গত শতকের ৬০ দশকের পর থেকে টেস্ট ক্রিকেটে ব্যক্তিগত সেরা পারফরমেন্স নিয়ে ধারাবাহিক লেখার প্রথম পর্বে ছিল লক্ষণের ইডেন গার্ডেন স্পেশাল, ইয়ান বোথামের কাউন্টার অ্যাটাক, ব্রায়ান লারার ওয়ান ম্যান শো এবং বব ম্যাসি ও মাইকেল হোল্ডিংয়ের আগুনে বোলিং স্পেল। আজ থাকছে এ সিরিজের দ্বিতীয় পর্ব।
১. ইয়ান বোথাম – ১১৪ রান, ৬/৫৮ এবং ৭/৪৮
অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৩-০ ব্যবধানে সিরিজ হেরে ভারতের বিপক্ষে একটি টেস্ট খেলার জন্য ভারত সফরে আসে ইংল্যান্ড। ১৯৮০ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি (তৎকালীন বোম্বে শহর) মুম্বাইয়ের ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে টেস্ট ম্যাচটি অনুষ্ঠিত হয়। গুন্ডাপ্পা বিশ্বনাথের নেতৃত্বাধীন সুনীল গাভাস্কার, দিলিপ ভেংসরকার এবং কপিল দেবদের নিয়ে গড়া ভারতীয় দল বেশ শক্তিশালী ছিল। ভারতীয় ক্যাপ্টেন বিশ্বনাথ টসে জিতে ব্যাটিং করার সিদ্ধান্ত নেন। উদ্বোধনী উইকেট জুটিতে ৫৬ রান যোগ করার পর রজার বিন্নি রান আউট হয়ে ফিরে গেলেও আরেক ওপেনার সুনীল গাভাস্কার রানের চাকা সচল রেখেছিলেন।
সুনীল গাভাস্কার দলীয় ১০২ রানে এবং ব্যক্তিগত ৪৯ রানের মাথায় ইয়ান বোথামের প্রথম শিকারে পরিণত হন। গাভাস্কারকে আউট করার পর ভারতীয় মিডল অর্ডারেও ধস নামান ইয়ান বোথাম। তিনি মাত্র ৫৮ রানে ছয় উইকেট শিকার করলে ভারত প্রথম ইনিংসে ২৪২ রানে গুটিয়ে যায়। জবাবে ইংল্যান্ড প্রথম ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়ে। মাত্র ৫৮ রানে প্রথম সারির পাঁচ ব্যাটসম্যানের উইকেট হারায় সফরকারীরা। তারপর দলের হাল ধরেন ইয়ান বোথাম। শৈল্পিকভাবে ব্যাট করে দলের রানের চাকা সচল রাখেন তিনি। সেই সাথে স্বভাবসুলভ বোলারদের পাল্টা আক্রমণ করে একের পর এক ক্লিন হিটিং তো ছিলই।
ষষ্ঠ উইকেট জুটিতে রবার্ট টেইলরের সাথে ১৭১ রান যোগ করেন ইয়ান বোথাম। তিনি ১৪৪ বলে ১৭টি চারের সাহায্যে ১১৪ রান করে বিপর্যয় কাটিয়ে দলকে ভালো অবস্থানে নিয়ে যান। প্রথম ইনিংসের মতো দ্বিতীয় ইনিংসেও ইয়ান বোথামের বোলিং তোপের মুখে পড়ে ভারতীয় ব্যাটসম্যানরা। তিনি ২৬ ওভার বল করে ৪৮ রান খরচায় সাত উইকেট শিকার করেন। ফলে ভারত দ্বিতীয় ইনিংসে ১৪৯ রানে গুটিয়ে গিয়ে ইংল্যান্ডকে জয়ের জন্য ৯৬ রানের লক্ষ্য ছুঁড়ে দেয়। গ্রাহাম গুচ এবং জিওফ বয়কট কোনো উইকেটের পতন না ঘটিয়েই সেই রান অতিক্রম করেন। বোম্বে টেস্টে ইয়ান বোথাম ১০৬ রানের বিনিময়ে ১৩ উইকেট এবং ব্যাট হাতে ১১৪ রান করেন। তার একক নৈপুণ্যের কাছেই ভারত পরাজিত হয়।
২. রিচার্ড হ্যাডলি – ৫৪ রান, ৯/৫২ এবং ৬/৭১
