Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

প্রফেসর আব্দুস সালামের একাডেমিক দিনগুলো

পদার্থবিদ আব্দুস সালাম, মুসলিম হিসেবে প্রথম নোবেল পুরস্কারপ্রাপ্ত বিজ্ঞানী। জাতীয়তায় পাকিস্তানী। যদিও পাকিস্তান তাকে ত্যাজ্য করেছিলো। কিন্তু আমরণ দেশকে ভালবেসে গিয়েছেন। শেষ ইচ্ছানুযায়ী তাকে পাকিস্তানেই দাফন করা হয়। আজ থেকে ২২ বছর আগে এই পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করেন আব্দুস সালাম। তাকে নিয়ে চমৎকার একটি প্রবন্ধ পড়তে পারেন এখানে। এই প্রবন্ধে তার জীবনী সম্পর্কে একটি সংক্ষিপ্ত কিন্তু প্রাঞ্জল তথ্য পাওয়া যাবে। আজকের লেখার বিষয় হলো আব্দুস সালামের পড়াশোনা কিংবা একাডেমিক জীবন। বিজ্ঞানী হিসেবে সারাটা জীবন তাকে গবেষণা করে যেতে হয়েছে, নতুন নতুন তথ্য খুঁজতে হয়েছে। তার জীবনের এই গুরুত্বপূর্ণ সময়ের কিছু ঘটনা নিয়ে সাজানো হয়েছে আজকের এই লেখা।

Image Source: BBC.com

ছোটবেলা থেকেই পড়াশোনায় যে তিনি তুখোড় ছিলেন সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না। তাই তাকে নিয়ে তার বাবার স্বপ্ন ছিল অনেক। ছেলে সিভিল সার্ভিসে যোগ দেবে। কিন্তু ভাগ্যে ভিন্ন কিছু লেখা ছিল। কৈশোরে প্রবেশ করতে না করতেই তার বিজ্ঞানের প্রতি ভালবাসা প্রকাশ পায়। মাত্র ১৬ বছর বয়সে তিনি একটি গণিতের জার্নালে নিজের গবেষণাপত্র প্রকাশ করেন।

যদিও তার ভাষ্যমতে, তার আসল বৈজ্ঞানিক প্রতিভা উদ্ভাসিত হয় ক্যামব্রিজে যাওয়ার পর। উপমহাদেশের উন্নয়নশীল দেশগুলোতে বিজ্ঞানচর্চা নিয়ে তিনি সবসময় চিন্তিত ছিলেন। ১৯৩৬ সালে তিনি যখন তৎকালীন ব্রিটিশ ইন্ডিয়া এবং বর্তমান পাকিস্তানের ঝাং নামক স্থানে পড়াশোনা করতেন, তখন একদিন তার বিদ্যালয়ের শিক্ষক প্রকৃতির মৌলিক বল নিয়ে আলোচনা করছিলেন। শিক্ষক তাদেরকে এই বল সম্পর্কে বুঝিয়েছিলেন এভাবে –

মৌলিক বলগুলোর মধ্যে প্রথমেই আসবে মাধ্যাকর্ষণ বল। আমরা প্রতিনিয়ত এই বলের প্রভাব বুঝতে পারি। এরপর আসবে আরেক ধরনের বল- তড়িৎ বা ইলেক্ট্রিসিটি। এই বল আমাদের এখানে (ঝাং অঞ্চলের কথা বোঝানো হয়েছে) দেখা যাবে না। এই বল লাহোরে দেখতে পাওয়া যায়। আরেকটি বল হচ্ছে নিউক্লিয়ার বল। এই বল শুধু ইউরোপে পাওয়া যায়।

Image Source: thediplomat.com

উপরের উক্তিটি আব্দুস সালামের নিজস্ব ভাষা। তিনি বোঝাতে চেয়েছেন যে, তার ছোটবেলায় পাকিস্তান (তৎকালীন ব্রিটিশ ইন্ডিয়া) নামক উন্নয়নশীল দেশের অবস্থা কেমন ছিল। শিক্ষক বোঝাতে চেয়েছেন যে, তাদের অঞ্চলে বিদ্যুতের ব্যবস্থা ছিল না। এই ব্যবস্থা ছিল শুধু কিছু কিছু শহরাঞ্চলের মধ্যে সীমাবদ্ধ। আবার তার দেশে যে আধুনিক বিজ্ঞানচর্চা হতো না সেটাও নিউক্লিয়ার বল বোঝানোর সময় বুঝিয়ে দিয়েছেন। তখন কেবলমাত্র ইউরোপেই নিউক্লিয় বল নিয়ে আধুনিক গবেষণা হচ্ছিলো। এশিয়া মহাদেশে সেই তুলনায় কোনো গবেষণাই হতো না। আব্দুস সালাম তার শিক্ষকের এই উক্তিটি স্মৃতিচারণ করেছেন শুধুমাত্র তৎকালীন বিজ্ঞান এবং বৈজ্ঞানিক অনুশীলনে তার দেশ কতটা পিছিয়ে ছিল সেটাই বোঝানোর জন্য [১]।

