সিরিয়া ইস্যুতে বিহ্বল জাতিসংঘের ‘বাক্যহীন বিবৃতি’ প্রদান

  • সিরিয়াতে সরকারি বাহিনীর বিমান হামলায় নারী-শিশুসহ বেসামরিক জনগণের মৃত্যুর ঘটনার নিন্দা জানাতে গিয়ে একটি ফাঁকা বিবৃতি প্রদান করেছে জাতিসংঘ শিশু তহবিল, ইউনিসেফ।
  • কারণ হিসেবে ইউনিসেফ বলেছে, এই বর্বরোচিত হামলার এবং শিশুদের দুর্দশার নিন্দা জানানোর মতো ভাষা তাদের নেই।
  • আজ মঙ্গলবার ইউনিসেফের মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকার আঞ্চলিক পরিচালক এ বিবৃতি দেন।

সিরিয়াতে গত রবিবার থেকে সরকারি বাহিনীর তীব্র আক্রমণে নারী-শিশু নিহত হওয়ার ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করার ভাষা হারিয়ে জাতিসংঘ একটি ফাঁকা বিবৃতি প্রদান করেছে। আজ মঙ্গলবার জাতিসংঘ শিশু তহবিল ইউনিসেফের (UNICEF – United Nations International Children’s Emergency Fund) মধ্য প্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকার (MENA) আঞ্চলিক পরিচালক গ্রিট ক্যাপালাইয়ার এই অভূতপূর্ব প্রতীকি ফাঁকা বিবৃতিটি প্রদান করেন। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, এই বর্বরোচিত হামলার নিন্দা করার মতো ভাষা তাদের কাছে নেই।

গ্রিট ক্যাপালাইয়ার তার বিবৃতির শুরুতে লেখেন, “যেসব শিশুরা, তাদের মায়েরা, তাদের বাবারা এবং তাদের প্রিয়জনেরা মারা যাচ্ছে, তাদের প্রতি কোনো শব্দই সুবিচার করতে পারবে না।” এই বাক্যটির পর তিনি শুধুমাত্র উদ্ধৃতি চিহ্ন দিয়ে একে একে ১০টি ফাঁকা বাক্য ব্যবহার করেন। বিবৃতির শেষে ফুটনোটে তিনি উল্লেখ করেন, “ইউনিসেফ এই ফাঁকা বিবৃতিটি প্রদান করছে। শিশুদের দুর্দশা এবং আমাদের ক্ষোভ বর্ণনা করার মতো আমাদের আর কোনো ভাষা নেই। যারা এই দুর্দশার কারণ ঘটাচ্ছে, তাদের কি এখনও নিজেদের বর্বরোচিত কর্মকাণ্ডকে সমর্থন করার মতো ভাষা আছে?”

গ্রিট ক্যাপালাইয়ারের বিবৃতিটি ইউনিসেফ সহ জাতিসংঘের বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের অফিশিয়াল টুইটার অ্যাকাউন্টগুলো থেকে শেয়ার করা হয়। তারা টুইটারে #RunningOutOfWords হ্যাশট্যাগটির প্রচলন করেন।

উল্লেখ্য, সিরিয়ার বিদ্রোহীদের দখলে থাকা অবরুদ্ধ পূর্ব ঘুতা এলাকায় গত রবিবার থেকে প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের সেনাবাহিনী তীব্র বিমান হামলা এবং রকেট ও মর্টার শেল নিক্ষেপ শুরু করে। এতে গত দু’দিনে নিহতের সংখ্যা ১০০ ছাড়িয়ে গেছে বলে জানিয়েছে মানবাধিকার সংস্থাগুলো। নিহতদের এক-তৃতীয়াংশেরও বেশি নারী এবং শিশু। এই হামলায় পাঁচটি হাসপাতাল, খাদ্যের গুদাম, বেকারি এবং রাস্তাঘাটও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর ফলে নিহতের সংখ্যা এবং আহতদের দুর্ভোগ আরো বৃদ্ধি পেয়েছে।

সিরিয়াতে সাত বছর ধরে চলমান গৃহযুদ্ধে এত স্বল্প সময়ের ব্যবধানে এত বেশি সংখ্যক বেসামরিক জনগণের মৃত্যুর ঘটনা বিরল। ধারণা করা হচ্ছে, পূর্ব ঘুতা এলাকাটিতে বড় ধরনের স্থল অভিযান চালানোর পূর্ব প্রস্তুতি হিসেবে এ আক্রমণ চালাচ্ছে সিরীয় সেনাবাহিনী এবং তাদের মিত্ররা। ২০১৩ সাল থেকে সরকারী বাহিনী কর্তৃক অবরুদ্ধ পূর্ব ঘুতাকে রাশিয়া, ইরান ও তুরস্কের মধ্যকার শান্তি আলোচনায় সংঘর্ষমুক্ত এলাকা ঘোষণা করা হলেও বাস্তবে এলাকাটিতে সংঘর্ষ পূর্বের তুলনায় অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে।

ফিচার ইমেজ- Abdulmonam Eassa/ AFP

Related Articles

Exit mobile version