প্রতিবেশী অস্ট্রেলিয়ার সাথে ১৯৪৬ সাল থেকে ১৯৭৩ সাল পর্যন্ত কোনো টেস্ট ম্যাচ খেলেনি নিউ জিল্যান্ড। ১৯৮৫ সালের আগপর্যন্ত অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে কোনো টেস্ট ম্যাচ জেতেনি নিউ জিল্যান্ড। নিউ জিল্যান্ড অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে নিজেদের প্রথম টেস্ট জয় পায় সপ্তম দেখায়। ১৯৮৫ সালের ৮ই নভেম্বর, তিন ম্যাচ টেস্ট সিরিজের প্রথম টেস্ট। ব্রিসবেন ক্রিকেট গ্রাউন্ডে টসে জিতে অস্ট্রেলিয়াকে ব্যাটিংয়ের আমন্ত্রণ জানান জেরেমি কনি। ব্যাটিংয়ের আমন্ত্রণ পেয়ে ব্যাট করতে নেমে দলীয় এক রানের মাথায় অজি ওপেনার হিলডিচ রানের খাতা খোলার আগেই রিচার্ড হ্যাডলির প্রথম শিকারে পরিণত হয়ে সাজঘরে ফিরে যান। ৩৪ বছর বয়সী হ্যাডলি তার ক্যারিয়ারে আমূল পরিবর্তন আনেন বোলিং রানআপ ছোট করে। এতে করে একনাগাড়ে উইকেট টু উইকেট বোলিং করে নিজের ক্যারিয়ারের শেষ সময়ে এসে ব্যাটসম্যানদের বিপাকে ফেলতেন তিনি
নিউ জিল্যান্ডের বহু জয়ের রচয়িতা রিচার্ড হ্যাডলি, অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে জয় পাওয়া ম্যাচের নায়কও তিনি। অস্ট্রেলিয়া মাত্র এক রানের মাথায় ওপেনার হিলডিচের উইকেট হারানোর পর, আরেক ওপেনার ওয়েসসেলস এবং বুন দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে ৬৯ রান যোগ করে প্রাথমিক ধাক্কা সামাল দেন। ডেভিড বুন আউট হওয়ার পর এই জুটি ভাঙে। দ্রুত আরও দুই উইকেট তুলে নিয়ে অজিদের টপ অর্ডার একাই ধসিয়ে দেন হ্যাডলি। কেপলার ওয়েসসেলস ছাড়া তার বোলিং তাণ্ডবের সামনে দাঁড়াতে পারেনি আর কোনো অজি ব্যাটসম্যান। তিনি একাই অজিদের নয় ব্যাটসম্যানকে সাজঘরে পাঠান।
অফ স্পিনার ভন ব্রাউন তার ক্যারিয়ারের একমাত্র উইকেটটি নিয়ে রিচার্ড হ্যাডলিকে ইনিংসে দশ উইকেট শিকারের অসাধারণ কীর্তি গড়া থেকে বঞ্চিত করেন। তবে ব্রাউনের নেওয়া উইকেটটির ক্যাচ লুফে নিয়ে সব ব্যাটসম্যানকে সাজঘরে পাঠানোতে ভূমিকা রাখেন রিচার্ড হ্যাডলি। প্রথম ইনিংসে অস্ট্রেলিয়ার ১৭৯ রানের জবাবে মার্টিন ক্রো এবং জন রেইডের শতকের পাশাপাশি শেষ দিকে রিচার্ড হ্যাডলির ৪৫ বলে চারটি চার এবং তিনটি ছয়ের মারে খেলা ৫৪ রানের ইনিংসের উপর ভর করে সাত উইকেটে ৫৫৩ রান করে ইনিংস ঘোষণা করে নিউ জিল্যান্ড। নিউ জিল্যান্ডের চেয়ে ৩৭৪ রানে পিছিয়ে থেকে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে আবারও ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়ে অস্ট্রেলিয়া।