Image Source: dailytime.com.pk

ক্যামব্রিজে প্রথম দু’বছরে ম্যাথমেটিক্যাল ট্রাইপস পাস করার পর তার সামনে আরও আধুনিক গণিতচর্চা এবং পড়াশোনার দুয়ার খুলে যায়। ট্রাইপসের পার্ট-থ্রি তিনি শেষ করতে চাচ্ছিলেন এবং তার সামনে দুটো পথ খোলা ছিল। একদিকে তিনি গণিতে ট্রাইপস করতে পারেন অথবা পদার্থবিজ্ঞানে করতে পারেন। তার ইচ্ছা ছিল পদার্থবিজ্ঞানে কাজ করার। কারণ তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানে তার আগ্রহ ছিল প্রবল।

ক্যামব্রিজে পড়াশোনার সময় তার শিক্ষক ছিলেন আরেক বিখ্যাত পদার্থবিদ ফ্রেড হয়েল। হয়েল তাকে বলেন, যদি তুমি পদার্থবিজ্ঞানী হতে চাও, তবে তোমাকে তাত্ত্বিক এবং ব্যবহারিক উভয় ক্ষেত্রেই দক্ষ হতে হবে। কারণ অংক কষে যখন কোনো তত্ত্ব দাঁড় করানো হবে, সেটাকে সত্য বলে প্রমাণ করতে হলে এবং সার্বজনীন স্বীকৃতি পেতে হলে সেই তত্ত্বকে ব্যবহারিক পরীক্ষার মাধ্যমে প্রমাণ করতে হবে।

এই পরামর্শের পর সালাম ব্যবহারিক পদার্থবিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা করতে ক্যাভেন্ডিশ ল্যাবে যোগ দেন। ক্যাভেন্ডিশ ল্যাব হচ্ছে সেই ল্যাব যেখানে বিজ্ঞানী রাদারফোর্ড তার বিখ্যাত পরমাণু মডেল আবিষ্কার করেছিলেন। কিন্তু সালামের সেখানে মন টিকছিলো না। কারণ ব্যবহারিক পদার্থবিজ্ঞানে কাজ করতে হলে প্রচুর ধৈর্য প্রয়োজন। নিজের এক্সপেরিমেন্টের সাথে সামঞ্জস্য আছে এমন যন্ত্র নিজে নিজে তৈরি করে নিতে হয়। এই ধরনের ব্যবহারিক কাজ করতে গেলে প্রচুর ভুলত্রুটি হয়ে থাকে। একই কাজ বার বার করতে হয়। যদিও তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানেও প্রচুর ধৈর্য প্রয়োজন। কিন্তু সেই ধৈর্য পরীক্ষা শুধুই নিজের সঙ্গে, নিজের তৈরি করা তত্ত্বের সঙ্গে।

Image Source: The London Post

ক্যাভেন্ডিশে যাওয়ার পর তার এক্সপেরিমেন্টাল কাজ শুরু হয়। তার প্রথম কাজ ছিল সোডিয়ামের বর্ণালী বের করার অংশ হিসেবে দুটি সোডিয়াম ডি লাইনের তরঙ্গদৈর্ঘ্য বের করা এবং দুটি তরঙ্গদৈর্ঘ্যের পার্থক্য বের করা। আব্দুস সালাম গণিতের লোক ছিলেন। এই এক্সপেরিমেন্টটি এমনভাবে সাজালেন যেখানে জ্যামিতি ব্যবহার করে খুব সহজে তার কাজের সমাধান করা যায়।

