন্ত পরবর্তী নেতা ঘোষণা দিয়ে স্লোগানও দিচ্ছিলেন। এমতাবস্থায় সেদিন সন্ধ্যাতেই জ্যানু-পিএফ এর আঞ্চলিক ১০টি শাখা মুগাবেকে প্রেসিডেন্টের পদ ছাড়তে আহবান জানায়।

পরদিন অর্থাৎ ১৯ নভেম্বর হারারেতে অনুষ্ঠিত দলটির শীর্ষ পর্যায়ের বৈঠকে রবার্ট ও গ্রেস মুগাবেকে দল থেকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। দলটি আরো আগেই মুগাবেকে সরাতে চেয়েছিলো, কিন্তু প্রশাসনিক ক্ষমতা এতটাই কুক্ষীগত রেখেছিলেন মুগাবে, যে তাকে হটানোর সাধ্য ছিলো না কারো! কিন্তু অভ্যুত্থানের পর মুগাবে কার্যত নিষ্ক্রিয় হয়ে যাওয়ায় পার্টির জন্য কাজটি সহজ হয়ে যায়।

হারারের রাজপথে মুগাবে বিরোধী প্ল্যাকার্ড নিয়ে নেমে আসেন বিক্ষোভকারীরা; Source: anandabazar.com

বৈঠকের সিদ্ধান্তে দলটির প্রধান নির্বাচন করা হয় সেই এমারসন নাঙ্গাগওয়াকেই! বৈঠকের পর দলটির অন্যতম প্রভাবশালী নেতা ক্রিস মুটসভাঙ্গওয়ার হুঁশিয়ারি দেন,

“মুগাবে পদত্যাগ না করলে জনগণকে রাস্তায় নামানো হবে। তারপর যা করার, জনগণই করবেন।”

সেই সাথে নেতারা মুগাবেকে ২০ নভেম্বর দুপুরের মধ্যে পদত্যাগের আল্টিমেটাম, অন্যথায় অভিশংসনের মাধ্যমে তাকে ক্ষমতাচ্যুত করার হুমকি দেয়া হয়। দল থেকে এভাবেই ছুঁড়ে ফেলা হয় জিম্বাবুয়ের এককালের অবিসংবাদিত নেতাকে। পার্টি অফিসে উল্লাসে ফেটে পড়েন নেতারা।

জিম্বাবুয়ের পার্লামেন্টে জ্যানু-পিএফ নেতাকর্মীদের উল্লাস! Source: Getty Images

অবশেষে প্রেসিডেন্ট ছাড়লেন পদ

২০ তারিখ পদত্যাগ না করায় ২১ নভেম্বর জ্যানু-পিএফ এর নেতারা পার্লামেন্টে অভিশংসনের সিদ্ধান্ত নিলেন। একটি অধিবেশনের পর মুগাবের কাছে পাঠানো হয় পদত্যাগপত্র। পদত্যাগ করতে শেষ অবধি রাজি হলেও অশ্রুসিক্ত ছিলেন রবার্ট মুগাবে। পদত্যাগপত্রে সই করবার সময় তিনি চোখ নিচু করে ঘনিষ্ঠদের কাছে বলেছিলেন, ‘‘লোকগুলো সব টিকটিকি।’’- এমনটিই জানান সেনাবাহিনীর সঙ্গে মধ্যাস্থতাকারী মুগাবেরই বন্ধু ফাদার ফিডেলিস মুকোনোরি। চোখের পানিতে করুণ বিদায় হলো ৯৩ বছর বয়সী এই রাষ্ট্রনায়কের। ওদিকে ২৪ নভেম্বর ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট হলেন এমারসন নাঙ্গাগওয়া।

জ্যানু-পিএফ অফিসের সামনে সেনাবাহিনী ও জনতার যৌথ উদযাপন; Source:aljazeera.com

সেনাবাহিনীর সাথে শেষ রফা

অশ্রুসজল বিদায়ের গল্পে আবার যেন ভাববেন না যে, মুগাবে রিক্ত হস্তে বিদায় নিয়েছেন। নানা দেনদরবার করে তবেই রাজি হন পদত্যাগের শর্তে। সে অনুযায়ী, জীবনভর নিরাপত্তার সাথে সাথে প্রেসিডেন্টের বরাদ্দকৃত বাৎসরিক বেতন দেড় লাখ ডলারই আজীবন পাবেন তিনি। ওদিকে পদত্যাগের প্যাকেজ হিসেবে রবার্ট ও গ্রেস পাচ্ছেন এককালীন এক কোটি ডলার।

প্রতিক্রিয়া

সাবেক উপনিবেশ ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে জিম্বাবুয়ের এ পালাবদলে স্বাগত জানিয়ে গণতন্ত্রের অগ্রযাত্রায় সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনে জিম্বাবুয়ের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। ওদিকে বিরোধী দলীয় নেতা মর্গান সাভাঙ্গিরাইয়ের গলায় শান্তির সুর, “শেষ ক’টা দিন মুগাবেকে তাঁর মতো এবার বিশ্রাম নিতে দিন।” দক্ষিণ আফ্রিকার প্রধান বিরোধী জোট ডেমোক্র্যাটিক এলায়েন্স মুগাবেকে আখ্যায়িত করেছে “স্বাধীনতাদাতা থেকে বনে যাওয়া স্বৈরশাসক”। ওদিকে জিম্বাবুয়ের বিরোধী দলীয় অন্যতম নেতা ডেভিড কলটার্ট বলেন, “কেবল এক স্বৈরশাসকেরই পতন হলো, স্বৈরতন্ত্রের নয়!”