চ্যাটফিল্ডের বলে ওয়েসসেলস ও ডেভিড বুন এবং হ্যাডলির বলে হিলডিচ ফিরে গেলে মাত্র ১৬ রানে তিন উইকেট হারিয়ে বসে অস্ট্রেলিয়া। দলীয় ৬৭ রানে পঞ্চম উইকেটের পতনের পর দলের হাল ধরেন অধিনায়ক অ্যালান বোর্ডার এবং গ্রেগ ম্যাথিউস। এই দুজন ষষ্ট উইকেট জুটিতে ১৯৭ রান যোগ করে অজিদের ড্রয়ের স্বপ্ন দেখাচ্ছিলেন। চতুর্থ দিনের খেলা শেষ হওয়ার অল্প কিছুক্ষণ আগে ১১৫ রান করা ম্যাথিউসকে সাজঘরে পাঠিয়ে অজিদের যাত্রাভঙ্গ করেন হ্যাডলি।
পঞ্চম দিনের প্রথম সেশনেই অজিদের শেষ চার ব্যাটসম্যানের উইকেট তুলে নিয়ে অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে তাদের বিপক্ষে প্রথম জয় তুলে নেয় নিউ জিল্যান্ড। শেষ চারের মধ্যে তিনজনের উইকেটই শিকার করেন রিচার্ড হ্যাডলি। অজি অধিনায়ক অ্যালান বোর্ডার শেষপর্যন্ত সঙ্গীর অভাবে ১৫২* রানে অপরাজিত থেকে মাঠ ছাড়েন। রিচার্ড হ্যাডলি দুই ইনিংস মিলিয়ে ১৫ উইকেট শিকার করেন। সেইসময় এক ম্যাচে তার চেয়ে বেশি উইকেট শিকার করা বোলার ছিল মাত্র তিনজন। জিম লেকার, সিড বার্নস এবং বব ম্যাসি। তার বোলিং তোপের মুখে পড়েই ব্রিসবেন টেস্টে ইনিংস ও ৪১ রানে পরাজিত হয় অস্ট্রেলিয়া।
৩. মুত্তিয়া মুরালিধরন – ৩০ রান, ৭/১৫৫ এবং ৯/৬৫
সবাইকে অবাক করে ১৯৯৬ সালের বিশ্বকাপ নিজেদের ঘরে তুলে নেয় শ্রীলঙ্কা। তখন থেকেই বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন শ্রীলঙ্কাকে ক্রিকেট বিশ্বের পরাশক্তি হিসাবে গণ্য করা হতো। জয়াসুরিয়া, রানাতুঙ্গা, ডি সিলভা, মুরালিরা নিজেদের দিনে যেকোনো দলকে হারানোর সামর্থ্য রাখতেন। ১৯৯৮ সালের ২৭শে আগস্ট কেনিংটন ওভালে মাত্র একটি টেস্ট খেলতে শ্রীলঙ্কাকে আমন্ত্রণ জানায় ইংল্যান্ড। এর আগে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ইংল্যান্ডের মাটিতে কোনো টেস্ট ম্যাচ জিততে পারেনি শ্রীলঙ্কা। কেনিংটন ওভালে টসে জিতে ইংল্যান্ডকে ব্যাট করার আমন্ত্রণ জানান অর্জুনা রানাতুঙ্গা। ব্যাট করতে নেমে মুত্তিয়া মুরালিধরনের দোসরার সামনে সাবলীলভাবে ব্যাট করতে পারছিলো না ইংলিশ ব্যাটসম্যানরা। গ্রায়েম হিকের ১০৭ রান এবং জন ক্রলির অপরাজিত ১৫৬* রানের উপর ভর প্রথম ইনিংসে ইংল্যান্ড ৪৪৫ রান সংগ্রহ করে। মুরালিধরন ৫৯.৩ ওভার বল করে ১৫৫ রান খরচায় সাত উইকেট শিকার করেন।
ইংল্যান্ডের ৪৪৫ রানের জবাবে শ্রীলঙ্কা প্রথম ইনিংসে সনাৎ জয়াসুরিয়ার ২১৩ রান এবং অরবিন্দ ডি সিলভার ১৫২ রানের ইনিংসের উপর ভর ৫৯১ রান সংগ্রহ করে। বল হাতে ইংলিশ ব্যাটসম্যানদের কুপোকাত করার পর এগারো নাম্বারে ব্যাট করতে নামা মুরালিধরন ব্যাট হাতেও ৩৬ বলে ৩০ রানের ইনিংস খেলেন। দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নামা ইংলিশ ব্যাটসম্যানদের প্রথম লক্ষ্য ছিল ম্যাচ বাঁচানো। এবারও বাধা হয়ে দাঁড়ালো মুরালির দোসরা। মার্ক রামপ্রকাশের ২২০ বলে খেলা ৪২ রানের ইনিংস এবং দশ নাম্বারে ব্যাট করতে নামা ড্যারেন গফের ১৩৩ বলে ১৩ রানের ইনিংসগুলো ম্লান হয়ে যায় মুরালির বিষাক্ত স্পিনের সামনে।