তিনি দেখলেন, এই স্পেকট্রাম বা বর্ণালী বের করতে হলে দুটি সরলরেখা দিয়েই কাজ করা যেতে পারে। একটি সরলরেখা দুটো বিন্দু ব্যবহার করেই আঁকা যায় এবং সরলরেখাটি ঠিক ঠিকভাবে কাজ করছে কি না সেটা নিশ্চিত করার জন্য আরেকটি বিন্দুর প্রয়োজন হয়। আব্দুস সালাম তিনদিন ধরে তার এক্সপেরিমেন্টের যন্ত্রটি ঠিক করলেন। এরপর সেটি দিয়ে কাজ করার পর প্রাপ্ত উপাত্ত নিয়ে গ্রাফ কাগজে সরলরেখা রেখা এঁকে নিজের চিন্তা করে বের করা উপায়ের সাহায্যে সমস্যার সমাধানের কাজ শেষ করলেন।

তখনকার দিনে একেকটি এক্সপেরিমেন্টের কাজ ফাইনাল পরীক্ষা হিসেবে গণনা করা হতো। সালাম তার কাজ দেখালেন সেই এক্সপেরিমেন্টের তত্ত্বাবধায়নে থাকা স্যার প্রফেসর ডেনিস উইল্কিনসনকে। ডেনিস সেই এক্সপেরিমেন্ট দেখে সালামকে জিজ্ঞেস করলেন, তার একাডেমিক পড়াশোনা কোন বিষয়ে? সালাম জানালেন, তিনি গণিত নিয়ে পড়াশোনা করেছেন। যদিও ডেনিস সেটা বুঝতে পেরেছিলেন। এরপর ডেনিস তাকে বলেন, এক্সপেরিমেন্ট থেকে সঠিক ফলাফল পেতে একটি সরলরেখা আঁকার জন্য মাত্র তিনটি বিন্দুর পরিবর্তে এক হাজার বিন্দু বসিয়ে কাজ করা উচিত ছিল। সালাম এই ব্যাপারে স্মৃতিচারণ করে বলেন, এই ঘটনার পর তিনি আর ডেনিস উইল্কিনসনের সামনেই আসেননি। তবে ফাইনাল পরীক্ষার ফলাফল দেয়ার পর আব্দুস সালাম যখন প্রথম শ্রেণীতে উত্তীর্ণ হন, তখন সেই ফলাফল জেনে সালামের প্রতি উইল্কিনসনের ধারণা অনেকটা বদলে যায় [২]।

Image Source: The Diplomat 

পিএইচডির পর দেশের টানে আব্দুস সালাম পাকিস্তানের লাহোরে ফিরে যান। কিন্তু গবেষণার পরিবেশের অভাব, প্রয়োজনীয় ফান্ডিংয়ের অভাব এবং লাহোরের বিশ্ববিদ্যালয়ের সমর্থনের অভাবে তিনি ১৯৫৪ সালে আবার ক্যামব্রিজে প্রভাষক হিসেবে যোগ দেন। এর ঠিক তিন বছর পরে সেখানে অধ্যাপক হিসেবে উন্নীত হন। ক্যামব্রিজে যাওয়ার পরই তখনকার সময়ের তুলনায় দুর্দান্ত একটি পদার্থবিজ্ঞানের দল গঠন করেন। সেখানে বসেই ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিজমকে দুর্বল নিউক্লিয়ার বলের সাথে যুক্ত করেন এবং ১৯৭৯ সালে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। এতে তার দল এক্সপেরিমেন্টাল পদার্থবিদদের বোঝাতে সক্ষম হন যে, গ্রেট পার্টিকেল এক্সেলারেটর নিয়ে কাজ করলে অনেক তত্ত্বের মূল ফলাফল পাওয়া যেতে পারে।

Image Source: South Asia Daily

বিজ্ঞানের জগতে আব্দুস সালামের অবদান বলে শেষ করা যাবে না। এর স্বীকৃতিস্বরুপ তিনি লাভ করেছেন অজস্র পুরষ্কার। গুণী এই মানুষটির মতো বিজ্ঞানচর্চায় এগিয়ে আসুক আরো অনেকে। সেই সাথে জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চায় এগিয়ে যাক আমাদের প্রাণপ্রিয় বাংলাদেশও।

This is a Bangla article. This is about the academic life of First Muslim Nobel Laureate Professor Abdus Salam

Features Image Source: Science.com

References: 

[১] One Hundred Reasons to be a Scientist, The Abdus Salam International Centre for Theoretical Physics, ICTP Publications and Printing Sections.

[২] Fraser, G. (2008). Comic Anger, Oxford University Press

Related Articles