নতুন শাসকের হাতে নতুন জিম্বাবুয়ে

মুগাবের থেকে ক্ষমতা ছিনিয়ে নেওয়ায় পুরো প্রক্রিয়ায় নাঙ্গাগওয়ার হাত আছে বলে অনেকে মনে করেন। অথচ এককালে এই নাঙ্গাগওয়াই ছিলেন মুগাবের মূল শিষ্য ও ব্রহ্মাস্ত্র। এ থেকে আবার কোনো কোনো বিশেষজ্ঞ এমনটাও আশঙ্কা করেন যে, সাবেক গুরুর দেখানো দমনপীড়ন ও কর্তৃত্ববাদী রাজনীতি ভিন্ন নতুন কিছু হয়তো নাঙ্গাগওয়া্র থেকে পাওয়া যাবে না।

২০১৪ সালে এক অনুষ্ঠানে প্রেসিডেন্ট মুগাবের পেছনে বর্তমান প্রেসিডেন্ট নাঙ্গাগওয়া; Source: theguardian.com

উপরন্তু মুগাবের মতো নাঙ্গাগওয়ার কাঁধেও আছে গণহত্যার দায়। মাটাবেলেল্যান্ড নামের এক জায়গার অধিগ্রহণকে কেন্দ্র করে ১৯৮১ থেকে পুরো দশক জুড়ে উত্তর কোরিয়া কর্তৃক প্রশিক্ষিত জিম্বাবুইয়ান সেনাবাহিনীর বিশেষ ফ্রন্ট ‘ফিফথ ব্রিগেড’ এর হাতে প্রাণ হারিয়েছে ২০,০০০ নাগরিক। সেই গণহত্যা পরিচালনায় ভূমিকা রাখার অভিযোগের দাগ এখনো মুছে যায়নি নাঙ্গাগওয়ার হাত থেকে। অবশ্য হতাশাবাদী বিশ্লেষকদের হতাশ হবার যৌক্তিকতার রসদ নাঙ্গাগওয়া যেন নিজে আসা মাত্রই তুলে দিলেন। কেননা দায়িত্বে এসেই তাঁর সরকার প্রথমেই মামলা ঠুকে দিয়েছে রবার্ট মুগাবে, গ্রেস মুগাবে, তাদের ঘনিষ্ঠ অনেকজনসহ প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী ইগনাটিয়াস চোম্বোর নামে! তবে কি এক স্বৈরশাসক থেকে আরেক স্বৈরশাসকের হাতেই পড়লো জিম্বাবুয়ের ভবিষ্যৎ? সময়ই বলে দেবে।

স্বৈরশাসকের বিদায়ে হারারের রাজপথে জনতার বাঁধভাঙা উল্লাস; Source: aljazeera.com

এক নজরে রবার্ট মুগাবে

  • ১৯২৪: কুয়াতামে জন্ম। বাবা ছিলেন ছুতার, মা ছিলেন খ্রিস্টধর্ম শিক্ষক।
  • ১৯৬৪: শ্বেতাঙ্গ আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়ায় দক্ষিণ রোডেশিয়ার প্রাদেশিক সরকার কর্তৃক কারারুদ্ধকরণ।
  • ১৯৮০: স্বাধীনতা পরবর্তী প্রথম গণতান্ত্রিক নির্বাচনে জয় ও প্রধানমন্ত্রী হওয়া।
  • ১৯৮৭: সংবিধানে বদল এনে রাষ্ট্রপতি হয়ে ক্ষমতার কেন্দ্রীভূকরণ।
  • ১৯৯৬: নিজের থেকে ৪০ বছরের ছোট গ্রেস মারুফুকে বিয়ে করেন।
  • ২০০০: গণভোটে পরাজিত হন, শ্বেতাঙ্গ অধিকৃত খামারগুলোতে আক্রমণ করে মুগাবেপন্থীরা, বিরোধী দলের ওপর নিপীড়ন চালানো শুরু হয়।
  • ২০০৮: প্রথম দফার ভোট গ্রহণে মর্গান সাভাঙ্গিরাই তাকে ছাপিয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করেন। পরবর্তীতে নিজ দলীয় নেতা-কর্মীদের ওপর দমন-পীড়নের অভিযোগ তুলে নির্বাচন বর্জন করেন সাভাঙ্গিরাই।
  • ২০০৯: বিশাল অর্থনৈতিক ধ্বস ঘটে। এমতাবস্থায় জাতীয় ঐক্যের নামে বিরোধী নেতা সাভাঙ্গিরাইকে প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ দেওয়া হয় (যিনি ৪ বছর দায়িত্বে ছিলেন)।
  • ২০১৭: সেনা অভ্যুত্থানের ফলে দল কর্তৃক বহিষ্কার এবং প্রেসিডেন্ট হিসেবে পদত্যাগ।

ফিচার ইমেজ: cnn.com

Related Articles

Exit mobile version