সিরিয়ার পূর্ব ঘুতায় যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে রাশিয়া এবং সিরিয়ার বিদ্রোহীরা। বিদ্রোহীদের এক মুখপাত্রের বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, গতকাল শুক্রবার অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনাতে শান্তি আলোচনার উদ্দেশ্যে চলমান বৈঠকে রাশিয়া বিদ্রোহীদের প্রতিনিধি দলকে আশ্বাস দিয়েছে যে, তারা সিরিয়ান সরকারের সেনাবাহিনীর উপর অবরুদ্ধ পূর্ব ঘুতায় (আল ঘুতা আশ্ শারকিয়া) যুদ্ধবিরতির ব্যাপারে চাপ সৃষ্টি করবে।
সিরিয়ার বিদ্রোহীদের সংগঠন ফ্রি সিরিয়ান আর্মির মিলিটারি কাউন্সিলের একজন প্রতিনিধি, আইমান আল-আসেমি রয়টার্সকে বলেন, রাশিয়ানরা আলোচনারত বিদ্রোহী প্রতিনিধিদের কাছে যুদ্ধবিরতির ব্যাপারে প্রতিজ্ঞা করেছে। তিনি আরও জানান, শুক্রবার মাঝরাতের পর থেকে এই যুদ্ধবিরতি কার্যকর করার ব্যাপারে রাশিয়া সম্মত হয়েছে। তবে রাশিয়া বা আসাদ সরকারের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করা হয়নি।
পূর্ব ঘুতা সিরিয়ার বিদ্রোহীদের দখলে থাকা সর্বশেষ ঘাঁটিগুলোর মধ্যে একটি, যা ২০১৩ সাল থেকেই অবরুদ্ধ অবস্থায় আছে। শহরটির অবস্থান সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কের কাছাকাছি, এবং এটি চারদিক থেকে রাশিয়ার সেনাবাহিনীর অধীনে থাকা এলাকা দ্বারা বেষ্টিত। দামেস্কের খুব কাছে অবস্থিত হওয়ায় শহরটি বাশার আল-আসাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। গত দু’মাস ধরে শহরটিতে অনবরত বিমান হামলা করে আসছে সিরিয়া এবং রাশিয়ার বিমান বাহিনী।
#Vienna talks: Ceasefire agreement reached in eastern #Ghouta https://t.co/AR5h27Cxsn pic.twitter.com/3r9BKPqVfk
— Al Arabiya English (@AlArabiya_Eng) January 26, 2018
পূর্ব ঘুতার জনগণের ভাগ্য নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছিল। তীব্র খাদ্য এবং ওষুধ সংকটের কারণে জাতিসংঘ এলাকাটিকে সিরিয়ার গৃহযুদ্ধের সবচেয়ে বেশি অপুষ্টিপীড়িত এলাকা হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। শহরটিতে প্রায় চার লক্ষ মানুষের বসবাস। এর আগে রাশিয়ার নেতৃত্বাধীন শান্তি আলোচনায় সিরিয়ার সরকার এবং বিদ্রোহীরা শহরটিকে ‘ডি-এস্কেলেশন জোন’ হিসেবে মেনে নিতে সম্মত হয়েছিল। কিন্তু শেষপর্যন্ত তা কার্যকর হয়নি।
লন্ডনভিত্তিক মানবাধিকার পর্যবেক্ষণ সংস্থা সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটসও শুক্রবারের যুদ্ধবিরতির সিদ্ধান্তের সংবাদ প্রকাশ করেছে। তারা জানিয়েছে, ফ্রি সিরিয়ান আর্মি ছাড়াও জাইশ আল-ইসলাম এবং ফায়লাক আর-রাহমান নামক দুটি বিদ্রোহী দল যুদ্ধবিরতির ব্যাপারে সম্মত হয়েছে। এলাকাটিতে মানবিক সহায়তা প্রবেশের সুযোগ সৃষ্টি এবং পরস্পরের মধ্যে বন্দী বিনিময়ের ব্যাপারেও ঐক্যমত হয়েছে বলে জানিয়েছে বিদ্রোহীদের মুখপাত্র। অবজারভেটরির তথ্য অনুযায়ী, গত দু’মাসে পূর্ব ঘুতায় অন্তত ২৬৬ জন বেসামরিক মানুষ নিহত হয়েছে।
Ceasefire in Syria’s Eastern Ghouta:
– Russia negotiated truce
– 400,000 residents
– Bombardment increased in recent months
– Rebel stronghold home to ‘worst cases of malnutrition’ in countryhttps://t.co/C3QLfOgnXt pic.twitter.com/NraQljXWpS— Al Jazeera News (@AJENews) January 27, 2018
সবগুলো বিদ্রোহী দল অবশ্য শুক্রবারের শান্তি আলোচনায় অংশ নেয়নি। তাছাড়া এর আগে অন্তত নয়বার দুই পক্ষের মধ্যে যুদ্ধবিরতির ব্যাপারে সমঝোতা হলেও একবারও তা স্থায়ী হয়নি। তাই এবারের সিদ্ধান্তও শেষপর্যন্ত কতটুকু কার্যকর হবে, তা নিয়ে সন্দেহের অবকাশ আছে। আল-জাজিরার সাথে সাক্ষাৎকারে বিদ্রোহীদের একজন মুখপাত্র আহিয়া আল-আরিদি বলেন, “আমরা এর আগেও এ ধরনের অনেক প্রতিশ্রুতি শুনেছি, কিন্তু সেগুলো কার্যকর হয়নি। আমরা এগুলো শুনতে শুনতে বিরক্ত। আমরা সত্যিকার অঙ্গীকার চাই।” আল-আরিদি মনে করেন, যুদ্ধবিরতি কার্যকর করার ক্ষমতা রাশিয়ার হাতে। রাশিয়া যদি চেষ্টা করে, তাহলে বাশার আল-আসাদের উপর চাপ সৃষ্টি করে সহজেই এই যুদ্ধবিরতি কার্যকর করতে পারে।
ফিচার ইমেজ- Reuters