ইংল্যান্ডের দ্বিতীয় ইনিংসের দশ উইকেটের মধ্যে নয়টিই শিকার করেন মুরালি। ইংলিশ অধিনায়ক অ্যালেক স্টুয়ার্ট অতিরিক্ত ফিল্ডার উপুল চন্দানার হাতে রান আউটের শিকার না হলে, হয়তো সবকটি উইকেট মুরালির দখলে থাকতো। মুরালি ৫৪.২ ওভার বল করে ৬৫ রান দিয়ে নয় উইকেট শিকার করেন। এতে করে শ্রীলঙ্কার সামনে জয়ের জন্য মাত্র ৩৬ রানের লক্ষ্য ছুঁড়ে দিতে সক্ষম হয় ইংল্যান্ড। এই লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে মাত্র পাঁচ ওভারে দশ উইকেট হাতে রেখেই অতিক্রম করে শ্রীলঙ্কা। এই জয়ের পর পরবর্তী সিরিজে একাধিক ম্যাচ খেলার আমন্ত্রণ পায় শ্রীলঙ্কা।
৪. গ্যারফিল্ড সোবার্স – ১৭৪ রান, ৫/৪১ এবং ৩/৩৯
মাত্র ২১ বছর বয়সে পাকিস্তানের বিপক্ষে ৩৬৫* রানের ইনিংস খেলে টেস্ট ক্রিকেটে সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত ইনিংসের তৎকালীন বিশ্বরেকর্ড গড়েন। ব্যাট হাতে তো বিশ্বসেরা ব্যাটসম্যানদের একজনই, বল হাতেও তিনি ছিলেন অন্যদের চেয়ে আলাদা। স্পিন বল করতে পারতেন দুই পদ্ধতিতে, লেফট আর্ম অর্থোডক্স এবং চায়নাম্যান। সেই সাথে নতুন বলে মিডিয়াম পেসও করতেন তিনি। তার সময়কার সেরা অলরাউন্ডার এবং সেরা ব্যাটসম্যানের তালিকা করতে গেলে তার নাম সবার উপরেই থাকবে। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ছয় বলে ছয়টি ছয় হাঁকানো প্রথম ব্যাটসম্যানও তিনি। ১৯৬৬ সালের ৪ আগস্ট, ইংল্যান্ডের বিপক্ষে পাঁচ ম্যাচের টেস্ট সিরিজের চতুর্থ টেস্টে ব্যাটে-বলে অসাধারণ নৈপুণ্য দেখিয়ে ম্যাচ সেরার পুরস্কার জিতে নিয়েছিলেন গ্যারি সোবার্স। সিরিজ জুড়েই তিনি দুর্দান্ত ফর্মে ছিলেন। পাঁচ ম্যাচের টেস্ট সিরিজে ১০৩.১৪ ব্যাটিং গড়ে ৭২২ রান করার পাশাপাশি তার বৈচিত্র্যময় বোলিং দিয়ে শিকার করেছেন ২০ উইকেট।
হেডিংলিতে সিরিজের চতুর্থ টেস্টে টসে জিতে প্রথমে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন সোবার্স। দলীয় ১৫৪ রানে চতুর্থ উইকেটের পতন ঘটলে ব্যাট হাতে ক্রিজে আসেন তিনি। পঞ্চম উইকেট জুটিতে সিমোর নার্সের সাথে ২৬৫ রান যোগ করে প্রথম ইনিংসে দলকে শক্ত অবস্থানে দাঁড় করান সোবার্স। তিনি নিজে ২৬০ বলে ২৪টি চারের মারে ১৭৪ রান করেন, যার দরুন ওয়েস্ট ইন্ডিজ প্রথম ইনিংসে স্কোরবোর্ডে ৫০০ রান জমা করে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের ৫০০ রানের জবাবে ইংল্যান্ড প্রথম ইনিংসে ২৪০ রান এবং দ্বিতীয় ইনিংসে ২০৫ রানে গুটিয়ে গিয়ে, হেডিংলি টেস্টে ইনিংস ও ৫৫ রানে পরাজিত হয়। গ্যারি সোবার্স তার তিন স্টাইলের বল করে ম্যাচে আট উইকেট শিকার করেন।
৫. ইমরান খান – ১১৭ রান, ৬/৯৬ এবং ৫/৮২
চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারতের বিপক্ষে ছয় টেস্টের সিরিজে বল হাতে বেশ উজ্জ্বল ছিলেন ইমরান খান। পুরো সিরিজেই ভারতীয় ব্যাটসম্যানদেরকে কোণঠাসা করে দুর্দান্ত বোলিং করেছিলেন। আসল চমক দেখিয়েছেন সিরিজের তৃতীয় টেস্টে ফয়সালাবাদে। ছয় টেস্টের সিরিজে মাত্র ১৩.৯৫ বোলিং গড়ে শিকার করেছিলেন ৪০ উইকেট। ১৯৮৩ সালের ৩ই জানুয়ারি, সিরিজের তৃতীয় টেস্টে টসে জিতে ভারতকে ব্যাটিংয়ে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেন ইমরান খান। ফয়সালাবাদে ব্যাটসম্যান এবং বোলার, দু’পক্ষের জন্যই সমান সুবিধা ছিল। প্রথম ইনিংসে কিরমানি, বিশ্বনাথ, মদন লাল এবং প্যাটেলের অর্ধশতকের উপর ভর ৩৭২ রান সংগ্রহ করে ভারত। এই রান করতে মাত্র ৮৫.৩ ওভার ব্যাট করে সফরকারীরা। ইমরান খান ২৫ ওভার বল করে ৯৮ রান খরচায় ছয় উইকেট শিকার করেন।
পাকিস্তান প্রথম ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে শুরুতে কিছুটা হোঁচট খায়। পাকিস্তানের টপ অর্ডারের তিন ব্যাটসম্যানকে সাজঘরে ফেরত পাঠান কপিল দেব। স্বাগতিকদের তখন রান সংখ্যা ছিল ৭৯। এরপর জাভেদ মিয়াঁদাদ, সেলিম মালেক, জহির আব্বাস এবং ইমরান খান প্রমাণ করেছেন, এই পিচে রান তোলা খুব একটা কঠিন বিষয় নয়। চারজনই শতক হাঁকান। জহির আব্বাস মাত্র ১৭৬ বলে ১৬৮ রান করেছিলেন। অধিনায়ক ইমরান খান আরো আক্রমণাত্মক ব্যাটিং করেছিলেন। তিনি ১২১ বলে নয়টি চার এবং পাঁচটি ছয়ের সাহায্যে ১১৭ রান করেছিলেন। যার সুবাদে পাকিস্তান প্রথম ইনিংসে ৬৫২ রানের বিশাল সংগ্রহ জমা করে। রান রেটও ছিল ঈর্ষণীয়, ৪.৫৩! পাকিস্তানের চেয়ে ২৮০ রানে পিছিয়ে থেকে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নামে ভারত।
সুনীল গাভাস্কার এবং মহিন্দর অমরনাথ ছাড়া ভারতের আর কোনো ব্যাটসম্যান দ্বিতীয় ইনিংসে উইকেটে থিতু হতে পারেননি। ইনিংসের গোড়াপত্তন করা সুনীল গাভাস্কার শেষপর্যন্ত সঙ্গীর অভাবে ১২৭* রানে অপরাজিত থেকে মাঠ ছাড়েন। ইমরান খান ৮২ রান খরচায় পাঁচ উইকেট এবং সরফরাজ নাওয়াজ ৭৯ রান খরচায় চার উইকেট শিকার করলে ভারত ২৮৬ রানে গুটিয়ে যায়। এতে করে পাকিস্তানের সামনে জয়ের জন্য মাত্র সাত রানের লক্ষ্য দাঁড়ায়, যা কোনো উইকেট না হারিয়ে ২.১ ওভারেই তুলে নেয় পাকিস্তান।
গ্রেটেস্ট টেস্ট পারফরমেন্সের পরবর্তী লেখায় থাকবে গ্রাহাম গুচ, ভিভ রিচার্ডস, ব্রায়ান লারাদের অসাধারণ নৈপুণ্য নিয়ে আলোচনা। প্রতিপক্ষ এবং প্রতিকূল আবহাওয়া থাকা সত্ত্বেও একাই দলকে জয় পেতে বড় ভূমিকা পালন করেছিলেন তারা।
প্রথম পর্ব – বোথামের পুনর্জন্ম এবং লক্ষণের ‘ভেরি ভেরি স্পেশাল’ ইনিংস